ভূমিকা
আম
শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা যা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
আম কি?
আমের
আভিধানিক অর্থ হল ব্যাপক, সাধারণ, বহু সংখ্যক জিনিসের অন্তর্ভূক্তকারী, খাসের
বিপরীত শব্দ,জামাত অন্তর্ভূক্তকারী ইত্যাদি।
কিতাবুল
মানারে বলা হয়েছে,
আম
হল এমন শব্দকে যা অর্থগতভাবে অন্তর্ভূক্ত রাখার ভিত্তিতে নিজের আওতায় এমন বহু
একককে শামিল করে যেগুলো হাকীকতের দিক থেকে অভিন্ন।
আল্লামা
নিযামুদ্দীন শাশী(রঃ) বলেন,
আম
এমন শব্দকে বুঝায় যা শব্দ বা অর্থের দ্বারা বহু সংখ্যক ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝায়।
শব্দের দিক দিয়ে বহু সংখ্যক যেমন মুসলিমগণ,মুশরিকতা ইত্যাদি বুঝায় আর অর্থের দিক
দিয়ে বহু সংখ্যক যেমন যারা, যেগুলো বুঝায়।
আল্লামা
বাযদুভী বলেন,
আম
এমন প্রত্যেক শব্দ যা শব্দগতভাবে বা অর্থগতভাবে অনেকগুলো নামকে একত্রিত করে।
আল্লামা
মাহমুদুল হাসান বলেন,
বহু
সংখ্যক সমষ্টি উসূলের পরিভাষায় আম।
আল্লামা
জাসসাস বলেন,
আম
এমন শব্দ যা ব্যাপকভাবে সবকিছু অন্তর্ভূক্ত করে।
আমের হুকুম
আমের
হুকুম হল এই যে, যেই আম থেকে বিশেষ কোন অংশ খাস হয় নাই সেটি হুকুমের দিক থেকে খাস
এর অনুরুপ। অর্থাৎ, আম নিজের আওতায় যে সব একককে অন্তর্ভূক্ত করে সেগুলোর ভিতর
প্রয়োগকে অকাট্যভাবে ওয়াজিব করে। কাজেই যেভাবে খাসের উপর আমল করতে হবে সেভাবে আমের
উপর আমল করতে হবে। আমের ভিতর যদি বিপরীত খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াস থাকে তাহলে উভয়ে
ভিতর সমন্বয় সাধন করে তার উপর আমল করতে হবে।
হানাফীগণ
বলে থাকেন যে, যদি এদের ভিতর সমন্বয় সাধন করা না যায় তাহলে সেখানে আর আমের উপর আমল
অব্যাহত রাখতে হবে। সেখানে খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াস পরিত্যজ্য হবে। কারণ আমের দ্বারা
হুকুম অকাট্য হয়। খবরে মুতাওয়াতির থেকে জানা যায় যে, সাহাবাগণ প্রায় সময় আমের উপর
আমল করতেন। এরজন্য কোন উপলক্ষ্য,ইশারা,ইঙ্গিতের প্রয়োজন হয় নাই।
এখানে
শাফিঈগণ বলে থাকেন যে, যে আম খাসের ভিতর অন্তর্ভূক্ত করা হয় নাই, তা খবরে ওয়াহিদ
বা কিয়াসের অন্তর্ভূক্ত।তাদের মতে এ আমের উপর আমল করা অকাট্যভাবে ওয়াজিব নয়। তা
সন্দেহমূলক ওয়াজিব।কিন্তু তাদের কাছে কোন যথার্থ দলীল না থাকার দরুন অনেকে তা প্রত্যাখ্যান
করেছে।
কুরআনে
বলা হয়েছে যে, কুরআনের যতটুকু পড়া তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু তোমরা পড়বে। [মুযাম্মিলঃ২০]
অন্যদিকে
খবরে ওয়াহিদে বলা হয়েছে, সুরা ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না।
এখন
প্রথমটি হল কুরআনে আয়াত আর ২য়টি হল খবরে ওয়াহিদ। দুটি পরস্পর বিপরীত ধর্মী বিধান হওয়ায়ে
হানাফীগণ এখানে এই সমাধান করেছেন যে, নামাযের ভিতর মুতাল্লাক কিরাআত করা ফরয।তা না
হলে সালাত বাতিল বলে গণ্য হবে। অন্যদিকে খবরে ওয়াহিদের দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে,
সুরা ফাতিহা পাঠ করা নামাযের ভিতর ওয়াজিব। তা না পাঠ না করা হলে ওয়াজিব তরক করার
গুনাহ হবে।
তারপর
কুরআনে বলা হয়েছে, যে চুরি করে পুরুষ হোক কি নারী হোক তার হাত কর্তন কর এটা
