Sunday 25 August 2013

প্রশ্নঃ ইয়াহূদী ধর্মের পরিচয় দাও এবং এই ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো কি কি?


ভূমিকা

 

বলা হয়ে থাকে যে,

 

Judaism was the first religion to teach monotism or belief in one Allah.

 

এই পৃথিবীতে যত প্রাচীন ধর্ম রয়েছে তার ভিতর ইয়াহূদী অন্যতম। এই ধর্ম অটি হযরত মূসা(আঃ) এর উপর একটি ধর্ম।তার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করা হয় দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ। বর্তমানে এটি ওল্ড টেষ্টামেন্ট নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমানে এবং অতীতে ইয়াহূদী ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে।  এই ইয়াহূদী ধর্মের পরিচয় ও মূল মূল শিক্ষা ও বিশ্বাসসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

 

ইয়াহূদীদের পরিচয়

 

ইয়াহূদী কথাটি আরবী তাহুদ হতে উদ্ভূত। যার অর্থ হল তওবা,গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া ইত্যাদি।

 

আবার কারও মতে, এই শব্দটি হাওয়াদা থেকে উৎপন্ন যার অর্থ হল বন্ধুত্ব,ভালবাস ইত্যাদি।

 

আবার কারও মতে

 

ইয়াহূদা শব্দটি সংসস্কৃ শব্দ ইয়াহুদা থেকে আগত যার মূল হল আহ যার অর্থ তাওবা।তাই ইয়াহূদীদের ইয়াহূদা এবং যরদুস্তদের আহবা বলা হয়।

 

ইয়াহূদী শব্দটির উৎপত্তি

 

হিব্রানী ভাষায়, ইয়াহূদা হল একজন দেবতার নাম।সেখান থেকে ইয়াহুদী নামকরণ হয়। এ ব্যাপারে দুটি মতামত পাও্য়া যায় যা হলঃ

 

পৌরণিক সাহিত্যে বলা হয়েছে যে, ইব্রাহীম(আঃ) ইয়াহূদার জন্য একটি উপাসানালয় প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি মিসরে ইয়াহূদার সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, মিসরে ইয়াহূদা নামে একজন দেবতার উপাসনা হত।

 

অপর এক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ইব্রাহীম(আঃ), ইয়াকূব(আঃ) ও ইসহাক(আঃ) তারা তাদের উপাস্যকে সিদওয়ারী বলে ডাকতেন। সেখান থেকে ইয়াহূদী শব্দের উদ্ভব ঘটে।

 

কিতাবুল খারাজ হতে জানা যায় যে, তুর পাহাড়ে আল্লাহ পাক মূসা(আঃ)কে ইয়াহূদা হিসেবে পরিচয় প্রদান করলে তখন থেকে ইয়াহূদী কথাটির উদ্ভব ঘটে।

 

একটি মতামত থেকে জানা যায় যে, শুয়াইব(আঃ) এর একজন নবী ছিলেন এবং  তার স্রষ্টা ছিলেন ইয়াহূদা এবং সেখান থেকে মূসা(আঃ) এর অনসরণকারীগণের নাম হয় ইয়াহূদী।

 

তাফসীরে মারিফুল কুরআনে বলা হয়েছে, হযরত ইয়াকূব(আঃ) এর ১২ জন সন্তান ছিলেন। তার ভিতর একজন ছিল ইয়াহূদা যিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী,গুনী ও মেধাবী।  তারই নামানুসারে ইয়াহূদী নামকরণ হয় এবং তাদের প্রতিপালিত ধর্মের নাম হয় ইয়াহূদী। 

 

The Child Craft Dictionary তে বলা হয়েছে,

 

Juaism is the religion of the Jews people. It is holy books are the Towrath and the Tahmud.

 

Religion of mankind তে বলা হয়েছে,

 

Judaism the religion of the jews,is the first religion in the world to teach that there is only one God.

 

কেদারনাথ তেওয়ারি বলেন,

 

Judaism is the religion of the Jews,the desendents of the ancient Hebrews, the chosen people.

