ভূমিকা
যীশু হলেন খৃষ্টান ধর্মের
প্রবর্তক এবং ম্যারী তার মাতা। তিনি খৃষ্টানদের কাছে ঈশ্বরপুত্র হিসেবে বিবেচিত
হন।এই যীশু খৃষ্টের জীবনী নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
জন্মবৃত্তান্ত
যীশুর জন্ম তারিখ সম্পর্ক সঠিক
কোন তথ্য জানা যায় না।
লূকের মতে, তিনি খৃষ্টীয়পূর্ব ৬ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
ভিনসেন্ট টেইলরের মতে তিনি, তিনি খৃষ্টীয়পূর্ব ৮ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
আর কিছু ভাষ্যকারের মতে, তিনি খৃষ্টীয়পূর্ব ৪ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
মথিতে বলা হয়েছে, যে কাঠমিস্ত্রী যোসেফের সাথে ম্যারির বাগদানের পরে যোসেফ
স্বপ্নের মাধ্যমে দেখতে পান যে, ম্যারি
অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। ঈশ্বর তাকে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তার গর্ভে যেই পুত্র সন্তানটি জন্মগ্রহণ করবে সে আত্মার
প্রভাবে জন্ম নিবে(কোন মানুষের সংস্পর্শে নয়) এবং তার নাম যেন রাখা হয় যীশু। তাকে
সামাজিকতা রক্ষার জন্য তাকে বিবাহ করতে বলা হয়।
অন্যদিকে লুকে বলা হয়েছে,
বিবাহের পূর্বে ম্যারী
অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তখন তার কাছে ফেরেশ্তা এসে বললেন যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে
পড়েছেন,তখন সেই ফেরেশ্তা তাকে নির্দেশ জ্ঞাপন করল যে, পবিত্র আধ্যাত্মিকতা তোমার কাছে আসবে।
তারা জুড়িয়া দেশের নাজরাথ নামক
গ্রামে বসবাস করতেন।তারা জেরুজালিমের দিকে আসছিলেন।তখন তারা পথিমধ্যে বেহেলহ্যামের
এক ঘরে এসে আশ্রয় নিলেন। অতঃপর বেথেলহাম
শহরে এক গোয়ালঘরে অলৌকিকভাবে তার জন্ম হয়।তার যখন জন্ম হয় তখন সকল স্বর্গদূতগণ এই
পৃথিবীতে নেমে এসে মেষপালকের কাছে যীশুর শুভ জন্মের কথা উল্লেখ করেন এবং মেষপালক
তার প্রশংসা করেন।
যীশুর শৈশব ও বাল্যজীবন
তখন তিনজন ইয়াহূদী পণ্ডিত
জেরুজালেম এসে রাজার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার স্বপ্নের ভবিষৎ বাণী করে দেন
বেথেলহ্যামে যীশুর জন্ম হয়েছে এবং তার হাতেই হেরোদের মৃত্যু ঘটবে এবং একথা শুনে
রাজা হেরোদের উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং তাকে নিয়ে আসার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন
জ্ঞানীরা বেহেলহ্যামের ঐ ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন,তখন স্বর্গের দূতগণ তাদের জানিয়ে দেয় তারা যেন রাজার কাছে আর ফিরে না যায় এবং
তারা যীশুকে দেখে অভিভূত হন এবং উপহার প্রদান করেন। তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করার
নির্দেশ জ্ঞাপন করেন
এবং তারা যোসেফকে বললেন,
শিশু তার মাকে নিয়ে মিসর যাও
যতদিন না আমি নির্দেশ দেই। ততদিন তোমরা সেখানে অবস্থান করবে।কারণ হোরেড তাকে হত্যা
করার জন্য খুঁজবে।
তার নিরাপত্তা রক্ষায় তখন যোসেফ
মারিয়াম(আঃ)কে নিয়ে যীশুসহ মিসরে চলে যাওয়ার সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছিল। অতঃপর তারা
মিসরের গালিলির নাজেরাথে অবস্থান করেন।সেখানকার রাজা হেরোদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।তার বয়স যখন সাত ছিল তখন তিনি বায়্তুল মুকাদ্দাস
প্যালেষ্টাইন ফিরে আসেন।সেখানে তিনি দেশ কিছুদিন সূত্রধরের কাজ করেছিলেন। তিনি
রঞ্জকবিদ্যাও অর্জন করেছিলেন।
তার যৌবনকাল এবং আধ্যাত্মিক
জীবন
তিনি ঈদুল ফিসাখ পালন করার জন্য
প্রতি বছর তার মা ম্যারি ও ইউসুফের সাথে বায়তুল মুকাদ্দাসে আসতেন। তিনি সেখানে
