Showing posts with label ইসলামের ইতিহাস. Show all posts
Showing posts with label ইসলামের ইতিহাস. Show all posts

Monday, 26 January 2015

প্রশ্নঃ উমাইয়া খিলাফতের বিস্তৃতি ও স্বল্প সময়ে সফলতার কারন।


উমাইয়া খিলাফত  ইসলামের প্রধান চারটি খিলাফতের মধ্যে দ্বিতীয় খিলাফত। এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফ্‌ফানের খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক সূচিত হয়। তিনি দীর্ঘদ...িন সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন। ফলে সিরিয়া উমাইয়াদের ক্ষমতার ভিত্তি হয়ে উঠে এবং দামেস্ক তাদের রাজধানী হয়। উমাইয়ারা মুসলিমদের বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখে। ককেসাস,ট্রান্সঅক্সানিয়া, সিন্ধু, মাগরেব ও ইবেরিয়ান উপদ্বীপ (আল-আন্দালুস) জয় করে মুসলিম বিশ্বের আওতাধীন করা হয়। সীমার সর্বোচ্চে পৌছালে উমাইয়া খিলাফত মোট ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গ মাইল (১,৫০,০০,০০০ বর্গ কিমি.) অঞ্চল অধিকার করে রাখে। তখন পর্যন্ত বিশ্বের দেখা সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ ছিল। অস্তিত্বের সময়কালের দিক থেকে এটি ছিল পঞ্চম।
পরোক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সুসম্পর্ক
পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল মনীষী তাদের স্বীয় যোগ্যতার বলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে আমিরে মুয়াবিয়া হলেন অন্যতম। যিনি শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টানত স্থাপন করেছিলেন। এ সকল অনুপম চরিত্রের সন্নিবেশের সমাবেশ ছিল তার জীবনে। কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া গোত্রে ৬০৬ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন উমাইয়া দলপতি এবং পবিত্র কাবার রক্ষক ইসলামের চরম দুশমন আবু সুফিয়ান। মাতা হৃদয়হীনা হিন্দা । ৬৩০ খৃস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তার পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে ইসলাম দর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন আজীবন। এ সমস্ত অসাধারণ গুণের জন্য রাসূল (সাঃ) তাকে বেশি ভালবাসতেন। যার ফলে মুয়াবিয়া ওহী লিখবার জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। পরে তার ভগ্নি উম্মে হাবিবার সাথে মহানবীর বিবাহ সম্পাদিত হলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাঁকে একবার বলেছিলেন, তুমি রাজ্যলাভ করলে জনসাধারণের মঙ্গল সাধন করিও।
 অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর আপন শ্যালক হওয়ার সুবাদে মুআবিয়া(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিল যার ফলে মুআবিয়া(রাঃ) এর জন্য খিলাফত গ্রহণ করার পথ আরও সহজ হয়ে যাতে থাকে।
২. ইয়াজিদ ইবন আবী সুফিয়ান(রাঃ) ও মুআবিয়া(রাঃ) এর গভর্নর পদ লাভ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খিলাফতকালে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।এর আগে তাঁর ভ্রাতা ইয়াজীদ(রাঃ) সেখানকার সেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা শুরু হয়। কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র সিরিয়ার সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে সিরিয়াকে বায়জানটাইন আক্রমন হতে রক্ষা করতে সমর্থ হন। খলিফা ওসমানের সময় সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠনে করে দীপাঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ দখল করেন।আর তিনি যখন প্রথমে খলীফা হন, তিনি সিরিয়াবাসীদের সমর্থনের দরুন রাজধানী দামেশকে নিয়ে আসেন।
৩. উসমান(রাঃ) এর খিলাফত লাভ
হযরত উসমান(রাঃ) যখন উমর(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে ৬৪৪ খৃষ্টাব্দে খিলাফত লাভ করলেন তখন মদীনার খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। আর তখনই কেউ কেউ উসমান(রাঃ) এর অজান্তে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকে যার ফলে এই বিষয়াবলী উমাইয়াদের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করে তোলে। উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালে ওয়ালিদ ইবন উতবা কূফার, আবদুল্লাহ ইবন আমীর(রাঃ) মিসরের এবং সাদ ইবন আস(রাঃ)কে বসরার শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং মুআবিয়া(রাঃ) স্বপদে সিরিয়াতে বহাল থাকেন যা কিনা উমাইয়াদের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
৪. উসমান(রাঃ) এর হত্যাযজ্ঞ
হযরত উসমান(রাঃ) বিদ্রোহীদের হাতে ৬৫৬ খৃষ্টাব্দে নিহত হন। এরপরে থেকে মুসলিম বিশ্বে এক নতুন ধরনের অসন্তোষের অবস্থা সৃষ্টি হয়। যার ফলে তখন থেকেই তৎকালীন খলীফা তথা আলী(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের সাথে বিভিন্ন ধরনের দমন নীপিড়ণমূলক কার্যক্রম এর মাধ্যমে শুরু করে।হযরত ওসমানের হত্যাজনিত গোলযোগ সময় হতে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। সিফফিনের যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়। আর এতে করে মুআবিয়া(রাঃ) এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায় আর আলী(রাঃ) এর দলের ভিতর নতুন করে খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে আর পরে এই খারিজীরাই হযরত আলী(রাঃ)কে হত্যা করে।এরপরে তাঁর  পুত্র ইমাম হাসান(রাঃ) খলীফা  হলে পরে মুআবিয়া(রাঃ) তাঁকে পরাজিত করে সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে মুআবিয়া খিলাফত লাভ করেন এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর দক্ষতা
মুআবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে। তিনি ক্ষমতা লাভ করে কূফা থেকে দামেস্ককে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানীতে রূপান্তরিত করেন। যা করা অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব তা তিনি করে দেখিয়েছেন স্বীয় যোগ্যতা আর কূটনীতিক ক্ষমতাবলে। তবে একটা কথা থেকে যায় যে, তার আশেপাশের লোকদের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং তাদের থেকে কাজও আদায় করতে জানতেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমির মুআবিয়া ছিলেন ভাগ্যবান।
২. আলী(রাঃ) এর প্রশাসনিক দূর্বলতা
মুআবিয়া(রাঃ) দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সিরিয়াতে শাসন করার পর সেখানকার লোকদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। তাই তাদের সহায়তায় মুআবিয়া(রাঃ) একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে সক্ষম হন। অন্যদিকে আলী(রাঃ) তখন রাজধানী কূফাতে পরিবর্তন করে নিয়ে আসলেও সেখানকার লোকদের কোন ধরনের সমর্থন তিনি আদায় করতে সক্ষম হন নাই। না আলী(রাঃ) এই ধরনের সমর্থন পেয়েছিলেন না তাঁর পুত্র কারবালার যুদ্বের সময় তাদের সমর্থন পেয়েছিলেন। আর এই কারণেই উমাইয়ারা সহজেই সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
৩. আমর ইবনুল আস(রাঃ) এর দক্ষতা
একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আমর ইবনুল আসের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যতীত মুআবিয়া কিছুতেই উমাইয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমর সম্বন্ধ মূইর বলেন, ‘‘খিলাফতের পরিবর্তনের আমরের চেয়ে অপর কেহই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী, পরামর্শে ধূর্ত, কথায় ও কাজে রুক্ষ, নীতিজ্ঞানশূণ্য আমরের বুদ্ধি বলেই মুয়াবিয়া হযরত আলীর উপর বিজয়ী হন এবং পরিণামে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।’’
দুমাতুল জন্দল নামক স্থানে মূসা ইবন আশআরী(রাঃ) এর সাথে যে কূটনৈতিক চাল খেলেছিলেন আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।
৪. যিয়াদ ইবন সুমাইয়া এর সমর্থন
মুআবিয়া(রাঃ) এর শাসনকালে জিয়াদ ইবন সুমাইয়া অশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। জিয়াদ ছিলেন মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তান। তার মাতা ছিলেন তায়েফের একজন ভ্রষ্টা রমনী যার নাম ছিল সুমাইয়া নাম্নী ও আবু সুফিয়ানের উপপত্নী। কিন্তু আশ্চযের বিষয় হল, জন্ম নীচ পরিবেশ হলেও দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি মুসলিম ইতিহাসের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল'। এই প্রবাদের সত্যতা আমরা জিয়াদ ইবন আবিহর মধ্যে দেখতে পাই। তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর খিলাফতকালে বসরা ও ইসতাখরে শাসনকর্তার মর্যাদালাভ করেন। বুদ্ধিমত্তা, বাগ্নিতা ও কর্ম প্রতিভার জন্য সে যুগে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদরূপে পরিচিত ছিলেন। মুগারীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া জিয়াদকে একইসঙ্গে বসরা ও কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
৫. জনগণের সহায়তা
চারপাশের লোকদের সহযোগিতা না পেলে মুয়াবিয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে উমাইয়াদর সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন কঠিনতর ছিল। ঐতিহাসিক হিট্টির মতে, ‘‘খলিফা মুয়াবিয়ার সাফল্যের মূলে তার চারিপার্শ্বের অনুগামীবর্গের অবদানও কম ছিল না, বিশেষ করে মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আস; বিক্ষুব্ধ কূফার প্রশাসক আল মুগীরা আল সাবাহ। বিদ্রোহী বসরার শাসনকর্তা জিয়াদ ইবন আবিহ। এই তিনজন তাদের নেতা মুয়াবিয়াসহ আরব মুসলমানদের চারজন রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত।’’
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাই প্রথমে সিরিয়া, ক্রমান্বয়ে মিসর, কুফা ও বসরার লোকদের সমর্থন আদায়ে সফল হন এবং কালক্রমে সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা হিসেবে আবির্ভূত হন।
৫. সাহাবাগণের নিষ্কৃয়তা
আলী(রাঃ) এর সাথে যখন মুআবিয়া(রাঃ) এর বিরোধ সৃষ্টি হয় তখন আলী(রাঃ) এর পাশে অনেক বরণ্য সাহাবাগণ এসে দাঁড়ান নাই। সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস(রাঃ),আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রাঃ), আবদুল্লাহ ইবন উমর(রাঃ), আবদুর রহমান ইবন আবী বকর(রাঃ), সাঈদ ইবন যুবায়র(রাঃ),উসামা ইবন যায়দ(রাঃ) সহ অনেক সাহাবাগণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে যান। এমন কি আলী(রাঃ) এর আপন ভাই তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ প্রদান করেন নাই। বরং এদের মধ্যে অনেকে আলী(রাঃ) এর বিরোধিতা করেছিলেন। আলী(রাঃ) এর খিলাফত গ্রহণের সময়ে তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ(রাঃ), যুবায়র ইবন আওয়াম(রাঃ) এবং উম্মুল মুমিনীন আয়শা সিদ্দীকা(রাঃ) সরাসরি আলী(রাঃ) এর বিরোধীতা করেছিলেন। যদি প্রারম্ভে তাঁরা আলী(রাঃ) এর সাথে থাকতেন তাহলে উমাইয়ারা এত সহজে ক্ষমতা দখল করতে পারত না।
৬. অমুসলিগণের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন
অমুসলিমদের মধ্যে ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, জরস্ট্রিয়ান ও পৌত্তলিক বার্বার যাদের জিম্মি বলা হত। মুসলিম শাসনের প্রতি অনুগত থাকার শর্তে তারা তাদের সামাজিক অধিকার ভোগ করত। তাদের নিজস্ব আদালত ছিল এবং সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বহাল ছিল। সরকারি দপ্তরে সর্বোচ্চ পদ না পীও অনেক অমুসলিম প্রশাসনিক পদে আসীন ছিল। খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে এসময় অনেক বড় মাপের ধর্মতাত্ত্বিকের আবির্ভাব হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে ফলে অমুসলিমদের মধ্যে চিন্তাবিদের সংখ্যা কমে যায়।
অমুসলিম জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত এবং তাদের বিচারিক কার্যক্রম তাদের নিজস্ব আইন ও ধর্মীয় প্রধান বা নিজেদের নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা চালিত হত।[৬] তাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজিয়া কর দিতে হত। মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় বলেন যে প্রত্যের ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মপালন করবে ও নিজেদের শাসন করতে পারবে। এ নীতি পরবর্তীতেও বহাল থাকে। উমর কর্তৃক চালু হওয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলতে থাকে। মুয়াবিয়ার মা মায়সুম (ইয়াজিদের মা) ছিলেন একজন খ্রিষ্টান। রাষ্ট্রে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল। উমাইয়ারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে ধারাবাহিক যুদ্ধে জড়িত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রিষ্টানদের বসানো যাদের মধ্যে কারো কারো পরিবার বাইজেন্টাইন সরকারে কাজ করেছিল। খ্রিষ্টানদের নিয়োগ অধিকৃত অঞ্চলে বিশেষত সিরিয়ার বিশাল খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর প্রতি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ নীতি জনগণের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয় এবং সিরিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে স্থিতিশীল করে তোলে
৭. বিদ্রোহ দমন
মুয়াবিয়ার শাসনকালকে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বাহ্যিক বিস্তৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাম্রাজ্যের ভেতরে শুধু একটি বিদ্রোহের রেকর্ড আছে। হুজর ইবনে আদি কুফ্যার এই বিদ্রোহ করেন। হুজর ইবনে আদি নিজের আলির বংশধরদের খিলাফতের দাবিদার বলে সমর্থন জানান। কিন্তু ইরাকের গভর্নর জিয়াদ ইবনে আবু সুফিয়ান তার আন্দোলন সহজেই দমন করেন।
খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছিল আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে। তখন তাদের বিস্তৃতি সারা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়েছিল। নাহরানের যুদ্বে আলী(রাঃ) এর বাহিনীর কাছে তারা পরাস্ত হলেও আলী(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এইসকল বিদ্রোহসমূহ দমন করতে সক্ষম হন। যার ফলে খারিজীরা একেবারে পরাস্ত হয়ে পড়ে আর তাদের আশ্রয়স্থল হয় মরুভূমি।
৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়। মারওয়ানের পর তার পুত্র আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান (শাসনকাল ৬৮৫-৭০৫) খলিফা হন। তিনি খিলাফতের উপর উমাইয়াদের কর্তৃত্ব সংহত করেন। তার শাসনের প্রথমদিকে কুফাভিত্তিক আল-মুখতারের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। আল-মুখতার আলির আরেক পুত্র মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়াকে খলিফা হিসেবে দেখতে চাইতেন। তবে বিদ্রোহের সাথে ইবনুল হানাফিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায় না। আল-মুখতারের সেনারা ৬৮৬তে উমাইয়াদের সাথে ও ৬৮৭তে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়েরের সেনাদের সাথে লড়াই করে এবং পরাজিত হয়। ফলে তার বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া সেনারা পুনরায় ইরাক অধিকার করে ও একই বাহিনী মক্কা দখল করে। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের হামলায় নিহত হন।
৮. দক্ষ সেনাবাহিনী
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে অত্যন্ত দক্ষ একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তিনি পাদতিক বাহিনীর পাশাপাশি একটি আদর্শ ও দক্ষ নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তিনি এমনিভাবে তাঁর খিলাফতকালে রাজ্য বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন রেখেছিলেন। মুআবিয়া(রাঃ) এর খিলাফতকালে আফ্রিকার বেশকিছু অঞ্চল মুসলিমগণের অন্তর্ভূক্ত হওয়া শুরু করে। অতঃপর তা ক্রমান্বয়ে পূর্বাঞ্চল তথা মধ্য এশিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়া ভূমধ্যসাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপ মুসলিমগণের আওতাভুক্ত হয়। তাছাড়া পরবর্তী খলীফা ওয়ালিদের সময়ে মুসলিমগণ ভারতীয় উপমহাদেশ, স্পেনসহ অনেক রাজ্য দখল করতে সক্ষম হন যা কিনা উমাইয়া সেনাদের একটি শক্তিশালী বাহিনী করতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল। মুয়াবিয়ার রাজ্য বিজয় সম্প©র্র্ক হিট্টি বলেন, ‘‘মুয়াবিয়ার শাসনকালে খিলাফত কেবল সুসংহতই হয়নি; বরং আঞ্চলিক বিস্তৃতিও সাধিত হয়েছিল।’’
৯. হিমারীয় ও মুদারীয়দের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন 
আরবদেশে বহু দিন যাবৎ হিমারীয় ও মুদারীয়দের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিরাজমান ছিল। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সময়কাল হতে তাদের ভিতর ঐক্য পরিলক্ষিত হতে থাকে। মুআবিয়া(রাঃ) মুদারীয়দের উপর বেশী নির্ভরশীল হওয়ার পরেও তিনি তাঁর স্বার্থের খাতিরে উভয়ের সাথে সমঝোতা স্থাপন করতে সক্ষম হন। তিনি হিমারীয়দের উপর কোন ধরনের নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। মূলত উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালের শেষের দিকে শুরু করে আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয় তা মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
১১. রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) পূর্বের একটি ব্যাপারে ভবিষৎবাণী করে দিয়ে যান যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর মৃত্যুর ত্রিশ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে ত্রিশ বছর খিলাফত থাকবে। এরপরে প্রতিষ্ঠিত হবে রাজবংশ।
তাই আল্লাহর রাসূলের কথার কখনও কোন ধরনের পরিবর্তন সাধন হয় না। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ওফাতের প্রায় ৩০ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা
উমাইয়াদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সর্বাধিক যে বিষয়টি কার্যকর করেছিল তা হল কারবালার ঘটনা। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়। হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। এ খবর ইয়াজিদের কাছে পৌছলে তিনি বসরার শাসক উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে কুফার জনগণকে হুসাইনের নেতৃত্বে সমবেত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার দায়িত্ব দেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলের পাশে থাকে জনতাকে প্রতিহত করতে সক্ষম এবং তাকে গ্রেপ্তার করেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের উপর হুসাইনকে প্রতিহত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনে মুসলিম ইবন আকিল তাকে অনুরোধ করেন যাতে হুসাইনকে কুফায় না আসার ব্যাপারে জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করেন। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের আমৃত্যু মক্কায় থেকে যান। হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। হুসাইন ও তার পরিবারকে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী রুখে দেয়। এসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আমরু বিন সাদ, শামার বিন জিয়ালজোশান ও হুসাইন বিন তামিম। তারা হুসাইন ও তার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাথে লড়াই করে হত্যা করে। হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।
আর এমনিভাবে রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় উমাইয়ারা তাদের ক্ষমতাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া নানা ধরনের চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়। উমাইয়াগণ তাদের রাজ্য পরিচালনা যেভাবে করেছে সেই ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাদের সম্পূর্ণ অনৈসলামিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আবার কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা জগৎবিখ্যাত শাসক। তবে যেধরনের মন্তব্য তাদের ব্যাপারে করা হোক না কেন বেশ কিছু স্বর্ণালী ইতিহাস তাদের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