 

আনোয়ারুল্লাহ মাযহারী বলেছেন,

 

মানবজাতির মধ্যে ইয়াহূদী হল এমন এক জাতি যারা মূসা(আঃ) ও তাওরাতের মধ্য বিশ্বাস করে।

 

তাহলে আমরা উপরোক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করে বলতে পারি যে, যারা মূসা(আঃ) কে নবী হিসেবে মান্য করে এবং তার প্রচারিত ধর্মের উপর অবিচল থাকে এবং তাওরাত ও তালমুদকে তাদের দিক-নির্দেশনা হিসেবে মনে করে থাকে তারাই ইয়াহূদী।

 

 

 

 

 

ইয়াহূদীদের মূল কিতাবলী

 

ইয়াহূদীগণ দুটি কিতাবকে অনুসরণ করে থাকে যার একটি হল তাওরাত যেখানে ইয়াহুদী ধর্মের মূল নীতিমালাসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে এর আদি নাম হল ওল্ড টেষ্টম্যান এবং অপরটি হল তাহমুদ যেখানে সামাজি আচার-আচরণ,অভ্যাস,রীতি-নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ইয়াহূদীদের মূল মূল শিক্ষা

 

দুটি মতবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় যা হল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। আর অপরটি হল বনী ইসরাইলের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক।

 

ইয়াহূদীদের দশটি আজ্ঞা পালন করতে হয় যাকে ইংরেজীতে Ten Commandments বলা হয়। এগুলো হলঃ

 

১। তুমি প্রভূকে মানবে, কেবল তার সেবা করবে আর তার নামে স্মরণ করবেল                             ২। পিতা-মাতার বাধ্য হয়ে তাদের সম্মান হবে।

 

৩। রবিবার বিশ্রাম করবে এবং পবিত্রভাবে ইবাদত করবে।                           ৪। নরহত্যা করবে না।

 

৫। মনে,বাক্যে ও কর্মে সৎ, শুদ্ব ও দয়ালু হবে।                                  ৬। ব্যভিচার করবে না।

 

৭। চুরি করবে না                                                     ৮। মিথ্যা বলবে না।

 

৯। পরস্ত্রী লোভ করবে না এবং দৃষ্টি নত রাখবে।                             ১০। পরদ্রব্যের প্রতি লোভ করবে না।

 

১। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস

 

ইয়াহূদীগণ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাওরাতে একথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।

 

২। পুনরুত্থানের বিশ্বাসী

 

ইয়াহূদীগণ মনে করে যে, এই দুনিয়ার জীবন সবকিছু নয়।তারা পরকালের পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে। মানুষকে তার কাজের হিসাব পরকালে প্রদান করতে হবে। ভাল কাজের জন্য রয়েছে পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। কেদারনাথ টেওয়ারি বলেন,

 

ইয়াহূদীগণ আত্মার শ্বাশ্বত ধারায় এবং পরকালে বিশ্বাসী।

 

৩। রাসূলগণের উপর বিশ্বাস

 

 

 

 

প্রশ্নঃ বনী-ঈসরাইল সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ কি কি আযাব ও গযব প্রদান করেছেন আলোচনা কর।

 

ভূমিকা

 

আল্লাহ বলেন,

 

হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।[বাকারাঃ৪৭]

 

ইয়াহূদী জাতির প্রতি আল্লাহ শুরু থেকে অসংখ্যা নিয়ামত,অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন।কিন্তু তা ক্রমান্বয়ে আল্লাহ উঠিয়ে নেন। সেই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে পেশ করা হলঃ

 

ইয়াহূদী কর্তৃক অনুগ্রহ

 

আল্লাহ পাক ইয়হূদীদের প্রতি যেইসকল নিয়ামত প্রকাশ করেছিলেন তা নিম্নরুপঃ

 

১. শ্রেষ্ঠত্ব

 

আল্লাহ পাক তাদের সমগ্র পৃথিবীর মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

 

হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।[বাকারাঃ৪৭]

 

২. ফিরাউনের যুলম হতে মুক্তি দানঃ

 