তাদের কৃতকর্মের ফল।এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আদর্শ দণ্ড। [মায়িদাঃ৩৮]
এখানে
এটি একটি আম হুকুম। এখন চুরির বিরুদ্বে একটি কিয়াস পাওয়াতে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
উল্লেখ্য যে, চুরির শাস্তি হল চোরের হাত কাঁটতে হবে এবং চুরি করা জিনিস তাকে ফেরত
দিতে হবে। এখন যদি চুরি করা জিনিস নষ্ট হয়ে যায় সেই ব্যাপারে হানাফী উসূলবিদ্গণ
বলেন, চোর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে চুরি করে তাহলে তার জরিমানা দিতে হবে অন্যথায় নয়।
আবার
কোন কোন উসূলবিদ বলেন, চোর ইচ্ছাকৃতভাবে হোক কি অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক তাকে
জরিমানা দিতে হবে।
তারা
এটি কে ছিনতায়ীকৃত মালের উপর ধার্য্য করে থাকে।কিন্তু এই কিয়াসটি আল্লাহর কথা আল্লাহর
পক্ষ থেকে আদর্শ দণ্ড এর বিপরীতার্থক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এখানে আল্লাহর শাস্তিকে
বর্ধিত করা হয়েছে।তাই তা পরিত্যাজ্য হবে।
শাফিঈ(রঃ)
এর অনুসারীগণ, আশাআরী এবং জুমহুর উলামাদের মতে আম দ্বারা অকাট্য কোন কিছু বুঝায় না
বরং এর দ্বারা ধারনামূলক জ্ঞান অর্জিত হয়।
অন্যদিকে
হুমাম ও মানার প্রণেতার মতে এর দ্বারা অকাট্য ইলম প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমের প্রকারভেদ
আম
প্রধান্ত দুই প্রকার যার একটি হল বিশেষ কোন অংশে খাস করা হয়েছে এমন আম এবং অপরটি
হল যার কোন অংশ খাস করা হয় নাই।
এক
প্রকারের আমে বিশেষ অংশকে খাস করা হয়েছে, তার উপর আমল করা ওয়াজিব। এ পর্যায়ে আম
হুকুমের সাথে দলীলে খুসূস সংযুক্ত হওয়ায় আমের অকট্যতা আর থাকে না বরং তা যান্নী
হয়ে যায়। তবে তা আমল করা খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াসের মত ওয়াজিব। তেমনিভাবে দলীলে
খুসূসের সাথে আম সংযুক্ত হওয়াতে তা যন্নীতে পরিণত হবে এবং তার উপর আমল করা ওয়াজিব
হবে। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,
আল্লাহর
তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। [বাকারাঃ২৭৫]
এখানে
ব্যবসার সাথে সুদকে কেবল বৃদ্বি করা হয়েছে। সকল ধরনের বৃদ্বি হারাম
নয়।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর এক হাদীসের দ্বারা তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন,
ক্রয়-বিক্রয়
গমের পরিবর্তে গম, যবের পরিবর্তে যব,খেঝুরের পরিবর্তে খেজুর......... উভয় ক্ষেত্রে
সমান হতে হবে বিনিময়ে আর তাতে অতিরিক্ত হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে।
যেই
রিবা ব্যবসার ভিতর হয়ে থাকে তাই এর সাথে সংক্লিষ্ট। তা তিন স্তর পর্যন্ত করা
যাবে।তার বেশী হলে তা নির্দিষ্ট করা যাবে না।
আল্লাহ
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
যেখানে
মুশরিক পাও সেখানে হত্যা কর। ..........তবে মুশরিকদের কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে
তাকে আশ্রয় দিবে। [তওবাঃ৫-৬]
প্রথম
আয়াতটি আম আর পরেরটি খাস। এখানে পরের অংশ দ্বারা বৃদ্ব,নারী ও শিশু মুশরিকদের