প্রশ্নঃ ১ম বিশ্বযুদ্বে উসমানীয়দের অক্ষ শক্তির পক্ষে দল যোগ দেওয়ার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে লিখ।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (অপর নাম - প্রথম মহাযুদ্ধ) ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে সংঘটিত হয় এবং তখন পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধ।১৯১৪ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রানৎস ফার্ডিনান্ড এক সার্বিয়াবাসীর গুলিতে নিহত... হন। অস্ট্রিয়া এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং ওই বছরের ২৮ জুন সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ যুদ্ধে দুদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সূচনা হয়। তবে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ হত্যাকাণ্ডই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিল না। উনিশ শতকে শিল্পে বিপ্লবের কারণে সহজে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ স্থাপনে প্রতিযোগিতা এবং আগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদিও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের কারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একপক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি,তুরস্ক ও বুলগেরিয়া। যাদের বলা হতো কেন্দ্রীয় বা অক্ষ শক্তি। আর অপরপক্ষে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেনে, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি ও আমেরিকা। যাদের বলা হতো মিত্রশক্তি।
তুরস্কের অক্ষ শক্তির পক্ষে যোগ দেওয়ার কারণসমূহ
১৯১৪ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ব সঙ্ঘটিত হয় তখন তুরস্ক প্রথমে নিরপেক্ষ থাকার ব্যাপারে মনোভাবে ব্যক্ত করতে থাকে। কিন্তু কালক্রমে তারা অক্ষ শক্তির দল নেয়। এর পিছনে বেশ কিছু ধরনের কারণ ছিল যা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১. মিসর পুনরুদ্বার
১৮৮২ সালে খোদিভ তৌফিকের শাসনামলে উদাভী বিদ্রোহ সঙ্ঘটিত হলে পরে তৌফিক বিদেশী শক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে আর ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে সহায়তা করে আর এমনিভাবে উসমানীয় সম্রাজ্য হতে মিসর বিচ্যুত হয় আর মিসর তখন হতে ইংলান্ডের একটি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আর তখন হতে উসমানীয়রা ব্রিটিশ বিদ্বেষী হয়ে উঠে এবং মিসরকে পুনরুদ্বারের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়ে উঠে।
২. তিউনিস ও আলজিয়ার্স পুনরুদ্বার
যখন ব্রিটিশরা মিসরসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করতে থাকে তখন থেকেই ফ্রান্স আফ্রিকার দেশসমহূ দখল করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। তাই তখন হতে আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চল তারা দখল করতে থাকে। আর এই কারণে ১৮৩০ সালে প্রথমে তারা আলজিরিয়া দখল করে নেয় একবারে বিনা বাধায় উসমানীয়দের দূর্বলতার জন্য। এরপরে ১৮৮২ সালের তিউনিস সেখানকার শাসকদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমেও তিউনিসিয়া দখল করে নেয়। এখানে ব্রিটেন,ইতালী সকলেই নিশ্চুপ থাকে। এতে করে ফরাসী সরকারের প্রতি উসমানীয়রা ক্ষুব্দ্ব হতে থাকে আর তা পুনরুদ্বারের ব্যাপারে বদ্ব পরিকর হয়।
৩. ত্রিপোলী পুনরুদ্বার
একইভাবে লিবিয়াতে অবস্থিত ত্রিপোলীতে ইউরোপীয় আরেক পরাশক্তি ইতালি অনেক যাবৎ নিজেদের কোন উপনিবেশ না থাকার জন্য হীনমন্যতায় ভুগছিল। আর তারাই পরবর্তীতে উসমানীয়দের কাছে থেকে ত্রিপোলী ছিনিয়ে নেয়।১ম বিশ্বযুদ্ব সঙ্ঘটিত হওয়ার ঠিক এক বছর আগে ইতালি তাদের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে যায়। আর তুরস্ক এতে করে নিজেদের দূর্বল হিসেবে মনে করে নতুন মিত্রের সন্ধানে নেমে পড়ে।
৪. ইয়ং তুর্ক ফ্রন্টের অবদান
নব্য তুর্কদের আন্দোলনের ফলে এক নতুন চিন্তাধারার উন্মেষ তুর্কী রাজনীতির মধ্যে সংযুক্ত হতে থাকে। তারা নতুন করে তুরস্ককে সাজাতে শুরু করে। তারা যখন দেখল যে, সমগ্র ইউরোপ মিলে তুরস্কের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিয়ে যাচ্ছে তখন থেকেই তাদের মধ্যে একধরনের ইউরোপীয় নেতিবাচক মনোভাবের বিকাশ সাধিত হয়েছিল। আর এই কারণেই জার্মানকে  বন্ধু হিসেবে মনে করে সমুখের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
৫. পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত
একসময়ে উসমানীয়রা ছিল পৃথিবীর সর্বাধিক দুর্ধর্ষ জাতি যাদের নাম শোনামাত্র সকলের অন্তর একেবারেই কেপে উঠত। আর সেই পরাশক্তি হিসেবে খ্যাত উসমানীয়রা এতটাই দূর্বল হতে থাকে যে, তারা নিজেদের দেশের অভ্যন্তরের বিদ্রোহ ঠেকাতে একেবারেই দূর্বল হয়ে পড়ে। আর এতে করে উসমানীয়দের শক্তি বৃদ্বি করার জন্য আর এই পৃথিবীতে তাদের দাপট পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য তারা আবার ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য জার্মান পক্ষের অবলম্বণ করার ব্যাপারে বেশী আগ্রহী ছিল। তাই তারা অক্ষ পক্ষে যোগদান করেছিল।
৬. বলকান রক্ষা
বলকান রাষ্ট্র হতে পর্যায়ক্রমে রুমানিয়া,বুলগেরিয়া,সার্বিয়া,আলবেনিয়া,মেসিডোনিয়া,বসনিয়া,ক্রোয়েশিয়া এভাবে করে অসংখ্য রাষ্ট্রের জন্ম হতে থাকে। আর প্রত্যেকের মধ্যে নতুনভাবে জাতীয়তাবাদ মনোভাবের বিকাশ ঘটতে থাকে আর এতে করেই উসমানীয় সম্রাজ্যে নতুন করে ফাটল দেখা দেয় আর এতে করে উসমানীয়রা চিন্তা করল যে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে অক্ষ পক্ষের পক্ষে যোগদান ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকতে পারে না। আর বলকান রাজ্যের অধিবাসীরাই অস্ট্রিয়ার প্রিন্সকে হত্যা করেছিল তাই অস্ট্রিয়া যখন বলকানদের উপর হামলা চালালো তখন তুরস্ক তাদের হারনো পূর্বের অসংখ্য স্থানকে ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে বলকানবাসীর বিপক্ষে যুদ্ব ঘোষণা করে।
৭. রাশিয়াকে প্রতিহত
রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সেই ক্রিমিয়ার যুদ্বের সময় হতেই সীমান্ত সমস্যা চলে আসছিল। সীমান্তে প্রায় সময়ে রাশিয়ার সাথে তুরস্ক বাহিনীর সমস্যা লেগেই থাকত। এর পাশাপাশি ককেশাশের সীমান্তে তারপর কাস্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের জাহাজের অবস্থানকে কেন্দ্রে করে সর্বদা এদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। আর রাশিয়াকে প্রতিহত করা দরকার ছিল বলে তখন জার্মানির পক্ষে তুরস্ক অবস্থান গ্রহণ করেছিল।
৮. সেনাবাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দান
উসমানীয় সেনাবাহিনী আগের মত সেই গাজী এবং জেনেরিস বাহিনীর মত এতটা শক্তিশালী ছিল না আর। একদিকে ইউরোপে রেনেসাঁ বিপ্লবের কারণে ইউরোপিয়ানরা আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার শুরু করে। তারা সকল দিক হতে উন্নত হতে থাকে। বিমানের ব্যবহার কেবল তখন তারা মাত্র শুরু করে। আর অন্যদিকে স্থল ও জলপথে আগে থেকেই তারা ছিল অত্যন্ত উন্নত। কিন্তু সেইদিক হতে তুরস্ক সকল দিক হতে একবারেই পশ্চাতগামীতার মধ্যে ছিল। তাই তারা জার্মানির সাথে সঙ্ঘবদ্বভাবে নতুন করে নিজেদেরকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
৯. বিদেশী চাপ হতে মুক্তি
উসমানীয় খিলাফতের কাঠামো যখন দূর্বল হতে চলছিল তখন থেকেই তাদের উপর তাদের পূর্বের স্থানসমূহকে দখল করে রাখা দেশ তথা ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ড, রাশিয়া তাদের উপর বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ প্রদান করত আর এতে করত আবার তার পাশাপাশি সামরিক হুমকির মাধ্যমে যেকোন দাবী আদায় করত এবং লাগামহীনভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। এমতাবস্থায় তুরস্ক সরকার জার্মানির সাথে সংঘবদ্ব হয়ে তাদর বিরুদ্বে যুদ্ব করার ব্যাপারে পরিকল্পণা গ্রহণ করে।
১০. উপসাগরীয় অঞ্চলকে ব্রিটিশমুক্ত রাখা
উসমানীয় শাসনামলে উপসাগরীয় অঞ্চলসমূহ অর্থাৎ বাহরাইন, ওমান, আরব আমিরাতের অধিকাংশ জায়গা ব্রিটিশ আশ্রিত অংশ হিসেবে পরিগণিত হত আর এমনিভাবে উসমানীয় খিলাফতের অংশের সাথে ব্রিটিশের ঘাটিকে উসমানীয়রা সুনজরে দেখতে পারে নাই। যার ফলে তুরস্ক ব্রিটেনের বিরুদ্বে যুদ্ব্বে অবতীর্ণ হন।
ফলাফল
প্রথম বিশ্বযুদ্ব ১৯১৮ সালে সমাপ্ত হয়। এই যুদ্বে মিত্রপক্ষ যুদ্বে জয় লাভ করে। আর অক্ষপক্ষ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছিল। আর এর দ্বারা তুরস্ক বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। তুরস্কের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আর এমনিভাবে উসমানীয়দের শাসন ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে দিয়েছিল এই প্রথম যুদ্বের ফলাফল হিসেবে। এই যুদ্বের ফলাফল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১. অসংখ্য সৈন্যের হতাহত
এই যুদ্বে তুরস্ক বাহিনী অংশগ্রহণ করার জন্য বহু সৈন্য মারা যান। আর এতে করে তুরক্সের সামরিক কাঠামো একেবারেই নড়বড়ে হয়ে যায়।
২. অর্থনৈতিক অস্থিরতা
তুরস্কের এই যদ্বে পরাজায়ের মাধ্যমে সামরিক ক্ষতির সম্মুখীন পাশাপাশি অর্থনৈতিক এক বিপর্যয়ের মধ্যে তারা প্রবেশ করেত থাকে। দিন দি ন বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে আর বিদেশীদের হাতে সকল মূল মূল ব্যবসা বাণিজ্য তাদের হাতে চলে যায়।
৩. আরব জাতীয়বাদের বিকাশ
যখন উসমানীয়রা সমগ্র মিত্র শক্তির বিরুদ্বে প্রাণ পণ চেষ্টার মাধ্যমে যুদ্বে জয় লাভ করার জন্য চেষ্টা করছিল তখন উসমানীয় সম্রজ্যের অধীনে অবস্থিত আরব দেশসমূহে নতুন করে আরব জাতীয়তাবাদকে নিজেদের স্বকীয়তার জন্য আরব বলে পরিচয় দিতে প্রকশ করতে থকে আর এর ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব, কুয়েত, ইউ এ ই, ইয়ামান, ওমান, মিসরও, জদার্নসহ আরও নানা দেশের মধ্যে ইহা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
৪. তুরস্ক জাতীয়তাবাদের সাফল্য
এই যুদ্বে উসমানীয়দের পতনের জন্য তুরস্কের জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসী লোকেরা বিশেষভাবে সুগোগ সুবিধা লাভ করেত থাকে। তারা সর্বদা বিষয়টি আশা করত যে, যেকোনভাবে উসমানীয়দের যাতে করে পতন ঘটে আর নতুন করে তারা দেশকে গড়বে। আর স্বপ্নে তাই বাস্তবায়ন হয় আর তুরস্কের জাতীয়তাবোধে বিশ্বাসী যুবক অনেক গর্বের সাথে ছবি উঠালেন।
৫. ইরাক সিরিয়া শত্রুপক্ষের হাতে চলে যাওয়া
যখন ১ম বিশ্ব যুদ্ব শুরু হয় তখন হতেই অত্যন্ত সুকৌশলে ব্রিটেনের লোভ ছিল ইরাক ও সিরিয়ার প্রতি। তারা অত্যন্ত সুকৌশলে কয়েকবার কয়েকটি অভিযান প্রেরণ করে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপনে তারা সফল হয় আর পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম এভাবে করে অপমানজনক উপায়ে মুসলিমগণ নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হারাতে বসে।
৬. জেরুজালেমের কর্তৃত্ব হারানো
প্রায় হাজার বছর ধরে ক্রুসেড যুদ্ব সংঘটিত হতে থাকে। আর খৃষ্টানরা কোনভাবেই যুদ্বের পূর্বে কখনো এতটা সাফল্যের সাথে জেরুজালেম জয় করতে পারে নাই। যেদিন তারা জেরুজালেম জয় করে সেদিন সেই সেনা অফিসার এই কথা বলেছিল যে, আজ জেরুজালেম জয়ের মধ্য দিয়ে ক্রুসেডের অবসান ঘটল।
৭. ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা
যখন হতে সিরিয়া দখল করল তখন হতে ইয়াহূদীরা নতুন করে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে যা তাদের তীর্থ স্থান নামে পরিচিত। যদিও তাদের পৃথক রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন ছিল অনেক পুরাতন। এরপরেও যখন জেরুজালেম ব্রিটিশ অধিগ্রহণ করেন তখন থেকে ইয়াহূদীরা নতুন রাষ্ট্রের কথা চিন্তা ভাবনা শুরু করে এবং সেখানে তারা অনেকেই আরবদের কাছে থেকে চড়া দামে জমি ক্রয় করে জীবন যাপন শুরু করে। ১৯১৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বেলফোরের নতুন ঘোষণার মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বীকৃত পাওয়া যায়।
৮. অহরহ আরব রাষ্ট্রের জন্ম
যেহেতু উসমানীয়গণ যুদ্বে পরাজয় করতে থাকে আর ব্রিটিশরা আগে থেকেই আরবদেশে বিভিন্ন লোকদের মাঝে তুরস্ক বিরোধী মনোভাবে তুলে ধরতে থাকে। লরেন্স অব আরাবিয়া এই ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর এমনি ভাবে আরবের পূর্বের সেই গোত্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা পুনরায় ফিরে আসে। আর এমনিভাবে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ইয়ামান, জদার্ন, সিরিয়া অসংখ্য নেতার মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টি হয় পারস্পারিক সম্পর্কের দিক দিয়ে।
৯. উসমানীয়দের পতন
এই যদ্বু এ উসমানীয়রা জার্মান পক্ষ নেওয়ার ফলে তাদের পতন অনীবার্য হয়ে পড়ে। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ব শেষ হওয়ার ৭-৮ বছরের মধ্যেই সমগ্র উসমানীয়দের ছয়শ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছিল।
১০. গণতন্ত্র ও কামাল আতাতুর্কের উত্থান
আর যুদ্বের পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু সকলের মধ্যে উসমানীয়দের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক মনোভাব কাজ করছিল তাই তখন হতেই কামাল আতাতুর্ক এই দেশকে পশ্চিমাদের সাজানো পরিকল্পনা অনুযায়ী সকলের মাঝে আধুনিক গণতন্ত্র চালু করে যান যদিও এর সুফল তিনি নিজে খুব বেশী দিন ভোগ করতে পারেন নাই।

