Friday 23 August 2013

কোর্স নং-৪০৭, প্রশ্নঃ ফিকহের পরিচয় দাও। ফিকহের স্বরুপ লিখ।

আভিধানিক অর্থ-

ফিকাহ আরবী শব্দ যা সামি’আ এবং কারম উভয় অর্থ ব্যবহৃত হয়।
সামি’আ অর্থে ব্যবহৃত হলে তার অর্থ হবে-
  1. জ্ঞাত হওয়া
  2. জানা
  3. অবহিত হওয়া ইত্যাদি।

আর কারম হলে এর অর্থ হবে ফকীহ হওয়া।আল্লামা হাসকাফী(রঃ) দুররুল মুখতার গ্রন্থে লিখেছেন,
ফিকহের আভিধানিক অর্থ হল কোন বস্তুর সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া।পরে তা শরঈ বিষয়াদীর জানার সাথে খাস হয়ে যাবে।এর বাবে সামাআ হলে তার মাসদার হবে জানা আর কারম হলে তার অর্থ হবে ফকীহ হবে।
আল্লাম রশিদ রিদা তার প্রণীত তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, এ শব্দটি মোট বিশ বার ব্যবহার করা হয়েছে।তন্মধ্যে উনিশবার গভীর জ্ঞান ও সূক্ষ্ণ ইলমের অর্থ ব্যবহৃ হয়েছে।
আল্লামা যামাখশারী বলেন ফিকহের মূল কথা হল অনুসন্ধান করা ও খুলে দেওয়া।
ইমাম গাযযালী(রঃ) বলেন,
ফিকহ অর্থ হল শরীয়াতের সাথে গভীর জ্ঞানার্জন করা।

পারিভাষিক অর্থ-

পারিভাষিকভাবে এর একাধিক বর্ণনা রয়েছে।যেমন, মিফফতাহুস সাআদা গ্রন্থের লেখক বলেছেন,
যে ইলমে শরীয়াতের বিধি-বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এ হিসেবে তা  উদ্ভাবন করা হয় বিস্তারিত প্রমাণাদী থেকে।এ ধরনের ইলম হল ইলমে ফিকহ।
কারো কারো মতে, শরীয়াতের জ্ঞাত বিষয়াদী বিস্তারিত প্রামাণাদী থেকে আমলী শরীয়াআতের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়াকে ফিকহ বলা হয়
শায়খ ইবন হুমাম বলেন,
শরীয়াতের অকাট্য বিধি-বিধানের যথাযথ অনুধাবন করাকে শরীয়াতের পরিভাষায় ফিকহ বলা হয়।
আল্লামা ইবন নুজায়ম এই মতামতটির প্রতি সমর্থনভাব পোষণ করে বলেছেন,
আমলী শরীয়াতের অকাট্য বিধি-বিধানের যুথাযথ অনুধাবন হল শরীয়াতের পরিভাষায় ইলমে ফিকহ।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) বলেন,
নাফস ও আত্মার জন্য যেসব কাজ কল্যাণকর এবং যে সব কাজ কল্যাণকর নয় তা সহ নফস সম্পর্কে যথাযথ অবহিত হওয়াকে ফিকহ বলে।
সূফী সাধকদের ভাষায় ইলম ও আমলের সমষ্টির নাম হল ফিকহ। এ কারণেরি হাসান বসরী(রঃ) বলেন,
পরকালমুখী ইহকাল বিমুখ,স্বীয় দ্বীনের প্রতি সতর্ক দেওয়া,স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদতে সদা নিয়োজিত থাকা এবং মুসলিমগণের ইযযত ভুলুন্ঠিতকরণ থে বিরত ও সতর্কতা অবলম্বণকারী ব্যক্তি ফকীহ বলা হয়।
ইমাম গাযযালী(রঃ) বলেন,
শরীয়াতের শাখা-প্রশাখাজনিত জ্ঞান লাভ করা এবং সূক্ষ্ণ ইল্লত সম্পর্কে জ্ঞাত্ হওয়াকে ফিকহ বলা হয়।
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী(রঃ) বলেন,
কুরআন ও হাদীসের দ্বারা বুদ্বি খাটিয়ে প্রাপ্ত জ্ঞানকে ফিকহ বলা হয়।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, ফিকাহশাস্ত্র সর্বপ্রথম আবূ হানীফা(রঃ) কর্তৃক  উদ্ভাভিত এক নতুন নীতি। পারতপক্ষে এ কথা সামগ্রিকভাবে সত্য নয়।কারণ তা আদম(আঃ) এর সময় থেকে উদ্ভাভিত হয়।প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ ফিকহের ধারক ও বাহক ছিলেন। তার পূর্ণতা ঘটে আমাদের নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর মধ্য দিয়ে। আল্লাহ বলেন,
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [মায়িদাঃ৩]

