ভূমিকা
আহকামের
শরীয়াতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধানে যিনি ইসলামের ফিকহের ইতিহাসে সর্বাধিক
অবদান রেখেছেন তিনি হলেন ইমাম আবূ হানীফা(রঃ)। তিনি ছিলেন একাধারে কুরআন
বিশেষজ্ঞ,হাফিযে হাদীস,শ্রেষ্ঠতম মুজতাহিদ,ফকীহ এবং যুগের শ্রেষ্ঠ আলিমে দ্বীন ও
কামিল ওলী।ফিকাহশাস্ত্রে তার অবদানের জন্য তাকে মুসলিম মনীষীদের উজ্জ্বল নক্ষত্র
হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তার জীবন বৃত্তান্দ নিম্নে দেওয়া হলঃ
জন্ম ও শৈশব
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ) উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালিকের রাজত্বকালে ৮০ হিজরী সালে কূফা নগরীতে
যেই নগরীটি ইসলামী ফিকাহের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে,সেখানে জন্মগ্রহণ করেন।
তার মূল নাম হল নুমান। তার পুরো নাম হল নুমান বিন সাবিত বিন যুতী বিন মাহ। আবূ
হানীফা ছিল তার কুনিয়াত বা উপনাম। তার পিতা একজন সনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বড়
হোয়ে তার পিতার ব্যবসা দেখা-শোনা করতেন এবং একজন সৎ ব্যবসা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি
অর্জন করেছিলেন।
শিক্ষা জীবন
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ) এর সর্বপ্রথম উস্তাদ হন লেন ইমাম শাবী(রঃ)যিনি হযরত আলী(রাঃ) এর
সাক্ষাৎপ্রাপ্ত একজন তাবিঈ ছিলেন।। ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) ১৭ বছর বয়সে
হাদীস শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। তিনি সেই সময় কালামশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি অল্প
সময়ের ভিতর তাফসীরশাস্ত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। তিনি একটা সময় চিন্তা
করে দেখলেন যে, ফিকাহশাস্ত্র হল ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।এটি ছাড়া
ইসলাম অচল।এই ইলম অর্জনের দ্বারা মানুষের দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জীবনে সাফল্য লাভ
করতে পারে। তিনি উমর বিন আব্দুল আজীজের খিলাফতকালে ১০০ হিজরীতে ইমাম হাম্মাদের
কাছে থেকে ২০ বছর বয়সে তা অর্জন করেছিলেন।হাম্মাদের শিক্ষক ছিলেন ইব্রাহীম
নাখই,তার শিক্ষক ছিলেন আলকামা(রঃ) এবং তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের ছাত্র।
এরপর তিনি হাদীসশিশক্ষা লাভ করেন এবং তিনি বসরা,সিরিয়াসহ অন্যান্য জায়গা থেকে
হাদীস শিক্ষা লাভ করেন।তিনি হাদীস এর সাথে ফিকাহশাস্ত্র এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের
অন্যান্য শাখা-প্রশাখা অর্জন করেছিলেন। ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) বলেন,
আমি
যখন বিদ্যা ইচ্ছা করলাম তখন সমগ্র শিক্ষা আমার নিশানা করলাম আর প্রত্যেকটি বিষয়ে
জ্ঞানার্জন করলাম।
তার
উস্তাদ্গণের ভিতর হাম্মাদ(রঃ), আমির বন শুরাহবিল,আলকামা বিন মারসাদ, সালিম বিন
আব্দুল্লাহ,হামাক বিন কুতাইবা প্রমুখ উস্তদাগণ ছিলেন সর্বশ্রষ্ঠ।
অবদান
১২০
হিজরীতে ইমাম হাম্মাদের ইন্তিকালের পর তিনি তার স্বীয় শিক্ষকের স্থালাভিষিক্ত হলেন
এবং যথারীতি পাঠদান পর ফাতওয়া প্রদানের কাজ করতে লাগলেন। দূর-দূরান্তে থেকে
অর্থাৎ, মক্কা,মদীনা,বাহরাইন,ইয়ামান,বাগদাদ,বুখারা,সমরখন্দ,বলখ,তিরমিয প্রভৃতি
অঞ্চল থেকে তার কাছে থেকে এসে সকলে শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করতে লাগল। তিনি তার