ফিরাউন ছিল আমালিকা জাতি তথা মিসরের প্রধানের খেতাব।সে একদিন স্বপ্ন দেখল যে, বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে আগত আগুন তার রাজ্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। তখন তার ব্যখ্যা সে জ্যোতিষীদের কাছে জানতে চাইলে জ্যোতিষীগণ তাকে এই কথা বলল যে, অতিশীঘ্রই বনী-ঈসরাইল থেকে একজন নবীর আবির্ভাব ঘটবে যিনি তার সম্রাজ্যকে ধ্বংস করে ফেলবেন। তখন তাই ফিরাউন সকল বনী ঈসরাইলে জন্মগ্রহণকারী সকল পুত্র সন্তানদের হত্যা করত আর কণ্যাদের জীবিত রাখত আর তাদেরকে বাঁদী হিসেবে রাখা হত। এক বছর তারা হত্যা করত জন্মগ্রহণকারী শিশুদের আরেক বছর তারা কাউকে হত্যা করত না।  কিন্তু আল্লাহ পাক মূসা(আঃ) এর মাধ্যমে এই যালিম বাদশা থেকে বনী-ঈসরাইলকে হিফাযত করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

 

আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।[বাকারাঃ৪৯]

 

মুফাসসিরীনগণ বলেন, উক্ত আয়াতে বালায়ুন কথাটির দ্বারা বনী-ঈসরাইল সম্প্রদায়ের প্রতি নিআমতের কথা বলা হয়েছে।এভাবে করে তিনি এই সম্রপদায়ের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন।

 

৩. সমুদ্রের মাঝে রাস্তা তৈরীঃ

 

মূসা(আঃ) যখন বনী-ঈসরাইল সম্প্রদায়কে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেছিল তখন ফিরাউন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসেবে আবির্ভূত হন। এদিকে অস্বীরকারীদের উপর ব্যাপক মহামারী দেখা দিল আর তারা সকলে তাদের দাফনের কাজে ব্যস্ত থাকল।সেই সময় আল্লাহ মূসা(আঃ)কে তার ছয় লাখ অনুসারীদের নিয়ে অন্যত্র গমন করতে বললেন।এদিকে ফিরাউন তাদের পলায়নের খবর পেয়ে তাদের সকলকে ভোরে মোরগের ডাক শ্রবণমাত্র তাদের নির্মূল করার জন্য নির্দেশ জ্ঞাপন করেন।কিন্তু আল্লাহর কুদরতে সেই দিন আর মোরগ ডাক দিল না।  অতঃপর তাদের পলায়নের খবর ফিরাউন জানামাত্র তার প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ বাহিনী যার ভিতর প্রায় ৭০ হাজার কৃষ্ণ ঘোড়া ছিল যা নিয়ে সে বনী-ঈসরাইলের মূসা(আঃ) এর অনুসারীদের পাকড়াও করেছিল। তারা যখন লোহিত সাগরের তীরে অবস্থান করছিল তখন তারা পিছন দিকে থেকে পাকড়াও করে। এই সময় মূসা(আঃ) এর অনুসারীগণ বলতে লাগলেন আমরা সকলে পাকড়াও হয়ে গেলাম আর আমাদের কোন বাঁচার পথ নেই। কিন্তু মূসা(আঃ) আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় লাঠি দ্বারা সমুদ্র পৃষ্ঠে আঘাত করলেন আর ১২টি গোত্রের জন্য ১২টি রাস্তা হয়ে যায়। তারা যখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিল তখন ফেরাউন ও তার বাহিনী যখন সকলকে পাকড়াও করার জন্য এগিয়ে আসছিল তখন আল্লাহ সকল পানিকে পুনরায় একত্রিত করে দিলেন এবং সেখানে ফিরাউন আর তার বাহিনীর সমাধি হল। তা সকলে দেখল আর এভাবে করে আল্লাহ বনী-ঈসরাইলের লোকদের প্রতি নিআমত প্রদর্শন করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

 

আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরআউনের লোকদিগকে অথচ তোমরা দেখছিলে। [বাকারাঃ৫০]

 

৪. তওবা কবুলঃ

 

মূসা(আঃ) যখন তার সম্প্রদায়কে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিলেন তখন তিনি চল্লিশ দিনের জন্য তুর পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের জন্য।তিনি কিছুদিন তার সম্প্রদায় থেকে দূরে ছিলেন।এই সময় তাদের ভিতর সামিরা নামে একজন চালাক ও চতুর ব্যক্তি ছিলেন যে জিবরাইল(আঃ) এর অশ্বের মাটি ছোয়ার একটি অংশ এনে স্বর্ণ দিয়ে একটি গরু তৈরী করার পর তা তার সাথে মিশিয়ে দিলেন এবং গরুটি তখন জীবন্ত গরুর ন্যায় হাম্বা হাম্বা করতে লাগল। আর সামিরা বলে উঠল এই হল মূসা(আঃ) এর উপাস্য।আর অনেকে সেই গোবৎসের উপাসনা শুরু করে দেয়। আল্লাহ বলেন,