ফিকাহশাস্ত্রের স্বরুপ

ইসলামী ফিকাহ হল সর্বকালের জন্য যুগোপযোগী। ইসলামের কয়েকটি আইনের দিক নিয়ে মাঝে মধ্য কিছু ইসলাম বিদ্বেষী লোকেরা বিভিন্ন ধরনের কুধারনা পোষণ করে থাকে।তারা ইসলামে একাধিক স্ত্রী বিবাহ, নারীর উত্তরাধিকার,তালাক, যিম্মী অধিকার , মৃত পিতার পক্ষ থেকে তার সন্তান পিতার কাছে থেকে সম্পত্তি বঞ্চিত হওয়া ও যিম্মী অধিকার।পারতপক্ষে এই সকল অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছাড়া আর কিছুই না। এই সকল আইনের পিছনে কল্যাণ রয়েছে যার ফলে তিনি তার বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এই সকল অভিযোগে জবাবসমূহ নিম্নে দেওয়া হলঃ
একাধিক নারী বিবাহ
ইসলাম এক সাথে সর্বোচ্চ চারজন নারীকে একজন পুরুষের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। জাহিলিয়াতের যুগে একসাথে একজন পুরুষ দশজন বিবাহ করতে পারত। কিন্তু ইসলাম তা শর্তাধীন চারজনে সীমাবদ্ব করে দেয়।আল্লাহ পাক একাধিক বিবাহের সময় একজন পুরুষকে সকলের ভিতর সমতা রক্ষা করতে বলেছেন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে একজন বিবাহের নির্দেশ প্রদান করেছেন।অনেক সময় একজন স্ত্রী তার স্বামীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হতে পারেন না। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা, গর্ভধারনসহ আরও নানা কারণে যথা সময়ে তা পূরণ করতে সক্ষম হন না।এমতাবস্থায় সেই পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ তার বান্দাদের একাধিক বিবাহের অনুমতি প্রদান করেছেন। অন্যথায় সেই স্বামী অন্য যে কোন স্ত্রীর সাথে কুকর্মে লিপ্ত হতে পারে। তাই ইসলাম বহুবিবাহের নিয়ম চালু করেছে। এখন যদি বলা হয় যে,একজন পুরুষ যদি চারজন নারী বিবাহ করতে পারে কিন্তু একজন নারী কেন চারজন পুরুষ বিবাহ করতে পারবে না? এর উত্তর হল এই যে, সেই নারী যদি একাধিক পুরুষ বিবাহ করে তাহলে সেই মহিলার গর্ভে যেই সন্তান আসবে তার পিতা সনাক্তকরণ অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ধরনের অভিযোগ অমূলক ও ভিত্তীহীণ।
তালাক প্রদান
তালাক একটি নিকৃষ্টতর কাজ। আল্লাহ পাক সকল বৈধ কাজের ভিতর তালাককে সর্বোনিকৃষ্ট হিসেবে অভিহিত করেছে। এটা সমাজের বাস্তবতার জন্য করা হয়েছে। নারীকে যদি কোন পুরুষ তালাক প্রদান করেন তাহলে তার তিন হায়েযকাল পর্যন্ত তাকে তার স্বামীকে ভরণ-পোষণ বহন করতে হবে।উদ্দেশ্য হল তার সেই স্ত্রীকে যেন পরবর্তীতে কোন স্বামীর সাথে বিবাহ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন সমস্যায় পড়তে না হয়। এখানে ইসলাম বিদ্বেষীগণ এই অভিযোগ পেশ করে থাকন যে, ইসলাম কেবলয়ামত্র স্বামীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেছে।কিন্তু স্ত্রীকে কোন ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই। কিন্তু এই অভিযোফ অমূলক ও ভিত্তিহীন।কারণ, স্ত্রীকে যে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা হল খুলার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। খুলা হলে স্ত্রীকে স্বামীর দেন-মোহর পরিমাণ টাকা দিতে হবে। এর থেকে বিন্দু পরিমাণ বেশী টাকা স্বামী দাবী করতে পারবে না।সুতরাং, তালাকের ব্যাপারে যেই অভিযোগ পেশ করা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন।     
মৃত পিতার নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা 
উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে ইসলামী ফিকহের ব্যাপারে একটি অভিযোগ করে থাকে যে, কারও পিতামহের মৃত্যুর পূর্বে তার পিতার মৃত্যু হলে পিতামহের মৃত্যুর পর অন্যান্য পুত্রগণ জীবত থাকলে তাহলে সেই নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।কিন্তু প্রকৃত কথা হল ইসলাম কখনও ন্যায়-নীতির খেলাফ করতে পারে না। মালিকানার জন্য জীবিত হওয়া হল মূল শর্ত। পিতামহের সাথে পৌত্রের সম্পর্ক হয় পিতার মাধ্যমে।এখন যেই সম্পত্তির মালিক পিতা হতে পারল না সে মৃত বলে সেখানে সেই জন্যে যদি তার সম্পত্তি লাভ করতে পারে তাহলে অন্যান্য পৌত্র ও দৌহিত্রগণ তাদের পিতা-মাতা জীবিত থাকুক বা না থাকুক সম্পত্তির দাবী করতে পারে। কিন্তু এই ব্যবস্থা নিশ্চয় কেউ কামনা করে না।কারণ মৃত ব্যক্তির সাথে সকলের সম্পর্ক এক বরাবর।অন্যদিকে পৌত্রকে ওয়ারিশভূক্ত না করা হলেও তার জন্য অসিয়্যতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জিযয়া কর
যিম্মীগণ হল একটি ইসলামী রাষ্ট্র বসবাসরত অমুসলিম নাগরিকবৃন্দ যারা জিজিয়ার মাধ্যমে একটি ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করে। এটা তাদের জন্য অতিরিক্ত কোন বোঝাস্বরুপ নয়।কারণ অন্যান্য মুসলিম নাগরিকদের মত তারাও একই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। এই জিজিয়া কর সকল নাগরিকের উপর প্রযোজ্য নয়। তা কেবলমাত্র যুবক অমুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য হবে।তা কিন্তু রাজ্যের অসহায়,নারী ও বৃদ্ব লোকদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। একজন মুসলিম নাগরিককে জিজিয়া করের চেয়ে বেশী ধন-সম্পদ যাকাত,ঊশরের মাধ্যমে আদায় করতে হয়। আর এই সকল বিধান থেকে যিম্মীগণ মুক্ত। আর তা কেবলমাত্র তাদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য করা হয়। উমর(রাঃ) এর খিলাফতকালে এমন নজীর পাওয়া যায় যে,যাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় নাই তাদের জিজিয়া ফেরত প্রদান করা হয়েছিল।

