Tuesday 27 August 2013

প্রশ্নঃ সংবিধান কি? বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ইতিহাস কি? এর প্রস্তাবনায় কি কি আছে?এর সংশোধন সম্পর্কে যা জান লিখ। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহ কি কি?


সংবিধান

 

প্রতিটি রাষ্ট্র তার নিজস্ব কিছু আইন-কানূন,নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়।এসকল নিয়ম-নীতি সমূহ হল ঐসকল রাষ্ট্রে সংবিধান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিষ্টটল বলেন, সংবিধান হল এমন একটি জীবন পদ্বতি যা রাষ্ট্র তার নিজের জন্য বেছে নিয়েছে

 

লর্ড ব্রাইস বলেন, সংবিধান হল এমন কতগুলো আইন ও প্রথার সমষ্টি যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত হয় অথবা এমন কতিপয় আইনের সমন্বয় ঘটে যাতে সম্প্রদায়কে সংগঠিত, শাসন এবং একত্রীকরণের নীতিমালা এবং নিয়ামবলি সংযোজিত হয়

 

বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ইতিহাস

 

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় মাসব্যাপী যুদ্ব সঙ্ঘটিত হওয়ার পর ২২শে ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মিব বাহিনীর সরকার ঢাকায় ক্ষময়া গ্রহণ করে যেই সরকার ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল,মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় ইউসুফ আলীর শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। এরপর স্বাধীনতা অর্জনের পর বংগবন্ধু ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।এরপর তিনি ১৯৭১ সালের ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ জারী করেন। সেই আদেশে যা ছিল তা নিম্নরুপঃ

 

যেহেতু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল দ্বাধীনতা-ঘোষণাপত্র আদেশের মাধ্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের শাসন পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল;

 

এবং যেহেতু উক্ত ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রপতির সকল নির্বাহী এবং আইন প্রণয়নগত ক্ষমতা এবং একজন প্রধানম্নত্রী নিযুক্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল;

 

এবং যেহেতু উক্ত ঘোষণাপত্রে বর্ণিত অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্বের অবসান বর্তমানে ঘটেছে;

 

এবং যেহেতু উক্ত বাংলাদেশের জনগণের ঘোষিত আকাঙ্ক্ষা এই যে, বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র কার্যকরী করা হবে;

 

এবং যেহেতু উক্ত লক্ষ্য অনুযায়ী এক্ষেত্রে অবিল্মবে কতগুলো বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন;

 

সেহেতু এখনে, রাষ্ট্রপতি অনুগ্রহপূর্বক ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বধীনতা ঘোষণাপত্র আদেশ এবং এতদুদ্দেশ্যে তাকে প্রদত্ত সকল ক্ষম্নতার অনুসারে নিম্নোক্ত আদেশ প্রণয়ন এবং জারি করেছেনঃ

 

১. এই আদেশ বাংলাদেশ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ,১৯৭২ নামে অভিহিত।

 

২. এটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।

 

৩. এটি অবিলম্বে বলবৎ থাকবে।

 

৪. সংজ্ঞাঃ এই আদেশে বর্ণিত গণপরিষদ বলতে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ও ১৯৭১ সালের জানুয়ারি এবং ১০৯৭১ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে বিজয়ী এবং আইনের দ্বারা বা অধীনে অন্যদিকে অযোগ্য বিবেচিত নন, বাংলাদেশের এমন সকল নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝাবে।

 

৫. বাংলাদেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ থাকবে এবং সেই মন্ত্রিপরিষদের প্রধান থাকবে প্রধানমন্ত্রী।

 

৬. রাষ্ট্রপতি তার সকল দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

 

৭. রাষ্ট্রপতি এমন একজন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করবেন যিনি গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা অর্জন করতে পারবে। অন্য সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নিযুক্ত হবেন।

 

৮. গণপরিষ কর্তৃক সংবিধান প্রণীত হওয়ার পূর্ববর্তী কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে,মন্ত্রিপরিষদ বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করবেন।তিনি গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত সংবিধান অনুসারে অপর একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন।

 

৯. বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে। একজন বিচারপতি নিযুক্ত হবেন এবং সময় সময়ে নিযুক্ত হতে পারেন এমন অন্যান্য বিচারককে নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে।

 

১০. বাংলাদেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিগণ রাষ্ট্রপতি শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন।শপথ বাক্যের ফরম মন্ত্রিপরিষদ দ্বরা নির্ধারিত হবে

 

 

 

