Saturday 24 August 2013

গরীব হাদীস সংক্রান্ত আলোচনা


গরীব হাদীস 

গরীব আরবী শব্দ যার অর্থ হল সিফাতে মুশাব্বাহ।যার অর্থ হল নিঃসংগ অথবা আপনজন থেকে দূরে অবস্থানকারী।

পারিভষিক সংজ্ঞা

যে সহীহ হাদীসের সনদের কোন এক স্তরে বা সম্পূর্ণ সনদের প্রত্যেক স্তরেই মাত্র একজন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন তাকে গরীব হাদীস বলে।
মাওলানা আব্দুর রহিম বলেন,
কোন স্তরে যদি বর্ণনাকারীদের সংখ্যা মাত্র একজন হ তবে সেই হাদীস হল হাদীসে গরীব।
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ, একজন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হল গারীব হাদীস।সেটা যদি সনদের সকল স্তরে যদি একজন বর্ণনাকারী থাকে আর এমন কি যেকোন স্তরে একজন বর্ণনাকারী থাকলেও তা গরীব হবে। তবে সনদের অন্যান্য স্তরে একাধিক রাবী থাকলে কোন ক্ষতি নেই।কারণ এটা যেকোন এক স্তরের সর্বনিম্নটা ধর্তব্য।

গারীবের অন্যান্য নামসমূহ

কেউ কেউ খবরে গরীবের অন্য একটি নাম দিয়েছেন।যা হল আল-ফারদ।হাফিয ইবন আসকালানীসহ অধিকাংশ ওলামাগণ এই শব্দদ্বয়কে আভিধানিক ও পারিভাষিকভাবে একই শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।অবশ্য আবার স্বয়ং, এই হাফিয ইবন আসকালানী বলেছেন,কতিপয় আলিম-উলামাবৃন্দ এই দুইটি শব্দের ভিতর ব্যবহারের আধিক্য ও স্বল্পতা বিবেচনা করে এই শব্দদ্বয়ের ভিতর পার্থক্য নিরুপূণ করেছেন। কারণ ফারদ ফারদে মুতলাক আর গারীব ফারদে নিসাবীর উপর ব্যবহৃত হয়।

প্রকারভেদ

গরীব হাদীস দুই প্রকারের হয়ে থাকে।তা হলঃ গরীবে মুতলাক ও গরীবে নিসাবী

গরীবে মুতলাক
গারীবে মুতলাক ঐ খবরকে বলা হয়, যার মূল সনদে একাকীত্ব পরিদৃষ্ট হয়। অর্থাৎ, কোন রিওয়াতের মূল সনদে যদি সাহাবী রাবী একজন হয় তাহলে তা গরীবে মুতলাক বা ফারদে মুতলাক।
উদাহরণ
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে,
সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে।
এই হাদীসটির মূল সনদে সাহাবীদের স্তরে গারাবাত রয়েছে।কারণ এই হাদীসটি কেবলমাত্র উমর বিন খাত্তাব বর্ণনা করেছেন।অবশ্য পরবর্তীতে এটা অনেকে রিওয়াত করেছেন।

গারিবী নিসাবী বা ফারদে নিসাবী
যে হাদীসের মধ্যবর্তী কোন স্তরে একাকীত্ব পাওয়া যায়। অর্থাৎ, সনদের মূলে একাধিক রাবীই রিওয়াত করেছেন।কিন্তু পরবর্তীতে একজন তা রিওয়াত করাতে তা গারীবে নিসাবী বা ফরদে নিসাবী হিসেবে বিবেচিত হবে।
উদাহরণ
আনাস(রাঃ) থেকে ইমাম যুহরী, যুহরী থেকে ইমাম মালিক এই সূত্রে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাবী বলেন, নবী করিম(সাঃ) মক্কায় প্রবেশের সময় তার মাথায় মিগফার ছিল
এই রিওয়াতটিকে এজন্যে গারীবে নিসাবী বলা হয় যারদ্বারা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত হয়।

গরীবে নিসাবীর প্রকারভেদ
এই ধরনের একাকী রিওয়াত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই গারাবাতে পুরো সনদে নয়,বরং তা নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর তা হয়ে থাকে।তা হলঃ
(ক)সিকাহ রাবীর পৃথক রিওইয়ায়াত
(খ) কোন নির্দিষ্ট রাবী থেকে কোন একজন রাবীর পৃথক বর্ণনা
(গ) কোন নির্দিষ্ট শহর বা এলাকার পৃথক বর্ণনা
(ঘ) কোন নির্দিষ্ট শহর বা এলাকাবাসী থেকে অন্য কোন নির্দিষ্ট শহর বা এলাকা থেকে পৃথক বর্ণনা

গারীবের ২য় প্রকারভেদ
সনদ ও মতন এর গারাবাত হিসেবে উলামায়ে মাশায়েখ খবর গারীবকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।যা হল

ক। সনদ ও মতন হিসেবে গারীবঃ এটা ঐ হাদীসকে বলা হয়,যার মতন শুধুমাত্র একজন রাবী রিওয়ায়াত করেছেন।

খ। শুধু সনদ হিসেবে গারীবঃ যেমন একটি হাদীসের মতন একদল সাহাবা বর্ণনা করেছেন। কেবলমাত্র একজন রাবী অপর একজন সাহাবী থেকে এই রিওয়ায়াতটি বর্ণনা করেছেন।ইমাম তিরমিযী তাই বলে থাকেন, রিওয়ায়াতটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ হতে গারীব।
যেইসকল কিতাবে গারীব হাদীস লিপিবদ্ব করা হয়েছে, তা হল মুসনাদু বাযযার এবং আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী।

হুকুম

 এই খবরে গরীবের দ্বারা ইলমে জন্বী বা ইলমে নাজারী প্রতিষ্ঠিত হয়।মুতাযিলাদের মতে এর দ্বারা প্রশান্তিমূলক জ্ঞান অর্জিত হয়।আবার কেউ কেউ বলেন এর দ্বারা ইলমে ইসতিদিলালী হয়। শরীয়াতের কোন কোন দলীল এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এই খবরের দ্বারা আমল করা ওয়াজিব হলেও সর্বদা এর উপর আমল করা ওয়াজিব নয়। খবরে গরীবের অস্বীকারকারী কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে সে সত্যভ্রষ্ট আর মর্যাদার দিক থেকে তার স্থান হল মুতাওয়াতির,মাশহূর ও আযীযের নীচে।

 গারীব হাদীসসমূহের ভিতর প্রসিদ্ব কিতাব হল আল-আফরাদ ও গারাইবু মালিক যা দারকুতনীকৃত। আর আবূ দাউদ আস-সিজিস্তানী এর উপর এক খানা কিতাব প্রণয়ন করেছেন।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...