আইনসভাঃ
আইনসভা
হল সরকারের সেই বিভাগ যেখানে সরকার আইন প্রণয়ন করে, পরিবর্তন
করে,সংশোধন করে তাকে আইন বিভাগ বলা হয়।আইন বিভাগের প্রণীত আইনের
দ্বারা শাসন বিভাগ রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং বিচার বিভাগ বিচার কার্যক্রম সম্পাদন
করে। আইন বিভাগ ছাড়া কখনও একটি রাষ্ট্র সুসংহত হতে পারে না।
আইনসভার
কার্যাবলী
আইনসভা
হল একটি রাষ্ট্রে মূল শাসনভিত্তি।এটি ছাড়া কোন শাসনবিভাহ কিংবা বিচারবিভাগ তাদের
কার্যক্রম সুষ্টুভাবে পরিচালনা করতে পারবে না।
বাংদেশের আইনসভার প্রধান প্রধান কার্যাবলী নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১. আইন
প্রণয়ন করাঃ এটি হল আইন সভার প্রধান কাজ।
আইনের উৎস কি হবে? আইনের ভিত্তি কি হবে?আইনের
নীতিসমূহের ব্যাখ্যা,আইন রচনা, আইনের প্রয়োগ বিধি ইত্যদি
বিষয়াবলীর উপর আলোচনা করা বাংলাদেশের আইনসভার প্রধান কাজ। যদি সংসদের সাংসদগণ কোন
আইন পাশ করে তাহলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে আর তা যদি নির্দিষ্ট মেয়াদে উত্তীর্ণ
হয় তাহলে তা আইনরুপে গণ্য করা হবে।যদি রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে তা
পাঠায় আর তা যদি নতুন করে গৃহীত হয় তারপর যদি তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয় আর সে
যদি তা গ্রহণ না করে তাহলে সাত দিন পর তা আইন হিসেবে গণ্য হবে। তাহলে এখানে বুঝা
যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস হল
আমাদের জাতীয় সংসদ ।
২. শাসন
সংক্রান্ত কাজ করাঃ দেশের সকল
শাসনতন্ত্রের স্তর আইনসভা দ্বারা পরিচালিত হয়। যেই মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয় তা ইচ্ছা
করলে এই সংসদ মন্ত্রিসভাকে বহিস্কার করতে পারবে।তবে এরজন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দিতে
হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হবে সেই মন্ত্রিসভার তাদের সকল
কাজের জন্য নিজ নিজ জবাবদিহি কাজের জন্য করতে হবে।সংসদে বাজেটে আলোচনা, সংসদে
আলোচনা, প্রশ্ন-উত্তর ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে আইনসভা
শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
৩. বিচার
সংক্রান্ত কাজঃ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ
বিচার সংক্রান্ত কাজ সম্পাদন করতে পারে।বিচার বিভাগের বিচারক অপসারণ কাজ,সংবিধান লঙ্ঘন, গুরুতর অপরাধ,মানসিক
কিংবা দৈহিক অক্ষমতার জন্য রাষ্ট্রপতিকে তুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে
অভিশংসন করতে পারে।
৪. অর্থ
সংক্রান্ত কাজঃ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ
অর্থ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কারণ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রতি বৎসর জাতীয়
বাজেট পাস করা হয়।এই জাতীয় বাজেটে সব কিছু বাৎসরিক হারে বরাদ্দ করা হয় যে, কোন খাতে সরকার কত টাকা ব্যয় করবে।এই বাজেটের দ্বারা বিভিন্ন পণ্য-দ্রব্যের
মূল নির্ধারণ করা হয়। এখানে অর্থ সংক্রান্ত বেশ কিছু মঞ্জুরী পেশ করা হয়।তবে এসকল
মঞ্জুরী রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া কখনও পাস হয় না। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ হল প্রধান অর্থ নিয়ন্ত্রনকারী অভিভাবক।
৫.
সামরিক সংক্রান্ত কাজঃ বাংলাদেশের জাতীয়
সংসদ সামরিক কার্যাবলী ও ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। সামরিক বাহিনীতে লোক নিয়োগ এবং
কমিশন নিয়ে সংসদ কাজ করে। সংসদের অনুমোদন ছাড়া দেশের সামরিক বাহিনী কোন ধরনের
যুদ্বে অংশগ্রহণ করতে পারে না।যদি আকস্মিকভাবে বহিঃশত্রু দ্বারা যদি বাংলাদেশ
আক্রান্ত হয় তাহলে সংসদে বিশেষ অধিবেশণ আহবান করার মধ্য দিয়ে এই ব্যাপারে তারা
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্বান্ত গ্রহণ করতে পারে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সংসদ যেকোন
ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
৬.