ঢাকা,                                                                              শেখ মুজিবুর রহমান

 

১১ই জানুয়ারি,১৯৭২                                                                  রাষ্ট্রপতি,

 

                                                                         গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ   

 

 সে আদেশানুযায়ী পূর্বে ১৯৭০ এর নির্বাচনের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য এবং প্রাদেশিক সদস্যদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়।এই গণপরিষদে আদেশ ১৯৭২ সালের ২৩শে মার্চ জারি হয়। এবং তা কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ থেকে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত ৪৬৯ এর (জাতীয় পরিষদে ১৬০ জন আর প্রদেশিক পরিষদে ৩০০ জন) ৪০৩ জন নিয়ে গঠিত হয়। কারণ ৪৬৯ জনের ভিতর ১২ জন মুক্তিযুদ্বের সময় নিহত হন,দালালির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন ৫ জন। দুর্নীতির জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হন ৪৬ জন জন এবং ২ জন পাকিস্তান সরকারে প্রতি আনুগাত্য স্বীকার করেছিল। আর পররাষ্ট্রে মন্ত্রণালয়ে চাকুরী নেন একজন।৪০৩ জনের ভিতর ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের আর ১ ছিলেন ন্যাপের আর ২ জন ছিলেন নির্দলীয়। সেই স্পীকার হন শাহ আব্দুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পীকার হন মোহাম্মদ উল্ল্যাহ।  আর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের গণপরিষদ আদেশ জারী করেন। ১১ এপ্রিল তৎকালীন আইন মন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয় এখানে ৩৪ জনের ভিতর ৩৩ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের আর ১ জন ছিলেন ন্যাপের (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত) এই কমিটিতে একজন মহিলাও(বেগম রাজিয়া বানু।) ছিলেন। এই কমিটির প্রথম বৈঠক বসে ১৯৭২ সালের ১৭ই এপ্রিল।  ১৯ এপ্রিল প্রথম গণপরিষদের আহবান করা হয় এবং কমিটি এখানে -৪৭ অধিবেশনে ৩০০ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে খসরা চূড়ান্ত করে এবং ১০ জুন তা চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে অভিজ্ঞ লোকেরা বিভিন্ন দেশে দেশে ভ্রমণ করে তাদের নিজ নিজ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সংবিধান রচনা কমিটি ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেন। ১৯৭২ সালের ১১ অক্টোবর কমিটির শেষ বৈঠকে খসরা চূড়ান্ত হয়। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর ২য় অধিবেশন ডাকা হয় এবং সেইদিন তা ড. কামাল হোসেন উত্থপন করেন এবং ১৯ অক্টোবর প্রথম পাঠ হয় এবং ৩১ অক্টোবর ২য় পাঠ হতে থাকে। এতে ১০টি বৈঠকে মোট ৩২ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। ৩ নভেম্বর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। ৪ নভেম্বর সংবিধানের সর্বশেষ পাঠ হয়।মাত্র দুই ঘণ্টার ভিতর কাজ শেষ হয় এবং বিপুল আন্দদের মধ্য দিয়ে এই পাঠ শেষ হয় এবং তা গণপরিষদের কার্যকর হয় সংবিধানরুপে।এজন্য ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসাবে পালিত হয়। হস্তলিখিত সংবিধানটির মুল লেখক ছিলেন আব্দুর রউফ। হস্তলিখিত সংবিধানটির অঙ্গসজ্জা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন।১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা মূলতবী ঘোষণা করা হয় এবং  ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তা হস্তলিপির সংস্করণে গণপরিষদের সদস্যদের স্বাক্ষর গৃহীত হয়।  এবং ১৬ ডিসেম্বর তা কার্যকর করা হয়। এ সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ,৮২টি পৃষ্ঠা এবং ৪টি তফসিল আছে। ১৯৭২ সালের পর এ পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে।এরই মধ্যে মোট ৬টি সংশোধনী (৫ম-১০ম) সামরিক অফিসারদের মাধ্যমে হয়েছে। 

 

 সংবিধানের প্রস্তাবনা ও মূল অঙ্গীকার   

 

.........যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ব করেছিল...... জাতীয়বাদ,সমাজতন্ত্র,গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি অন্তর্ভূক্ত হবে

 

সংবিধানের বিধানগুলিতে যেন এসব মূলনীতি প্রতিফলন ঘটে, কমিটি সে বিষয়ে উদ্যোগী ছিলেন। খসড়া সংবিধানের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে গণতান্ত্রিক পদ্বতিতে ......... শোষণমূক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা.........। 

