ভূমিকা
আল্লাহ
সুবাহানাওতায়ালা বলেন,
“আল্লাহ সুদকে করেছেন
হারাম এবং ব্যবসাকে করেছেন হালাল।” [বাকারাঃ২৭৫]
লেনদেন
মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।লেনদেন ছাড়া মানুষের জীবন পুরোপুরি অচল।
ইসলাম ধর্মে মানুষের প্রত্যহিক লেনদেনের ব্যাপারে যথাযথভাবে আলোচনা করেছে।ইসলামের
দৃষ্টিতে মুয়ামালাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
মুয়ামালাত পরিচিতি
মুয়ামালাত
আরবী শব্দ যার অর্থ হল বিনিময়,বদল,বৈধ,বন্ধন,চুক্তি মিলিত,সম্পৃক্ত হওয়া,বন্ধন, permissible, Tranjection etc.
ইসলামী
পরিভাষায় মুয়ামালাত হল সেইসব বিধান যা দ্বারা পারস্পারিক লেনদেন আদান-প্রদান
বুঝায়। আর এই আদান-প্রদান কেবলমাত্র দাতা-গ্রহীতার ভিতর সীমাবদ্ব থাকে।
আল
মুজামুল ওয়াসিত এ বলা হয়েছে,
“আহকামে শরীয়ায়
মুয়ামালাত হল দুনিয়াবী কাজের সাথে সম্পর্কিত বিষয়”।
ইবন
খালদুন বলেন,
“মুয়ামালাত হল হিসাব
বিজ্ঞানের একটি অংশ আর তা হিসাব বিজ্ঞানের একটি ইতিবাচক দিক যা ঐতিহ্যগত বা জ্ঞান
ভিত্তিক জ্ঞান হিসেবে পৃথক করে”।
ইসলামী
ফিকহের ভাষায়
“There
are two kinds of dealings. These are permissible and prohibitable, Muamalat is
permissible deals”
ইসলামী
বিশ্বকোষে বলা হয়েছে,
“মুয়ামালাত হল বিনিময়,আদান-প্রদান,ক্রয়-বিক্রয়,ঋণদান এবং তদসংক্লিষ্ট বিষয়াদী”।
হালাল উৎস সমুহ
১. অসিয়ত
অসিয়তের
আভিধানিক অর্থ হল নির্দেশ,উপদেশ,মিলানো অর্থাৎ, কোন জিনিস অন্য জনের কাছে পৌছানো।পারিভাষিক অর্থে শেষ ইচ্ছা বা ইচ্ছায়
সম্পত্তি প্রদান। কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার স্মপত্ত মৃত্যুর পর চিরকালের জন্য
নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অপর কোন ব্যক্তিকে বিনিময় ছাড়া হস্তান্তর করে তাকে অসিয়ত
বলে।অসিয়ত ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি অন্যতম ইবাদত যার সাহায্যে লেনদেন
সংক্রান্ত কাজ হয়ে থাকে।আল্লাহ বলেন,
“†Zvgv‡`i Dci dih Kiv n‡q‡Q †h,
hLb †Zvgv‡`i Kv‡iv g„Zz¨ Dcw¯’Z n‡e, hw` †m †Kvb m¤ú` †i‡L hvq, Z‡e wcZv-gvZv I wbKUvZ¥xq‡`i Rb¨ b¨vqwfwËK AwmqZ Ki‡e”| [বাকারাঃ১৮০]
কেউ যদি
অসীয়ত মোতাবেক কাজ না করে তাহলে সে কঠিন গুনাগার হবে। রাসূল(সাঃ) বলেন,
“যে পুরুষ বা মহিলা
ষায় বছর আল্লাহর আনুগত্যকারী হিসেবে জীবন-যাপন করল,এরপর যখন মৃত্যু আসে, অসীয়তের ব্যাপারে
দাবীদারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত”।
২. ওয়াকফ
যেকোন
ব্যক্তি কর্তৃক নিজ সম্পত্তি আল্লাহর মালিকানায় সোপর্দ করা বা তা কোন ধর্মীয় কিংবা
জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয় তা হল ওয়াকফ। কেউ যদি তার ধ-সম্পত্তি ওয়াকফ করে যায় তার
সওয়াব সে মৃত্যু পর পেতে থাকে। কারণ রাসূলে করিম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,
“মানুষ মরে যাও্যার
সাথে সাথে তার আমলনাম বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু তিনটি জিনিসের হয় না। তা হল কল্যাণময়ী
দান, উপকারী জ্ঞান এবং পিতা-মাতার জন্য
সন্তানের দুয়া”।
তালহা(রাঃ)
মৃত্যুর সময় তার খেজুর বাগান দান করেছিলেন,উমার(রাঃ) খায়বারের বাগান দান করেছিলেন। মৃত ব্যক্তির জন্য সম্পদের ১/৩ কার্যকর হবে আর জীবিত অবস্থায় যে যতটুকু
ওয়াকফ করবে তাই কার্যকর হবে।
৩.