সংবিধান সংশোধনঃ এটি একটি সংসদের
গুরুত্বপূর্ণ কাজ।দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় সংবিধান
পরিবর্তন করা অপরিহার্য হয়ে দাড়ায়। তখন সংসদ কমপক্ষে দুরই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের
সমর্থনের দ্বারা সেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। তবে সংবিধানের কিছু কিছু ধারা
আছে, যেমন সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রীয়
মূলনীতি,রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এসকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র
দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নয় বরং সেখানে তারা পাশাপাশি গণভোটের প্রয়োজন আছে।
৭.
চাকুরী সংক্রান্ত কাজঃ আইনসভা প্রজাতন্ত্র
এর কর্মে কর্মচারির নিয়োগ এবং কর্মের শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।সংসদের আইনের
দ্বারা প্রজাতন্ত্রের বিভাগ ও কর্মসমূহ সৃষ্টি হয়।
৮.
জনপ্রতিনিধিমূলকা কাজঃ যেহেতু সংসদ
সদস্যগণ জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হন।তাই জনগণের আশা-আকাংখার কথা সকলের সামনে
বলা, তাদের জন্য কোন কোন কাজ ভাল হবে এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা
করা সংসদের অন্তুর্ভূক্ত।
৯.
অনুসন্ধানমূলক কাজঃ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ দেশের বিভন্ন ধরনের কাজের উপর অনুসন্ধান
চালায়। কখন কোন প্রতিষ্ঠানে কীভাবে সবকিছু চলছে এই বিষয়গুলো আইন্সভা করে থাকে।
সংসদে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি পৃথক সংসদীয় কমিটি রয়েছে যেসকল কমিটিসমূহ
স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের কার্যকরমের উপর অনুসন্ধান চালায়।
১০. তথ্য
সরবারাহঃ জাতীয় সংসদ দেশের উন্নয়নমূলক
কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জাতির সামনে তুলে ধরে।
১১.
বিরোধপূর্ণ বিষয়ে নিষ্পত্তিঃ দেশের
রাজনৈতিক দলের চিন্তা-ধারা এবং কার্যক্রমের ভিতর বিরোধ দেখা দেয় তখন এই সংসদ এসকল
বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সমাধানে এক বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
১২. আইন
পরিবর্তনঃ দেশে প্রচলিত আইনের দ্বারা যদি
শাসন ও বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব না হয় তাহলে তাহলে আইনসভা সেই আইনকে
নতুনভাবে সাজাতে পারে এবং এর ভিতর থেকে সকল অস্পষ্ট্তা দূর করতে পারে।
১৩.
অধ্যাদেশ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণাঃ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের
অধ্যাদেশ জারী করা হয়। এসকল অধ্যাদেশসমূহ ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে না যরক্ষণ
পর্যন্ত না সেই সংসদ তার অনুমোদন না দিবে। তেমনিভাবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জরুরি
অবস্থা কেবলমাত্র সংসদ বাস্তবায়ন করতে পারে।
১৪.
নির্বাচন সংক্রান্ত কাজঃ আইন সভা অনেক সময় নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন
স্পীকার,ডেপুটি স্পীকার কিংবা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ইত্যাদি।
বর্তমানের
এর গুরুত্ব
বর্তমানে
একটা কথা অত্যন্ত জোড়ালভাবে শোনা যাচ্ছে যে, দিন দিন
বাংলাদেশে আইন বিভাগের কর্তৃত্ব খর্ব হচ্ছে। এর সঠিক উত্তর দেওয়া আসলে খুব দুরুহ
এক ব্যাপার। কোন কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলেছেন যে, এটি কেবল
বাংলাদেশ নয় বরং বহির্বিশ্বের অনেক জায়গায় তার প্রভাব দিন দিন হ্রাস্ব পাচ্ছে।
আল্যান আর বল বলেছেন, “বিংশ শতাব্দীতে সুসঙ্গব্দ্ব রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব ও শাসন বিভাগের ক্ষমতার
পরিধি এবং জটিলতা বৃদ্বির সাথে সাথে আইন সভার ক্ষমতা হ্রাস্ব পাচ্ছে”। আবার কে.সি হুইয়ার
বলেন,আইনসভার কর্তৃত্ব পূর্বের চেয়ে হ্রাস্ব পেয়েছে
ব্যাপার তা নয়।বরং দিন দিন শাসন বিভাগের যে কর্তৃত্ব দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এই কারণে