 

আর যখন আমি মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা ছিলে যালেম।[বাকারাঃ৫১]

 

তখন হারুন (আঃ) এর চেষ্টা-প্রচেষ্টায় প্রায় ১২ হাজার বনী-ঈসরাইলের লোকদের তিনি রক্ষা করলেন। আর বাকিরা সেই স্বর্ণ নির্মিত গোবোৎসের উপাসনা করতে লাগল।

 

 তারা এত বড় গুনাহ করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের নিজ কুদরতের দ্বারা ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাই তিনি বলেন,

 

তারপর আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও। [বাকারাঃ৫২]

 

৫. তাওরাত প্রদানঃ

 

আল্লাহ বনী-ঈসরাইল সম্প্রদায়ের প্রতি আরেকটি বিশেষ নিআমত এভাবে প্রদর্শন করেছিলেন যে, তা হল তাদেরকে কিতাব তথা তাওরাত কিতাব প্রদান করেছিলেন যার দ্বারা তারা সত্য-মিথ্যাকে যথযথভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর দ্বারা তারা বন্ধু আর শত্রুদের পার্থক্য করতে সমর্থ হয়েছে এবং তারা সকলে সৎপ্রাপ্ত ছিলেন। তাই কুরআনে বলা হয়েছে,

 

আর (স্মরণ কর) যখন আমি মূসাকে কিতাব এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী নির্দেশ দান করেছি, যাতে তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হতে পার। [বাকারাঃ৫৩]

 

৬। পুনরায় জীবন দানঃ

 

মূসা(আঃ) এর উপর যখন তাওরাত নাযিল হল তখন সেখানকার লোকেরা বললেন তারা তাওরাত কিতাবকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তার স্বীয় কণ্ঠে এই কথা না বলবেন যে, এই কিতাব তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। অতঃপর মূসা(আঃ) তার সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ ৭০ জন নেককার লোককে নির্বাচিত করে তাদেরকে রোজা অবস্থায় তিনি তুর পাহড়ে নিয়ে যান।  তখন আল্লাহ পাকের কুদরত তাদের চারিদিকে বেষ্টন করে রাখে। তখন আল্লাহ  সেই সকল লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন,

 

আমি আল্লাহ।আমাকে ছাড়া তোমরা আর কাউরও ইবাদত করবে না,আমি তোমাদের মিসরের যমীন দেখে নিয়ে এসেছি।তাই তোমরা আমার ইবাদত কর আর আমাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না।

 

কিন্তু তার এই কথায় তারা পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস আনল না।তারা বলল শুধু কথায় কাজ হবে না।তারা প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহকে দেখা না পর্যন্ত তার প্রতি ঈমান আনবে না।তখন আল্লাহ পাক এই লোকগুলোকে ধ্বংস করে দিলেন বিদ্যুতের দ্বারা।তাই আল্লাহ বলেন,

 

আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে (প্রকাশ্যে) দেখতে পাব। বস্তুতঃ তোমাদিগকে পাকড়াও করল বিদ্যুৎ। [বাকারাঃ৫৫]

 

কিন্তু এরপর মূসা(আঃ) এই লোকগুলোর জন্য পুনরায় ক্রন্দন করে তাদের জীবিত করার জন্য অনুরোধ করলে আল্লাহ তাদের পুনর্জীবন দান করেন।আল্লাহ বলেন,

 

 অথচ তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।তারপর, মরে যাবার পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড় করিয়েছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও।  [বাকারাঃ৫৬]

 

৭। তীহ প্রান্তরে ছায়া প্রদান

 

সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান হল তীহ মরুভূমি। এখানে যখন লোহিত সাগর অতিক্রম করে এখানে এসে পৌছায় তখন তারা সেই মরুভূমিতে সিরিয়ার অভিমুখে অনেকদিন যাবৎ অবস্থান করছিলেন। সেখানে তাদের তাবু ছিড়ে যায় এবং তারা সেখানে খুব কষ্টে সূর্যের তাপের ভিতর অবস্থান করতে থাকে। তখন মূসা(আঃ) আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ছায়ার প্রার্থনা করলে তখন তাদেরকে আল্লাহ স্বীয় আরব দ্বারা ছায়া প্রদানের ব্যবস্থা করলেন। আল্লাহ বলেন,

