উমাইয়া খিলাফত ইসলামের প্রধান চারটি খিলাফতের মধ্যে দ্বিতীয় খিলাফত। এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফ্ফানের খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক সূচিত হয়। তিনি দীর্ঘদ...িন সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন। ফলে সিরিয়া উমাইয়াদের ক্ষমতার ভিত্তি হয়ে উঠে এবং দামেস্ক তাদের রাজধানী হয়। উমাইয়ারা মুসলিমদের বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখে। ককেসাস,ট্রান্সঅক্সানিয়া
পরোক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সুসম্পর্ক
পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল মনীষী তাদের স্বীয় যোগ্যতার বলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে আমিরে মুয়াবিয়া হলেন অন্যতম। যিনি শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টানত স্থাপন করেছিলেন। এ সকল অনুপম চরিত্রের সন্নিবেশের সমাবেশ ছিল তার জীবনে। কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া গোত্রে ৬০৬ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন উমাইয়া দলপতি এবং পবিত্র কাবার রক্ষক ইসলামের চরম দুশমন আবু সুফিয়ান। মাতা হৃদয়হীনা হিন্দা । ৬৩০ খৃস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তার পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে ইসলাম দর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন আজীবন। এ সমস্ত অসাধারণ গুণের জন্য রাসূল (সাঃ) তাকে বেশি ভালবাসতেন। যার ফলে মুয়াবিয়া ওহী লিখবার জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। পরে তার ভগ্নি উম্মে হাবিবার সাথে মহানবীর বিবাহ সম্পাদিত হলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাঁকে একবার বলেছিলেন, তুমি রাজ্যলাভ করলে জনসাধারণের মঙ্গল সাধন করিও।
অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর আপন শ্যালক হওয়ার সুবাদে মুআবিয়া(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিল যার ফলে মুআবিয়া(রাঃ) এর জন্য খিলাফত গ্রহণ করার পথ আরও সহজ হয়ে যাতে থাকে।
২. ইয়াজিদ ইবন আবী সুফিয়ান(রাঃ) ও মুআবিয়া(রাঃ) এর গভর্নর পদ লাভ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খিলাফতকালে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।এর আগে তাঁর ভ্রাতা ইয়াজীদ(রাঃ) সেখানকার সেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা শুরু হয়। কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র সিরিয়ার সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে সিরিয়াকে বায়জানটাইন আক্রমন হতে রক্ষা করতে সমর্থ হন। খলিফা ওসমানের সময় সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠনে করে দীপাঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ দখল করেন।আর তিনি যখন প্রথমে খলীফা হন, তিনি সিরিয়াবাসীদের সমর্থনের দরুন রাজধানী দামেশকে নিয়ে আসেন।
৩. উসমান(রাঃ) এর খিলাফত লাভ
হযরত উসমান(রাঃ) যখন উমর(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে ৬৪৪ খৃষ্টাব্দে খিলাফত লাভ করলেন তখন মদীনার খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। আর তখনই কেউ কেউ উসমান(রাঃ) এর অজান্তে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকে যার ফলে এই বিষয়াবলী উমাইয়াদের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করে তোলে। উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালে ওয়ালিদ ইবন উতবা কূফার, আবদুল্লাহ ইবন আমীর(রাঃ) মিসরের এবং সাদ ইবন আস(রাঃ)কে বসরার শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং মুআবিয়া(রাঃ) স্বপদে সিরিয়াতে বহাল থাকেন যা কিনা উমাইয়াদের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
৪. উসমান(রাঃ) এর হত্যাযজ্ঞ
হযরত উসমান(রাঃ) বিদ্রোহীদের হাতে ৬৫৬ খৃষ্টাব্দে নিহত হন। এরপরে থেকে মুসলিম বিশ্বে এক নতুন ধরনের অসন্তোষের অবস্থা সৃষ্টি হয়। যার ফলে তখন থেকেই তৎকালীন খলীফা তথা আলী(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের সাথে বিভিন্ন ধরনের দমন নীপিড়ণমূলক কার্যক্রম এর মাধ্যমে শুরু করে।হযরত ওসমানের হত্যাজনিত গোলযোগ সময় হতে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। সিফফিনের যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়। আর এতে করে মুআবিয়া(রাঃ) এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায় আর আলী(রাঃ) এর দলের ভিতর নতুন করে খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে আর পরে এই খারিজীরাই হযরত আলী(রাঃ)কে হত্যা করে।এরপরে তাঁর পুত্র ইমাম হাসান(রাঃ) খলীফা হলে পরে মুআবিয়া(রাঃ) তাঁকে পরাজিত করে সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে মুআবিয়া খিলাফত লাভ করেন এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর দক্ষতা
মুআবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে। তিনি ক্ষমতা লাভ করে কূফা থেকে দামেস্ককে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানীতে রূপান্তরিত করেন। যা করা অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব তা তিনি করে দেখিয়েছেন স্বীয় যোগ্যতা আর কূটনীতিক ক্ষমতাবলে। তবে একটা কথা থেকে যায় যে, তার আশেপাশের লোকদের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং তাদের থেকে কাজও আদায় করতে জানতেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমির মুআবিয়া ছিলেন ভাগ্যবান।
২. আলী(রাঃ) এর প্রশাসনিক দূর্বলতা
মুআবিয়া(রাঃ) দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সিরিয়াতে শাসন করার পর সেখানকার লোকদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। তাই তাদের সহায়তায় মুআবিয়া(রাঃ) একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে সক্ষম হন। অন্যদিকে আলী(রাঃ) তখন রাজধানী কূফাতে পরিবর্তন করে নিয়ে আসলেও সেখানকার লোকদের কোন ধরনের সমর্থন তিনি আদায় করতে সক্ষম হন নাই। না আলী(রাঃ) এই ধরনের সমর্থন পেয়েছিলেন না তাঁর পুত্র কারবালার যুদ্বের সময় তাদের সমর্থন পেয়েছিলেন। আর এই কারণেই উমাইয়ারা সহজেই সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
৩. আমর ইবনুল আস(রাঃ) এর দক্ষতা
একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আমর ইবনুল আসের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যতীত মুআবিয়া কিছুতেই উমাইয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমর সম্বন্ধ মূইর বলেন, ‘‘খিলাফতের পরিবর্তনের আমরের চেয়ে অপর কেহই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী, পরামর্শে ধূর্ত, কথায় ও কাজে রুক্ষ, নীতিজ্ঞানশূণ্য আমরের বুদ্ধি বলেই মুয়াবিয়া হযরত আলীর উপর বিজয়ী হন এবং পরিণামে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।’’
দুমাতুল জন্দল নামক স্থানে মূসা ইবন আশআরী(রাঃ) এর সাথে যে কূটনৈতিক চাল খেলেছিলেন আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।
৪. যিয়াদ ইবন সুমাইয়া এর সমর্থন
মুআবিয়া(রাঃ) এর শাসনকালে জিয়াদ ইবন সুমাইয়া অশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। জিয়াদ ছিলেন মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তান। তার মাতা ছিলেন তায়েফের একজন ভ্রষ্টা রমনী যার নাম ছিল সুমাইয়া নাম্নী ও আবু সুফিয়ানের উপপত্নী। কিন্তু আশ্চযের বিষয় হল, জন্ম নীচ পরিবেশ হলেও দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি মুসলিম ইতিহাসের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল'। এই প্রবাদের সত্যতা আমরা জিয়াদ ইবন আবিহর মধ্যে দেখতে পাই। তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর খিলাফতকালে বসরা ও ইসতাখরে শাসনকর্তার মর্যাদালাভ করেন। বুদ্ধিমত্তা, বাগ্নিতা ও কর্ম প্রতিভার জন্য সে যুগে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদরূপে পরিচিত ছিলেন। মুগারীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া জিয়াদকে একইসঙ্গে বসরা ও কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
৫. জনগণের সহায়তা
চারপাশের লোকদের সহযোগিতা না পেলে মুয়াবিয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে উমাইয়াদর সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন কঠিনতর ছিল। ঐতিহাসিক হিট্টির মতে, ‘‘খলিফা মুয়াবিয়ার সাফল্যের মূলে তার চারিপার্শ্বের অনুগামীবর্গের অবদানও কম ছিল না, বিশেষ করে মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আস; বিক্ষুব্ধ কূফার প্রশাসক আল মুগীরা আল সাবাহ। বিদ্রোহী বসরার শাসনকর্তা জিয়াদ ইবন আবিহ। এই তিনজন তাদের নেতা মুয়াবিয়াসহ আরব মুসলমানদের চারজন রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত।’’
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাই প্রথমে সিরিয়া, ক্রমান্বয়ে মিসর, কুফা ও বসরার লোকদের সমর্থন আদায়ে সফল হন এবং কালক্রমে সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা হিসেবে আবির্ভূত হন।
৫. সাহাবাগণের নিষ্কৃয়তা