ওরাসাত
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার উত্তরাধিকারের ভিতর
সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টণ হওয়াকে ওরাসাত বলা হয়।কেউ যেন এখানে একটুও না ঠকে ইসলাম সে
বাপারে বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছে।আল্লাহ বলেন,
“. cyi“l‡`i Rb¨ gvZv wcZv I wbKUvZ¥xqiv hv †i‡L wM‡q‡Q Zv †_‡K GKwU
Ask i‡q‡Q| Avi bvix‡`i Rb¨ i‡q‡Q gvZv
wcZv I wbKUvZ¥xqiv hv †i‡L wM‡q‡Q Zv †_‡K GKwU AskÑ Zv †_‡K Kg †nvK ev †ewk †nvKÑ wba©vwiZ nv‡i| [নিসাঃ৭]
তাছাড়া রাসূল (সাঃ) এ ব্যাপারে বলেছেন,
“যে ব্যক্তি(মুমিন)
মারা যায় আর সে যদি ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার আর যদি সে
মাল রেখে যায় তাহলে তা ওয়ারিশদের”।
৪. হেবা
হিবা
শব্দের অর্থ হল দান করা। কোন ব্যক্তির মাল বিনিময় মূল্য ছাড়া দান করা এবং যার
দ্বারা দান করা হয় তা সেই ব্যক্তি দ্বারা গ্রহণ করাকে হিবা বলা হয়। হিবার ব্যাপারে
ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকে। রাসূল(সাঃ) বলেন,
“তোমরা পরস্পরে হিবার
মাধ্যমে ভালবাসা বৃদ্বি কর”।
“তোমরা পরস্পর উপহার
পাঠাও এবং বন্ধুত্বে পরিণত হও,তোমাদের ঘৃণা-বিদ্বেষ
দূর হয়ে যাবে”।
রাসূল
(সাঃ) উপহারকৃত বস্তু ফেরত পাঠাতে নিষেধ করেছেন। অন্যদিকে পরামর্শদাতার জন্য তা
নেওয়া নিষেধ।
৫.
ভরণ-পোষণ
পরিবারের
গৃহকর্তা কর্তৃক স্ত্রী,সন্তানগণ এবং বৃদ্ব
পিতা-মাতাকে যে খাদ্য,পোশাক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়
তাকে ভরণ-পোষণ বলা হয়।ভরণ-পোষণ করা একটি পবিত্র কাজ। এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে
বিশেষভাবে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।আল্লাহ বলেন,
“বিত্তবানেরা নিজ
সামর্থ্যে ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তা থেকে
ব্যয় করবে”। [তালাকঃ৭]
“জনকের কর্তব্য হল
যথারীতি তাদের ভরণপোষণ করা”। [বাকারাঃ২৩৩]
রাসূল
(সাঃ) বলেন, “কোন মুসলিম যদি তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য,সন্তানের জন্য এবং তার খাদেমের জন্য ব্যয় করে তাহলে তা দান হিসেবে গণ্য হব”।
৬. শুফআ
কোন
ব্যক্তির ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্রয় করে মালিক হওয়ার
অধিকারকে শুফা বলা হয়। এদ ধরনের লেনদের জায়েয আছে। রাসূল (সাঃ) বলেন,
“যেসকল সম্পত্তিতে ভাগ
করা হয় নাই,সেইসকল সম্পত্তিতে শুফয়ার বিধান
রাখা হয়েছে”।
৭.
