ভূমিকা
উসূলে
ফিকহশাস্ত্রে খাস একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা।কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) থেকে মাসালা উদ্ভাবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।তাই কুরআন ও হাদীসের
বহু স্থানে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।এটি আমের বিপরীত। খাসের রয়েছে নির্দিষ্ট
কয়েকটি প্রকারভেদ,যার বিশ্লেষণের মাধ্যমে খাস সম্পর্কে জানা যাবে।নিম্নে এর পরিচয়
ও হুকুমসমূহ বর্ণনা করা হলঃ
খাসের আভিধানিক অর্থ
খাস
আরবী শব্দ যা বাবে আল-খুসুস মাসদার থেকে ইসমি ফাইল এর ওয়াহিদ মুযাক্কারের সীগাহ।
এর আভিধানিক অর্থ হল নির্দিষ্ট,নির্ধারিত,আমের বিপরীত,সুনির্ধারিত ও স্থিরকৃত
ইত্যাদি।
মুজমাল
অসিয়তে গ্রন্থাকারে মতে এর অর্থ হল সাধারণের বিপরীত।এখান থেকে ইখতিসাসের উদ্ভব
ঘটেছে যার অর্থ হল কাউলে কোন কাজের জন্য বেছে নেওয়া।
পারিভষিক সংজ্ঞা
আল
মানার গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা নাসাফী বলেন,
খাস
এমন শব্দ যাকে এককভাবে একটি নির্দিষ্ট অর্থ বোঝানোর জন্য গঠন করা হয়েছে।
উসূলুশ
শশী গ্রন্থাগার বলেন,
খাস
এমন একটি শব্দ যাকে এককভাবে নির্দিষ্ট অর্থ নামের জন্য গঠন করা হয়েছে।
কারও
কারও মতে এটি একটি অর্থবোধক শব্দ যা ব্যাপকতার পরিবর্তে নির্দিষ্ট ব্যক্তি,বস্তু ও
বিষয়াবলীকে বুঝাবে।
উসূলে
বাযদাবী প্রণেতার মতে,
প্রত্যেকটি
নির্দিষ্ট শব্দ যা একক অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে।
ইলমে
উসূলে ফিকহে গ্রন্থে বলা হয়েছে,
এমন
শব্দ যা একক সত্ত্বা বুঝানোর জন্য গঠন করা হয়েছে।
আল্লামা
মুহিবুল্লাহ বিহারূ বলেন,
খাস
হল প্রত্যেক ঐ শব্দ যা পরিচিত শব্দের দালালাত করে।
মোটকথাএটি
এমন একটি একক অর্থবোধক শব্দ, যা ব্যাপকতার পরিবর্তে নির্দিষ্টভাবে কোন
ব্যক্তি,বস্তু ও বিষয়াবলীকে শামিল করে।
উদাহরণ
মুহাম্মদ
এর দ্বারা কেবলমাত্র এক ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
ইনসান
বা মানুষ এর দ্বারা কেবলমাত্র মানুষ জাতিকে নির্দিষ্টভাবে বুঝায় হয়।
ইমরাআতু
বা নারী দ্বার কেবলমাত্র নির্দিষ্টভাবে নারী জাতিকে বুঝানো হয়।
প্রকারভেদ
আল
মানার গ্রন্থাগারের মতে খাস তিন প্রকারের হয়ে থাকে যা হলঃ
১.খাসাসুল
জিনস তথা নির্দিষ্ট জাতিবাচক
২.
খাসাসুন না’উ তথা নির্দিষ্ট শ্রেণীবাচক
৩.
খাসাসুল আইন বা খাসাসুল ফারদ তথা ব্যক্তিবাচক
খাস
সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত
আল-কুরআনে
খাস সম্পর্কিত যেইসকল আয়াত রয়েছে তার একটি হলঃ
তারা
যেন তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করে। [বাকারাঃ২৩৪]
এখানে
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) বলেন, “এখানে কুরু হল অপবিত্রতা।কারণ অপবিত্রতা হল হল
সুনির্দিষ্ট”।
এই
সকল খাসের প্রকারসমূহের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলঃ
১.
খাসাসুল জিনস তথা নির্দিষ্ট জাতিবাচক
যে
শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট জাতিকে বোঝায় তাকে খাসাসুল জিনস বলা হয়। অর্থাৎ, অর্থের দিক
দিয়ে নির্দিষ্ট জাতি হবে কিন্তু বিষয়বস্তু শ্রেণীগতভাবে অনির্দিষ্ট হবে। যেমনঃ
খালিকুল ইনসান এর দ্বারা এখানে ইনসান একটি নির্দিষ্ট জাতি হলেও নারী ও পুরুষের
সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন।
২.
