বর্ণবাদ হিন্দু ধর্মের একটি
অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ধর্মে অনুসারীদের এক
বর্ণ হতে অন্য বর্ণকে সম্পূর্ণরুপে পৃথকীকরণ করা হয়েছে।এরজন্য এই হিন্দু
ধর্মকে অনেকে বর্ণবাদী ধর্ম বা সাম্প্রদায়িক ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।এই
বর্ণবাদ সম্পর্কে ধারনা নিম্নে দেওয়া হলঃ
বর্ণবাদের সংজ্ঞা:
হিন্দু ধর্মের অপর নাম হল সনাতন ধর্ম।
সাম্প্রদায়িকতাই এ ধর্মে বর্ণভেদের একমাত্র কারণ। নৈতিক আচরণভেদ, গায়ের রঙ ও পেশার ভিত্তিতে হিন্দু ধর্মে বর্ণভেদের সৃষ্টি
হয়েছে। ইংরেজি Caste শব্দ থেকে বর্ণভেদের উৎপত্তি। Caste শব্দটি পর্তুগীজ Castu শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে।
এর অর্থ শ্রেণী বা রঙ। তাই প্রচলিত সাধারণ অর্থে বর্ণভেদ বলতে বুঝায় হিন্দু ধর্মীয়
সমাজের স্তর বিভাগ।এই শব্দটির ইংরেজী প্রতিশব্দ হল Color, Complexion, A
race, A little of the alphabet etc.
তবে বিশেষভাবে একে হিন্দু ধর্মের
সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
সকলে বর্ণবাদ বলতে হিন্দু
ধর্মালম্বী চারটি সম্প্রদায়কে বুঝে থাকে যা হল ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শুদ্র।
কারও মতে বর্ণ হল বিবাহভিত্তিক এক
ধরনের শ্রেণী যার সাধারণ নাম আছে।এর সদস্যপদ জন্মসূত্রে অর্জন করা যায়।
বিশেষ সমাজবিজ্ঞানীদের মতে,
বর্ণ হল এক ধরনের শ্রেণী যার
সদস্য জন্মগতভাবে হয়ে যায়। আর এর যে কতগুলো নির্দিষ্ট বিধান আছে তা কেউ লংঘন করতে
পারে না।
Oxford Dictionary তে বলা হয়েছে,
Caste is a social system based on
differences in family origin, rank, wealth etc”.
হিন্দু ধর্মে চারটি বর্ণ হিন্দু ধর্মের বর্ণ চতুষ্টয় হল- ১. ব্রাহ্মণ, ২. ক্ষত্রিয়, ৩. বৈশ্য, ৪. শূদ্র। নিম্নে ক্রমান্বয়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১. ব্রাহ্মণের অবস্থান:
ব্রাহ্মণ ‘ব্রহ্মা’- এর মুখ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারা ঈশ্বরের (ব্রহ্মার) পক্ষ থেকে কথা বলতে পারে। ‘ব্রহ্মা’ ব্রাহ্মণদের জন্য ছয়টি কাজ দিয়েছেন। যেমন- মনুসংহিতায় বর্ণিত আছে। ‘‘অধ্যাপন মধ্যয়নং সজমং জাজসং তথা দানং প্রতিগ্রহেবওব ব্রাহ্মণা নাম কলপয়ৎ।’’ অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ব্রাহ্মণের জন্য অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, যজন, যাজন, দান এবং প্রতিগ্রহ- এই ছয়টি কর্তব্য পরিকল্পনা করলেন। ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতদের স্বভাব সম্বন্ধে গীতায় বলা হয়েছে-মানসিক স্থিরতা, সংযম, তপস্যা, পবিত্রতা, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আস্তিক্য হল ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত। সুতরাং এ সম্পর্কীয় কাজগুলো শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতদের জন্য নির্দিষ্ট। মোটকথা, হিন্দু সমাজে সবচেয়ে উচ্চশ্রেণী হল ব্রাহ্মণরা। যারা নানাবিধ চিন্তা-সাধনার মাধ্যমে এবং সৎকর্মের মাধ্যমে জীবনের নানাবিধ মূল্যবান দিক লাভ করার সামর্থ্য রাখে, তারাই হিন্দু সমাজে পুরোহিত শ্রেণীতে পরিণত হয়।
২. ক্ষত্রিয়দের অবস্থান:
যারা শাসন সংক্রান্ত কাজে পারদর্শী তারা এ সম্প্রদায়ভুক্ত। ক্ষত্রিয়রা যেহেতু ঈশ্বরের (ব্রহ্মার) বাহু থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাই তাদের কাজ হল প্রজা প্রতিপালন, দান, অধ্যয়ন ও কর্তব্য পালন করা। যেমন- মনুসংহিতায় আছে- ‘‘প্রজানং রক্ষণং দান মজ্যিধ্যিয়ন সেবচ, বিষয়ে প্রশক্তির ক্ষত্রিয়ানাদ সমাগত।’’
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ক্ষত্রিয়দের জন্য প্রজা প্রতিপালন, দান, অধ্যয়ন, যজ্ঞ ইত্যাদি কর্তব্য পরিকল্পনা করলেন। দেশে শাসন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশ ও সমাজকে বহিঃশক্রর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব ক্ষত্রিয়দের উপর ন্যস্ত। প্রশাসনের আমলা ও সৈন্যরা ক্ষত্রিয় শ্রেণীভুক্ত। এদের সম্পর্কে গীতায় বলা হয়েছে- সাহস, তেজ, দক্ষতা, যুদ্ধে দৃঢ়পদ, দান এবং কর্তৃত্ব করার প্রবৃত্তি হল ক্ষত্রিয়দের স্বপ্ন।
৩. বৈশ্যদের অবস্থান:
হিন্দু ধর্মমতে, বৈশ্য জাতীয় লোকদেরকে ঈশ্বর পশুপালন, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, জল ও স্থলপথে বানিজ্য, কৃষিকর্ম, সম্পদ বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ- এ সকল দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- মনুসংহিতায় বর্ণিত আছে- ‘‘পশু নাং রক্ষণং দান মজ্যিধ্যয়ন সেবচ, বণিক পথং কুসীদঞ্চ বৈশ্যম্য কৃষি সেবচ।’’
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা বৈশ্যের জন্য পশু পালন, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, বাণিজ্য, কৃষিকর্ম- এ সব কর্তব্যের পকিল্পনা করলেন। সমাজে এ বর্ণের লোকেরা নানাবিধ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী, শিল্পী এবং কৃষক। এরা জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় সমূদয় জিনিসপত্র তৈরি করতে নিয়োজিত। এ সম্পর্কে গীতায় বলা হয়েছে- ‘‘বৈশ্যের স্বভাব হল- কৃষিকর্ম, গো-রক্ষা ও বাণিজ্য।’’
৪. শূদ্রের অবস্থান:
শূদ্র যেহেতু ঈশ্বরের (ব্রহ্মার) পা থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাই এ বর্ণের লোকদের একমাত্র কাজ হল ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সেবা করা। যেমন, মনুসংহিতায় আছে- ‘‘একসেব তুশুদ্রস্য প্রভু কর্ম সমদিশৎ এতষসেব বর্ণনাং শুশ্রুষামন সুয়ায়া।’’
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা শূদ্রের জন্য একটিমাত্র কর্তব্য পরিকল্পনা করলেন। আর তাহল- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য- এই তিন বর্ণের লোকদের সেবা করা এবং তাদের আদেশ পালন করা।
১. ব্রাহ্মণের অবস্থান:
ব্রাহ্মণ ‘ব্রহ্মা’- এর মুখ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারা ঈশ্বরের (ব্রহ্মার) পক্ষ থেকে কথা বলতে পারে। ‘ব্রহ্মা’ ব্রাহ্মণদের জন্য ছয়টি কাজ দিয়েছেন। যেমন- মনুসংহিতায় বর্ণিত আছে। ‘‘অধ্যাপন মধ্যয়নং সজমং জাজসং তথা দানং প্রতিগ্রহেবওব ব্রাহ্মণা নাম কলপয়ৎ।’’ অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ব্রাহ্মণের জন্য অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, যজন, যাজন, দান এবং প্রতিগ্রহ- এই ছয়টি কর্তব্য পরিকল্পনা করলেন। ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতদের স্বভাব সম্বন্ধে গীতায় বলা হয়েছে-মানসিক স্থিরতা, সংযম, তপস্যা, পবিত্রতা, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আস্তিক্য হল ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত। সুতরাং এ সম্পর্কীয় কাজগুলো শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতদের জন্য নির্দিষ্ট। মোটকথা, হিন্দু সমাজে সবচেয়ে উচ্চশ্রেণী হল ব্রাহ্মণরা। যারা নানাবিধ চিন্তা-সাধনার মাধ্যমে এবং সৎকর্মের মাধ্যমে জীবনের নানাবিধ মূল্যবান দিক লাভ করার সামর্থ্য রাখে, তারাই হিন্দু সমাজে পুরোহিত শ্রেণীতে পরিণত হয়।
২. ক্ষত্রিয়দের অবস্থান:
যারা শাসন সংক্রান্ত কাজে পারদর্শী তারা এ সম্প্রদায়ভুক্ত। ক্ষত্রিয়রা যেহেতু ঈশ্বরের (ব্রহ্মার) বাহু থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাই তাদের কাজ হল প্রজা প্রতিপালন, দান, অধ্যয়ন ও কর্তব্য পালন করা। যেমন- মনুসংহিতায় আছে- ‘‘প্রজানং রক্ষণং দান মজ্যিধ্যিয়ন সেবচ, বিষয়ে প্রশক্তির ক্ষত্রিয়ানাদ সমাগত।’’
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ক্ষত্রিয়দের জন্য প্রজা প্রতিপালন, দান, অধ্যয়ন, যজ্ঞ ইত্যাদি কর্তব্য পরিকল্পনা করলেন। দেশে শাসন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশ ও সমাজকে বহিঃশক্রর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব ক্ষত্রিয়দের উপর ন্যস্ত। প্রশাসনের আমলা ও সৈন্যরা ক্ষত্রিয় শ্রেণীভুক্ত। এদের সম্পর্কে গীতায় বলা হয়েছে- সাহস, তেজ, দক্ষতা, যুদ্ধে দৃঢ়পদ, দান এবং কর্তৃত্ব করার প্রবৃত্তি হল ক্ষত্রিয়দের স্বপ্ন।
৩. বৈশ্যদের অবস্থান:
হিন্দু ধর্মমতে, বৈশ্য জাতীয় লোকদেরকে ঈশ্বর পশুপালন, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, জল ও স্থলপথে বানিজ্য, কৃষিকর্ম, সম্পদ বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ- এ সকল দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- মনুসংহিতায় বর্ণিত আছে- ‘‘পশু নাং রক্ষণং দান মজ্যিধ্যয়ন সেবচ, বণিক পথং কুসীদঞ্চ বৈশ্যম্য কৃষি সেবচ।’’
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা বৈশ্যের জন্য পশু পালন, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, বাণিজ্য, কৃষিকর্ম- এ সব কর্তব্যের পকিল্পনা করলেন। সমাজে এ বর্ণের লোকেরা নানাবিধ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী, শিল্পী এবং কৃষক। এরা জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় সমূদয় জিনিসপত্র তৈরি করতে নিয়োজিত। এ সম্পর্কে গীতায় বলা হয়েছে- ‘‘বৈশ্যের স্বভাব হল- কৃষিকর্ম, গো-রক্ষা ও বাণিজ্য।’’
৪. শূদ্রের অবস্থান:
শূদ্র যেহেতু ঈশ্বরের (ব্রহ্মার) পা থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাই এ বর্ণের লোকদের একমাত্র কাজ হল ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সেবা করা। যেমন, মনুসংহিতায় আছে- ‘‘একসেব তুশুদ্রস্য প্রভু কর্ম সমদিশৎ এতষসেব বর্ণনাং শুশ্রুষামন সুয়ায়া।’’
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা শূদ্রের জন্য একটিমাত্র কর্তব্য পরিকল্পনা করলেন। আর তাহল- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য- এই তিন বর্ণের লোকদের সেবা করা এবং তাদের আদেশ পালন করা।
হিন্দু ধর্মে বর্ণবাদের প্রভাব
১. কর্মক্ষেত্রে:
এটি ছিলে বর্ণবাদের একটি প্রধান প্রভাব।এখানে ব্রাক্ষণদের কাজ হল ধর্মীয় দায়-দায়িত্ব বহন করবে, ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ব পরিচালনা ও দেশ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকবে, বৈশ্যগণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি কার্য সম্পাদন করবে এবং শুদ্রগণ উপরোক্ত তিন শ্রেণীর সম্প্রদায়ের সেবা-শুশ্রুষা করবে।
এটি ছিলে বর্ণবাদের একটি প্রধান প্রভাব।এখানে ব্রাক্ষণদের কাজ হল ধর্মীয় দায়-দায়িত্ব বহন করবে, ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ব পরিচালনা ও দেশ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকবে, বৈশ্যগণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি কার্য সম্পাদন করবে এবং শুদ্রগণ উপরোক্ত তিন শ্রেণীর সম্প্রদায়ের সেবা-শুশ্রুষা করবে।
২. শিক্ষাগতঃ
শিক্ষাগত বৈষম্য এই বর্ণবাদী হিন্দু সমাযে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হত। ব্রাহ্মণগণ যেমন শিক্ষা লাভের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকে,সেই তুলনায় ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ অনেক কম শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করে। ব্রাহ্মণগণ ৮ বছর,ক্ষত্রিয়গণ ১১ বছর ও বৈশ্যগণ ১২ বছর বয়স থেকে শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করতে পারে।শুদ্রগণ কোন শিক্ষা লাভ করতে পারবে না।
শিক্ষাগত বৈষম্য এই বর্ণবাদী হিন্দু সমাযে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হত। ব্রাহ্মণগণ যেমন শিক্ষা লাভের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকে,সেই তুলনায় ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ অনেক কম শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করে। ব্রাহ্মণগণ ৮ বছর,ক্ষত্রিয়গণ ১১ বছর ও বৈশ্যগণ ১২ বছর বয়স থেকে শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করতে পারে।শুদ্রগণ কোন শিক্ষা লাভ করতে পারবে না।
৩.প্রণামগত পার্থক্যঃ
হিন্দু বর্ণবাদ সমাজে একজনকে অপরের প্রতি প্রণাম করতে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ ব্রাহ্মণকে প্রণাম করার জন্য হাতকে কান পর্যন্ত, ক্ষত্রিয়কে প্রণাম করার জন্য হাতকে বুক পর্যন্ত, বৈশ্যদের প্রণাম করার জন্য হাত কোমড় পর্যন্ত আর শুদ্রদের প্রণাম করার কোন প্রথা নেই।
হিন্দু বর্ণবাদ সমাজে একজনকে অপরের প্রতি প্রণাম করতে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ ব্রাহ্মণকে প্রণাম করার জন্য হাতকে কান পর্যন্ত, ক্ষত্রিয়কে প্রণাম করার জন্য হাতকে বুক পর্যন্ত, বৈশ্যদের প্রণাম করার জন্য হাত কোমড় পর্যন্ত আর শুদ্রদের প্রণাম করার কোন প্রথা নেই।
৪. ধর্মীয় অনুষ্ঠানঃ
হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানসমূহে বর্ণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।যেখানে উচ্চ বর্ণের হিন্দুগণ গমন করেন সেখানে নিম্নবর্ণের হিন্দুগণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ব। ব্রাহ্মণদের জন্য কেবল শ্রাবণী পূর্ণিমা,বিজয়া ক্ষত্রিয়দের জন্য আর বৈশ্যদের জন্য দ্বিপাবলী আর শুদ্রদের জন্য কোন ধর্মীয় উৎসব ছিল না।
হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানসমূহে বর্ণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।যেখানে উচ্চ বর্ণের হিন্দুগণ গমন করেন সেখানে নিম্নবর্ণের হিন্দুগণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ব। ব্রাহ্মণদের জন্য কেবল শ্রাবণী পূর্ণিমা,বিজয়া ক্ষত্রিয়দের জন্য আর বৈশ্যদের জন্য দ্বিপাবলী আর শুদ্রদের জন্য কোন ধর্মীয় উৎসব ছিল না।
