ভূমিকা
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
বলেন,
আমার
উম্মাতের কাছে যা ভাল আল্লাহর কাছেও তা ভাল।
এই
হাদীসের দ্বারা ইজমার প্রতি বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। ইজমা হল ইসলামী
শরীয়াতের ৩য় উৎস। এটি শরীয়াতের অকাট্য দলীল স্বরুপ।এর উপর আমল করার সকলের জন্য
জরুরী।এই ইজমার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে পেশ করা হলঃ
ইজমাঃ
ইজমার
শব্দটি জামউন শব্দ হতে এসেছে যার অর্থ হল সংগ্রহ,একত্রীকরণ ইত্যাদি।ঈজমার শব্দটির
আভিধানিক অর্থ হল সন্নিবেশন করা,একত্রীত করা,জমা করা, মতৈক্যে পৌছা, একমত পোষণ করা
ইত্যাদি।
পারিভাষিকভাবে
বলা যায় যে, কোন বিষয় মুসলিমদের ভিতর মতৈক্যকে ইজমা বলা হয়।
মোল্লা
জিউন বলেন, “মুহাম্মদ(সাঃ) এর উম্মাতের মধ্য হতে একই
যুগের সকল পূণ্যবান মুজতাহিদগণের কোন বক্তব্যমূলক বিষয় একমত হওয়া হল ইজমা।”
ইমাম
গাযযালী (র.) এর মতে, “ইজমা হল ধর্মীয় ব্যাপারে সকল উম্মতী
মুহাম্মদের মতৈক্য”
ইমাম
আবূ হানীফা(রঃ)বলেন“শরীয়াতের কোন হুকুমের ব্যাপারে একই যুগের সকল
মুজতাহিদদের একমত হওয়াকে ইজমা বলে।”
আহলে
জাওয়াহের মতে, ইজমা হল মুমিনদের ঐক্যমত।
ইবন
হাযমের মতে, ইজমা হল সকল সাহাবাদের ভিতর মতৈক্য সৃষ্টি হওয়া।
ড.শফিক
আহমেদ স্যার বলেন, “Ijma
is the defined unamois agreement on the Mujdahid of the Muslim community of any
period following the demise of the Prophet (Sm) on any matter.”
তাহলে
আমরা বলতে পারি যে, শরীয়াহের কোন বিষয় একই যুগের সকল মুজতাহিদদের একময় হওয়াকে ইজমা
বলা হয়।
ইসলামের
২য় খলিফা হযরত উমর(রাঃ) এর খিলাফতকালে যখন বিভিন্ন রাজ্য মুসলিমদের হাতে জয়ী হতে
থাকে সে সময় হতে তখন সে সকল দেশে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন আইনের সংমিশ্রন ঘটতে
থাকে যার ভিতর কোনটা গ্রহণ করা হবে আর কোনটা হবে না তা নিয়ে সংশ্য দেখা দেয়।এসময়
মুসলিম আইনবিদগণ ইজামার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামী আইন বাস্তবায়নে এক
বিশেষভূমিকা পালন করে।
ইজমার প্রমাণ
ইজমা
কুরআন ও হাদীস শরীয়াতের উভয় মূল উৎস দ্বারা প্রমাণিত।ইজমার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে
বলা হয়েছে,
“এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী
সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে”
[বাকারাঃ১৪৩]
অর্থাৎ,
এ আয়াতে উম্মতী মুহাম্মদীকে একটি মধ্যম্পন্থী তথা ন্যায়পরায়ন জাতি হিসেবে আখ্যায়িত
করা হয়েছে যা ইজমার জন্য দলীলস্বরুপ।এভাবে কুরআনের অসংখ্য জায়াগায় ইজমার কথা তুলে
ধরা হয়েছে।
এছাড়াও
পরামর্শের মাধ্যমে কোন বিষয় মতৈক্য সৃষ্টি করতে ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়ে
থাকে।তাই আল্লাহ বলেন,
“কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন”। [ইমরানঃ১৫৯]
“পারসপরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে”[শুরাঃ৩৮]
উম্মতী
মুহাম্মদ যখন পরামর্শ করে কোন বিষয় মতৈক্য স্থাপন করবে তখন তার বিরোধিতা কোন
অবস্থায় করা যাবে না।তাই আল্লাহ বলেন,
“তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব
মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন
করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।“ [নিসাঃ১১৫]
“আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে
গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে
ভয়ঙ্কর আযাব।”[ইমরামঃ১০৫]
এছাড়া
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইসলামের সামান্য বন্ধন হতে
দূরে সরে যাবে সে নিজেকে ইসলামের বন্ধন হতে দূরে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।”[আবূ দাউদ]
আর
মুসলমানদের ইজমা যে আল্লাহ পাকের কাছেও গ্রহণযোগ্যা হবে তা স্বয়ং রাসূল(সাঃ) এর
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই তিনি বলেছেন, “আমার উম্মত যা ভাল মনে করে তা আল্লাহের
কাছেও ভাল।”
“আমার উম্মত কখনো ভ্রান্ত বিষয় একমত হবে
না।”
[তিরমিযি]
“তোমাদের সামনে কোন মীমাংসার বিষয় আসলে তা
আল্লাহের কিতাবের সাহায্যে ফয়সালা করবে,যদি আল্লাহের কিতাবে নেই এমন কিছু এলে তা
রাসূলের সুন্নাতের দিকে তাকিও;সুন্নতে নেই এমন কিছু এলে জনগণের মতৈক্যের উপর
নির্ভর করবে।”
উম্মতের
অধিকাংশ মানুষ উদ্ভূত কোন কোন সংকটকালে কুরআন-হাদীসের শিক্ষার আলোকে যে সমাধান পেশ
করবে তা ভুল হবে না।তা হবে আল্লাহ ও রাসূলের এর হতে প্রাপ্ত হিদায়াত। মহানবী
(সাঃ)এর মৃত্যুর পর থেকে সাহাবা ও মুজতাহিদগণ বিভিন্ন বিষয় মতৈক্য স্থাপন করেছেন।
ইজমার প্রকারভেদ
ইজমা
আহলে অনুযায়ী প্রধানত দুই শ্রেনীতে বিভক্ত।তা হল ইজমাউস সাহাবা এবং ইজমাউস
উম্মত।প্রথম প্রকারের ইজমা সাহাবাদের ভিতর হয়ে থাকে আর দ্বিতীয় ধরনের ইজমা
সাহাবাদের পরবর্তী সময় সকল মুসলিম মুজতাহিদের ভিতর সংঘটিত হয়।
ইজমাউস
সাহাবা
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
এর যুগে এবং তারপরের যুগে সকল সাহাবীদের ঐক্যমত পোষণ করাকে ইজমাউস সাহাবা বলা হয়।
হযরত
আবূ বকর (রাঃ)কে খলীফা হিসেবে নির্বাচিত করা, তার সময় কুরআন সংকলিত হওয়া, তার সময়
ভণ্ড নবীদের বিরুদ্বে যুদ্ব করা, উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে তারাবীর নামায জামায়াতের
সাথে আদায় করা, তিন তালাকের মাধ্যমে পুরোপুরি তালাক হয়ে যাওয়া,উসমান(রাঃ) এর
খিলাফত আমলে কুরআনকে নতুনভাবে সাজানো, মৃত ব্যক্তির দাদীকে এক-ষষ্ঠাংশ সঅম্পত্তি
দেওয়া, মুসলিম নারীদের সাথে অমুসলিম পুরুষের বিবাহ ইজমাউস সাহাবার উদাহরণ।
ইজমাউস
উম্মাত
অন্যদিকে
ইজমাউস উম্মাত আবার দুই ভাগে বিভক্ত।তা হল মুজতাহিদদের ইজমা আর হল সাধারণ জনগণের
ইজমা।পরবর্তীতে ইজমাউস মুজতাহিদ বিভিন্ন বিষয় ইজমা সৃষ্টি করতে এক বিশেষ ভূমিকা
পালন করে।যেমন-এক সময় সুদ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আইন বিভিন্ন ধরনের পণ্যের অসামাঞ্জস্যকর
বিনিময় বাণ্যিজ্যের উপর জারী হত,যেমনঃ স্বর্ণ,রৌপ্য,গম,বার্লি,খেজুর ও কিসমিস।শাফী
ও হাম্বলী মাযহাবের মতে তা সকল অসামঞ্জস্যকর বদল বাণিজ্যের উপর আরোপ করা
যায়,মালিকীগণ মনে করতেন তা কেবলমাত্র গুদামজাত পণ্যের উপর আরোপ করা যায় আর
হানাফীগণ মনে করতেন যে,যেসকল পণ্য কেবল ওজন করা যায় তার উপর সে ধরনের আইন প্রয়োগ
করা যায়।এমতাবস্থায় সকলের ভিতর বিভ্রান্ত সৃষ্টি হলে তারা একটি বিষয় ঐক্যমতে পৌছে
