Sunday, 25 August 2013

প্রশ্নঃ ইয়াহূদী ধর্মের পরিচয় দাও এবং এই ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো কি কি?


ভূমিকা


বলা হয়ে থাকে যে,


Judaism was the first religion to teach monotism or belief in one Allah.


এই পৃথিবীতে যত প্রাচীন ধর্ম রয়েছে তার ভিতর ইয়াহূদী অন্যতম। এই ধর্ম অটি হযরত মূসা(আঃ) এর উপর একটি ধর্ম।তার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করা হয় দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ। বর্তমানে এটি ওল্ড টেষ্টামেন্ট নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমানে এবং অতীতে ইয়াহূদী ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে।  এই ইয়াহূদী ধর্মের পরিচয় ও মূল মূল শিক্ষা ও বিশ্বাসসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল

ইয়াহূদীদের পরিচয়


ইয়াহূদী কথাটি আরবী তাহুদ হতে উদ্ভূত। যার অর্থ হল তওবা,গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া ইত্যাদি।
আবার কারও মতে, এই শব্দটি হাওয়াদা থেকে উৎপন্ন যার অর্থ হল বন্ধুত্ব,ভালবাস ইত্যাদি।

আবার কারও মতে

ইয়াহূদা শব্দটি সংসস্কৃ শব্দ ইয়াহুদা থেকে আগত যার মূল হল আহ যার অর্থ তাওবা।তাই ইয়াহূদীদের ইয়াহূদা এবং যরদুস্তদের আহবা বলা হয়।


ইয়াহূদী শব্দটির উৎপত্তি


 

হিব্রানী ভাষায়, ইয়াহূদা হল একজন দেবতার নাম।সেখান থেকে ইয়াহুদী নামকরণ হয়। এ ব্যাপারে দুটি মতামত পাও্য়া যায় যা হলঃ
 

পৌরণিক সাহিত্যে বলা হয়েছে যে, ইব্রাহীম(আঃ) ইয়াহূদার জন্য একটি উপাসানালয় প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি মিসরে ইয়াহূদার সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, মিসরে ইয়াহূদা নামে একজন দেবতার উপাসনা হত।


অপর এক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ইব্রাহীম(আঃ), ইয়াকূব(আঃ) ও ইসহাক(আঃ) তারা তাদের উপাস্যকে সিদওয়ারী বলে ডাকতেন। সেখান থেকে ইয়াহূদী শব্দের উদ্ভব ঘটে।


কিতাবুল খারাজ হতে জানা যায় যে, তুর পাহাড়ে আল্লাহ পাক মূসা(আঃ)কে ইয়াহূদা হিসেবে পরিচয় প্রদান করলে তখন থেকে ইয়াহূদী কথাটির উদ্ভব ঘটে।
 

একটি মতামত থেকে জানা যায় যে, শুয়াইব(আঃ) এর একজন নবী ছিলেন এবং  তার স্রষ্টা ছিলেন ইয়াহূদা এবং সেখান থেকে মূসা(আঃ) এর অনসরণকারীগণের নাম হয় ইয়াহূদী।


তাফসীরে মারিফুল কুরআনে বলা হয়েছে, হযরত ইয়াকূব(আঃ) এর ১২ জন সন্তান ছিলেন। তার ভিতর একজন ছিল ইয়াহূদা যিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী,গুনী ও মেধাবী।  তারই নামানুসারে ইয়াহূদী নামকরণ হয় এবং তাদের প্রতিপালিত ধর্মের নাম হয় ইয়াহূদী। 


The Child Craft Dictionary তে বলা হয়েছে,

Juaism is the religion of the Jews people. It is holy books are the Towrath and the Tahmud.

Religion of mankind তে বলা হয়েছে,

Judaism the religion of the jews,is the first religion in the world to teach that there is only one God.

কেদারনাথ তেওয়ারি বলেন,

Judaism is the religion of the Jews,the desendents of the ancient Hebrews, the chosen people.