প্রশ্নঃ কারবালার যুদ্বের কারণ, মর্মান্তিক ঘটনা ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা কর।


ভূমিকা
কারবালার ইতিহাস একটি মুসলিমগণের জন্য মর্মান্তিক ইতিহাস। যে যুদ্বে মুসলিমগণ তাদের একজন শ্রেষ্ঠ তথা হুসায়ন(রাঃ)কে হারান।এই যদ্বু তৎকালীন নিষ্ঠুর শাসক ইয়াজীদ ও মুহাম্মদ(সাঃ) এর দৌহিত্র হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ব বিভিন্ন কারণে সঙ্ঘটিত হয় যে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা... করা হলঃ
কারণ
ইয়াজিদের মনোনয়ন
মুআবিয়া(রাঃ) ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামের ইতিহাসে এক নব অশুভ অধ্যায়ের শুরু হয়।  হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর পুত্র ইয়াজিদ ছিল নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক, অধার্মিক ও মদ্যপায়ী।তাঁর ব্যাপারে অনেকেই মদ পান করা, বানর নিয়ে খেলা করা, ফাহেশা কাজ করা এবং আরও বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজের অভিযোগ আনায়ন করে থাকে। হযরত মুয়াবিয়ার সম্মানার্থে অনেকেই বলেন তিনি যখন তার পুত্রকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেন, তখন ইয়াজিদ নাকি এমন দুরাচারী ছিল না। মুয়াবিয়া মৃত্যুর পরই নাকি সে এমন হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) এর প্ররোচনা
এই পাপাচারী ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন মেনে নিলেন না। হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর(রাঃ), আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর(রাঃ), আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর(রাঃ) সমর্থন করেন। অবশ্য কিছুদিন পর শেষোক্ত দুজন ইয়াজিদের প্রলোভনে পড়ে তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন। ইয়াজিদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসাইন এবং আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর মক্কায় চলে যান। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়।এদিকে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) মক্কায় থেকে গেলেন এখানে যাতে করে কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। আর তিনি হুসাইন(রাঃ)কে ইয়াজীদের বিরুদ্বে প্রতিবাদ করার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুললেন।
কূফাবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন
৬০ হিজরিতে ইরাক বাসীদের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, হুসাইন (রা:) ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হাতে বায়আত করেন নি। তারা তাঁর নিকট চিঠি-পত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিল যে ইরাক বাসীরা তাঁর হাতে খিলাফতের বায়আত করতে আগ্রহী। ইয়াজিদকে তারা সমর্থন করেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিল। চিঠির পর চিঠি আসতে লাগল।তখন নুমান ইবন বশীর ছিল কূফার গভর্নর।কেউ তার পিছনে জুমা ও ঈদের সালাত আদায় করতে চাইলো না। এভাবে পাঁচ শতাধিক চিঠি হুসাইন (রা:)এর কাছে এসে জমা হল।ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইনের মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হুসাইনের (রা.) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে। উপরন্তু কুফাবাসীগন ইয়াজিদের অপশাসনের হাত থেকে বাচার জন্যে বারংবার ইমাম হুসাইন-এর সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকলে তিনি তাতে সাড়া দেন। তিনি কূফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
এর আগে হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। মুসলিম কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। গিয়ে দেখলেন,আসলেই লোকেরা হুসাইনকে চাচ্ছে। লোকেরা মুসলিমের হাতেই হুসাইনের পক্ষে বয়াত নেওয়া শুরু করল। হানী বিন উরওয়ার ঘরে বায়আত সম্পন্ন হল।এই সময়ে জানা যায় যে, প্রায় ১৮ হাজার লোক হানী ইবন উরওয়ার ঘরে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।
এই সময়ে নুমান ইবন বশীর এই ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তিনি এদেরকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই অবস্থা হতে মুক্তি হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন। কিন্তু এতে করে কতিপয় ব্যক্তি ক্ষুব্দ্ব হয়ে তার বিরুদ্বে ইয়াজিদের কাছে প্রেরণ করল আর ইয়াজিদ তখন নুমানকে এই পদ হতে অপসারিত করল আর সিরিয়াতে ইয়াজিদের নিকট এই খবর পৌঁছা মাত্র বসরার গভর্ণর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পাঠালো। ইয়াজিদ উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে আদেশ দিলো যে, তিনি যেন কুফা বাসীকে তার বিরুদ্ধে হুসাইনের সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন। সে হুসাইনকে হত্যা করার আদেশ দেন নি।
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করতে লাগলেন এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন। পরিশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, হানী বিন উরওয়ার ঘরে হুসাইনের পক্ষে বায়আত নেওয়া হচ্ছে।
 অতঃপর মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে অগ্রসর হয়ে দ্বিপ্রহরের সময় উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময় উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালেন। তিনি এমন ভীতি প্রদর্শন করলেন যে, লোকেরা ইয়াজিদের ধরপাকড় এবং শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে পলায়ন করতে শুরু করল। কুফা বাসীদের চার হাজার লোক পালাতে পালাতে এক পর্যায়ে মুসলিম বিন আকীলের সাথে মাত্র ত্রিশ জন লোক অবশিষ্ট রইল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, হুসাইন প্রেমিক আল্লাহর একজন বান্দাও তার সাথে অবশিষ্ট নেই।এরপরে তারাও পলায়ন করল।এক বৃদ্বার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর তখন একটি ঘোষণা সারা কুফা নগরীতে ঈশার সালাতের পরে ইবন যিয়াদ ঘোষণা করল যে, যে ইবন আঁকিলকে আশ্রয় দিবে তাকে হত্যা করা হোক আর যে তাকে ধরিয়ে দিবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।আর এতে করে সেই বৃদ্বা তার পুত্রেদের হত্যার কথা স্মরণ করল আর এই ভয়ে আকীলকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এবার তাকে গ্রেপ্তার করা হল।মুসলিম ইবন আশআস তাকে যেয়ে গ্রেফতার করল।  উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। এরপরে হানীকেও হত্যার নির্দেশ প্রদান করলো। মুসলিম বিন আকীল উবাইদুল্লাহএর নিকট আবেদন করলেন, তাকে যেন হুসাইনের নিকট একটি চিঠি পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এতে উবাইদুল্লাহ রাজী হলেন। চিঠির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ছিল এ রকম:
“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না। কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেয়া এই তথ্য মিথ্যা নয়।”
কারবালার ঘটনা
হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। অতঃপর যুল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফা দিবসে উবাইদুল্লাহ মুসলিমকে হত্যার আদেশ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, মুসলিম ইতিপূর্বে কুফা বাসীদের ওয়াদার উপর ভিত্তি করে হুসাইনকে আগমনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। অনেক সাহাবী তাঁকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইবনে উমার (রাঃ) হুসাইনকে লক্ষ্য করে বলেন: হুসাইন! আমি তোমাকে একটি হাদীছ শুনাবো। জিবরীল (আঃ) আগমন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া এবং আখিরাত- এ দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম হবেন না। তোমাদের ভালর জন্যই আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। হুসাইন তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং যাত্রা বিরতি করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর ইবনে উমর (রাঃ) হুসাইনের সাথে আলিঙ্গন করে বিদায় দিলেন এবং ক্রন্দন করলেন।
সুফীয়ান ছাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম।
বের হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন: হুসাইন তাঁর জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার সময় আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ করে আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন। (ইয়াহ্-ইয়া ইবনে মাঈন সহীস সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছল।সালাবিয়া নামক স্থানে এই চিঠিটি তিনি গ্রহণ করলেন। এছাড়া তিনি যাবালা নামক স্থানে পৌছলেন তখন তার দুধভ্রাতা আব্দল্লাহ ইবন বাকতারের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন যাকে হুসায়ন(রাঃ) একটি চিঠি দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। আর তাকেও উবায়দুল্লাহ বিল্ডিং এর ছাদ হতে ফেলে দেন। এ স্থানে পৌঁছে গিয়ে এই ব্যাপারে অবগত হলেন যে,  চিঠির বিষয় অবগত হয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন।
ইবন যিয়াদ বাহিনীর অবরোধ
পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের গতিরোধ করল।জানা যায় যে, আমর ইবন সাদ প্রায় চার হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় হুসাইন(রাঃ)কে মোকাবিলার জন্য। হুসাইন সেখানে অবতরণ করে আল্লাহর দোহাই দিয়ে এবং ইসলামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
   ১. হুসাইন বিন আলী (রা:) এবং রাসূলের দৌহিত্রকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত গ্রহণ করবেন। কেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না।
   ২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
   ৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করবেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
ইয়াজিদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না। তারা বলল: উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন আমরা তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব মানতে রাজী নই। এই কথা শুনে উবাইদুল্লাহএর এক সেনাপতি (হুর বিন ইয়াজিদ) বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা উবাইদুল্লাহএর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই দৃঢ়তা প্রদর্শন করল। সেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন এবং হুসাইন ও তাঁর সাথীদের দিকে গমন করলেন। হুসাইনের সাথীগণ ভাবলেন: তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন। তিনি কাছে গিয়ে সালাম দিলেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে উবাইদুল্লাহএর সৈনিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের দুইজনকে হত্যা করলেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
আশুরার দিন
সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান ছিল। যেখানে হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে মাত্র ৭২ জনের মত সৈন্য ছিল আর ঐদিকে তাদের সৈন্যসংখ্যা প্রায়  চার হাজারের মত ছিল।  হুসাইনের সামনেই তাঁর সকল সাথী বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হলেন। অবশেষে তিনি ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন না। তিনি ছিলেন সিংহের মত সাহসী বীর। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের মুকাবিলায় তাঁর পক্ষে ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব হল না। কুফা বাসী প্রতিটি সৈনিকের কামনা ছিল সে ছাড়া অন্য কেউ হুসাইনকে হত্যা করে ফেলুক। যাতে তার হাত রাসূলের দৌহিত্রের রক্তে রঙ্গিন না হয়। পরিশেষে নিকৃষ্ট এক ব্যক্তি হুসাইনকে হত্যার জন্য উদ্যত হয়। তার নাম ছিল সীমার বিন যুল জাওশান। সে বর্শা দিয়ে হুসাইনের শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। অতঃপর ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে ৬১ হিজরীর মুহাররাম মাসের ১০ তারিখে আশুরার পবিত্র দিনে ৫৭ বছর বয়সে তিনি শাহাদাত অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেন।  আলী (রা:)এর সন্তানদের মধ্যে থেকে আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস।হোসাইনের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আঁকবার এবং আব্দুল্লাহ।হাসানের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম।আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল।আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ। ইতি পূর্বে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের নির্দেশে মুসলিম বিন আকীলকে হত্যা করা হয়। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন। বলা হয় এই সীমারই হুসাইনের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেউ কেই বলেন: সিনান বিন আনাস আন্ নাখঈ নামক এক ব্যক্তি তাঁর মাথা দেহ থেকে আলাদা করে।
হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।

