Saturday 24 August 2013

গ্রহণীয় খবরে ওয়াহিদ সংক্রান্ত আলোচনা

গ্রহণীয় খবরে ওয়াহিদ

গ্রহণীয় খবরে ওয়াহিদ চার প্রকারের হয়ে থাকে।যা হলঃ
১। সহীহ লি যাতিহীঃ যার সত্তাতে শুদ্বতা আছে।
২। সহীহ লি গায়রিহীঃ অন্যের কারণে যা শুদ্ব
৩। হাসান লি যাতিহীঃ যার সত্তাতে সৌন্দর্য বা হাসান আছে।
৪। হাসান লি গায়রিহীঃ যা অন্যের কারণের হাসান হয়েছে।
এই সকল হাদীসসমূহের বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হলঃ

১। সহীহ লি যাতিহী

আল্লামা জুরজানী(রঃ) বলেন,
যে হাদীসের শব্দ দূর্বলতা থেকে এবং অর্থ আয়াতের পরিপন্থী হওয়া থেকে মুক্ত কিংবা খবরে মুতাওয়াতির বা ইজমাকে সহীহ লি যতিহী বলা হয়।
মুফতি আমিমুল ইহসান বলেন,
সহীহ লি যাতিহী ঐ খবরে ওয়াহেদকে বলা হয় যার বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ, পূর্ণ সংরক্ষণের অধিকারী এবং যা মুআল্লাল বা শায নয়। 
আল্লামা হাফিয বিন আসকালানী(রঃ) এই সহীহ লি যাতিহীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
যে খবরের বর্ণনাকারী ন্যায়নিষ্ঠাবান, পূর্ণ সংরক্ষণের অধিকারী,যে সনদের রাবী পরম্পরায় ধারাবাহিকতা বিদ্যমান যে খবর মুয়াল্লাল বাঃ শায নয় এরুপ খবর হল সহীহ লি যাতিহী।
যেমন হুমায়দী(রঃ).................. আলকামা ইবন ওয়াক্কাস আল লায়সী(রঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আমি উমর ইবন খাত্তাবকে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক কাজ নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল।

হাফিয ইবন আসকালানীর সংজ্ঞা এখানে সহীহ লি যাতিহীর চারটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যা হলঃ
১। আদল বা ন্যায়নিষ্ঠাবান হওয়াঃ বর্ণনাকারীর ভিতর খোদাভীরুতা এবং সৌজন্যবোধ থাকবে। এখানে  তাকওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হল শিরক, ফাসিকী ও বিদআত থেকে নিজেকে হিফাযত করা। নিজেকে মিথ্যা বলা, মদ্যপান থেকে বিরত রাখার নাম।
২। পূর্ণ যবতের অধিকারীঃ এখানে বর্ণনাকারীকে পূর্ণ যবতের অধিকারী হতে হবে যাতে করে যেকোন কিছু সে সহজে মুখস্ত করতে পারে।এই গুণাবলী না থার ফলে তা সহীহ লি যাতিহীর মধ্যে গণ্য হবে না। যবত দুই প্রকার যা হলঃ
ক। স্মৃতিপটে সংরক্ষণঃ যে শ্রবণশক্তি কোন হাদীস শ্রবণমাত্র অন্তরে ধরে রাখতে সক্ষম হয় এবং যখন তা জানতে চাওয়া হবে হুবহু মুখস্ত বর্ণনা করবে।
খ। লিখিতভাবে সংরক্ষণঃ যদি শায়খের কাছে থেকে কোন হাদীস শ্রবণ করার পর যদি তা নিজের কাছে লিখে রাখে আর তা প্রয়োজন মত বর্ণনা করা হল লিখিতভাবে সংরক্ষণ।
৩। সনদের ধারাবাহিকতাঃ যে খবরের রাবীগণের ধারাবাহিকতা এমনভাবে বিদ্যমান যে এর কোন স্তর থেকে কোন রাবী বাদ পড়েন নাই এবং এমন অবস্থা যে প্রত্যেক রাবী তার পূর্ববর্তী রাবী হতে বর্ণনা শুনেছেন এবং তা সনদ উল্লেখ করা হয়েছে।
৪। হাদীস মুআল্লাল বা শায না হওয়াঃ  মুআল্লাল ঐ সকল হাদীসসমূহকে বলা হয় যার ভিতর সত্যিকারভাবে কোন ধরনের অসুস্থতা আছে। এক হাদীস অন্য হাদীসের ভিতর অনুপ্রবশের দরুন হাদীস উলট-পালট হয়ে যেতে পারে যার ফলে অর্থ বের করা দুরুহ হতে পারে।হাদীস মুআল্লাল দুইভাবে হতে পারে যা হল সনদের ভিত্তিতে এবং মতনের ভিত্তিতে।
শায হচ্ছে ঐ সকল হাদীসসমূহ যেখানে নির্ভরযোগ্য রাবী অপর একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বিপরীত হবেন যিনি যবত ও আদলের গুণে অপরের চেয়ে অধিক হবে। এভাবে দুই নির্ভরযোগ্য রাবী পরস্পর বিপরীত অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করলে, কম নির্ভরযোগ্য রাবী শায এবং অধিক নির্ভরযোগ্য রাবী মাহফুয হিসেবে বিবেচিত হবে।
উদাহরণ
ইমাম বুখারী একটি রিওয়য়াতে বর্ণনা করেন,
আমাদের নিকট আব্দুল্লাহ ইবন ইউসুফ হাদীস রিওয়য়াত করেছেন, তিনি বলেন, আমাদের কাছে মালিক ইবন শিহাব খবর দিয়েছেন, তিনি মুহাম্মদ ইবন জুবায়রবিন মুতাউম থেকে এবং তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) মাগরিবের সময় সূরা তুর পাঠ করতে শুনেছি।
এই হাদীসটি মুত্তাসিল সনদ বর্ণিত এবং এই হাদীসটি শায বা মুয়াল্লাল নয়।