আলী(রাঃ) এর সাথে যখন মুআবিয়া(রাঃ) এর বিরোধ সৃষ্টি হয় তখন আলী(রাঃ) এর পাশে অনেক বরণ্য সাহাবাগণ এসে দাঁড়ান নাই। সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস(রাঃ),আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রাঃ), আবদুল্লাহ ইবন উমর(রাঃ), আবদুর রহমান ইবন আবী বকর(রাঃ), সাঈদ ইবন যুবায়র(রাঃ),উসামা ইবন যায়দ(রাঃ) সহ অনেক সাহাবাগণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে যান। এমন কি আলী(রাঃ) এর আপন ভাই তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ প্রদান করেন নাই। বরং এদের মধ্যে অনেকে আলী(রাঃ) এর বিরোধিতা করেছিলেন। আলী(রাঃ) এর খিলাফত গ্রহণের সময়ে তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ(রাঃ), যুবায়র ইবন আওয়াম(রাঃ) এবং উম্মুল মুমিনীন আয়শা সিদ্দীকা(রাঃ) সরাসরি আলী(রাঃ) এর বিরোধীতা করেছিলেন। যদি প্রারম্ভে তাঁরা আলী(রাঃ) এর সাথে থাকতেন তাহলে উমাইয়ারা এত সহজে ক্ষমতা দখল করতে পারত না।
৬. অমুসলিগণের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন
অমুসলিমদের মধ্যে ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, জরস্ট্রিয়ান ও পৌত্তলিক বার্বার যাদের জিম্মি বলা হত। মুসলিম শাসনের প্রতি অনুগত থাকার শর্তে তারা তাদের সামাজিক অধিকার ভোগ করত। তাদের নিজস্ব আদালত ছিল এবং সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বহাল ছিল। সরকারি দপ্তরে সর্বোচ্চ পদ না পীও অনেক অমুসলিম প্রশাসনিক পদে আসীন ছিল। খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে এসময় অনেক বড় মাপের ধর্মতাত্ত্বিকের আবির্ভাব হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে ফলে অমুসলিমদের মধ্যে চিন্তাবিদের সংখ্যা কমে যায়।
অমুসলিম জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত এবং তাদের বিচারিক কার্যক্রম তাদের নিজস্ব আইন ও ধর্মীয় প্রধান বা নিজেদের নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা চালিত হত।[৬] তাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজিয়া কর দিতে হত। মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় বলেন যে প্রত্যের ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মপালন করবে ও নিজেদের শাসন করতে পারবে। এ নীতি পরবর্তীতেও বহাল থাকে। উমর কর্তৃক চালু হওয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলতে থাকে। মুয়াবিয়ার মা মায়সুম (ইয়াজিদের মা) ছিলেন একজন খ্রিষ্টান। রাষ্ট্রে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল। উমাইয়ারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে ধারাবাহিক যুদ্ধে জড়িত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রিষ্টানদের বসানো যাদের মধ্যে কারো কারো পরিবার বাইজেন্টাইন সরকারে কাজ করেছিল। খ্রিষ্টানদের নিয়োগ অধিকৃত অঞ্চলে বিশেষত সিরিয়ার বিশাল খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর প্রতি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ নীতি জনগণের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয় এবং সিরিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে স্থিতিশীল করে তোলে
৭. বিদ্রোহ দমন
মুয়াবিয়ার শাসনকালকে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বাহ্যিক বিস্তৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাম্রাজ্যের ভেতরে শুধু একটি বিদ্রোহের রেকর্ড আছে। হুজর ইবনে আদি কুফ্যার এই বিদ্রোহ করেন। হুজর ইবনে আদি নিজের আলির বংশধরদের খিলাফতের দাবিদার বলে সমর্থন জানান। কিন্তু ইরাকের গভর্নর জিয়াদ ইবনে আবু সুফিয়ান তার আন্দোলন সহজেই দমন করেন।
খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছিল আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে। তখন তাদের বিস্তৃতি সারা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়েছিল। নাহরানের যুদ্বে আলী(রাঃ) এর বাহিনীর কাছে তারা পরাস্ত হলেও আলী(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এইসকল বিদ্রোহসমূহ দমন করতে সক্ষম হন। যার ফলে খারিজীরা একেবারে পরাস্ত হয়ে পড়ে আর তাদের আশ্রয়স্থল হয় মরুভূমি।
৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়। মারওয়ানের পর তার পুত্র আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান (শাসনকাল ৬৮৫-৭০৫) খলিফা হন। তিনি খিলাফতের উপর উমাইয়াদের কর্তৃত্ব সংহত করেন। তার শাসনের প্রথমদিকে কুফাভিত্তিক আল-মুখতারের বিদ্রো হ সংঘটিত হয়। আল-মুখতার আলির আরেক পুত্র মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়াকে খলিফা হিসেবে দেখতে চাইতেন। তবে বিদ্রোহের সাথে ইবনুল হানাফিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায় না। আল-মুখতারের সেনারা ৬৮৬তে উমাইয়াদের সাথে ও ৬৮৭তে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়েরের সেনাদের সাথে লড়াই করে এবং পরাজিত হয়। ফলে তার বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া সেনারা পুনরায় ইরাক অধিকার করে ও একই বাহিনী মক্কা দখল করে। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের হামলায় নিহত হন।
৮. দক্ষ সেনাবাহিনী
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে অত্যন্ত দক্ষ একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তিনি পাদতিক বাহিনীর পাশাপাশি একটি আদর্শ ও দক্ষ নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তিনি এমনিভাবে তাঁর খিলাফতকালে রাজ্য বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন রেখেছিলেন। মুআবিয়া(রাঃ) এর খিলাফতকালে আফ্রিকার বেশকিছু অঞ্চল মুসলিমগণের অন্তর্ভূক্ত হওয়া শুরু করে। অতঃপর তা ক্রমান্বয়ে পূর্বাঞ্চল তথা মধ্য এশিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়া ভূমধ্যসাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপ মুসলিমগণের আওতাভুক্ত হয়। তাছাড়া পরবর্তী খলীফা ওয়ালিদের সময়ে মুসলিমগণ ভারতীয় উপমহাদেশ, স্পেনসহ অনেক রাজ্য দখল করতে সক্ষম হন যা কিনা উমাইয়া সেনাদের একটি শক্তিশালী বাহিনী করতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল। মুয়াবিয়ার রাজ্য বিজয় সম্প©র্র্ক হিট্টি বলেন, ‘‘মুয়াবিয়ার শাসনকালে খিলাফত কেবল সুসংহতই হয়নি; বরং আঞ্চলিক বিস্তৃতিও সাধিত হয়েছিল।’’
৯. হিমারীয় ও মুদারীয়দের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন
আরবদেশে বহু দিন যাবৎ হিমারীয় ও মুদারীয়দের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিরাজমান ছিল। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সময়কাল হতে তাদের ভিতর ঐক্য পরিলক্ষিত হতে থাকে। মুআবিয়া(রাঃ) মুদারীয়দের উপর বেশী নির্ভরশীল হওয়ার পরেও তিনি তাঁর স্বার্থের খাতিরে উভয়ের সাথে সমঝোতা স্থাপন করতে সক্ষম হন। তিনি হিমারীয়দের উপর কোন ধরনের নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। মূলত উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালের শেষের দিকে শুরু করে আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয় তা মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
১১. রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) পূর্বের একটি ব্যাপারে ভবিষৎবাণী করে দিয়ে যান যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর মৃত্যুর ত্রিশ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে ত্রিশ বছর খিলাফত থাকবে। এরপরে প্রতিষ্ঠিত হবে রাজবংশ।
তাই আল্লাহর রাসূলের কথার কখনও কোন ধরনের পরিবর্তন সাধন হয় না। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ওফাতের প্রায় ৩০ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা
উমাইয়াদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সর্বাধিক যে বিষয়টি কার্যকর করেছিল তা হল কারবালার ঘটনা। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়। হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। এ খবর ইয়াজিদের কাছে পৌছলে তিনি বসরার শাসক উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে কুফার জনগণকে হুসাইনের নেতৃত্বে সমবেত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার দায়িত্ব দেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলের পাশে থাকে জনতাকে প্রতিহত করতে সক্ষম এবং তাকে গ্রেপ্তার করেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের উপর হুসাইনকে প্রতিহত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনে মুসলিম ইবন আকিল তাকে অনুরোধ করেন যাতে হুসাইনকে কুফায় না আসার ব্যাপারে জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করেন। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের আমৃত্যু মক্কায় থেকে যান। হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। হুসাইন ও তার পরিবারকে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী রুখে দেয়। এসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আমরু বিন সাদ, শামার বিন জিয়ালজোশান ও হুসাইন বিন তামিম। তারা হুসাইন ও তার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাথে লড়াই করে হত্যা করে। হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।