 

আর আমি তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি মেঘমালার দ্বারা [বাকারাঃ৫৭]

 

৮. খাবারের ব্যবস্থা করাঃ

 

অতঃপর আল্লাহ তাদের তীহ স্থানে ছায়া প্রদানের পাশাপাশি রিযিক প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি তাদেরকে প্রদান করেলেন মান্না ও সালওয়া।এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

 

এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া[বাকারাঃ৫৭]

 

মান্না হল মান্না হল কুয়াশার ন্যায় মাখন জাতীয় এক ধরনের খাদ্য বস্তু যা আকাশ থেকে বর্ষণ হতে থাকে। আর সালওয়া হল ছোট ছোট এক ধরনের খাদ্যাবিশেষ যা সন্ধ্যা বেলায় তাদের লোকালয়ের কাছে চলে আসত এবং লোকেরা তা ধরে  কাবাব করে  ভক্ষণ করত।

 

৯।তীহ প্রান্তরে পানি ব্যবস্থাঃ

 

যখন তীহ প্রান্তরে বনী-ঈসরাইল সম্প্রদায়ের লোকেরা তীব্র পানিকষ্টে ভুগছিল তখন আল্লাহ পাক মূসা(আঃ)কে একটি নির্দিষ্ট পাথরের উপর আঘাত করার নির্দেশ প্রদান করলে মূসা(আঃ) তা করলে সেখান থেকে পানির ঝর্ণা বের হয় এবং সেখানে থেকে ১২টি গোত্রের জন্য ১২টি ঝর্ণা বের হয় এবং সেখান থেকে প্রত্যেক গোত্রের লোকদের পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,

 

আর মূসা যখন নিজ জাতির জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, স্বীয় যষ্ঠির দ্বারা আঘাত কর পাথরের উপরে। অতঃপর তা থেকে প্রবাহিত হয়ে এল বারটি প্রস্রবণ। তাদের সব গোত্রই চিনে নিল নিজ নিজ ঘাট। আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও, পান কর আর দুনিয়ার বুকে দাংগা-হাংগামা করে বেড়িও না।[বাকারাঃ৬০]

 

১০। রাতে আলো প্রদানঃ

 

রাতের অন্ধকারে যখন তারা অতি কষ্টে জীবন-যাপন করছিলেন তখন আল্লাহ সেই অবস্থায় অন্ধকারের মাঝে এক ঝুলন্ত আলোর ব্যবস্থা করে দিলেন যার দ্বারা রাতের অন্ধকার দূরীভূত হয়।

 

১১। পোশাকের ব্যবস্থাঃ

 

আল্লাহ বনী-ঈসরাইলের লোকদের জন্য আসমান থেকে এমন পোষাকের ব্যবস্থায় করলেন যার দ্বারা তাদের পোশাকের সমস্যা দূরীভূত হতে থাকে।শুধু তাই না সেই পোশাকের অবস্থা এমন ছিল যে, তা কখনো ছিড়ত না,তা কখনও নোংরা হত না এমন কি তা শিশুদের জন্য পরিধানের উপযোগী হলেও তা বৃদ্বগণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিধান করতে পারত। [তাফসীরে নুরুল কুরআন; পৃষ্ঠাঃ ৩১২]

 

শাস্তিঃ

 

অতঃপর তারা যখন আল্লাহর নিআমত সমূহ অস্বীকার করতে থাকে তখন তাদের উপর অবিরত ধারায় শাস্তি বর্ষণ হতে থাকে। তাদের উপর আল্লাহর শাস্তিসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

 

১. লাঞ্ছনার জীবনঃ

 

ইয়াহূদীগণ যখন একে একে আল্লাহর সকল নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে থাকে তখন আল্লাহ তাদের বিরুদ্বে শাস্তি ঘোষণা করেন। তখন তাদের উপর লাঞ্ছণাকর এবং কষ্টপূর্ণ জীবন দান করলেন যার দ্বারা তাদের জীবন-যাপন একেবারে দুঃসুহ ও কঠিন হয়ে গেল। তাই আল্লাহ বলেন,

 

আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী। [বাকারাঃ৬১]

 

