Sunday, 11 May 2014

প্রশ্নঃ আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন এর তাফসীর কি?হিদায়াতে কয় স্তর বিশিষ্ট তা আলোচনা কর।


জীবনের প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখায় এবং প্রত্যেকটি বিভাগে চিন্তা,কর্ম ও আচরণে এমন বিধি ব্যাখ্যা আমাদের শিখাও যা নির্ভুল। সেখানে ভুল দেখা, ভুল কাজ করা ও অশুভ পরিণামের কোন সম্ভাবনা নেই। যে পথে চললে আমরা সাফল্য লাভ করতে পারি। কুরআন তিলওয়াতের শুরুতে এই দুআটি আল্লাহর সকলে এই প্রার্থনা করে যাতে করে এই কুরআন অধ্যয়নের দ্বারা সঠিক পথের উপর সে থাকতে পারে। জীবনের অসংখ্য পথের ভিতর থেকে চিন্তা ও কর্মের সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথটি দেখানোর জন্যে আবেদন করা হচ্ছে।এ আয়াতের চার ধরনের অর্থ আছে বলে বলা হয়েছে। যা হলঃ

১. আমাকে সহজ-সরল পথ প্রদর্শন করার সুযোগ প্রদান করুন।

২. এই পথের উপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকার সুযোগ প্রদান করুন।

৩. এমন সুযোগ দান করা যার দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত এর উপর অটুট থাকা যায়।

৪. ইলহাম দেওয়া যার মাধ্যমে বান্দা কোন কিছু অনুধাবন করতে পারে।যেমন মূসা(আঃ) এর মা তাকে তার শিসুকে ভাসিয়ে দেয় আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত ইলহামের দ্বারা। এটি হতে পারে সালাতুল ইস্তিখারার মাধ্যমে।



হিদায়াতে কয় স্তর বিশিষ্ট  

হিদায়াত চার স্তর বিশিষ্ট হয়। যা হলঃ

১ম স্তর

এটি এমন স্তর যার মাধ্যমে মানুষ তার বাহ্যিক শক্তি তথা ক্ষুধা,ইন্দ্রীয়-তৃপ্তীসহ যাবতীয়  এবং তার বুদ্বিশক্তি, অনুভূতিশক্তি এবং বাহ্যিকশক্তি দিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে থাকে।

২য় অর্থ

সত্য-মিথ্যার পথ পার্থক্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রমাণ স্থাপন। এ ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

আমি তার ভিতর সত্য-মিথ্যা প্রভেদ করেছি। [বালাদঃ১০]

৩য় অর্থ

নবী-রাসূলদের কিতাব নাযিলের মাধ্যমে সকলকে হিদায়াত প্রদান করা। আল্লাহ ইরশাদ করেন,

তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। [জুমআঃ২]

৪র্থ অর্থ

মানুষের অন্তরকে পরিষ্কার করে দেওয়া। এটি ইলহাম ও ওয়াহীর মাধ্যমে হয়ে থাকে। তা কখনও কখনও স্বপ্নের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এটি হল হিদায়াতের চূড়ান্ত স্তর। এটী কেবলমাত্র নবী-রাসূলগণ অর্জন করে থাকে।


 সিরাত এর উদ্দেশ্য হলঃ


তরীকা, পথ, রাস্তা, পন্থা ইত্যাদি।

সিরাতুল মুস্তাকীমের উদ্দেশ্য

ইমাম বায়যাভী(রঃ) বলেন,

এটা হল সত্য পথে অর্থাৎ আমাদের ইসলামের পথ প্রদর্শন করুন।

ইবন জারীর তাবারী(রঃ) বলেন,

সিরাতুল মুস্তাকীম বলতে এমন পথকে বুঝায় যার কোন বক্রতা নেই।

ইবন কাসীর বলেন,

কিতাবুল্লাহকে বুঝানো হয়েছে।

আলী(রাঃ) বলেন,

কিতাবুল্লাহকে বুঝানো হয়েছে।

দাহাব(রঃ) বলেন,

এটি হল সেই দ্বীনের রাস্তা যাতে কোন জটিলতা নেই।

ইবন মাসউদ(রাঃ) বলেন,

সিরাত দ্বারা ইসলামকে বুঝানো হয়েছে।

ইবনুল হানফীরদের মতে,

এমন দ্বীন যা ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লাহ গ্রহণ করবেন না।

ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন,

যে পথে চললে পরে জান্নাত লাভ করা যায় তা হল মুস্তাকিম।

সাহাল ইবন আব্দুল্লাহ বলেন,

সীরাতুল মুস্তাকীমের দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের পথের কথা বলা হয়েছে।

আল্লামা যামাখখাশারী বলেন,

এখানে উদ্দেশ্য হল সত্য পথ তথা মিল্লাতে ইসলামে পথে চলেলে জান্নাত লাভ করা যায়।

আবুল আলীয়া বলেন,

সীরাতুল মুস্তাকীমের অর্থ হল মুহাম্মদ(সাঃ) এবং তার দুই প্রধান প্রধান সাহাবাদের অনুসরণের পথ।

তাফসীরে রুহুল মাআনীতে বলা হয়েছে,

সকল কাজ-কর্মে ইফরাদ ও তাফরীদের মধ্যমনীতি হল সীরাতুল মুস্তাকিম। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য [বাকারাঃ১৪৩]

তিনি আরও বলেন যে, ইসলামের সাহাবীগণ যে পথের উপর আছেন তা হল সীরাতুল মুস্তাকীম। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

তোমরা তাদের মত ঈমান আনয়ণ কর। 

তিনি আরও বলেন এটি হল একমাত্র ইবাদতের রাস্তা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ। [ইয়াসীনঃ৬০]

কারও মতে এর দ্বারা, জান্নাতের পথেকে বুঝানো হয়েছে।

আবার কারও মতে এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর শরীয়াতকে বুঝানো হয়েছে।


কারও মতে ইবাদত হল এর মূল উদ্দেশ্য।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...