Monday 23 September 2013

কারবালার ঘটনা


_____________________৬০ হিজরির ঘটনাইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়াকে খলিফা নিযুক্ত করেন তার বাবা মুআবিয়া (রা: ) কিন্তু এটা ইসলামের মর্মের চেয়ে রাজতান্ত্রিক ধারায় বেশী প্রভাবিত ছিলতাই তার হাতে বায়াত করেননি হুসাইন (রা: ) ইরাকের লোকেরা এ খবর পেয়ে তার কাছে চিঠি/দূত পাঠিয়ে জানাল তারা তাকে খলিফা হিসেবে চায়, ইয়াজিদকে নয়সমর্থকদের চিঠি পেয়ে হুসাইন (রা: ) তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে কুফায় পাঠালেন অবস্থা দেখার জন্যমুসলিম দেখলেন যে আসলেই অনেক মানুষ হুসাইনকে (রা: ) কে খলিফা হিসেবে চাচ্ছেতিনি হুসাইন (রা: ) কে সেটা জানিয়েও দিলেনইতমধ্যে কিছু অত্যুৎসাহী লোকেরা হানী বিন উরওয়ার ঘরে মুসলিমের হাতে হুসাইনের পক্ষে বায়াত নেওয়া শুরু করলসিরিয়াতে ইয়াজিদের কাছে এ খবর পৌছালে সে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পাঠাল কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করতে
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে দেখে ঘটনা সত্যিমুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেনএ সময় উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিয়ে মানুষকে ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালকুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগলসূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, তথাকথিত হুসাইন সমর্থকদের কেউই অবশিষ্ট নেইতাকে গ্রেপ্তার করে হত্যার আদেশ দিল উবাইদুল্লাহমুসলিম মৃত্যুর আগে হুসাইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান
হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাওকুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো নাকেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছেআমার সাথেও তারা সত্য বলেনি
এদিকে মুসলিম বিন আকীলের মৃত্যু হলেও তার প্রথম চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেনঅনেক সাহাবী তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেনতাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর,আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছিলেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতামআব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেন: হুসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে,যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছলচিঠি পড়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেনপথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের (রা:) গতিরোধ করলতিনি আগত সৈন্যদলকে আল্লাহর দোহাই এবং নিজের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনটি প্রস্তাব দেন
১. তাকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোকতিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করবেনকেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না
২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক
৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোকসেখানে তিনি জিহাদ করবেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা পাহারা দেবেন
ইয়াজিদের সৈন্যরা উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ফয়সালা ছাড়া কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল নাএ কথা শুনে উবাইদুল্লাহর এক সেনাপতি হুর বিন ইয়াজিদ বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত নাএরপরও তারা খুব যৌক্তিক এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়নিসেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন হুসাইন (রা:) ও তাঁর সাথীদের সালাম দিয়ে উবাইদুল্লাহ এর সৈনিকদের সাথে হুসাইনের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন

সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য ছিলহুসাইনের (রা:) এর সাথে ছিলেন
১. আলী ইবনে আবু তালিবের (রা:) এর ছেলেরা আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস
২. হুসাইনের (রা:) নিজের সন্তানেরা আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আকবার এবং আব্দুল্লাহ
৩. হাসানের (রা:) এর ছেলেদের মধ্যে থেকে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম
৪. আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল
৫. আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ
সাহাবা এবং তাবেঈদের এই ছোট্ট দলটির সবাই বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হনঅবশেষে হুসাইন (রা:) ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন নাসীমার বিন যুল জাওশান নামের এক নরপশু বর্শা দিয়ে হুসাইনের (রা:) শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেললশেষে ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নির্ভীক এই বীর আল্লাহর লিখে রাখা ভাগ্যানুযায়ী শহীদ হলেনহুসাইন (রা:) অন্যায় কিছু বলেন নি, অন্যায় কিছু করেন নিতার হত্যাকারী ও হত্যায় সাহায্যকারীদের আল্লাহর ক্রোধ ঘেরাও করুক, এরা ধ্বংস হোক! আল্লাহ্‌ তায়ালা শহীদ হুসাইন (রা:) এবং তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা আচ্ছাদিত করুন
এ ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসের একটি লজ্জাজনক অধ্যায় যা বিশ্বাসঘাতক কুফাবাসী আমাদের উপহার দিয়েছেআল্লাহ যদি চাইতেন তিনি এইসব আজগুবি ঘটনা না ঘটিয়েই হুসাইন (রা:) ও তার সঙ্গীদের রক্ষা করতে পারতেন
হুসাইন (রা:) এর হত্যাকারী কে?
শাইখ ইবনে তাইম্যিয়া বলেন: সকল মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকের ঐকমতে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হুসাইনকে (রা:) হত্যার আদেশ দেয়নিবরং উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে ইরাকে হুসাইনকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বাঁধা দিতে বলেছিলএতটুকুই ছিল তার ভূমিকাবিশুদ্ধ মতে তার কাছে যখন হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার খবর পৌঁছলে সে আফসোস করেছিলসে হুসাইন (রা:) পরিবারের কোন মহিলাকে বন্দী বা দাসীতে পরিণত করেনি; বরং পরিবারের জীবিত সকল সদস্যকে সসম্মানে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল
ইবনে আবী নুম হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: আমি একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের নিকট উপস্থিত ছিলামতখন একজন লোক তাঁকে মশা মারার বিধান জানতে চাইলতিনি তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কোন দেশের লোক? সে বলল: ইরাকেরইবনে উমর (রা:) তখন উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা এই লোকটির প্রতি লক্ষ্য করসে আমাকে মশা মারার হুকুম জিজ্ঞেস করছে, অথচ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতিকে হত্যা করেছেআর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দুজন (হাসান ও হুসাইন) আমার দুনিয়ার দুটি ফুল। (বুখারী, হাদীছ নং- ৫৯৯৪)
হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার পূর্বে ইরাকবাসীদের বলেন:
তোমরা কি চিঠির মাধ্যমে আমাকে এখানে আসতে আহবান করো নি? আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করো নি? অকল্যাণ হোক তোমাদের! যেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ও তোমরা মিলে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এখন সেই অস্ত্র তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে চালাতে যাচ্ছ? মাছি যেমন উড়ে যায় তেমনি তোমরা আমার পক্ষে কৃত বায়াত থেকে সড়ে যাচ্ছ, সকল ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছধ্বংস হোক এই উম্মতের তাগুতের দলেরা!
# আমাদের করণীয়:
মুসলিম হিসেবে আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন, মৃত বা শহীদ ব্যক্তির জন্য বিলাপ না করা, আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ না করাতিনি বলেছেন:
মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন লোহার কাঁটাযুক্ত জামা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে। (সহীহ মুসলিম)
যে কোন বিপদে আমাদের কর্তব্য কুরআনের সেই বাণী স্মরণ করা -
যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)

এই দিনে সিয়াম পালন করাআব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় কিছু ইহুদীদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন: এটি কোন রোজা? তারা উত্তর দিল, এটি একটি পবিত্র দিনএদিনে আল্লাহ বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রুদের কবল থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেনতাই মুসা (আঃ) এ দিন রোজা রেখেছেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: তাদের চেয়ে মুসা (আঃ) এর সাথে আমার সম্পর্ক অধিকসুতরাং তিনি সিয়াম থাকলেন এবং সাহাবীদেরকে সিয়াম রাখার আদেশ দিয়েছেন (সহীহ বুখারী) অপর বর্ণনায় তিনি আগামী বছর নয় তারিখেও সিয়াম থাকার নিয়ত করেছিলেন

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমিরে মুয়াবিয়া

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমিরে মুয়াবিয়া


পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল মনীষী তাদের স্বীয় যোগ্যতার বলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে আমিরে মুয়াবিয়া হলেন অন্যতমযিনি শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেনএ সকল অনুপম চরিত্রের সন্নিবেশের সমাবেশ ছিল তার জীবনেকুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রে ৬০৬ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেনতার পিতা ছিলেন উমাইয়া দলপতি এবং পবিত্র কাবার রক্ষক ইসলামের চরম দুশমন আবু সুফিয়ানমাতা হৃদয়হীনা হিন্দা,যিনি ওহুদ যুদ্ধে নিহিত রাসূলের প্রাণের চাচা আমির হামজার কলিজার ভক্ষণ করে ইসলামের ইতিহাসে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে নাম লিখিয়েছেন৬৩০ খৃস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তার পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন আজীবনএ সমস্ত অসাধারণ গুণের জন্য রাসূল (সাঃ) তাকে বেশি ভালবাসতেনযার ফলে মুয়াবিয়া ওহী লিখবার জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেনপরে তার ভগ্নি উম্মে হাবিবার সাথে মহানবীর বিবাহ সম্পাদিত হলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খিলাফতকালে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হনসেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা শুরু হয়কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র সিরিয়ার সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেননির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে সিরিয়াকে বায়জানটাইন আক্রমন হতে রক্ষা করতে সমর্থ হনখলিফা ওসমানের সময় সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠনে করে দীপাঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করেনতারই সুযোগ্য নেতৃত্বে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ দখল করেনহযরত ওসমানের হত্যাজনিত গোলযোগ সময় হতে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়পরে হযরত আলীর হত্যা ও পুত্র ইমাম হাসানকে পরাজিত করে সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে মুয়াবিয়া খিলাফত লাভ করেন এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করেন

