মাশহুর হাদীসঃ
মাশহূর
অর্থ হল প্রসিদ্ব।এই শব্দটি শহুরাত থেকে এসেছে যার অর্থ হল সবার কাছে বেশী
গ্রহণযোগ্য। এর বহুবচন হল মাশাহীর যার অর্থ হল well known, widely known, famous
known,wide spread ইত্যাদি।আরবী ভাষায় যখন একটি বিষয়ের খ্যাতি যখন চারিদিকে ছড়িয়ে
পড়ে তখন তাকে মাশহুর বলা হয়। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে সব হাদীসের বর্ণনাকারী তিন
বা তিনের অধিক হবে কিন্তু মুতওয়াতির পর্যন্তু পৌছাবেনা,এমন হাদীসকে মাশহুর হাদীস
বলে।
উদাহরণ,নবী
করিম(সাঃ) এর বাণী,
আল্লাহ
বান্দাদের থেকে ইলম ছিনিয়ে নেন না বরং আলিমদের উঠিয়ে ইলম উঠিয়ে নিন।
উসূলবিদগণ
একে খবরে মুতাওয়াতির এবং আহাদের মাঝামাঝি পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত করেছেন।তাদের মতে
এটি প্রথম যুগে খবরে আহাদের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ২য় ও ৩য় যুগে এটি প্রসিদ্বি লাভ
করেছিল।
ফকীহগণের
পরিভাষায় একে মুসতাফীয বলা হয়।মুসতাফীয শব্দটি ইসতিফায থেকে এটি ইসমে ফায়িল।আরবী
প্রবচন ফাযাল মাউ থেকে এর উৎপত্তি। এখন এই মাশহূর ও মুস্তাফীয এক শব্দ কিনা তা
নিয়ে ওলামাদের ভিতর মতবিরোধ রয়েছে। এই ব্যাপারে তিনটি অভিমত পাওয়া যায় যা হলঃ
১।
কারও মতে এই দুটি একই
শব্দ।তাদের মতে মাশহূর হাদীস মুস্তাফীয। মাশহূর হাদীসটি প্রসিদ্বি লাভের কারণে তা
মুস্তাফীয হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।
২।
আবার কারও মতে তা কেবল
মাত্র বর্ণনাকারীদের প্রতি স্তরে সংখ্যার তারতম্যের কারণে এর সংখ্যা ভিন্ন থেকে
ভিন্ন হয়। যদি প্রত্যেক স্তরে রাবীর সংখ্যা ঠিক থাকে তাহলে তা মুস্তাফীয হবে।
যেমনঃ সকল স্তরে তিন, আবার সকল স্তরে চার ইত্যাদি।
আর
প্রত্যেকটি স্তরে বর্ণনাকারীর সংখ্যার তারতাম্য থাকে তাহলে তা মাশহূর হিসেবে খ্যাত
থাকবে। যেমন কোন স্তরে তিন,আবার কোন স্তরে চার আবার এভাবে করে পাঁচ আবার সাত
ইত্যাদি।
৩।
কতিপয় ফকীহগণের মতে,
মুস্তাফীয সেই ধরনের হাদীস যার অনুসরণকারীগণ বর্ণনাকারীগর সংখ্যা গণনা না করে
নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নেয়।
আর
মাশহূর হল এমন হাদীস যা অনুসারীগণ বর্ণনাকারীর সংখ্যার উপর গুরুত্বারোপ করে তা
গ্রহণ করে থাকে।
খবরে
মাশহূর দুই প্রকারের যা হল অপারিভাষিক মাশহূর আর পারিভাষিক মাশহূর।এদের বর্ণনা
নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
পারিভাষিক মাশহূর
এটি
তিন অর্থে ব্যবহৃত হয়।যেমনঃ
১।
মাশহূরের সামর্থক শব্দ।
২।
এটি মশহূরের তুলনায় খাস
৩।
এটি মাশহূরের তুলনায় আম যা আগেরটির বিপরীত।
অপারিভাষিক
মাশহূর
এটি
আবার কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত। যা হলঃ
মুহাদ্দিগণের
নিকট মাশহূরঃ যার দৃষ্টান্ত হলঃ
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
এক মাস পর্যন্ত রাআলা ও যাকওয়ান সম্প্রদায়ের বিরুদ্বে রুকুর পর বদ দুআ করেছেন।
মুহাদ্দিস
ও আলেমগণের নিকট মাশহূরঃযার দৃষ্টান্ত হলঃ
মুসলিম
ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিম ভাই নিরাপদ থাকে।
ফকীহগণের
নিকট মাশহূরঃ যার দৃষ্টান্ত হলঃ
হালালের
ভিতর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হালাল হল তালাক।
উসূলবিদগণের
নিকট মাশহূরঃ যার দৃষ্টান্ত হলঃ
আমার
উম্মতের ভুল-ভ্রান্তি জনিত ও বল প্রয়োগজনিত গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন।
ব্যাকরণবিদগণের
নিকট মাশহূরঃ যার দৃষ্টান্ত হলঃ
সুহাইব
একজন ভাল লোক।যদি সে আল্লাহকে ভয় না করত তাহলে আল্লাহ তাকে হিফাযত করতেন না।
এটি
একটি জাল হাদীস।
সর্বসাধারণের
নিকট মাশহূরঃ যার দৃষ্টান্ত হলঃ
তাড়াহুড়ো
করে কাজ করা শয়তানের কাজ।
আল্লামা
সাখাবী(রঃ), আজলূনী ও শাইবানী এইসকল হাদীস গ্রন্থসমূহের সংকলক।
খবরে মাশহূরের হুকুম
খবরে
মাশহূর খবরে আহাদের অন্তর্ভূক্ত। এর দ্বারা ইলমে জরুরী তথা ইলমে ইয়াকীন পয়দা
হয় যার উপর আমল করা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং তার উপর আমল করতে হবে এবং মর্যাদার
দিক থেকে তার স্থান হবে মুতাওয়াতিরের নীচে এবং আযীয ও গরীবের উপরে।
No comments:
Post a Comment