২. পরমুখোপেক্ষীতাঃ

 

ইয়াহূদীগণ আল্লাহর কৃতজ্ঞতার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করত।তারা বিভিন্ন নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তাই আল্লাহ পাক তাদের আজ অবধি তাদের উপর অবিরাম আযাব ও গজব দিয়ে যাচ্ছেন।ইতিহাস তার সাক্ষী। নবী করিম(সাঃ) এর যুগে বনু নজীর ও বনু কুরায়দা বিশেষভাবে লাঞ্ছণার শিকার হয়েছিল।পরবর্তীতে তারা অনেকদিন যাবৎ অতি কষ্টে লাঞ্ছণার সাথে জীবন-যাপন অতিবাহিত করতে থাকে। ২ঊ বিশ্ব যুদ্ব হিটলার বাহিনী তাদের উপর অমানবিক নির্যতন চালায় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে। আজও তারা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছণার শিকার হচ্ছে।তারা প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা ও ব্রিটেনের সহয়তা ছাড়া কখনও তাদের স্বীয় ইসুরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হত না। তাদের আজ অবধি অনেক দেশ স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান করেন নাই। তারা এখনও পরমুখাপেক্ষী। তাদের ভিতর হত দরিদ্যের সংখ্যা স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। তাই আল্লাহ বলেন,

 

আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিংবা মানুষের প্রতিশ্রুতি ব্যতিত ওরা যেখানেই অবস্থান করেছে সেখানেই তাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ওরা উপার্জন করেছে আল্লাহর গযব। ওদের উপর চাপানো হয়েছে গলগ্রহতাতা এজন্যে যে, ওরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তার কারণ, ওরা নাফরমানী করেছে এবং সীমা লংঘন করেছে।      [ইমরানঃ১১২]

 

৩. তীহ প্রান্তরে চল্লিশ বছর পথহারাঃ

 

মূসা(আঃ) আমিলিকা জাতির বিরুদ্বে জিহাদ করার ঘোষণা করলে বনী-ঈসরাইলের লোকেরা তা করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। তারা বলতে থাকে আপনি ও আপনার প্রভূ তাদের বিরুদ্বে যুদ্ব করুণ আর আমরা কিছুই করতে পারব না।তখন তাদের মধ্যকার দুই ব্যক্তি তাদের বিরুদ্বাচারণ করে এবং আমিলিকার জাতির বিরুদ্বের জিহাদে ঝাপিয়ে পড়তে আহবান জানান।তখন আবার তারা ঐ দুইজন লোককে হত্যা কররার ষড়যন্ত্র করে। তখন মূসা(আঃ) তাদের উপর গযব বর্ষণের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন। তখন তারা পথহারা হয়ে প্রায় চল্লিশ বছর গযব ভোগ করতে থাকে।কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

 

মূসা বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর ক্ষমতা রাখি। অতএব, আপনি আমাদের মধ্যে ও এ অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করুন।বললেনঃ এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্যে হারাম করা হল। তারা ভুপৃষ্ঠে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরবে। অতএব, আপনি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করবেন না। [মায়িদাঃ২৫-২৬]

 

৪. বজ্রপাতে মৃত্যুদান

 

মূসা(আঃ) এর উপর যখন তাওরাত নাযিল হল তখন সেখানকার লোকেরা বললেন তারা তাওরাত কিতাবকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তার স্বীয় কণ্ঠে এই কথা না বলবেন যে, এই কিতাব তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। অতঃপর মূসা(আঃ) তার সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ ৭০ জন নেককার লোককে নির্বাচিত করে তাদেরকে রোজা অবস্থায় তিনি তুর পাহড়ে নিয়ে যান।  তখন আল্লাহ পাকের কুদরত তাদের চারিদিকে বেষ্টন করে রাখে। তখন আল্লাহ  সেই সকল লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন,

 

আমি আল্লাহ।আমাকে ছাড়া তোমরা আর কাউরও ইবাদত করবে না,আমি তোমাদের মিসরের যমীন দেখে নিয়ে এসেছি।তাই তোমরা আমার ইবাদত কর আর আমাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না।

 

কিন্তু তার এই কথায় তারা পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস আনল না।তারা বলল শুধু কথায় কাজ হবে না।তারা প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহকে দেখা না পর্যন্ত তার প্রতি ঈমান আনবে না।তখন আল্লাহ পাক এই লোকগুলোকে ধ্বংস করে দিলেন বিদ্যুতের দ্বারা।তাই আল্লাহ বলেন,