হুকুম

হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে এর উপর আমল করা ওয়াজিব।ঊসূলবিদ্গণ ও ফকীহগণের মতে খবরে সহীহ শরীয়াতের দলীল হিসেবে স্বীকৃত।

২। সহীহ লি গায়রিরিহির সংজ্ঞাঃ

যে খবরে ওয়াহিদের বর্ণনাকারী ন্য্যায়-নিষ্ঠাবান কিন্তু ঐ বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ের নয় এবং হাদীস পূর্ণভাবে সংরক্ষণেও সক্ষম নয় তবে ঐ হাদীসের বিভিন্ন সনদ রয়েছে এবং বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত রয়েছে যে তা এত অধিক শক্তিশালী ও জোড়দার সম্পন্ন যে, এর ত্রুটি তাতে পূর্ণ হয়ে যায় এবং হাদীসটিকে সহীহের পর্যায়ে নিয়ে যায়। এরুপ হাদীসকে সহীহ লি গায়রিহি বলা হয়।
ড. মুহাম্মদ ত্বাহান বলেন,
সহীহ লিগাইরিহী প্রকৃতপক্ষে ঐ হাসান লিযাতিহী হাদীসকে বলা হয় যা অনুরুপ আরও একটি হাদীস আরও শক্তিশালী সূত্রে বর্ণিত।তবে যেহেতু এটি সনদ হিসেবে নয়, বরং অন্য একটি রিওয়য়াতের কারণে সহীহ মানে উন্নীত হয়েছে যার ফলে একে সহীহ লিগায়রিহি বলা হয়।
আব্দুল হক দেহলভী(রঃ) বলেন,
যদি রাবীর ভিতর কোন দোষ-ত্রুটি না থাকে এবং তা যদি বহু সূত্রে বর্ণিত হয় তাহলে ঐ হাদীস হল হাসান লিগায়রিহী।
উদাহরণ
আবূ কুরায়ব(রঃ)..................... হযরত আবূ হুরায়্রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হলে আমি প্রত্যেক সালাতের পূর্বে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম। [তিরমিযী]
উল্লিখিত হাদীসটির সনদ দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও ইমাম তিরমিযী(রঃ) তাকে সহীহ বলেছেন তা অন্যান্য সনদে স্মৃতিশক্তির দূর্বলতা বিদূরিত হয়েছে।

হুকুম

এই ধরনের হাদীসের উপর আমল করা অত্যাবশ্যকীয়। তবে তা পরস্পর বিরোধী হাদীস নিষ্পত্তি হওয়াতে তার স্থান ২য়।

