ভূমিকা
আল্লাহ
সুবাহানাওতায়ালা বলেন,
“হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি
নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন
ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়”। [বাকারাঃ১৭৮]
ইসলাম
একটি বিশ্বজনীন ধর্ম যা সর্বদা মানুষের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়।মানুষ
যেন চৌর্য্যবৃত্তি, হত্যা,ব্যভিচার,অপবাদ,মদ্যপানের দ্বারা মানুষের সম্মান,জীবন এবং সম্পদের কোন ক্ষতি না
করতে পারে এরজন্য কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। যারফলে মানুষকে তখন সেইসকল খারাপ
কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে সক্ষম হবে।যিনায়াত কি এবং ইসলামে তার শাস্তির
বিধানসমূহ কি কি তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
যিনায়াত
যিনায়াত
আরবী শব্দ।ইহা একবচন আর এর বহুবচন হল জানায়াত। যার অর্থ হল নিষিদ্বকর্ম, অবৈধ কাজ, অপরাধ, অন্যায় কাজ।
এর
ইংরেজী প্রতিশব্দ হল Crime, misdeed, offence.
বিধিবদ্ব
ইসলামী আইনে বলা হয়েছে, “জিনায়াত বলতে শরীয়াতের এমন আদেশ ও নিষেধকে
যা লঙ্ঘন করলে হদ্দ বা তাযীর হবে”।
“দণ্ডবিধি” নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, “অপরাধ হল আইন দ্বারা নিষিদ্ব ও
দণ্ডযোগ্য এমন কোন কাজ যা প্রায় সর্বদাই প্রচলিত নৈতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অনৈতিক বলে
বিবেচিত। যা হওয়ার দরুন সাধারণ মানুষের জন্য তা বিশেষভাবে ক্ষতিকর এবং প্রচলিত
সামাজিক ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখার জন্য শাস্তিই যার একমাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বলী
বিবেচিত হয়”।
কারও মতে, অপরাধ এবং শাস্তি সম্বলিত বিধানবলী জিনায়াত ।
জিনায়াতের
উপাদান
(১) যেই কাজটি করলে গুনাহ হবে তা কুরআনের আয়াত বা
রাসূল (সাঃ) এর বাণী দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে।
(২) যেই কাজটি নিষিদ্ব তা বাস্তবে সঙ্ঘটিত হওয়া
(৩) অপরাধীকে বালেগ এবং সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে।
জিনায়াতের
প্রকারভেদ
(১) হুদুদ:
যেসকল অপরাধের জন্য দণ্ড নির্ধারিত তাদেরকে হদ্দ বলা হয়।যেমন-ব্যভিচার,চুরি,অপবাদ,অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি।
(২) কিসাস/ দিয়াত: যেসকল অপরাধের জন্য প্রতিশোধ্মূলক
ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিংবা রক্তপণ আদায় করা হয় তাদের কিসাস/দিয়াত বলা হয়।যেমনঃ কতলে
আমদ, কতলে শিবলী আমদ কিংবা কতলে খাতা এর অন্তর্ভূক্ত।
(৩) তাযীর : যেসকল অপরাধের শাস্তি শরীয়াত কর্তৃক
নির্ধারিত হয় নাই তা তাযীরের অন্তর্ভূক্ত।
কতল
কতল একটি
আরবী শব্দ যার অর্থ হল কারও প্রাণনাশ করা,কোন
মানুষের মাধ্যমে অন্য কোন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া,হত্যা
করা ,murder,killing, assantion.
হত্যার
সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইসলামী বিধিবদ্ব আইনের বলা হয়েছে,
যে কাজের দ্বারা মানবদেহ থেকে প্রাণের সংযোগ
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাকে হত্যা বলে।
অন্যদিকে
মুজামু লুগাতিল ফুকাহা গ্রন্থে বলা হয়েছে,
দেহ থেকে
প্রাণের সম্পর্ককে ছিন্ন করা দেওয়াকে হতা বলে।
অর্থাৎ, কারও প্রাণনাশ করাকে কতল বলা হয়।
হত্যার প্রকারভেদ
হত্যা
পাঁচ প্রকারের হয়। তা হলঃ
১.
ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা ২.
সংশয়পূর্ণভাবে হত্যা ৩. ভুলবশত
হত্যা ৪. অসাবধানতাবশত হত্যা ৫. অনাকাংখিতভাবে হত্যা
উপরোক্ত
পাঁচটি প্রকারের ভিতর প্রথমভাবে হত্যা সঙ্ঘটিত হলে পরে তার জন্য কিসাস
বাধ্যতামূলক।অন্যদিকে বাকী চারভাবে হত্যা করা হলে সেখানে দিয়াত বা কাফফারা আদায়
করতে হবে।হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
সে
প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন।
[বনী-ইসরাইলঃ৩৫]
যে কেউ
প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে
যেনসব মানুষকেই হত্যা করে।[মায়িদাঃ৩২]
রাসূল
(সাঃ) বলেন, “হাশরের ময়দানে হত্যার শাস্তি সবার আগে দেওয়া হবে”।
কিসাসের
বিধি
কিসাসের
বিভিন্ন অর্থ আছে।তবে সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি যে, কোন
ব্যক্তি হত্যা করা হলে তাকে পাল্টা হত্যা করাকে কিসাস বলা হয়। কিসাসের ব্যাপারে
কুরআনে বলা হয়েছে,
হে
ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।
স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর
বদলায়। [বাকারাঃ১৭৮]
আমি এ
গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম
সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। [মায়িদাঃ৪৫]
রাসূল
(সাঃ) এই কিসাসের ব্যাপারে বলেন, মুমিনের রক্ত তিনটি কারণ ছাড়া
হালাল নয়। তা হল প্রাণের বদলে প্রাণ হত্যা করা, বিবাহিত
ব্যভিচারীকে হত্যা করা এবং ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারীকে হত্যা করা।
দিয়াত
এই
শাস্তি কেবলমাত্র তখনই প্রযোজ্য হবে যখন হত্যাকৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা তা
দাবী করবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি
কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়,তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে
এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। [বাকারাঃ১৭৮]
ব্যভিচার
হিজরী
ষষ্ঠ সন,ইসলামী রাষ্ট্রে তখন অনেক সুসংহত। পাপ ও অশ্লীলতার
দ্বারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশ এখন পবিত্র। এই পবিত্র পরিবেশ বিনাশ করতে
পারে এমন কিছুকে আর প্রশয় দেয়া যায় না।
ব্যভিচার
বলতে আমরা সাধারণত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলা-মেশাকে বুঝে থাকি। ব্যভিচারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল-রামেলী বলেন,
“ব্যভিচার হল অকাট্য প্রত্যক্ষ
হারাম লিঙ্গের ভিতর লিংগ প্রবেশ করানো যাতে স্বাভাবিকভাবেযৌনাকর্ষন থাকে।”
মানসুর
বিন ইউসুফ বলেন,
“সামনে বা পিছনের দিক দিয়ে অশ্লীল
কাজ হল ব্যভিচার।”
ব্যভিচার
ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য অপরাধ।আল্লাহ বলেন,
আর
ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [বনী-ঈসরাইলঃ৩২]
ব্যভিচারের
শাস্তি
এই সময়
আল্লাহ ব্যভিচারের শাস্তি সংক্রান্ত নির্দেশ নাযিল করেন-
আল্লাহ
বলেন,
ব্যভিচারিণী
নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান
কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। [নূরঃ২]
হাদীসে
উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে এক শত বেত্রাঘাত
করার পর তাকে ১ বছরের জন্য দেশান্তরিত করতে হবে।অর্থাৎ,এক বছরের
জন্য তাকে নির্বাসন দেওয়া হবে।
যিনাকারী
যদি বিবাহিত হয় তবে তাকে জঘণ্য ও কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাকে প্রস্তারাঘাতে (রজম
করে) হত্যা করা হবে। যাতে সে নিজ কৃতকর্মের প্রতিফল ভোগ করে এবং তার শরীরের
প্রতিটি অংগ ঐরূপ কষ্ট অনুভব করে যেরূপ হারাম কাজে সে আনন্দ অনুভব করেছিল। এ
সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী রয়েছে; তিনি বলেন:“যদি বয়স্ক নারী ও পুরুষ যিনা করে তবে তাদের উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা কর। তারা
যে অর্জনকরেছে তার প্রতিফল স্বরূপ।”
যিনাকারী
মহিলা যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার সন্তান এই পৃথিবীতে প্রসব হওয়ার পর তার ক্ষেত্রে
রজম প্রযোজ্য হবে।
বিভিন্ন
সহিহ হাদীসের মাধ্যমে এ শাস্তি স্বীকৃত। মুসলিম শরীফে মায়াজ বিন মালিকের রজম
সংক্রান্ত বোরাইদা (রা) এর হাদীস থেকে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
অপবাদ
অপবাদ
দেওয়া একটি জঘন্যতম অপরাধ।একটি হাদীসে মুহাম্মদ (সাঃ) সাতটি কবীরা গুনেহের নাম
উল্লেখ করেছেন যার একটি বলা হয়েছে কোন সতী-সাধবী মহিলাকে অপবাদ দেওয়া।এছাড়া রাসূলে
করীম(সাঃ) বলেন, “তোমরা কোন সতী-সাধবী মহিলার নামে অপবাদ দিও না”।
হিজরী
ষষ্ঠ সনে মুনাফিকরা উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রা) সম্পর্কে অপবাদ রটনা করে। অবিরাম
প্রচার অভিযান চালিয়ে তারা মদীনার পরিবেশ বিষাক্ত করে তোলে। মুনাফিকদের চক্রান্তে
মদীনার পবিত্র পরিবেশ বিষাক্ত হবার উপক্রম। আল্লাহর রাসূল (সা) অস্থির হয়ে উঠেন।
এই সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেসব বাণী নাযিল করেন তার একাংশ হচ্ছে।
যারা
সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী
উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে। [নূরঃ৪]
আল্লাহর নির্দেশ
মুতাবিক রাসূলুল্লাহ (সা) পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরিবেশ আবার সুস্থ হয়ে উঠে।
মুনাফিকদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।
চুরি
চুরি করা
একটি জঘন্যতম অপরাধ।এর আরবী প্রতিশব্দ হল আস-সারফু। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হল theft, stealth etc.
আল-হিদায়া
গ্রন্থে বলা হয়েছে,
“কোন বালেগ এবং বুদ্বিমান ব্যজতি
কর্তৃক অপরের দখল্ভূক্ত নিসাব পরিমাণ মাল সংরক্ষিত স্থান থেকে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে
চুরি বলে”।
মাওলানা
আব্দুর রহিম বলেন,
“গোপনভাবে অন্যকে না দেখিয়ে পরের
ধন-সম্পদ করায়ত্ত্ব করাই হল চুরি”।
হিজরী সপ্তম সনের প্রথম ভাগ। ইতিমধ্যে মদীনার
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের বুনিয়াদী প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করে। প্রতিটি মানুষই খুঁজে পায় তার বেঁচে থাকার
অধিকার। নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার সুনিশ্চিত করার পর ইসলামী রাষ্ট্র অপরাধ
প্রবণতা দমনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। চুরির প্রবণ প্রতিরোধের জন্য এই