৬৬১ খৃস্টাব্দে ইমাম হাসানকে খিলাফতের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে মুয়াবিয়া ইসলামী সাম্রাজ্য তথা দামেস্কের সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত লাভ করেনরাজতন্ত্রের সূচনাও তিনিই করেন
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক মূইর বলেন,
‘‘মুয়াবিয়া দামেস্কের সিংহাসনে আরোহন খিলাফতের সমাপ্তি এবং রাজতন্ত্রের সূচনা করে’’
তবে যে পন্থাই অবলম্বন করে থাকুক না কেন, মুয়াবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবেতিনি ক্ষমতা লাভ করে কূফা থেকে দামেস্ককে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানীতে রূপান্তরিত করেনযা করা অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব তা তিনি করে দেখিয়েছেন স্বীয় যোগ্যতা আর কূটনীতিক ক্ষমতাবলেতবে একটা কথা থেকে যায় যে, তার আশেপাশের লোকদের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং তাদের থেকে কাজও আদায় করতে জানতেনসে দৃষ্টিকোণ থেকে আমির মুয়াবিয়া ছিলেন ভাগ্যবান

চারপাশের লোকদের সহযোগিতা না পেলে মুয়াবিয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে উমাইয়াদর সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন কঠিনতর ছিল
ঐতিহাসিক হিট্টির মতে,
‘‘খলিফা মুয়াবিয়ার সাফল্যের মূলে তার চারিপার্শ্বের অনুগামীবর্গের অবদানও কম ছিল না, বিশেষ করে মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আস; বিক্ষুব্ধ কূফার প্রশাসক আল মুগীরা আল সাবাহবিদ্রোহী বসরার শাসনকর্তা জিয়াদ ইবন আবিহএই তিনজন তাদের নেতা মুয়াবিয়াসহ আরব মুসলমানদের চারজন রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত’’
মুয়াবিয়ার শাসনকালে জিয়াদ ইবন আবিহ অশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেনজিয়াদ ছিলেন মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তানতার মাতা ছিলেন তায়েফের একজন ভ্রষ্টা রমনী ও আবু সুফিয়ানের উপপত্নীকিন্তু আশ্চযের বিষয় হল, জন্ম নীচ পরিবেশ হলেও দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি মুসলিম ইতিহাসের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হনজন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল'এই প্রবাদের সত্যতা আমরা জিয়াদ ইবন আবিহর মধ্যে দেখতে পাইতিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর খিলাফতকালে বসরা ও ইসতাখরে শাসনকর্তার মর্যাদালাভ করেনবুদ্ধিমত্তা, বাগ্নিতা ও কর্ম প্রতিভার জন্য সে যুগে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদরূপে পরিচিত ছিলেনমুগারীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া জিয়াদকে একইসঙ্গে বসরা ও কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন

একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আমর ইবনুল আসের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যতীত মুয়াবিয়া কিছুতেই উমাইয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন নাবহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমর সম্বন্ধ মূইর বলেন,
‘‘খিলাফতের পরিবর্তনের আমরের চেয়ে অপর কেহই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননিযুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী, পরামর্শে ধূর্ত, কথায় ও কাজে রুক্ষ, নীতিজ্ঞানশূণ্য আমরের বুদ্ধি বলেই মুয়াবিয়া হযরত আলীর উপর বিজয়ী হন এবং পরিণামে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা করেন’’

মুয়াবিয়ার রাজ্য বিজয় সম্পর্কে হিট্টি বলেন,
‘‘মুয়াবিয়ার শাসনকালে খিলাফত কেবল সুসংহতই হয়নি; বরং আঞ্চলিক বিস্তৃতিও সাধিত হয়েছিল’’

৬৭৯ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া তদীয় পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে খেলাফতে রাশেদার যুগের পরিবর্তে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেনইয়াজিদকে মনোনীত করার পর মুয়াবিয়া ৬৮০ খৃস্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন

মুয়াবিয়া শঠতার বশবর্তী হয়ে খিলাফত লাভ করলেও তাকে ইসলামের ইতিহাসে একজন অনন্য প্রতিভা ও ব্যক্তিসম্পন্ন শাসকরূপে অভিহিত করা হয়েছেতিনি গৌরবর্ন, দীর্ঘাকৃতি ও স্থুলকায় দেহের অধিকারী ছিলেনতার চরিত্রেও বিভিন্ন পরস্পর  বিরোধী গুণাবলীর সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়শাসক হিসেবে ধূর্ত, কপট ও অমিতব্যয়ী হলেও তার ব্যক্তিগত জীবন কলুষিত ছিল নাইসলামের সম্প্রসারণে মুয়াবিয়ার অবদান অনস্বীকার্য
হিট্টি বলেন,
‘‘যোদ্ধা হিসেবে তিনি হযরত আলীর অপেক্ষা নিকৃষ্ট হলেও সামরিক সংগঠক হিসেবে তার সসসাময়িকদের মধ্যে অদ্বিতীয় ছিলেন’’

মুয়াবিয়া সূক্ষ্ম রাজনীতিক ও সুশাসন হিসেবে অক্ষয় কীর্তি অর্জন করেনচারিত্রিক দুর্বলতা এবং বংশীয়পক্ষপাতিত্ব সত্ত্বেও একথা স্বীকার করতে হবে যে, তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো যে, তিনি ছিলেন, ধীরস্থির, হিসাবী, মেধাবী ধৈর্য্যশীল ও দূরদর্শী এবং কর্মঠতার অনুসৃত নীতিগুলো বৃহত্তর ইসলামের স্বার্থে প্রয়োগ করা হলে ইসলাম, রাষ্ট্র ও ধর্ম আরো সুসংসহ এবং শক্তিশালী হতোকিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত হয়েছিল উমাইয়া বংশের স্বার্থ রক্ষার্থে


পরিশেষে একথা বলা যায় যে, এত আলোচনা আর সমালোচনার পর আমির মুয়াবিয়া ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষরাসূল (সা) তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেনঅধিকন্তু তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত সাহাবীআর সাহাবীদের সম্বন্ধে তার বেফাঁস মন্তব্য করতে রাসূল (সা) আমাদেরকে নিষেধ করেছেনবর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আমির মুয়াবিয়ার নাম ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণক্ষরে লিখা থাকবে

Wednesday 18 September 2013

পরিবেশ বিপর্যয় কাকে বলে? পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ইসলামের ভূমিকা কি আলোচনা কর।