আর এমনিভাবে রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় উমাইয়ারা তাদের ক্ষমতাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া নানা ধরনের চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়। উমাইয়াগণ তাদের রাজ্য পরিচালনা যেভাবে করেছে সেই ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাদের সম্পূর্ণ অনৈসলামিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আবার কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা জগৎবিখ্যাত শাসক। তবে যেধরনের মন্তব্য তাদের ব্যাপারে করা হোক না কেন বেশ কিছু স্বর্ণালী ইতিহাস তাদের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সুসম্পর্ক
পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল মনীষী তাদের স্বীয় যোগ্যতার বলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে আমিরে মুয়াবিয়া হলেন অন্যতম। যিনি শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টানত স্থাপন করেছিলেন। এ সকল অনুপম চরিত্রের সন্নিবেশের সমাবেশ ছিল তার জীবনে। কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া গোত্রে ৬০৬ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন উমাইয়া দলপতি এবং পবিত্র কাবার রক্ষক ইসলামের চরম দুশমন আবু সুফিয়ান। মাতা হৃদয়হীনা হিন্দা । ৬৩০ খৃস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তার পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে ইসলাম দর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন আজীবন। এ সমস্ত অসাধারণ গুণের জন্য রাসূল (সাঃ) তাকে বেশি ভালবাসতেন। যার ফলে মুয়াবিয়া ওহী লিখবার জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। পরে তার ভগ্নি উম্মে হাবিবার সাথে মহানবীর বিবাহ সম্পাদিত হলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাঁকে একবার বলেছিলেন, তুমি রাজ্যলাভ করলে জনসাধারণের মঙ্গল সাধন করিও।
অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর আপন শ্যালক হওয়ার সুবাদে মুআবিয়া(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিল যার ফলে মুআবিয়া(রাঃ) এর জন্য খিলাফত গ্রহণ করার পথ আরও সহজ হয়ে যাতে থাকে।
২. ইয়াজিদ ইবন আবী সুফিয়ান(রাঃ) ও মুআবিয়া(রাঃ) এর গভর্নর পদ লাভ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খিলাফতকালে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।এর আগে তাঁর ভ্রাতা ইয়াজীদ(রাঃ) সেখানকার সেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা শুরু হয়। কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র সিরিয়ার সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে সিরিয়াকে বায়জানটাইন আক্রমন হতে রক্ষা করতে সমর্থ হন। খলিফা ওসমানের সময় সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠনে করে দীপাঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ দখল করেন।আর তিনি যখন প্রথমে খলীফা হন, তিনি সিরিয়াবাসীদের সমর্থনের দরুন রাজধানী দামেশকে নিয়ে আসেন।
৩. উসমান(রাঃ) এর খিলাফত লাভ
হযরত উসমান(রাঃ) যখন উমর(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে ৬৪৪ খৃষ্টাব্দে খিলাফত লাভ করলেন তখন মদীনার খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। আর তখনই কেউ কেউ উসমান(রাঃ) এর অজান্তে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকে যার ফলে এই বিষয়াবলী উমাইয়াদের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করে তোলে। উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালে ওয়ালিদ ইবন উতবা কূফার, আবদুল্লাহ ইবন আমীর(রাঃ) মিসরের এবং সাদ ইবন আস(রাঃ)কে বসরার শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং মুআবিয়া(রাঃ) স্বপদে সিরিয়াতে বহাল থাকেন যা কিনা উমাইয়াদের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
৪. উসমান(রাঃ) এর হত্যাযজ্ঞ
