গবেষণা
গবেষণা হল সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যার সাধারণ অর্থ হল সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান।এর সমার্থবোধক শব্দ হল জিজ্ঞাসা, তদন্ত, অণ্বেষা, অনুসন্ধান,বিকিরণ এবং নিরুপুণ। গবেষণা হল জিজ্ঞাসার উত্তর অন্বেষণের লক্ষ্যে তদন্ত করা,তদন্তের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা, সংগৃহীত তথ্যে...রচিতর অনুসন্ধান করে জিজ্ঞাসার উত্তর বের করা। আমরা অন্যভাবে বলতে পারি যে, গবেষণা হল পুনঃসন্ধান অর্থাৎ, তুলনামূলক উন্নত পর্যবেক্ষণ করা, ভিন্ন প্রেক্ষিতে খোঁজা এবং বাড়তি জ্ঞানের সংযোজন করার সুশৃংখল ব্যবস্থা। কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও সুসসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা। আরবীতে একে বাহস বলা হয় যার অর্থ হল মাটির ভিতর কোন কিছু তালাশ করা,খুজে বের করা ইত্যাদি।
ইমাম রাগিব ইস্ফাহানি বলেন,
বাহাস অর্থ হল উন্মুক্তকরণ এবং কোন কিছুর অনুসন্ধান করা।
ড. ইয়াহইয়া ওহায়ব বলেন,
কঠিন যমিন বা পাথরে গর্ত খনন করা।সুসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা।
পারতপক্ষে গবেষণা বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধানের একটি আর্ট। ইংরেজীতে একে research বলা হয় যার বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। research শব্দটি দুটি শব্দ তথা re এবং search এর সমন্বয়ে গঠিত। re এর অর্থ হল পুনঃ পুনঃ আর search এর অর্থ হল অনুসন্ধান করা এবং কোনকিছু খুঁজে বের করা। research এর পূর্ণাংগরুপ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
R-Rational of thinking
E-Expert and Exhautive treatment
S-Search for solution
E- Exactness
A-Analitical analysis of adequate data
R-Relationship of facts
C- Careful recording, critical observation, Constructive attittude
H- Honesty, Hard work.
তাহলে আমরা উপরোক্ত বিষয়াদীসমূহ বিশ্লেষণ করলে গবেষণার একটি সম্যক ধারনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।
The Advance learner Dictionary of Current English এ বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের যে শাখায় নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্যে ব্যাপক ও সযত্ন তথ্যানুসন্ধান তা হল গবেষণা।
রেডম্যান ও মরী বলেন, নতুন জ্ঞান আহরণের সুসংবদ্ব চেষ্টা-প্রচেষ্টা হল গবেষণা।
রাস্ক বলেন, গবেষণা একটি বিশেষ অভিমত যা মানস কাঠামোর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি, গবেষণা সেসব প্রশ্নের অবতারণা করা যাএর উদ্ঘাটন আগে কোনদিন হয় নাই, এবং সেই গবেষণার মাধ্যমে সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।
গ্রীন বলেন, জ্ঞানানুসন্ধানের আদর্শিত বা মানসম্মত পদ্বতির প্রয়োগই গবেষণা।
সাইয়েদ শরীফ বলেন, দুটি বস্তুর ভিতর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের দলীলের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের নাম হল গবেষণা।
ফানদালীন বলেন, উপস্থিত জ্ঞানের প্রবৃদ্বির লক্ষ্যে সুশৃংখল অনুসন্ধান বা পর্যালোচনা,যা উদ্বৃতি,প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যেম সম্পন্ন হয় তা হল গবেষণা।
জন ডব্লিউ বেষ্ট বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্বতির প্রয়োগ দ্বারা বিশ্লেষণের আরও আনুষ্ঠানিক,সুসংবদ্ব ও ব্যাপক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলা হয়।
রিচার্ড গ্রিনেল বলেন, গবেষণা হল সাধারণভাবে প্রয়োগযোগ্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টি যা করতে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক পদ্বতি ব্যবহৃত হয়।
কেউ কেউ মনে করেন যে, যা সকলের কাছে অজানা তা জানার নাম গবেষণা নয়।বরং যেবিষয়ে সকলের অল্প জ্ঞান রয়েছে সেই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভের পদ্বতি হল গবেষণা।
তাই রবীঠাকুর বলেছেন, জানার মাঝে অজানার সন্ধান করছি।
ম্যারি ম্যকডোনাল্ড বলেন, সুশৃংখলভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রচলিত জ্ঞানের সাথে বোধগম্য ও যাচাইযোগ্য জ্ঞানের সংযোজন হল গবেষণা।
পল ডি লিডি বলেন , গবেষণা একটি তীর্যক ও সামগ্রিক অনুসন্ধান বা পরীক্ষণ যার উদ্দেশ্য হিক নব উদ্ভাবিত তথ্যের আলোকে প্রচলিত সিদ্বন্তসমূহের সংশোধন করা হয়।
অর্থাৎ, গবেষণা হল নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের পদ্বতিগত ও নৈবর্ত্তিক বিশ্লেষণ ও রেকর্ডকরণ যা তত্ত্বের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই গবেষণার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পার। [বাকারাঃ২১৯]
আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? [আনআমঃ৫০]
গবেষণার জন্যে নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ অপরিহার্য যা হলঃ
১। অনুসন্ধিৎসু ও কৌতূহলী মনোবৃত্তি
২। সুনির্দিষ্ট বিচরণক্ষেত্র
৩। সুবিন্যস্ত অনুমান