ভূমিকা
আল্লাহ সুবানাহাতায়ালা বলেন,
তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? [লুকমানঃ২০]
এ পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।আর আল্লাহ পাকের গোটা সৃষ্টিজগৎ হল পরিবেশ।বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সকলে এই পরিবেশ রক্ষা করার নামে অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছে।কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর পূর্বে বাস্তবভিত্তিক ধর্ম ইসলাম পরিবেশ দূষণ রোধে এমন কিছু নিয়ম-নীতি প্রদান করেছে যার আলোকে পরিবেশ দূষণ রোধ করা অত্যন্ত সহজসাধ্য একটি বিষয়।ইসলামের সাথে পরিবেশ বিজ্ঞানের কি সম্পর্ক এবং এই পরিবেশ দূষণরোধে ইসলাম কি ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
পরিবেশ কি
পরিবেশ কথাটি আভিধানিক অর্থে ঠিকানা,অবস্থা এবং প্রকৃতিকে বুঝানো হয়।আল্লাহ পাক কুরআনে পরিবেশের কতাহ বলেছেন নিম্নোক্তভাবে,
যখন আমি ইবরাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। [হাজ্জঃ২৬]
সে সেখান যেখানে ইচ্ছা স্থান করে নিতে পারত। [ইউসুফঃ৫৬]
 তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতে বাস স্থান নির্ধারণ কর।  [ইউনুসঃ৮৭]
তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। [আরাফঃ৭৪]
আল কুরআনে পরিবেশকে তাওয়া এবং তাবওয়া বলা হয়েছে যার দ্বারা ঘর,বসতিবাসস্থানকে,বায়ুমণ্ডল,বায়,পানি।আরবীতে বায়নাতু এবং মসিরুন বলে। পরিবেশ বলা হয়েছে।ইংরেজী Ecology হল পরিবেশ যা গ্রীক শব্দ oikos এবং logos এর সমন্বিত রুপ।oikos এর অর্থ হল ঘর,বসতি,বাসস্থান এবং logos এর অর্থ হল জ্ঞান ও গবেষণা।কাজেই পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান হল পরিবেশ বিজ্ঞান।১৮৮৫সালে বিজ্ঞানী রিটার সর্বপ্রথম এই পরিবেশ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
বিজ্ঞানী আর্নষ্ট হেজেল বলেন, জীবন্ত সৃষ্ট জগতের পারস্পারিক সম্পর্ক তথা তারা যে আবেষ্টনীয় জগতের মধ্যে বসবাস করে সেই সম্পর্কিত জ্ঞান হল পরিবেশ বিজ্ঞান।
অর্থাৎ, বসবাস সংক্রান্ত জ্ঞান হল পরিবেশ।
ড. মাহমুদ সালেহ আদেলী বলেন, মানবমণ্ডলীকে বেষ্টন করে আল্লাহ তায়ালার যে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ তাকেই পরিবেশ বলা হয়।
ড. সাঈদ মুহাম্মদ আল-হাফফার বলেন, পরিবেশ হল প্রকৃতির ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহের সমন্বিতরুপ যেখানে মানুষ ও অন্যান্য জীব ধারন,বর্ধন ক্রিয়া সুন্দরভাবে পরিচালনা করে। [বিয়াতু মিন আজলি বাক্কা]
গোপালনাথ খান্না বলেন, Environment as the sum of total effects the development and life of organism.
মোটকথা পৃথিবীর সবকিছু যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বায়ুবণ্ডলের ওজোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত যাওথা আল,বাতাস,পানি,মেঘ,কুয়াশা,মাটি,বন,শব্দ,পাহাড়-পর্বত,নদী-নালা,সাগর-মহাসাগর,মানবনির্মিত সর্বপ্রকারের অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সমন্বয়ে যা সৃষ্ট তা হল পরিবেশ।
পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম
১. আল্লাহ বলেন,
তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? [লুকমানঃ২০]
এ আয়াতের দ্বারা এ কথা বুঝানো হয় যে,সবকিছু আমাদের প্রয়োজনে ভরপুর।তাই এদের সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন আমাদের জন্য অপরিহার্য্য একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
২. রাসূল(সাঃ) একবার হযরত সাদ(রাঃ) উযুর সময়ে অতিরিক্ত পানি খরচ করতে দেখে বলেন, তুমি এত পানির অপচয় করছ কেন?তুমি যদি নদী অথনা সমুদ্রে উযু কর তাহলে তার অপচয় করবে না।
আল্লাহ পাক যেকোন বস্তুর অপচয় সম্পর্ণরুপে নিষেধ করে দিয়েছেন।কারণ সবকিছু তার সৃষ্টির জন্য পরিমিতভাবে তৈরী করা হয়েছে।আর তার অপব্যয় করা হল শয়তানের ভাইয়ের ন্যয় কাজ।আল্লাহ বলেন, তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে শোধিত করেছেন পরিমিতভাবে। [ফুরকানঃ২]
আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয় অপব্যাকারী শয়তানের ভাই। [বনী-ঈসরাইলঃ২৬]
৩. ১৪ বছর যাবৎ মক্কা ও মদীনায় প্রাণী হত্যা,গাছ কাটা নিষিদ্ব হিল যা পরিবেশ সংরক্ষণে খলীফাবৃব্দ এক চমৎকার ভূমিকা পালন করে।
অর্থাৎ এসকল আলচনার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক।
পরিবেশে যেন সকল প্রাণী থাকে তা সকলে চায়।কারন তাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।বাঘ,সাপের মত জন্তুকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন চলছে।কারণ তা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।বর্তমানে শকুন না থাকার জন্য আনথ্রাক্স রোগ ছড়চ্ছে।তাই তা থাকা দরকার।আল্লাহ পাক বলেন তুমি আমার সৃষ্টির ভিতর তাকাও।সেখানে কোন অপূর্ণতা পাও?তুমি তা ভাল করে তাকাও। মনে হয় যে কুরআনে পরিবেশ সম্পর্কে কিছুই বলে নাই।কিন্তু তা বলা হয়েছে।যখন পরিবেশের ভিতর সবকিছু থাকে আর যদি তার কিছু অভাব হয় তাহলে তা হবে পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ বিপর্যয়
আল্লাহ পাক অত্যন্ত সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন।যেখানে পাহাড় আছে তা আছে,তারপর যেখানে নদী আছে তা আছে তারপর বরফ আছে যার নিচে মিথেন আছে।তা যখন গলে যাবে তখন মিথেন বের হয়ে যাবে এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্বি হয়ে মহাপ্লাবনের সৃষ্টি।পরিবেশে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হলে এমন অবস্থা হয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে South wick, 1976 এ বলা হয়েছে,
পরিবেশ প্রতিকূল পরিবর্তন যা প্রধানত মানুষের সক্রিয়তার উদ্ভূত উপাদানে সৃষ্ট তাই পরিবেশ দূষণ
এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, মানুষের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা পারিপার্শ্বিক অবস্থার দূষণের সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদির কাফী বলেন, প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায় প্রাণীজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও বায়ুমন্ডলের অনিষ্ট সৃষ্টিকারী বস্তুর উপস্থিতি যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে ধ্বংস করে তাই পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণসমূহ
এখন যেসকল কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তা হোল
১. জনসংখ্যা বৃদ্বিঃ জনসংখ্যা বৃদ্বি হলে এক সাথে অনেক লোকের সমাগম হলে তাতে পরিবেশ দুষিত হয়।
২. ভোক্তার চাহিদা বৃদ্বিঃ ইহা বৃদ্বি পেলে পরিবেশের বিপর্যয় হয়।যা কিনে তা পরিত্যক্ত করা হলে পরিবেশ দুষিত হয়।
৩. কৃত্রিম প্রযুক্তিগত উন্নয়নঃ  এর জন্য এমনটা হয়।        
৪. প্রাকৃতিক স্বাভাবিক কারণে অযথা মানব হস্তক্ষেপঃ বিল ভরাট,বন কেটে ফেলা, পাহাড় কাটা এর অন্তর্ভূক্ত হয়।
পরিবেশ দূষণের কারণসমূহ
চারটি কারণে পরিবেশ দুষিত হয়।তা হল বায়ু দুষন,পানি দুষন,শব্দ দুষন এবং কঠিন বর্জ্য দুষন।
বায়ু দুষন
বায়ু যখন প্রাণী এবং উদ্ভীদের জন্য ক্ষতিকর তাই হল বায়ু দুষন।আমাদের জন্য অক্সিজেন দরকার আবার গাছের জন্য দরকার কার্বন-ডাই-অক্সাইড।বায়ুতে যদি ওজোন,সালফার,কার্বন মনোক্সাইড,মিথেন,ক্লোরোফিল,সীসা,ক্যাডিয়াম থাকে তাহলে তা ক্ষতিকর বায়ুর জন্য।কিছু কিছু গাছ আছে যেখানে বায়ু দুষনের জন্য সেগুলোতে ফল হয় না।তেহরানের পর ঢাকা বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী শহর।এর কারণ হল বায়ু দুষন।বায় দুষনের প্রধান কারণ হল সীসা এবং কার্বন মনোক্সাইড।এর এই সীসা এবং কার্বন-মনোক্সাইড সবচেয়ে বেশী ছড়ায় ডিজেল,পেট্রোল, গাড়ি এবং কল-কারখানার বর্জ্যের দ্বারা হয়ে থাকে,যার ফলে মানুষেরা দিন দিন রোগ্রান্ত হচ্ছে।চলাফেরা করা দুরুহ হয়ে গিয়েছে।বাতাসকে দুষন ঘটায় যেসকল বিষয় তার ভিতর সবার আগেয় হয়
 ১. তেজস্কৃয়তার দ্বারা।এই তেজস্কৃয়তা পারমাণবিক বিস্ফোরণের দ্বারা হয়।অথবা পার্শ্ববর্তী কোন দুর্ঘটনার দ্বারা হয়, অর্থাৎ কোন বস্তুর মধ্য দিয়ে পারমাণবিকতার নির্গমন,
২. কল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার দ্বারা,
৩. যান-বাহনের থেকে নর্গত ধোঁয়া,
৪.অসাস্থ্যকর আবর্জনা জমা করার জন্য,অসাস্থ্যকর উপায়ে অপসারণ করা হয় যারা দ্বারা বাতাস দুষিত হয়,
৫. তৈল উত্তোলনের ফলে আগুন ধরা, এভাবে করে বাতাস দুষিত হয় আর এর দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।      ৬.কয়লা বা কাঠ পোড়ানো  এরোসল বা স্প্রের ব্যবহার,
 ৭.কৃষিজমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, 
৮. এসিড রেইনের দ্বারা, 
 ৯।বিভিন্ন ধরনের বারুদ ও বোমা বিস্ফোরণ্‌,
১০।. তৈল উত্তোলনের ফলে আগুন ধরা,
বায়ু দূষনের প্রভাবঃ
এভাবে করে বাতাস দুষিত হয় আর এর দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যা হল শ্বাস কষ্ট,ফুসফুসে কষ্ট, এধরনের আরও বিভিন্ন ধরনের রোগের বিস্তার ঘটায়। মানুষের শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হল সীসা।এই সীসা মানুষের কিডনিকে নষ্ট করে দেয় আর এই কিডনি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গের ব্যাঘাত ঘটায়।সীসাসহ বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বাতাসকে এমনভাবে বিষাক্ত করে যার অস্তিত্ব ৫০০ বছর পর্যন্ত থাকে।তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকে।এর দ্বারা পৃথিবীর সকল জীব আক্রান্ত হয়।
পানি দুষন
পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে পানি দুষিত হয়।তাহলে সমুদ্রের উদ্ভিদ এবং মাছের জন্য ক্ষতিকর হয়।সমুদ্রে কিছু উদ্ভিদ মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।কিন্তু পানি দুষিত হলে তা ব্যাহত হয়।তা আর হয় না।তারপর মাছ আর পাওয়া যায় না।পানিতে বিষাক্ত দ্রব্য অথবা দূষিত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রণের ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে পানি দূষণ বলে।শহরে পানির সর্বরাহ হয় মূলত পার্শ্ববর্তী নদীগুলো থেকে। নদীর পানি বিশুদ্ধ করে খাওয়া ও ব্যবহার উপযোগী করা হয়।  শহরে যেসকল কারণে পানি দূষিত হয় সেগুলি হচ্ছে-কলকারখানার বর্জ্য নদীতে মিশে পানি দূষিত হয়।অনেক সময় পানির লাইন ফেটে যেয়ে এর ভিতর ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করে। এর ফলে পানি দূষিত হয়।নলকূপের পানিতে আর্সেনিক গ্রামে পানি দূষণের প্রধান কারণ।ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার এবং বৃষ্টির পানিতে তা পুকুর, জলাশয়ের পানিতে মিশে পানি দূষিত হয়। একই পুকুরে কাপড় পরিষ্কার, মানুষ ও গবাদী পশুর গোছল করালে পানি দূষিত হয়।
এভাবে শহর ও গ্রামে পানি দূষিত হয় এবং খাওয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে ওঠে।
পানি দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি: পানি দূষণের কারণে বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যেমন-
পানিবাহিত রোগ:
ডায়েরিয়া
ব্যাকটেরিয়াজনিত:
টাইফয়েড
সংক্রমন
কলেরা, প্যারাটাইফয়েডজ্বর ও   বেসিলারী আমাশয়
ভাইরাল সংক্রমণ(জন্ডিস)
পোলিওমাইলিটিস হেপাটাইটিস সংক্রমণ
প্রোটোজল সংক্রমণ:
অ্যামোবিক আমাশয়
শব্দ দুষন
আরেকটি হল শব্দ দুষন।৮০ ডেসিবেলের বেশী শব্দ অতিক্রম হলে তার ক্ষতি হয়।শব্দের উৎস থেকে আধা মিটার দূরে ৮০ ডেসিবেলের বেশী গ্রহণযোগ্য নয়। কল-কারখানার শব্দ,গাড়ীর হর্ন, ঘণ্টার শব্দ ইত্যাদি কারণে শব্দ দুষিত হয়ে থাকে।
কঠিন বর্জ্য দুষন
কল-কারখানা,শিল্পজাত বর্জ্য,কৃষিজাত কারখানা,পারমাণবিক বর্জ্য,কঠিন খনিজ বর্জ্য ইত্যাদির দ্বারা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।শিল্পের ব্যবহার দ্বারা পরিবেশ ক্ষতি হয়।কাগজ,ইট তৈরী করার দ্বারা এই ক্ষতি হয়ে থাকে।নগরায়ন এবং শিল্পয়ানের  ফলে তা হচ্ছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ১৭০০ সালে কার্বন-ডাইওক্সাইডের পরিমান ছিল ২৭৫ মিলিয়ন পি পি এম।১৯৯০ সালে তা হয়৩৫০ মিলিয়ন পি পি এম।তাপমাত্রা বাড়ছে।২০২৫ সালে তাপমাত্রা হবে ১।৫৮ ফারেনহাইট হবে।শেষ শতাব্দীতে দশ ফারেনহাইট বাড়বে।ফলে চল্লিশ বছরের মধ্যে ৮ ইঞ্চি পানি বাড়বে আর সবকিছু ডুবে যাবে।কার্বন-ডাইঅক্সাইড যেই সময় উদগিরণ করা হবে তার স্থায়ীত্ব থাকবে ৫০০ বছর।সি.এফ.সি এর হায়াত হলে ১৬৫ বছর।অর্থাৎ এসকল প্রভাব থাকবে ১০০-৫০০ বছর।এর ফলে সৃষ্ট হচ্ছে নানা রোগ।জাপানে বনভূমি ৬৭ ভাগ,রাশিয়াতে ৫১ ভাগ, ভারতে ২৭ ভাগ এবং মিয়ানমারে ৬৭ ভাগ।আর বাংলাদেশে ৭ ভাগ।এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।আমাদের শিল্প বেশী ক্ষতিকর।ট্যানারির দ্বারা দৈনিক ১৬ হাজার বর্গমিটার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।আর সেগুলো হাস-মুরগী ও মাছ খাচ্ছে আর তা খাচ্ছি আমরা।
পানি দূষণ রোধে ইসলাম
পানি দুষণ রোধে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যপক।এই পৃথিবির ৭০ ভাগ হল জল আর বাকী ৩০ ভাগ হল স্তল।এই পানির কথা কুরআনে মোট ৬৩টি জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।এই পানি হতে সমগ্র সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করা হয়েছে।আল্লাহ বলেন,
প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। [আম্বিয়াঃ৩০]
রাসূল(সাঃ) বলেন, প্রত্যেকটি জিনিস পানি হতে সৃষ্ট।
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল পানি।একটি শরীরের ওজনের ৫০-৬০ ভাগ পানি থাকে।মেয়েদের শরীরের থেকে পুরুষের শরীরে পানি বেশী থাকে।একজন বয়স্ক লোকের শরীরে ৪০ ভাগ পানি থাকে।শিশুদের শরীরের আরও বেশী থাকে।তাদের শরীরে প্রায় ৮০ ভাগ থাকে।এই তথ্য কুরআনে প্রায় ১৪০০ বছর আগে দেওয়া হয়েছে।জীবকোষের মূলউপাদান প্রোটপ্লাজম যাকে জীবের প্রাণ বলা হয়, যার ৯৫ ভাগ পানি।আল্লাহ পাক বলেন, আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জিবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। [জাসিয়াঃ৫]
১. আর্সেনিক রোধঃ বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি আমরা খাই না যেহেতু সেখানে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।যদিও আল্লাহ পাক তা খেতে আমাদের বলেন নাই।আমরাই তা খাই।আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,আসমান থেকে যে পানি বর্ষণ করা হয় তা খেতে।তিনি কিন্তু বলেন নাই যে ভিতর থেকে পানি খেতে।মাটি থেকে যেই পানি উঠে তা হল বিপদ সংকেত।
২.বদ্ব পানিতে পেশাব না করাঃ পানি দুষন রোধের জন্য হাদীসসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তিনি উদ্বৃত করেছেন,যেমন তিনি বলেছেন, তোমরা বদ্ব পানিতে পেশাব করবে না।[মুসলিম] অন্য এক হাদীসে আছে,তোমরা পানিতেই পেশাব করবে না।আমরা বদ্ব পানিতে পেশাব না করলেও সকল ড্রেনের পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে।তাহলে আমরা তো বদ্ব পানিতে পেশাব করছি।পুরো মুসলিম জাতি যদি হাদীস মানে তাহলে তো এই অবস্থা হত না।তাহলে পানিগুলো কোথায় যাবে?তার জন্য আল্লাহ পাক তো শোধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।কিন্তু তা বর্তমানে শোধন না করে তা প্রবাহিত করা হচ্ছে সরাসরি।আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যে, তোমরা স্থির পানিতে পেশাব করবে না। কারণ এখানে গোসল করা হয়।তাই এখানে কোনভাবে পেশাব করা যাবে না।আর পেশাবের ভিতর এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাই সেখানে কোনভাবে পেশাব করা যাবে না।তাই কোন কোন স্থানে দুষিত পানি ব্যবহারের ফলে হাতের তলায় ঘাও হচ্ছে।যদি বলা হয় তা বিজ্ঞানে আছে তাহলে তা মানি আর যদি বলি তা ধর্মে আছে তাহলে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
৩.উযু করার পূর্বে হাত ধোঁইয়াঃ  উযু করার পূর্বে পানির পাত্রের পানি যেন দুষিত না হয় এজন্য তার উচিৎ হাত ধুঁয়ে নেওয়া। বুখারী এবং মুসলিম শরীফের হাদীস তোমাদের ভিতর থেকে যদি কেউ ঘুম থেকে উঠে আর সে যেন হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত না দেয়।কারণ সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল? পানির অপচয় করি বিভিন্নভাবে।অথচ রাসূল(সাঃ) বলেন, তুমি যদি সমুদ্রে থাক তাহলেও পানির অপচয় করবে না।
৪.পানিতে নিঃশ্বাস না ফেলাঃ  পানির বিশুদ্বতা রক্ষার জন্য ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসে উদ্বৃত করেছেন যা হল, তোমরা পানিতে কেউ নিঃশ্বাস ফেলবে না। এটা করা একদম নিষেধ।কারন,মানুষ যখন শ্বাস ত্যাগ করে তখন তার ভিতর থেকে নানা জীবানু বের হয়।আর তা পানিতে নিক্ষেপিত হলে সেই পানি দুষিত হয়।তাছাড়া নাকের চুলে যেই ময়লা জমা হয় তা পানিতে পড়লে তা তার সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।এই বিষয়টি রাসূল(সাঃ)প্রায় ১৪শ বছর পূর্বে অতুন্ত চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।কিন্তু রাসূলের হাদীস হিসেবে আমরা এর গুরুত্ব খুব একটা দেই না।
৫. পানির পাত্র ঢেকে রাখাঃ রাসূল(সাঃ)বলেছেন, শয়নের আগে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।পানিকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এ হাদীস বলা হয়েছে।
৬. নবীজি(সাঃ) বলেছেন, সাতটি কাজের দ্বারা একজন মানুষ মৃত্যুর পর সওয়াব পেতে থাকে।তা হোল আলেম তৈরী করা,খাল খনন করা, পুকুর খনন করা, গাছ ফলন,মসজিদ নির্মাণ, নেককার সন্তান এবং উপকারী ইলম। এর ভিতর তিনটি কাজ পানির সাথে সম্পর্কযুক্ত।পানি দুষনের এই হাদীসগুলো মানলে পানি দুষন রোধ করা যাবে।
৭. পবিত্রতা অর্জনঃ কুরআনে বলা হয়েছে, ““যে নিজেকে (আত্মাকে) শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।[শামসঃ৯] কেউ কেউ এখানে আধ্যাত্মিক পবিত্রতার কথা বলেন।কিন্তু এটি আধ্যাত্মিক পবিত্রতার পাশাপাশি শারীরিক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে।এই আয়াতটির গুরুত্ব অত্যাধিক বেশী।এ সুরার শুরুতে আল্লাহ বলেন, শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে, ।শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর, শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর, অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। [শামসঃ১-১০] তাহলে এখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শপথের মাধ্যমে এই দৈহিক এবং আত্মিক পবিত্রতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।আল্লাহ পাক বলছেন, হে চাদরাবৃত।উঠুন, সতর্ক করুন। আপন পালনকর্তার মাহাত্ন্য ঘোষনা করুন,।আপন পোশাক পবিত্র করুন। এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। [মুদাচ্ছিরঃ১-৫] এগুলো এজন্য পরিচ্ছনে থাকে।হাদীসে পবিত্রতার গুরুত্বের কতাহ তুলে ধরা হয়েছে।রাসূল(সাঃ) বলেন, আল্লাহ নিজেও পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতাকে ভালবাসেন। আবার রাসূল(সাঃ) এ কথাও বলেছেন যে, পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধাংশ। আবার তিনি একথাও বলেছেন যে, যখন কুকুর তোমাদের লালা দেয় তখন ঐ জায়গাটি সাতবার ধুবে।সর্বশেষ মাটি দিয়ে ধুবে। তাহলে এখানে ছয়বার পানি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করার পর একবার যদি মাটি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হয় তাহলে তার ভিতর যেই জীবানু থাকার কথা তা আর থাকবে না।আর এই মাটিকে যদি আমরা দুষিত করি তাহলে কি করে আমরা কি করে মাটি ব্যবহার করব।রাসূল(সাঃ) এই দুআ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকাল হুদা অত্তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা। এই আফাফার দ্বারা চারিত্রিক পবিত্রতা এবং এবং দৈহিক পবিত্রতা উভয়ের কতাহ বলা হয়েছে।আরও অসংখ্য হাদীসের দ্বারা তিনি পবিত্রতার কথা বলেছেন।এখন যদি একথা বলা হয় যে, পানি পবিত্র রাখা আমাদের একটা দায়িত্ব।তাহলে মানুষ তা গুরুত্বের সাথে করবে।তানাহলে করবে না।