হযরত উসমান(রাঃ) বিদ্রোহীদের হাতে ৬৫৬ খৃষ্টাব্দে নিহত হন। এরপরে থেকে মুসলিম বিশ্বে এক নতুন ধরনের অসন্তোষের অবস্থা সৃষ্টি হয়। যার ফলে তখন থেকেই তৎকালীন খলীফা তথা আলী(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের সাথে বিভিন্ন ধরনের দমন নীপিড়ণমূলক কার্যক্রম এর মাধ্যমে শুরু করে।হযরত ওসমানের হত্যাজনিত গোলযোগ সময় হতে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। সিফফিনের যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়। আর এতে করে মুআবিয়া(রাঃ) এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায় আর আলী(রাঃ) এর দলের ভিতর নতুন করে খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে আর পরে এই খারিজীরাই হযরত আলী(রাঃ)কে হত্যা করে।এরপরে তাঁর পুত্র ইমাম হাসান(রাঃ) খলীফা হলে পরে মুআবিয়া(রাঃ) তাঁকে পরাজিত করে সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে মুআবিয়া খিলাফত লাভ করেন এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর দক্ষতা
মুআবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে। তিনি ক্ষমতা লাভ করে কূফা থেকে দামেস্ককে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানীতে রূপান্তরিত করেন। যা করা অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব তা তিনি করে দেখিয়েছেন স্বীয় যোগ্যতা আর কূটনীতিক ক্ষমতাবলে। তবে একটা কথা থেকে যায় যে, তার আশেপাশের লোকদের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং তাদের থেকে কাজও আদায় করতে জানতেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমির মুআবিয়া ছিলেন ভাগ্যবান।
২. আলী(রাঃ) এর প্রশাসনিক দূর্বলতা
মুআবিয়া(রাঃ) দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সিরিয়াতে শাসন করার পর সেখানকার লোকদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। তাই তাদের সহায়তায় মুআবিয়া(রাঃ) একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে সক্ষম হন। অন্যদিকে আলী(রাঃ) তখন রাজধানী কূফাতে পরিবর্তন করে নিয়ে আসলেও সেখানকার লোকদের কোন ধরনের সমর্থন তিনি আদায় করতে সক্ষম হন নাই। না আলী(রাঃ) এই ধরনের সমর্থন পেয়েছিলেন না তাঁর পুত্র কারবালার যুদ্বের সময় তাদের সমর্থন পেয়েছিলেন। আর এই কারণেই উমাইয়ারা সহজেই সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
৩. আমর ইবনুল আস(রাঃ) এর দক্ষতা
একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আমর ইবনুল আসের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যতীত মুআবিয়া কিছুতেই উমাইয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমর সম্বন্ধ মূইর বলেন, ‘‘খিলাফতের পরিবর্তনের আমরের চেয়ে অপর কেহই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী, পরামর্শে ধূর্ত, কথায় ও কাজে রুক্ষ, নীতিজ্ঞানশূণ্য আমরের বুদ্ধি বলেই মুয়াবিয়া হযরত আলীর উপর বিজয়ী হন এবং পরিণামে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।’’
দুমাতুল জন্দল নামক স্থানে মূসা ইবন আশআরী(রাঃ) এর সাথে যে কূটনৈতিক চাল খেলেছিলেন আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।
৪. যিয়াদ ইবন সুমাইয়া এর সমর্থন
মুআবিয়া(রাঃ) এর শাসনকালে জিয়াদ ইবন সুমাইয়া অশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। জিয়াদ ছিলেন মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তান। তার মাতা ছিলেন তায়েফের একজন ভ্রষ্টা রমনী যার নাম ছিল সুমাইয়া নাম্নী ও আবু সুফিয়ানের উপপত্নী। কিন্তু আশ্চযের বিষয় হল, জন্ম নীচ পরিবেশ হলেও দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি মুসলিম ইতিহাসের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল'। এই প্রবাদের সত্যতা আমরা জিয়াদ ইবন আবিহর মধ্যে দেখতে পাই। তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর খিলাফতকালে বসরা ও ইসতাখরে শাসনকর্তার মর্যাদালাভ করেন। বুদ্ধিমত্তা, বাগ্নিতা ও কর্ম প্রতিভার জন্য সে যুগে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদরূপে পরিচিত ছিলেন। মুগারীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া জিয়াদকে একইসঙ্গে বসরা ও কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
৫. জনগণের সহায়তা
চারপাশের লোকদের সহযোগিতা না পেলে মুয়াবিয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে উমাইয়াদর সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন কঠিনতর ছিল। ঐতিহাসিক হিট্টির মতে, ‘‘খলিফা মুয়াবিয়ার সাফল্যের মূলে তার চারিপার্শ্বের অনুগামীবর্গের অবদানও কম ছিল না, বিশেষ করে মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আস; বিক্ষুব্ধ কূফার প্রশাসক আল মুগীরা আল সাবাহ। বিদ্রোহী বসরার শাসনকর্তা জিয়াদ ইবন আবিহ। এই তিনজন তাদের নেতা মুয়াবিয়াসহ আরব মুসলমানদের চারজন রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত।’’