অপরাধের শাস্তি বিধান করে আল্লাহ বলেন,
যে পুরুষ
চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে।
[মায়িদাঃ৩৮]
চুরির
শর্তাবলী
১. গোপনে
চুরি করতে হবে।
২. হস্তগতকৃত
বস্তু চুরি করতে হবে
৩. সেই
বস্তুটি অন্যের দখলভূক্ত হতে হবে।
৪. সেই
বস্তু নিসাব পরিমাণ হতে হবে।
৫. সেই
বস্তুটি চোরের নিজের বলে দাবী করতে হবে।
৬. চোরকে
বালেগ এবং বিবেকসম্পন্ন হতে হবে।
রাসূলের
(সা) শাসনকালে একটি ঢালের দামের চেয়ে কম দামের জিনিস চুরি করলে হাত কাটা হতো না।
সেই যুগে একটি ঢালের দাম ছিল দশ দিরহাম। কারণ রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন, “এক দীনার বা দশ দিরহামের কমে হাত
কাটা যাবে না”।
চুরির
নিসাবের ব্যাপারে অন্যান্য ইমামদের মতামত
খারিজী
এবং জাওহারীগণ বলে থাকেন যে, যেকোন বস্তু তা পরিমাণের অল্প হোক
বা বেশী হোক তা চুরি করলে তার হাত কেটে ফেলতে হবে।তারা বলে থাকেন যে, কুরআনে এ ব্যাপারে কোন ইঙ্গিত দেওয়া হয় নাই যে, কি
পরিমাণ চুরি করলে হাত কাটতে হবে।
ইমাম
শাফিঈ(রঃ) বলেন, ১/৪ দিনার পরিমাণ সম্পদ চুরি না করা পর্যন্ত শাস্তি
কার্যকর হবে না।এ ব্যাপারে আয়শা (রাঃ) এর বর্ণিত একটি হাদীস পাও্যা যায়।
ইমাম
মালেক এবং আহমদ এর মতে , তিন দিরহামের কম সম্পদ চুরি করলে
শাস্তি হবে না।কারণ এ ব্যাপারেও হাদীস রয়েছে।
খারিজী ও
জাওহারীগণ কেবল কুরআনের উপর আমল করাতে গোমরাহী হয়েছে আর শাফিঈ(রঃ) এর দলীল ইসলামের
প্রাথমিক যুগে বিদ্যমান ছিল।অন্যদিকে ইমাম আহদম এবং মালেকের হাদীসখানী দূর্বল।
তাই
এক্ষেত্রে বলা যায় যে, চুরির নিসাব হল দশ দিরহাম।
হাত কাটা
পদ্বতিঃ
কোন চোর
চুরি করলে তাকে হাত এমনভাবে কাটতে হবে যাতে করে তার জীবন বিপন্ন না হয়ে পড়ে। এর
জন্য তার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে রাখতে হবে। রাসূল(সাঃ) একবার এক চোরকে হাত কাটার
নির্দেশ দিলে পরে তার হাত কাটা হয় এরপর তা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিতে বলেন এবং এরপর
তাকে তার কাছে নিয়ে আসতে বললেন যাতে করে সে তওবা করে।
মদ পানের
শাস্তিঃ
মদকে
আরবীতে ‘খামর’ বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ হল, আচ্ছন্ন করা। ইসলামী পরিভাষায় ‘খামর’ বা মদ বলা হয়, যা পান করলে জ্ঞান ও বুদ্ধি আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।
ইসলামের
দৃষ্টিতে মদ জুয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ।আল্লাহ বলেন,
মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের
অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা
কল্যাণপ্রাপ্ত হও।[মায়িদাঃ৯৩]
সওর ইবনে
যায়দ দায়লামী (রহঃ) বলেন, মদপায়ীর শাস্তির ব্যাপারে হযরত ওমর
(রাঃ) সাহাবাদের পরামর্শ চাইলেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি তাকে আশি দোররা মারা উচিত। কেননা যখন সে মদপান করে, তখন সে মাতাল হয়ে পড়ে, আর মাতাল হলে আবোল তাবোল বকাবকি
করে। আর যখন সে আবোল তাবোল বকে, তখন সে মিথ্যা অপাবদও রটায় এবং
ব্যভিচারে অপবাদের শাস্তি হল আশি দোররা। সেই হতে হযরত ওমর (রাঃ) মদপায়ীকে আশি
দোররা মারার নির্দেশ দিলেন। (মালেক)