আইনসভার কর্তৃত্ব পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস্ব পাচ্ছে। তবে ইতিহাস এবং আইনবিভাগের কিছু কর্মকাণ্ড
পর্যবেক্ষণ করলে এ কথা সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয়াবলী প্রমাণিত হল যা হল নিম্নরুপঃ
ঐতিহাসিক
বিশ্লেষণঃ
২৫
জানুয়ারি ১৯৭৫ সংসদে যে ৪র্থ সংশোধনী হয় তার মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের
পরিবর্তে রাষ্টপতি শাসিত শাসন অধিষ্ঠিত হয়। এ সময় থেকে আইন সভার গুরুত্ব হ্রাস্ব
পাওয়া শুরু করে। এরপর ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ১৯৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর দেশে সামরিক
শাসন বিরাজমান ছিল। এই সময় সংসদকে সামরিক শাসকগণ নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
করেন। সুতরাং, এখানে দেখা যাচ্ছে, দেশে
স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০ বছর আমাদের দেশের আইনসভা একদিকে যেমন
অকার্যকর ছিল তেমনিভাবে তা কখনও গণ মানুষের সুখের প্রতিফলন ঘটাতে পারে নাই।এরপর
১৯৯১ সালে৬ আগস্ট যখন দেশে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্রের
উন্মেষ ঘটে সেই সময় থেকে আবার সংসদ কার্যকর হওয়া শুরু হয়।কিন্তু এরই মাঝে দেশের
প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের ফলে ১/১১ এর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ
দুই বছর সংসদীয় শাসনব্যবস্থার গুরুত্ব পুনরায় হ্রাস্ব পেতে থাকে। তাহলে ঐতিহাসিক
বিশ্লেষণ দেখা যাচ্ছে যে, দেশের স্বাধীনতা অর্জনের চল্লিশ
বছরের প্রায় অর্ধেক সময় দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রকে অবমাননা করা হয়েছে।আর এই সুযোগে
দেশে তখন শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব বেড়ে যেতে থাকে।এরপর বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে যেই কয়েক বছর ধরে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু আছে,তার
মধ্যে তা কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে তাও বিশ্লেষণ করা উচিৎ। নিম্নে বাংলাদেশের
আইনসভার কার্যকারিতার কিছু দূর্বল দিকসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১.
বিরতিকালঃ বাংলাদেশে সংসদ অধিবেশনে একটি
নির্দিষ্ট মেয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। এক মেয়াদের পর থেকে আরেক মেয়াদের একটি বিরতি থাকে।
কিন্তু শাসন বিভাগের কার্যক্রম কখনও স্থবির থাকে না।তাদের কার্যক্রম অনবরত চলতে
থাকে। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে এমন কোন কার্যক্রম সম্পাদন করে ফেললো যার ফলে যখন কিনা
সংসদীয় কার্যক্রম স্থির থাকে তখন তা বাস্তবায়িত হয়ে যা আর পরবর্তীতে পরিবর্তন হয়
এবং তার শাসন বিভাগ তখন আর আইনে বিভাগের কাছে জবাবদিহি থাকে না। সুতরাং,এখানে দেখা যাচ্ছে যে, আইন সভার স্থলে শাসন বিভাগের
প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্বি পাচ্ছে।
২. শাসন
বিভাগের হস্তক্ষেপঃ আইন প্রণয়নকারীগণ কেবলমাত্র আইন প্রণয়ন করে থাকেন।কিন্তু তারা
যখন জনকল্যাণমূলক কোন কাজের জন্য আইন তৈরী করে তখন তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তা প্রয়োগ
করে শাসনবিভাগ।কারণ আইন প্রতিনিধিগণ এখানে খুব বেশী একটা অভিজ্ঞ নয় যার জন্য তার
প্রয়োগ হয় শাসন বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োগ ঘটে।তাই এখানে, দেখা যায়
যে, এখানে শাসনবিভাগের কাছে আইনবিভাগ অনেকটা যিম্মি।
৩.
অর্ডিন্যান্স জারীঃ অর্ডিন্যান্স জারী কিংবা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।
তা ঘোষণা করার পর তা বাস্তবায়ন করে আইন সভা।কিন্তু কোন তারিখে কখন কীভাবে তার জারী
হবে তা কিন্তু রাষ্ট্রপতি তার সচিব- আমলাদের পরামর্শে তা নির্ধারণ কর থাকে।তাহলে
এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে যে, অর্ডিন্যান্স কিংবা জরুরি অবস্থা
জারী করার জন্য শাসন বিভাগের গুরুত্ব বেশী দেওয়া হচ্ছে আইন সভার থেকে।
৪.
