ভূমিকা
জনসংখ্যা
অস্বাভাবিক হারে বৃদ্বি পাওয়া এখন সারা বিশ্বের একটি অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এটিকে
বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।কারণ, এখান থেকে অসংখ্য সমসয়ার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্বির হার প্রায়
১.৪% যা অনেক বেশী।যার ফলে বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটছে। এই জনসংখ্যার
বিস্ফোরণ কি,তা বৃদ্বির কারণ,এর ফলে সৃষ্ট সমস্যা এবং তা সমাধানের উপায়বলী কি কি
তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
জনসংখ্যার
বিস্ফোরণ
বিস্ফোরণের
ইংরাজী প্রতিশব্দ হল explosion। এটি একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা
বৃদ্বির হার গত কয়েক দশকের তুলনায় যেভাবে বৃদ্বি পাচ্ছে তাকে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ
বলা হয়।১৯৮৭ সালে জন্সংখ্যা ছিল যেখানে ৫০০ কোটি পরে ২০০০ সালে তার সংখ্যা দাড়ায়
৬০০ কোটিতে আর তা ২০১১ তে এর পরিমাণ এখন ৭০০ কোটি।অন্যদিকে তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৮।১৫ কোটি তা ১৯৬১ হয় ৫.৮ কোটি, ১৯৭৪ সালে হয় ৭.৬৪ কোটি, ১৯৮১ সালে ৯ কোটি, ১৯৯১ সালে ১১.১৪ কোটি এবং ২০১১
সালে তার সংখ্যা হল ১৪.২৩ কোটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্বির হার প্রায় ১.৪% যা
অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী।যেভাবে জনসংখ্যার হার দিন দিন বৃদ্বি পাচ্ছে তাতে
করে আগামী ২০২১ এর ভিতর বাংলাদেশের জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ২০ কোটিতে উন্নীত হওয়ার
সম্ভাবনা আছে। জনসংখ্যা এই বৃদ্বির হারকে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ বলা হয়।
জনসংখ্যা
বিস্ফোরণের কারণসমূহ
জনসংখ্যা
এমনি এমনিভাবে বৃদ্বি পাচ্ছে না।এর পিছনে কিছু কারণ রয়েছে।এসকল কারণসমূহ নিম্নে
উল্লেখ করা হলঃ
১.
শিক্ষার অভাবঃ আমাদের দেশের প্রায় ৩৫ ভাগ লোক নিরক্ষর।তারা এই ব্যাপারে সচেতন নয় যে
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্বি পেলে যে দেশে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে তা তারা সহজে উপলদ্বি
করতে পার না।যার ফলে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্বির হার দ্রুত বৃদ্বি পাচ্ছে।
২.
দারিদ্র্যতাঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ
হতদরিদ্র্য। বিশেজ্ঞদের মতে, “দারিদ্র্য এবং সন্তান
উৎপাদন ক্ষমতা এক সাথে অবস্থান করে”।
সাধারণত অতিরিক্ত আমিষ মানুষের প্রজনন ক্ষমতাকে হ্রাস্ব করে ফেলে। কিন্তু আমাদের
দেশের এই দরিদ্র্য লোকদের পক্ষে অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য ভক্ষণ করা দুরুহ একটি
কাজ।তারা অতিরিক্ত শ্বেতসার খাদ্য ভক্ষণ করে প্রজনন হার বৃদ্বি করেছে যার ফলে জনসংখ্যা
দিন দিন বৃদ্বি পাচ্ছে।
৩.
মৃত্যুহার হ্র্বাস্বঃ আগের দিনে সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেক লোক মৃত্যুবরণ করত।১৯০১
সালে এর হার ছিল ৪০ জন। ১৯৫১ সালে এর হার হয় ৩০ জন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে তার হার
হয়ে দাড়ায় ১৩ জন।২০০৭ সালে তার হ্রাস্ব
পেয়ে দাড়ায় ৫.৭ জনে। এই পর্যন্ত যেই হারে মৃত্যহার হ্রাস্ব পাচ্ছে সেই হারে
জন্মহার হ্রাস্ব পাচ্ছে।বাংলাদেশের বর্তমান জন্মহার হল প্রায় ২৩ জন।
৪.