হযরত
সায়েব ইবনে ইয়াযিদ (রাঃ) বলেন, আবু বকরের খেলাফত কালে এবং ওমরের
খেলাফতের প্রারম্ভে মদ্যপায়ীকে এনে উপস্থিত করা হত। তখন আমরা আমাদের হাত, জুতা এবং চাদর দ্বারা তাকে আঘাত করতাম। কিন্তু হযরত ওমরের খেলাফতের শেষ দিকে
তিনি চল্লিশ চাবুক মারতেন। আর যখন তারা (মদ্যপায়ীরা) সীমাতিক্রম করতে লাগল এবং
ব্যাপকভাবে পাপে লিপ্ত হতে আরম্ভ করল তখন তিনি আশি দোররা মারতে লাগলেন। (বুখারী)
যদি কোন
মদপায়ীকে পাকড়াও করে আনা হয় আর জনগণ সাক্ষ্য দেয় যে, সে মদ
পান করেছে, অথবা তাকে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় আনা হয়েছে কিংবা তার
মুখ হতে মদের গন্ধ পাওয়া যায়, তখন তার উপর শাস্তি প্রয়োগ হবে। আর
যদি কোন মদপায়ী গন্ধ থাকা অবস্থায় স্বীকার করে তাকেও শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু যদি
গন্ধ চলে যাওয়ার পর স্বীকার করে, তখন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ও আবু
ইউসুফের মতে শাস্তি দেওয়া যাবে না। কিন্তু ইমাম মুহাম্মদ বলেন, তখনও শাস্তি দেওয়া যাবে।
ঈমাম
শাফেয়ী বলেন, যদি কেউ মদ বমি করে বা মুখ হতে মদের গন্ধ পাওয়া যায়, কিন্তু তাকে মদ পান করতে কেউ দেখে নাই, তখন তাকে
শাস্তি দেওয়া যাবে না। আর ইমাম আহমদেরও একই মত। ইমাম মালেকের মতে শাস্তির পরিমাণ
হলো আশি দোররা। আর ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) চল্লিশ দোররার কথাও বলেছেন।
সকল
ফিকহ্ শাস্ত্রবিদের মতে মদ্যপায়ীকে যথার্থ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তি প্রদান করা
ওয়াজিব। ইমাম আযম আবূ হানীফা (র.) এবং ইমাম মালিক (র.)-এর মতে মদ্যপায়ীর শাস্তি
আশি বেত্রাঘাত। সাহাবীগণের যুগে আশি বেত্রাঘাতের উপর ঐকমত্য স্থাপিত হয়।
শাস্তির
শর্ত
নেশাগ্রস্ত
ব্যক্তির উপর শরী’আতের -হদ্- প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত
শর্তাবলী পাওয়া জরুরীঃ
১. জ্ঞান
সম্পন্ন হওয়া। পাগলের উপর হদ্ জারী করা যাবে না।
২.
বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্কের প্রতি শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না।
৩.
মুসলমান হওয়া। কাফির ব্যক্তির উপর হদ্ প্রযোজ্য নয়।
৪.
ইচ্ছাপূর্বক সেবনকারী হওয়া। ভুলবশত সেবন করলে বা জোরপুর্বক সেবন করানো হলে তার উপর
হদ্ প্রযোজ্য হবে না।
৫.
মুযতার বা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মদ পান করলে তার উপর হদ্ প্রযোজ্য হবে না।[
পরিশেষে
বলতে চাই মদ জুয়াই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উৎস, তা
একমাত্র ইসলামী বিধানেই নির্মূল করা সম্ভব। তাই আসুন ইসলামী বিধানে জীবন যাপন করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এহেন ঘৃণীত ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায়, হত্যা,যিনা,অপবাদ,মদ্যপান,বিদ্রোহ এসকল কাজ শরীয়াতের দৃষ্টিতে গর্হিত একটি কাজ।এ সকল কাজ যেন সমাজ থেকে
চিরতরে বিদূরিত হয় এর জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি জিনায়াতের বিধানসমূহ
যথার্থভাবে সমাজে প্রতিফলিত হয় তাহলে আমাদের সমাজে অপরাধ বলতে কিছুই থাকবে না।
No comments:
Post a Comment