জীবদ্দশায় এরকম করে প্রায় সহস্রাধিক বিষয়ের মাসালা প্রদান করেন যার ব্যাপারে
সমাধান কোন হাদীস কিংবা সাহাবাদের দ্বরা উল্লেখ ছিল না।তিনি অত্যন্ত
পর্যালোচনামূলকভাবে ছাত্রদের ইলম পাঠ দিতেন। প্রত্যেক ছাত্রের নিজ নিজ মতামত ও
দলীল পেশ করার অধিকার ছিল। অতঃপর ব্যাপকভাবে তর্ক-বিতর্ক অনুষ্ঠিত হত। অতঃপর তিনি
সবার মতামত সঠিকভাবে বিশ্লষণ করে সঠিক রায় প্রদান করতেন। যা ফলাফল হত তা সন্তোষজনক
ছিল এবং তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হত।তিনি কুরআন,হাদীস,ইজমা,কিয়াসের আলোকে সমাধান
দিতেন।ইসলামী আইনের উসূলে ও ফিকহে তিনি ছিলেন প্রবর্তক। সেজন্য তাকে আহলুল
রায় বলা হয়। তিনি একটি সুবিশাল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তার কাছে থেকে
দুরা-দুরান্ত থেকে অসংখ্য ছাত্র তার কাছে থেকে শিক্ষা লাভ করতেন।তিনি ছাত্রদের
সাথে অত্যন্ত নম্র,ভদ্র ও সুন্দর আচরণ করতেন। আবুল মাহসিন ইমাম সাহেবের প্রায় ৯১৮
জনের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রণয়ন করেছেন যার ভিতর প্রায় ৮৮০ জন ছাত্র ফকীহ হিসেবে
বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। ইমাম আবূ ইউসুফ, মুহাম্মদ, হাম্মাদ, হাসান বিন
যিয়াদ,হাম্মাদ বিন আবূ হানীফা, আসাদ বিন উমর, ইয়াজীদ বিন হারুন, হাব্বান বিন আলী,
ইয়াযীদ বিন রাফি প্রমুখ ছিলেন তার বিখ্যাত ছাত্র।
ফিকাহ সংকলন
ইসলামের
ইতিহাসে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) সর্বপ্রথম আলাদাভাবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ফিকাহ সংকলন
করেছিলেন।তিনি ফিকাহকে কুরআন-সুন্নাহের আলোকে সাজাতে আরম্ভ শুরু করলেন।
।তার
চল্লিশ জন ছাত্রকে নিয়ে তিনি একটি বোর্ড গঠন করে তা ফিকাহসমূহকে তিনি সংকলিত করেন।
তার ছাত্রদের ভিতর ইয়াহইয়া বিন আবী যায়দ, আবূ ইউসুফ,ইমাম মুহাম্মদ, হাফস বিন গিয়াস
ছিলেন বিখ্যাত।মুহাদ্দিস ওয়াকী ইবন জুররাহ বলেন,
কি
করে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) ভুল করতে পারেন যেখানের তার সাথে তার সাথে ইমাম
মুহাম্মদ,আবূ ইউসুফ,যুফার এর মত দক্ষ ফকীহ, হাফস বিন গিয়াস, মেন্দাল ও হাব্বানের
মত দক্ষ মুহাদ্দিস ছিলেন, কাসিম বিন মান এবং ফুযয়েল বিন আইয়ায(রঃ) এর মত মুত্তাকী
ব্যক্তি ছিলেন।সেখানে কোন ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে না এবং তা হলে তারা তার বিরুদ্বে
প্রতিবাদ করত।
সুদীর্ঘ
২২ বছর পরিশ্রন করে তিনি কুতুবী হানীফা নামক একটি গ্রন্থ সংকলন করেছিলেন। এত
সর্বমোট তিরাশি হাজার মাসালা লিপিবদ্ব করা যায় যার ভিতর প্রায় ৩৮ হাজার মাসালা
ইবাদত সংক্রান এবং ৪৫ হাজার মাসালা সামাজিক বিধান ও দণ্ডবিধি সংক্রান্ত। এটি ছিল
ইতিহাসের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ গ্রন্থ। এর জন্য তিনি সেই সময়ে ইমামে আযম বা
শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।
আল-মুওয়াফফিক
মাক্কী(রঃ) বলেন,
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ) এর ফিকহী মাসালা পরস্পর আলোচনা এবং পরামর্শের ভিত্তিতে রচনা হত।
মজলিশে শূরার সাথে আলোচনা ছাড়া তিনি নিজে একা কিছুই করতেন না।
ফিকাহ
সংকলনের পদ্বতি
তিনি
যেভাবে তার মাসালাসমূহের সমাধান দিতেন তা ছিল এমন যে, তিনি কোন সমস্যার সমাধান
