নাসিখ
হল আরবী শব্দ যার অর্থ হল মিটিয়ে ফেলা,জ্বালিয়ে দেওয়া,রহিত করা,পরিবর্তন করে দেওয়া
ইত্যাদি।
পারিভাষিকভাবে
বলা যায় যে,শরীয়াতের কোন হুকুম শল রীয়াতের হুকুম দিয়ে তুলে দেওয়াকে নাসিখ বলা হয়।
জুমহুর
উলামাগণ বলেন,
বিশেষ
হিকমতের কারণে এক হুকুমকে অন্য হুকুম দ্বারা পরিবর্তন করা হল নসখ
মোল্লা
জিউন বলেন,
নসখ
হল বর্ণনার দিক থেকে এক বর্ণনা অন্য বর্ণনার বিপরীত।
মানার
গ্রন্থাগার বলেন,
নাসখ
হল সাধারণ হুকুমের নির্দিষ্টতার জন্য বর্ণনা যা আল্লাহর নিকট পরিচিত।
শর্ত
১।
মানসূখের হুকুমটি শরীয়াত সম্পর্কিত হতে হবে।
২।
নাসিখের হুকুমটি শরীয়াত সম্পর্কিত হতে হবে।
৩।
মানসূখের হুকুমটি কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হবে না।
৪।
হুকুম দুটি পরস্পর বিরোধী হতে হবে।
৫।
নাসিখের হুকুমটি নির্দেশ বা আদেশসূচক হতে হবে।
দলীল
আল্লাহ
বলেন,
এবং
যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই
সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের
অধিকাংশ লোকই জানে না।
[নহলঃ১০১]
আমি
কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার
সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? [বাকারাঃ১০৬]
নসখের প্রকারভেদ
নাসিখ
প্রধানত চার প্রকারের হয়ে থাকে।যা হলঃ
১.
কুরআনের দ্বারা কুরআনের
নসখ
২.
কুরআনের দ্বারা হাদীসের
নসখ
৩.
হাদীসের দ্বারা কুরআনের
নসখ
৪.
হাদীসের দ্বারা হাদীসের
নসখ
এই
সকল প্রকারসমূহ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১.
কুরআনের আয়াত দ্বার কুরআনের আয়াত নসখ
আল্লাহ
এক জায়গায় মদ পানের ব্যাপারে বলেছেন,
মদ্যপ
অবস্থায় আপনি সালাতের নিকটবর্তী হবেন না [নিসাঃ১৩৬]
এখানে
সালাতরত অবস্থায় মদ পান করা হারাম ছিল এবং পরবর্তীতে তা পুরোপুরিভাবে হারাম ঘোষণা
করা হয়।আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয়
মদ,জুয়া,প্রতিমার পূজা ও তীরনিক্ষেপ করা ভাগ্য নির্ধারণ করা শয়তানের কাজ।তাই তোমরা
তা পরিহার কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [মায়িদাঃ৯০]
আল্লাহ
মুহাম্মদ (সাঃ)কে কাফিরদের উপর অত্যচার চালানোর পর ক্ষমা করতে বলেছেন।তিনি বলেন,
আপনি
তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। [ইমরানঃ১৫৯]
কিন্তু
যখন জিহাদের আয়াত নাযিল হয় তখন সকল ধরনের ক্ষমার আয়াত রহিত হয়ে যায়।
২.
কুরআনের দ্বারা হাদীসের নসখ
এটি
প্রায় সময়ে সঙ্ঘটিতে হয়ে থাকে।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর মদীনায় গমনের পর প্রায় ১৬ মাস
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের অভিমুখে সুন্নাহের ভিত্তিতে সালাত আদায়
করেন।কিন্তু পরবর্তীতে যখন একটি আয়াত তখন তা রহিত হয়ে যায়।
অবশ্যই
আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি
মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন বাকারাঃ১৪৪
৩.
হাদীসের দ্বারা কুরআনের নসখ
এই
ধরনের নসখ বৈধ।কারণ, এ ব্যাপারে বেশ কিছু প্রমাণ রয়েছে।যেমনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) যখন
সপ্তম বিবাহ করেন তখন কুরআনে এই আয়াত নাযিল হয় যে,
আপনার
জন্য এর বেশি আর বিবাহ করা সমীচীন নয়।
কিন্তু
পরবর্তীতে এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে,
নবী
যেকয়টি বিবাহ ইচ্ছা তা তিনি তা করতে পারবেন।
এই
ধরনের নসখের ব্যাপারে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে থাকে। ইমাম শাফি(রঃ) এর মতে তা
গ্রহণযোগ্য নয়।কারণ আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেছেন,
তোমাদের
কাছে কোন কুরআন গেলে তা হাদীসের উপর রাখ। আর তাতে যতটুকু মিলে যায় তা গ্রহণ কর আর
বাকিটুকু বর্জন করবে।
তোমাদের
নিকট ফরয করা হয়েছে, যখন তোমাদের কারও নিকট মৃত্যু আসে এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর বাণী কোন
অসীয়্যত নাই উত্তরাধিকারে জন্য দ্বারা রহিত করা হয়েছে।
কিন্তু
এই ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা(রঃ) এর পক্ষ থেকে উত্তর হল এই যে, এখানে এর দ্বারা
কেবলমাত্র খবরে ওয়াহিদ ও মাশহুরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা খবরে
মুতাওয়াতির রহিত হয় নাই।
অন্যদিকে
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এর এই অভিমত যে, ওয়াহী দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক ধরনের ওয়াহী
হল ওয়াহী মাতলু এবং আরেক ধরনের হল ওয়াহী গায়রী মাতলু।তাই তা একটির
দ্বারা অপরটি রহিত হতে পারে।
৪.
