ভূমিকা
মানব সম্পদ উন্নয়ন আধুনিকা কালের
একটি বহুল প্রচলিত কথা।এটি নিয়ে সারা বিশ্বে কম-বেশী ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে।
এই মানবসম্পদ উন্নয়নে ইসলামে কি কি ভূমিকা রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
মানব সম্পদ উন্নয়ন কি?
মানবসম্পদ উন্নয়ন কথাটির মানে কি তা
আগে আলোচনা করা দরকার। হাংগেরির বুদাপেষ্টের এক সম্মেলনে বলা হয় যে,
আধুনিক অর্থে মানব সম্পদ উন্নয়ন
হল মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্বিকরণ অর্থাৎ, উৎপাদন কর্মে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে মানুষের কারিগরী দক্ষতা বা ব্যবহারের
উপযোগিতা বৃদ্বিকরণ।
হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট
২০০১ এ বলা হয়েছে,
It is about creating an environment in which people can develop
their full potential and lead productive ,creative lives in accord their needs
and interest.
মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠী একটি বিশাল সম্পদে পরিণত হতে পারে।মানবসম্পদ
উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মানবগোষ্ঠীর সুপ্ত প্রতিভা,প্রচ্ছন্ন শক্তি, লুকায়িত
সামর্থ্য,যোগ্যতার প্রসার ঘটে। মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে
মানুষের আশা-আকংখা পূর্ণ হয়।মানুষকে যেখানে সম্পদ হিসেবে ধরা হয় সেখানে তার অর্থনৈতিক
উন্নয়নে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটে অন্যথায় তা ব্যর্থ হবে।মানুষের অর্থনৈতিক
দায়বদ্বতা থেকে মুক্ত করা হল অর্থনীতির অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য।
ইসলাম ধর্ম মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি অত্যাধিক
গুরুত্বারোপ করে থাকে।মহানবী(সাঃ) এর আদর্শ এর মূল কথা হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এই
মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলামের ভূমিকা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলামের
ভূমিকা
সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে যে, একটি মানব জাতির উন্নতি ঘটে চারটি বস্তুর সমন্বয়ে যা হল
শিক্ষা কর্মদক্ষতা, কর্ম অনুযায়ী
কর্ম-সম্পাদন, কর্মক্ষমতা সৃষ্টি এবং ইতিবাচক
কর্মস্পৃহা।
উপরোক্ত বিষয়াবলী একটি মানুষের
ভিতর তখনই তার বাস্তবায়ন হবে যখন তার ভিতর শিক্ষা, নৈতিকতা, সাস্থ্য ও কর্মপ্রেরণার বিকাশ
ঘটবে। এই চারটি বিষয়কে রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে জোড় তাগিদ প্রদান
করেছে। এই বিষয়াবলী সম্পর্কে ইসলামী নীতিমালা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
শিক্ষা
শিক্ষা এমন এক মাধ্যম যার
সাহায্যে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটে। এ কারণেই শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি
বলা হয়েছে। শিক্ষা মানুষের জ্ঞান-অভ্যাস,আচরণ ও মূল্যবোধকে প্রভাবান্বিত করে। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জিত হয়। তাই The World
Book of Encyclopedia তে বলা হয়েছে,
Education is the process by which people acquire knowledge,
skills, habits, values and attitudes.
আরও বলা হয়ে থাকে যে, Education
is key for the development.