 

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে মৌলিক মানবাধিকারসমূহ সংরক্ষিত করে এই খসড়ায় তৃতীয় ভাগে বিধানবলি সংযোজিত করা হয়। এই খসরায় প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হয়েছে আর এই সংসদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয়েছে অন্যান্য ১৮ বছরের নাগরিকদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের ভার অর্পিত হয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার উপর আর এই মন্ত্রিসভাকে যৌথভাবে সংসদের কাছে দায়ী করা হয়েছে।আরও ব্যবস্থা করা হয় যে, রাষ্ট্রপতি হবেন সাংবিধানিক প্রধান,তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব কি হবে,তাও খসড়ায় লিপিবদ্ব করা হয়েছে।

 

সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য

 

১. সংক্ষিপ্তঃ   বাংলাদেশের সংবিধান একটি সংক্ষিপ্ত সিংবিধান। এ ধরনের সংক্ষিপ্ত সংবিধান পৃথিবীর অনেক জায়গায় দেখা যায় না । এ সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ,৮২টি পৃষ্ঠা এবং ৪টি তফসিল আছে।

 

২. লিখিত সংবিধানঃ   এ সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান।এ সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ,৮২টি পৃষ্ঠা এবং ৪টি তফসিল আছে। এখানে বলা হয়েছে যে, এ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হল বাংলা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলার প্রথম দশটি চরণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় পতাকার রঙ সবুজ ক্ষেত্রের উপর লাল বৃত্ত।জাতীয় প্রতীক হল উভয় পার্শ্বে ধান্যশীষবেষ্টিত পানিতে ভাসমান শাপলা ফুল, শীর্ষদেশে পাটগাছের তিনটি পরস্পর সনযুক্ত পাতা-আর উভয় পাশে দুটি তারকা।বাংলাদেশের রাজধানী হল ঢাকা।

 

৩. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানঃ এ সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়।তবে এই সংবিধান সংশোধন করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। 

 

৪. এককেন্দ্রিক শাসন ভিত্তিক শাসন কেন্দ্রঃ  বাংলাদেশ এককেন্দ্রিক বিশিষ্ট সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এখানে সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী।বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে।

 

৫. এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাঃ  এখানে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা আছে আর এর নাম হল জাতীয় সংসদ১৯৭২ সালের সংবিধানে মোট ৩১৫টি সংসদ সদস্যদের জন্য আসন বরাদ্দ ছিল যার ভিতর ৩০০টি সাধারণ আর ১৫টি ছিল সংরক্ষিত আসন। বর্তমানে এর সংখ্যা ৩৪৫ করা হয়েছে অর্থাৎ, নারী আসনের সংখ্যা ৩১৫ থেকে ৩৪৫ করা হয়েছে।

 

৬. মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তাঃ আমাদের সংবিধানের ৩য় বিভাগে এই বিষয়গুলি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চিন্তা করা, মতামত প্রকাশ, ধর্ম-কর্ম করা, চলা-ফেরা করা, বাক স্বাধীনতা,সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি বিষয়াবলী বর্ণিত হয়েছে। তবে এসকল অধিকাংশ অধিকারের উপর সংসদ বাধা-নিষেধ আরোপ করেছে।

 

৭. জনগণের সার্বভৌমত্বঃ এ গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে সকল ক্ষমতার উৎস হল জনগণ। এ দেশের সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। এ দেশের সরকার ভূত-ভবিষৎ জনগণের উপর নির্ভরশীল।

 

৮. সার্বজনীন ভোটাধিকারঃ  এখানে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক ভোট এক নীতি হল বাংলাদেশের সার্বজনীন ভোটাধিকারে মূল ভিত্তি। আঠারো বছরের অধিক নাগরিকগণ এখানে জাতীয় যেকোন বিষয়ে ভোট দিতে পারবে।

 

৯. মানবাধিকার সমুন্নত রাখাঃ  সংবিধানে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মানুষকে যেন অন্যায়ভাবে হত্যা না করা হয়, কারও সম্পদ যেন লুণ্ঠণ করা না হয় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

 

১০. প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালঃ  সাধারণ বিচার বিভাগ ছাড়াও এখানে এক ধরনের বিশেষ প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আছে যেখানে প্রশাসনের সকল উর্ধ্বতন,অধঃতন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চাকুরীর বদলি্‌পদোন্নতি,বরখাস্ত ইত্যাদি বিষয়ে প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালের হস্তক্ষেপ থাকবে।এ ধরনের ট্রাইবুন্যাল ভারত, যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেনসহ অনেক দেশে নেই।