ফলাফল
শীয়া সুন্নি ফেরকার সৃষ্টি:
হুসাইনের এই রক্তপাতকে কিছু লোক কোনমতেই মেনে নিতে পারলো না। তারা বিদ্রোহী হলো। তারা ইয়াজিদ এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলো। এরা ইতিহাসে শীয়া নামে পরিচিত হলো। ১০ই মহররমই এই শিয়াদের জন্ম। মুসলমানরা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। একপক্ষ অসন্তুষ্ট হলেও ইয়াজিদের শাসন মেনে নিলো। তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামে একটা নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। যারা এর কিছুই মানলো না তারা শীয়া-নামীয় আরেক নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। মাযহাবীয় এ বিভক্তি ধীরে ধীরে স্থায়ী রুপ নিলো, যা ইসলামী সমাজকে দুর্বল করে দিলো। কারবালার ঘটনা থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল প্রকটভাবে। কারবালার ঘটনা থেকেই শীয়া মতবাদের সুত্রপাত হয়েছিল।
মদীনার উপর ধ্বংজজ্ঞ
ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: ৬১ হিজরিতে কারবালার ময়দানে শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন(আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের দুই বছর পর মদিনার মুসলমানরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে, তাদেরকে দমন করার জন্য ইয়াজিদ মদিনার হাররা অঞ্চলে একটি সেনাবাহিনী পাঠায়। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ছিল মুসলিম বিন উকবা, সে মদিনার আবাল বৃদ্ধ নারী, পুরুষ শিশুসহ সবাইকে হত্যা করে। আর এই হামলায় শুধুমাত্র যারা মদিনা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল এবং যারা হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন(আ.)-এর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা ব্যতীত সকলেই শাহাদাত বরণ করেছিল।
কাবার উপর হামলা
ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।
ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে।
পারস্যদের উত্থান
কারবালার যুদ্বের ফলে দুই দলের অন্তর্গত লড়াই অর্থাৎ পারস্য ও আরবের লড়াই ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, কারবালার হত্যাকাণ্ড এবং পারস্যে এক জাতীয় উদ্দীপনার জন্মদান করল। এই উদ্দীপনা পরে উমাইয়াদের ধ্বংস সাধনে আব্বাসীয় বংশধরদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল।
পারস্যবাসীর মধ্যে এই সময়ে নতুন করে জাতীয়তাবোধ চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটা শুরু হয়। যার প্রেক্ষিতে তারা খুরাসানের আবূ মুসলিমের বিদ্রোহ, আব্বাসীয়দের উত্থান সর্বশেষে মধ্যযুগীয় শিয়ার বিপ্লবের পটহ আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
ইয়াজিদে পতন
এই যুদ্বের মাধ্যমে মনে করা হয় যে, ইয়াজিদের জয় হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্বের কারণে তার ঠিক ৬৬ বছর পরেই উমাইয়া বংশের উপর চূড়ান্তভাবে অভিশাপ নেমে আসে। তারা হয়ে যায় একেবারেই ছিন্নভিন্ন। সকল উমাইয়া খলীফার লাশ খুঁড়ে বের করা হয় আর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়। আর এমনিভাবে উমাইয়া বংশের লোকদের উপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার ও সীমাহীন নির্যাতন। অন্যদিকে হুসায়ন(রাঃ)কে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইতিহাসে তাঁকে এক বিশেষ ধরনের মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে। আর তাঁর জীবনাদর্শকে লালায়িত করে অনেক সময়ে মুসলিম উম্মাহকে শোষণের বিরুদ্বে সোচ্চার হওয়ার ব্যাপারে আহবান জানানো হয়।  আর যখনই ইয়াজিদ কাবা ঘরে হামলা চালায় এমতাবস্থায় সে মারা যায়। 