বায়ু দুষণ রোধ ইসলাম
মানুষ প্রায় ৪০ কেজি বাতাস বহন করে।বায়ু পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রত্যেক জীব-জন্তু গ্রহণ করে থাকে।একজন মানুষ দিনে প্রায় ১৬।৫ কেজি বাতাস গ্রহণ করে।প্রতি ৪ সেকেন্ডে একবার, এক মিনিটে ১৬ বার, ঘণ্টায় ১৬০ বার, দিনে ২৩০৪০ বার এবং বছরের ৮৪০৯৬০০ বার।ইহা ছাড়া কোন জীবের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে থাকতে পারত না।বায়ুর ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়,
আল্লাহ্ই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। [ফাতিরঃ৯]
তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে [আরাফঃ৫৭]
রাসূল(সাঃ) বলেন, তোমরা বায়ুকে অভিশাপ দিও না।কারণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা।আর যে অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য নয় তার উপর অভিশাপ দেওয়া হলে তা নিজের উপর বর্তাবে। [তিরমিযী]
হয়েছে।উবাই ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন্, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।যদি তার ভিতর কোন খারাপ কিছু থাকে তবে তা থেকে পানাহ চাও আর ভাল কিছু থকলে তার জন্য কল্যাণ কামনা কর।
বায়ু দূষন রোধে ইসলাম বিভিন্নভাবে তাগিদ দিয়েছে।
১. বায়ুত অনিষ্টতা থেকে পানাহা চাওয়াঃ বায়ুতে যত ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ আছে তা থেকে পানাহা চাওয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেক রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।মুসলিম শরীফে হাদীস এসেছে যখন বায়ু প্রবাহিত হত তখন মহানবী (সাঃ) এই দুআ করতেন যে, বায়ুর ভিতর যা উত্তম তা আমি চাই আর যা ক্ষতিকর দিক তা থেকে পানাহা চাই। যখন মানুষ এরকম বায়ু নিয়ে গবেষণা শুরু করে নাই ঐ সময় এমন দুআ সত্যি খুব উৎসাহব্যঞ্জক।বায়ুর ক্ষতিকর দিকে থেকে পানাহা চাওয়া হল এবং উত্তম দিকগুলোর জন্য দুআ করা হল।পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো অর্থাৎ সীসা,ক্যাডিয়াম,কার্বন মনোক্সাইডের ক্ষতিকর দিকেগুলো থেকে পানাহা চাওয়া হল।তাহলে বাতাসের ভিতর এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান আছে যা মানুষের সাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।যার দ্বারা সে সহজে জীবন-ধারন করতে পারবে না।আর সেই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রাসূল(সাঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে।এ বক্তব্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।বাতাসে যে ক্ষতিকর দিক আছে তা এই হাদীসের দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে।আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম যে বাতাসের ভিতর ক্ষতিকর প্রভাব বিরাজমান।এই সময় কেউ সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে নাই।বাতাসের ভিতর কল্যাণকর দিক আছে এবং অকল্যাণকর দিক আছে তা বুঝানো হয়েছে।উবাই ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন্, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।যদি তার ভিতর কোন খারাপ কিছু থাকে তবে তা থেকে পানাহ চাও আর ভাল কিছু থকলে তার জন্য কল্যাণ কামনা কর। এখন আমাদের এই বিষয়টি গবেষণা করা উচিৎ যে বাতাসের ভিতর কত অকল্যাণকর জিনিস আছে।তা আমাদের এই গবেষণায় প্রমাণিত।তাহলে বাতাসের ভিতর যেসকল খারাপ দিক আছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে আবার সেই সাথে নিজেকেও তা থেকে মুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ, ইসলাম বায়ু দুষন রোধ করার জন্য বিশেষ কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে।এখন আমাদেরকে পরীক্ষা গবেষণা করে বের করতে হবে যে বাতাসের ভিতর কি কি ক্ষতিকর দিক আছে আর তা থেকে কীভাবে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়।তারপর আমরা দেখি যে, মুহাম্মদ(সাঃ) যখন হিজরত করেন তখন মুহাম্মদ(সাঃ) এর বাসা চারদিকে ঘিরে রেখেছিল কাফিরগণ।তিনি যখন বালি নিক্ষেপ করেছিলেন তখন তাদের চোখ একেবারে স্তিমিত হয়ে যায় যার দরুন তারা চোখে কিছুই দেখতে পায় নাই।তাহলে ঐ বাতাসের ভিতর নিশ্চয় এমন কোন খারাপ উপাদান ছিল যা তাদের জন্য ক্ষতিকর ছিল।
২. ধূমপান না করার দ্বারাঃ ইসলাম মানুষকে ধূমপান না করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছে।একটি মানুষ ধূমপান করছে,আবার কেউ গাড়ী থেকে কালো ধোঁয়া নির্গমন করছে। কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে মুসলিম হয়ে থাকে তাহলে তার দ্বারা এসকল খারাপ কাজ হতে পারে না।কেউ যদি মুমিন মুসলিম হয় তাহলে সে চিন্তা করবে যে, আমি যদি সিগারেট খাই তাহলে আমার দ্বারা অনেক মুসলিম ভাই কষ্ট পাবে সেই ই মনে করে সিগারেট খাবে না।আর যদি সে মুমিন না হয় তাহলে তা সে করবে।এই সিগারেটকে মাকরুহ বলা হলেও তা দ্বারা তিনটি হারাম হয় যা হল ১. অন্যকে কষ্ট দেওয়া, ২. অপব্যয়,  ৩. নিজের ক্ষতি হয়। তাহলে যে সিগারেট খায় সে যে একজন মহাপাপী তাতে কোন সন্দেহ নাই।সে জাহান্নামী হবে।কারণ সে নিশ্চিত মানুষের ক্ষতি করছে।ইসলাম কিন্তু এভাবে করে বাতাস দুষিত মুক্ত করতে বলে। ইসলাম এ আরও বলা হয়েছে,ঐ ব্যক্তি মুসলিম নয় যার হাত ও মুখ থেকে অন্য কোন মুসলিম নিরাপদ নয়।
৩. কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মধ্য দিয়েঃ রাস্তাঘাটে যদি কোন কষ্টদায়ক বস্তু থাকে তাহলে তা সরানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণ রোধ করা যায় যা থেকে বায়ু দূষিত হতে পারে। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর হল রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।
৪. মাটিতে দাফন করাঃ কেউ যখন মারা যায় তখন তাকে ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে কবর দিতে বলে যাতে করে পরিবেশের কোন ধরনের দূষণ না হয়। কুরআন পাঠ করলে আমরা আরেকটি বিষয় জানতে পারি যে, যে জিনিসটা পচে যায় তা মরে যাওয়ার পর মাটিতে পুতে ফেলতে হয়।আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি যে, কাবিল যখন হাবিল্অকে হত্যা করে তখন তখন দুটি কাক সেখানে আসে আর তাদের একজন আরেকজনকে হত্যা করে বালি দেওয়ার মাধ্যমে হাবিলকে ঢেকে ফেলা হয়।তাহলে আমাদের কুরআন এই নির্দেশ দিচ্ছে যে্‌কেউ মারা গেলে তাকে মাটি দিতে হয়।কিন্তু আমরা মুসলিম হয়েও তা বুঝি না।কিন্তা তা যখন বিজ্ঞান বলছে এই কথা বলতে তখন আমরা মানছি।
৫. আগুন নিভানোর মাধ্যমেঃ তারপর হাদীসে বলা হয়েছে যে, তোমরা ঘুমানোর আগে তোমরা তোমাদের আগুন নিভিয়ে দাও। এই হাদীসের দ্বারা বায়ু দুষনের রোধের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।কারন আগুন জ্বালানো থাকলে সেখানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে।আর অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে।এতে করে বদ্ব ঘরে জীবন-যাপনকারী ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।তাই তিনি তা নিভাতে বলেছেন।হাদীসে আরও বলা হয়েছে আগুন হল তোমাদের শত্রু।তাই তোমরা ঘুমানোর আগে তা নিভিয়ে ফেল। তাছাড়া আগুন পরিবেশে কার্বনের পরিমান বাড়ায় আর অক্সিজেনের পরিমাণ কমায়।তাই ঘুমানোর আগে যে আগুন নিভাতে হয় তার দ্বারা পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা হয়।
৬. হাঁচি দানকালে মুখে হাতঃ রাসূল(সাঃ) হাচি কিংবা হাই তোলার সময় মুখে হাত দিতে বলেন যার দ্বারা ঐ হাচিদানকারী ব্যক্তি কিংবা হাইতোলাকারীর ব্যক্তির জীবানু অন্যের ভিতর প্রবেশ না করে।
৭. দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু আহার না করাঃ তারপর আমাদের রাসূল(সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য খায় সে যেন ঐ অবস্থায় মসজিদে না আসে। এর ভিতর কিন্তু পরিবেশকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।কারন এর দ্বারা অন্য মানুষের ক্ষতি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
শব্দ দূষণ রোধে ইসলাম
মানুষ বর্তমানে বিভিন্নভাবে শব্দ দুষন করছে।তা দূর করার জন্য ইসলাম কিছু বিধান দিয়েছে যেমনঃ
(ক) নিম্নস্বরে কথা বলার দ্বারাঃ যখন কী উঁচু গলায় কথা না বলে নিম্নস্বরে কথা বলবে তখন তার দ্বারা পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে রক্ষা পাবে।আল্লাহ বলেন,
আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতউভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন। [বনী-ঈসরাইলঃ১১০]
মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। [হুজুরাতঃ২]
(খ) নীরবে যিকিরঃ যখন কোন একজন মুমিন বান্দা নিম্ন কণ্ঠে যিকির করতে থাকবে তাহলে এর দ্বারা পরিবেশ দুষন অনেকাংশে হ্রাস্ব পাবে। আল্লাহ বলেন,
তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। [আরাফঃ৫৫]
রাসূল(সাঃ) বলেন, নীরবে যিকির উত্তম
(গ)নীরবে দুআঃ ইসলাম সর্বদা মানুষকে নীরবে দুআ করতে বলে যার দ্বারা শব্দ দূষণ অনেকাংশ হ্রাস্ব পায়। এ ব্যাপারে রাসূল(সাঃ) বলেন,
নীরবে দুয়া জোড়ে দুয়া হতে উত্তম
(ঘ) নীরবে কুরআন পাঠঃ চুপি চুপি কুরআন তিলওয়াতের দ্বারা শব্দ দূষণ অনেকাংশে হ্রাস্ব পায়। হাদীসে বলা হয়েছে,
তোমরা কুরআন পাঠের সময় একে অপরের চেয়ে কন্ঠস্বরকে উঁচু করবে না।
উপরোক্ত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করলে একজন মুসলিম শব্দ দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।
উপসংহার