যে সুদের আইন কেবলমাত্র গুদামজাত খাদ্যদ্রব্যের অসামঞ্জস্য বিনিময় বাণিজ্যে
প্রযোজ্য হবে।এট হল ইজমাউস মুজতাদিদ এর উদাহরণ।
প্রকৃতি
অনুযায়ী ইজমা তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
(১)ইজমাউল
কাওল
বা উক্তির দ্বারা যখন কোন বিষয় মুজতাহিদরা প্রত্যক্ষ মতামত ব্যক্ত করে।যেমনঃ সকল
সাহাবা যদি এই কথা বলে দেয় যে, আমরা মেনে নিলাম তাহলে তা ইজমাউল কাওল হিসেবে
বিবেচিত হবে। আবূ বকর (রাঃ)কে খলীফা হিসেবে নির্বাচিত করা এর উদাহরণ।
(২)ইজমাউল
ফিল
বা কর্মের দ্বারা-কার্যক্ষেত্রে মুজতাহিদতা একই পথ অনুসরণ করে। যেমনঃ বর্গাচাষ
করা,শেয়ার ব্যবসা করা ইত্যাদি।
(৩)ইজমাউল
তাকরীর বা মৌন সম্মতির
দ্বারা কখনও কখনও ইজমা হয়।যখন কোন বিষয় কিছু করা হয় আর যদি সেই সময়ে যদি সকলে
নীরববব সম্মতি প্রদান করে এবং নিশ্চুপ থাকে তাহলে তা ইজমাউল তাকবীর হিসেবে খ্যাত
হবে। যেমনঃ আবূ বকর(রাঃ) এর খিলাফতকালে ভণ্ড নবীদের বিরুদ্বে যেই জিহাদ হয় তা
ইজমাউল তাকরীর হিসেবে বিবেচিত হবে।
রুকন
ইজমার
রুকন হল দুইটি।তা হল আযীমাত এবং রুখসাত। এই দুই ধরনের ইজমা সম্পর্কে
বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলঃ
১।আযীমাত
আযীমাত
অর্থ হল দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা। ইজামার রুকন হিসেবে বুঝায়, আযীমাত বলতে কোন কথায়
বা কাজে সকল মুজতাহিদ ঐক্যমত পোষণ করে বলবে আমরা এই বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ব হয়েছি। এর
দ্বারা আযীমত প্রকাশ পায়। যেমনঃ আবূ বকর (রাঃ)কে খলীফা হিসেবে নির্বাচিত করা,বর্গাচাষ
করা,শেয়ার ব্যবসা করা ইত্যাদি আযীমাতের উদাহরণ। এই ধরনের ইজমা গ্রহণে কারও কোন
ধরনের আপত্তি নেই।
২।রুখসাত
রুখসাত
কথাটির অর্থ হল অবকাশ,বিরতি, ঐচ্ছিক, অনুমোদন ইত্যাদি।পারিভাষিকভাবে বলা যায় যে,
কোন মুজতাহিদ যদি কোন একটি বিষয়ের ব্যাপারে বক্তব্য রাখে অথবা তার উপর যদি আমল করে
তাহলে অন্য কোন মুজতাহিদ নীরবতা পালন করে আর যদি কোন ধরনের প্রতিবাদ না করে তাহলে
তা রুখসাত হিসেবে বিবেচিত হবে। ইমাম শাফি(রঃ) এর মতে এই ধরনের ইজমা গ্রহণযোগ্য
নয়।কারণ তিনি মনে করেন যে, কোন কোন ক্ষেত্রে মুজতাহিদ ভয়ের কারণে তা প্রতিবাদ করেন
নাই।কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) তার এই মতবাদের বিরোধীতা করেছেন এবং তিনি এই
ব্যাপারে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, চুপ থাকা বোবা শয়তানের সমতুল্য। তাই এই
ধরনের ইজমা গ্রহণযোগ্য হবে।
শর্তঃ
১।
মুসলিম হওয়াঃ
মুসলিম
ছাড়া আর কেউ ইজমা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
২।
মুজাতাহিদ হওয়া
যাদের
মতামতের উপর ইজমা হবে তাদের সকলকে মুজতাহিদ হতে হবে। কারণ ইজতিহাদী বিষয়ে মুজতাহিদ
ছাড়া অন্য সকলের মতামত অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৩।
নেককার হওয়াঃ
ইজমা
সঙ্ঘটিত হওয়ার জন্য মুজতাহিদকে নেককার হতে হবে।কারণ গুনাহগারের শরীয়াতের ব্যাপারে
কোন অবস্থায় গ্রহণযগ্য হতে পারে না।
৪।
একই যুগের ফকীহ হওয়া
সকলকে
একই যুগের মুজতাহিদ হতে হবে।
৫।
কুরআন-হাদীস বিরোধী নয়ঃ
শরীয়াতের