হাদীসের দ্বারা হাদীস রহিতকরণ
এ
ব্যাপারে অসংখ্যা হাদীস রয়েছে যার দ্বারা এক হাদীস অপর হাদীসকে রহিত করে
দিয়েছে।এটি আবার চারভাবে হয় যা হলঃ মুতাওয়াতিরের দ্বারা মুতাওতিরের
রহিত,মুতাওতিরের দ্বারা খবরে ওয়াহিদের রহিত,খবরে ওয়াহিদ দ্বারা খবরে ওয়াহিদের রজিত
এবং খবরে ওয়াহিদের দ্বারা মুতাওয়াতিরের রহিত।উল্লেখ্য এখানে শেষোক্ত নাসিখ
গ্রহণযোগ্য নয়।
এই
শ্রেণীড় উদাহরণ বলা যায়, প্রথমে এক হাদীসে শুরুতে কবর যিয়ারতের কথা নিষেধ করা হলেও
পরবর্তীতে তা হালাল করা হয়। আবার এক হাদীসে বলা হয়েছে, আগুনের পোড়ানো কোন খাদ্য
গ্রহণের পর তার উযু ভেঙ্গে যায়।কিন্তু অপর এক রিওয়য়াতে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
উযু অবস্থায় আগুনে পোড়ানো গোশত ভক্ষণ করেছেন।অতঃপর সালাত আদায় করেছেন।
এক
হাদীসে বলা হয়েছে যে,
শিংগাদাতা
ও গ্রহীতা উভয়ের রোযা ভংগ হয়ে গেছে।
অন্য
এক হাদীসে বলা হয়েছে,
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
রোযা এবং ইহরাম দুই অবস্থায় শিংগা গ্রহণ করেছেন।
নুসখের ধরন
নুসখের
ধরন চার ধরনের হয়ে থাকে যা হলঃ
১.
যার হুকুম ও তিলওয়াত
কোনটি নেই।যেমনঃ সূরা আহযাবে আগে প্রায় ৩০০টি আয়াত ছিল কিন্তু এখন সেখানে মাত্র
৭০টি আয়াত রয়েছে।তদ্রুপ সুরাহ বাকারা, আনফাল,তওবাতে অসংখ্যা আয়াত ছিল কিন্তু তা
রহিত হয়ে যায়।
২.
কিছু কিছু কুরআনের
আয়াতের বিধানের হুকুম এখনও জারী রয়েছে কিন্তু তার তিলওয়াত রহিত হয়ে গেছে।যেমনঃ
আল্লাহ বলেন,
বৃদ্ব
যিনাকারী পুরুষ কিংবা নারী যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের রজম কর।
৩.
তিলওয়াত থাকলেও হুকুম
রহিত হয়ে গেছে। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,
যখন
তোমরা নামাযে দাঁড়াবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল, কনুই পর্যন্ত হাত এবং টাখনু
পর্যন্ত পা ধুবে
আয়াতের
ভিতর পা ধৌত করা ছিল সাধারণ বিধান কিন্তু মুজার উপর মাসেহ করার দ্বারা এর সাধারণ
হুকুমকে রহিত করা হয়েছে।
৪.
কিছু কিছু আয়াত আছে যা
কেবলমাত্র নবী করিম(সাঃ) এর জন্য খাস।তা সকলের জন্য খাস নয়।যেমনঃ তাহাজ্জুদের
নামায।সাওমে বিসাল ইত্যাদি।
ভালো লিখেছেন, তবে শুধু নাসেখ মানসুখ নিয়ে আরো কম ভাবে শুধু সংঘাটা দিলে ভালো হতো ।
ReplyDeleteঅর্থাৎ এক কথায়, নাসেখ মানসুখ বলতে কি বুঝায়!! ধন্যবাদ
কেন
Deleteখুব সুন্দর লিখেছেন
Deleteএখানে কিছু ভূল উদাহারন আছে । লেখক মুখস্ত লিখেছেন কারও কাছ থেকে নিজে চিন্তা শীল নন
ReplyDeleteপা না ধৈুলে অজু হবে না এটা রহিত হয় নাই আধিকতর ব্যাখা করা হয়েছে বিশেষ অবস্থার জন্য সহজ করা হয়েছে ।
শুকরান জাজাকাল্লাহ খাইরান কছিরান তাইয়িবান।
ReplyDeleteনাসেখ এর হিকমত ও উপকারিতা যদি একটূ বলতেন প্লিস
ReplyDelete