পরিবেশ দূষণ রোধে ইসলানের ভূমিকা ব্যাপক,কেউ ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী জীবন-যাপন করলে পরিবেশ দূষণ রোধ করা অনেকটা সম্ভবপর হবে।

প্রশ্নঃ ক্লোনিং এর ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি লিখ।


বর্তমান বিশ্বে ক্লোনিং একটি বড়ই আলোচিত বিষয়। কিন্তু এই ক্লোনিং এর উপর আমাদের বিশেষ কোন জ্ঞান নেই।এখন এই ক্লোনিং সম্পর্কে আমাদের সম্যক অবহিত হওয়া প্রয়োজন।ক্লোনিং হল একটি শাখা হতে অন্য বৃক্ষে তৈরী করা কিংবা, একটি অবিকল প্রতিচ্ছবি তৈরী করা।অর্থাৎ, সামান্য মৌলিকত্বের একটি বস্তু অন্য একটি পূর্ণ বস্তুত্তে পরিণত করার নাম হল ক্লোনিং।ক্লোনিং তিন ধরনের হতে পারে। একটি হল স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া।এটি ফলজ,ফুল,উদ্ভিদজগতে ঘটে থাকে এবং এর দ্বারা বংশের বিস্তার ঘটে থাকে।অপর একটি হল মানুষ তৈরী করা। একটি মানুষের টিস্যু থেকে আরেকটি মানুষকে তৈরী করা হল আরেকধরনের ক্লোনিং।আরেকটি হল মানুষের কোন অংগ থেকে অন্য কোন অংগ তৈরী করা।গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, একটি মানুষের শরীরে প্রায় ২১১ টি কোষ আছে।এগুলো যখন গবেষণাগারে প্রক্রিয়াজাত হয় তখন তা বৃদ্বি পেতে থাকে।যদি এর অবস্থা এমন হয় যে, ২১১টির ভিতর ২১০টির বৃদ্বিকরণ বন্ধ করা হতে থাকে আর বাকিগুলো বৃদ্বি করা হতে থাকে তাহলে সেটা থেকে অন্য কোন অংগ তৈরী করা যাবে।কারও যদি হাত ভেঙ্গে যায় তাহলে সেই হাত থেকে আরেকটি হাত তৈরী করে লাগিয়ে দেওয়া যায় এই প্রক্রিয়ায়।আরেকটি হল অজৈব প্রক্রিয়া মানুষ জন্ম দেওয়া।এটি অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে।যেমন টেষ্টটিউব বেবী যে জন্ম নেয় তা এই প্রক্রিয়ায় সঙ্ঘটিত হয়ে থাকে।যখন কোন দাম্পত্য জীবনে বাচ্চা জন্ম নেয় না তখন তারা বুঝে উঠতে পারে না যে তারা কি করবে?তখন তারা এই প্রক্রিয়ার দ্বারা মানব সন্তান জন্মদান করে থাকে।বৈজ্ঞানিকগণ পুরুষের কাছ থেকে শুক্রাণু নিয়ে তা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উন্নতি করে তা স্ত্রীর বাচ্চাদানীতে নিক্ষেপ করে আর সেখান থেকে বাচ্চার জন্ম হয়। এর অনেকে মা-বাবা হতে পেরেছে।আরেকটি প্রক্রিয়া হল এমন যে, বাচ্চাদানী ভাড়া করা হয়।এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর টিস্যু কালচারকে একত্রিত করা হয় আর তা নিক্ষেপ করা হয় আরেকজনের গর্ভে।পরে সেই নারীর গর্ভে সন্তান জন্ম হয়।আর সেই নারীকে কিছু টাকা দেওয়া হয়।এগুলো হল ক্লোনিং  এর অংশবিশেষ।মানুষ মেনে নিয়েছে যে ক্লোনিং অন্য যেকোন পশু-পাখির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।তার ভিতর ইজমায়ে ফিলী সঙ্ঘটিত হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভিতর তা কি হবে? মানব ক্লোনিং এর ব্যাপারে তেমন কোন চিন্তা-ভাবনা শুরু করে নাই। আল্লাহ বলেনঃ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً অর্থাৎ, হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে। আর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। আর তাদের দু'জনের মাধ্যমে অনেক পুরুষ ও নারীর প্রসার ঘটিয়েছেন। (সুরা নিসাঃ ১) এটা আমরা সকলে জানি যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম যেই মানুষকে সৃষ্টি করলেন তিনি হলেন আদম(আঃ)। সেই আদম (আঃ) থেকে হাওয়া(আঃ) সৃষ্টি হলেন।কিন্তু আদম (আঃ) থেকে হাওয়া (আঃ) কীভাবে আসলেন তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তাফসীর বিরাজমান আছে।কেউ বলেছেন আদম(আঃ) যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন তা বাম পায়ের পাজর থেকে হাওয়া(আঃ)কে সৃষ্টি করা হয়।আবার কেউ বা বলেছেন যে, আদম(আঃ) কে যখন সৃষ্টি করা হয় তার উচ্ছিষ্ট অংশ থেকে হাওয়ার সৃষ্টি হয়।আবার ইসরাইলী রিওয়াত থেকে জানা যায় যে,আদম(আঃ) এর ঘাম থেকে হাওয়া(আঃ) সৃষ্টি করা হয়েছে।আবার কেউ বলেছেন যে, আদম (আঃ)কে যভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তেমনিভাবে হাওয়া(আঃ)কে একই প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।কিন্তু তাদের মধ্যকার এই সম্পর্ক হল শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক।মানুষকে কীভাবে সৃষ্টি করা হল তা আমাদের অবহিত হওয়া দরকার।আল্লাহ বলেন, এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ কত কল্যাণময়  [মুমিনুনঃ১৪] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে,আল্লাহ সৃষ্টিকর্তাদের ভিতর অতি সুন্দর।এই আয়াতে মনে করা হচ্ছে যে, আল্লহ ক্লোনিং কারোদের প্রশংসা করেছেন।আল্লাহ পাক যেই সুনিপুণভাবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার দ্বারা কি ক্লোনিং কারীরা পারবে কিনা তা বুঝানো হয়েছে।মানুষ  এ আয়াতের দ্বারা এটি বুঝানো হয়েছে ক্লোনিং কারীরা যদি চেষ্টা করে আরেকটি মানুষ তৈরী করতে তাহলে তা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে তুলনা হতে পারে না।তার সৃষ্টির মত এত সুন্দর হবে না।এখন এখন মারিয়াম(আঃ) থেকে যেমন অজৈব প্রক্রিয়ায় ঈসাকে সৃষ্টি করা হল তাহলে কি ক্লোনিং জায়েয হতে পারে কিনা তা পর্যালোচনা করা উচিৎ।