দেওয়ার জন্য তিনি প্রথমে কুরআন ঘাটাঘাটি করতেন। তিনি কুরআনের
প্রত্যক্ষ,পরোক্ষ,সুপ্ত,ইশারা-ইঙ্গীতে যেকোনভাবে প্রাপ্ত ইলমের দ্বারা সমাধান
দিতেন। যদি তা কুরআনে পাওয়া না যেত তাহলে তা হাদীসের দ্বারা দেওয়া হত। যদি তা তিনি
হাদীসের ভিতর না পেতেন তাহলে তিনি তার সমাধান সাহাবাদের ফাতওয়া এবং তা না হলে
তাবিঈদের ফাতওয়ার আলোকে প্রদান করতেন। তা না হলে তিনি ইজমার উপর নির্ভর
করতেন।সেখানেও যদি তিনি তার ফয়সালা না পেতেন তাহলে তিনি কুরআন,হাদীস ও ইজমার সাথে
সামঞ্জস্য রেখে কিয়াস বা ইসতিহসানের মাধ্যমে ফাতওয়া প্রদান করতেন।যেসকল বিষয়ে
সমস্যা সৃষ্টি হয় নাই সেইসকল ব্যাপারে তিনি সমাধান দিয়ে গিয়েছেন। তার মাসালা
পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে ৫ লক্ষ হয়। তার এই ফিকহ সংকলন মানুষের ঈমান-আকীদা, আমল
আখলাক, কাজ-কারবার, ব্যবসা-বাণিজ্য,আইন –আদালতের জন্য বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।
তিনি
ফিকহের ব্যাপারে যেই অবদান রেখে গেছেন সেই ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ(রঃ) বলেন,
মানবজাতি
ইলমে ফিকহে আবূ হানীফার সন্তান।
আল্লামা
মাক্কী বলেন,
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ) ই সর্বপ্রথম ইলমে ফিকহ সংকলন করেছিলেন
আব্দুল্লাহ
বিন মুবারাক বলেন,
তিনি
ছিলেন ইলমের খাটি নির্যাস।
ইমাম
আমাশ,আনাস বিন মালিক,ইমাম মালিক(রঃ) সকলে এই কথায় নির্ধিধায় বলেছেন যে, তিনি একজন
বড় ফকীহ ছিলেন।
হাফিয
যাহাবী বলেন,
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ) যদিও হিফযে হাদীসের একটি বিরাট কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন। তারপরও
তিনি অনেক স্বল্প সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর কারণ ছিল এই যে, তিনি হাদীস
রিওয়াতের পরিবর্তে সেখান থেকে ফিকহী মাসালা বের করা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
অনেকে
তার বিরুদ্বে এই অভিযোগ করেন যে, তিনি মাসালা প্রণয়নে হাদীস এড়িয়ে চলতেন।কিন্তু এই
অভিযোগকারীদের অভিযোগ সত্য নয় তা তার এই বক্তব্যের দ্বারা প্রামাণিত হয়। এছাড়াও
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) বলেন,
ঐ
ব্যক্তির উপর আল্লাহর লা’নত, যে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কথার বিরুদ্বারাচণ করল। তার
বদৌলতে আল্লাহ আমাদের ঈমানের মর্যাদা দান করেছেন এবং আমাদেরকে ধ্বংসের হাতে থেকে
রক্ষা করেছে।
তিনি
দূর্বল হাদীস ছাড়া কোন ক্ষেত্রে হাদীসকে বর্জন করতেন না।তিনি রায়কে কখনও হাদীসের
উপর প্রাধান্য দিতেন না।
মাযহাব প্রতিষ্ঠা ও তার ক্রমবিকাশ
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ) এর মাযহাব অত্যন্ত প্রসিদ্ব একটি মাযহাব।তার নামানুসারে এই
মাযহাবের নাম হয় হানাফী মাযহাব। তার এই মাযহাব প্রসারে তার ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফের
অবদান অতুলনীয়।তাকে যখন খলীফা হারুনুর রশিদ বাগদাদের প্রধান বিচারপতি হিসেবে
নিযুক্ত করলেন তখন তিনি ইমাম আবূ হানীফার মতবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এক বিশেষ
ভূমিকা পালন করেন।তাই আব্বাসীয়গণ তাদের পৃষ্টপোষকতা সেই সময় থেকে শুরু করে।তার
অন্যন্য ছাত্রদের ভিতর ইমাম যুফার,মুহাম্মদ ও ইমাম হাসানের ভূমিকা অন্যন্য।প্রথম
যুগে কয়েকজন হানাফী আলিমগণের ভিতর ইব্রাহীম বিন রুস্তম, আহমদ বিন হাফস,বশীর বিল
