Monday 26 August 2013

বাংলাদেশের বনজ সম্পদ সম্পর্কে যা জান লিখ


বাংলাদেশের বনজ সম্পদ


 

একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২৫% বনভূমি থাকা দরকার।ফিনল্যান্ডে তার পরিমাণ ৭৪%,মায়ানমারে ৬৭%, জাপানে ৬৩%, রাশিয়ায় ৫১%,কানাডাতে ৪৫% এবং আমেরিকাতে ৩৪%।কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে তার পরিমাণ অতি নগণ্য যার পরিমান হল মাত্র ১৭%।নিম্নে বাংলাদেশের বনভূমির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলঃ

 

সুন্দরবন


 

এ বন বাংলাদেশের বৃহত্তর খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।খুলনা,সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং বরগুনা জেলার কিছু অংশ এ সুন্দরবন জুড়ে রয়েছে। এখানে প্রচুর পরিমাণ সুন্দরী গাছ পাওয়া যায় বলে একে সুন্দর বন বলা হয়।এই বন যেহেতু সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত তাই একে স্রোতজ বন বলা হয়। এই বনভূমির আয়তন হল ৬৭৮৬ বর্গ কিলোমিটার (২৬২০ বর্গমাইল) । জোয়ার-ভাঁটা,পর্যাপ্ত উত্তাপ,লবণাক্ত পানির প্রভাব,উর্বর মাটি এবং অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য এই বনভূমি গড়ে উঠেছে।

 

প্রধান প্রধান গাছপালা


 

এই বনভূমির প্রধান প্রধান গাছসমূহ হল সুন্দরী,গরান,গেওয়া,কেওয়া,ধুন্দল, আমুর, গোলপাতা,বালিপাশা ইত্যাদি।

 

অর্থনৈতিক গুরুত্ব


 

১. সুন্দরী বৃক্ষের কাঠ বৈদ্যুতিক ও টেলিগ্রাফিক তার তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

২. গেওয়া দিয়ে কাগজ ও দিয়াশলাই তৈরী করা হয়।

 

৩. এখানে প্রচুর পরিমাণ গোলপাতা পাও্যা যায় যা দিয়ে ঘরের ছাউনি তৈরী করা হয়।

 

৪. ধুন্দল কাঠ দ্বারা পেন্সিল তৈরী করা হয়।

 

৫. গরান কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

৬. গরান বৃক্ষের বাকলের রস চামড়া পাকা করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

 

 

চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের বনাঞ্চল

 

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা জুড়ে যেসকল পাহাড়ি এলাকা রয়েছে সেইসকল জায়গাতে রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভিবাজার,সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ এলাকা জুড়ে এ বনাঞ্চল অবস্থিত। এর আয়তন হল ১৫৩২৬ বর্গকিলোমিটার(৫৯২০ বর্গমাইল)। এর ভিতর  চট্টগ্রামে ৪৪২৭ বর্গমেইল, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০৯২ বর্গমাইল ও সিলেটে ৪০১ বর্গমাইল বিস্তৃত। এখানে পরিমিত উত্তাপ এবং পরিমাণমত বৃষ্টিপাতের ফলে এবং বেলে পাথর এবং কর্দমযুক্ত মাটির জন্য এখানে বনভূমি গড়ে উঠেছে। এখানে পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষ পাওয়া যায় বলে একে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বা পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

 

প্রধান প্রধান গাছ-পালা


 

গর্জন, গামার,জারুল,শিমুল,কড়ই্‌সেগুন,চাপলিশ,ময়না,তেলসুর,চম্পা,কদম,জলপাই,ছাতিম,আমলকি, বনজাম,বাঁশ,মধু,বেত,মোম পাওয়া যায়।

 

অর্থনৈতিক গুরুত্ব


 

১. চন্দ্রঘেনার রেয়ন কারখানার প্রধান কাঁচামাল বাঁশ এখান থেকে নেওয়া হয়।

 

২. বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র এবং গৃহাদি নির্মাণ করা হয়।

 

৩. বেত দ্বারা চেয়ার,টেবিল,শীতল পাটি, মাদুর,চাটাই ইত্যাদি তৈরী হয়।

 

৪.  এ বনভূমির ঘাস ও নলখাগড়া সিলেটের কাগজ ও মণ্ডকলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

৫. গর্জন ও জারুল বৃক্ষ রলওয়ে স্লিপার তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

 

৬. এসকল বনাঞ্চল থেকে রবার গাছ উৎপন্ন হয়।

 

 

 

মধুপুর ও ভাওয়াল বনভূমি

 

ঢাকা ও ময়মিনসিংহ অঞ্চল নিয়ে এ বনভূমি বিস্তৃত। এর আয়তন ৮৭৫ বর্গকিলোমিটার(৩৩৮ বর্গমাইল)। এর ভিতর ১৭৬ ময়মিনসিংহে ১৭৬ বর্গকিমি,টাঙ্গাইলে ৪৪০ বর্গকিমি,গাজীপুরে ২৫৯ বর্গকিমি এবং দিনাজপুরে ৩৯ বর্গকিমি। এখানে শীতকালে প্রায় সময় পাতা ঝড়ে পড়ে বলে একেপতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি বলা হয়। ঢাকা অঞ্চলের বনভূমিকে ভাওয়ালের গড় বলা হয় আর ময়মিনসিংহের অংশকে মধুপুর গড় বলা হয়।গজার,শাল,ছাতিম,কুচি,কড়ি ইত্যাদি এখানকার প্রধান প্রধাম বৃক্ষ।এইসকল গজারী ও শাল গাছ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।শাল গাছ বৈদ্যুতিক তারা খুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

 

 

দিনাজপুর ও রংপুরের বনভূমি

 

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুর এবং রংপুরে এ বৃহৎ বরেন্দ্রভূমি অবস্থিত।এখানে প্রচুর পরিমাণ শাল,গজারী উৎপন্ন হয়।এসকল বৃক্ষের কাঠের সাহায্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

 

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...