৫. ধর্মীয় গ্রন্থঃ
হিন্দু ধর্মের বর্ণগত বৈষম্যের কারণে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ তাদের স্বীয় ধর্মীয় গ্রন্থ তথা বেদ পাঠ করতে পারত।কিন্তু শুদ্রগণ তা পাঠ করতে পারত না।যদি তারা তা পাঠ করতে চাইত তাহলে তা তারা নিজেদের ভাষায় পাঠ করতে পারত।
হিন্দু ধর্মের বর্ণগত বৈষম্যের কারণে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ তাদের স্বীয় ধর্মীয় গ্রন্থ তথা বেদ পাঠ করতে পারত।কিন্তু শুদ্রগণ তা পাঠ করতে পারত না।যদি তারা তা পাঠ করতে চাইত তাহলে তা তারা নিজেদের ভাষায় পাঠ করতে পারত।
৬. বৈবাহিক প্রভাবঃ
বর্ণসম্প্রদায়গত কারণে হিন্দুদের ভিতর বৈবাহিকগত পার্থক্য দেখা দিত। ব্রাহ্মণগণ সর্বোচ্চ চারজন তার নিজ সম্প্রদায়ের একজন আর তার নিম্নঃস্থ তিন শ্রেণীর মহিলাকে বিবাহ করতে পারত।অন্যদিকে ক্ষত্রিয় পুরুষগণ ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য দুই নিম্ন শ্রেণী ও নিজ সম্প্রদায়ের মোট তিনজন নারী বিবাহ করতে পারত।
বর্ণসম্প্রদায়গত কারণে হিন্দুদের ভিতর বৈবাহিকগত পার্থক্য দেখা দিত। ব্রাহ্মণগণ সর্বোচ্চ চারজন তার নিজ সম্প্রদায়ের একজন আর তার নিম্নঃস্থ তিন শ্রেণীর মহিলাকে বিবাহ করতে পারত।অন্যদিকে ক্ষত্রিয় পুরুষগণ ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য দুই নিম্ন শ্রেণী ও নিজ সম্প্রদায়ের মোট তিনজন নারী বিবাহ করতে পারত।
৭.পোশাকগত পার্থক্যঃ
হিন্দুদের বর্ণগত সম্প্রদায়ে সকলের ভিতর পোশাকগত পার্থক্য দেখা দিত। যেই পোশাক কোন ব্রাহ্মণ পরিধান করত তা কোন অন্য নিম্ন শ্রেণীর কেউ পরিধান করতে পারত না। যদি কেউ তা করত তাহলে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হত।
হিন্দুদের বর্ণগত সম্প্রদায়ে সকলের ভিতর পোশাকগত পার্থক্য দেখা দিত। যেই পোশাক কোন ব্রাহ্মণ পরিধান করত তা কোন অন্য নিম্ন শ্রেণীর কেউ পরিধান করতে পারত না। যদি কেউ তা করত তাহলে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হত।
৮. মর্যাদাগত পার্থক্যঃ
হিন্দুদের জাতিগত এই বর্ণবৈষম্যে সকল শ্রেণীর ভিতর লক্ষ্য করা যেত। মর্যাদার দিক দিয়ে ব্রাহ্মণগণ ছিল শ্রেষ্ঠ।অতঃপর অধঃস্তন অনুসারে ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শুদ্রদের মর্যাদা ছিল।
হিন্দুদের জাতিগত এই বর্ণবৈষম্যে সকল শ্রেণীর ভিতর লক্ষ্য করা যেত। মর্যাদার দিক দিয়ে ব্রাহ্মণগণ ছিল শ্রেষ্ঠ।অতঃপর অধঃস্তন অনুসারে ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শুদ্রদের মর্যাদা ছিল।
৯. শাস্তি প্রদানঃ
শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে হিন্দুগণ বর্ণভেদে বৈষম্য সৃষ্টি করত। যেমনঃ কেউ যদি কোন ব্রাহ্মণকে হত্যা করত কিংবা নিজ সম্প্রদায় থেকে উচ্চ বর্ণের কাউকে হত্যা করত। তাহলে তার শাস্তি হত মৃত্যুদণ্ড আর যদি উচ্চ বর্ণের কেউ যদি নিম্নে বর্ণের কাউকে হত্যা করত তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত না বরং, তাকে আর্থিকভাবে জরিমানা করা হত।
শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে হিন্দুগণ বর্ণভেদে বৈষম্য সৃষ্টি করত। যেমনঃ কেউ যদি কোন ব্রাহ্মণকে হত্যা করত কিংবা নিজ সম্প্রদায় থেকে উচ্চ বর্ণের কাউকে হত্যা করত। তাহলে তার শাস্তি হত মৃত্যুদণ্ড আর যদি উচ্চ বর্ণের কেউ যদি নিম্নে বর্ণের কাউকে হত্যা করত তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত না বরং, তাকে আর্থিকভাবে জরিমানা করা হত।
১০. অভিষেক অনুষ্ঠানে পার্থক্যঃ
অভিষেক অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতর বর্ণগত বৈষম্য লক্ষ্য করা যেত। যেইসময় যারা অনুষ্ঠান করত সেই সময়ে অন্য কেউ কিছু তা করতে পারত না। যেমনঃ ব্রাহ্মণগণ বসন্তকালে,ক্ষত্রিয়গণ গ্রীষ্মকালে আর বৈশ্যগণ শরৎকালে তাদের অভিষেক অনুষ্ঠান করতে পারত।আর শুদ্রদের জন্য অভিষেক অনুষ্ঠানের কোন ব্যবস্থা ছিল না।
অভিষেক অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতর বর্ণগত বৈষম্য লক্ষ্য করা যেত। যেইসময় যারা অনুষ্ঠান করত সেই সময়ে অন্য কেউ কিছু তা করতে পারত না। যেমনঃ ব্রাহ্মণগণ বসন্তকালে,ক্ষত্রিয়গণ গ্রীষ্মকালে আর বৈশ্যগণ শরৎকালে তাদের অভিষেক অনুষ্ঠান করতে পারত।আর শুদ্রদের জন্য অভিষেক অনুষ্ঠানের কোন ব্যবস্থা ছিল না।
১১. খাদ্য গ্রহণে পার্থক্যঃ
উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা একসাথে কখনও খেতে বসতে পারত না। আবার উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের জন্য নিম্ন বর্ণের খাদ্য আবার নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের জন্য উচ্চ বর্ণের খাদ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ব ছিল।
উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা একসাথে কখনও খেতে বসতে পারত না। আবার উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের জন্য নিম্ন বর্ণের খাদ্য আবার নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের জন্য উচ্চ বর্ণের খাদ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ব ছিল।
১২. রঙ ব্যবহারে পার্থক্যঃ
বর্ণবাদ প্রথায় ব্রাহ্মণদের জন্য সাদা, ক্ষত্রিয়দের জন্য লাল,বৈশ্যদের জন্য হলুদ আর শুদ্রদের জন্য কালো রঙ নির্ধারিত ছিল।
বর্ণবাদ প্রথায় ব্রাহ্মণদের জন্য সাদা, ক্ষত্রিয়দের জন্য লাল,বৈশ্যদের জন্য হলুদ আর শুদ্রদের জন্য কালো রঙ নির্ধারিত ছিল।
১৩. পৈতার বিধানঃ
পৈতা পরিধান করা ব্রাক্ষণ ছাড়া আর কারও জন্য অনুমোদিত ছিল না।
পৈতা পরিধান করা ব্রাক্ষণ ছাড়া আর কারও জন্য অনুমোদিত ছিল না।
১৪. নেতৃত্বঃ
ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করত ব্রাহ্মণগণ,রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিত ক্ষত্রিয়গণ আর বৈশ্যগণ ক্ষমতায় একেবার হীন আর শুদ্রগণ ছিল তাদের সকলের সেবক।
ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করত ব্রাহ্মণগণ,রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিত ক্ষত্রিয়গণ আর বৈশ্যগণ ক্ষমতায় একেবার হীন আর শুদ্রগণ ছিল তাদের সকলের সেবক।
উপসংহার:
হিন্দু সমাজে বর্ণভেদের
প্রভাব চরম আকার ধারণ করেছে, শুধুমাত্র
একটি কারণের উপর ভিত্তি করে নয়; বরং এর অসংখ্য কারণ রয়েছে-
যা হিন্দুরা নিজেরাই মানে না। আর জন্মান্তরবাদও খোদ হিন্দুদের মধ্যেই বেশি দেখা
যায়। এ ধর্মে আছে আলাদা কতকগুলো শ্রেণী। আকীদা-বিশ্বাস, ধর্মীয়
আচরন -পদ্ধতি, কৃষ্টি, উপাসনা ও
ধর্মগ্রন্থ সবই তাদের পরস্পর থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র।
Many many thanks
ReplyDelete