প্রশ্নঃ ক্রিমিয়ার যুদ্বের কারণ, ঘটনা ও ফলাফল লিখ।


তুরস্কের উসমানীয় শাসনব্যবস্থা প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে থেকেই স্বল্প সময়ে একটি বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলতে তারা সক্ষম হন। কিন্তু কালক্রমে কতিপয় দূর্বল শাসকগণের ছোবলে পড়ে এই শক্তি হারাতে থাকে। এর মধ্যে ক্রিমিয়ার যুদ্ব রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যকার সঙ্ঘটিত হয়েছিল যে যুদ্ব এই উসমানীয়দের একেবারে বিপর্যয়ের ...দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। এই যুদ্ব মূলত রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে শুরু হয়। এরপরে তুরস্কের পক্ষে ফ্রান্স ও ব্রিটেন এবং সর্বশেষে অষ্ট্রিয়া এবং সুইডেন যোগদান করে। এই যুদ্বে রাশিয়ার বাহ্যত পরাজয় হলেও এর দ্বারা তুরস্কের অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছিল। এই যুদ্বের ইতিহাস সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
কারণ
এই যুদ্ব রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে সংঘটিত হওয়ার প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১. বিদ্রোহীদের আশ্রয় প্রদান
অষ্ট্রিয়ার অধীনে শাসিত হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের লোকেরা বিদ্রোহ শুরু করলে পরে তা ব্যর্থ হয়। এরপরে অনেক বিদ্রোহী তুরস্কের উসমানীয় রাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন অস্ট্রীয় ও রুশ সরকার ইতিপূর্বে উসমানীয়দের উপর নাখোশ ছিল তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। তাই তারা উসমানীয়দের বারবার চাপ প্রয়োগ দিতে লাগল যাতে করে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু তুরস্ক সরকার তা নাকচ করে দিল। আর এতে করে যুদ্বের দানা বাজতে শুরু করে।
২. ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা
ব্রিটিশ সরকার সর্বদা এই বিদ্রোহের ব্যাপারে বিদ্রোহীদের সমর্থন প্রদান করত। আবার যখন এই বিদ্রোহীদের তুরস্ক আশ্রয় দেওয়া শুরু করে তখন ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পরাস্টোন উসমানীয়দের সমর্থন দেয় আর এতে করে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তারা নাখোশ হল তাদের ব্যাপারে নতুন করে ক্ষতি সাধান করার চিন্তা ভাবনা শুরু করল।
৩. মসজিদুল আল আকসা নিয়ন্ত্রণ
জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আল আকসা খৃস্টানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। তুরস্কের উসমানীয়রা সর্বদা ব্রিটিশদেরকেই প্রাধান্য প্রদান করত সেই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। আর এতে করেও রাশিয়া উসমানীয়দের উপর ক্রুদ্ব হতে থাকে।
৪. গ্রীক অর্থডোক্স ও রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যকার মনোমালিন্য
১৬৯০ সালে মহামতি সুলায়মান এই নীতি অবলম্বণ করেন যে, জেরুজালেমের যাবতীয় গীর্জার দায়-দায়িত্ব রোমান ক্যাথলিকরাই করবে। ১৭৪০ সালে ফরাসি ও উসমানীয়দের মাঝে এই ধরনের চুক্তি সাধিত হয়েছিল। কিন্তু দিন দিন গ্রীক অর্থোডোক্সের সংখ্যায় বৃদ্বি পাওয়ার দরুন রোমান ক্যাথলিকদের গুরুত্ব ক্রমাগত কমতে থাকে। আর এদিকে রাশিয়ার অধিবাসী গ্রীক অর্থোডোক্সের অনুসরণ করত। যার ফলে সেখানে গ্রীক অর্থোডোক্সের সংখ্যা এত বেশী হওয়ার পরেও কেন ফরাসিদের রোমান ক্যাথলিকদের প্রতি এত বেশী গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে তা সহজেই রুশগণ মেনে নিতে পারে নাই। আর এতে করেই রুশ-উসমানীয় এবং রুশ-ফরাসীদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
৫. ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপ
উসমানীয় সম্রাজ্য যখন দূর্বল হয়ে পড়ছিল তখন, তাদের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সরকার বিশেষভাবে হস্তক্ষেপ করত। আর এই বিষয়টি প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া এত সহজে মেনে নিতে পারে নাই। তাই ১৮৫৩ সালের ১৪ জানুয়ারি রুশ প্রধানমন্ত্রী নেসেলরোড তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসেলের কাছে এই চিঠি প্রেরণ করেছিলেন যে, যাতে করে ইংরেজ ও ফরাসীগণ কোনভাবেই উসমানীয়দের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে এতে করে রাশিয়া নতুন করে সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছিল।
৬. কৃষ্ণ সাগরে রণতরী বৃদ্বি
রাশিয়া যখন কৃষ্ণ সাগরে রণতরী বৃদ্বি করতে থাকলেন তখন থেকেই তুরস্ক, ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন করে আতংক সৃষ্টি হতে থাকল যে, যুদ্ব হয়তো বেজেই যাচ্ছে আর কিছুদিনের মধ্যেই।
৭. ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের অপপ্রচার
ব্রিটিশ দূত কন্সট্যান্টিনোপলে এসে রুশ বিরোধী বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রচার করতে থাকে যার ফলে সকলের মাঝেই নতুন করে রুশ বিরোধী মনোভাবে গড়ে উঠেছিল আর রুশ সরকার এতে বিব্রত হতে থাকে।
৮. মন্টিনিগ্রো প্রশ্নে অবস্থান
বলকানের রাজ্য মন্টিনিগ্রোকে পরবর্তীতে বসনিয়ার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর এতে করে মন্টিনিগ্রোর অধিবাসীরা বসনিয়ার দক্ষ প্রাদেশিক শাসক উমর পাশাকে সরানোর ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। এতে করে উমর পাশা ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে পরে অস্ট্রিয়া সরকার এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আর সরাসরি এই চিঠি কন্সট্যান্টিনোপলে এই চিঠি প্রেরণ করলেন যে, অতি শীঘ্রই যদি উমর পাশাকে সরানো না হ তাহলে তারা তার ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তখন অস্ট্রিয়া সরকারকে রুশ সরকার একেবারেই প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন প্রদান করল আর এতে করে যদ্বের দানা বাঁধা করতে থাকে।
৯. উসমানীয়দের দূর্বলতা
উসমানীয় শাসনব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিল। যার ফলে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের প্রভাব এই সম্রাজ্যে ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। আবার মন্টিনিগ্রো বিদ্রোহ দমনের ব্যাপারেও উসমানীয়রা দূর্বল হতে লাগল।তাদের এই নমনীয় আচরণের দ্বারা রাশিয়া বুঝতে পারল যে, উসমানীয়দের শক্তি আর আগের মত নাই তাই তারা তাদের উপর নতুন করে হামলা করার পরিকল্পণা করতে থাকে।
১০.সীমান্ত সমস্যা
অনেক দিন যাবৎ অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সীমান্ত নিয়ে সমস্যা বিরাজমান চলে আসছিল। আর এই কারণে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা কাজ করতে থাকে আর যুদ্বের ব্যাপারে প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করতে থাকে।
১১. রাশিয়ার দাপট বৃদ্বি
ইতিপূর্বে ব্রিটিশ, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনসহ প্রায় সকল ইউরোপীয় দেশসমূহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ও প্রান্তরে তারা উপনিবেশ শাসন ব্যবস্থা স্থাপন করতে সমর্থ হয়। আর অন্যদিকে রাশিয়া এত বিশাল ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আশে পাশের কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও বিশেষ ধরনের অবস্থান ধরে রাখতে পারে নাই। আর ফলে রাশিয়া নতুনভাবে উপনেবেশিক চিন্তা ধারার কথা শুরু করে আর এতে করেই তুরস্কের দিকে তারা তীর নিক্ষেপ করে তাদের শক্তি বৃদ্বি করার ব্যাপারে নকশা প্রণয়ন করল।
১২. প্রত্যক্ষ কারণ
এরপরে রাশিয়ার সেনানায়ক মেনশিকভ ১৮৫৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের সুলতানের কাছে এই দাবী পেশ করে যে,  তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ পাশার পদত্যাগ করতে হবে, গ্রীক খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রুশ-তুরসকের মধ্যকার সামরিক চুক্তি সম্পাদন এবং গ্রীক খৃষ্টানদের উপর রুশদের কর্তৃত্ব। এখানে সুলতান সকল প্রস্তাবসমূহ মেনে নিলেও শেষের বিষয়টি অর্থাৎ, রুশদের কর্তৃত্ব এই বিষয়টি মেনে নিতে পারে নাই। আর এতে করেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে এবং রুশ কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম তুরস্ক-রুশ সীমানার নিকটে অবস্থিত মোলদাভিয়া ও ওয়ালাখিয়ার অংশ দখল করার ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
যুদ্বের সার্বিক অবস্থা
ক্রিমিয়ার যুদ্ব এক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঘটনাবলী সঙ্ঘটিত হতে থাকে। এই সকল বিষয়াবলী সম্পর্কে নিম্নে ধারনা প্রদান করা হলঃ
ব্রিটিশ ও ফরাসি জাহাজ প্রেরণ
যখন রুশ বাহিনী মোল্ডাভিয়া এবং ওয়ালখিয়া আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত গ্রহণ করে তখন ১৮৫৩ সালের ৩০ মে ব্রিটিশ নৌবহর তুর্কী রাজধানীতে অবতরণ করে। জুন মাসের ১৩ তারিখ ব্রিটিশ নৌবহর বেসিকা উপসাগরে উপনীত হয়।
রুশ বাহিনীর দখলে কতিপয় অঞ্চল
রুশ বাহিনী প্রথমে কাউকে ভ্রক্ষেপ না করে  মোল্ডাভিয়া এবং ওয়ালখিয়ার বিশেষ কিছু অংশ দখল করে ফেলে।
অস্ট্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ
তখন অস্ট্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্ট বিয়েলের মধ্যস্থতায় ভিয়েনাতে ব্রিটিস,ফরাসী এবং রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয় এবং এই সিদ্বান্ত হয় যে, ১৭৭৪ এবং ১৮৯৩ সালের রুশ-তুর্কী চুক্তি অনুসারে খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। ফ্রান্স আর রাশিয়া ছাড়া কোন রাষ্ট্র সেখানজার খৃষ্টানদের ব্যাপারে সহায়তা করতে পারবে না।
তুরস্কের প্রত্যাখ্যান
কিন্তু তুরস্ক এই চুক্তি মেনে নেয় নাই।কারণ প্রথমটা তাদেরকে এই চুক্তির জন্য আহবান জানানো হয় নাই আর এর আগে এদের মধ্যকার এমন কোন চুক্তি হয় নাই যার দ্বারা রাশিয়ানরা তাদের গ্রীক খৃষ্টানদের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না।
তুরস্কের প্রস্তুতি
এর মধ্যে তুরস্কে রুশ বিরোধী মনোভাব ব্যপক আকার ধারন করতে থাকে সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ(১৮৫৩) তুরস্ক মন্ত্রিসভা রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করে আর ২৯ তারিখ সুলতান তা অনুমোদন করেন। অন্যদিকে রাশিয়ার জার নিকোলাস এবং প্রধানমন্ত্রী নেসেলরোড সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ অস্ট্রীয় সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফে সাথে মিলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে তোলবার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু অস্ট্রিয়া এই যুদ্বে জড়াতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। কারণ অস্ট্রিয়া শুরু হতেই নিরপেক্ষ ছিল। তারা যুদ্ববিরতির ব্যাপারে পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু রাশিয়া ইতিপূর্বে মোল্ডভা এবং ওয়ালখিয়া দখল করে রাখার ফলে এমন এক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, যুদ্ব কোনভাবেই তারা এড়াতে পারে নাই। অক্টোবরের ২৭ তারিখ উমর পাশা একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে দানিয়ুব নদীর তীরে যান এবং রুশ সেনাদলের সম্মুখীন হন। ককেশাস অঞ্চলে এদের মধ্যকার তুমুল লড়াই শুরু হয়।