জনপ্রতিনিধিদের অজ্ঞতাঃ আইন সভার অধিকাংশ সদস্য কোন কোন বিষয়ে অনভিজ্ঞ। কোন সময়ে
কোন আইন আমাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তা তারা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়
না।কিন্তু এক্ষেত্রে আবার শাসন বিভাগের আমলাগণ বিজ্ঞ থাকেন। তাই তাদের
পরামর্শক্রমে এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
৫.
মন্ত্রিপরিষদের দায়বদ্বতাঃ যখন কোন মন্ত্রী আইন করেন তার নিজ মন্ত্রণালয়ের জন্য
তখন তা তিনি তার অধীনস্থ মন্ত্রণালয়ের আমলা-সচিবদের সাথে বৈঠক করে এবং তাদের
পরামর্শের ভিত্তিতে তা রচনা করেন।
৬. জাতীয়
এবং আন্তর্জাতিক জটিলতাঃ জাতীয় এবং
আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্রমবর্ধমান চাপ,সামরিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে
যেসকল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তা আইনসভা সহজে সামাল দিতে পারছে না। তাই সেই ক্ষেত্রে
এসকল চাপ শাসন বিভাগ বিশেষ করে পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আমলাগণ
করে থাকে দক্ষতার সাথে এবং তাদের এই কাজকে আইন বিভাগ বৈধতা প্রদান করেছে।
৭.
অর্থনৈতিক সংকট এবং সমস্যাঃ বর্তমানে দেশে
দেশে বিভিন্নভাবে লোকেরা অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এসকল অর্থনৈতিক
সমস্যার সামাল দিতে হয় শাসন বিভাগকে। আর সরকারেরে যাবতীয় খরচ সংক্রান্ত কাজ
সম্পাদন করে তাই এদের গুরুত্ব অনেক বেশী।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার দরুন শাসন বিভাগ জনগণের কাছে অধিক সম্মানের বলে
বিবেচিত হয় আর তার ক্ষমতা বৃদ্বি পায়।
৮.
রাজনৈতিক দলের চাপঃ বর্তমানে রাজনৈতিক
দলের চাপের জন্য আইন বিভাগ বিভিন্ন ধরনের শাসন কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম
হচ্ছে না। যদি দলীয় স্বার্থের বাহিরে কোন কাজ আইন সভা কর্তৃক প্রণীত হয় তাহলে সেই
সদস্যের ভবিষৎ এ নির্বাচন করা অনেকটা অনিশ্চয়তা হয়ে পড়বে। তাই শাসন বিভাগে যে
ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাই মেনে নেয় আইনবিভাগ।তাছাড়া আইনসভাকে প্রধানমন্ত্রী ভেঙ্গে
দিতে পারে এই ভয় দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী আইন সভাকে নিয়ন্ত্রন করে।যার ফলে আইনসভার
গুরুত্ব হ্রাস্ব পাচ্ছে আর শাসন বিভাগের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্বি পাচ্ছে।
৯. রাজনৈতিক দলের কোন্দলঃ রাজনৈতিক দলসমূহের কোন্দল অনেক সময় সংসদীয়
ব্যবস্থাকে দূর্বল করে তুলছে। যার ফলে আইন সভার কার্যকারিতা হ্রাস্ব পাচ্ছে
অন্যদিকে শাসনবিভাহ সুসংগঠিত হওয়ায় তার গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
১০. জনমত
গঠনে ব্যর্থতাঃ পূর্বে আইনসভাকে জনমত গঠনের সূতিগার বলা হত।আইনবিভাগ জনগণের সাথে
একীভূত হয়ে কাজ করত। কিন্তু বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে প্রচার-মাধ্যমের
ব্যপকতায় প্রচার মাধ্যমসমূহ যেভাবে জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে তা আইনসভা করতে
ততটা সফল হচ্ছে না।তাই আইনসভার কার্যকারিতা দিন দিন হ্রাস্ব পাচ্ছে।
তবে অনেক
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এ কথা মানতে অস্বীকার করেছে যে, দিন দিন
আইনসভার গুরুত্ব হ্রাস্ব পাচ্ছে। তারা বিভিন্ন ধরনের যুক্তি প্রদশর্নের মাধ্যমে এ
কথা প্রমাণ করেছে যে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও আইনসভা শক্তিশালী এক ভূমিকা
পালন করছে।তবে এ কথা অনীবার্য যে, দিন দিন শাসনবিভাগের কর্তৃত্ব
যেভাবে বৃদ্বি পাচ্ছে তাতে করে তাতে করে আইনসভার কর্তৃত্ব অনেকটা হ্রাস্ব পাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment