Wednesday, 21 May 2014

নমুনায়ন


শিক্ষা ও সয়ামাজ গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়ন একটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত বিষয়। এটি এমন এক পদ্বতি যার মাধ্যমে গবেষণা করার জন্যে উপাত্ত সংগ্রহের জন্যে সমগ্র ক্ষেত্র থেকে কিছু একক বেছে নেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যানমূলক কাজে নমুনায়ন একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।কোন উপাত্ত বা তথ্য সংগ্রহের জন্যে যে সামগ্রিক ক্ষেত্র থেকে নির্বাচন করা হয় তা হল... শুমারী বা সমগ্রক। কোন কোন সময় দেখা যায় যে, এটি করা একটি জটিল ও দুরুহ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তখন সেখান থেকে কিছু বিষয়কে নির্বাচন করে তার উপর ভিত্তি করে কাজ করার নাম হল নমুনায়ন। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫০০০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করে। এখানে এক সাথে তাদের সকলের পৈত্রিক নিবাস, মাসিক আয়-ব্যয়, পারিবারিক অবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে তারা কি সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট এ ব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য নেওয়ার জন্যে সকলের মতামতের উপর ভিত্তি করে তা নেওয়া সম্ভবপর নয়। এজন্যে এখান থেকে তাকে নির্দিষ্ট কিছু ছাত্র-ছাত্রী নির্বাচন করে তার উপর ভিত্তি করে তখন যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে এবং তাই সার্বিকীকরণ হবে এবং তাই নমুনায়ন নামে পরিচিত।
এই নমুনায়নের জন্যে সমরূপতা, নির্ভুলতা, নমুনার আকার ও সম্ভাব্যতা নির্ণয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

নমুনায়নের প্রকারভেদ

গবেষকগণ যেন সঠিক সময়ে সঠিক ফলাফল লাভ করতে পারে এরজন্যে বিভিন্ন ধরনের অবস্থা, বৈশিষ্ট্য,আকারের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পদ্বতিকে অবলম্বণ করা হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্য, তথ্যের প্রকৃতি, সময় এবং বাজেটের উপর ভিত্তি করে নমুনায়নকে কয়েকটি পদ্বতিতে ভাগ করা যেতে পারে। যা হলঃ
সম্ভানা তত্ত্বের উপর নমুনায়ন দুই প্রকার যা হলঃ
ক. সম্ভাবনা নমুনায়ন
খ. নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন
এই দুই প্রকারের নমুনায়ন সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

ক. সম্ভাবনা নমুনায়ন

এ নমুনায়নে সকল অন্তর্ভূক্ত প্রত্যেক এককের নমুনাদলের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে। সমগ্র একক থেকে সম্ভাবনাময় নির্দিষ্ট করে পরিসংখ্যান করা সম্ভাবপর হয় এখানে এবং গঠিত নমুনাদলে প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে থাকে। এক কথায় তা সম্ভাবনা তত্ত্ব ও দৈবচয়নের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।নমুনায়নের বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি নির্ধারণ করা শুধু সম্ভাবনা নমুনায়ন কৌশল প্রয়োগ করলেই নিশ্চিত হওয়া যায়।সম্ভাবনা নমুনায়নের কয়েকটি পূর্বশর্ত আছে যা হলঃ
১. সংশ্লিষ্ট একক সমগ্রকের আকার নির্ধারণ ও নমুনায়ন কাঠামোর তালিকা প্রস্তুত।
২. প্রত্যাশিত নমুনার আকার নির্ধারণ করতে হবে।যেমনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫০০০ হাজার ছাত্রী-ছাত্রী পড়াশোনা করছে আর তার ভিতর থেকে পাঁচ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ করতে হলে ৩০০০ হাজার শিক্ষার্থীর নমুনা যোগার করতে হবে।
৩. মধ্যস্থ এককের নমুনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা নিশ্চিত করা।
সম্ভাবনার ভিত্তিতে তা কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত হতে পারে যা হলঃ
১. দৈবচয়িত নমুনায়ন
২. স্তরিত নমুনায়ন
৩. নিয়মক্রমিক নমুনায়ন
৪. গুচ্ছ নমুনায়ন
৫. বহুপর্যায়ী নমুনায়ন
এসকল নমুনায়নের ব্যাপারে সম্যক ধারনা নিম্নে পেশ করা হলঃ

১. দৈবচয়িত নমুনায়ন
যে নমুনায়ন পদ্বতিতে সমগ্রকের প্রতিটি এককের নির্বাচিত হওয়ার সমান সম্ভাবনা ও দলভূক্ত হবার সমান সুযোগ থাকে এবং অর প্রত্যেক পছন্দই একটি অপরটি থেকে আলাদা তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন। দৈব চয়ন করার বিবিধ উপায় আছে। ধরা যাক, একটি শ্রেণীতে ৬০০ ছাত্র-ছাত্রী আছে সেখান থেকে প্রায় ২৫ জনের একটি নমুনা দল গঠন করতে হবে সম্ভাব্য উপায়। এখন এখানে তা লটারির মাধ্যমে করা যায়  তাতে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাববনা কম থাকে।এখানে প্রথমে ছাত্রদের নাম লিখে আলাদাভাবে প্রতিটি কাগজের উপর লিখা হয় তারপর তা বক্সে রাখা হয় আর সেখান থেকে তা পরে উঠানো হয়।
 কিন্তু নমুনাসংখ্যা বেশী হলে তা জটিল হতে পারে। তাই তা আবার এখানে দৈবচয়িত পদ্বতি অবলম্বণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে দৈব তালিকা করতে হবে। দৈবসংখ্যা এর ভিতর অন্যতম। দৈব সারণী থেকে ২৫ জনের একটি তালিকা নিয়ে দল করলেই দৈবচয়িত নমুনায়ন হতে পারে। তা সীমিত ও অবাধ উভয় পর্যায়ে হতে পারে। স্বল্প সময় ও স্বল্প ব্যয়ে করার জন্যে সীমিত পরিসরে তা করা যেতে পারে আর সময় ও অর্থসংকট না থাকলে অবাধ পদ্বতিতে তা করা যায়।

সুবিধা
১. এটি অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত উপায়
২. এখানে পক্ষপাতমূলক আচরণের কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৩. এখানে নমুনা সমগ্রকের প্রতিটি একক নমুনার অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান ও স্বাধীন সম্ভাবনা থাকে।
৪. সহজ সরল পদ্বতি যার ফলে নমুনা নির্বাচনে কোন সমস্যা হয় না।
৫. এখানে সমগ্রক শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজন হয় না, তাই তা বিন্যাসজনিত ভ্রান্তি ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে।

অসুবিধা
১. এটি করার জন্যে পূর্ণ তালিকা করতে হয়,কিন্তু বাস্তবিকভাবে পূর্ণ তালিকা পাওয়া দুষ্কর একটি বিষয়।
২. নমুনায়নের জন্যে স্লিপ তৈরী করা একটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ পদ্বতি।
৩. সংখ্যাতাত্ত্বিক হওয়ায় তাতে নমুনার সংখ্যা বেশী করে সংগ্রহ করতে হবে।


২. স্তরিত নমুনায়ন

যে নমুনায়ন পদ্বতিতে প্রাথমিকাভাবে সমগ্রকে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কতগুলো স্তর বিভক্ত হয়,তারপর দৈবনির্বাচন পদ্বিতে প্রতিটি স্তর থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয় তাকে স্তরিত নমুনায়ন বলা হয়। সামাজিক গবেষণায় যেসকল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে স্তর বিন্যাস করা হয় তা হল অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানসমূহ।যেমন- বাংলাদেরশের অর্থনৈতিক গবেষণার জন্যে মানুষকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করা যেতে পারে যা হল উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। রাজনৈতিক গবেষণার জন্যে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের পদের উপর ভিত্তি করে স্তর করা যেতে পারে। সামজের উপর গবেষণার জন্যে রক্ষণশীল,প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রগতিশীল ইত্যাদি নীতির উপর ভিত্তি করে তা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এই পদ্বতিতে তথ্যবিশ্বকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এই ভাগগুলোকে উপসমগ্রক বলা হয় এবং প্রতিটি ভাগকে স্তর বলা হয়।যেমন একটি এলাকার বাসিন্দাদের আয়ের হিসাব করা হবে। এই লোকগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তা কয়েকটি উপবিভাগে বিভক্ত করতে হবে। যা হলঃ
দক্ষ শ্রমিক-২৫%
অদক্ষ শ্রমিক- ৫০%
পেশাজীবি শ্রমিক- ১৫%
দোকানদার=১০%
এইভাবে প্রত্যেকটি উপবিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে দল গঠন করাকে স্তরিত নমুনায়ন বলা হয়। এই ধরনের নমুনায়ন আবার তিন ধরনের হতে পারে যা হলঃ সমানুপাতি,অসমানুপাতিক এবং বঞ্ছিত বণ্টন।

সুবিধা

১. নমুনার প্রতিনিধিত্বশীলতা ও নির্ভরশীলতা বৃদ্বি পায়।
২. নমুনা বিভ্রান্তির সম্ভাবনা কম থাকে।কারণ নমুনা সমগ্রকের বৈশিষ্ট্যের সত্যিকার প্রতিফলন ঘিটে এখানে।
৩. প্রতিটি স্তরে গুরুত্ব দিতে হয় না বলে সময় ও শ্রম কম লাগে।

অসুবিধা

১. এটি একটি জটিল পদ্বতি যার ফলে মাঝেমধ্যে তার জন্যে সময় বেশী লাগে।
২. নির্ভুল নমুনা সংগ্রহের জন্যে গবেষকের সমগ্রকের গঠন,প্রকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যবলী জানতে হয় যা সর্বদা জানা সমাব নয়।
৩. বিন্যাসজনিত বিভ্রান্ত হতে পারে। 


৩. নিয়মক্রমিক নমুনায়ন

সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ্বতি। পদ্বতিতে নমুনা নির্বাচনকালে প্রথমেই গবেষক কতজনের নমুনা নির্বাচন করবে তা এবং তার শ্রেণী ব্যপ্তি নির্ধারণ করবেন। প্রথমে দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়।এরপর নমুনা শ্রেণী ব্যপ্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। তবে এখানে প্রথমে তাকে একটি সমগ্রকের তালিকা তৈরী করতে হয় আর এরপরে সমগ্রভূক্ত প্রতিটি এককের সুনির্দিষ্ট ব্যাপ্তিতে দৈবচয়িত পদ্বতিতে নমুনা নির্বাচনের পদ্বতি হল দৈবচয়িত নমুনা।
ধরা যাক একটি শ্রেণীকক্ষে প্রায় ১০০ জন আছে আর সেখানে ২৫ জনের তালিকা করা হবে। এখানে শ্রেণীব্যপ্তি হবে (১০০/৪)=২৫। ধরা যাক, এখানে দৈবচয়িত পদ্বতিতে ৪২ হল।এরপর শ্রেণী ব্যপ্তি অনুযায়ী পরের জন হবে ৪৬,এরপর ৫০ এভাবে করে নিয়মক্রমিক নমুনায়ন হবে। উল্লেখ্য যে, সমগ্রের শেষের দিকে চলে গেলেও তা আবার শুরুর দিকে চলে আসবে।এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। যা হলঃ

সুবিধা

১. নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন স্তরীভূত বা দৈবচয়নের চেয়ে অনেক সহজ।
২. ছোট আকৃতি সমগ্রক থেকে নির্বাচন করা সহজ হয়।
৩. এ কৌশল থেকে প্রাপ্ত ফলাফল মোটামুটি সন্তোষজনক।

অসুবিধা

১. যদি কোন ঘটনা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে হ এবং ঠিক ঐ ব্যবধান বিবেচনা করে যদি নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন করা হয় তাহলে তা ভ্রান্ত সিদ্বান্তের দিকে যায়। যেমন- বাংলাদেশে দৈনিক কতজন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তা যদি কেবল জুমআর সালাত দিয়ে করা হয় তাহলে তা কার্যত প্রতিনিধিত্বমূলক হবে না।
২. প্রথমের নমুনাটি দৈব পদ্বতিতে করা হলেও এরপরে তা আর দৈব পদ্বতিতে করা হয় না যার ফলে এক ধরনের সাংঘর্ষিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