ইং ফরাসী বাহিনীর প্রবেশ
নভেম্বরের ১৫ তারিখ সেখানে ইং-ফরাসী বাহিনী বসবরাস প্রণালীতে প্রবেশ করে।এদিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যামারস্টোনের প্রভাবে মন্ত্রীসভা রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া তুরস্কের একটি নৌযান সাইনোপ ধ্বংস করে দেওয়ার পরে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয় আর তখন ব্রিটিশরা রুশদের প্রতিহত করার ব্যাপারে বদ্ব পরিকর হয়ে উঠে। এরপরে ১৮৫৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ ইংরেজ-ফরাসী নৌবহর কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করে। ১৮৫৪ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক,ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সাধিত হয় যে, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সর্বদা তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য কাজ করে যাবে। এরপরে ঐ বছরের মার্চের ২৮ তারিখ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সম্মিলতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব ঘোষণা করে।
রাশিয়ার দূর্বলতা
এই য্বদ্বের মধ্যে রাশিয়া সুবিধাজন স্থান দখল করে নিতে পারে নাই একেবারে প্রথম থেকেই। কারণ প্রথমত, ইউরোপের দুটি পরাশক্তি সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্বে অংশগ্রহণ করার জন্য রাশিয়ানরা সঠিকভাবে তাদের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে নাই। আবার অন্যদিকে রাশিয়া এই যুদ্বে মিত্র হিসেবে অষ্ট্রিয়ার সাথে মিলে যুদ্ব করতে সক্ষম হ নাই।অষ্ট্রিয়া বরাবর নিরপেক্ষের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে অষ্ট্রিয়া তাদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্তে এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করে যে, মোল্ডভা ও ওয়ালখিয়া এখন থেকে রুশ সেনার পরিবর্তে অষ্ট্রিয়ার বাহিনী অবস্থান করবে।
মিত্র বাহিনীর হামলা
কিন্তু এরপরেও মিত্র শক্তি এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করল যে, ভবিষৎ যাতে করে রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্বে যুদ্ব না করে তাই তারা ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত নৌবাহিনী ধ্বংস করে নতুনভাবে আক্রমণ করার পরিকল্পণা গ্রহণ করে। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৫০০০০ ব্রিটিশ ও ফরাসী সেনা ক্রিমিয়ায় অবরতণ করে। কারণ এই যুদ্বে যাদের বিরুদ্বেই লড়াই করবে তারাই তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হত।
সঙ্ঘর্ষ
এখানে বড় ধরনের কয়েকটি যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়েছিল। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে আলমা নদীর তীরে মিত্রবাহিনী একটি অগ্রসরমান রুশবাহিনীকে পরাজিত করে। অক্টোবর মাসের মাঝ দিয়ে বিখ্যাত সিবাস্তপোল দুর্গের উপর গোলাবর্ষণ করলেও মিত্রবাহিনী সুবিধা করতে পারে নাই। এই মাসের শেষের দিকে ব্যালাক্লাভার যুদ্বে একটি ক্ষুদ্র ব্রিটিশ বাহিনী অপূর্ব শৌর্য ও সাহসের পরিচয় দিয়ে নভেম্বরের ৫ তারিখ ইংকারম্যানের যুদ্বে রুশ বাহিনী মিত্রবাহিনীর ব্যুহ ভেদ করার ব্যাপারে ব্যর্থ হয়। প্রবল শীত ও চরম অব্যবস্থাকর অবস্থার ফলে মিত্রবাহিনীর বহু সৈন্য মৃত্যু মুখে পতিত হয়। ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের প্রচেষ্টায় অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়।
সিবাস্তক দূর্গ দখল করার পরেও মিত্রবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করতে চাইলেও তা সম্ভবপর আর হয়ে উঠে নাই।
এরপরে অষ্ট্রিয়া এবং সুইডেন মিত্রপক্ষের পক্ষে যোগদান করে। আর এরমধ্যে দিয়ে রাশিয়ান বাহিনী তাদের সৈন্যবাহিনী বিভিন্ন জায়াগা হতে গুটিয়ে নিতে থাকে। এভাবে করে রাশিয়া এই যদ্বে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে থাকে।
প্যারিস সম্মেলন
পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ এ প্যারিসে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা কিনা শান্তি সম্মেলন নামে পরিচিত ছিল। এখানে ফরাসি, ব্রিটেন, তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয় আর রাশিয়া তার পরাজয় মেনে নেয়।
ফলাফল
১. নির্দিষ্ট অঞ্চলে ক্ষমতা খর্ব
প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে যখন ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল তখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই ব্যাপারে সম্মত হয় যে, কৃষ্ণসাগরীয় ও ককেশাসে রাশিয়ার ক্ষমতা খর্ব করা হবে।
২. ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা
আজভ সাগর বেসামরিকরণ করা হয় আর এর দ্বারা ককেশাস অঞ্চলের মধ্যে রাশিয়া ও উসমানীয় সোমরাজয়ের মদ্যে সারকাসিয়া এবং মিংরেলীয়া নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন প্রতিনিধিদের সমর্থন না পাওয়ায় তা পরিত্যক্ত হয় আর এই সমাধানের কোন মীমাংসা আর হয় নাই।
৩. অষ্ট্রিয়ার ক্ষমতা খর্ব
অষ্ট্রিয়া প্রথম হতেই এই যদ্বে নিরপেক্ষের ভূমিকা পালন করতে চায় তাদের স্বার্থের দরুন। পরবর্তিতে যখন দেখা গেল যে, মিত্রবাহিনী একটি সুবিধাজনক অবস্থান সৃষ্টি করেছে তখন তারা মিত্রবাহিনীর পক্ষ অবলম্বণ করে যাতে মোল্ডাভা আর ওয়ালাখিয়ারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা ইসমাইল দূর্গে নিজেদের সেনাদল ও দানিয়ুবে নৌবহর সত্যাপন করার পরিকল্পণা গ্রহণ করে। কিন্তু মিত্রশক্তি তাদেরকে বাঁধা প্রদান করে আর যার ফলে তারা এই সকল অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই।
৪. উসমানীয় সম্রাজ্যে খৃষ্টানদের সুবিদা বৃদ্বি
যেহেতু ব্রিটিশ সেনারা ও তার মিত্রপক্ষের শক্তি তুরস্কের উসমানীয়দের ব্যপকভাবে সাহায্য প্রদান করেছিল তাই তখন তুরস্কের উসমানীয়রা মিত্রশক্তির চাপের মুখে তাদের দেশে খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করার ব্যাপারে আরও বেশী আগ্রহী হয়ে উঠে। ১৮৫৬ সালে হাত ই হুমায়ন নামে একটি সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয় যার দ্বারা অমুসলিম প্রজাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয়।
৫. চাঙ্গা অর্থনৈতিক অবস্থা
কৃষ্ণ সাগরের উপর থেকে যেহেতু সকল ধরনের যুদ্বাজাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাই তাই এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সামুদ্রিক বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে আসে। এতে করে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে ব্যপকভাবে সাফল্য লাভ করতে থাকে।
৬. মোল্ডভা ও ওয়ালাখিয়ার সায়ত্বশাসন
ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরে মোল্ডভা ও ওয়ালখিয়ারের ব্যাপারে এই ধরনের সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় যে, এরা এখন নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে। আর তাদের শাসন কার্যক্রম স্বাধীনভাবে শাসন করতে পারবে। এই দুটি প্রদেশকে একটি অস্থায়ী পরিষদের মাধ্যমে শাসিত হবে বলে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৮৫৯ সালে আলেকজান্দার কুঁজা মোল্ডাভিয়ার শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তাঁকে ওয়াকখিয়ার দিওয়ান শাসক হিসেবে গ্রহণ করে। 
৭. সার্বিয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্বি
১৮৫৬সালের প্যারিস চুক্তির ফলে সার্বিয়া এদিন যে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছিল, তার নিশ্চয়তা ইউরোপের উপর অর্পিত হয়। এই শক্তিসমূহের সম্মতি ছাড়া উসমানীয়রা সার্বিয়ার আভ্যন্তরীন ব্যাপারে যেকোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে এই ধরনের চুক্তি সম্পাদিত হয়।
৮. ফ্রান্স-রুশ সম্পর্কোন্নয়ন
এই চুক্তি সাধিত হওয়ার পরে ফ্রান্স আর রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কোন্নয় সাধিত হয়। কারণ রুশ এবং ফরাসি প্রতিনিধিগণ এই ব্যাপারে একমত পোষণ করে যে, মোল্ডভা ও ওয়ালখীয়ার প্রদেশ একত্রীকরণ হবে। আর এই কারণই ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্টাটাগার্ট এ জার ২য় আলেকজান্দার ও তৃতীয় নেপোলিয়ানের মাঝে সম্প্রীতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ব্রিটিশ, অষ্ট্রিয়া এবং উসমানীয়রা এর বিরোধী ছিল।
৯. রুমানিয়ার জন্ম
প্রথম হতেই অস্ট্রিয়া,ব্রিটেন আর তুরস্ক মোল্ডভা এবং ওয়ালখিতারের একত্রীকরণের ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু ফ্রান্স আর রুশ প্রচেষ্টার ফলে তাদেরকে একত্রিত করা হয় এবং এর আলোকে এরা একত্রিত হয়েই রুমানিয়া রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
১০. বুলগেরিয়ানদের চিন্তা ধারা
যখন আলাদাভাবে রুমানিয়া রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটল এই ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরে তখন বুলগেরীয় জাতির মধ্যে নতুন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মনোভাবে গড়ে উঠে এবং জাতীয়তাবাদ চিন্তাধারার বিকাশ তাদের মধ্যেও সাধিত হয়েছিল।
১১. উসমানীয় বিরোধী অবস্থা
ক্রিমিয়ার যুদ্বের সময় হতে সমগ্র অঞ্চলের লোকেরা এই বিষয়টি উপলব্দ্বি করতে থাকে যে, তুরস্ক সালানাত অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়েছে তাই ভিতরের ও বাহিরের শক্তির লোকেরা এই বিষয়টি সহজে অনুধাবন করতে থাকে যে, এই সময়ে এখন তাদেরকে সঙ্ঘবদ্বভাবে লড়াইয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সালানত হতে সব কিছু মুক্ত করতে হবে। আর তখন থেকেই সার্বিয়া মন্টিনিগ্রো একইভাবে গ্রীক সার্বিয়দের মাঝে চুক্তি হতে থাকল যে, কীভাবে করে তারা তাদের স্বকীয়তাবোধ সৃষ্টি করতে পারবে। এতে করে নতুনভাবে বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটতে থাকে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উসমানীয়দের এই যুদ্বের দ্বারা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেলেও তা ভবিষৎ এর জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করেছিল। তুরস্ক পর্যায়ক্রমে একের পর একেকটি অঞ্চল হারাতে থাকে। আর এমনিভাবে তুরস্ক একেবারে দূর্বল রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। অন্যদিকে এই যুদ্বের দ্বারা ব্রিটেন,ফ্রান্স,অস্ট্রিয়া বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছিল কারণ এর দ্বারা তাদের স্বার্থ খুব ভালমত হাসিল হয়েছিল। 