 

১১. অভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থাঃ  সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে এই কথা বলা হয়েছে।সকলে যেন অত্যন্ত পক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা লা করতে পারে এ ব্যাপারে সরকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

 

১২.জেলা প্রশাসনঃ সংবিধান জেলা প্রশাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে শাসনের মধ্যমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য মনোনীত হন।

 

১৩.দলীয় শৃংখলাঃ ৭০ অনুচ্ছেদে এ আইন রয়েছে।সকল যেন দলীয় শৃংখলা সঠিকভাবে পালন করতে পারে এর জন্য কেউ যেন স্বীয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্বে সংসদে বক্তব্য না রাখে কিংবা দল ত্যাগ না করে।যদি তা সে করে তাহলে তার সংসদ পদ স্থগিত বলে ঘোষণা করা হবে।

 

১৪.ন্যায়পালঃ এটি সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এখানে বলা হয় যে, সংসদ আইনের মাধ্যমে ন্যায়পাল সৃষ্টি করবে। ন্যায়পাল সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারকের মত ক্ষমতার অধিকারী হবেন।তিনি বাংলাদেশের সরকারের যেকোন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্বে আনীত অভিযোগ শুনবেন এবং প্রয়োজনে দণ্ডাজ্ঞা দিতে পারবেন এবং যেকোন কর্তৃপক্ষকে তার নিকট জবাবদিহি করেত বাধ্য থাকবে

 

১৫.সুপ্রিম কোর্টের ব্যবস্থাঃ সংবিধানে এই সুপ্রিম কোর্ট কাউন্সিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জিয়ায়ুর রহমানের সময় তা কেবলমাত্র কাউন্সিল করা হয়। এখানে প্রধান বিচারপতি আর অন্যান্য দুই জন সিনিয়র বিচারপতি নিয়ে গঠিত হবে যা বিচারকদের আচরণ বিধি নির্ধারণ করবে। 

 

১৬. জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানঃ   ৩য় সংশোধনের মাধ্যমে তা করা হয়।রাষ্ট্রপতি যদি কোন অবস্থায় দেখতে পান যে, দেশের বিশৃংখলা অবস্থা বিরাজমান তখন তারা রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরি অবস্থা জারী করতে পারবে।

 

১৭. প্রজাতন্ত্রঃ  বাংলাদেশ একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ। রাষ্ট্রপতি হবেন দেশের সর্বাধিনায়ক এবং তিনি নামে মাত্র দেশ পরিচালনা করবেন।তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। 

 

১৮. সংসদীয় কার্যক্রমঃ   বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্র এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ সকলে সংসদের কাছে দায়ব্দ্ব থাকবে।অর্থাৎ, সংসদ হল সকল প্রকারের শাসনের মূল ভিত্তি।

 

১৯. বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাঃ  বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারবিভাগকে সুপ্রিম কোর্ট বলা হয়। আপিল বিভাগ আর হাইকোর্ট নিয়ে এই কোর্ট গঠিত। সংবিধানের ২২নং অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা থাকার কথা বলা হয়েছে।

 

২০. স্বাধীন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থাঃ  বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও শ্রেণীসংগ্রাম বা বিপ্লবের কথা হয় নাই।জাতীয় সংসদ প্রয়োজনবোধে ব্যক্তিগত সম্পত্তি জাতীয়করণ করতে পারত।

 

২১.রাষ্ট্র পরিচলানার মূলনীতিঃ এটি সংবিধানের ২য় বিভাগে বর্ণিত হয়েছে।এখানে রাষ্ট্র পরিচালনা মূলনীতি হিসেবে চারটি উপাদানকে সনাক্ত্য করা হয়েছে যা হল, জাতীয়তাবাদ,ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র। একটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এসকল মূলনীত দ্বারা প্রভানিত হয়।

 

বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনসমূহঃ

 

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৯৭২-২০১১ পর্যন্ত মোট ১৫ বার সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। যেখানে ভারতে ৭৪ বার এবং মার্কির যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

 

প্রথম সংশোধনী :

 