 
৪. গুচ্ছ নমুনায়ন

সমাজ গবেষণার জন্যে গুচ্ছ নমুনায়ন একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই প্রকারের নমুনায়নে দৈবচয়িত নমুনায়নের অন্য আরেকটি রুপ। প্রকৃতপক্ষে সমগ্রক যখন বৃহদায়ন হয় তখন এবং ভৌগোলিক দিক থেকে বিস্তৃত এলাকা হয় তখন এই পদ্বতি কাজে লাগানো যায়। এই পদ্বতিতে সমগ্রককে বিভিন্নভাগে বিভক্ত করতে হয়। প্রতিটি ভাগকে বলা হয় এক একটি ক্লাষ্টার। নির্বাচিত প্রত্যেকটি একক থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত ভৌগোলিক বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে তা নির্বাচন করতে হয়।যেমনঃ বাংলাদেশে প্রায় ৬৮০০০ গ্রাম রয়েছে। সেখানকার প্রত্যেকটি গ্রামের পরিবারের আয়ের হিসাব করতে হবে।এখানে প্রত্যেকটি গ্রামকে গুচ্ছ হিসেবে ধরা হল। এখন সরল দৈবচয়নের মাধ্যমে ৫০টি গুচ্ছ নির্বাচন করা হবে এবং নির্বাচিত ৫০টি গুচ্ছের সকল পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য যে, স্তরিত নমুনা আর গুচ্ছ নমুনার ভিতর মূল পার্থক্য হল এই যে, স্তরিত নমুনায়নে আন্তঃস্তরের উপাদানের ভিতর পার্থক্য থাকলেও স্তর মধ্যস্থ কোন পার্থক্য নেই। অন্যদিকে আন্তঃগুচ্ছ উপাদানের  ভিতর পার্থক্য না থাকলেও গুচ্ছ মধ্যস্থ উপাদানের ভিতর কোন পার্থক্য আছে।  এই নমুনায়নের সুবিধা-সীমাবদ্বতা নিম্নে পেশ করা হলঃ

সুবিধা

১. বিস্তীর্ণ পরিসরের ভিতর স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে গবেষণা করার জন্যে নমুনায়ন পদ্বতি উপযোগী।
২. একক এলাকার কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উত্তরদানের জন্যে পাওয়া না গেলেও ঐ এলাকার অন্য কাউকে দিয়ে উত্তর আদায় যায়।কারণ গুচ্ছ নমুনায়নে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি একক নয় বরং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা হল হল একক।
৩. কোন সমগ্রকের সকল এককের বা উপাদানের তালিকা না থাকলেও গুচ্ছ নমুনা নির্বাচন করতে কোন অসুবিধা হয় না ।  

সীমাবদ্বতা

১. নমুনা বিচ্যুতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
২. ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে করা হয় বলে নমুনার আয়তনের উপর গবেষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
৩. নির্বাচিত এলাকার সকল অধিবাসীদের কাছে থেকে একই সময়ে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না যার ফলে একাধিকবার একই ব্যক্তি নমুনা গুচ্ছের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় ঘটতে পারে।


৫. বহুপর্যায়ী নমুনায়ন

যে নমুনায়ন পদ্বতিতে নমুনা সংগ্রহ ধাপে ধাপে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় তাকে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন বলা হয়। এই পদ্বতিতে প্রথম ধাপে একটি একটি নমুনা নেওয়ার পরে আবার আরেকটি নমুনা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাকে উপপর্যায়ে বিভক্ত করতে হয়। এভাবে করে কয়েক ধাপে তা সম্পন্ন করতে হয়।
ধরা যাক, দেশের প্রধান ৬টি বিভাগ থেকে ৬টি জেলা নির্বাচন করা হল। এরপর সেখান থেকে ৬টি উপজেলা।এরপরে সেই উপজেলা থেকে ৩য় ধাপে ৩০টি করে গ্রাম নির্বাচন করতে হবে। এরপর সেই গ্রাম প্রতি ৫০টি দম্পতি নিয়ে (৫০*৩০=১৫০০) জনের একটি নমুনা নির্বাচিত করতে হবে তাদের আয় বের করার জন্যে। এভাবে করে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন হয়ে থাকে।

সুবিধা

১. এ পদ্বতির সুবিধা হল এই যে, এখানে স্বাধীনতা রয়েছে।
২. বিশাল এলাকা থেকে নমুনা চয়ন করা যায়।
৩. প্রতিনিধ্বশীলতা বজায় রাখা যায়।

