ভূমিকা
আল্লাহ
বলেন,
“তোমরা একে অপরের সম্পত্তি
অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না”। [নিসাঃ২৯]
চুরি করা একটি জঘন্যতম অপরাধ।মানুষ যেন চুরি না
করা এর জন্য আল্লাহ পাক কিছু বিধান দিয়েছেন।এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
চুরি কি?
এর আরবী
প্রতিশব্দ হল আস-সিরকাতু।যার আভিধানিক হল গোপনে ছিদ্র অণ্বেষণ করা,গোপনে কোন কিছু শ্রবণ করা ইত্যাদি।আল্লাহ বলেন,
“যে চুরি করে শুনে বেড়ায়।” [হিজরঃ১৮]
আমরা
সাধারণভাবে বলতে পারি চুরি অর্থ হল কোন কিছু নিয়ে যাওয়া,কোনকিছু
গোপনে আত্মসাৎ করা ইত্যাদি। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হল theft, stealth etc.
আল-হিদায়া
গ্রন্থে বলা হয়েছে,
“কোন বালেগ এবং বুদ্বিমান ব্যক্তি
কর্তৃক অপরের দখল্ভূক্ত নিসাব পরিমাণ মাল সংরক্ষিতস্থান থেকে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে
চুরি বলে”।
ইসলামী
পরিভাষায় প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের অন্য কিছু হরণ করা,যার
পরিমাণ দশ দিরহাম।
ইবনে
নাজীস বলেন,
"চুরি হল কৌশলে গোপনে কোন কিছু হরণ করা"।
আল্লামা
ছারখাসী বলেন, "অপরের সম্পদ গোপনভাবে নিয়ে যাও্য়া হল চুরি"।
মাওলানা
আব্দুর রহিম বলেন,
“গোপনভাবে অন্যকে না দেখিয়ে পরের
ধন-সম্পদ করায়ত্ত্ব করাই হল চুরি”।
চুরির
জন্য দণ্ডবিধি
হিজরী সপ্তম সনের প্রথম ভাগ। ইতিমধ্যে মদীনার
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের বুনিয়াদী প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করে। প্রতিটি মানুষই খুঁজে পায় তার বেঁচে থাকার
অধিকার। নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার সুনিশ্চিত করার পর ইসলামী রাষ্ট্র অপরাধ
প্রবণতা দমনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। চুরির প্রবণ প্রতিরোধের জন্য এই
অপরাধের শাস্তি বিধান করে আল্লাহ বলেন,
যে পুরুষ
চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজাহিসেবে।
[মায়িদাঃ৩৮]
চুরির
শর্তাবলী
১. চোরকে
স্বাধীন,বালিগ ও জ্ঞানবান হতে হবে।
২. চোরকে
একবার স্বীকার করতে হবে।
৩. দুইজন
পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ আর দুইজন নারী সাক্ষী থাকতে হবে।
৪.
চুরিকৃত বস্তুটি নিসাব পরিমাণ হতে হবে।
৫. কেউ
যদি ক্ষুধার তাড়নায় চুরি করে তাহলে তার জন্য শাস্তি হবে না।কারণ রাসূল(সাঃ) বলেন, ক্ষুধার জন্য চুরি করলে তার শাস্তি হবে না।
৬.
সম্পদটি গোপনে সংরক্ষিত স্থান থেকে নিবে।
৭. তার
প্রমাণ,মৌখিক স্বীকৃতি ও হলফ থাকতে হবে।
যদি
উপরোক্ত শর্তসমূহ পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হদ্দ জারী হবে অন্যথায় তাকে তাযীরের
আওতায় শাস্তি দিতে হবে।
রাসূলের
(সা) শাসনকালে একটি ঢালের দামের চেয়ে কম দামের জিনিস চুরি করলে হাত কাটা হতো না।
সেই যুগে একটি ঢালের দাম ছিল দশ দিরহাম। কারণ রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন, “এক দীনার বা দশদিরহামের কমে হাত
কাটা যাবে না”।
চুরির
নিসাবের ব্যাপারে অন্যান্য ইমামদের মতামত
খারিজী
এবং জাওহারীগণ বলে থাকেন যে, যেকোন বস্তু তা পরিমাণের অল্প হোক
বা বেশী হোক তা চুরি করলে তার হাত কেটে ফেলতে হবে।তারা বলে থাকেন যে, কুরআনে এ ব্যাপারে কোন ইঙ্গিত দেওয়া হয় নাই যে, কি
পরিমাণ চুরি করলে হাত কাটতে হবে।
ইমাম
শাফিঈ(রঃ) বলেন, ১/৪ দিনার পরিমাণ সম্পদ চুরি না করা পর্যন্ত শাস্তি
কার্যকর হবে না।এ ব্যাপারে আয়শা (রাঃ) এর বর্ণিত একটি হাদীস পাও্যা যায়।
ইমাম
মালেক এবং আহমদ এর মতে , তিন দিরহামের কম সম্পদ চুরি করলে
শাস্তি হবে না।কারণ এ ব্যাপারেও হাদীস রয়েছে।
খারিজী ও
জাওহারীগণ কেবল কুরআনের উপর আমল করাতে গোমরাহী হয়েছে আর শাফিঈ(রঃ) এর দলীল ইসলামের
প্রাথমিক যুগে বিদ্যমান ছিল।অন্যদিকে ইমাম আহদম এবং মালেকের হাদীসখানী দূর্বল।
তাই
এক্ষেত্রে বলা যায় যে, চুরির নিসাব হল দশ দিরহাম।
হাত কাটা
পদ্বতিঃ
কোন চোর
চুরি করলে তাকে হাত এমনভাবে কাটতে হবে যাতে করে তার জীবন বিপন্ন না হয়ে পড়ে। এর
জন্য তার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে রাখতে হবে। রাসূল(সাঃ) একবার এক চোরকে হাত কাটার
নির্দেশ দিলে পরে তার হাত কাটা হয় এরপর তা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিতে বলেন এবং এরপর
তাকে তার কাছে নিয়ে আসতে বললেন যাতে করে সে তওবা করে। কেউ যদি ২য় বার চুরি করে
তাহলে নিয়ম হল তার বাম পা কেটে ফেলা।আর ৩য়বার চুরি করলে কি শাস্তি হবে সেই
ব্যাপারে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। যা হলঃ
১. তার
ডান পা কেটে ফেলতে হবে। এটি ইমাম শাফিঈ(র.), মালিক(র.)
এর মতামত।
২. তাকে
জেলে আটক রাখতে হবে।তার শরীরের অন্যান্য অংগহানী করা ঠিক হবে না।এটা ইমাম আবূ
হানীফার(র.) এর মতামত।
No comments:
Post a Comment