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাই প্রথমে সিরিয়া, ক্রমান্বয়ে মিসর, কুফা ও বসরার লোকদের সমর্থন আদায়ে সফল হন এবং কালক্রমে সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা হিসেবে আবির্ভূত হন।
৫. সাহাবাগণের নিষ্কৃয়তা
আলী(রাঃ) এর সাথে যখন মুআবিয়া(রাঃ) এর বিরোধ সৃষ্টি হয় তখন আলী(রাঃ) এর পাশে অনেক বরণ্য সাহাবাগণ এসে দাঁড়ান নাই। সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস(রাঃ),আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রাঃ), আবদুল্লাহ ইবন উমর(রাঃ), আবদুর রহমান ইবন আবী বকর(রাঃ), সাঈদ ইবন যুবায়র(রাঃ),উসামা ইবন যায়দ(রাঃ) সহ অনেক সাহাবাগণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে যান। এমন কি আলী(রাঃ) এর আপন ভাই তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ প্রদান করেন নাই। বরং এদের মধ্যে অনেকে আলী(রাঃ) এর বিরোধিতা করেছিলেন। আলী(রাঃ) এর খিলাফত গ্রহণের সময়ে তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ(রাঃ), যুবায়র ইবন আওয়াম(রাঃ) এবং উম্মুল মুমিনীন আয়শা সিদ্দীকা(রাঃ) সরাসরি আলী(রাঃ) এর বিরোধীতা করেছিলেন। যদি প্রারম্ভে তাঁরা আলী(রাঃ) এর সাথে থাকতেন তাহলে উমাইয়ারা এত সহজে ক্ষমতা দখল করতে পারত না।
৬. অমুসলিগণের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন
অমুসলিমদের মধ্যে ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, জরস্ট্রিয়ান ও পৌত্তলিক বার্বার যাদের জিম্মি
অমুসলিম জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত এবং তাদের বিচারিক কার্যক্রম তাদের নিজস্ব আইন ও ধর্মীয় প্রধান বা নিজেদের নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা চালিত হত।[৬] তাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজিয়া কর দিতে হত। মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় বলেন যে প্রত্যের ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মপালন করবে ও নিজেদের শাসন করতে পারবে। এ নীতি পরবর্তীতেও বহাল থাকে। উমর কর্তৃক চালু হওয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলতে থাকে। মুয়াবিয়ার মা মায়সুম (ইয়াজিদের মা) ছিলেন একজন খ্রিষ্টান। রাষ্ট্রে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল। উমাইয়ারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে ধারাবাহিক যুদ্ধে জড়িত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রিষ্টানদের বসানো যাদের মধ্যে কারো কারো পরিবার বাইজেন্টাইন সরকারে কাজ করেছিল। খ্রিষ্টানদের নিয়োগ অধিকৃত অঞ্চলে বিশেষত সিরিয়ার বিশাল খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর প্রতি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ নীতি জনগণের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয় এবং সিরিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে স্থিতিশীল করে তোলে
৭. বিদ্রোহ দমন
মুয়াবিয়ার শাসনকালকে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বাহ্যিক বিস্তৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাম্রাজ্যের ভেতরে শুধু একটি বিদ্রোহের রেকর্ড আছে। হুজর ইবনে আদি কুফ্যার এই বিদ্রোহ করেন। হুজর ইবনে আদি নিজের আলির বংশধরদের খিলাফতের দাবিদার বলে সমর্থন জানান। কিন্তু ইরাকের গভর্নর জিয়াদ ইবনে আবু সুফিয়ান তার আন্দোলন সহজেই দমন করেন।
খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছিল আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে। তখন তাদের বিস্তৃতি সারা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়েছিল। নাহরানের যুদ্বে আলী(রাঃ) এর বাহিনীর কাছে তারা পরাস্ত হলেও আলী(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এইসকল বিদ্রোহসমূহ দমন করতে সক্ষম হন। যার ফলে খারিজীরা একেবারে পরাস্ত হয়ে পড়ে আর তাদের আশ্রয়স্থল হয় মরুভূমি।
৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়। মারওয়ানের পর তার পুত্র আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান (শাসনকাল ৬৮৫-৭০৫) খলিফা হন। তিনি খিলাফতের উপর উমাইয়াদের কর্তৃত্ব সংহত করেন। তার শাসনের প্রথমদিকে কুফাভিত্তিক আল-মুখতারের বিদ্রো
৮. দক্ষ সেনাবাহিনী