৪। পর্যবেক্ষণযোগ্য তথ্যের সহজলভ্যতা
৫। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ কৌশল
৬। ফলাফল উপস্থাপনের যৌক্তিক কৌশল
গবেষণার বৈশিষ্ট্য
১। গবেষণা কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিবেদিত হবে।
২। গবেষণা প্রাথমিক বা প্রধান উৎস থেকে জ্ঞান বা উপাত্ত সংগ্রহ করে অথবা উপাত্ত নতুন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।
৩। গবেষণা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষালব্দ্ব সাক্ষ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর জন্য প্রয়োজন নির্ভুল পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনা।এর জন্যে দরকার দক্ষতা।
৪। এটি একটি কুশলী, পদ্বতিগত ও সঠিক অনুসন্ধান।
৫। এটি সাধারণ নীতির আবিষ্কারের উপর গুরুত্বারোপ করে থাকে।
৬।গবেষণা হবে যুক্তিযুক্ত ও নৈর্ব্যত্তিক। সম্ভাব্য সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর ব্যবহৃত পদ্বিতি, সংগৃহীত উপাত্ত ও সিদ্বান্তের যাচাই করতে হবে। যেসকল তথ্যসমূহ ভুল হতে পারে
৭। অনুমিত সিদ্বান্ত যাচাইয়ের জন্যে নিরপেক্ষভাবে যথার্থ কৌশল অনুসরণ করে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।
৮। সংগৃহীত উপাত্তকে পরিমাণগত বা সংখ্যাগতভাবে সুসংগঠিত হতে হবে।
৯। গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে।
১০। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।
১১। ফলাফলকে নিরপেক্ষভাবে সতর্কতার সাথে রেকর্ড করা।
১২। সিদ্বান্ত গ্রহণে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।
১৩। গবেষণাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তথ্যনির্ভর হতে হবে।
১৪। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।
১৫। গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্বতিকে অনুসরণ করে সকল কিছুর সমাধান প্রদান করবে।
১৬। গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হবে এবং এতে সহজ ধারনা থাকবে।
১৭। গবেষণার ডিজাইন হবে সুপরিকল্পিত যাতে প্রাপ্ত ফলাফল যতটুকু সম্ভব নৈবর্বত্তিক হয়।
১৮। গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তত্ত্বের মাধ্যমে নতুন কিছু জানার সুযোগ সৃষ্টি করা।
১৯। সংগৃহীত তত্ত্বের সঠিক যাচাই-বাছাই এবং এরপর তার যথাযথ প্রয়োগ।
২০। গবেষককে বিপুল কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হতে হবে।
২১। যদি কোন সমস্যা নিয়ে কেউ গবেষণা তাহলে সেই ক্ষেত্রে তার কেবল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেই হবে না।বরং তাকে এর জন্যে তার যথার্থ ও বাস্তবভিত্তিক সমাধানের পরামর্শের মাধ্যমে সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করতে হবে।
২২। সুপরিকলনার উপর ভিত্তি করে করতে হবে।
২৩।বিশেষ বিশেষ সমস্যাবলী এককভাবে নয় বরং দলবদ্বভাবে একত্রিতভাবে করতে হবে। কারণএতে সময়ে কম লাগেবে এবং স্বল্প সময়ে অনেক উন্নয়ন ঘটবে।
২৪। গবেষণার কাজ শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ কিংবা লিপিব্দ্ব করা না বরং তা হল অনুমিত সিদ্বান্ত গ্রহণ, সংগৃহীত তথ্যের বিন্যাস এবং বিশ্লেষণ করার মত কাজ করার যোগ্যতা থাকা।
২৫। নতুন জ্ঞানের সন্ধান দিতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে তা গবেষণা হবে না। ড. মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন,
গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে গবেষণাটি নতুন, ভইনব থেকে হবে যে বিষয়ে ইতিপূর্বে গবেষণা হয় নাই।
তবে গবেষণা যদি এমন হয় যে, তার দ্বারা আরও নতুন কিছু আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর তার দ্বারা পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে সেই গবেষণাটি ফলপ্রসূ হবে।
২৬। গবেষকদের চিন্তাকে সুসজ্জিত করতে হবে।
২৭। কারও বই বা প্রবন্ধ থেকে উদ্বৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ যার মাধ্যমে তথ্য যোগার করা হবে তার উদ্বৃতি পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ তুনজী বলেন,
গবেষকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আমানত,সততা। আমানতের সাথে গবেষক সাহিত্যিক, পণ্ডিত, মনীষীগণের মতামত উদ্বৃতি গ্রহ্ণ করার সময় মূল বক্তার প্রতি সম্পর্কিত করবে। এমন অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেকে কোন আলিমের বক্তব্য দেওয়ার পরে তা নিজের উদ্বৃতি বলে চালিয়ে যায়।
গবেষণার উদ্দেশ্য
গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য হল এই যে, এমন লুকায়িত সত্যের আবিষ্কার যা এখন পর্যন্ত যাকিছু আবিষ্কার হয় নাই। তাই গবেষণার যেসকল বৈশিষ্ট্য যা হবে তা নিম্নরুপঃ
(ক) কোন ঘটনা সম্পর্কে পরিচিতি হওয়া এবং সেই ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান।( এই ধরনের গবেষণা হল অনুসন্ধানমুখী গবেষণা)
(খ) কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, অবস্থা, দল ও গোষ্ঠীর চিত্রাংকন। (এই ধরনের গবেষণা হল বর্ণনামূলক গবেষণা)