ব্যবসা-বাণিজ্য
ব্যবসা-বাণিজ্য
একটি বৈধ কাজ। এ কাজ আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। রাসূল (সাঃ) নবুওয়্যাতের জীবনের
পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন।রাসূল(সাঃ) বলেন,
“কেউ যদি ইয়াতীমের কোন
মালের মালিক হয় তাহলে সে যেন তা দিয়ে ব্যবসা করে”।
“তোমাদের জীবিকার দশ
ভাগের নয় ভাগ আছে ব্যবসার ভিতর”।
যারা
সৎভাবে ব্যবসা করবেন আল্লাহ পাক তাদেরকে বিশেষ মর্যাদা অধিষ্ঠিত করবেন।তাই
রাসূল(সাঃ) বলেন,
“সৎ ও বিশ্বস্ত
ব্যবসায়ীগণ কাল কিয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবেন”।
৮. ইজারা
ইজারা
অর্থ হল ভাড়া দেওয়া। ইসলামে এটিও একটি বৈধ লেনদেন প্রক্রিয়া।
৯.
ক্রয়-বিক্রয়
মানুষের
জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন ধরনের জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়। ইসলামের
দৃষ্টিতে সুদমুক্তভাবে ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল বলা হয়েছে। কারণ আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ বেচা-কেনাকে
হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম”। [বাকারাঃ২৭৫]
রাসূল(সাঃ)
ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা এবং বিক্রতে উভয়কে সততা অবলম্বণের জন্য তাগিদ
দিয়েছেন।তিনি বলেন,
“যখন ক্রেতা-বিক্রেতা
উভ্য় সত্যের উপর তাহকে তখন তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয় এবং যদি মিথ্যা পথে থাকে
তাহলে তাতে বরকত নষ্ট হয়ে যায়”।
[বুখারী,মুসলিম]
১০.
হালাল উপার্জন
রিযিকের
জন্য হালাল উপার্জন করা একটি বৈধ কাজ।কারণ প্রত্যেক নবী-রাসূল কোন কোন কাজের সাথে
সম্পৃক্ত ছিলেন।ইব্রাহীম(আঃ) ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী, দাউদ (আঃ) ছিলেন কামাড়,যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন
কাঠমিস্ত্রী।আল্লাহ বলেন,
“অতঃপর যখন সালাত
সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর”। [জুমারঃ১০]
রাসূল(সাঃ)
বলেন,
“হালাল রুজি অণ্বেষণ
করা ফরয কাজের পর একটি ফরয কাজ”।
১১.
মোহরানা
বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ব স্ত্রীকে স্বামীর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে যেই মাল দেওয়া হয় তাকে
মোহরানা বলা হয়।বিবাহের জন্য এটি একজন পুরুষের জন্য ফরয কাজ।আল্লাহ বলেন,
†Zvgiv
bvix‡`i‡K mš‘ówP‡Ë Zv‡`i †gvni w`‡q `vI। [নিসাঃ৪]
রাসূল
(সাঃ) বলেন,
“কোন ব্যক্তি যদি
মুহরের বিনিময় কাউকে বিবাহ করল আর যদি তাকে মুহর প্রদানের ইচ্ছা না করে তাহলে সে
ব্যভিচারী”।
১২.
ঋণদান
ঋণদান
করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি বৈধ কাজ।আল্লাহ বলেন,
. “†n gywgbMY, hLb †Zvgiv wbw`©ó mg‡qi Rb¨ ci¯úi
F‡Yi †jb-‡`b Ki‡e,
ZLb Zv wj‡L ivL‡e”| [বাকারাঃ২৮১]
রাসূলে
করীম (সাঃ) বলেন,
“এক ব্যক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করে এর দরজায় লিখা দেখতে পেল, সদকার সওয়াব দশগুণ আর কর্জ প্রদানের সওয়াব আঠার গুণ”।
যেহেতু
যে ঋণ চায় এই অবস্থায় সে বেশী প্রয়োজনে থাকে তাই তাকে ঋণ দিলে সওয়াব পাওয়া যাবে।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায় যে, মুয়ামালাত একটি কল্যাণমূলক বিষয়
যার দ্বারা ক্রেতা-বিক্রেতার ভিতর একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।তাই আমরা সকলে এই
ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লেনদেন করব ।
thanks.... a lot.... আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এর প্রতিদান দান করুক.... ভালো একটি লেখা দেয়ার জন্য... সাজানো গুছানো।
ReplyDeletethanks.... a lot.... আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এর প্রতিদান দান করুক.... ভালো একটি লেখা দেয়ার জন্য... সাজানো গুছানো।
ReplyDelete