ইসলাম বিজ্ঞানচর্চাকে জায়েয ঘোষণা করেছে।তবে সেই বিজ্ঞানের মধ্যে ভাল-মন্দ নিরুপণ করতে হবে।ইসলাম কেবল মাত্র ঐ বিজ্ঞানকে সমর্থন করে যেই বিজ্ঞানের ভিতর নৈতিকতা আছে।যেই বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিজ্ঞান গবেষণা নেই তা ইসলামে সমর্থনযোগ্য নয়। এখন আমরা যদি ক্লোনিং এর কথায় আসি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ পাক মানুষকেও অজৈব পদ্বতিতে সৃষ্টি করেছেন যেমনটি আদম (আঃ) এবং ঈসা (আঃ)কে সৃষ্টি করেছেন। এখন মানুষ যা ক্লোন। করে করছে তা একটি অংশবিশেষই শুধুমাত্র।আল্লাহ পাক একথা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমি মানুষকে অতি উত্তমরুপে গঠন করেছি। [তীনঃ৫] তাহলে আল্লাহ পাক হল মানুষের সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি দানকারী। মানুষ যদি ক্লোনিং পদ্বতিকে কাজে লাগিয়ে আরেকজন মানুষ তৈরী করার চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে তা আল্লাহর  তৈরী করার মানুষের মত এত সুন্দর হবে না। এখন যদি ডি.এন.এ ক্লোনিং এর কথা বলা হয় তাহলে তা অহরহ হচ্ছে।এর মাধ্যমে আমরা অনেক ফল-মূল,শাক-সবজি এবং গরু-ছাগল ইত্যাদি উৎপাদন করা হয় তাহলে তা খাওয়া জায়েয হবে।তাতে কোন সমস্যা নেই। এখন একটা আছে থিরাপেডিক এবং আরেকটি হল রিপ্রোডাক্টিক ক্লোনিং।   



ক্লোনিং পদ্ধতি ও ইসলাম 
কয়েকদিন আগে জনৈক ব্যক্তি ক্লোনিং পদ্ধতি সম্বন্ধে ইসলামের দৃষ্টি ভংগী জানতে চেয়েছিলেন। আজ এ সম্বন্ধে কিছুটা আলোচনা করতে চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। প্রথমেই ক্লোনিং পদ্ধতির স্বরুপ নিয়ে আলোচনা করি।

স্বরুপঃ অনেকেই এ সম্বন্ধে জানেন তারপরেও এ সম্বন্ধে যারা জানেন না তাদের জন্য কিছুটা আলোচনা করা যাক। ক্লোনিং হচ্ছে পুরুষ ও নারীর দৈহিক মিলন ব্যতিত সম্পূর্ণ ভিন্ন সিস্টেমে সন্তান উৎপন্ন করার একটা আধুনিক সিস্টেম । সেটা হল- কোন মানুষের দেহ থেকে কোষ নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করার পর তা কোন মহিলার গর্ভে রাখার নির্দিষ্ট সময় পর মহিলা বাচ্চা প্রসব করবে। এতে পুরুষ নারীর দৈহিক মিলনের প্রয়োজন নেই। এর কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। ১। এক মহিলার শরীর থেকে কোষ নিয়ে অন্য মহিলার গর্ভে রাখা। ২। কোন মহিলার নিজের শরীর থেকে কোষ নিয়ে তার গর্ভে রাখা। এখানে অন্য পুরুষ তো দুরের কথা অন্য কোন মহিলার ও দরকার হচ্ছে না। ৩। অন্য কোন পুরুষের শরীর থেকে কোষ নিয়ে মহিলার গর্ভে স্থাপন। ৪। স্বামীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে স্ত্রীর গর্ভে স্থাপন।

ক্লোনিং-এর ইতিহাসঃ ১৯৯৭ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী সারা বিশ্বকে কাপিয়ে তুলল একটি ঘটনা। সেটা হচ্ছে স্কটল্যান্ডে ক্লোনিং এ বিজ্ঞানীদের সফলতা। তারা একটা ভেড়ীর স্তন থেকে কোষ নিয়ে ছয়দিন পর্যন্ত ল্যাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়ে আরেকটি ভেড়ীর গর্ভে স্থাপন করার পর গর্ভের মেয়াদ শেষে উক্ত ভেড়ী বাচ্চা জন্ম দেয় যার নাম দেয়া হয় "ডলি"। এরপর বিভিন্ন সময় ইদুর,গরু, খরগোশ ও অন্যান্য প্রাণির ক্লোনিং এর উপর সফল পরীক্ষা চালানো হয়। অনুরুপ ভাবে ২০০২ সালের জানুয়ারীতে একটি বিড়ালের জন্ম হয়। একটি সুত্র থেকে জানা যায়, ২৭০ বার পরীক্ষা চালানোর পর বিজ্ঞানীরা "ডলি"র জন্মের মাধ্যমে তাদের সফলতার মুখ দেখেন। এ ছাড়াও ২০০৩ সালের ২৬শে জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় আমেরিকার বাইরে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে বিশ্বের প্রথম ক্লোনিং মানব শিশুর জন্ম হয়।তার নাম দেয়া হয় "হাওয়া" তবে, স্থানটার নাম প্রকাশ করা হয় নি। ক্লোনিং মানব শিশুর জন্য বিজ্ঞানীরা ১০ বার পরীক্ষা চালিয়ে সফলতার মুখ দেখেন।

ক্লোনিং সন্তানের বৈশিষ্ট্যঃ ক্লোনিং সিস্টেমে জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষনীয়। ১। পুরুষের থেকে কোষ নিলে সন্তান অবশ্যই পুরুষ হবে। এবং নারীর শরীর থেকে কোষ নিলে সন্তান নারী হবে। ২। সন্তানের চেহারা সুরত ও বংশগত অন্যান্য গুণাবলীতে যার থেকে কোষ নেয়া হয়েছে পুরোপুরি তার মত হবে। সে যেন উক্ত ব্যক্তির অবিকল ফটোকপি।

এবার আসুন! আমরা দেখে নিই ইসলাম এগুলো সম্বন্ধে কি বলে? ইসলামের বিধান সর্বকালের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। কুরআন ও হাদীসে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো কুরআন নাযিলের সমসাময়িক যুগে বর্তমান ছিল তার সমাধান দিয়েছে বা ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে তার সমাধান দেয়া হয়েছে বা যেগুলো পরবর্তীতে হবে তার সমাধানের জন্য কিছু কিছু সূত্র দিয়ে দিয়েছে যার মাধ্যমে সর্বদা যে কোন বিষয়ের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই সহজ হয়। সুত্র দ্বারা বিচার করলে সর্বদা কোন কিছুর লেটেস্ট সমাধান পাওয়া যায়। ফলে, প্রাচীন যুগের জন্য এটা প্রযোজ্য ছিল এখন আর নেই এটা বলার কোন উপায় থাকে না।

প্রথম পদ্ধতিঃ এক মহিলার গর্ভ থেকে কোষ নিয়ে অপর মহিলার গর্ভে সন্তান উৎপাদন বৈধ হবে না । দলীলঃ ১। ইসলামী শরীয়ত সম্মত পন্থায় বিভিন্ন শর্ত ও যথাযথ নিয়ম সাপেক্ষে বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সংসার করার মাধ্যমে সন্তান হওয়া উচিত। আল্লাহ বলেনঃ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً অর্থাৎ, হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে। আর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। আর তাদের দু'জনের মাধ্যমে অনেক পুরুষ ও নারীর প্রসার ঘটিয়েছেন। (সুরা নিসাঃ ১) * وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً অর্থাৎ, আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসুল পাঠিয়েছি আর তাদের জন্য জোড়া ও বংশ সৃষ্টি করেছি। (সুরা রা'দঃ ৩৮) * وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَنِينَ وَحَفَدَةً অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন। এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পূত্র ও পৌত্রাদি দান করেছেন। (সুরা নাহলঃ ৭২)

ক্লোনিং পদ্ধতিটা বৈবাহিক সম্পর্কের আওতায় হয় না। উপরোক্ত (১ নং পদ্ধতিতে) দুই মহিলার কেহই অপরের স্বামী হতে পারে না। আর দুই মহিলার ভিতরকার বিবাহ ও দৈহিক সম্পর্ক অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ২। দুই মহিলার মধ্যকার দৈহিক সম্পর্ক আরবীতে যাকে বলে "সিহাক" হারাম। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে তা হারাম। আবু দাউদ শরীফে এর নিষিদ্ধতা সম্বন্ধে একটি হাদীস এসেছে। এছাড়াও "ইশারাতুন নাস" তথা কুরআন হাদীসের ইংগিত দ্বারা এটার নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হয়েছে। ৩। সব মানুষের চাই সে পুরুষ হোক বা মহিলা কিছু চাহিদা আছে তন্মধ্যে জৈবিক চাহিদা অন্যতম যে চাহিদা মেটানো তার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়। সেটা বিবাহের মাধ্যমে হালাল পন্থায় বা বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ পন্থায় হতে পারে। এ জন্য আমরা দেখি ইসলাম বৈরাগ্যতাকে হারাম করেছে। আল্লাহ তায়ালা উন্নত ও সুন্দর পন্থায় বিবাহের মাধ্যমে এ চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা রেখেছেন। মহিলা প্রাকৃতিক সিস্টেম ছাড়া ক্লোনিং এর মাধ্যমে সন্তান নিলে তার উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাটি পুরণ হল না। তার স্বামী থাকলে বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে সন্তান হত। এটা সমাজে বিবাহের পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। যদি এটা এভাবে চলতে দেয়া হয় তাহলে সমাজে তা রেওয়াযে পরিণত হয়ে যেতে পারে। যা সমাজের পারিবারিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই, সে পথটা বন্ধ করে দিতে হবে। ইসলামী শরীয়তের একটা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বা কায়েদা হচ্ছে- "যদি কোন কাজ অন্য কোন খারাপের দিকে টেনে নিয়ে যায় তাহলে তাও বৈধ হবে না"। এ সূত্র অনুযায়ী ক্লোনিং সিস্টেম ও বৈধ নয়। ৪। এ সিস্টেমে জন্ম নিবে কন্যা সন্তান, যার কোন পিতা নেই। এ শিশু এমনভাবে বেড়ে উঠবে যার কোন পিতা নেই । এটা তার জন্য মনোকষ্টের কারণ হবে। ইসলাম যেকোন ধরণের কষ্ট ও অনিষ্টতাকে নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের সমাজে আমরা অহরহ দেখে থাকি যে, যারা এতিম অবস্থায় দুনিয়ায় আসে বা যাদের ছোট বয়সে পিতামাতা মারা যায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনে মনে অত্যন্ত কষ্ট পেয়ে থাকে। তেমনিভাবে যাদেরকে মানুষ কুড়িয়ে পায় তাদেরও একই অবস্থা। শিশুরা যে সমস্ত কারণে মনোকষ্ট পায় তন্মধ্যে রয়েছে মানসিক ও শারিরীক কষ্ট। মানসিক কষ্টের মধ্যে রয়েছে যেমন পিতামাতার মধ্যকার শুধুমাত্র কোন একজনের সাথে থাকা হোক তাদের একজন মারা যাওয়ার কারণে বা তালাক দেয়ার কারণে ইত্যাদি। ক্লোনিং সিস্টেমে জন্ম নেয়া শিশুও তেমনি সমাজের অন্যান্য সাধারণ মেয়ের মত থাকতে পারে না। সে এমন ভাবে সমাজে বেড়ে ওঠে যার কোন পিতা,চাচা,দাদা কেউ নেই। এ ধরণের মেয়ের বিবাহের সময় কেউ এগিয়ে আসবে না। এমন যুবক কে আছে যে পিতা-চাচা বিহীন এমন মেয়েকে বিবাহ করতে এগিয়ে আসবে? এর বিবাহ হলে তার সন্তানদের নানা থাকবে না। এছাড়াও প্রচুর সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। ৫।রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ অর্থাৎ, যা সন্দেহ সৃষ্টি করে তা ছেড়ে দিয়ে যা সন্দেহ সৃষ্টি করে না তার দিকে যাও।(বুখারী,তিরমীজী,আহমদ)