উত্থাপিত হয় ১২ জুলাই ১৯৭৩। গৃহীত হয় ১৫ জুলাই ১৯৭৩ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৭ জুলাই ১৯৭৩। এ সংশোধনী আনীত ও গৃহীত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা গণহত্যাজণিত অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল তাদের বিচারের জন্য সরকারকে উপযুক্ত ক্ষমতা প্রদান। এটি পূর্বে সংবিধানে এমনকি প্রচলিত অন্য কোন আইনেও ছিল না। এ লক্ষ্যে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের সাথে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ যোগ করা হয় এবং ৪৭(ক) নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয। ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে যুদ্ধ অপরাধীদের আইনের আশ্রয়, প্রকাশ্য বিচার সুপ্রীম কোর্টে মামলা দায়ের করার অধিকার প্রভূতি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর।

 

 

 

 

 

 

 

দ্বিতীয় সংশোধনী :

 

উত্থাপন করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩। গৃহীত হয় ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বাড়ানো হয়, নিবর্তনমূলক আটক এবং রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধ, বহিরাক্রমন বা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মামলা করার অধিকাও হিত করা হয়। প্রধানত এই সংশোধনী দেশের নাগরিকদের বিনা বিচারে আটকের বিধান, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার বিধান এবং সংসদ অধিবেশন ৬০ দিনের বদলে ১২০ দিনের মধ্যে আহ্বান করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। উত্থাপনকারী : আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

 

 

 

তৃতীয় সংশোধনী :

 

 উত্থাপন করা হয় ২১ নভেম্বর ১৯৭৪। গৃহীত হয় ২৩ নভেম্বর ১৯৭৪ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ২৭ নভেম্বর ১৯৭৪। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৬ মে, ১৯৭৪ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত দিল্লী চুক্তির বৈধতা দেয়া হয়েছে। দিল্লী চুক্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমানা ১৫টি স্থানে রদবদল করতে হয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে দহগ্রাম আঙ্গুরপোতা ও ভারতকে বেরুবাড়ী হস্তান্তর এবং ২৫ বছর মেয়াদী ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়। এতে সংবিদানের ২(ক) উপ-অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা হয। উত্থাপনকারী : আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

 

 

 

চতুর্থ সংশোধনী  উত্থাপন করা হয় ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫। গৃহীত হয় ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনও লাভ করে একই দিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫। এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত সংশোধনী। এর মাধ্যমে ১৯৭২ এর সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র ভূ-লুণ্ঠিত করা হয় এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করা হয। এটি ছিল এদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এক দিনে একটি বিল পাশ হওয়ার ঘটনা। এ সংশোধনীর মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি, সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি ও সংসদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি প্রভৃতি বিধান সংযোজিত হয়। এর মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আজীবন প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকা ও একমাত্র ক্ষমতাসীন দলের অস্তিত্বের বিপরীতে অন্য সকল রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণার ব্যবস্থা করা হয। এর দ্বারা রাষ্ট্রপতির ব্যাপক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয। যার মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ ও উপরাষ্ট্রপতিকে তার কাছে জবাবদিহি করা, যেকোন সময়ে মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দেয়ার অধিকার, যে কোন আদেশ দান ও চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতিকে আইনের উর্ধ্বে রাখা, প্রতিরক্ষা বিভাগের সর্বাধিনায়ক করাসহ প্রভূতি বিষয় নিশ্চিত করা হয়। এর মাধ্যমে সংসদ একটি গুরুত্বহীন ও ক্ষমতাহীন বিভাগে পরণত হয়। নাগররিকদের মৌলিক মানবাধিকার সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় স্থানান্তরিত হয় এবং রাষ্ট্রপতিকে এক ব্যাপক ক্ষমতাধর স্বৈরাচারী শাসক হবার সব রকমের সুযোগ তৈরি করে দেয়।  - চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম গণতন্ত্র তিরোহিত হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

 

 

 

পঞ্চম সংশোধনী :

 

উত্থাপন করা হয় ৪ এপ্রিল ১৯৭৯। গৃহীত হয় ৫ এপ্রিল ১৯৭৯, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ৬ এপ্রিল ১৯৭৯। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর হতে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকান্ডের ফরম্যান ও প্রবিধানের বৈধতা দান করা হয়। এ সংশোধনীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হল :  ১. সংবিধানে প্রারম্ভে প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করা হয।  ২. ৪টি মূলনীতির ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়।  ৩. সংবিধানের প্রস্তাবনায় মুক্তিসংগ্রাম শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধ শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশিত করা হয়।  ৪. ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ এর বৈধতা দেয়া হয।  ৫. এদেশের জনগণের নাগরিক পরিচয় বাংলাদেশী বলে নির্দিষ্ট করা হয। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান।

 

 

 

ষষ্ঠ সংশোধনী :

 