যেই সকল বিষয়াবলী কুরআন-হাদীসভিত্তিক নয় তা কোনভাবেই ইজমার অংশ হতে পারে না। বরং
তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
ইজমার
আওতা ও পরিধি
ইজমার
আওতা কোন পর্যন্ত সীমাবদ্ব থাকবে তা নিয়ে ইমামগণের ভিতর মতপার্থক্য রয়েছে।
শিয়াগণের
মতে, তা কেবল মাত্র মুহাম্মদ(সাঃ) এর বংশধরদের জন্য খাস।কারণ এক হাদীসে
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তার বংশধরকে হিদায়াতের উৎস বলেছেন।
ইবনে
হাযম,দাউদ, যাহারী,ইবনুল আরাবী বলেছেন, ইজমা কেবলমাত্র সাহাবাদের ভিতর সীমাবদ্ব
থাকবে।তাদের দলীল হলঃ
আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। [৯৮ঃ৮]
ইমাম
মালিক(রঃ) এর মতে,ইজমা কেবলমাত্র মদীনাবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।কারণ
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
রেতের
দ্বারা যেমনিভাবে মানুষের জং দূর হয় তেমনিভাবে মদীনায় প্রবেশ করলে মানুষের অন্তর
পরিশুদ্ব হয়।
ইমাম
শাফিঈ(রঃ) মনে করেন ইজমা হল সকল মুসলিম উম্মতের ঐক্যের প্রতিফলন।কারণ আল্লাহর
রাসূল(সাঃ) বলেছেন,
“আমার উম্মত কখনো ভ্রান্ত বিষয় একমত হবে
না।”
[তিরমিযি]
আর
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এর মতে ইজমা কেবলমাত্র একই যুগে মুজতাহিদদের ভিতর সম্ভব।তার
মতে মুজতাহিদ হওয়ার জন্য যেসকল শর্ত প্রযোজ্য তা হল নিম্নরুপঃ
(১)মুজতাহিদকে কুরআন-হাদীসের উপর বিশেষ
পারদর্শী হতে হবে।
(২)
মুজতাহিদদের পূর্ববর্তী
মুজতাহিদ,সাহাবাদের ইজমা,কিয়াসের ব্যাপারে সম্যক ধারনা রাখতে হবে।
(৩)
মুজতাহিদদের
সাম্প্রতিককালের প্রথা,নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সম্যক ধারনা রাখতে হবে।
আহনাফদের
পক্ষ থেকে জবাব
শিয়াগণ,মালিকীগণ
এবং আহমদ যা বক্তব্য দিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর রাসূল কেবল মাত্র
মদীনাবাসী,সাহাবা,তার বংশধরের প্রশংসা করেছেন।তাই কেবল এদের উপর ইজমা কোনভাবে করা
যাবে না।
অন্যদিকে
শাফিঈ(রঃ) এর হাদীসের বক্তব্যে আহ্নাফগণ বলেন সকল মুজতাহিদের মতৈক্য হল উম্মাতের
মতৈক্য।তাই এর দ্বারা পুরো উম্মাতকে বুঝানো হয় নাই।
ইজমার স্তরসমূহ
১।সকল সাহাবী(রাঃ) এর ইজমা
সকল
সাহাবা কিরামের ঐক্যমত দ্বারা সঙ্ঘটিত ইজমা। এর এটা হল সর্বাধিক শক্তিশালী
পর্যায়ের ইজমা। যদি সাহাবাগণ এই কথা বলে থাকে যে, আমরা সকলে এই ব্যাপারে মতৈক্য
পোষণ করলাম তাহলে তা এই স্তরের অন্তর্ভূক্ত হবে।
যেমন
হযরত আবূ বকর (রাঃ)কে খলীফা হিসেবে নির্বাচিত করা, তার সময় কুরআন সংকলিত
হওয়া, উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে তারাবীর নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা, তিন
তালাকের মাধ্যমে পুরোপুরি তালাক হয়ে যাওয়া,উসমান(রাঃ) এর খিলাফত আমলে কুরআনকে
নতুনভাবে সাজানো, মৃত ব্যক্তির দাদীকে এক-ষষ্ঠাংশ সঅম্পত্তি দেওয়া, মুসলিম নারীদের
সাথে অমুসলিম পুরুষের বিবাহ হারাম ইত্যাদি বিষয়াদী ইজমাউস সাহাবার উদাহরণ।
২।
সাহাবীদের নীরবতামূলক ইজমা
যেইসকল
ইজমার ব্যাপারে কোন সাহাবা মতামত দিয়েছেন এবং অন্যান্য সাহাবাগণ নীরবতা পালন
করেছেন সেই ধরনের ইজমাকে সাহাবীদের নীরবতামূলক ইজমা বলা হয়। যেমনঃ আবূ বকর(রঃ) এর