(গ) কোন কিছু কতবার ঘটেছে এবং কোন কিছুর সাথে গবেষণাটি কতটুকু সম্পর্কযুক্ত। (এই ধরনের গবেষণা হল নিরুপক গবেষণা)
(ঘ) চল বা পরিবর্তিতগুলোর কার্যকরণ সম্পর্কে অনুমিত সিদ্বান্ত যাচাই। ( এই ধরনের গবেষণা হল অনুমিত সিদ্বান্তমূলক যাচাই)
(ঙ) প্রাচীন পাঠের কোন বিষয় উপস্থাপন করে এর যাচাই বাচাই করা। সে সম্পর্কে লিখিত সকল মতামত চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং এ ব্যাপারে গবেষকদের মতামত প্রদান।
(চ) নতুন বিষয় চিন্তা-গবেষণা করা যা নিয়ে ইতিপূর্বে কিছুই হয় নাই। সেই চিন্তা ধারাকে উপযুক্ত প্রমাণের সাহায্যে সকলের সামনে তুলে ধরা।
(ছ) গবেষক দ্বারা আবিষ্কৃত গবেষণার নতুন পদ্বতি সম্পর্কে রচনা করা এর গুরুত্ব ও উপকারিতা বর্ণনা করা।
(জ) গবেষণা কর্মের উদ্দেশ্য সংগৃহীত উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে নিজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দ্বার তাদের সত্যতা যাচাই করা, সেই সত্যের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও মন্তব্যসহ বিষয়টি সকলের কাছে উপস্থাপন করা, এবং বিষয়টির উপর আলোচনা করা। এটি নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে হতে পারে অথবা পুরাতন তত্ত্বের নতুনত্বের উপর ভিত্তি করে হতে পারে।
গবেষণার লক্ষ্য
১. নতুন কোন গবেষণামূলক ডিগ্রী অর্জন।
২. বাস্তব সমস্যার সমাধান প্রদান করা।
৩. যে সমস্যার কোন সমাধান হয় না তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা।
৪. সৃজনশীলতার পরিচয় প্রদান করা।
৫. সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সমাজকে সেবা প্রদান করা।
৬.সমাজচিন্তা ও সমাজসচেতনা বৃদ্বি করা।
৭. মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কল্যাণ বৃদ্বিকরণ।
৮. বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বের করা।
৯. যা ইতিপূর্বে মানুষের কাছে অজানা ছিল তা সকলের কাছে অবহিত করা।
গবেষণার প্রকৃতি
উদ্দেশ্যগতভাবে যে কোন গবেষণাই নতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপস্থিত জ্ঞানকে সমৃদ্ব করতে আগ্রহী করে তোলে। এর পিছনে কাজ করে গবেষকদের অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহুলী মন এবং সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ উদ্ভাবনের প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গবেষণালব্দ্ব ফলকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গবেষণা দুই ধরনের যা হলঃ মৌলিক গবেষণা এবং ফলিত গবেষণা। বর্তমানে গবেষকগণ আরেক ধরনের গবেষণার কথা বলে থাকেন যা হল কার্যক্রম গবেষণা।
গবেষণার প্রকৃতি হয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।
২। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।
৩। গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে।
৪। অভিজ্ঞসম্পন্ন লোকদের দ্বারা গবেষণা করা দরকার।তা না হলে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।
৫। গবেষণার উপর গবেষণা করে এর দ্বারা নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য আবিষ্কার হয়।
এই ধরনের গবেষণা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১।মৌলিক গবেষণা
এটি হল আদি বা মূল গবেষণা।এর ধারনা মূলত পদার্থবিজ্ঞান থেকে নেওয়া হয়েছে। একে কখনও কখনও বিশুদ্ব গবেষণা বা basic research বা Fundamental research বলা হয়। এই মৌলিক গবেষণার সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে কেনেথ ডি বেইলী বলেন, বিশুদ্ব গবেষণা হল তত্ত্ব ও অনুকল্পের বিকাশ ও পরীক্ষা ঘটিএ থাকে যা অনুসন্ধানকারীর কাছে বুদ্বিবৃত্তিক দিক দিয়ে আগ্রহোদ্দীপক এববগ যার ভবিষৎ সামাজিক কার্যকারিতা থাকলেও বর্তমানের সামাজিক সমস্যার ক্ষেত্রে কোন কার্যকারিতা থাকে না।
এর মূল লক্ষ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন মৌলিক নীতি ও সত্য আবিষ্কার করা।এটি একটি কঠোর,নিয়ন্ত্রিত,ধারাবাহিক ও বিশ্লেষণমুলক পদ্বতি। এ নীতি অনুযায়ী মৌলিক গবেষণা সুদৃঢ়ভাবে কেবল তত্ত্বের পরীক্ষা ও উন্নয়ন ঘটায় মাত্র আর তা প্রধানত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হয়ে থাকে।এই মৌলিক গবেষণার জন্য প্রয়োজন জটিলতার সমস্যা, নিখুঁত পদ্বতি,উত্তম উপকরণ,উচ্চতর নিয়ন্ত্রন ও বিশ্লেষণ। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হল তত্ত্বের বিকাশ ঘটানো আর জ্ঞান আহরণ হল এর প্রধান লক্ষ্য।বেশীরভাগ বিজ্ঞানীগণ এই পদ্বতির আলোকে গবেষণা করে থাকেন।উদাহরণস্বরুপ আমরা নিউটনের মধ্যাকার্ষণ শক্তির তত্ত্বের কথা বলতে পারি যার দ্বারা পরবর্তীতে সৌরচুল্লির আবিষ্কার হয়। মাদাম কুরী রেডিয়াম আবিষ্কার করেন যার তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে আলফ্রেড নোবেল হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার করেন।
এই ধরনের গবেষণা দুই ধাপে সম্পন্ন হতে পারে। যা হলঃ
ক। কোন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারঃ
মৌলিক গবেষণা থেকে এমন তত্ত্ব আবিষ্কৃত হবে যা ইতিপূর্বে কখনও ছিল না। এই ধরনের গবেষণা মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মিটানোর দরুন কল্পনার মাধ্যমে জাগ্রত হয়। যার দ্বারা বিশ্ব দেখতে পায় নতুন কোন আলোর পথ। গ্যালিলিও, নিউটন,আইনস্টাইন প্রমুখ এর অবদান মৌলিক বা স্ব স্ব ধারনাজাত বা কল্পনাপ্রসূত। তাই এ ধরনের গবেষণা হল তাত্ত্বিক গবেষণা।
খ। প্রচলিত তত্ত্বের উন্নয়ন
এটি হল কোন প্রচলিত তত্ত্বের কিছু কিছু অনুমানকে সংশোধন বা পরিমার্জন করে তত্ত্বের উন্নতি ঘটানো। কখনও তা পুরাতন তত্ত্বের উপকরণের উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন তত্ত্বের বিকাশ ঘটায়। উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপ, বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা, শিক্ষার মূল্যবোধ, শিক্ষার লক্ষ্য ইত্যাদি এই গবেষণার অন্তর্ভূক্ত।
২। ফলিত গবেষণা
কোন কোন সমাজ,ব্যবসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শিল্প তাৎক্ষণিকভাবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় আর তার সমাধানের জন্যে যে গবেষণা হয় তাকে ফলিত গবেষনা বলা হয়। একে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা বলা হয়। কারণ এই ধরনের গবেষণায় মাঠ পর্যায়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এই গবেষণার দ্বারা মৌলিক গবেষণার মত নতুন জ্ঞান অর্জন হয় না।বরং এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা হয়। বস্তুত বাস্তব সমস্যা সমাধান, চাহিদা, সম্পদ, প্রক্রিয়া ও লাভ-ক্ষতির মাধ্যমে তথ্যাবলী জোগাড় করে তার কার্যকরণ সম্পর্ক যাচাই করা হয় ফলিত গবেষণার মাধ্যমে। আর এখানে যেহেতু বাস্তবজীবনের উপর প্রয়োগ করা হয় তা এখানে নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ভুলতাকে ত্যাগ করা হয়। পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার, পরীক্ষা পদ্বতির উন্নয়ন, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয়াদী এর অন্তর্ভূক্ত। ফলিত গবেষণার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে। যা হলঃ
১। যেসকল বিষয়াবলী সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে সেই ব্যাপারে সকলকে সম্যকভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা।
২। মৌলিক গবেষণার উন্নয়নে সহায়তা করে।
৩। সাধারণীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরিত করার জন্য উপাত্ত ও প্রত্যয় সরবরাহ করা।
সাধারণত এই ধরনের গবেষণাকে উন্নয়শীল দেশে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়। দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্বশালী করার জন্যে এই ধরনের গবেষণা সেখানে ব্যবহৃত হয়। এর পিছনের অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণাকে একেবারে বাদ দিলে হবে না। কেনেথ ডি বেইলি এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
কোন সামাজিকন সমস্যার সমাধানে প্রায়োগিক হতে পারে এমন ফলাফল সমৃদ্ব করে যে গবেষণা হয় তা হল ফলিত গবেষণা।
কার্যক্রম গবেষণা
এটি মূলত ফলিত গবেষণার একটি অংশবিশেষ। ফলিত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে কার্যকারিতা ও গতিশীলতার জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে যে গবেষণা হয় তা হল কার্যক্রম গবেষণা। লেহম্যান এ ব্যাপারে বলেছেন,
কার্যক্রম গবেষক হল এক ধরনের ফলিত গবেষণা যেখানে সিদ্বান্তটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ব কাজে জড়িত গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ একই।
গবেষণার প্রকৃতির উদাহরণ
জনসংখ্যা বৃদ্ব বাংলাদেশে একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। মূলত এর জন্য অনেক সমস্যাবলী সৃষ্টি হয়। এটি কি কি কারণে হয়,এটির ফলে কি কি সমস্যা উদ্ভূত হয় এবং তা নিরুপুণের উপায় কি এই বিষয়াবলীসমূহ নিয়ে কি কি কর্মসূচী গ্রহণ করা যায় এর মাধ্যমেই চলতে পারে একটী গবেষণা।
বাহাস অর্থ হল উন্মুক্তকরণ এবং কোন কিছুর অনুসন্ধান করা।
ড. ইয়াহইয়া ওহায়ব বলেন,
কঠিন যমিন বা পাথরে গর্ত খনন করা।সুসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা।
পারতপক্ষে গবেষণা বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধানের একটি আর্ট। ইংরেজীতে একে research বলা হয় যার বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। research শব্দটি দুটি শব্দ তথা re এবং search এর সমন্বয়ে গঠিত। re এর অর্থ হল পুনঃ পুনঃ আর search এর অর্থ হল অনুসন্ধান করা এবং কোনকিছু খুঁজে বের করা। research এর পূর্ণাংগরুপ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
R-Rational of thinking
E-Expert and Exhautive treatment
S-Search for solution
E- Exactness
A-Analitical analysis of adequate data
R-Relationship of facts
C- Careful recording, critical observation, Constructive attittude
H- Honesty, Hard work.