ইয়াহুদী আলেমদের সাথে আলোচনা করতেন।
তার জীবনের ৩০ বছরের আগ পর্যন্ত
তার জীবনীর ব্যাপারে তেমন কিছু জানা যায় নাই।তবে যতটুকু জানা যায় তা হল এই তিনি
কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন নাই, বরং তিনি সর্বদা প্রকৃতির কাছে থেকে শিক্ষা লাভ করতেন।
তার শিক্ষার ব্যাপারে লূকে পাওয়া যায়,
পরে বালকটি বাড়িয়া উঠে এবং জ্ঞান
লাভ করতে থাকেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ কাজ করে।[লূক২ঃ৪০]
অন্যত্র বলা হয়েছে,
পরে যীশু জ্ঞান ও বয়সে এবং ঈশ্বরে
ও মানুষের কাছে অনুগ্রহ বৃদ্বি পেতে থাকে।
এছাড়া জানা যায় যে, তিনি রঞ্জনবিদ্যার উপর শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
তার ব্যাপারে রোমান কর্মকর্তা লেন্টালাস বলেন,
কান পর্যন্ত বাদামি রঙের চুল ছিল
তার,
স্বগুলো ছিল কোঁকড়ানো।তার ভ্রু ছিল মসৃণ ও স্পষ্ট, কোন দাগ ছিল না মুখে এবং মুখ ছিল লালচে। নাক ও মুখ ছিল
নিখুঁত। তার চোখ দুটি ছিল নীল। তার উচ্চতা ছিল ১৫ মুঠো। তাকে সর্বাবস্থায় উৎফল্ল
দেখা দিত এবং তিনি কোন কোন সময় কাঁদতেন কিন্তু তাকে কেউ কোন দিন হাতে দেখেন নাই।
নবূয়্যাত লাভ
অতঃপর ৩০ বছর বয়সে একদিন জর্ডান নদীর তীরে ডুব
দিয়ে তিনি ব্যাপ্টাইজে তথা পবিত্র হন। যোহনের হাত ধরে দীক্ষাস্নাত হয়ে জল থেকে বের
হয়ে দেখলেন ঈশ্বরের আত্মা নেমে এসে তার উপর পড়ছেন। আর হঠাৎ স্বর্গ থেকে এক কণ্ঠসর
বলে উঠলো ইনিই আমার প্রিয়তম পুত্র।এতে আমি প্রসন্ন।[মথি,৩: ১৬-১৭]
বার্নাবাসের বাইবেলে বলা হয়েছে,
যখন ত্রিশ বছর হয়েছে, তখন একদিন তাকে সকল ফেরেশ্তা বেষ্টন করে রেখেছে, তারা সকলে সালাম সালাম বলতে লাগল এবং দীপ্তি অর্শীর মত এক
খানী কিতাব জিবরাইল(আঃ) তার উপর অবতরণ করেন।
মথিতে বলা হয়েছে, তার ভাই ইয়াহইয়া(জন) যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তিনি দাওয়াতী
কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। তাকে যখন আটক করা হয় তখন তিনি তার দাওয়াতী
কার্যক্রম শুরু করলেন।
তার দাওয়াতী কার্যক্রম বিভিন্ন
স্থানে ক্রমে ক্রমে ছড়াতে থাকে। মার্কে বলা হয়েছে, তার দাওয়াতী কার্যক্রম গালীল, দিকাপলী, জেরুলজালেম এবং জর্দান নদীর তীর পর্যন্ত ছড়াতে থাকে। তিনি
তার মাকে যখন দাওয়াত দিলেন তখন তার মা তাক জানিয়ে দিলেন যে, এই কথা তিনি গর্ভের থাকতে জানতে পেরেছেন। তার মার কাছে থেকে দুআ নিয়ে অতঃপর তিনি
জেরুজালেমে তার দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করেন।
দাওয়াতী কার্যক্রম
যীশু খৃষ্ট এভাবে ওয়াহী প্রাপ্তির
পর থেকে তার ওয়াহী সকল স্থানে ছড়াতে থাকেন। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা।তার সদুপদেশের
জন্য তার ভক্তের সংখ্যা দিন দিন চক্রহারে বৃদ্বি পেতে থাকে।তিনি মূসা(আঃ) এর
তাওরাতের প্রতি সম্মান জানাতেন।তিনি তাওরাতকে অনুসরণের নির্দেশ প্রদান করেন এবং
তার যথার্থ বাস্তবায়নের প্রতি তিনি তাগিদ প্রদান করেন। ঈশ্বর তাকে সেই সময় বিশেষ
কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দান করেছিলেন। সেই সময়কার লোকেরা চিকিৎসাশাস্ত্রে অভূতপূর্ব
সাফল্য অর্জন করলেও তার চিকিৎসাবিদ্যার অলৌকিত্ব দেখে সেই সময়কার লোকেরা বিস্ময়ভূত
হতে থাকে। তার হাতের ছোয়ায় অন্ধ তার দৃষ্টিশক্তি,বধির তার শ্রবণশক্তি, খোড়া তার সুস্থ
পা,
মৃত ব্যক্তি তার জীবন, কুষ্ঠ্যরোগী রোগমুক্তি প্রভৃতি বিষয় অর্জন করতে থাকে।শুধু তাই না এক লোককে কবর
