দৃশ্যমান ঘটনা বা বিষয়কে সুসংবদ্বভাবে নিরীক্ষণ হল
পর্যবেক্ষণ।
অক্সফোর্ড ডিকশোনারিতে বলা হয়েছে-
পারস্পারিক সম্পর্ক ও কার্যকরণ সম্পর্কের ভিত্তিতে সঙ্ঘটিত
ঘটনাবলী সঠিকভাবে দর্শন ও ধারন হল পর্যবেক্ষণ।
পিভি ইয়ং বলেন-
দৃশ্যমান ঘটনা বা বিষয়কে
সুশৃংখলভাবে নিরীক্ষণ হল পর্যবেক্ষণ।
তথ্য সংগ্রহের পদ্বতি হিসেবে আচরণ বিজ্ঞানে বিশেষ করে
মনোবিজ্ঞান কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা
পরিবেশের চারিদিক পর্যবেক্ষণ করি উদ্দেশ্যবিহীনভাবে। উপাত্ত সংগ্রহের জন্যে তা
কেবল তখনই পর্যবেক্ষণ হবে যখন তা বৈজ্ঞানিক হাতিয়ার বা উপকরণ এবং পদ্বতি হিসেবে
বিবেচিত হবে যখন এটি গবেষনার উদ্দেশ্যে, পদ্বতিগত ও পরিকল্পিত ও রেকর্ডকৃত
হবে এবং তার যথার্থতা ও নির্ভরতার যাচাই ও নিয়ন্ত্রন স্পষ্ট হবে।
পর্যবেক্ষণ যখন একটি সুশৃংখল,ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত পদ্বতিতে
গ্রহণ করে লিপিবব্দ্ব করা হয় তখন তাকে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্বতি হিসবে গণ্য করা হয়।
এটি প্রত্যক্ষভাবেও হতে আবার তা পরোক্ষভাবে হতে পারে। কোন তথ্য প্রত্যক্ষ
পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ধারাবিহকভাবে সুপরিকল্পিতভাবে ও সুশৃঙ্খলভাবে গ্রহণ করা যেতে
পারে। এখানে বাস্তব কোন ঘটনা থেকে তা গ্রহণ করা যায়। এটি অনেক সময়ে পরিমাণবা গণনার
উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। যদি প্রত্যক্ষভাবে কোন অবস্থাতে পর্যবেক্ষণ না
করা যায় তাহলে পরোক্ষভাবে উপাত্ত গ্রহণের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে। তা বিভিন্ন
ধরনের যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের মাধ্যমে করা যায়। তা হতে পারে থার্মোমিটার, ব্যারোমিটার, স্টপ
ওয়াচ, চলচ্চিত্র, ক্যামেরা বা ক্যাসেট। এখানে
পর্যবেক্ষণের জন্যে সিডিউল,
মনোভাবের পরিমাপক স্কেল, মানচিত্র, চিত্রগ্রহণ
ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।পর্যবেক্ষণ ঠিক তখনই একটি বোইজ্ঞানিক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হবে
যখন তা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়,সুশৃংখল্ভাবে পরিকল্পিত, তা সুসংবদ্বভাবে একটি নির্দিষ্ট কৌতূহলের ভিত্তিতে নির্ভরযোগ্য ও যথার্থতা
নিশ্চিত করার জন্যে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বৈশিষ্ট্য
১।নির্বাচনঃ
যে বিষয়ের উপর
পর্যবেক্ষণ করতে হবে সেই বিষয়টি আগে নির্বাচন করতে হবে।
২। উদ্দীপিতকরণঃ
পর্যবেক্ষণে
প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঘটনা সরাসরি ধারন করা হয়। কিন্তু সেই পরিবেশকে অপরিবর্তিত
রেখে ঘটনা বা বিষয়টির অবস্থানে পর্যবেক্ষক যে রদবদল করে তাই হল উদ্দীপিতকরণ
৩। ধারনঃ
ছবি,ডায়রী,সুনির্দিষ্ট রেকর্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।
৪। সাংকেতীকরণঃ
ধারনকৃত বিষয় বা
ঘটনার অংশ যথাযথ সম্পদানার মাধ্যমে সাংকেতীকরণ হয়। এর মাধ্যমে তথ্যাবলী সাওজ ও
সংক্ষিপ্তভাবে চিহ্নিত করা যায়।
৫। আচরণ ও অবস্থানঃ
এখানে বিভিন্ন পরিবেশ ও অবস্থানে মানুষের নানা ধরনের আচরণ ও
প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।
৬। বিশেষ পরিবেশঃ
৭।বাস্তবমুখী উদ্দেশ্যঃ
ধাপ
১। দল বা বিষয় বা ঘটনা নির্বাচন
২। ঘটনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন
৩। অনুসন্ধান পরিচালনা করা
৪। সংকাটপন্ন সময়ে যথাযথ প্রতিক্রিয়া করা
৫। পর্যবেক্ষনীয় এলাকা থেকে বের হয়ে আসা
৬। তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরী
করা
কোন কোন গবেষণা বিজ্ঞানী আরও দুটি ধারা যোগ করেছেন যা হলঃ
১। নমুনায়ন কৌশল নির্বাচন
২। পর্যবেক্ষক প্রশিক্ষণ
পর্যবেক্ষণের প্রকারভেদ
১। সংঠিত বা কাঠামোবদ্ব পর্যবেক্ষণ
পরিকল্পিতভাবে যে পর্যবেক্ষণ হয় তা হল সংগঠিত পর্যবেক্ষণ।পর্যবেক্ষণ
ঘটনা প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলী নির্বাচনে, পর্যবেক্ষণকালে বিভিন্ন অবস্থা
পরিমিতকরণে এবং ধারনযোগ্য তথ্যাবলী পরিকল্পণার মাধ্যমে কাঠামোবদ্ব পর্যবেক্ষণের
কাজ পরিচালনা করা।
২। অসংগঠিত বা কাঠামোবিহীন পর্যবেক্ষণ
অসংগঠিত পর্যবেক্ষণ অংশগ্রহণের মাধ্যমেও হতে পারে আবার তা
অংশগ্রহণ ছাড়াও হতে পারে। অর্থাৎ এক ধরনের পরিকল্পনাবিহীন অবস্থায় তা গ্রহণ করা
হয়। এটি কোন সাংগঠনিক পদ্বতির মত ধারাবাহিক বা সুশৃংখল নয়। সাধারণত কোন দল,গোষ্ঠী,ধর্ম বা
পজাতির আচার-আচরণ,কৃষ্টি কালচার,
অবস্থা, রীতি-নীতি জানার জন্যে এ পদ্বতি অবলোকন করা যেতে পারে।
৩। নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ
এই পদ্বতিতে একটি কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। আর মানুষ
এই পরিবেশে কি আচরণ করতে পারে তা পর্যবেক্ষণ হবে। মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত রাখা
যায় না। এই পর্যবেক্ষণ মূলত শিশুদের উপর অধিক প্রযোজ্য। পরীক্ষণ পদ্বতিতে পূর্ব
পরিকল্পনা অনুযায়ী তা হতে পারে।
৪। অনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ
স্বাভাবিক পদ্বতি অনুযায়ী এখানে গবেষণা করা হয়। এখানে কোন
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রকারেই
অনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ হয়।
সুবিধা
১। পক্ষপাতমূলক আচরণ থাকে না।
২। চলতি ঘটনার দ্বারা উদ্ভাবিত হয় বলে, এখানে তা
অতীত বা ভবিষৎ ঘটনার দ্বারা প্রাভাবিত হয় না।
৩। সকল স্তরের লোকের তথ্য জানা যায়।
৪। গবেষক এখানে যদি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তথ্য সংগ্রহ
করে তাহলে গৃহীত তথ্য নির্ভরযোগ্য ও সহতিক হবে।
৫। প্রকৃত সমস্যার সমাধানে এক বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
যেহেতু একটি বিষয় নিয়ে পুংখানুভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।
৬।এটি একটি সহজ-সরল পদ্বতি যা সাক্ষাৎকার,প্রশ্নমালা
ও কেস স্টাডির চেয়ে সহজ একটি পদ্বতি।
সীমাবদ্বতা
১. এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্বতি
২. সংগৃহীত উপাত্তের সীমাবদ্বতা থাকে এবং অনেক ব্যক্তিকে
বিভিন্ন কারণে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
৩,
গবেষককে ঘটনার স্থায়ীত্বের উপর অনেক নির্ভরশীল হতে হয়। তাই
স্বল্পকালে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না।
৪. যে পরিবেশে কাজ করা হয় সেখানে পর্যবেক্ষকের
নিয়ন্ত্রনক্ষমতা অনেক ছোট পরিধিতে হয়।
৫. গবেষক অনেকাংশে নিজের আবেগ,অনুভূতি,মূল্যবোধ
ও পর্যবেক্ষনীয় ব্যক্তি বা দলের সাথে ঘনিষ্ঠ থাকে বলে সেখনে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ
করে থাকে।
No comments:
Post a Comment