আনোয়ারুল্লাহ মাযহারী বলেছেন,


মানবজাতির মধ্যে ইয়াহূদী হল এমন এক জাতি যারা মূসা(আঃ) ও তাওরাতের মধ্য বিশ্বাস করে।

তাহলে আমরা উপরোক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করে বলতে পারি যে, যারা মূসা(আঃ) কে নবী হিসেবে মান্য করে এবং তার প্রচারিত ধর্মের উপর অবিচল থাকে এবং তাওরাত ও তালমুদকে তাদের দিক-নির্দেশনা হিসেবে মনে করে থাকে তারাই ইয়াহূদী।

ইয়াহূদীদের মূল কিতাবলী


ইয়াহূদীগণ দুটি কিতাবকে অনুসরণ করে থাকে যার একটি হল তাওরাত যেখানে ইয়াহুদী ধর্মের মূল নীতিমালাসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে এর আদি নাম হল ওল্ড টেষ্টম্যান এবং অপরটি হল তাহমুদ যেখানে সামাজি আচার-আচরণ,অভ্যাস,রীতি-নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।


ইয়াহূদীদের মূল মূল শিক্ষা


দুটি মতবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় যা হল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। আর অপরটি হল বনী ইসরাইলের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক।

ইয়াহূদীদের দশটি আজ্ঞা পালন করতে হয় যাকে ইংরেজীতে Ten Commandments বলা হয়। এগুলো হলঃ

১। তুমি প্রভূকে মানবে, কেবল তার সেবা করবে আর তার নামে স্মরণ করবেল                             ২। পিতা-মাতার বাধ্য হয়ে তাদের সম্মান হবে।

৩। রবিবার বিশ্রাম করবে এবং পবিত্রভাবে ইবাদত করবে।                          
৪। নরহত্যা করবে না।

৫। মনে,বাক্যে ও কর্মে সৎ, শুদ্ব ও দয়ালু হবে।                                 
 ৬। ব্যভিচার করবে না।

৭। চুরি করবে না                                                    
৮। মিথ্যা বলবে না।

৯। পরস্ত্রী লোভ করবে না এবং দৃষ্টি নত রাখবে।                          
১০। পরদ্রব্যের প্রতি লোভ করবে না।

১। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস

ইয়াহূদীগণ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাওরাতে একথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।

২। পুনরুত্থানের বিশ্বাসী

ইয়াহূদীগণ মনে করে যে, এই দুনিয়ার জীবন সবকিছু নয়।তারা পরকালের পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে। মানুষকে তার কাজের হিসাব পরকালে প্রদান করতে হবে। ভাল কাজের জন্য রয়েছে পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। কেদারনাথ টেওয়ারি বলেন,


ইয়াহূদীগণ আত্মার শ্বাশ্বত ধারায় এবং পরকালে বিশ্বাসী।

৩। রাসূলগণের উপর বিশ্বাস

ইয়াহূদীগণ সকল নবী-রাসূলে বিশ্বাসী। তাওরাতে বলা হয়েছে, প্রেরিত মহাপুরুষেরা সত্য,তাদের বাণীও সত্য,তারা সাধারণ সৃষ্টি হতে পৃথক গুণাবলীর অধিকারী। কেদারনাথ টেওয়ারি বলেছেন,

ইয়াহূদিগণ বহু নবীতে বিশ্বাসী।

৪। ইচ্ছার স্বাধীনত এবং কর্মবাদে বিশ্বাসী

 তারা বিশ্বাস করে যে, মানুষ তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সম্পূর্ণরুপে স্বাধীন এবং দায়ী। তারা ঈমান অপেক্ষা কর্মকেই অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন।
৫। মানুষের অপকার সাধন করা নিষিদ্ব

দৈনন্দিন কথা-বার্তায় সামান্যতম অধিক কথা, কারও মনে কষ্ট প্রদান করা তাদের ধর্মে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ব।অশ্লীল বাক্যালাপ, কাউকে উস্কানী দান করা, দূর্বল ও অসহায় মানুষদের উপর জুলুম করা নিষিদ্ব