 

আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও আমরা

 

৫. গোবৎস উপাসনাকারীদের শাস্তি প্রদান

 

মূসা(আঃ) যখন তার সম্প্রদায়কে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিলেন তখন তিনি চল্লিশ দিনের জন্য তুর পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের জন্য।তিনি কিছুদিন তার সম্প্রদায় থেকে দূরে ছিলেন।এই সময় তাদের ভিতর সামিরা নামে একজন চালাক ও চতুর ব্যক্তি ছিলেন যে জিবরাইল(আঃ) এর অশ্বের মাটি ছোয়ার একটি অংশ এনে স্বর্ণ দিয়ে একটি গরু তৈরী করার পর তা তার সাথে মিশিয়ে দিলেন এবং গরুটি তখন জীবন্ত গরুর ন্যায় হাম্বা হাম্বা করতে লাগল। আর সামিরা বলে উঠল এই হল মূসা(আঃ) এর উপাস্য।আর অনেকে সেই গোবৎসের উপাসনা শুরু করে দেয়। আল্লাহ বলেন,

 

আর যখন আমি মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা ছিলে যালেম।[বাকারাঃ৫১]

 

আর কিছু লোকে নীরবে তাদের উপাসনা দেখে গেছে এবং তারা কোন দলেই ছিল না।

 

তখন হারুন (আঃ) এর চেষ্টা-প্রচেষ্টায় প্রায় ১২ হাজার বনী-ঈসরাইলের লোকদের তিনি রক্ষা করলেন। আর বাকিরা সেই স্বর্ণ নির্মিত গোবোৎসের উপাসনা করতে লাগল।

 

মূসা(আঃ) যখন তাদের কাছে ফিরে আসলেন তখন তাদেরকে এর শাস্তি হিসেবে ১ম দুই শ্রেণীর লোকদের একজন অপরকে হত্যার দ্বারা শাস্তি প্রদানের নির্দেশ প্রদান করলেন।কিন্তুই একে অপরের প্রতি হত্যা করার সাহস পেল না।অতঃপর আল্লাহ অন্ধকার দিলেন এবং এভাবে করে তারা পরস্পরে প্রায় ৭০ হাজার লোক হত্যা করে থাকে।

 

আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদেরই ক্ষতিসাধন করেছ এই গোবৎস নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা কর স্বীয় স্রষ্টার প্রতি এবং নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর তোমাদের স্রষ্টার নিকট। তারপর তোমাদের প্রতি লক্ষ্য করা হল। নিঃসন্দেহে তিনিই ক্ষমাকারী, অত্যন্ত মেহেরবান। [বাকারাঃ৫৪]

 

৬। মাথার উপর তুর পাহাড় ঝুলানোঃ

 

আল্লাহ বনী ঈসরাইলের লোকদের ধর্ম-কর্ম সঠিকভাবে পালন করার নির্দেশ জ্ঞাপন করেছিলেন। কিন্তু তারা বারবার আল্লাহর আদেশ ভংগ করতে থাকে।এমতাবস্থায় তাদের উপর তূর পাহাড়কে উপুর করে তুলে ধরা হয়।আল্লাহ বলেন,

 

আর যখন আমি   তুলে ধরলাম পাহাড়কে তাদের উপরে সামিয়ানার মত এবং তারা ভয় করতে লাগল যে, সেটি তাদের উপর পড়বে, তখন আমি বললাম, ধর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি, দৃঢ়ভাবে এবং স্মরণ   রেখো যা তাতে রয়েছে, যেন তোমরা বাঁচতে পার। [আরাফঃ১৭৪]

 

 

 

৭। বানরে পরিণত করাঃ

 