Saturday, 24 January 2015

যে জানাযা একজন পড়েছে......

ডক্টর ইমদাদ হাসান সুদানের একজন মুসলিম সাইক্রিয়েস্ট্রিট, যিনি লন্ডনে থাকেন। তিনি ইসলামের দাওয়াতে অত্যন্ত নিবেদিত। একে তিনি প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব বলেই বিশ্বাস করেন। কয়েক বছর পূর্বে ড. ইমদাদ ৪০০ পৃষ্ঠার একটি গবেষণামূলক বই প্রকাশ করেন, যার নাম ক্যাটেলস ওয়ার্স। বইয়ের বিষয় উপস্থাপন আমার লক্ষ নয়, কিন্তু বইয়ের ভূমিকায় তিনি একটি বিস্ময়কর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি নিম্নরূপ : ড. ইমদাদের সাথে ৬২ বছর বয়স্ক একজন পাদ্রী টেরেন্স সিডনি ক্যাসের সাক্ষাৎ হয়। তখন টেরেন্স-এর কিছু চিকিৎসা পরামর্শ প্রয়োজন ছিল। অল্প সময়ের কথোপকথনেই উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। দুজনে তাদের বিশ্বাস, চিন্তাধারা ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করেন। পাদ্রী টেরেন্স স্বীকার করেন যে, তার একচল্লিশ বছরের কর্মজীবনে কখনোই ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করেননি। টেরেন্স নিজেকে হানীফ বলে পরিচয় দিলেন, যার অর্থ হযরত ইবরাহীমের ধর্ম অনুসরণকারী। ড. ইমদাদ টেরেন্সকে একটি বই দিলেন যাতে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের উদ্ধৃতিতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের আলোচনা ছিল। টেরেন্স ড.ইমদাদকে আরবী ও ইংরেজি অনুবাদ সম্বলিত বাইবেলের একটি কপি দিলেন, কিন্তু জানালেন, আমার যেহেতু বাইবেলের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহ আছে তাই সব সময়ই আশা ছিল কোনো আরবের সাথে সদি সাক্ষাৎ হত যিনি আমাকে বাইবেলের বিকৃত অংশগুলি বুঝিয়ে দিতেন। ইতিমধ্যে টেরেন্সের ক্যান্সার ধরা পড়ল। ডাক্তাররা বললেন, তিনি আর চার মাসের মতো বাঁচতে পারেন। ড. ইমদাদ একদিন টেরেন্সকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী? টেরেন্স কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। কারণ এখন তার সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। তার সময় শেষ হয়ে আসছিল। টেরেন্স নীরবতা ভেঙ্গে বললেন, সত্যি বলতে কি ভাই, আমার সারাটা জীবন আমি শেষ নবীকে খুঁজেছি আর এখন মৃত্যুশয্যায় আমি তাঁকে পেয়েছি। সপ্তাহখানেক পর টেরেন্স ইন্তেকাল করলেন। তার উইলের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের কথা লিখে রেখে যান। তার পরিবারে কেউ জানাযা পড়ার মতো ছিল না। তাই তারা ড: ইমদাদকেই জানাযা পড়ার অনুরোধ করলেন। পশ্চিম লন্ডনের ছোট্ট একটি গ্রামে ড. ইমদাদ তিনশত লোকের উপস্থিতিতে একাই টেরেন্স-এর জানাযা পড়লেন। 

Wednesday, 18 September 2013

প্রশ্নঃ আইয়্যামে জাহিলিয়াত এবং তৎকালীন আরব দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা


ভূমিকাঃ

আল্লাহ সুবাহানাওতায়ালা বলেন,
তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? [মায়িদাঃ৫০]
আইয়্যামে জাহেলিয়াত হল এক চরম অন্ধকারাচ্ছন্ন এক যুগ।এ সময় আরব সমাজে যোগ্য শাসক বলতে কেউই ছিল না।তাদের ভিতর নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছুই ছিল না।এক চরম বিশৃংখলাময়ী জীবন-যাপন আরব দেশের লোকেরা অতিবাহিত করত।সেই সময়ের সামাজিক এবং ধর্মীয় অবস্থা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

আইয়্যামে জাহেলিয়াত এর পরিচিতি

আইয়্যামে জাহিলিয়াত দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।আইয়্যাম শব্দটি "ইয়াউমুন" এর বহুবচন "ইয়ামুন" হতে নির্গত। একথাটি "লাইলুন" এর বিপরীত।আভিধানিক অর্থে - আইয়্যামের অর্থ হল বিশেষ কাল,দীর্ঘসময়,বিশেষ সময়,ঐতিহাসিক সময়,ঘটনা সম্বলিত সময়,Age,period, ইত্যাদি।এ শব্দটির ব্যপকতা কুরআনের ভিতর খুজে পাওয়া যায়। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে-
আর এ দিনগুলোকে(আইয়্যাম) আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি।[ইমরানঃ১৪০]
মানুষের প্রতি দেওয়া আল্লাহ পাকের নিয়ামতকে আইয়্যাম বলা হয়। আল্লাহ বলেন-
হে বনী-ঈসরাইলগণ! তোমরা তোমাদের নিআমতের কথা স্মরণ কর।
জাহেলিয়াত শব্দের অর্থ হল মূর্খতা,অজ্ঞতা,কুসংস্কার ইত্যাদি।জাহিলি এর নিগূঢ় অর্থ হল নির্বুদ্বিতা,বর্বরতা,নিষ্ঠুরতা,তমসা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন,ignorance ইত্যাদি। এ শব্দের ব্যবহার কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে -
আল্লাহ্ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা ধারণা হচ্ছিল মুর্খদের মত। [ইমরানঃ১৫৪]
তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? [মায়িদাঃ৫০]
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।    [আহযাবঃ৩৩]
ঐতিহাসিক পরিভাষায় -
রাসূল(সাঃ)এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী সময়কে আইয়্যামে জাহিলিয়ার বলা হয়।এ যুগকে তমসার যুগও বলা হয়।সেসময় আরব সমাজে কৃষ্টিতা,সভ্যতা,ধর্মীয় অনুভূতি না থাকার জন্য এ যুগকে আইয়্যামে জাহিলিয়াত বলা হয়।
পি.কে হিট্টি বলেন-
নবীর কিতাব প্রাপ্তি এবং নবূয়াত লাভের পূর্ব এক শতাব্দী থেকে আরব দেশে যে বর্বতা ও নিষ্ঠুরতার আবির্ভাব ঘটেছিল তাকেই আইয়্যামে জাহিলিয়াত বলা হয়।

ব্যপ্তিকাল

এই অন্ধকাচ্ছান্ন যুগের ব্যপ্তিকাল কতদিন ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের ভিতর মতপার্থক্য রয়েছে।সেই মতামতসমূহ নিম্নরুপঃ
(১) অনেকে বলেছেন যে,আদম(আঃ) থেকে শুরু করে মুহাম্মদ(সাঃ)এর জন্মের আগ পর্যন্ত সময়কালকে আইয়্যামে জাহেলিয়াত বলা হয়। তবে এধরনের মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।
(২) আবার কোন কোন আরব ঐতিহাসিক বলেছেন বলেছেন যে হযরত ঈসা(আঃ) এর আবির্ভাবের পর থেকে হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর জন্মের আগ পর্যন্ত এর ব্যাপ্তিকাল বিস্তৃত ছিল।
(৩) বিশিষ্ট ঐতিহাসিক নিকলসন বলেছেন, ইসলামের জন্মের একশ বছর আগে থেকে আইয়্যামে জাহিলিয়াত শুরু হয়।
(৪) পি.কে হিট্টি বলেন, মহানবী(সাঃ) এর আবির্ভাবের একশ বছর আগে থেকেই আইয়্যামে জাহিলিয়াতেত শুরু হয়।উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় যে,মুহাম্মদ(সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে ঈসা(আঃ) এবং ইসলামের আবির্ভাবের একশ বছর পূর্ব থেকে আইয়্যামে জাহিলিয়তের শুরু হয়।

 সামাজিক অবস্থাঃ


১.বৈবাহিক জীবনঃ 

তৎকালীন আরবদেশের বৈবাহিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল।স্বাভাবিকভাবে বিবাহ সম্পাদন করে স্বামী-স্ত্রীর ভিতর জীবন-যাপন করার সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য।বিবাহ ছাড়াই একজন নারী কিংবা পুরুষ অসংখ্য সন্তানের জনক-জননী হত।কখন দেখা যেত যে,একজন নারী প্রায় দশ পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করত এবং সবার সাথে মিলনের পর একজন সন্তান জন্ম নিলে কখনও স্ত্রী কিংবা কখনও কোন বিশেষজ্ঞ তাদের সন্তানের প্রকৃত পিতাকে চিহ্নিত করত।আবার পুরুষেরাও একসাথে প্রায় দশ কিংবা তা অধিক স্ত্রী শর্তহীনভাবে গ্রহণ করতে পারত।সেখানকার পুরুষেরা যেকাউকে বিবাহ করতে পারত।কারও পিতা মারা গেলে তার স্ত্রীকে অর্থাৎ, সৎ মাকে তার ছেলে বিবাহ করতে পারত।তারা তাদের খালা,ফুফুদের বিবাহ করতে কার্পণ্য বোধ করতে পারত না। এ ব্যাপারে কুরআনে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন-
যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।[নিসাঃ২২] 
আবূ বকর জাসসাস(রঃ) বলেন, পিতার স্ত্রীকে অর্থাৎ সৎ মাকে বিবাহ করার প্রচলন ব্যাপক ছিল।

২. ব্যভিচারের প্রাদুর্ভাবঃ

প্রাক ইসলামী যুগে আরব দেশে ব্যভিচারের প্রাদুর্ভাব সব জায়াগায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।পতিতাবৃত্তি সমাজে স্বীকৃতি লাভ করে। যৌন ব্যভিচার সমাজ কোন নিন্দনীয় বিষয় ছিল না।যারা এসকল অন্যায়-অবৈধ কাজে নিজেদের যতবেশী সম্পৃক্ত রাখতে পারত সমাজে তাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী ছিল। এভাবে করে তারা নীতিহীন এবং অসামাজিক কাজের মধ্যে নিজেদের নিমজ্জিত করেছিল। এ ব্যাপারে মাওলানা আকরাম খাঁ বলেন -
পুংমৈথুন,স্ত্রীমৈথুন এবং পশু মৈথুন তাদের ভিতর প্রচলিত ছিল এবং তা তারা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করত

৩.দাসপ্রথাঃ 

তখনকার দিনে অন্যান্য সমাজের ন্যায় আরব সমাজেও দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল।পণ্যদ্রব্যের মত দাস-দাসীও হাটে-বাজারে বিক্রি হত। তাদের দুরবস্থা সম্পর্কে আমীর আলী বলেন, ভৃত্যি হোক আর ভূমিদাস হোক তাদের ভাগ্যে ক্ষীণ আশা বা এককণা সূর্যরশ্মিও কবরের এদিকে জীবনে জুটত না। প্রভূরা তাদের উপর খেয়াল-খুশি মত অত্যাচার করত।তারা কখনও দাসীদের উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করত। এক কথায় তাদের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করত তাদের প্রভূর উপর।তাদের বিবাহের কোন স্বাধীনতা ছিল না। তখনকার দিনে দাসদের অবস্থা ছিল শোচনীয়।

৪. কণ্যা সন্তানকে জীবিত কবরঃ

তৎকালীন আরব সমাজের নারী জাতির অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুন। কণ্যা সন্তান জন্মগ্রহন করলে তাকে জীবিত মাটির নীচে পুতে ফেলা হত। কণ্যা সন্তানকে তারা সর্বদা অভিশাপ মনে করত।আরবেরা কখনো কখনো দারিদ্র্যতার ভয়ে এমন কাজটি সঙ্ঘটিত করত। কিতাবুল আখরাজীর মতে, এ জঘন্য প্রথা কায়স বিন আসিমের মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়। কুরআনুল কারীমে এ ব্যাপারে কিছু ইংগিত পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক বলেন -
 যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। [নাহলঃ৫৮]

৫. জুয়াখেলা,মদ্যপানের ব্যাপকতা:

তৎকালীন আরব সমাজে জুয়াখেলা,মদ্যপানের মত জঘন্য অভ্যাস তাদের ভিতর ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যেত। সেসময় তারা মদপান করত আর তা করে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করত। মদ যে যত বেশী পান করতে পারত সে নিজেকে নিয়ে তত বেশী গর্ববোধ করতে পারত। তাদের এই অভ্যসের কথা আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন। এজন্য ঐতিহাসিক খোদাবক্স বলেন, War,woman and wine were there observing passions of the Arabs.           
অন্যদিকে তারা জুয়াখেলাও দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে স্ত্রী কণ্যাকেও বাজি ধরত। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, জুয়াখেলা আরব সমাজের অবসর বিনোদনের একটি বিশেষ মাধ্যম ছিল।” কুরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে যে -
 হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। [মায়িদাঃ৯০]

৬. গোত্র-গোত্র দ্বন্দ্ব:

ইসলাম আবির্ভাভের পূর্বে আরব এর রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক।আরব এর অধিইকাংশ জায়গা ছিল স্বাধীন।এক এক স্বাধীন রাস্ট্র এক এক গোত্র দ্বারা পরিচালিত হত।প্রত্যেক গোত্রে এক এক জন গোত্র প্রধান থাকত।গোত্রের লোকদের ভিতর অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল।কিন্তু এক গোত্র অন্য গোত্রকে সহজে সহ্য করতে পারত না।সামান্য কোন বিষয় তাদের ভিতর কোন যুদ্ব শুরু হলে সে যুদ্ব তাদের ভিতর প্রায় সময় এরকম গোত্র গোত্র যুদ্ব লেগে থাকত।সামান্য বিষয় নিয়ে মক্কার কুরাইশ আর কায়েস গোত্রের ভিতর এক ভয়াবহ রক্তখয়ী যুদ্ব সংঘটিত হয় যা ফিজারের যুদ্ব নামে পরিচিত যা প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ স্থায়ী ছিল।তেমনিভাবে উটকে পিটানোর অভিযোগে বকর এবং তঘলিব গোত্রের ভিতর যুদ্ব হয়েছিল ৪০ বছর যাবৎ,আবিস এবং ধীমান গোত্রের ভিতর যুদ্ব হয়েছিল প্রায় এক শতাব্দী পর্যন্ত,মদীনার আউস এবং খাযরায গোত্রের ভিতর অনেকদিন যাবৎ যুদ্ব লেগে ছিল। ঐতিহাসিক গীবন বলেছেন, ঈসলাম আসার পূর্বে আরবে প্রায় ১৭০০টি যুদ্ব সংঘটিত হয়েছিল। এতে করে সমগ্র আরব এর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছিল।

৭. হায়ার অভাব:

তৎকালীন আরব সমাজ নারী-পুরুষের লজ্জা-শরম বলতে কিছুই ছিল না।যেকেউ কারও সামনে নিজেদের গুপ্তাংগ প্রদর্শন করতে তারা মোটেও কার্পণ্য প্রকাশ করত না।কিশোরী মেয়েরা প্রকাশ্যে উলং হয়ে গোসল করত।নারী-পুরুষেরা কাবা গৃহের সামনে উলংগ হয়ে তওয়াফ করত।

৮.অশ্লীল সাহিত্যের বিস্তারঃ

 সেই মূর্খতার যুগেও আরব সমাজে সাহিত্য তথা কাব্যচর্চ্চা অত্যন্ত সুনিপুণভাবে হত।সেসময় তাদের কবিতার বিষয়বস্তু ছিল নারী,প্রেম,অশ্লীলতা ইত্যাদি।কবিরা তাদের অশ্লীল কবিতার মাধ্যমে সমাজে সর্বপ্রকারের অনর্থও ঘটাত।প্রাক ইসলামী যুগে ইমরুল কায়স,তারাকা আমর,লবীদ,যুহায়ের প্রভৃতি কবিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল।ইমরুল কায়সের কবিতায় একথা খুঁজে পাও্য়া যেত যে, কীভাবে তিনি মহিলাদের পোশাক লুকিয়ে তাদের রুপের অপরুপ বর্ণনা দিতেন।কাব ইবনে আশরাফ নামে একজন কবি ছিল যিনি সর্বদা মহিলাদের নিয়ে এমন ব্যাঙ্গার্থক কবিতা রচনা করতেন।

৯. নারী জাতির প্রতি অবমাননা:

 আইয়ামে জাহিলিয়াতে নারী জাতির প্রতি চরম অবমাননা করা হত।তাদেরকে সেসময় মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হত না।তাদেরকে নিজেদের ভোগের সামগ্রী হিসেবে মনে করা হত।কোন মহিলার সাথে কোন পুরুষের বিবাহের পর সেই স্বামী যেকোন পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখতে পারত।এতে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্বে বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করতে পারত না। স্বামীগণ মারা গেলে স্ত্রীগণ তাদের সম্পত্তির কোন অংশ পেত না।একজন লোক ইচ্ছামত বিবাহ করতে পারত আবার ইচ্ছামত তালাক দিতে পারত।

১০. অনৈতিকতার বিস্তারঃ

তৎকালীন আরব সমাজে নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছুই ছিল না।হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, দাম্ভিকতা, খিয়ানতদারিতা, অপচয়, মারামারি, লুটপাট, রাহাজানী, ইত্যাদি অন্যায় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজকে একেবারে কলুষিত করে ফেলেছিল।

১১.নিষ্ঠুরতাঃ 

এমন কোন ধরনের নিষ্ঠুর কাজ ছিল না যাকিনা আরবদের দ্বারা সঙ্ঘটিত হত না।তারা জীবিত উটের পিছন দিক দিয়ে গোশত কেটে ভক্ষণ করতে পারত।তারা কখনও কখনও নারীদের ঘোড়ার লেজের সাথে লেলিয়ে দিত।এতে ঐ নারী মৃত্যুবরণ করলে তারা তাতে আনন্দ উদযাপন করত।

১২.কুসংস্কারঃ 

সেসময় আরব সমাজ কুসংস্কার দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল।নরবলি তাদের ভিতর প্রচলিত ছিল।তারা তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য নির্ধারণ করত।তারা মৃতব্যক্তির কবরের পাশে উট বেধে রাখত।এভাবে করে তাদের সমাজ একেবারে কুসংস্কারে ভরপুর হয়ে পড়েছিল।

 ১৩. শিশু হত্যাঃ 

আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সময় আরব অঞ্চলের বেশকিছু লোকজন দারিদ্যতার ভয়ে নিজ শিশুসন্তানকে হত্যা করতে কুণ্ঠিত বোধ করত না।এ ব্যাপারে কুরআনে ইংগিত পাওয়া যায় যা হলঃতোমরা দারিদ্র্যতার জন্য নিজেদের সন্তানদের হত্যা কর না। [আনআমঃ১৫২]

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...