সামাজিক এবং ধর্মীয় গোড়ামীঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক ধর্মভীরু।তারা অধিক হারে
সন্তান জন্ম দেওয়াকে একটি সওয়াবের এবং পবিত্র কাজ বলে মনে করে থাকে।আমাদের দেশে
একটা কথা আছে। মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি।এধরনের ধর্মীয় কুসংস্কার দেশের
জনসংখ্যা বৃদ্বি করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
৫.
বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহঃ আমাদের দেশে
বাল্যবিবাহ ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মেয়েদের
১৫ বছর হওয়ার আগেই বিবাহ দিয়ে থাকে।অতঃপর এই মেয়ের প্রজনন ক্ষমতা যতদিন পর্যন্ত
বলবৎ থাকে ততদিন পর্যন্ত অল্প বয়সে সে অনেক সন্তান জন্ম দিতে থাকে যার ফলে
জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্বি পেতে থাকে। অন্যদিকে একজন পুরুষ আমাদের দেশে ধর্মীয় সীমার
ভিতর প্রায় চারজন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। একজন লোকের মাধ্যমে এভাবে একাধিক স্ত্রী
অসংখ্য সন্তান জন্ম দিতে থাকে যা দেশের জনসংখ্যাকে বৃদ্বি করে।
৬.
চিত্তবিনোদনের অভাবঃ আমাদের দেশে
চিত্তবিনোদের স্থান এবং উপাদানের অনেক অভাব রয়েছে।যার ফলে এদেশের মানুষ বিবাহ এবং
সন্তান জন্ম দেয়াকে চিত্তবিনোদনের একটি অন্যতম উৎস মনে করেএবং তারা অধিক হারে
সন্তান জন্ম দিতে থাকে।
৭.
কৃষিনির্ভর দেশঃ যেসকল দেশ কৃষিনির্ভর দেশ
সেসকল দেশে জনহার তুলনামূলকভাবে বেশী হয়। কারণ সন্তান বেশী হলে পরে জমি চাষের জন্য
তাদের সাহায্য-সহযোগিতা বেশী পাও্য়া যাবে বলে সন্তান অধিক হারে জন্ম দেওয়া হয় যা
জনসংখ্যা বৃদ্বির কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
৮. নিম্ন
জীবনমানঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ
অত্যন্ত নিম্নমানের জীবন-যাপন করছে।দেশের
শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যতার নীচে বসবাস করছে।তারা খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,পোশাক ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে।এখানকার পিতা-মাতা সন্তানদের এসকল মৌলিক অধিকারের কথা বেশী চিন্তা না করে
অধিক হারে সন্তান জন্ম দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্বি করছে।
৯.
জলবায়ুর কারণঃ বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্বির
অন্যতম কারণ হল এখানকার জলবায়ু। শীতপ্রধান দেশে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা
তুলনামূলকভাবে কম হয় আর গরম প্রধান দেশে একটু বেশী হয়।বাংলাদেশ যেহেত্য একটি গরম
প্রধান দেশ তাই এখানকার মেয়েদের প্রজনন হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যাধিক হারে
বেশী।
১০. নারী
শিক্ষার অভাবঃ আমদের দেশের নারীরা
তুলনামূলকভাবে একটু কম শিক্ষিত।তাই তাদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই।তাই তাদের
ইচ্ছার বিরুদ্বেও অনেক সময় অধিক সন্তান নেওয়া হয়।
জনসংখ্যার
বিস্ফোরোণের ফলে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ
১.