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে অত্যন্ত দক্ষ একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তিনি পাদতিক বাহিনীর পাশাপাশি একটি আদর্শ ও দক্ষ নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তিনি এমনিভাবে তাঁর খিলাফতকালে রাজ্য বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন রেখেছিলেন। মুআবিয়া(রাঃ) এর খিলাফতকালে আফ্রিকার বেশকিছু অঞ্চল মুসলিমগণের অন্তর্ভূক্ত হওয়া শুরু করে। অতঃপর তা ক্রমান্বয়ে পূর্বাঞ্চল তথা মধ্য এশিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়া ভূমধ্যসাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপ মুসলিমগণের আওতাভুক্ত হয়। তাছাড়া পরবর্তী খলীফা ওয়ালিদের সময়ে মুসলিমগণ ভারতীয় উপমহাদেশ, স্পেনসহ অনেক রাজ্য দখল করতে সক্ষম হন যা কিনা উমাইয়া সেনাদের একটি শক্তিশালী বাহিনী করতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল। মুয়াবিয়ার রাজ্য বিজয় সম্প©র্র্ক হিট্টি বলেন, ‘‘মুয়াবিয়ার শাসনকালে খিলাফত কেবল সুসংহতই হয়নি; বরং আঞ্চলিক বিস্তৃতিও সাধিত হয়েছিল।’’
৯. হিমারীয় ও মুদারীয়দের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন
আরবদেশে বহু দিন যাবৎ হিমারীয় ও মুদারীয়দের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিরাজমান ছিল। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সময়কাল হতে তাদের ভিতর ঐক্য পরিলক্ষিত হতে থাকে। মুআবিয়া(রাঃ) মুদারীয়দের উপর বেশী নির্ভরশীল হওয়ার পরেও তিনি তাঁর স্বার্থের খাতিরে উভয়ের সাথে সমঝোতা স্থাপন করতে সক্ষম হন। তিনি হিমারীয়দের উপর কোন ধরনের নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। মূলত উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালের শেষের দিকে শুরু করে আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয় তা মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
১১. রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) পূর্বের একটি ব্যাপারে ভবিষৎবাণী করে দিয়ে যান যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর মৃত্যুর ত্রিশ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে ত্রিশ বছর খিলাফত থাকবে। এরপরে প্রতিষ্ঠিত হবে রাজবংশ।
তাই আল্লাহর রাসূলের কথার কখনও কোন ধরনের পরিবর্তন সাধন হয় না। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ওফাতের প্রায় ৩০ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা
উমাইয়াদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সর্বাধিক যে বিষয়টি কার্যকর করেছিল তা হল কারবালার ঘটনা। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়। হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। এ খবর ইয়াজিদের কাছে পৌছলে তিনি বসরার শাসক উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে কুফার জনগণকে হুসাইনের নেতৃত্বে সমবেত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার দায়িত্ব দেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলের পাশে থাকে জনতাকে প্রতিহত করতে সক্ষম এবং তাকে গ্রেপ্তার করেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের উপর হুসাইনকে প্রতিহত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনে মুসলিম ইবন আকিল তাকে অনুরোধ করেন যাতে হুসাইনকে কুফায় না আসার ব্যাপারে জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করেন। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের আমৃত্যু মক্কায় থেকে যান। হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। হুসাইন ও তার পরিবারকে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী রুখে দেয়। এসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আমরু বিন সাদ, শামার বিন জিয়ালজোশান ও হুসাইন বিন তামিম। তারা হুসাইন ও তার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাথে লড়াই করে হত্যা করে। হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।
আর এমনিভাবে রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় উমাইয়ারা তাদের ক্ষমতাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া নানা ধরনের চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়। উমাইয়াগণ তাদের রাজ্য পরিচালনা যেভাবে করেছে সেই ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাদের সম্পূর্ণ অনৈসলামিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আবার কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা জগৎবিখ্যাত শাসক। তবে যেধরনের মন্তব্য তাদের ব্যাপারে করা হোক না কেন বেশ কিছু স্বর্ণালী ইতিহাস তাদের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।