ফিকাহশাস্ত্রের বিষয়বস্তু

ফিকাহশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু হল দুটি যা হলঃ
১. মুকাল্লাফ ব্যক্তির আমলঃ মুকাল্লাফ এমন ব্যক্তি যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ।এই পাগল ও দৈহিকভাবে অসুস্থ লোকদের জন্য নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। কিন্তু যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে তাদের জন্য আমলসমূহ নির্দিষ্ট হওয়া হল ফিকাহশাস্ত্রের একটি বিষয়।
২।শরীয়াত সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান লাভঃ শরীয়াতের কোন বিষয়টি ফরয,ওয়াজিব,সুন্নাহ,মুস্তাহাব,হালাল,হারাম,মুবাহ,মাকরুহ তা সম্পর্কে অবগত হওয়া।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
যে কারণে কোন কাজ করা হয় তাকে ঐকজাএর লক্ষ্য বলা হয়।একটি মানুষ কীভাবে দুনিয়া এবং আখিরাতের জীবনে সাফল্য অর্জন করবে তা হল এই ফিকাহশাস্ত্রের এটি হল ফিকহের মূল লক্ষ্য।এখানে দুনিয়ার সাফল্য বলতে হাক্কুল্লাহ এবং হাক্কুল ইবাদত সম্পর্কে বুঝানো হয়েছে।আর আখিরাতের সাফল্য বলতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং জান্নাত লাভকে বুঝানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...