দারিদ্র্যতা ও নিম্ন মাথাপিছু আয়ঃ আমাদের
দেশের অধিকাংশ মানুষ অত্যন্ত নিম্নমানের
জীবন-যাপন করছে।দেশের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যতা সীমার নীচে বসবাস করছে।দেশের
জনসংখ্যা যেই হারে বৃদ্বি পাচ্ছে সেই হারে আমাদের আয়ের পরিমাণ বৃদ্বি পাচ্ছে
না।২০১০ -২০১১এর এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে,বাংলাদেশের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮১৯ মার্কিন ডলার।এভাবে করে আমাদের
জীবন-যাত্রার মান ক্রমশ নীচের দিকে ধাবিত হচ্ছে
২. খাদ্য
ঘাটতি ও পুষ্টিহীনতাঃ বাংলাদেশ
কৃষিভিত্তিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের মানুষের চাহিদা মত খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব
হচ্ছে না।কারণ জনসংখ্যা যেই হারে বৃদ্বি পাচ্ছে সেই হারে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্বি
পাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশে বহিঃবিশ্ব থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য বছরে আমদানী করতে
হয়। এই খাদ্য আমদানীতে অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে বলে দেশের অর্থনৈতিক
উন্নয়নে ব্যহত সৃষ্টি হচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ২০.৫৭ লক্ষ টন খাদ্য
ঘাটতি হয়।
৩. কৃষি
জমির উপর চাপঃ বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান
দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখানে কৃষিজমির পরিমাণ জনসংখ্যার অনুপাতে বৃদ্বি পাচ্ছে না।দেশে
আবাদী জমির মাথাপিছু পরিমাণ হল মাত্র .১৮ ভাগ।দেশের প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক বর্তমানে
ভূমিহীন অবস্থায় আছে।
৪. বেকার
সমস্যাঃ বাংলাদেশে দিন দিন বাংলাদেশে
বেকার যুবক-যুবতীর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্বি পেলেও যথার্থ
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটির মত লোক বেকার
হিসেবে জীবন-যাপন করছে। দেশের শ্রমশক্তি প্রায় ৩৩% লোক বেকার এবং ২৫% প্রচ্ছন্ন
বেকার।এই বেকার সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে অনগ্রসরতার দিকে নিয়ে
যাচ্ছে।
৫.
শিল্পোন্নয়ের ব্যহতঃ আমাদের দেশে যেই হারে জনসংখ্যা বৃদ্বি পাচ্ছে তার শিল্প
চাহিদা যথাযথভাবে মিটানো সম্ভবপর হচ্ছে না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপের কারণে
বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানী
করতে হচ্ছে।যার ফলে শিল্পের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানী করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই
আমাদের দেশের শিল্পোন্নয়ন বিশেষভাবে ব্যহত হচ্ছে।
৬. মূলধন
গঠনে সমস্যাঃ ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বাংলাদেশে মূলধনের সঞ্চয় মাত্র ১৯.৭৮%।কিন্তু
একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ২৫% মূলধনের সঞ্চয় হওয়া উচিৎ।দেশে অর্থনীতিতে মূলধনের
অভাব হলে বিনিয়োগে স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়।দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপের জন্য
এমন হচ্ছে।
৭.
নির্ভরশীলতা বৃদ্বিঃ ১৫ বছরের নীচে এবং ৬০ বছরের উপরের লোকদের নির্ভরশীল লোক বলা
হয়। দেশে বর্তমানে এই জনসংখ্যার হার প্রায় ৫২ ভাগ।এদের সংখ্যা দেশে দিন দিন বৃদ্বি
পাচ্ছে।এরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।
৮.
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিতঃ আমাদের দেশে প্রতি বছর যেভাবে অর্থনৈতিক
উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্বি বৃদ্বি পাচ্ছে সেভাবে তার সুফল সবাই পাচ্ছে না।কারণ, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সকলকে যথাযথভাবে বণ্টন করে
সাহায্য করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
৯.
পরিবহনে সমস্যাঃ আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্বির ফলে পরিবহন খাতে ব্যাপক সমস্যার
সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় বাংলাদেশের বাস,ট্রেন,লঞ্চ,বিমান প্রত্যকটি খাতে অত্যাধিক জনসংখ্যা চাপের দরুন
সরকার বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
১০.