থেকে জীবিত করার পর তার কাছে সেই লোকটি বলল সে কবরের নীচে থাকতে পছন্দ করেন।তখন
তাকে কবরের নীচে পাঠানো হয়। তার ইচ্ছায় ঝড়বৃষ্টি থেমে যায় এবং তার ইচ্ছায়
খাদ্য্যপাৎদন বেড়ে যায়। তিনি তাওহীদের ভিত্তিকে দৃঢ় করার জন্য, তাকওয়া ও রাসূলের শিক্ষা অনসরণ করার জন্য, আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য, বিধান সহজীকরণ,চারিত্রিক সংস্কার এবং তাওরাতের সত্যায়নের জন্য দাওয়াতী কার্যক্রম পরিলান করতে
থাকেন।তিনি অলৌলিক নির্দশন উপস্থাপন, উত্তম আদর্শ উপস্থাপন এবং কাহিনী ও উপমা-উদাহরণের মাধ্যমে দাওয়াত প্রদান
করতেন।
বাধা ও প্রতিবন্ধকতা
কিন্তু তিনি যখন তার দাওয়াতী
কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন তখন তার পথে অন্যান্য নবীদের মত অনেক বাধা-কষ্ট ও
নির্যাতন নেমে আসে।ইয়াহূদী রাব্বীগন মনে করতে থাকল যে, তার দাওয়াতী কার্যক্রমের ফলে তাদের কর্তৃত্ব দিন দিন
হ্রাস্ব পাচ্ছে। তাই তারা তার বিরুদ্বের বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে থাকে।তারা তাকে পাগল, যাদুকর, অবৈধ সন্তান, মুরতাদ বলে হেয় প্রতিপন্ন করতে থাকে। তাছড়া মার্ক, মথি ও বার্নাবাস
থেকে জানা যায় যে, তার মুজিযার
বিরুদ্বে অপবাদ প্রয়োগ করে, ঠাট্টা-বিদ্রুপের
মাধ্যমে,দম্ভ প্রদর্শনের মাধ্যমে,প্রকাশ্যে কুফরী ঘোষণা করে, পাথর নিক্ষেপ
করে,
দেশ হতে ত্যাগ করে ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
যীশু খৃষ্টের ক্ষমতা লাভের কোন
মোহ ছিল না।কিন্তু তার জনপ্রিয়তাকে ইয়াহূদী এবং রোমকগণ সুনজরে দেখতে পান নাই। তাই
তাকে তারা নাজেহাল করার পায়তারা সর্বদা করত।অতঃপত একদিন তাকে ব্লাসফেমীর আইনে আটক
করা হয়।তার বিরুদ্বের এই অভিযোগ করা হয় যে, তার দ্বারা খোদা অবমাননামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্র
জুডাস নামে তার এক অনুসারী অর্থের লোভে পড়ে ৩০
রৌপ্য মুদ্রার বিনিময় তাকে সরকারের কাছে তুলে দেয়। অতঃপর বিচারক পাইলেট প্রথমে
তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে কার্পণ্য বোধ করে। কিন্তু ইয়াহূদী সার্থান্বেষী ধর্মযাজকদের
প্রণোচনায় পড়ে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ডের ঘুষ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ত্নি তার ব্যাপারে
মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। যেইদিন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় সেইদিন ছিল শুক্রবার
এবং তারিখ ছিল এপ্রিলের ৩ মতান্তরে ১২তারিখ।
যীশুকে হত্যা করার তিনদিন পর তিনি
পুনরায় এই দুনিয়াতে আগমন করেন এবং তার ১১ জন অনুসারীদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে তার
ধর্ম প্রচার করার নির্দেশ জ্ঞাপন করেন।এরপর তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়।এভাবে করে
যীশু খৃষ্টের জীবনাসন হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, যীশু খৃষ্টের জীবনে যা কিছু ঘটেছে তা বাইবেলে একভাবে বর্ণনা
করা হয়েছে এবং কুরআনে অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাইবেলে তার পিতা যোসেফ, যীশুকে আল্লাহ পুত্র বলা হয়েছে আবার তাকে যে ক্রশবিদ্ব করা
হয়েছে,
তা বর্ণনা করা হলেও আল-কুরআন তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার
করেছে এবং তার প্রতি নিন্দাবাদ জানিয়েছে।প্রকৃতপক্ষে যীশু খৃষ্টের মৃত্যর অনেকদিন
পর তা রচিত হয় বলে সেখানে অনেক উদ্ভট তথ্যাদী সন্নিবেশন করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment