Monday 26 August 2013

প্রশ্নঃ তাযীর কাকে বলে? কি কি অপরাধে তাযীর হয় আলোচনা কর।


ভূমিকা


 

মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন,

 

তোমাদের সন্তানের বয়স যখন ১০ হবে তখন তাদেরকে নামায পড়ার জন্য মার।

 

ইসলাম একটি পূর্ণাং জীবনব্যবস্থা যেখানে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে। ইসলাম অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কিছু শাস্তির বিধান নির্ধারণ করেছে।আবার কিছু শাস্তির জন্য করে নাই।যেসকল শাস্তির জন্য কোন দণ্ডবিধি রাখে নাই তার আওতায় শাস্তি প্রদান করাকে তাযীর বলা হয়। তাযীর সম্পর্কে বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলঃ

 

তাযীর কি?


 

তাযীর শব্দটি আযরু থেকে উৎপন্ন হয়েছে যার অর্থ হল ফেরত দেওয়া,প্রতিরোধ,ভর্ৎসনা,নিন্দা,তিরস্কার নিষেধ করা,ছেড়ে দেওয়া,সাহায্য করা, সম্মান করা, ভৎসনা করা, কষ্ট প্রদান করা ও শাস্তি দেওয়া।এর দ্বারা শিক্ষা দেওয়া এবং বারণ করাকে বুঝানো হয়ে থাকে।

 

ফাতহুল কাদীরে বলা হয়েছে,

 

এটা অনির্ধারিত শাস্তি যা আল্লাহর কিংবা মানুষের অধিকার পাপের কারণে হয়

 

মুহাম্মদ ফরীদ বলেন,

 

তাযীর এমন অনির্ধারিত শাস্তি,সকলের জন্য শরীয়াত যা শরীয়াত নির্ধারণ করে নাই

 

 আল ফিকহুল ইসলামীতে বলা হয়েছে,

 

যেসকল অপরাধের শাস্তি হদ্দ নির্ধারণ করে নাই সেইসকল অপরাধের শাস্তিসমূহ হল তাযীর"

 

আত তাশবীউল জানাইলে বলা হয়েছে,

 

শরীয়াতের যেসকল অপরাধ পৃথক পৃথকভাবে নির্ধারণ করা হয় নাই সে সকল অপরাধের শাস্তিসমূহ হল তাযীর"।

 

এই শাস্তি কার্যকর হতে পারে উপদেশ প্রদান, ভীতি প্রদর্শন, আটক রাখাম বেত্রাঘাত অথবা নির্বাসন পাঠানোর অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।

 

তাযীর যার উপর কার্যকর হয়

 

নারী-পুরুষ,মুসলিম-অমুসলিম,বালেগ,নাবালেগ, নির্বিশেষে যেকোন বুদ্বিসম্পন্ন লোকের উপর তা সম্পন্ন হয়।

 

তাযীর শাস্তির শ্রেণীবিন্যাস


 

এই ধরনের শাস্তি দুই ধরনের হয়ে থাকে।তা হলঃ (১) আল্লাহর হক সংক্রান্ত শাস্তি       এবং       (২)বান্দার হক সংক্রান্ত শাস্তি

 

১. আল্লাহর হক সংক্রান্ত শাস্তিঃ নামায,রোযা,হাজ্জ অস্বীকারকারী,মদ্যপায়ী,জুয়াখেলা, অন্য কোন স্ত্রীকে চুম্বণ দেয়া কিংবা তার সাথে নির্জনে যাওয়া। ইত্যাদি

 

২. বান্দার হক সংক্রান্ত শাস্তিঃ কাউকে গাল দেওয়া,অন্য কারও নামে অপবাদ দেওয়া যিনা ছাড়া, কাউকে মারধর করা,ছিনতায়ী করা,লুট করা, ইত্যাদি।

 

এখন কিছু কিছু অপরাধের শাস্তি এমন আছে তার উপর ভিত্তি করে তাযীরের শাস্তি দুই ভাগে ভাগ করা যায়।তা হলঃ

 

১. কতিপয় কবীরা গুনাহঃ অপরিচিতা মহিলাকে চুম্বণ দেওয়া, যিনা ছাড়া অন্য কোন অপরাধে অপবাদ দেওয়া, বিনা হিফাযতে মাল চুরি, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশানো, নামায না পড়া, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ছাড়া আল্লাহর কিছু কিছু হুকুম অমান্য করা।

 

২.ওয়াজিব ভংগ করাঃ কিছু কিছু শাস্তির বিধান লঘু আছে যা ওয়াজিব কোন কাজ ভংগ করলে তার জন্য প্রযোজ্য হবে।যেমনঃ সদকাতুল ফিতর আদায় না করা, দেরীতে নামায পড়া, কোন গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব তরক করা ইত্যাদি।