অসুবিধা

প্রাপ্ত ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা কোন কোন ক্ষেত্রে কম হয়।


ক্রমপর্যায়ী এবং ভূমিগত নমুনায়ন
এছাড়া আরও দুই ধরনের নমুনায়ন রয়েছে যাহল ভূমিগত নমুনায়ন আর ক্রমপর্যায়ী নমুনায়ন। ভূমিগত নমুনায়নের মাধ্যমে কৃষিজ জমির আর ক্রমপর্যায়ী  নমুনায়নের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান নির্ণয় করা যায়।


খ. নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন

যে নমুনায়নে কৌশল সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে না,তাকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন পদ্বতি বলা হয়। সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অজ্ঞাত থাকে বলে গবেষকদের ভ্রান্তি নিরুপুণ করা সম্ভাব হয় না। যেসকল ক্ষেত্রে সম্ভাবনা নমুনায়ন সম্ভব না সেখানে এই নিঃসম্ভাবনার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অত্যন্ত দূর্বল এবং সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। তবে ছোট আকৃতির সমগ্রক হতে এ কৌশলে নমুনা নির্বাচন করা যেতে পারে। এটি কয়েকধরনের হতে পারে যা হলঃ

১. উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন

এই পদ্বতিতে নমুনায়ন করতে হলে সম্ভাবনা তত্ত্বকে কাজে লাগাতে হয় না।এখানে গবেষক কেবল মাত্র তার স্বীয় বিচার-বুদ্বি,বিবেককে কাজ লাগিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ, এখানে সংখ্যাতত্ত্বের চেয়ে স্বীয় বিচার-বুদ্বির উপর জোড় প্রাধান্য দেওয়া হয়।
ধরা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫০০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এখন এখান থেকে সকলের মাসিক ব্য জানা সম্ভব নয়। তারজন্যে একজন গবেষকের উচিৎ হবে এদের ভিতর থেকে ১০০ জনকে বাছাই করে তাদের ভিতর থেকে তাএর মাসিক ব্যয় এর তালিকা নিয়ে নমুনা করতে পারে।

সুবিধা

এ কৌশলের সুবিধা হল এর মাধ্যমে বৃহৎ আয়তনবিশিষ্ট সমগ্রক থেকে নমুনা সংগ্রহ বেশ সুবিধাজঙ্ক এবং এতে সময় ও খরচ কম লাগে।

অসুবিধা

সমগ্রক সম্পর্কে গবেষকের সম্যক ধারনা না থাকলে নমুনার প্রতিনিধিত্বশীলতা হয় না এবং অনুসন্ধানকারীর ব্যক্তিগত ঝোঁক বা পক্ষপাতিত্ব প্রতিফলিত হতে পারে।

২. আকস্মিক নমুনায়ন

গবেষক অনেক সময় নমুনায়নের বিশেষ কোন পদ্বতিকে অনুসরণ না করে তার নিজের সুবিধা অনুযায়ী ইচ্ছা মত এবং যা কাছে পাওয়া যায় সেগুলোকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এটি প্রতিনিধিত্বমূলক বা বিজ্ঞানম্মত না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ উপযোগী বলে প্রমাণিত।

৩. স্বনির্বাচিত নমুনায়ন

যে পদ্বতিতে সমগ্রকভূক্ত উপাদান যখন নিজেই নমুনাভূক্ত হওয়ার জন্যে এগিয়ে আসে তাই হল স্বনির্বাচিত নমুনা। যেমনঃ একটি ক্লাসে ২০ জন শিক্ষার্থীর নমুনা তৈরী করা হবে এখন কাদের নিয়ে তা করা হবে সেই বিষয়ে সকলের অভিমত নিয়ে যারা যার নমুনা দিতে রাজী হবে তাদেরকে নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে। এভাবে কর স্বনির্বাচিত নমুনায়ন করা যেতে পারে। এটি স্বল্প ব্য ও সময় বিশিষ্ট হলেও একক নমুনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে না আর পদ্বতি নির্বাচিত নমুনা তেমন প্রতিনিধিত্বশীল নয়।

3 comments:

  1. সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়নের গুরুত্ব আলোচনা কর।

    ReplyDelete

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...