তাহলে আমরা উপরোক্ত বিষয়াদীসমূহ বিশ্লেষণ করলে গবেষণার একটি সম্যক ধারনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।
The Advance learner Dictionary of Current English এ বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের যে শাখায় নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্যে ব্যাপক ও সযত্ন তথ্যানুসন্ধান তা হল গবেষণা।
রেডম্যান ও মরী বলেন, নতুন জ্ঞান আহরণের সুসংবদ্ব চেষ্টা-প্রচেষ্টা হল গবেষণা।
রাস্ক বলেন, গবেষণা একটি বিশেষ অভিমত যা মানস কাঠামোর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি, গবেষণা সেসব প্রশ্নের অবতারণা করা যাএর উদ্ঘাটন আগে কোনদিন হয় নাই, এবং সেই গবেষণার মাধ্যমে সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।
গ্রীন বলেন, জ্ঞানানুসন্ধানের আদর্শিত বা মানসম্মত পদ্বতির প্রয়োগই গবেষণা।
সাইয়েদ শরীফ বলেন, দুটি বস্তুর ভিতর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের দলীলের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের নাম হল গবেষণা।
ফানদালীন বলেন, উপস্থিত জ্ঞানের প্রবৃদ্বির লক্ষ্যে সুশৃংখল অনুসন্ধান বা পর্যালোচনা,যা উদ্বৃতি,প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যেম সম্পন্ন হয় তা হল গবেষণা।
জন ডব্লিউ বেষ্ট বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্বতির প্রয়োগ দ্বারা বিশ্লেষণের আরও আনুষ্ঠানিক,সুসংবদ্ব ও ব্যাপক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলা হয়।
রিচার্ড গ্রিনেল বলেন, গবেষণা হল সাধারণভাবে প্রয়োগযোগ্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টি যা করতে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক পদ্বতি ব্যবহৃত হয়।
কেউ কেউ মনে করেন যে, যা সকলের কাছে অজানা তা জানার নাম গবেষণা নয়।বরং যেবিষয়ে সকলের অল্প জ্ঞান রয়েছে সেই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভের পদ্বতি হল গবেষণা।
তাই রবীঠাকুর বলেছেন, জানার মাঝে অজানার সন্ধান করছি।
ম্যারি ম্যকডোনাল্ড বলেন, সুশৃংখলভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রচলিত জ্ঞানের সাথে বোধগম্য ও যাচাইযোগ্য জ্ঞানের সংযোজন হল গবেষণা।
পল ডি লিডি বলেন , গবেষণা একটি তীর্যক ও সামগ্রিক অনুসন্ধান বা পরীক্ষণ যার উদ্দেশ্য হিক নব উদ্ভাবিত তথ্যের আলোকে প্রচলিত সিদ্বন্তসমূহের সংশোধন করা হয়।
অর্থাৎ, গবেষণা হল নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের পদ্বতিগত ও নৈবর্ত্তিক বিশ্লেষণ ও রেকর্ডকরণ যা তত্ত্বের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই গবেষণার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পার। [বাকারাঃ২১৯]
আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? [আনআমঃ৫০]
গবেষণার জন্যে নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ অপরিহার্য যা হলঃ
১। অনুসন্ধিৎসু ও কৌতূহলী মনোবৃত্তি
২। সুনির্দিষ্ট বিচরণক্ষেত্র
৩। সুবিন্যস্ত অনুমান
৪। পর্যবেক্ষণযোগ্য তথ্যের সহজলভ্যতা
৫। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ কৌশল
৬। ফলাফল উপস্থাপনের যৌক্তিক কৌশল
গবেষণার বৈশিষ্ট্য
১। গবেষণা কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিবেদিত হবে।
২। গবেষণা প্রাথমিক বা প্রধান উৎস থেকে জ্ঞান বা উপাত্ত সংগ্রহ করে অথবা উপাত্ত নতুন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।
৩। গবেষণা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষালব্দ্ব সাক্ষ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর জন্য প্রয়োজন নির্ভুল পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনা।এর জন্যে দরকার দক্ষতা।
৪। এটি একটি কুশলী, পদ্বতিগত ও সঠিক অনুসন্ধান।
৫। এটি সাধারণ নীতির আবিষ্কারের উপর গুরুত্বারোপ করে থাকে।
৬।গবেষণা হবে যুক্তিযুক্ত ও নৈর্ব্যত্তিক। সম্ভাব্য সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর ব্যবহৃত পদ্বিতি, সংগৃহীত উপাত্ত ও সিদ্বান্তের যাচাই করতে হবে। যেসকল তথ্যসমূহ ভুল হতে পারে
৭। অনুমিত সিদ্বান্ত যাচাইয়ের জন্যে নিরপেক্ষভাবে যথার্থ কৌশল অনুসরণ করে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।
৮। সংগৃহীত উপাত্তকে পরিমাণগত বা সংখ্যাগতভাবে সুসংগঠিত হতে হবে।
৯। গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে।
১০। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।
১১। ফলাফলকে নিরপেক্ষভাবে সতর্কতার সাথে রেকর্ড করা।
১২। সিদ্বান্ত গ্রহণে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।
১৩। গবেষণাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তথ্যনির্ভর হতে হবে।
১৪। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।
১৫। গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্বতিকে অনুসরণ করে সকল কিছুর সমাধান প্রদান করবে।
১৬। গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হবে এবং এতে সহজ ধারনা থাকবে।
১৭। গবেষণার ডিজাইন হবে সুপরিকল্পিত যাতে প্রাপ্ত ফলাফল যতটুকু সম্ভব নৈবর্বত্তিক হয়।
১৮। গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তত্ত্বের মাধ্যমে নতুন কিছু জানার সুযোগ সৃষ্টি করা।
১৯। সংগৃহীত তত্ত্বের সঠিক যাচাই-বাছাই এবং এরপর তার যথাযথ প্রয়োগ।
২০। গবেষককে বিপুল কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হতে হবে।
২১। যদি কোন সমস্যা নিয়ে কেউ গবেষণা তাহলে সেই ক্ষেত্রে তার কেবল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেই হবে না।বরং তাকে এর জন্যে তার যথার্থ ও বাস্তবভিত্তিক সমাধানের পরামর্শের মাধ্যমে সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করতে হবে।