ওয়ালিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।ইমাম ফার(রঃ) বসরায় এই মাযহাব প্রতিষ্ঠায় বিশেষ
অবদান রাখেন। এভাবে করে পর্যায়ক্রমে তার মাযহার
ইরাক,সিরিয়া,আবিসিনিয়ায়,হিন্দুস্তান প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যপক প্রসা লাভ করে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) ফিকাহের ব্যাপারে যেই মতবাদ গড়ে তুলেছিলেন তা সদূর
সিরিয়া,তুরস্ক,মধ্য এশিয়া, পাকিস্তান,ভারত,বাংলাদেশে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছে।
হানাফী মাযহাবের গ্রন্থাবলী
হানাফী
মাযহাবের গ্রন্থবলীর ভিতর জামি সাগীর, জামি কবীর, মাবসূত, যিয়াদাত,সিয়ারে সগীর,
সিয়ারে কবীর, কুতুবে নাওয়াদির বিশেষভাবে প্রসিদ্ব।
হানাফী মাযহাবের বৈশিষ্ট্যবালী
১।
কুরআনের প্রাধান্য
২।
কুরআনের পর হাদীসের
গুরুত্ব।হাদীসের বিধানসমূহ দৃঢ় ও যুক্তিগ্রাহ্য দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করা হয়।
৩।
ইজমা ও কিয়াসের উপর
গুরুত্বারোপ।
৪।
সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন
৫।
ইসিতিহসান পদ্বতি চালু
৬।
যুগ ও সমাজের চাহিদা
অনুযায়ী মাসালাসমূহ লিপিবদ্বকরণ।
৭। রিওয়ায় এবং দিরিওয়াতের ভিত্তিতে মাসালা
প্রণয়ণ করা হয়েছে। এর বাস্ত জীবন ব্যবস্থার অংশ খুব ব্যাপক,দৃঢ় ও নিয়মতান্ত্রিক।
৮। তাহযীব-তামাদ্দুন জন্য যা প্রয়োজন সেই
তুলনায় অন্যান্য ফিকহের চেয়ে অনেক বেশী উপাদান আছে।
৯। অমুসলিমদএর অধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার
কথা বলা হয়েছ।
১০।
তত্ত্ব ও বাস্তবভিত্তিক
১১।
শক্তিশালী মতামত গ্রহণ
১২।
রাষ্ট্র ও বিচার
কার্যক্রমের জন্য সহজ নীতিমালা
১৩।ইজতিহাদের উপর প্রাধান্য
১৪।
ধর্মীয় গোঁড়ামী ও
সীমালঙ্ঘন থেকে মুক্তি।
তার চরিত্র ও কর্ম
ইমাম
আবূ হানীফা(রাঃ) চারিত্রিক গুণাবলীতে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি একজন
পরহেযগার ব্যক্তি এবং ইবাদত মশগুল ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইবাদতে
অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন এবং কার-কর্মে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন। তিনি সর্বদা
হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতেন এবং তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও দানশীল ছিলেন। অন্যের
প্রতি অপবাদ দেওয়া থেকে নিজেকে সর্বদা বিরত রাখতেন এবং পরোপকারিতা, ন্যায়পরায়ণতা,
সত্যবাদিতা, সাধুতা,ধৈর্য্য,সংযম, দানশীল এবং উস্তাদ্গণের প্রতি ভক্তি ও সম্মানের
অধিকারী ছিলেন তিনি।তিনি তার জীবনে মোট ৫৫ বার হাজ্জ সম্পন্ন করেছেন।
আল্লামা
ফুদায়েল তার পরহেযগারীতার ব্যাপারে বলেন,
তিনি
ছিলেন মহান ফকীহ, অগাধ সম্পদশালী, অত্যন্ত দানশীল, দিন-রাতে জ্ঞান অণ্বেষণকারী,
চিন্তা-মগ্ন ও স্বল্পভাষী।
দৈনন্দিন কার্যাবলী
ইমাম
সাহেবের দৈনন্দিন কার্যাবলী একটি রুটিনের ভিতর পরিচালিত হত।তিনি প্রতিদিন
ফজরের সালাত আদায় করার পর থেকে ছাত্রদের দ্বীনী শিক্ষা প্রদান করতেন। বিভিন্ন
সনাম-ধন্য শিক্ষার্থীগণ এসে তার কাছে থেকে মাসালার উত্তর জানতেন। তিনি এভাবে কএর
যুহরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কাটানোর পর যুহরের নামায আদায় করে বাসায় ফিরে আসতেন এবং
এরপর তিনি আসরের পর থেকে আবার সকলকে পাঠদান করতেন। বাকি সময়ে তিনি রোগীদের
দেখা-শোনা, সেবা, দুঃখীদের খোঁজ-খবর রাখতেন।তিনি মাগরিবের পর পুনরায় পাঠদান করতেন।
তিনি ইশার পর ইবাদতে মশগুল থাকতেন।তিনি অধিক হারে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন।
তিনি একটানা ৩০ বছর ঈশার নামায এবং ফজরের নামায একই উযুতে আদায় করেছেন।তিনি কখনো
তার এই সকল কার্যাবলী দোকানে বসেও করতেন।
রচনাবলী
তার
নিজস্ব রচনাবলী হল ফিকহীল আকবর, কিতাবুল আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম,কিতাবুর রাদ্দি ওয়াল
জামিয়া।
শেষজীবন ও কারাবরণ
উমাইয়া
খলীফাদের শাসনামলে আলিমদের উপর অত্যাচার মাত্রারিক্ত হারে বেড়ে যায়। ইমাম যায়দ(রঃ)
এর মৃত্যু পর থেকে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ)কে উমাইয়াগণ সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেতেন।১৩০
হিজরীতে তিনি মক্কায় চলে আসেন এবং এখানে তার জনপ্রিয়তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
১৩২ সালে উমাইয়াদের পতন ঘটলে ইমাম সাহেব আবার কূফায় ফিরে আসেন। কিন্তু আব্বাসীয়গণ
তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়া নাই। খলীফা মানসূর তাকে প্রধান বিচারপতির পদ প্রদান করতে
চাইলে পরে তিনি তা গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করলে তাকে বেত্রাঘাত করা হয় এবং
কারারুদ্ব করা হয়। এর মধ্যেও তার মাসালা প্রদানের কাজ চলতে থাকে। তার এই
জনপপ্রিয়তাকে খলীফা সুনজরে দেখলেন না। তাই তিনি খলীফাকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করার
চিন্তা-ভাবনা শুরু করলেন।
মৃত্যু
অবশেষে
খলীফার নির্দেশে তাকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ১৫০ হিজরীতে হত্যা করা হয়।ইমাম সাহেব
তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার সময় সিজদাহরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার জানাযা
ছয়বার হয়। প্রথমবার প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লী তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে। তাকে
বাগদাদে সমাধিস্থ করা হয়।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায় যে, ইসলামী ফিকাহের সংকলনে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এর অবদান অতুলনীয় ও
অকল্পনীয়। তাই তিনি ইলমের ফিকহের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
আপনি তাকে ভালবাসেন সেটা কোন সমস্যা নয় তাই বলে এতো বাড়িয়ে লেখলেন। তাই এর সূত্র চাচ্ছি, আপনি কোথায় এগুলো পেয়েছেন বলেন, আমি নিজে সেটা সরাসরি পড়ে দেখতে চাই।
ReplyDeleteআপনি সরাসরি পড়ার জন্য শিবলী নুমানীর সীরাতে নুমান,যাহাবীর তাযকিরাতুল হুফফায, বুখারীর তারিখুস্ সাগীর, ইবন আবদিল বারের আল ইনতিকাফী মানাকিবুল আইম্মাতিস্ সালাসা, আহমদ আমীনের দুহাল ইসলাম, সায়্যিদ মানজির আহসান গিলানী, ইমাম আবু হানিফা কি সিয়ারি যিন্দেগী ইত্যাদি গ্রন্থ। আপনার মনে খটকা লাগছে (হিংসেও কি?) এত বাড়িয়ে লিখলেন! আসলে এখানে তেমন কিছুই লেখা হয়নি। উইকির ইমাম আবু হানিফা পেজ আরবিটা দেখেন। সেখানে এমন কথাও আছে- ইমাম আবু হানিফা দুনিয়ার সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। আরও অনেক সূত্র আছে। আমার বেশী জানা নেই। ধন্যবাদ।
Deleteধন্যবাদ জবাবের জন্য।
Deleteধন্যবাদ সহায়তার জন্য