শনিবার ইয়হূদীর জন্য একটি পবিত্র দিন যেমন পবিত্র দিন মুসলিমগণের জন্য শুক্রবার।সেইদিন দাউদ(আঃ) তার সুললিঠ কণ্ঠে এত সুন্দরভাবে যাবুর পাঠ করতেন যার ফলে সকলে মুগদ্ব হয়ে সকল মাছ তার তিলওয়াত শুনতে আসত।তাই সেই দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ব ছিল। কিন্তু কিছু কুবুদ্বিসম্পন্ন লোকেরা নতুন এক ফন্দী সৃষ্টি করল যার ফলে তারা একদিন আগে সেখানে জাল পেতে রাখত আর তা একদিন পর উঠাতো। যারা এই ধরনের পাপা করতে তারা আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের ভিতর এক শ্রেণী প্রকাশ্যে এর বিরোধীতা করে, আরেক শ্রেণীর লোকেরা তার বিরোধিতা করত না এবং এই ধরনের কাজ করতও না। আরেক শ্রণীর লোকেরা তা প্রকাশ্যে নিজেরা করত। আল্লাহ পাক পরের দুই শ্রেণীর লোকদের বানরে পরিণত করে দেন।পুরুষগণ বড় বানর,স্ত্রীগণ বানরীতে আর শিশুগণ ছোট বানরে পরিণত হয়। তারপর তিনদিন পর আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন।আল্লাহ বলেন, 

 

তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘণ করেছিল। আমি বলেছিলামঃ তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও। [বাকারাঃ৬৫]

 

৮। শুকুরে পরিণত করাঃ যারা দ্বীনকে মন্দ বলেছে তাদেরকে শুকুরে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

 

 যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধাম্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে।[মায়িদাঃ ৬০]

 

৯। ব্যাং, রক্ত ও উকূনের দ্বারা আযাবঃ

 

আল্লাহ পাক বনী ইসুরাইলের অধিবাসীদের উপর বেশ কয়েকটি সাধারণ গযব নাযিল করেন যার দ্বারা তার শাস্তিপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ বলেন,

 

আমি তাদের দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসল আক্রান্তের দ্বারা ক্ষতি করেছি যাতে তারা অনুধাবন করে।[আরাফঃ১৩০]

 

আল-বিদায়া ওয়াল নিহায়াতে বলা হয়েছে, তাদের তুফান, পংগপাল, উকুন , ব্যাং দ্বারা আক্রান্ত করা হয়।এক সময়ে তাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এভাবে করে তাদের শাস্তি দেওয়া হতে থাকে।

 

১০। কয়েকটি জাতির করুণ পরিণতিঃ

 

মদীনায় বনু কায়নুকা ছিল প্রথম সম্প্রদায় যারা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে চুক্তি ভংগ করে।তাদের বিরুদ্বের রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বদর ও উহুদের যুদ্বের মধ্যবর্তী সময়ে অবরোধের জন্য সৈন্য-সামন্ত প্রেরণ করেছিলেন। তাদের ১৫ দিন অবরোধের তারা পরাজিত হয়ে ফিরে হয় এবং পতন ঘটে।

 

অতঃপর হিজরী ৪র্থ সনে বনু নাজীর রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাদের মধ্যকার দিয়াতের চুক্তি ভংগ করার ফলে শাস্তি প্রদান করেছিলেন। তাদের সমূলে মূলোৎপাটন করে তাদের নির্বাসনে পাঠানো হয়।

 

খনদকের যুদ্বের সময় বনু কুরায়যা তাদের সাথে চুক্তি ভংগ করেছিল। তারা মুসলিমগণকে সাহায্য না করে কাফিরদের সাহায্য করে ।যার ফলে তাদের সাথে মুসলিমগণের যুদ্ব অনিবার্য হয়ে দাড়ায়।তাদেরকে প্রায় ২৫ দিন যাবৎ অবরোধ করে রাখা হয়। তারপর তারা যুদ্ব সকলে পরাজিত হয়। পরবর্তীতে তাদের মিত্র সাদ(রাঃ) রে পরামর্শক্রমে তাদের সকল পুরুষকে হত্যা, সকল মহিলাকে বাদী করা এবং সকল ধন-সম্পদ ভাগ করার ভিত্তিতে তাদের মধ্যকার শাস্তির বিধান জারী করা হয়।

 

উপসংহার

 

পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহ পাক বনী-ঈসরাইল সম্প্রদায়ের প্রতি শুরু থেকে অবিরত ধারায় করুণা বর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু তারা যখন আর এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করত না তখন থেকে তাদের উপর অবিরিত ধারায় গযব নাযিল হতে থাকে যা আজ অবধি চলে আসছে। আমাদের উচিৎ আল্লাহর দেওয়া নিআমতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করা যার দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই।  

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...