২২। সুপরিকলনার উপর ভিত্তি করে করতে হবে।
২৩।বিশেষ বিশেষ সমস্যাবলী এককভাবে নয় বরং দলবদ্বভাবে একত্রিতভাবে করতে হবে। কারণএতে সময়ে কম লাগেবে এবং স্বল্প সময়ে অনেক উন্নয়ন ঘটবে।
২৪। গবেষণার কাজ শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ কিংবা লিপিব্দ্ব করা না বরং তা হল অনুমিত সিদ্বান্ত গ্রহণ, সংগৃহীত তথ্যের বিন্যাস এবং বিশ্লেষণ করার মত কাজ করার যোগ্যতা থাকা।
২৫। নতুন জ্ঞানের সন্ধান দিতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে তা গবেষণা হবে না। ড. মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন,
গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে গবেষণাটি নতুন, ভইনব থেকে হবে যে বিষয়ে ইতিপূর্বে গবেষণা হয় নাই।
তবে গবেষণা যদি এমন হয় যে, তার দ্বারা আরও নতুন কিছু আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর তার দ্বারা পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে সেই গবেষণাটি ফলপ্রসূ হবে।
২৬। গবেষকদের চিন্তাকে সুসজ্জিত করতে হবে।
২৭। কারও বই বা প্রবন্ধ থেকে উদ্বৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ যার মাধ্যমে তথ্য যোগার করা হবে তার উদ্বৃতি পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ তুনজী বলেন,
গবেষকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আমানত,সততা। আমানতের সাথে গবেষক সাহিত্যিক, পণ্ডিত, মনীষীগণের মতামত উদ্বৃতি গ্রহ্ণ করার সময় মূল বক্তার প্রতি সম্পর্কিত করবে। এমন অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেকে কোন আলিমের বক্তব্য দেওয়ার পরে তা নিজের উদ্বৃতি বলে চালিয়ে যায়।
গবেষণার উদ্দেশ্য
গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য হল এই যে, এমন লুকায়িত সত্যের আবিষ্কার যা এখন পর্যন্ত যাকিছু আবিষ্কার হয় নাই। তাই গবেষণার যেসকল বৈশিষ্ট্য যা হবে তা নিম্নরুপঃ
(ক) কোন ঘটনা সম্পর্কে পরিচিতি হওয়া এবং সেই ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান।( এই ধরনের গবেষণা হল অনুসন্ধানমুখী গবেষণা)
(খ) কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, অবস্থা, দল ও গোষ্ঠীর চিত্রাংকন। (এই ধরনের গবেষণা হল বর্ণনামূলক গবেষণা)
(গ) কোন কিছু কতবার ঘটেছে এবং কোন কিছুর সাথে গবেষণাটি কতটুকু সম্পর্কযুক্ত। (এই ধরনের গবেষণা হল নিরুপক গবেষণা)
(ঘ) চল বা পরিবর্তিতগুলোর কার্যকরণ সম্পর্কে অনুমিত সিদ্বান্ত যাচাই। ( এই ধরনের গবেষণা হল অনুমিত সিদ্বান্তমূলক যাচাই)
(ঙ) প্রাচীন পাঠের কোন বিষয় উপস্থাপন করে এর যাচাই বাচাই করা। সে সম্পর্কে লিখিত সকল মতামত চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং এ ব্যাপারে গবেষকদের মতামত প্রদান।
(চ) নতুন বিষয় চিন্তা-গবেষণা করা যা নিয়ে ইতিপূর্বে কিছুই হয় নাই। সেই চিন্তা ধারাকে উপযুক্ত প্রমাণের সাহায্যে সকলের সামনে তুলে ধরা।
(ছ) গবেষক দ্বারা আবিষ্কৃত গবেষণার নতুন পদ্বতি সম্পর্কে রচনা করা এর গুরুত্ব ও উপকারিতা বর্ণনা করা।
(জ) গবেষণা কর্মের উদ্দেশ্য সংগৃহীত উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে নিজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দ্বার তাদের সত্যতা যাচাই করা, সেই সত্যের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও মন্তব্যসহ বিষয়টি সকলের কাছে উপস্থাপন করা, এবং বিষয়টির উপর আলোচনা করা। এটি নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে হতে পারে অথবা পুরাতন তত্ত্বের নতুনত্বের উপর ভিত্তি করে হতে পারে।
গবেষণার লক্ষ্য
১. নতুন কোন গবেষণামূলক ডিগ্রী অর্জন।
২. বাস্তব সমস্যার সমাধান প্রদান করা।
৩. যে সমস্যার কোন সমাধান হয় না তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা।
৪. সৃজনশীলতার পরিচয় প্রদান করা।
৫. সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সমাজকে সেবা প্রদান করা।
৬.সমাজচিন্তা ও সমাজসচেতনা বৃদ্বি করা।
৭. মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কল্যাণ বৃদ্বিকরণ।
৮. বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বের করা।
৯. যা ইতিপূর্বে মানুষের কাছে অজানা ছিল তা সকলের কাছে অবহিত করা।
গবেষণার প্রকৃতি
উদ্দেশ্যগতভাবে যে কোন গবেষণাই নতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপস্থিত জ্ঞানকে সমৃদ্ব করতে আগ্রহী করে তোলে। এর পিছনে কাজ করে গবেষকদের অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহুলী মন এবং সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ উদ্ভাবনের প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গবেষণালব্দ্ব ফলকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গবেষণা দুই ধরনের যা হলঃ মৌলিক গবেষণা এবং ফলিত গবেষণা। বর্তমানে গবেষকগণ আরেক ধরনের গবেষণার কথা বলে থাকেন যা হল কার্যক্রম গবেষণা।
গবেষণার প্রকৃতি হয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।
২। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।
৩। গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে।
৪। অভিজ্ঞসম্পন্ন লোকদের দ্বারা গবেষণা করা দরকার।তা না হলে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।
৫। গবেষণার উপর গবেষণা করে এর দ্বারা নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য আবিষ্কার হয়।
এই ধরনের গবেষণা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১।মৌলিক গবেষণা