 

শাস্তির অবস্থা


 

১. তাযীরের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

 

২. পদ থেকে বহিস্কার করা।

 

৩. কাউকে একঘরে করে রাখা।

 

৪. স্ত্রীর শয্যা ত্যাগ করা।

 

৫. কাউকে বেত্রঘাত করা ইত্যাদি

 

 মুহাম্মদ(সাঃ) তাযীর করার ক্ষেত্রে হদ্দের চেয়ে লঘু শাস্তি প্রদানের কথা বলেছেন।কারণ রাসূল(সাঃ) বলেন,

 

এ ব্যক্তি হদ্দ বহির্ভূত অপরাধে হদ্দের সমান শাস্তি দিল সে সীমা অতিক্রমকারীদের অন্তর্ভূক্ত।

 

মদ্যপানে তাযীরের শাস্তি


 

মদকে আরবীতে খামর বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ হল, আচ্ছন্ন করা। ইসলামী পরিভাষায় খামর বা মদ বলা হয়, যা পান করলে জ্ঞান ও বুদ্ধি আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।

 

ইসলামের দৃষ্টিতে মদ জুয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ।আল্লাহ বলেন,

 

মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়।অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।[মায়িদাঃ৯৩]

 

 সওর ইবনে যায়দ দায়লামী (রহঃ) বলেন, মদপায়ীর শাস্তির ব্যাপারে হযরত ওমর (রাঃ) সাহাবাদের পরামর্শ চাইলেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি তাকে আশি দোররা মারা উচিত। কেননা যখন সে মদপান করে, তখন সে মাতাল হয়ে পড়ে, আর মাতাল হলে আবোল তাবোল বকাবকি করে। আর যখন সে আবোল তাবোল বকে, তখন সে মিথ্যা অপাবদও রটায় এবং ব্যভিচারে অপবাদের শাস্তি হল আশি দোররা। সেই হতে হযরত ওমর (রাঃ) মদপায়ীকে আশি দোররা মারার নির্দেশ দিলেন। (মালেক)

 

হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযিদ (রাঃ) বলেন, আবু বকরের খেলাফত কালে এবং ওমরের খেলাফতের প্রারম্ভে মদ্যপায়ীকে এনে উপস্থিত করা হত। তখন আমরা আমাদের হাত, জুতা এবং চাদর দ্বারা তাকে আঘাত করতাম। কিন্তু হযরত ওমরের খেলাফতের শেষ দিকে তিনি চল্লিশ চাবুক মারতেন। আর যখন তারা (মদ্যপায়ীরা) সীমাতিক্রম করতে লাগল এবং ব্যাপকভাবে পাপে লিপ্ত হতে আরম্ভ করল তখন তিনি আশি দোররা মারতে লাগলেন। (বুখারী)

 

যদি কোন মদপায়ীকে পাকড়াও করে আনা হয় আর জনগণ সাক্ষ্য দেয় যে, সে মদ পান করেছে, অথবা তাকে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় আনা হয়েছে কিংবা তার মুখ হতে মদের গন্ধ পাওয়া যায়, তখন তার উপর শাস্তি প্রয়োগ হবে। আর যদি কোন মদপায়ী গন্ধ থাকা অবস্থায় স্বীকার করে তাকেও শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু যদি গন্ধ চলে যাওয়ার পর স্বীকার করে, তখন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ও আবু ইউসুফের মতে শাস্তি দেওয়া যাবে না। কিন্তু ইমাম মুহাম্মদ বলেন, তখনও শাস্তি দেওয়া যাবে।

 

ঈমাম শাফেয়ী বলেন, যদি কেউ মদ বমি করে বা মুখ হতে মদের গন্ধ পাওয়া যায়, কিন্তু তাকে মদ পান করতে কেউ দেখে নাই, তখন তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। আর ইমাম আহমদেরও একই মত। ইমাম মালেকের মতে শাস্তির পরিমাণ হলো আশি দোররা। আর ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) চল্লিশ দোররার কথাও বলেছেন।

 

সকল ফিকহ্‌ শাস্ত্রবিদের মতে মদ্যপায়ীকে যথার্থ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব। ইমাম আযম আবূ হানীফা (র.) এবং ইমাম মালিক (র.)-এর মতে মদ্যপায়ীর শাস্তি আশি বেত্রাঘাত। সাহাবীগণের যুগে আশি বেত্রাঘাতের উপর ঐকমত্য স্থাপিত হয়।

 

উপসংহার


 

 পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য ইসলাম কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যার বাস্তবায়নে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হবে। তাযীরের মাধ্যমে দেশে অতি সহজে এই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হবে।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...