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল তিনটি
যার একটি হল মানুষের দৈহিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্বি , ব্যক্তির ভিতর মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ও চরিত্র গঠন এবং সার্বজনীন ও শাশ্বত
একটি প্রেরণার উৎস হিসেবে গ্রহণ করে।
শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি কখনও
দাড়াতে পারবে না।
এই ধরনের শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে
ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করে থাকে।
আল-কুরআনের প্রথম আয়াত হল ইকরা
অর্থাৎ,
পড়। এছাড়াও কুরআন-হাদীসের আরও বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা
অর্জনের ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে,
যারা জানে আর যারা জানে না তারা
কি সমান হতে পারে? জ্ঞানীগণ উপদেশ
গ্রহণ করে থাকে। [যুমার]
কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে,
তোমাদের ভিতর যারা ঈমান এনেছে এবং
যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের
বহু মর্যাদা দান করবেন।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
সৎ শিক্ষাদান করার চেয়ে উত্তম
বৃক্ষ কোন পিতা পুত্রের উপর রোপন করতে পারে নাই। [আবূ দাউদ]
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে,
যে বিদ্যা অর্জনের জন্য বের হয়েছে, সে ঘরে ফিরা না পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।
তিনি আরও বলেন,
তোমাদের ভিতর সর্বোত্তম সে যে
নিজে ইলম শিখে ও অপরকে শিখায়। [তিরমিযী]
যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পাঠ করে
তার উপর আমল করবে তার পিতামাতাকে কিয়ামতের দিন এমন মুকুট পড়ানো হবে যার আলো
সূর্যের আলোর চেয়ে অধিক হবে।তবে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের কি ধারনা সে নিজে
কুরআনে উপর আমল করবে? [আবূ দাউদ]
তিনি আরও বলেন,
মুমিন বান্দার কল্যাণ(ইলম হত)
কখনও পরিতৃপ্ত হয় নাই।সে ইলমের কথা শুনতে শুনতে থাকে এবং জান্নাতে দাখিল হয়ে যান।
[তিরমিযী]
এখন মানুষ ইলম দুইভাবে অর্জন করতে
পারে।একটি হল কারিগরী জ্ঞান আরেকটি হল ধর্মীয় জ্ঞান।দুই ধরনের ইলম অর্জন করা
মানুষের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। এই
শিক্ষাদ্বয়ের সমষ্টি হিসেবে একজন মানুষ কিছু মানবীয় গুণাবলী তথা চারিত্র ও
নৈতিকতা লাভ করে থাকে আর তার পাশাপাশি তার দ্বারা মানুষ দৈহিক এবং মানসিকভাবে
কর্মদক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
সাস্থ্যরক্ষা
আল্লাহ পাক মানুষকে একটি সুন্দর
দেহ দান করেছেন।আর মানুষের কর্তব্য হল এই যে, সে এই দেহের সদ্বব্যবহার করে তা সংরক্ষণের বিশেষভাবে জোড় প্রদান করেছে। দেহকে
সুস্থ রাখার অর্থ শুধুমাত্র এই না যে, নিজেকে রোগ থেকে মুক্ত রাখবে।বরং তা মূলত শারীরিক ,মানসিক ও সামাজিক কল্যাণের একটি অবস্থা।সাস্থ্যকে সুরক্ষার
জন্য ইসলাম যেকয়টি শিক্ষা দিয়েছে তা মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায় যা হলঃ
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
২. খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের
নীতিমালা
৩. শারীরিক ব্যায়াম
এই বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষেপে নিম্নে
আলোচনা করা হলঃ
১.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নাতা অর্জন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে
আল্লাহ বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করে বলেন সূরা মুদাসসিরে তিনি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে
অপবিত্র অবস্থা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আদেশ প্রদান করেন,
সর্বপ্রথম অপিত্রতা থেকে বেঁচে
থাকুন।
আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন,
আল্লাহ পবিত্র অর্জনকারীদের
ভালবাসেন। [বাকারাঃ২২২]
তিনি আরও বলেন,
তোমরা যখন অপবিত্র হবে তখন তোমরা
ভালমত পবিত্রতা অর্জন করবে। [মায়িদাঃ৬]
থাকে।হাদীসে পবিত্রতার গুরুত্বের
কতাহ তুলে ধরা হয়েছে।রাসূল(সাঃ) বলেন, “আল্লাহ নিজেও পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতাকে ভালবাসেন।” আবার রাসূল(সাঃ) এ কথাও বলেছেন যে, “পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধাংশ।” আবার তিনি একথাও বলেছেন যে, “যখন কুকুর তোমাদের লালা দেয় তখন ঐ জায়গাটি সাতবার
ধুবে।সর্বশেষ মাটি দিয়ে ধুবে”। তাহলে এখানে ছয়বার পানি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করার
পর একবার যদি মাটি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হয় তাহলে তার ভিতর যেই জীবানু থাকার কথা তা
আর থাকবে না।আর এই মাটিকে যদি আমরা দুষিত করি তাহলে কি করে আমরা কি করে মাটি
ব্যবহার করব।রাসূল(সাঃ) এই দুআ করতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকাল হুদা অত্তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল
গিনা।” এই আফাফার দ্বারা চারিত্রিক পবিত্রতা এবং এবং দৈহিক
পবিত্রতা উভয়ের কতাহ বলা হয়েছে।আরও অসংখ্য হাদীসের দ্বারা তিনি পবিত্রতার কথা
বলেছেন।এখন যদি একথা বলা হয় যে, পানি পবিত্র
রাখা আমাদের একটা দায়িত্ব।তাহলে মানুষ তা গুরুত্বের সাথে করবে।তানাহলে করবে না।
পানির বিশুদ্বতা রক্ষার জন্য
ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসে উদ্বৃত করেছেন যা হল, “তোমরা পানিতে কেউ নিঃশ্বাস ফেলবে না।” এটা করা একদম নিষেধ।কারন,মানুষ যখন শ্বাস ত্যাগ করে তখন তার ভিতর থেকে নানা জীবানু বের হয়।আর তা পানিতে
নিক্ষেপিত হলে সেই পানি দুষিত হয়।
রাসূল(সাঃ)বলেছেন, “শয়নের আগে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।”পানিকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এ হাদীস বলা হয়েছে।
উযু করার পূর্বে পানির পাত্রের
পানি যেন দুষিত না হয় এজন্য তার উচিৎ হাত ধুঁয়ে নেওয়া। বুখারী এবং মুসলিম শরীফের
হাদীস তোমাদের ভিতর থেকে যদি কেউ ঘুম থেকে উঠে আর সে যেন হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে
হাত না দেয়।কারণ সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল? পানির অপচয় করি বিভিন্নভাবে।অথচ রাসূল(সাঃ) বলেন, “তুমি যদি সমুদ্রে থাক তাহলেও পানির অপচয় করবে না।”
পানি দুষন রোধের জন্য হাদীসসমূহ
অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তিনি উদ্বৃত করেছেন,যেমন তিনি বলেছেন, “তোমরা বদ্ব পানিতে পেশাব করবে না।”[মুসলিম] অন্য এক হাদীসে আছে,তোমরা পানিতেই পেশাব করবে না।আমরা বদ্ব পানিতে পেশাব না করলেও সকল ড্রেনের
পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে।তাহলে আমরা তো বদ্ব পানিতে পেশাব করছি।পুরো মুসলিম জাতি যদি
হাদীস মানে তাহলে তো এই অবস্থা হত না।তাহলে পানিগুলো কোথায় যাবে?তার জন্য আল্লাহ পাক তো শোধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।কিন্তু
তা বর্তমানে শোধন না করে তা প্রবাহিত করা হচ্ছে সরাসরি।আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে
বর্ণিত হাদীস যে, “তোমরা স্থির পানিতে পেশাব করবে না।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) রাস্তা থেকে কোন
কষ্টদায়ক বস্তুকে ঈমানের একটি অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
পানির বিশুদ্বতা রক্ষার ব্যাপারে
তিনি বলেন, যেই পানির রঙ, গন্ধ ও স্বাদ তিনটিই নষ্ট হয়ে গেছে সে পানি দ্বারা কোন কাজ
করা বা করতে দেওয়া উচিৎ নয়।
নাক পরিষ্কার হাদীসে এসেছে, বিছানা থেকে উঠে সর্বপ্রথম নাক পরিষ্কার কর।
চোখের পরিষ্কার হাদীসে এসেছে, হাত দ্বারা চোখ মুছা উচিৎ।কারণ এর দ্বারা চোখের ঘুম দূর হয়ে
যায়।
মুখের পরিষ্কার হাদীসে এসেছে, আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না মনে করতাম তাহলে আমি
তাদের প্রতি ওয়াক্ত নামাযের আগে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম।
মাথার পরিষ্কার হাদীসে এসেছে, যার মাথার চুল আছে সে যেন তার পরিচর্যা করে।
এছাড়া হাদীসে নিজেদের ঘর-বাড়ী ,পোশাক-পরিচ্ছেদ ও উযু-গোসলের মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র রাখতে
বলা হয়েছে।
২. খাদ্য গ্রহণে নীতিমালা
হালাল-হারাম নির্ধারণঃ নীতিগরভাবে
সকল বস্তু অনুমোদনীয়।সুস্পষ্টভাএব সকল বিষয় হালাল করা হয়েছে।তবে যেসকল বিষয়ে নিষেধ
করা হয়েছে তা হারাম।আল্লাহ বলেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা ঐসব সুস্বাদু বস্তু হারাম করো না, যেগুলো আল্লাহ্ তোমাদের জন্য হালাল করেছেন এবং সীমা অতিক্রম
করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না”। [মায়িদাঃ৮৭]
“আপনি বলে দিনঃ
যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন খাওয়াকারীর জন্যে, যা সে খায়; কিন্তু মৃত অথবা
প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়”। [আনআমঃ১৪৫]
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো
নামে উৎসর্গ করা হয়। [বাকারাঃ১৭৩]
চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি
করেছেন তোমাদের জন্য এতে শীত নিবারক উপকরণ ও অনেক উপকার রয়েছে। এ থেকে তোমরা আহার
গ্রহণ কর। [নাহলঃ৫]
যা তোমাদের কাছে বর্ণিত হচ্ছে তা
ছাড়া(সকল) চতুষ্পদ জন্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হল। [মায়িদাঃ১]
ইবনে আব্বাস(রাঃ)থেকে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন, “জাহিলী যুগে লোকজন কিছু ভক্ষণ করত আবার কিছু বস্তু ভক্ষণ
করত না।অতঃপর আল্লাহ নবীকে প্রেরণ করে কিতাব নাযিল করলেন।অতঃপ হারামকে হারাম এবং
হালালকে হালাল করলেন এবং যেসকল বিষয়ে নীরব থাকা হয়েছে তার জন্য অবকাশ দেওয়া হয়েছে।” [আবূ দাউদ]
মিতব্যয়ীতা
খাদ্যদ্রব্য ও পানাহারের সময়
আল্লাহ পাক মিতব্যয়ীতা অবলম্বণ করতে বলেছেন।আল্লাহ বলেন,
“আহার করবে ও পান
করবে কিন্তু অমিতচার করবে না।তিনি অমিতচারীদের পছন্দ করেন না”। [আরাফঃ৩১]
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
তোমরা কেউ পেট ভরে খাবে না।
তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, পেটের তিনভাগের এক ভাগ যেন তারা ভক্ষণ করে। আর বাকি দুই ভাগ
বায়ু আর পানির জন্য খালি রাখে।
খাদ্য গ্রহণে মুহাম্মদ(সাঃ) এর
কতিপয় নির্দেশমালা
খাদ্যের সাথে তরকারী নিও, যদি তা পানিঅ হয়।
রাতের আহার না করা হলে খুব শীঘ্র
বার্ধক্য আসে।
মহানবী(সাঃ) কখনও ঠেস দিয়ে কোন
কিছু খেতেন না।
শাক-সবজি গ্রহণ
ইসলাম পশু-পাখির গোশত ভক্ষণের
পাশাপাশি শাক-সবজি ভক্ষণ করতে বলেছে।আলী(রাঃ) বলেন,
তোমরা তোমাদের পেটকে জানোয়ারের মত
বানিও না।শুধুমাত্র গোশত ভক্ষণ করবে না। আল্লাহর দেওয়া নিআমত ভোগ কর।
মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন,
তোমরা কদু খাও।কেননা তা মনকে
শক্তিশালী করে ও মস্তিস্কে শক্তি বৃদ্বি করে।
৩. শারীরিক ব্যায়াম সাধন
সাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যায়ামের কোন
বিকল্প অবস্থা নেই। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সকলকে ব্যায়াম করতে বিশেষভাবে নির্দেশ জ্ঞাপন
করেছেন। যেইসকল ব্যায়াম আমাদের প্রিয় নবী(সাঃ) করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তা হলঃ
তীর চালানোঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
নিজে তার সাহাবীদের সাথে তা করতেন।
দৌড় প্রতিযোগিতাঃ রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) তার স্ত্রীদের সাথে এই প্রতিযোগিতা করতেন।
সামরিক কসরতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
মসজিদে নববীর প্রাংগনে সামরিক কসরতে অংশগ্রহণ করতেন।
ঘোড়াদৌড়ঃ রাসূল(সাঃ) নিজে একজন
ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগী ছিলেন এবং সকলকে ঘোড়া দৌড়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন।
শিকারঃ সাস্থ্য সুরক্ষায় শিকার
একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল-কুরআন,হাদীস ও ফিকাহশাস্ত্রে এই শিকার নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে।
সাস্থ্যসংরক্ষণে ইসলামে আরও কিছু
নীতিমালা
চিকিৎসা গ্রহণ
মানুষ যখন বিভিন্ন ধরনের
অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হবে তখন তাদের চিকিৎসা করাতে হবে। তখন কেবল আল্লাহর উপর ভরসা
করে থাকা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন তোমাদের দেহের উপর তোমাদের অধিকার
আছে।
তিন বলেন,
প্রত্যেক রোগের একটি চিকিৎসা আছে।
কালিজিরা ও মধু হল সকল রোগের
শিফা.
তিনি ব্যাঙ্গের ছাতা থেকে ঔষধ
গ্রহণ করে তা চোখে ব্যবহার করতেন।
এভাবে করে শিংগা লাগানোসহ আরও
বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্বতি গ্রহণ করার কথা আল্লাহর রাসূল আমাদের জানিয়ে
গিয়েছেন।
ভোরে ঘুম থেকে উঠা
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
তোমরা ভোরে ঘুম থেকে উঠ।কারণ এতে
সওয়াব ও উপকার আছে। [বুখারী]
নিদ্রাকালীন নীতিমালা
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
তোমরা পরিমিতভাবে নিদ্রা যাও।
প্রদীপ ও আগুন নিভিয়ে শয়ন কর।
শয়নের পূর্বে বিছানা ঝেড়ে নাও।
তিনি দেয়ালবিহীন ছাদে নিদ্রা যেতে
নিষেধ করেছেন।
শিশুর প্রতি যত্ন
ইসলাম একটি শিশুকে এই পৃথিবীতে
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানিয়েছে। কারণ একটি
শিশুর যথার্থ যত্ন ছাড়া কখনও তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটতে পারে না। তাই এদের
প্রতি যত্ন নিতে হবে। আল্লাহ বলেন,
মায়েরা তাদের সন্তানদের যেন পূর্ণ
দুই বছর দুধ পান করায়। [বাকারাঃ২৩৩]
নৈতিকতা
ইসলাম ধর্ম হল মানবতার জন্য
বিশ্বজনীন এক ধর্ম।এ ধর্ম মানুষকে সর্বদা নীতি-নৈতকতা শিক্ষা দেয়।এই নীতি-নৈতিকতার
দ্বারা একজন মানুষ নিজেকে সচ্চরিত্রের অধিকারী করতে পারে।সিদ্দীকগণের আমলসমূহের
ভিতর এটা সর্বোত্তম।প্রকৃতপক্ষে একে অর্ধেক দ্বীন-দারী,পহেযগারী এবং আবেদগণের অধ্যাবসায়ের ফল বলা হয়। যারা নিজেদের
নীতি-নৈতিকতাকে ঠিক রাখেব ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাদের মর্যাদা ও সম্মান
দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জীবনে উন্নতি হবে।ইসলাম মানুষকে কীভাবে নীতি-নৈতিকতার দিকে
পরিচালিত করবে সে ব্যাপারে রয়েছে কিছু নীতিমালা।এসকল নীতিমালা নিয়ে নিম্নে আলোচনা
করা হলঃ
চরিত্রকে সুন্দর করার নবূয়াতের
একটি অংশ। রাসূল (সাঃ) বলেন, “সৎস্বভাব,ধীর স্থিরতা এবং মধ্যমনীতি
অবলম্বন করা হল নবুয়াতের চব্বিশ ভাগেরএর ভাগ।” [তিরমিযী]
য়াঃযাদের চরিত্র সুন্দর হবে
তাদের কথা-বার্তা,চাল-চলনের
দ্বারা প্রচুর সওয়াব অর্জন করবে। রাসূল(সাঃ) বলেন, “উত্তম চরিত্র হল নেক কাজ।” [মুসলিম]
আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম
হবে যে তার নিজ চরিত্রকে সুন্দর করে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিসর্বোত্তম,যে চরিত্রে দিক দিয়ে সুন্দর হয়।” [বুখারী,মুসলিম]
যারা নিজেদের চরিত্রকে সুন্দর
করবে কাল হাশরের দিন আল্লাহ পাক তাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন।এ ব্যাপারে হাদীসে
এসেছে,
আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন,“ঈমানদারব্যক্তি নিজের সুন্দর চরিত্রের দ্বারা ঐসব মানুষের মর্যাদা লাভ করে
নেয়,যারা রাতভর নফলনামায আদায় করে এবং দিনে সর্বদা রোযা রাখে।”[আবূ দাউদ]
যারা নিজেদের চরিত্রকে সুন্দর
করবে তারা রাসূল(সাঃ) এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত হবে এবং
কিয়ামতের দিন তারা রাসূল(সাঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।হাদীসে এসেছে, জাবির বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন, “তোমাদের ভিতর আমারনিকট অধিক প্রিয় তারা যাদের চরিত্র বেশি
সুন্দর এবং কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়েনিকটবর্তী হবে যার চরিত্র সুন্দর।”[তিরমিযী]
সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিবর্গ
শুধুমাত্র জান্নাত লাভ করবেন না বরং জান্নাতে তাদেরকে বিশেষভাবে মর্যাদা দেওয়া
হবে।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ উমামা(রাঃ)
থেকে বর্ণিত রাসূল(সাঃ) বলেন, “আমি ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে একটি ঘরের যিম্মাদার নিচ্ছি যে,তার আপনচরিত্রকে ভাল বানায়।” [তিরমিযী]
আল্লাহ এর প্রতি বিশ্বাস করা যেমন
ঈমানের একটি অংগ তদ্রুপ নীতি-নৈতিকতার দ্বারা নিজের আখলাককে সুন্দর করা ঈমানের
একটি অংগ।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আমর বিন আমবাসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন ঈমান কি? রাসূল(সাঃ) উত্তরে বললেন, “ধৈর্য্য,উত্তম চরিত্র
এবং ক্ষমা।” [শোয়াবিল ঈমান
বায়হাকীঃ৭৭৮৬]
চরিত্রকে পূত-পবিত্র করলে তার সকল
দেহই ঠিক থাকে বলা হয়। তাই রাসূল(সাঃ) বলেছেন,
“শরীরের দেহে
একটি মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়।আরযদি তা খারাপ হয়,তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কাল্ব বা দিল”।[বুখারী ও মুসলিম]
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ(সাঃ)
ছিলেন এক সুন্দর চরিত্রের মূর্ত প্রতীক।তার আলোতে সারা বিশ্বের মানুষ আলোকিত হয়ে
সচ্চরিত্রের হতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই আমাদের মুসলিম হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব তার
চরিত্রকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। তাই আল্লাহ বলেন,
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা
রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। [আহযাবঃ২১]
তাই আমরা তার অনুসরণের মাধ্যমে
আমরা আমাদের জীবনব্যবস্থাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করব।
কর্মপ্রেরণা
ইসলাম কর্মপ্রেরণার মাধ্যমে হালাল
উপার্জনের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছে। আর এই কর্মপ্রেরণা মানুষকে
শৃংখলাপূর্ণ জীবন-যাপন অতিবাহিত করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
হালাল উপার্জন বলতে আমরা বৈধ
উপার্জনকে বুঝে থাকি।আল্লাহ ও তার রাসূল যে নির্দেশিত ও অনুমোদিত পন্থায় যে আয় উপার্জন
করা হয় তাকে হালাল উপার্জন বলে।
দেহ সুস্থ এবং আত্মার কল্যাণের
জন্য হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আল্লাহ আমাদেরকে হালাল খাদ্য
ভক্ষণ করতে বলেছেন।তিনি বলেন,
হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন
কর।[বাকারাঃ১৬৮]
আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক
দিয়েছি তা থেকে এবং আ¬ল্লাহর জন্য
শোকর কর,
যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত
কর’(সূরা আল
বাকারা:১৭২)।
প্রত্যেক নবী-রাসূল হালাল
উপার্জেরন সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। হযরত আদম(আঃ) কৃষিকাজ করতেন, নূহ(আঃ) কাঠমিস্ত্রী ছিলেন, ইদ্রীস(আঃ) তাঁতী ছিলেন, যাকারিয়া(আঃ) ছিলেন কাঠমিস্ত্রী,দাউদ(আঃ) ছিলেন কামার,ইব্রাহীম (আঃ) ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী এবং মূসা(আঃ) এবং মুহাম্মদ(সাঃ) মেষ চড়িয়ে
জীবিকা নির্বাহ করেছেন।হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্যসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা
হলঃ
আল্লাহ তা‘আলা ফরয ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে যমিনে ছড়িয়ে
পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:
‘‘সালাত সমাপ্ত
হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।’’ [জুমুআঃ১০]
এ মর্মে রাসূল (সাঃ) বলেন,
‘‘ফরয আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরয।’’
ইসলাম রুজি-রোজগার বাদ দিয়ে
কর্মবিমুখময় জীবন-যাপনের প্রতি নিরুৎসাহ প্রদান করেছে। তাই হালাল রুজির সাথে
সম্পৃক্ত হয়ে উপার্জন করতে বলে।
তাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল
কোন ধরনের উপার্জন উত্তম? তখন
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
ব্যবসালব্দ্ব ও নিজ হাতে শ্রমের
বিনিময় উপার্জন।
তিনি বলেন, দুই হাতে উপার্জনের চেয়ে উত্তম খাদ্য আর কেউ কোন দিন খায়
নাই।
এই মর্মে রাসূল(সাঃ) বলেন,
"তোমাদের ফজরের সালাত শেষ
হয়ে যাওয়ার পর, রুযির অনুসন্ধান না করে কেউ
ঘুমিয়ে পড়বে না"।
ইসলাম বৈরাগ্য জীবন যাপনকে বিশেষভাবে
নিরুৎসাহিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, "ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই"।
উমার(রাঃ) বলেন, তোমাদের কী যেন জীবিকার জন্য নিরুৎসাহী হয়ে বস না
থাকে"।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, দুই হাতে উপার্জনের খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কেউ কোন দিন
খায় নাই। [বুখারী]
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া একটি জাতি কখনও উন্নতি লাভ করতে পারে
না। তাই একটি মানবসম্পদকে উন্নয়নের জন্য সেই দেশের শিক্ষা,সাস্থ্য পরিচর্যা, নৈতিকতা ও কর্মপ্রেরণার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না।তাই আমরা ইসলামের আলোকে
আমাদের মানবসম্পদকে উন্নয়নের জন্য যথার্থভাবে চেষ্টা করব।
nice
ReplyDelete