ষষ্ঠ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ১ জুলাই ১৯৮১। গৃহীত হয় ৯ জুলাই ১৯৮১ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ৯ জুলাই ১৯৮১। এ সংশোধনী ছিল উপ-রাষ্ট্রপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের জন্য এ সংশোধনী আনা হয। সংবিধানের ৫০ ও ৬২(২) অনুচ্ছেদের বিধানমতে রাষ্ট্রের লাভ জনক পদে আসীন কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সংবিধানের ৬২(২) (ক) ধারা সংযোজন করার মাধ্যমে তা সংশোধন করা হয, যেখানে বলা হয়েছে যে কেউ রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হওয়ার কারনে প্রজাতন্ত্রের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না। এর মাধ্যমে উপর্রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। উত্থাপনকারী : সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান।

 

 

 

সপ্তম সংশোধণী :

 

 উত্থাপন করা হয় ১০ নভেম্বর ১৯৮৬। গৃহীত হয় ১০ নভেম্বর ১৯৮৬। এ সংশোধনী ছিল পঞ্চম সংশোধনীর ধারাবাহিকতা মাত্র। পাঁচ ঘন্টার ব্যবধানে উত্থাপিত ও গৃহীত এই বিলটি একই দিনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের বাষট্টি শব্দটির পরিবর্তে পয়ষট্টি শব্দটি প্রতিস্থাপিত হয় এবং ২৪ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১১ নভেম্বর, ১৯৮৬ পর্যন্ত সামরিক সরকারের সকল কর্মকান্ডের বৈধতা দেয়া হয।  উত্থাপনকারী : আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিচারপতি একে এম নুরুল ইসলাম।

 

 

 

অষ্টম সংশোধনী :

 

 অষ্টম সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ১১ মে, ১৯৮৮, গৃহীত হয় ৭ জুন, ১৯৮৮ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ৯ জন ১৯৮৮। এই সংশোধনটি আনয়ন করা হয় তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠা আন্দোলনকে অবদমন বা স্তিমিত করার কৌশল হিসেবে। এর মাধ্যমে সংবিধানের যেসব পরিবর্তন নিয়ে আসা হয় তা হল-  ১. ৩০ নং আইনের ধারা বলে ২(ক) অনুচ্ছেদে সংযোজন, যেখানে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।  ২. ৩০ নং অনুচ্ছেদের ৩টি উপ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি-যাতে রাষ্ট্র থেকে সাহসিকতা বা একাডেমিক বিষয় ছাড়া কোনরূপ খেতাব, ভূষন, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষন দেয়ার বিষয়টি নিষিদ্ধ ছিল, এই পরিবর্তনের ফলে তা আর নিষিদ্ধ রইল না। এছাড়া প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ব্যতীত বিদেশী রাষ্ট্র থেকে অনুরূপ খেতাব গ্রহণ করা বৈধ ছিল না। এই সংশোধনী সেই বাধা দূর করেছে।  ৩. সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। সংবিধানে ১০০ নং অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপন করে বলা হয় যে রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারককে মনোনয়ন দিয়ে প্রতিটি বেঞ্চে পাঠাবেন। উল্লেখ্য যে, শেষোক্ত পরিবর্তনটি ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশ বলে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এছাড়া এ সংশোধনীতেই রাজধানীর ও ভাষার বানানে পরিবর্তন এনে উধপপধ কে উযধশধ এবং ইবহমধষর কে ইধহমষধ করা হয়। উত্থাপনকারী : সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

 

 

 

নবম সংশোধণী :

 

 উত্থাপন করা হয় ৬ জুলাই ১৯৮৯, গৃহীত হয় ১০ জুলাই ১৯৮৯ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ১১ জুলাই, ১৯৮৯। এ সংশোধনীর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তির দুই বারের অধিক প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নিয়ম-কানুন জারি করা হয়েছে। অবশ্য দ্বাদশ সংশোধনীর পর এ সংশোধনীর কার্যকারিতা আর নেই। উত্থাপনকারী : সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

 

 

 

দশম সংশোধনী :

 

দশম সংশোধনী গৃহীত হয় ১২ জুন, ১৯৯০ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২৩ জুন, ১৯৯০। উত্থাপনকারী আইন ও বিচারমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম। এ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০ টি মহিলা আসনকে আরও ১০ বছরের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। এ ব্যবস্থা ছিল অনিবার্য অনুসঙ্গ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত খুটিনাটি এতে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া সংবিধানের ইংরেজী ও বাংলা ভাষ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত যে অসঙ্গতি ছিল তা দূর করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