সময় ভণ্ড নবীদের বিরুদ্বে যুদ্ব করা হয় যেখানে অনেকে সাহাবা এর প্রতি মৌন সম্মতি
জ্ঞাপন করেছিল।
৩।
সাহাবীদের পরবর্তী যুগের ইজমা
সাহাবীদের
পরবর্তী যুগে যেই সকল ইজমা সঙ্ঘটিত হয়েছে আর সেইসকল বিষয়ে যদি সাহাবীদের মতবিরোধ
না থাকে তাহলে তা ইজমায়ে লাহূত তথা সাহাবী পরবর্তী যুগের ইজমা বলে গণ্য করা হবে।
এখানে ইজমার অস্বীকারকারীদের কাফির বলা যাবে না।কারণ এই ইজমার দ্বারা
প্রশান্তিমূলক জ্ঞান সৃষ্টি হয়।
৪।
সাহাবীদের পরবর্তী মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে ইজমা
যেইসকল
বিষয়ে সাহাবী পরবর্তী যুগে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায় আর সেই সকল বিষয়ে যদি মতৈক্য
স্থাপিত হয় তাহলে তা সাহাবী পরবর্তী মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে ইজমা বলে গণ্য করা হবে। আর
এটি হল ইজমার সর্বনিম্ন স্তর।
ইজামার হুকুম
এই
ব্যাপারে জুমহুর ওলামাগণ মতৈক্য পোষণ করেছেন যে, ইজমার দ্বারা ইলমে ইয়াকীন তথা
অকাট্য ইলম প্রতিষ্ঠিত হয়। তা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।ইজমার অস্বীকারকারী হল
কাফির সম্প্রদায়ভূক্ত।মুতাযিলাগণ বলেছেন যে, ইজমা শরীয়াতের কোন দলীল হতে পারে না।
এখন
কথা হচ্ছে, ইজমা ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকারকারী কাফির হবে না। এই ব্যাপারে
কয়েকটি স্তর রয়েছে যা হলঃ
প্রথম
দুই স্তরের ইজমার দ্বারা অকাট্য ইলম অর্জিত হয়। তা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।
তন্মধ্যে সাহাবীদের নীরবতামূলক ইজমার ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, তা অস্বীকার করলে
কেউ কাফির হবে না।কারণ তা প্রথম স্তরের ন্যায় ইজমা নয়। অন্যদিকে পরবর্তী দুই
স্তরের ইজমা অস্বীকারকারী কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে না,কারণ তার দ্বারা ইলমে
ইয়াকীন প্রতিষ্ঠিত হয় না।
ইজমার গুরুত্ব
শরীয়াতের
দৃষ্টিতে ইজমার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।কারণ যুগের পর যুগ পৃথিবীতে
প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উদ্ভব ঘটছে।কোন কোন ক্ষেত্রে তার
সমাধান সরাসরি কুরআন-হাদীসের সাহায্যে দেওয়া যায় না।সেক্ষেত্রে মুজতাহিদদের ইজমার
একধরনের প্রভাবের সাহায্যে ইসলাম এরকম নতুন নতুন সমস্যার সমাধান দেওয়ার মাধ্যমে
মানুষের ব্যক্তিজীবন,পারিবারিক জীবন,সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সমাধান দিতে
পারে।ইজমাকে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।কেউ যদি সাহাবাদের ইজমাকে অস্বীকার করে
তবে সে কাফির হবে আর যদি মুজতাহিদদের ইজমা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির না হলেও
গুনাহগার হবে।
আমরা
সকলে ইজমার আলোকে আমাদের জীবনকে সুন্দরমত পরিচালনা করার জন্য সর্বাত্মক
চেষ্টা-প্রচেষ্টা করব।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায় যে, ইজমা শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এর উপর আমাদের সকলের আমল করা
উচিৎ।তার বিরোধীতা করার আমাদের কোন অবকাশ নেই।
থ্যাংকস
ReplyDeleteইসলামের সর্বপ্রথম ‘ইজমা’ সংঘঠিত হয় কোন বিষয়ে
ReplyDeleteইজমার বৈশিষ্ট্য লাগবে
ReplyDelete