বুঝানো হয়েছে বলে কতিপয় আলেম এই মতামত ব্যক্ত করেছেন। আর তারা কোন মুসলিমকে হত্যা
করার জন্য ষড়যন্ত্র করে না।তাই পরের আয়াত দ্বারা পূর্বের আয়াতকে সুনির্দিষ্ট তথা
তাখসীস করেছে।
যেই
প্রকারের আম দ্বারা কোন কিছু খাস করা হয় নাই, সেই ধরনের আমের ব্যাপারে হুকুম হল
সেই ধরনের আমের দ্বারা খাস মানসূখ করা যাবে। কিন্তু তার জন্য শর্ত হল এই যে, তা
মানসূখ করার জন্য নাসিখের হুকুমটি মানসূখের সমমানের হতে হবে। যেমনঃ
এক
হাদীসে উরানিয়্যীন সম্পর্কে, উরায়না গোত্রীয় লোকদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
ইরশাদ করেন,
অতঃপর
মহানবী(সাঃ) তাদেরকে আদেশ প্রদান করলেন যে, তারা যেন যাকাতের উটসমূহ চরানের
ক্ষেত্রে গমন করে এবং উটগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে।
উল্লেখ্য
এই হাদীসটি উটের পেশাব খাওয়ার সাথে খাস এবং তা হালাল বলা হয়েছে।কিন্তু অপর এক
হাদীসে বলা হয়েছে যে,
তোমরা
পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বণ কর।কেননা তা কবরের আযাব ও ত্রুটির ফলেই হয়ে থাকে।
এই
হাদীসটি আম। শেষোক্ত হাদীসটি আম হওয়া সত্ত্বেও তা খাসের সমকক্ষতা
হওয়ার জন্য তা মানসূখ হয়ে গিয়েছে। মোল্লা জিউন বলেন, প্রথম হাদীসটি মুসলা
সম্পর্কিত। আর এই কারণে তা মানসূখ হয়ে গেছে।
শব্দ
ও অর্থানুযায়ী আম দুই প্রকার। তা হল শব্দানুযায়ী বহুবচন এবং অর্থানুযায়ী বহুবচন।
শব্দানুযায়ী
বহুবচনের ভিতর মুআমালাহ,ইসতিফালাহ এবং রিজালুন অন্তর্ভূক্ত।
অন্যদিকে
অর্থ দ্বারা যাকে বহুবচন বুঝায় তার দ্বারা কাউমুন,আহলুনকে বুঝায়।
আম
দ্বারা খাসের রহিত হওয়া
শাফিঈগণ
বলে থাকেন যে, খাস দ্বারা ইলমে ইয়াকীন তথা অকাট্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় যার ফলে আম
দ্বারা খাস রহিত হয় না।কারণ আমের দ্বারা ধারনামূলক ইলম প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই আম
খাসকে রহিত করতে পারে না।
হানাফীদের
মতে, আম দ্বারা খাস রহিত হয়। কারণ এক হাদীসে উরানিয়্যীন সম্পর্কে, উরায়না গোত্রীয়
লোকদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন,
অতঃপর
মহানবী(সাঃ) তাদেরকে আদেশ প্রদান করলেন যে, তারা যেন যাকাতের উটসমূহ চরানের
ক্ষেত্রে গমন করে এবং উটগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে।
উল্লেখ্য
এই হাদীসটি উটের পেশাব খাওয়ার সাথে খাস এবং তা হালাল বলা হয়েছে।কিন্তু অপর এক
হাদীসে বলা হয়েছে যে,
তোমরা
পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বণ কর।কেননা তা কবরের আযাব ও ত্রুটির ফলেই হয়ে থাকে।
এই
হাদীসটি আম। শেষোক্ত হাদীসটি আম হওয়া সত্ত্বেও তা খাসের সমকক্ষতা
হওয়ার জন্য তা মানসূখ হয়ে গিয়েছে। মোল্লা জিউন বলেন, প্রথম হাদীসটি মুসলা
সম্পর্কিত। আর এই কারণে তা মানসূখ হয়ে গেছে।
এখানে
দেখা যাচ্ছে যে, আম দ্বারা খাস রহিত হয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায় যে, আম খাসের ন্যায় শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। তাই একে অস্বীকার
করার কোন অবকাশ নেই। এর দ্বারা ইলমে ইয়াকীন প্রতিষ্ঠিত হয়।এর দ্বারা খাসের হুকুম
রহিত করা যায়।
No comments:
Post a Comment