৬।সালাত আদায় করা

দিনে তারা তিনবার সালাত আদায় করে এবং প্রভাতে সালাতে তারা বিশেষ পোশাক পরিধান করে।

৭। প্রভূর নিকট কৃতজ্ঞতা

তারা প্রভূর নিকট বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে।তারা আহারের পূর্বে শোকরানা পাঠ করে, জীবনের প্রতিটি স্বাদ-আনন্দে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

৮। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা

ইয়াহূদী ধর্মে কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রনীতি নেই কিন্তু তারা তাদের উপাসানালয় নিজ নিজ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করেন।

৯। আহকামের ব্যাপারে জ্ঞান লাভ করা

ইয়াহূদী ধর্মে আহকামের ভিতর শরীয়াত ও কানূনের অধ্যয়ন এবং তার উপর চিন্তা-ভাবনার নির্দেশ রয়েছে। এ কারণে হিব্রু ভাষার অধিকাংশ সাহিত্য শরীয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংক্রান্ত।তারা তাদের প্রতিটি সন্তানদের শিক্ষা দান করাকে ফরয মনে করে থাকে।  

১০। সুদ প্রসংগে

ইয়াহূদী ধর্মের রীতি হল ইয়াহূদীগণ একে অপরের কাছে থেকে সুদ নিতে পারবে না কিন্তু অন্য ধর্মের কারও কাছে থেকে তারা সুদ নিতে পারবে।

১১।মিথ্যার বিধান

ইয়াহূদী ধর্মে পারস্পারিক মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা শপথ সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ব এবং জঘন্য পাপ।

১২। বহুবিবাহ


ইয়াহূদী ধর্মে বহু বিবাহের প্রচলন রয়েছে।তবে তাদের রাজা-বাদশাদের জন্য বহু বিবাহ জায়েজ নয়।

১৩। ন্যায়পরায়নতা

ন্যায়পরায়ণতার ব্যাপারে ইয়াহূদী ধর্ম অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে। ইয়াহূদীগণ বলে থাকেন যে, প্রত্যেক ইয়াহূদীকে অবশ্যই সততা, ন্যায়পরায়ণ এবং কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে।

১৪। লিআনের বিধান

ইসলাম ধর্মের মত ইয়াহূদী ধর্মে লিআনের বিধান আছে যাতে করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক অটুট থাকে।

১৫। তাওরাত সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ও মূসা(আঃ) শ্রেষ্ঠ নবী

ইয়াহূদীদের মতে, সকল কিতাবের ভিতর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হল তাওরাত কিতাব।আর সকল নবীদের ভিতর শ্রেষ্ঠ নবী হলেন মূসা(আঃ)।কেদারনাথ তেওয়ারি বলেন,

ইয়াহূদীগণ বিশ্বাস করে যে, মূসা(আঃ)) হলেন নবীদের ভিতর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তার উপর আল্লাহর সর্বাধিক রহমত বর্ষিত হয়েছে।


১৬। সৃষ্টির সেবা করা

ইয়াহূদীগন সর্বদা সৃষ্টির সেবাকে সেরা ইবাদত হিসেবে মনে করে থাকে। তারা এমন কোন কাজ করে না যার দ্বারা অন্যের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়।

১৭। ঋণ গ্রহণ

যারা যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে ৭ বছরের জন্য দাসী করা হবে এবং এরপর তারা স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে।

উপসংহার


পরিশেষে বলা যায় যে, ইয়াহূদী ধর্ম একটি অতি পরিচিতি প্রাচীন ধর্ম। ইয়াহূদীগণ মুসলিমগণের মত তাওহীদে বিশ্বাসী কিন্তু তার শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)কে শ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে মান্য করে না। তাদের দশ আজ্ঞা পালন করলে মহামানব হওয়া যায়।এ শিক্ষাগুলো সমাজে বাস্তবায়ন করলে একটি সুখী সমাজ গঠন করা সম্ভবপর হয়। David Harley বলেন,

Judaism is the oldest of the worlds three great monotheistic religions and is the parent both of Christianity and Islam.    

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...