খাসাসুন না’উ তথা নির্দিষ্ট শ্রেণীবাচক
যে
শব্দের দ্বারা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীকে বোঝায় তাকে খাসাসুন না’উ বলা হয়। অর্থাৎ অর্থের দিক দিয়ে
নির্দিষ্ট জাতি হবে এর বিষয়বস্তু ভিন্ন হলেও এর উদ্দেশ্য এক হবে।যেমন রজলুন দ্বারা
মহিলা থেকে পুরুষ খাস হয়েছে।আবার ইমরতুন দ্বারা পুরুষ দ্বারা মহিলাকে আলাদা করা
হয়েছে।
৩.
খাসাসুল আইন বা খাসাসুল ফারদ তথা ব্যক্তিবাচক
যে
শব্দের দ্বারা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাকে ব্যক্তিবাচক খাস বলা হয়।
যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ওয়া ইজকালা ইব্রাহীমা এর দ্বারা ইব্রাহীম(আঃ) এর নামকে
সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
উপরুন্ত
এখানে ৩য় প্রকারের সর্বাধিক নির্দিষ্ট খাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
খাসের হুকুম
খাসের
হুকুম দুই ধরনের।যা হলঃ
১.
খাস তার নির্দিষ্ট
বস্তু দ্বারা অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করবে।খাসের তাৎপর্য এমন যে, উক্ত খাসের আপন
উদ্দীষ্ট এবং নির্দিষ্ট বস্তুটিকে এমন অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে তাতে উদ্দিষ্ট
বস্তুটি ব্যতীত অন্য কোন কিছুর সম্ভাবনা দূর করে দেয়।যদি খাসের সাথে খবরে ওয়াহেদ
অথবা কিয়াসের বিপরীত কিছু পাওয়া যায়, তাহলে উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে।
কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে খবরে ওয়াহেদ অথবা কিয়াসকে বর্জন করে কুরআনের উপর
আমন করতে হবে। কারণ খাসের দ্বারা ইলমে ইয়াকীন পয়দা হয়।
২.
নিজেই সুস্পষ্ট হওয়াতে
সেই ব্যাপারে আর কোন ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। অতএব এর উপর
ব্যাখ্যা করে আর নতুনভাবে শরীয়াত প্রণয়ন করা যাবে না। এখানে তা খবরে ওয়াহিদ কিংবা
কিয়াস দ্বারা তা রহিত করা যাবে না।যেমন কুরআনে বলা হয়েছে,
ওয়ালী
ব্যতীত স্বামী গ্রহণ করতে পারবে।[বাকারা]
খবরে
ওয়াহেদে বলা হয়েছে,
প্রত্যেক
ঐ নারী যে ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল বাতিল বাতিল।
এখানে
খবরে ওয়াহেদটি সম্পূর্ণরুপে কিতাবুল্লাহের বিপরীত শব্দ। তাই এখানে দুটি বিষয়ের উপর
আমল করা অসম্ভব। এখানে খাসের উপর বায়িন সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু খাস যেহেতু নিজে
নিজে সুস্পষ্ট,তাই এটা বায়িন এর সম্ভাবনা রাখে না,তাই আলোচ্য খবরে ওয়াহেদের উপর
আমল পরিত্যাজ্য হবে।
প্রখ্যাত
উসূলবিদ বলেন,
খাসের
নির্দেশ মোতাবেক আমল করা জরুরী তাতে কোনরুপ অন্যথা ঘটানোর সুযোগ নেই।
কাজেই
খাসের সাথে খবরে ওয়াহিদ এবং কিয়াসের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে তার উপর আমল করতে
হবে তা পরস্পর বিপরীতার্থক হয়। কারণ কিতাবুল্লাহ হল অকাট্য আর খবরে ওয়াহিদ ও কিয়াস
অকাট্য নয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে,
তালাকপ্রাপ্তা
নারীগণ তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। [বাকারাঃ২২৮]
এখানে
তিন কথাটা বলা হয়েছে যার দ্বারা কোনকিছু খাস করা হল। আর কুরু অর্থ হল পবিত্রতা ও
হায়েয।যদি তা ইলমে নহবের কায়দায় পড়া হয় তাহলে তা পবিত্রতা অর্থে বুঝাবে। কিন্তু
তার দ্বারা তিন কথাটির যথার্থতা রক্ষা পায় না। কারণ তখন তালাকপ্রাপ্তা নারীর তিন
তুহর বা দুই তুহর ও তৃতীয় তুহরের কিছু অংশ (+২) ইদ্দত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে,
যদি তা হায়য অবস্থা দ্বারা বুঝানো হয় তাহলে তিন কথাটির যথার্থতা বজায় থাকে।তাই
পবিত্র হওয়ার জন্য কিয়াস শক্তিশালী হলেও তা খাস বিরোধী হওয়ার দরুন তা গ্রহণযোগ্য
হবে না।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায় যে, খাস উসূলে ফিকহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। আর যেহেতু এটা
স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কোন বস্তুকে অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে, সেহেতু মাসাআলা
নির্ণয়ে তা ওয়াজিব।
No comments:
Post a Comment