বাসস্থান,শিক্ষা ও সাস্থ্য সমস্যাঃ বাংলাদেশে জমি অত্যন্ত সীমিত কিন্তু লোক সংখ্যা
অত্যাধিক।তাই এখানে এখন ব্যাপকভাবে আবাসন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক মানুষ
রাস্তা-ঘাটে গৃহহীন অবস্থায় মানবাতের জীবন-যাপন করছে। শিক্ষা জাতির
মেরুদন্ড।কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্বির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে না।তাই তারা শিক্ষার
অভাবে উন্নতি লাভ করতে পারছে না। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ভাল ডাক্তার নেই এবং
পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লিনিক,হাসপাতাল নেই। যার
ফলে আমাদের দেশে প্রতি বছর অনেক নবজাতক শিশু এবং মা মারা যাচ্ছে।
১১.
মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্বগতিঃ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করার
পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।জনসংখ্যার চাপে
বাজারে যেই পরিমাণ চাহিদা থাকার কথা ছিল সেই পরিমাণ যোগান না থাকার জন্য বাজারে
অস্থিরভাবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হতে থাকে। আর এই মুদ্রাস্ফীতি বাজারে ধস
নামায়।
জনসংখ্যা
বিস্ফোরণ হ্রাস্বের উপায়সমূহ
১.জনসংখ্যার
পুনর্বন্টনঃ বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সকল জায়গার
ঘনবসতি আবার সমান নয়।বাংলাদেশের ঘনবসতি প্রায় ৯৫৩ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে।কিন্তু
ঢাকায় এর পরিমাণ হল ১৬৫০ জন, চট্টগ্রামে হল ১০২৬
জন।অন্যদিকে খুলনায় তার পরিমাণ হল ৬১৬ জন এবং বরিশালে তার পরিমাণ হল ৩৪৮ জন।
এমতাবস্থায় জনসংখ্যার পূনর্বণ্টন করা যেতে পারে যার ফলে জনসংখ্যার তারতম্য
হ্র্বাস্ব পাবে।
২.
আন্তর্জাতিক পূনর্বণ্টনঃ আমাদের দেশের লোকসংখ্যা কমানোর জন্য অসংখ্য লোককে দেশের
বাহিরে পাঠানো যেতে পারে। আমাদের দেশ থেকে বর্তমানে প্রায় প্রতি বছর অসংখ্য লোক
যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,কানাডা,অস্ট্রেলিয়াসহ
বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে নাগরিত্ব লাভ করছে।এর পরিমাণ আরও বৃদ্বি করে
এদেরকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে জনসংখ্যা হ্রাস্ব করা যেতে পারে।
৩.আয়
পুনর্বণ্টনঃ আমাদের দেশে দেশে ধনীরা যদি কিছু জমির অংশ গরীবদের জমি দান করে তাহলে
আমাদের দেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টন হবে এবং তা জনসংখ্যা রোধে এক সহায়ক
ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া অধিক জমির অধিকারী লোকদের কাছ থেকে অধিক হারে কর নিয়ে তা
গরীবদের মাঝে বণ্টন করলে আমাদের দেশে দারিদ্র্যতা অনেকটা লাঘব হবে যা জনসংখ্যা
নিয়ন্ত্রনে অনেকটা সহায়তা করবে।
৪.
অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল জনসংখ্যা রোধের অন্যতম উপায়। জনসংখ্যা
বৃদ্বির সাথে সাথে যদি দেশে কৃষি,শিল্প, বাণ্যিজ্যের প্রসার ঘটতে থাকে তাহলে দেশের মাথাপিছু
আয় এবং জনসাধারনের জিবন-যাত্রা মান উন্নয়ন হতে থাকবে। এতে করে দেশে জনসংখ্যা
বৃদ্বির সমাধান ঘটবে।
৫.