৩। হাসান লি যাতিহিঃ

হাসান লি যতিহির সংজ্ঞা এক এক জন হাদীস বিশারদ্গণ এক এক ভাবে প্রদান করেছেন। হাফিয ইবন আসকালানী(রঃ) বলেন,
যে খবরের রাবীগণ ন্যায়-নিষ্ঠাবান কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্মৃতিশক্তির অধিকারী নয় এবং পূর্ণভাবে হাদীস সংরক্ষণে সক্ষম নন, এবং তার ত্রুটি কোনভাবে দুর করা যায় নাই, এবং সনদের ধারাবাহিকতা বিদ্যমান এবং তা যদি মুআল্লাল বা শায না হয় তাহলে তা হাসান লি যতিহী।
ইমাম খাত্তাবী বলেন,
হাসান ঐ সকল হাদীসকে বলা হয় যার উৎস পরিজ্ঞাত,রাবীগণ সুপ্রসিদ্ব এবং যার উপর অধিকাংশ হাদীসের ভিত্তি স্থাপিত। আর তা অধিকাংশ আলিমের কাছে গ্রহণীয় এবং তার উপর অধিকাংশ ফকীহ দলীল হিসেবে গণ্য করেছেন।
ইমাম তিরমিযী বলেন,
যেই হাদীসের সনদের কোন রাবীর মিথ্যার অভিযোগ নেই, হাদীসটি যদি শায না হয় এবং তা যদি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয় তাহলে সেই হাদীসটি হাসান লি যতিহি হবে।
এখানে হাফিয ইবন আসকালানী(রঃ) এর সংজ্ঞাটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ অন্য দুটি সংজ্ঞার ভিতর হাসান লি যাতিহীর সঠিক সংজ্ঞা জানা যেতে পারে নাই।
উদাহরণ
সুফিয়ান(রঃ)..................... মুহাম্মদ ইবন হানাফিয়্যা কর্তৃক নবী করিম(সাঃ) বর্ণিত,তিনি বলেন, পবিত্রতা হল সালাতের চাবি। [তিরমিযী]
এই হাদীসটির সকল কিছু ঠিক থাকলেও তা পূর্ণ স্মৃতিসংরক্ষণের অধিকারী নয় বলে তা হাসান লি যাতিহী।

হুকুমঃ 

এই হাদীস ৩য় পর্যায়ের হলেও এর উপর আমল করা অপরিহার্য।ফকী-কিরাম,হাদীসবিশারদ্গণ ও উসূলবিদগণ একে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তারা এর উপর আমল করতে চেষ্টা করেছেন। যদিও কিছু কট্টরপন্থী আলিম তার উপর আমল করা বর্জন করেছেন।হাকিম, ইবন হিব্বান ও ইবন খুযায়মের ন্যায় উদারপন্থী মুহাদ্দিসগণ একে সহীহ বলে আমল করেছেন।

হাসান লি গায়রিহী

এই পর্যায়ের দূর্বল পর্যায়ের একাধিক রিওয়ায়াত থাকে। আত হাদীস দূর্বল হওয়ার জন্য তা মিথ্যা বর্ণনাকারীর বা ফিসক নয়। এই সংজ্ঞা থেকে এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, দুটি কারণে দূর্বল হাদীস হাসান লি গায়রিহীর পর্যায়ে উন্নীত হবে। যা হলঃ
১। দূর্বল হাদীসটি অন্য কোন সনদে বিভিন্ন সনদে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হবে। আর এ বর্ণনাকারীগণ সেই দূর্বল হাদীসের রিওয়ায়াতের সমপর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত হবে এবং তার চেয়েও শক্তিশালী হবে।
২। আর হাদীসের দূর্বলতার কারণ হতে পারে বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তি না থাকা বা সনদে ধারাবাহিকতা না থাকার জন্য তা হোয়ে থাকবে।
উল্লিখিত দুই কারণ ছাড়া দূর্বল হাদীসটি হাসান লি গায়রিহীর পর্যায়ে উন্নীত হবে না।
মুফতী আমিমুল ইহসান বলেন,
যে হাদীসকে মকবুল হিসেবে সাব্যস্ত হতে অন্যান্য কারণগুলো সাহায্য করে তাকে হাসান লিগায়রিহী বলা হয়।
উদাহরণ
জ্ঞান অণ্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরয।
উক্ত হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হলেও সকল বর্ণনা দূর্বল।কিন্তু তা বিভিন্ন সনদের মাধ্যমে সবল হোয়ে উঠেছে।তাই উক্ত হাদীসটি অন্যের কারণে সবল হতে সক্ষম হয়েছে।

হুকুম

এই ধরনের হাদীস গ্রহণযোগ্য ও তা দিয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...