Sunday, 11 May 2014

প্রশ্নঃ বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম কি সূরা ফাতিহার অংশ



সকল সাহাবাগণ বিসমিল্লাহির রহমানীর রহিম দিয়ে কুরআন তিলওয়াত করা শুরু করেছে। বিসমিল্লাহ সূরা নমলের একটি আয়াত এই ব্যাপারে সকলে একমত পোষণ করেছে।এখন এটি সকল পৃথক সূরার শুরুর আয়াত নাকি প্রত্যেক সূরার অংশবিশেষ নাকি কেবল সূরা ফাতিহার আয়াত এ ব্যাপারে উলামা-কিরামদের ভিতর মতভেদ রয়েছে। এই মতামতসমূহ নিম্নে পেশ করা হলঃ

১. এটি সূরা ফাতিহার অংশ।এটি কোন পরিপূর্ণ আয়াত নয় তা কেবল আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীনের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

২. এটি একটি আলাদা আয়াত। সকল সূরার ভিতর পার্থক্য করার জন্যে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।

৩. এটি প্রত্যেক সূরার প্রথম আয়াতের অংশ এবং একটি পরিপূর্ণ আয়াত নয়।

৪. সূরা ফাতিহার আয়াত এবং অন্যান্য সূরার ক্ষেত্রে আয়াতের অংশ।

৫. সূরা ফাতিহার অংশ এবং অন্যান্য সূরার পরিপূর্ণ আয়াত।

৬. অনেকের মতে এটি সূরা ফাতিহার একটি স্বতন্ত্র আয়াত।

৭. ইবন আব্বাস(রাঃ), ইবন কাসীর(রঃ), ইবনুল মুবারক(রঃ) এর মতে এটি শুধু সূরা নমলের আয়াত আর অন্য কোন সূরার আয়াত নয়।

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহিম সূরা ফাতিহার অংশ নাকি নয় এই ব্যাপারে ইসলামী প্রধান দুই ফিকহীবিদ তথা ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এবং ইমাম শাফিঈ(রঃ) দুই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

শাফিঈ(রঃ) এর অভিমত

ইমাম শাফিঈ(রঃ),আব্দুল্লাহ বিন মুবারক,মক্কা ও কূফার আলিমগণ বলেন, এটি সুরাতুল ফাতিহার একটি অংশ।ইমাম শাফিঈ(রঃ) বলেন এটি সূরা বারাআত(তাওবা) ছাড়া সকল সূরার অংশ।

নকলী দলীল

পবিত্র কুরআনের সুরাহ ফাতিহাকে সাত আয়াতবিশিষ্ট বলা হয়েছে। বিসমিল্লাহীর রহমানীর রহীমকে বাদ দিলে তা সাত আয়াত বিশিষ্ট হয় না।

উদাহরণ

আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, সূরা ফাতিহা সাত আয়াতবিশিষ্ট এবং তা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম দিয়ে শুরু হয়।

উম্মে সালমা(রাঃ) বিলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) প্রত্যেক আয়াত শেষ করে থামতেন এবং তা ক্বিরাআত আলাদা আলাদা হত। যেমন বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম পড়ে থামতেন তারপর আলহামদুলিল্লাহী রাব্বিল আলামীন পড়তেন আর থামতেন না।

মুস্তাদরাক হাকীম গ্রন্থের বলা হয়েছে যে, আবূ হুরায়রা(রাঃ) সালাত আদায় করলেন এবং কিরাআতের উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম পড়লেন এবং সালাত শেষ করে বললেন, তোমাদের চেয়ে আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সালাতের ব্যাপারে বেশী সামাঞ্জস্য রাখি।

সহীহ বুখারীতে রয়েছে,আনাস(রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ক্বিরাআত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) প্রত্যেক খাড়া শব্দকে লম্বা করে পড়েছেন এবং বিসমিল্লাহিরকে খাড়া করে পড়েছেন এবং রাহমান ও রাহীমে মাদ্দ করেছেন।

ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন,

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সালাতের সময় ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়তেন তেমনিভাবে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহীর রাহমানীর রাহীম পাঠ করতেন।

আনাস(রাঃ) বর্ণনা করেন,

মুয়াবিয়া(রাঃ) মদীনায় সালাত আদায় করলেন এবগ বিসমিল্লাহ পড়লেন না। সেসময় সকল মুজাজির উপস্থিত ছিলে তারা তাতে আপত্তি প্রকাশ করেন তাই তিনি পুনপ্রায় সালাত আদায় করলেন এবং বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে তিলওয়াত করলেন।

আকলী দলীল

সালফে সালেহীন কুরআনের প্রত্যেকটি বিষয়কে রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। যদি বিসমিল্লাহ কুরআনের অংশ নাই হত তাহলে তারা তা রাখতেন না। যেমন আমীনকে রাখেন নাই। তাই একে এড়িয়ে চলার কোন অবকাশ নেই।

মালিকীদের অভিমত

ইমাম মালিক, ইমাম আওযাই,মদীনা এবং বসরার অনেক কারী ও ফকীহদের মতে এটি সূরা ফাতিহার অংশ নয়।এটি একটি স্বতন্ত্র আয়াত।

হানাফীদের অভিমত

ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এই ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলেন নাই। কিন্তু ইমাম মুহাম্মদ(রঃ) এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কুরআনের উভয় পাশের মলাটের ভিতরে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর কালাম। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তাহলে বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহিম কেন ধীরে তিলওয়াত করা হয়? তখন তিনি বলে একটি স্বতন্ত্র আয়াত আর এটি দুই সূরা ব্যবধান সৃষ্টির জন্যে নাযিল হয়েছে। আর এটি মূলত আবূ হানীফা(রঃ) এর অভিমত। তাই বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহিম সূরা ফাতিহার অংশ নয়।

দলীল

আনাস(রাঃ) হতে বর্ণিত, কোন সূরা স্পষ্টভাবে বুঝা যেত না যদি সূরাহ ফাতিহা নাযিল না হত।

আয়শা(রাঃ) বলেন,

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সালাতকে তাকবীর ও  কিরাআতকে আলহামদুলিল্লাহি রব্বুল আলামীন দিয়ে শুরু করতেন।

আনাস ইবন মালিক(রাঃ) বলেন,

আমি আবূ বকর(রাঃ), উমার(রাঃ) ও উসমান(রাঃ) এর পিছনে সালাত আদায় করেছি। তারা সবাই আলহামদুলিল্লাহি রব্বুল আলামীন দ্বারা আরম্ভ করতেন। [বুখারী ও মুসলিম] 

সহীহ মুসলিমে আছে,

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন না সালাতের শুরতেও না পরেও না।

তাহলে উপরোক্ত দলীল দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহিম সূরা ফাতিহার অংশ নয়

বিরুদ্ববাদের দলীল

ইমাম শাফিঈ(রঃ) প্রথমে আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত যেই হাদীসটি উদ্বৃত করেছেন, সেখানে মূলত বিসমিল্লাহকে বাদ দিলে তা সাত আয়াত বিশিষ্ট হয়।

অন্যদিকে উম্মে সালমা(রাঃ) এর বর্ণনা হতে যা পাওয়া যায় তাতে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীমের বরকতকে তুলে ধরেছেন।


আবূ হুরায়রা(রাঃ) বর্ণিত হাদীসদ্বয় পরম্পরা বিরোধী। 

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...