Friday 23 August 2013

কোর্স নং-৪০৭ প্রশ্ন- রাসূলুল্লাহ(সা:) এর যুগে ফিকাহচর্চা সম্পর্কে যা জানো লিখ।

রাসূলুল্লাহ(সা:) এর যুগে ফিকাহ চর্চা

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর যুগে ফিকাহচর্চা হয় তার নবুয়াতপ্রাপ্তি থেকে হিজরী সালের দশম বছর পর্যন্ত তার ইন্তিকালের পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত। সেই সময়ে যাবতীয় বিষয়াদী রাসূলের সাথে সংক্লিষ্ট ছিল।আইন প্রণয়ন,ফাতওয়া প্রদান, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াদী ওয়াহীর মাধ্যমে লাভ করে তিনি নিজেই তা সম্পাদন করতেন। সেই সময় রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তার উম্মাতকে যেভাবে শিক্ষা দিতেন সাহাবাগণ তা নিয়ে যথাযথযভাবে অনুসরণ করতেন। কোনটি ফরয,কোনটি ওয়াজিব,কোনটি নফল তা নিয়ে তারা রাসূলের সাথে বিতর্ক করতেন না।রাসূল তাদের যা আদেশ করতেন তা তারা অকপটে মেনে নিয়ে তার উপর আমল করতেন। তাই সেই সময় ফিকহশাস্ত্র আলাদা করে প্রণয়ন করা প্রয়োজনীয়া ছিল না।

এই সময় ফিকাহশাস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার উৎস ছিল দুটি যা হল কুরআন ও রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ব্যাখ্যা।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এত সহজভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করতেন যে,  সাহাবাদের ভিতর তখন কুরআন-হাদীস নিয়ে আলাদাভাবে দ্বিমত করতে হত না।তাদের মাঝে ভুল বোঝাবুজি ও বিরোধের বিন্দুমাত্র স্থান ছিল না।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কর্মপন্থা ছিল কয়েক ধরনের যা হলঃ

১। আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনের শিক্ষা দেওয়া।
২। কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ
৩। চরিত্র সংশোধন যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হন।
৪।সমষ্টিগতভাবে শিক্ষা দান যার ফলে প্রতিটি অবস্থান অতিক্রম করে ইসলামী কার্যক্রমকে আগানো যায়।
৫।এমন জামাআত গঠন করা যার ফলে তার নবুয়াতের দায়িত্ব অন্য কেউ তারপর পালন করতে পারে।

আল কুরআনের প্রায় ৫০০টি আয়াত এবং মুহাম্মদ(সাঃ) এর প্রায় ৩০০০ হাদীস ফিকহশাস্ত্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। 
সে সময় আকীদা খণ্ডন,বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং সাহাবাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তরের জন্য ফিকাহ শাস্ত্রের উদ্ভব হয়।
যেমন কিছু কিছু জায়গায় আনসারগণ প্রদক্ষিণ করতে অপরাগতা প্রকাশ করে।তখন আল্লাহ নাযিল করেন,
নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তাআলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন। [বাকারাঃ১৫৮]

কিছু ভ্রান্ত আকীদা দূরীকরণে বিধান সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয় যা হলঃ
অতঃপর তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস, যেখান থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর কাছেই মাগফেরাত কামনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়।[বাকারাঃ১৯৯]
বিধি-বিধান প্রণয়নের জন্য
কখনও কখনও সালাত,যাকাত ও সিয়ামকে ফরয করার জন্য কোন কোন আয়াত নাযিল হয়েছিল।আল্লাহ বলেন,
আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর  [বাকারাঃ৪৩]
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয   করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা   হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা   পরহেযগারী অর্জন করতে পার।  [বাকারাঃ১৮৩]
আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থø রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।  [ইমরানঃ৯৭]
হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? [তাহরীমঃ১]
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
তোমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে ফরয করা হল।
ইমামকে যখন সালাত আদায় করবে যেন তার মুক্তাদীগণ কিরাআত না করে সেইজন্যে বলা হয়,
ইমামকে নিয়োগ দেওয়া হয় এইজন্যে যার ফলে সে পরিপূর্ণভাবে তার ইক্তিদা করতে পারে।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তিনটি সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন যা হলঃ
১। সূর্যোদয়
২। দ্বিপ্রহর
৩। সূর্যাস্ত

যেই বিষয়টি ঘটে নাই সেটা নিয়ে তারা কোন ধরনের প্রশ্ন করতেন না।এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।

ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন,
সাহাবাগণ কেবলমাত্র সেই ধরনের প্রশ্ন করতেন যা তাদের জন্য জানা প্রয়োজন ও উপকারী ছিল।
কাসিম(রাঃ) লোকদের সম্বোধন করে বললেন,
 তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যে বিষয়ে আমি কোন মুখ খুলি নাই। তাছাড়া এমন বিষয় প্রশ্ন করছ যে বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই।সেগুলো যদি জানা থাকত তাহলে নবী করিম(সাঃ) এর ফরমান অনুযায়ী তার উত্তর দিতাম
ইবন উমর(রাঃ) বলেন,
এমন কোন কথা জিজ্ঞাসা কর না যা তোমাদের মধ্যে সঙ্ঘগটিত হয় নাই।এমন প্রশ্নকারীর উপর উপত উমর(রাঃ) লানত করেছেন
একবার উবাদা বিন বসরকান্দী(রঃ) এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, কোন নারী যদই এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তার যদি কোন ওয়ালী না থাকে তাহলে তার গোসল কীভাবে দেওয়া যায়? তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আমি এমন কিছু লোকের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেছি যারা তোমাদের মত এমন জটিলতা করে না এবং কঠোরতা করে না। তারা তোমাদের মত ধরে নেওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করে না।
সাহাবাদের প্রশ্নের জন্য কখনো কখনও প্রশ্নের উত্তর দিতে হত তার জন্যসেই মুসলিমগণের কেবলমাত্র ১৩টি প্রশ্নের উত্তরে কুরআনে আয়াত নাযিল হয়। এ ব্যাপারে ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবাদের চেয়ে উত্তম মানুষ আর কাউকে আমি দেখি নাই। তারা রাসূলে সারা জীবনে মাত্র ১৩টি প্রশ্ন করেছিলেন।

তারা যেসকল প্রশ্ন করেছিলেন যার কারণে কুরআনে বিভিন্ন আয়াতসমূহ নাযিল হয় তা হল নিম্নরুপঃ

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি [বাকারাঃ২২২]
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে।  [বাকারাঃ২১৯]
সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। [বাকারাঃ২১৭]
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। [বাকারাঃ২১৯]
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, এতীম সংক্রান্ত হুকুম। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেয়া উত্তম আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই । [বাকারাঃ২২০]
মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান [নিসাঃ১৭৬]
তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। [বাকারাঃ২১৫]
আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। [আনফালঃ১]
তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে, কি বস্তু তাদের জন্যে হালাল? বলে দিন, তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে। [মায়িদাঃ৪]
আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে।  [আরাফঃ১৮৭]
তারা আপনাকে   রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ   রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য   জ্ঞানই দান করা হয়েছে।[ইসরাঃ৮৫]

তারা আপনাকে   যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি   তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।[কাহফঃ৮৩]

তারা আপনাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করা। অতএব,   আপনি বলুনঃ আমার পালনকর্তা পহাড়সমূহকে   সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। [ত্বাহাঃ১০৫]

রাসূলের যুগে ফিকাহ চর্চা হতো তার উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলঃ


১ম উদাহরণ

বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে, আহযাবের যুদ্বের শেষের দিন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বনু কুরায়জায় পৌছার পূর্বে আসরের সালাত আদয় করতে নির্দেশ জ্ঞাপন করেছিলেন। একদল সাহাবী সেখানে যাওয়ার পূর্বে আদায় করে ইল্লত করেছেন এবং অন্যদল সাহাবী সেখানে পৌছে সূর্যাস্তের সময় আদায় করেছেন।
এখানে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সালাত পড়ার অর্থ বলতে দ্রুত সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করেছেন। এখানে তিনি দুই দলকে সমর্থন করেছিলেন।

২য় উদাহরণ

বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুহাম্মদ(সাঃ) যখন মুয়াজ ইবনে জাবাল(রাঃ)কে ইয়ামেনের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন মুহাম্মদ(সাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে,কি দিয়ে তুমি বিচার করবে?তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহের কিতাবেরর দ্বারা করব। তখন মুহাম্মদ(সাঃ) বললেন, যদি কুরআনেও যদি তার সমাধান না পাও তাহলে তার সমাধান কীভাবে করবে? তখন মুয়াজ(রাঃ) বললেন, হাদীসের দ্বারা। তখন মুহাম্মদ(সাঃ)বললেন যদি তার সমাধান হাদীসে না পাও তখন কি করবে?তখন সে উত্ততে বললেন, আমি তা আমার বিবেকের সাহায্যে সমাধান করব। তার এই জবাব শুনে মুহাম্মদ(সাঃ) সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন আর আল্লাহের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।

৩য় উদাহরণ

আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর দুইজন সাহাবী একবার সফরে বের হলেন। তখন তারা এমন এক জায়গাত পৌছলেন যে যেখানে উযু করার মত পানি ছিল
না,অতঃপর তারা দুইজনে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে নিলেন। অতঃপর ওয়াক্ত অবস্থায় দুইজন পানি পান তন্মধ্যে একজন পুনরায় উযু করে সালাত আদায় করলেন এবং অন্যজন তা করলেন না।এই অবস্থার কথা এই দুইজন সাহাবী জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, যে আনি পেয়েও উযু করে নাই তার সালাত হয়ে গেছে আবার যে পানি পেয়ে সালাত আদায় করেছে সে দ্বিগণ সওয়াব অর্জন করবে।

এভাবে করে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর যুগে ফিকাহচর্চা হয়।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...