Friday 23 August 2013

কোর্স নং-৪০৭ প্রশ্ন- তাবিঈদের যুগে ফিকাহের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।

তাবিঈদের যুগে ফিকাহের ক্রমবিকাশ

মুহাম্মদ(সাঃ) এর ওফাতের পর থেকে ১০০ বছরের ভিতর সকল সাহাবী এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকে। মদীনায় সর্বশেষ সাহাবী হিজরী, কূফার সর্বশেষ সাহাবী হিজরী, দামেশকের সর্বশেষ সাহাবী হিজরী এবং সর্বশেষ সাহাবী আমীর ইবন আব্দুল্লাহ তুফায়ল ১১০ হিজরীতে বিদায় নেন।সাহাবাদের বিদায়ের পর থেকে তাবিঈগণ ফিকাহচর্চ্চা শুরু করেন।সাহাবাদের যুগে যেই মতবিরোধ সৃষ্টি হত তার আলোকে তাবিঈগণ সমাধান দিতেন।তারা কখন এক সাহাবীর উপর অন্য সাহাবীর মর্যাদা বেশী দিতেন যদিও সেই সাহাবী ১ম শ্রেণীর কোন সাহাবী যদি হয়ে থাকতেন।যেমনঃ তায়াম্মুম দ্বারা ফরয গোসলের কাজ হয় না এই কথা উমর(রাঃ) এবং ইবন মাসউদ(রাঃ) প্রদান করেছিলেন। কিন্তু তারা এর বিপরীতে আম্মার বিন ইয়াসার(রাঃ) এবং ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) এর মতামতকে গুরুত্ব প্রদান করেন। সেই সময় অঞ্চল ভিত্তিতে তাবিঈগণের মর্যাদা বিভিন্ন ধরনের হতে থাকে। সেই সময় বিভিন্ন কারণে তাবিঈগণের  ভিতর মতভেদ সৃষ্টি হতে থাকে। তার পিছনে কিছু  কারণ ছিল। তা হলঃ

১।তখন ইসলামী সম্রাজ্যের এতটা বিস্তৃতী ঘটলে লাগল যে, সাহাবাগণ বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করা শুরু করে এবং এর ফলে তার সকলে এলাকার ভিত্তিতে নিজ মতামত পেশ করতে থাকে এবং মতবিরোধ বৃদ্বি পেতে থাকে।

২। সেই সময় বিভিন্ন চরমপন্থামূলক ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে যাদের দ্বারা জাল হাদীস,নিজস্ব মতানুযায়ি তাফসীর এবং নিজস্ব চিন্তা-ধারার প্রেক্ষিতে তারা নিজেদের মত করে ইসলামকে সাজানো শুরু করে।

৩। সেই সময়ে স্বার্থসিদ্বির জন্য কিছু কিছু কুচক্রী মহল হাদীসকে জাল করা শুরু করে।তার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের জন্য সঠিক মাসালা জানা অত্যন্ত দুষ্কর হোয়ে উঠে। তাই বিভ্রান্তীকে দূর করার জন্য সেই সময় বিভিন্ন কেন্দ্রে তাবিঈগণ নিজস্ব কেন্দ্রের মাধ্যমে ফিকাহচর্চ্চা শুর করে

নিম্নে এই তাবিঈদের স্থানভিত্তিক ফিকাহচর্চ্চার কথা উল্লেখ করা হলঃ

মদীনাঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর সায়্যিদ বিন মুসাইয়াব এবং সালিম বিন আব্দুল্লাহ সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছিলেন।এদের পরে যুহরী, ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবন আব্দুর রহমান, উরউয়া বিন যুবায়র, আব্দুল্লাহ বিন আতবাহ,কাসিম বিন মুহাম্মদ,নাফি(র::ঃ),  এবং রুবীয়া বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন।  

মক্কাঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর আতা বিন রিবা, মুজাহিদ বিন যবর,আকরামা(রাঃ), আব্দুল আযীয মুহাম্মদ বিন মুসলিম সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

কূফাঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর ইব্রাহীম নাখী,মাশরুক বিন আজদা,সাঈদ বিন যুবায়র,হাম্মাদ(রঃ)  এবং ইমাম শাবী সর্বাধিক সম্মান লাভ করেছিলেন।

বসরাঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর হাসান বসরী,কাতাদা,আবুল আলীয়া রফী এবং মুহাম্মদ বিন সীরিন সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

ইয়ামানঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর তাউস বিন কায়সান, ওহাব বিন মুনাব্বাহ, তাউস বিন কাইসান সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

দামেস্কঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর মাকহুল  সর্বাধিক বিখ্যাত ছিলেন।এছাড়া সেখানে আবূ ইদ্রীস খাওলানী(রঃ), রিজা বিন হুবুয়া, উমর বিন আব্দুল আযীয বিখ্যাত ছিলেন।

ইয়ামামাঃ
 এখানে ফকীহদের ভিতর  ইয়াহইয়া বিন কাসীর সর্বাধিক প্রসিদ্বি লাভ করেছিলেন।

খুরসানঃ
এখানে ফকীহদের ভিতর আতা আল খুরসানী সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছিলেন।
পরবর্তীতে ফাতওয়ার কেন্দ্রসমূহের ভিতর দুটি কেন্দ্রের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্বি পেতে থাকে এবং অন্য সকল কেন্দ্রসমূহের গুরুত্ব কমতে থাকে।একদিকে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) কর্তৃক আহলুল রায় কূফা অঞ্চলে এবং আহলুল হাদীসের উপর ভিত্তি করে হিযায অঞ্চলে এক বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠে।

ফিকাহ সংকলনের সূচনা

সাইদ বিন মুসাইব এবং ইব্রাহীম নখয়ী যথানিয়মে বিভিন্ন অধ্যায়ের ফিকাহ সংকলন করেছেন। তারা কিছু মূলনীতির আলোকে ফিকাহ সংকলন করতেন।
সায়্যিদ বিন মুসাইয়াব মনে করতেন যে, হারামাইনের ফকীহগণ সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি এবং তারা অনুসরণকারীগণ উমর(রাঃ),উসমান(রাঃ), আয়শা(রাঃ), আবূ হুরায়রা(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বিভিন্ন হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে মাসালা প্রণয়ন করতেন।যেইসকল বিষয় সাহাবাগণ মতৈক্য পোষণ করেছেন সেই সকল বিষয়ে তারা গ্রহণ করত আর যেইসকল বিষয়ে মতপার্থক্য থাকত সেই সকল বিষয়ে তারা একে অপরের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে ফয়সালা প্রদান করতেন।
অন্যদিকে কূফায় বসবাসরত সকল ফকীহ এটা মনে করতেন যে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ এবং আলী(রাঃ) এর চেয়ে অধিক হারে বড় ফকীহ আর কেউ হতে পারে না। ইব্রাহীম নখয়ী ছিলেন কূফায় বসবাসরত সকল মুজতাহিদদের মুখপাত্র,তিনি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রাঃ) এর মাসালার আলোকে যাবতীয় বিষয়াবলীর সমাধান প্রদান করতেন।

এভাবে করে তাকলীদ যুগ শুরুর আগে থেকে তাবিঈগণের যুগে এভাবে ইসলামী ফিকাহের চর্চ্চা হতে থাকে।




No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...