বিজ্ঞানীরা এভাবে সন্তান সুস্থ হয়ে জন্মাবে কিনা তা বলেন নি। এমনও হতে পারে যে, সন্তানের শারিরীক ত্রুটি নিয়ে জন্ম হবে। গৃহীত কোষের বয়সানুপাতে তার বয়স কম হতে পারে। কিংবা, সন্তানের অভ্যাস অস্বাভাবিক হতে পারে। তাই,এগুলো থেকে সর্বদা আমাদের দূরে থাকা উচিত। আমাদের উচিত নয় মানুষকে শুধুমাত্র গবেষণার সামগ্রী হিসেবে গ্রহণ করা। ৬। একটি সুত্র পাওয়া যায় এগুলো নিয়ে যে, "যার অধিকার আছে কোন মহিলার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার শুধুমাত্র তারই অধিকার আছে স্ত্রীর গর্ভকে ব্যস্ত রাখার"। আর কোন নারীর জন্য বৈধ নয় যে, সে অপর কোন নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক রাখবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ কোন মহিলার নিজের শরীর থেকে কোষ নিয়ে তারই গর্ভে প্রতিস্থাপন করে সন্তান উৎপাদনের সিস্টেমটা ও বৈধ হবে না।

দলীলঃ উপরের ২য় ও ৬ষ্ঠ নং ছাড়া বাকীগুলো এর দলীল হিসেবে পরিগণিত হবে।

তৃতীয় পদ্ধতিঃ স্বামী ব্যতিত অন্য পুরুষের শরীর থেকে কোষ নিয়ে মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করে সন্তান উৎপাদন এটাও বৈধ নয়। কেননা, এটা সরাসরি ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের কাছাকাছি পর্যায়ের। এটা হলে সমাজে বংশের মিশ্রনের দ্বার খুলে দেয় ব্যভিচারের মত। কে কার সন্তান তা জানার কোন সুরত অবশিষ্ট থাকবে না। সন্তান হবে শুধুমাত্র বৈধ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। এগুলো চিন্তা-গবেষণা করা ছাড়াই বুঝা যায়।

চতুর্থ পদ্ধতিঃ  নিজের স্বামীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে সন্তান উৎপাদন করার বৈধাবৈধের বিষয়টা চিন্তা-গবেষণার দাবী রাখে। কেননা, এখানে ব্যাপারটা ব্যভিচারের সাথে যুক্ত নয়। ইসলামিক গবেষকগণ এই পদ্ধতির বৈধাবৈধের ব্যাপারটিকে আপাতত স্থগিত রেখেছেন বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফলের অপেক্ষায়। বিজ্ঞানীরা যদি গবেষণা করে ফলাফলে আসেন যে, উপরোক্ত সমস্ত প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে সন্তান মুক্ত থাকবে তাহলে কয়েকটি শর্ত-সাপেক্ষে তা বৈধ হবে। শর্তগুলো হল- ১। সন্তানেরা দ্বিতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত কোন ধরণের অস্বাভাবিক ক্ষতির সন্মুখিন হতে পারবে না। মায়েরাও তদ্রুপ ক্ষতির সন্মুখীন হবে না। মায়েদের ক্ষতির মধ্যকার একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে বারবার গর্ভপাত ঘটানো। যেমনটা ঘটেছে প্রথম ক্লোনিং "ডলি"র ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ২৭০ বার ব্যর্থ পরীক্ষার পর সফল হয় বলে জানা যায়। ২। স্বামী হবে বন্ধ্যা। অন্য কোন প্রকারেই তার সন্তান হওয়া সম্ভব নয়। ৩। শুধুমাত্র একটি শিশুর ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া যায়। কেননা, এটা জরুরী অবস্থার সাধারণ অনুমতি। জরুরী অবস্থার অনুমতি সর্বদা অব্যাহত থাকে না।এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, পিতার মত সন্তানও বন্ধ্যা হতে পারে। যদি তা না হয়(গবেষণার উপর নির্ভর করবে) তাহলে এ শর্ত প্রযোজ্য নয়।


তবে, কিছু কিছু ইসলামিক স্কলার এটাকে নিষেধ করে থাকেন। তাদের দলীল সমুহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

কিছু সংখ্যক জীব বিজ্ঞানীর মতে এ সিস্টেমে সন্তান হলে সে হবে উক্ত স্বামীর জমজ ভাই। কারণ, ৪৬ ক্রোমোজমের মধ্যকার ২৩ টি আসে স্বামী থেকে বাকী ২৩ টি স্ত্রী থেকে। কিন্তু, এ সিস্টেমে তা হচ্ছে না বরং স্বামীর শরীরের ৪৬ টি ক্রোমোজমই কপি হয়ে অনুলিপি হিসেবে এখানে এসেছে যা উক্ত স্বামীর পিতামাতা থেকে এসেছে। এখানে উল্লেখিত স্ত্রী লোকের (যার গর্ভে রাখা হবে) কোন ক্রোমোজম এখানে প্রভাব ফেলে নি। সুতরাং, শিশু উক্ত স্বামীর ছেলে হবে না বরং ভাই বিবেচিত হবে। সুতরাং, এ পদ্ধতিও বৈধ নয়। তবে, জমজ ভাই বিবেচিত হওয়া নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন কেননা, তারা দুজনে এক গর্ভ থেকে আসে নি। সুতরাং, জমজ হবে কিভাবে?

ক্লোনিংকে বিশ্ববাসী কিভাবে নিয়েছেঃ ১৯৯৮ সালের ২রা জানুয়ারী ইউরোপের ১৯ টি দেশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আন্তর্জাতিক সন্মেলনে ক্লোনিং নিষিদ্ধের ব্যাপারে একমত হয়। তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, মৃত বা জীবিত কোন মানুষের ক্লোনিং করার যে কোন পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হল। তবে, বৃটেন ও জার্মানী এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। বৃটেনের বক্তব্য ছিল যে, এটা খুবই কঠোর আইন পক্ষান্তরে, জার্মানীর দাবি ছিল যে, এটা অত্যন্ত দুর্বল সিদ্ধান্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট "বিল ক্লিংটন" ঘোষণা করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন মানব ক্লোনিং এর গবেষণার জন্য কোন অর্থ ছাড় দেবে না। এবং বিজ্ঞানীদের থেকে এ অংগনে গবেষণা করাকে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এ ছাড়াও ইতালি সরকার মানব ক্লোনিং বা যে কোন প্রাণির ক্লোনিং কে শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করে। ফ্রান্স সরকার এ ধরণের গবেষনার চিন্তাও প্রত্যাখ্যানযোগ্য বলে জানিয়ে দেয়।


অন্যান্য প্রাণীর ক্লোনিং পদ্ধতিঃ অন্যান্য প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্লোনিং এ কোন সমস্যা নেই। যদি তা মানুষের উপকারে আসে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে শুধুমাত্র খেল তামাশার কাজে ব্যবহৃত না হয়। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছুকে মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরী করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ هو الذي خلق لكم ما في الأرض جميعاঅর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন (সুরা বাকারাঃ ২৯) অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا অর্থাৎ, আর তিনি আসমান ও জমীনের সবকিছুকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। (সুরা জাছিয়াহঃ ১৩)


অর্থাৎ পরিশেষে এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ক্লোনিং এর মন্দ দিকগুলোর ব্যাপারে ইসলাম কখনও নিরুৎসাহিত করে নাই। বরং ইসলাম মানবক্লোনিং তথা ক্লোনিং এর খারাপ দিকগুলোকে সর্বদা নিরুৎসাহিত করেছে আর তার ক্ষতিকর প্রভাব হতে মুক্ত থাকার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে।

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...