এটি হল আদি বা মূল গবেষণা।এর ধারনা মূলত পদার্থবিজ্ঞান থেকে নেওয়া হয়েছে। একে কখনও কখনও বিশুদ্ব গবেষণা বা basic research বা Fundamental research বলা হয়। এই মৌলিক গবেষণার সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে কেনেথ ডি বেইলী বলেন, বিশুদ্ব গবেষণা হল তত্ত্ব ও অনুকল্পের বিকাশ ও পরীক্ষা ঘটিএ থাকে যা অনুসন্ধানকারীর কাছে বুদ্বিবৃত্তিক দিক দিয়ে আগ্রহোদ্দীপক এববগ যার ভবিষৎ সামাজিক কার্যকারিতা থাকলেও বর্তমানের সামাজিক সমস্যার ক্ষেত্রে কোন কার্যকারিতা থাকে না।
এর মূল লক্ষ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন মৌলিক নীতি ও সত্য আবিষ্কার করা।এটি একটি কঠোর,নিয়ন্ত্রিত,ধারাবাহিক ও বিশ্লেষণমুলক পদ্বতি। এ নীতি অনুযায়ী মৌলিক গবেষণা সুদৃঢ়ভাবে কেবল তত্ত্বের পরীক্ষা ও উন্নয়ন ঘটায় মাত্র আর তা প্রধানত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হয়ে থাকে।এই মৌলিক গবেষণার জন্য প্রয়োজন জটিলতার সমস্যা, নিখুঁত পদ্বতি,উত্তম উপকরণ,উচ্চতর নিয়ন্ত্রন ও বিশ্লেষণ। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হল তত্ত্বের বিকাশ ঘটানো আর জ্ঞান আহরণ হল এর প্রধান লক্ষ্য।বেশীরভাগ বিজ্ঞানীগণ এই পদ্বতির আলোকে গবেষণা করে থাকেন।উদাহরণস্বরুপ আমরা নিউটনের মধ্যাকার্ষণ শক্তির তত্ত্বের কথা বলতে পারি যার দ্বারা পরবর্তীতে সৌরচুল্লির আবিষ্কার হয়। মাদাম কুরী রেডিয়াম আবিষ্কার করেন যার তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে আলফ্রেড নোবেল হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার করেন।
এই ধরনের গবেষণা দুই ধাপে সম্পন্ন হতে পারে। যা হলঃ
ক। কোন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারঃ
মৌলিক গবেষণা থেকে এমন তত্ত্ব আবিষ্কৃত হবে যা ইতিপূর্বে কখনও ছিল না। এই ধরনের গবেষণা মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মিটানোর দরুন কল্পনার মাধ্যমে জাগ্রত হয়। যার দ্বারা বিশ্ব দেখতে পায় নতুন কোন আলোর পথ। গ্যালিলিও, নিউটন,আইনস্টাইন প্রমুখ এর অবদান মৌলিক বা স্ব স্ব ধারনাজাত বা কল্পনাপ্রসূত। তাই এ ধরনের গবেষণা হল তাত্ত্বিক গবেষণা।
খ। প্রচলিত তত্ত্বের উন্নয়ন
এটি হল কোন প্রচলিত তত্ত্বের কিছু কিছু অনুমানকে সংশোধন বা পরিমার্জন করে তত্ত্বের উন্নতি ঘটানো। কখনও তা পুরাতন তত্ত্বের উপকরণের উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন তত্ত্বের বিকাশ ঘটায়। উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপ, বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা, শিক্ষার মূল্যবোধ, শিক্ষার লক্ষ্য ইত্যাদি এই গবেষণার অন্তর্ভূক্ত।
২। ফলিত গবেষণা
কোন কোন সমাজ,ব্যবসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শিল্প তাৎক্ষণিকভাবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় আর তার সমাধানের জন্যে যে গবেষণা হয় তাকে ফলিত গবেষনা বলা হয়। একে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা বলা হয়। কারণ এই ধরনের গবেষণায় মাঠ পর্যায়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এই গবেষণার দ্বারা মৌলিক গবেষণার মত নতুন জ্ঞান অর্জন হয় না।বরং এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা হয়। বস্তুত বাস্তব সমস্যা সমাধান, চাহিদা, সম্পদ, প্রক্রিয়া ও লাভ-ক্ষতির মাধ্যমে তথ্যাবলী জোগাড় করে তার কার্যকরণ সম্পর্ক যাচাই করা হয় ফলিত গবেষণার মাধ্যমে। আর এখানে যেহেতু বাস্তবজীবনের উপর প্রয়োগ করা হয় তা এখানে নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ভুলতাকে ত্যাগ করা হয়। পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার, পরীক্ষা পদ্বতির উন্নয়ন, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয়াদী এর অন্তর্ভূক্ত। ফলিত গবেষণার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে। যা হলঃ
১। যেসকল বিষয়াবলী সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে সেই ব্যাপারে সকলকে সম্যকভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা।
২। মৌলিক গবেষণার উন্নয়নে সহায়তা করে।
৩। সাধারণীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরিত করার জন্য উপাত্ত ও প্রত্যয় সরবরাহ করা।
সাধারণত এই ধরনের গবেষণাকে উন্নয়শীল দেশে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়। দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্বশালী করার জন্যে এই ধরনের গবেষণা সেখানে ব্যবহৃত হয়। এর পিছনের অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণাকে একেবারে বাদ দিলে হবে না। কেনেথ ডি বেইলি এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
কোন সামাজিকন সমস্যার সমাধানে প্রায়োগিক হতে পারে এমন ফলাফল সমৃদ্ব করে যে গবেষণা হয় তা হল ফলিত গবেষণা।
কার্যক্রম গবেষণা
এটি মূলত ফলিত গবেষণার একটি অংশবিশেষ। ফলিত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে কার্যকারিতা ও গতিশীলতার জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে যে গবেষণা হয় তা হল কার্যক্রম গবেষণা। লেহম্যান এ ব্যাপারে বলেছেন,
কার্যক্রম গবেষক হল এক ধরনের ফলিত গবেষণা যেখানে সিদ্বান্তটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ব কাজে জড়িত গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ একই।
গবেষণার প্রকৃতির উদাহরণ
জনসংখ্যা বৃদ্ব বাংলাদেশে একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। মূলত এর জন্য অনেক সমস্যাবলী সৃষ্টি হয়। এটি কি কি কারণে হয়,এটির ফলে কি কি সমস্যা উদ্ভূত হয় এবং তা নিরুপুণের উপায় কি এই বিষয়াবলীসমূহ নিয়ে কি কি কর্মসূচী গ্রহণ করা যায় এর মাধ্যমেই চলতে পারে একটী গবেষণা।
বর্তমানে গবেষকের ছড়াছড়ি সর্বত্র আসলে গবেষক কে বা কারা?