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনঃ দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রের অন্যতম উপায় হল পরিবার পরিকল্পনা
করা।যদি কেউ পরিবার পরিকল্পনা যথাযথভাবে না করে তাহলে কখনও দেশে জনসংখ্যা হ্রাস্ব
পাবে না। কিন্তু তা আমাদের দেশে অনেকে গ্রহণ করতে চাচ্ছে না ধর্মীয় গোড়ামীর
দরুন।কিন্তু আমাদেরকে এই ব্যাপারে সবাইকে ভালমত বুঝাতে হবে যে, এর দ্বারা আমাদের কোন ক্ষতি হবে না বরং এর দ্বারা
আমাদের সমস্যার লাঘব ঘটবে।
৬. বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ রোধঃ বাল্যবিবাহ এবং
বহুবিবাহের দরুন আমাদের দেশে জনসংখ্যা যেভাবে বৃদ্বি পাচ্ছে তা আমাদের সমাজ থেকে
দূরীভূত করত হবে। মেয়েদের বয়স সীমা হিসেবে ১৮ বছর এবং পুরুষের জন্য ২১ বছর করে
নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং তার কম বয়সে বিবাহ করলে পরে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদানের
ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৭.
সচেতনতা বৃদ্বিঃ জনসংখ্যা বৃদ্বি পেলে দেশের অর্থনৈতিক জীবনসহ সকল ক্ষেত্রে যে
করুন দুর্দশা সৃষ্টি হয় তা সকলের কাছে সঠিকভাবে বুঝাতে হবে।সচেতনতা ছাড়া কখনও দেশে
জনসংখ্যা রোধ করা সম্ভবপর হবে না।
৮.
শিক্ষার প্রসারঃ শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ড।একটি জাতি যত বেশী শিক্ষিত হবে তারা
দেশের উন্নয়ন এবং সমস্যা লাঘবে তত বেশী এগিয়ে যাবে।তাই আমাদের দেশের যদি অধিকাংশ
মানুষ শিক্ষিত হয় তাহলে আমাদের মানুষেরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে
অধিক সন্তান জন্ম দান থেকে বিরত থাকবে।
৯.
কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ আমাদের দেশের লোকজনের ভিতর ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি
করতে হবে।বিশেষ করে নারীদেরকে বেশী করে কাজের যোগান করে দিতে হবে। যদি তাদের ভিতর
কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় তাহলে তাদের কর্মব্যস্ততার ভিতর অধিক সন্তান জন্ম দিতে
অনাগ্রহী হবে। আর এতে করে দেশে জনসংখ্যা হ্রাস্ব পাবে ব্যাপক হারে।
১০. নারী
শিক্ষার প্রসারঃ আমাদের দেশে নারীগণ এখনও পশ্চাৎগামীতার ভিতর রয়েছে।অনেক সময়
স্ত্রীর অনিচ্ছায় নারীগণ অনেক সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়।প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের
অধিকারের ব্যাপারে সচেতন নয়।কিন্তু তাদের ভিতর শিক্ষার প্রসার ঘটালে তারা তাদের
অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে পারবে এবং তা জনসংখ্যা রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
১১.
সামাজিক এবং ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণঃ আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্বি পাওয়ার
অন্যতম কারণ হল সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার। আমাদের দেশের জনসংখ্যা হ্রাস্ব করার
জন্য এসকল ধর্মীয় এবং কুসংস্কার দূর করতে হবে যাতে করা তা আর জনসংখ্যা বৃদ্বি করতে
সহায়তা না করে।
উপসংহার
পরিশেষে
বলা যায় যে, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ একদিনে কখনও
দূর করা সম্ভব নয়। তা দূর করার জন্য আমাদের অনেক সময়ের প্রয়োজন।এইক্ষেত্রে শুধু
সরকার নয় বরং, সরকার এবং জনগণ এই উভয় শ্রেণীর
লোকদের সম্মিলিতভাবে কাজ করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
No comments:
Post a Comment