একাদশ সংশোধনী :

 

একাদশ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ২ জুলাই, ১৯৯১। গৃহীত হয় ৬ আগস্ট, ১৯৯১ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১০ আগস্ট, ১৯৯১। উত্থাপনকারী; আইন ও বিচারমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ।  একাদশ সংশোধনীটিও সাংবিধানিক সংকট উত্তরনের লক্ষ্যে সম্পাদিত হয়। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সরকার প্রধান এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করলে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করেন। কিন্তু সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের লাভজনক পদে থেকে কেউ রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন না। তিন জোটের সমর্থনের কারনে তিনি সেখানে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেন, ফলে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে তার পূর্বপদে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচালিত সকল কর্মকান্ডের বৈধতা প্রদান কর হয়।

 

 

 

দ্বাদশ সংশোধনী :

 

 দ্বাদশ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ২ জুলাই, ১৯৯১। গৃহীত বা সংসদে পাশ হয় ৬ আগস্ট, ১৯৯১। উত্থাপনকারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই সংশোধনীর মূল লক্ষ্য ছিল তিন জোটের ঘোষনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ সালে গৃহীত গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন লাভের পরে ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে এই সংশোধনী প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং সংবিধানের ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন ও সংশোধনী আনয়ন করা হয়। এই সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাস করে বলা হয়, তিনি সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন এবং স্বাধীনভাবে তিনি দুটি কাজ করতে পারবেন। আর তা হল-  ১. অধিকাংশ সংসদ সদস্যগণের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ।  ২. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এর মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত হয়, সকল নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভার হাতে ন্যাস্ত হয়। সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যকার বিরতি ৬০ দিন নির্ধারণ করা হয।

 

 

 

ত্রয়োদশ সংশোধনী :

 

 ত্রয়োদশ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ২১ মার্চ ১৯৯৬ গৃহীত তথা সংসদে পাশ হয় ২৭ মার্চ, ১৯৯৬ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ২৮ মার্চ, ১৯৯৬। উত্থাপনকারী : শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।  এ সংশোধনীর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সকল জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই সরকার সংসদ ভেঙ্গে দেবার পর দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং নির্বাচনের পর প্রধামন্ত্রীর ক্ষমতা গ্রহনের সঙ্গে সঙ্গে এর মেয়াদ শেষ হবে। সংশোধনীর ফলে সংবিধানে আনীত এ বিষয়গুলো ব্যাপক এবং বিস্তারিত। এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান, তার যোগ্যতা, দায়িত্ব, পদত্যাগ বা ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে শুরু করে সরকারের সহযোগিতার জন্য ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ, তাদের যোগ্যতা, কর্তব্য, শপথ গ্রহণ পদত্যাগ প্রভূতি বিষয়গুলো বর্ণিত হয়েছে।

 

 

 

চতুর্দশ সংশোধণী :

 

প্রথম উত্থাপন করা হয় ১৭ মার্চ ২০০৪ ; পুনরায় উত্থাপন করা ২৮ এপ্রিল, ২০০৪; সংসদে পাশ হয় ১৬ মে, ২০০৪ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৭ মে, ২০০৪। ২২৬-১ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। উত্থাপনকারী আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিশেষত সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ পূরনের লক্ষ্যে অর্থাৎ জাতীয় সংসদে মহিলা আসন সংরক্ষনের উদ্দেশ্যকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে শপথ পাঠ,প্রধান বিচারপতি এর বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ করা সামনে রেখে এই সংশোধনী আনীত হয়। 

 

মৌলিক অধিকার

 

নাগরিকদের যেসকল অধিকার সনহবিধানে লিপিবদ্ব থাকে সেসকল অধিকারসমূহ হল মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬-৪৭ পর্যন্ত সংবিধানের ৩য় ভাগে এই মৌলিক অধিকারসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। এসকল মৌলিক অধিকারসমূহ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

 

১. আইনের দৃষ্টিতে সমতা:সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী এটি ২৭ নং অনুচ্ছেদে রয়েছে।

 

২. ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য:কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।  কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।

 

৩. সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা:রক্ষাকবচ:     প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বিপদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,কোন ধর্মীয় বা উপ-সমপ্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সমপ্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে,এটি সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।

 

৪. বিদেশী খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ: রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোন নাগরিক কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট হইতে কোন উপাধি, খেতাব, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করিবেন না।এটি ৩০ নং অনুচ্ছেদে রয়েছে।

 

 

 

৫. আইনের আশ্রয়   লাভের অধিকার: 

 

 

 

আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন     স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত     অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন     ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির     জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।এটি সংবিধানের ৩১     অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

৬. জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ: আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।এটি সংবিধানের ৩২ তম অনুচ্ছেদে আছে।

 

৭. গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ:  আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।এটি সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে রয়েছে। 

 

৮. জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধকরণ: সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লংঘিত হইলে তাহা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই সেই সকল বাধ্যতামূলক শ্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যেখানে ফৌজদারী অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তি আইনতঃ দণ্ডভোগ করিতেছেন; অথবা জনগণের উদ্দেশ্যসাধনকল্পে আইনের দ্বারা তাহা আবশ্যক হইতেছে।এটি সংবিধানের ৩৪তম অনুচ্ছেদে রয়েছে।

 

৯. বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ: অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দণ্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না। ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপে আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন। কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না। কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। প্রচলিত আইনে নির্দিষ্ট কোন দণ্ড বা বিচারপদ্ধতি সম্পর্কিত কোন বিধানের প্রয়োগকে এই অনুচ্ছেদের (৩) বা (৫) দফার কোন কিছুই প্রভাবিত করিবে না।এটি সংবিধানের ৩৫ তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে

 

১০. চলাফেরার স্বাধীনতা: জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা,ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।এটি সংবিধানের ৩৬ তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

১১. সমাবেশের স্বাধীনতা: জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।এটি সংবিধানের ৩৭তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

১২. সংগঠনের স্বাধীনতা:জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।তবে সাম্প্রদায়িক কোন দল বা সংগঠনকে কোনভাবে সমর্থন দেওয়া হবে না। এটি সংবিধানের ৩৮ তম অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা হয়।

 

১৩. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে

 

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং

 

(খ) সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার

 

 এটি সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়।

 

১৪. পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা:আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার থাকিবে।এটি সংবিধানের ৪০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়।

 

১৫. ধর্মীয় স্বাধীনতা: আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে

 

 (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন,পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;

 

 (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।

 

 এটি সংবিধানের ৪১ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

১৬. সম্পত্তির অধিকার: আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না। এই  অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ, কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় বা প্রদানের নীতি ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে, তবে অনুরূপ কোন আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।

 

১৯৭৭ সালের ফরমানসমূহ (সংশোধন) আদেশ,১৯৭৭ (১৯৭৭ সালের ১ নং ফরমানসমূহ আদেশ) প্রবর্তনের পূর্বে প্রণীত কোন আইনের প্রয়োগকে, যতদূর তাহা ক্ষতিপূরণ ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের সহিত সম্পর্কিত, এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই প্রভাবিত করিবে না। এটি সংবিধানের ৪২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

১৭. গৃহ যোগাযোগের রক্ষণ: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের-

 

(ক) প্রবেশ, তলাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তালাভের অধিকার থাকিবে;

 

(খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকিবে।

 

এটি সংবিধানের ৪৩ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

১৮. মৌলিক অধিকার বলবত্করণ:। (১) এই ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবৎ করিবার জন্য এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।  এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।]এটি সংবিধানের ৪৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে।

 

১৯. শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন:কোন শৃঙ্খলা-বাহিনীর সদস্য-সম্পর্কিত কোন শৃঙ্খলামূলক আইনের যে কোন বিধান উক্ত সদস্যদের যথাযথ কর্তব্যপালন বা উক্ত বাহিনীতে শৃঙ্খলারক্ষা নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধান বলিয়া অনুরূপ বিধানের ক্ষেত্রে এই ভাগের কোন কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।এটি সংবিধানের ৪৫ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।

 

২০. দায়মুক্তি-বিধানের ক্ষমতা:এই ভাগের পূর্ববর্ণিত বিধানাবলীতে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তি জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামের প্রয়োজনে কিংবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে যে কোন অঞ্চলে শৃঙ্খলা-রা বা পুনর্বহালের প্রয়োজনে কোন কার্য করিয়া থাকিলে সংসদ আইনের দ্বারা সেই ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করিতে পারিবেন কিংবা ঐ অঞ্চলে প্রদত্ত কোন দণ্ডাদেশ,দণ্ড বা বাজেয়াপ্তির আদেশকে কিংবা অন্য কোন কার্যকে বৈধ করিয়া লইতে পারিবেন।এটি  সংবিধানের ৪৬ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।

1 comment:

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...