ReplyDelete=====================
পথে ঘাটে,গাড়ীতে সবখানে ইসলাম সম্পর্কে নব্য মুফতি আর গবেষকরা দাত গজাচ্ছেন।
ফেইসবুকেতো গবেষকরা গিজগিজ করছেন। তাদের গবেষনার বিষয় হল হানাফী মাযহাবের ভুল ধরা এবং দেওবন্দি আলেমদের বিষোধগার করা!
এ সমস্ত গবেষকরা অবশ্য কোন প্রতিষ্টিত গবেষকের সংশ্রবে থেকে গবেষক হননি।এমনকি কোন মাদ্রাসায় ও পড়া লেখা করেননি। মতিউর রহমান ,নায়েক সাহেবের লেকচার শুনে অথবা মুযাফফার সাহেবের মত মিথ্যুকদের জালিয়াতিতে ভরা বাংলা বই পড়ে গবেষক হয়ে গেছেন।
তাদেরকে যদি বলা হয়: ভাই,আপনিতো মাদ্রাসায় পড়েননি,কোন হাদীস শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ আলেমের সংশ্রবেও থেকে হাদীস শিখেননি, তাহলে কেন আপনি দ্বীনি বিষয়গুলো নিয়ে একেরপর এক ফতোয়া মারেন? তখন তারা ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন যে ,
এ কথা কোথায় পেয়েছেন,ফতোয়া মারতে হলে মাদ্রাসায় পড়তে হবে? আরো কত কি।
আসলে ফতোয়া মারতে হলে গবেষকের দাবীদার হতে হলে যে প্রতিষ্ঠিত কোন মুফতি বা গবেষকের শরনাপন্ন হয়ে গবেষক হতে হয় তাদের সেই জ্ঞান টুকুও নেই
তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা পেশ করা হল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট বলেছেন যে,দ্বীনি ইলম শিক্ষা করতে হয় আলেমের সান্নধ্যে থেকে। একা একা পড়ে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা যায়না। তিনি বলেন:
مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْراً يُفَقِّهْهُ فِى الدِّينِ ، وَإِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ
অর্থাৎ,আল্লাহ যার কল্যাণ চান,তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন। আর ইলম অর্জন করতে হয় অন্যের সান্নিধ্যে থেকে।(বুখারী,হাদীস নং,৬৭.)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ(৮৫২হিঃ) এ হাদীসের ব্যাখ্য করতে গিয়ে বলেন:
والمعنى ليس العلم المعتبر الاالمأخوذ من الأنبياء وورثتهم على سبيل التعلم
অর্থাৎ,শুধুমাত্র সে ইলম গ্রহণযোগ্য,যা নবীদের থেকে অথবা নবীর ওয়ারিসদের থেকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে অর্জিত হয়।(ফাতহুল বারী,১/২৯৪.দারুল মা’রেফা,বায়রুত)
আল্লামা আইনী রহঃ(৮৫৭হিঃ) বলেন:
أي ليس العلم المعتد إلا المأخوذ عن الأنبياء عليهم الصلاة والسلام على سبيل التعلم والتعليم
অর্থাৎ,গ্রহণযোগ্য ইলম হল,যা নবীদের থেকে শিক্ষাদানের পদ্বতিতে অর্জিত হয়।
উমদাতুল কারী,২/৪৫৮.মাকতাবাতুশ শামেলা)
নবীর ওয়ারিছ কারা?সে বিষয়তো একাধিক হাদীসে বলা হয়েছে যে,আলেমরা হল নবীর ওয়ারিছ।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ বলেন:
إنَّ الرَّجُلَ لاَ يُولَدُ عَالِمًا ، وَإِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ
অর্থাৎ,কোন মানুষ আলেম হয়ে জন্ম গ্রহণ করেনা।বরং কারো সান্নিধ্যে থেকে ইলম অর্জন করতে হয়।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা,হাদীস নং,২৬৬৪৬.শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দাঃবাঃ তাহকীককৃত)
হাস্যকর হলেও সত্য যে,ভদ্র লোক পেশায় ব্যাংকার। অথবা কোনো কারখানার কর্মচারী। অথবা সরকারী চাকুরীজিবী। হাদীসের এক দুটো বাংলায় অনুদিত বই পড়েছেন। ব্যস,কেল্লাহ ফতেহ। শুরু করে দেন ফতোয়া চালাচালি।এমনকি কোন প্রতিষ্ঠিত মুফতি গবেষকের সাথেও টাক্কা মারতে দ্বীধা করেনা ।
তার আগ্রাসান থেকে বাদ পড়েননা আব্দু্ল্লাহ মাসউদ থেকে আবু হানিফা হয়ে মাদানী পর্যন্ত কেউই!
কথায় কথায় তিনি বেদয়াত ফতোয়া দেন! হানাফীদের নামাজের ভুল ধরেন! এমনকি হানাফি শাফেয়ী সহ চার মাযহাবের সকলকে মুশরিক পর্যন্ত বলতেও এই সকল নব্য গবেষকদের দ্বিধাবোধ করেনা। এসব ফতোয়াবাজদের জ্ঞানের উপর সত্যিই করুণা হয়।
তাদের হেদায়েত কামনা করছি
This comment has been removed by a blog administrator.
ReplyDelete