আর-রহমান ও আর-রাহীমের শাব্দিক বিশ্লেষণ
আল্লাহ পাকের পবিত্র ৯৯টি সিফতের ভিতর রাহমান
ও রাহীম অন্যতম। তিনি যে একমাত্র আমাদের নিআমতদাতা আমরা এখান থেক তা উপলব্দ্বি
করতে পারি।
রহমান ও রাহীম শব্দদ্বয় রিহম হতে আগত। রিহম
অর্থ হল মহিলাদের গর্ভাশয়। এর এখান থেকে রহমত এসেছে। এর অর্থ হল হৃদ্বয়ের কোমলতা
যা দয়া ও অনুগ্রহের কামনা করে। মহিলারা যেহেতু গর্ভের সন্তানদের প্রতি করুণা ও দয়া
প্রদর্শন করে তাই সেখান থেকে এই অর্থের আবির্ভাব।
আল্লামা বায়যাভী(রঃ) বলেন,
আল্লাহর যেসকল গুণাবলী রয়েছে তার দুটি পর্যায়ে
আছে।
যথাঃ প্রাথমিক পর্যায় যা হল অন্তরের কোমলতা,হৃদ্বয়ের দয়ার্দ্রতা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে হল অনুগ্রহ করা, নিআমত দান করা ইত্যাদি আর এখানে শেষোক্ত
পর্যায়টি আল্লাহ ছাড়া আর কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
ইমাম জারীর তাবারী(রাঃ) বলেন,
রাহমানের অর্থ হল সমগ্র সৃষ্টজীবের প্রতি
করুণা বর্ষণকারী আর রাহীমের অর্থ হল যিনি মুমিনদের উপর দয়াবর্ষণকারী।
রহীম যে শুধুমাত্র মুমিনদের জন্যে প্রযোজ্য
সেই ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
তিনি
মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। [আহযাবঃ৪৩]
ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন,
রাহমান ও রাহীম দুটি করুণাবিশিষ্ট শব্দ। একের
মধ্যে অন্যের তুলনায় দয়া ও করুণা বেশী আছে।
সকল সাহাবীদের এই অভিমত যে, রাহীমের চেয়ে রাহমানের ব্যপকতা রয়েছে। হাদীসে
কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে,
আমি রাহমান। আমি রাহিম হতে সৃষ্টি করেছি আর
আমার নাম থেকে রাহিমের নামের সৃষ্টি।
কারও মতে,
রাহমান হল দুনিয়া ও আখিরাতে দয়া প্রদর্শনকারী
আর রাহীম হল শুধু আখিরাতের প্রদর্শনকারী।
ইমাম মাওয়ার্দীর মতে এটা আরবী শব্দ নয়।বরং এটি
ইবরানী শব্দ। এর সাথে আরবগণ ইতিপুর্বে পরিচিত ছিল না।ইসলামে আবির্ভাবের পর পর তার
সাথে সকলে এর সাথে পরিচিত হয়। আল্লাহ বলেন,
তাদেরকে যখন বলা হয়, দয়াময়কে সেজদা কর, তখন তারা বলে, দয়াময় আবার কে?
তুমি
কাউকে সেজদা করার আদেশ করলেই কি আমরা সেজদা করব [ফুরকানঃ৬০]
আর-রহমান ও আর-রাহীমের পার্থক্য
আভিধানিক পার্থক্য
১. রাহীম ও রাহমান উভয় শব্দের মূল ধাতু রিহম।
এর অর্থ হল অন্তরের কোমলতা।
২. রাহমান শব্দে রাহীমের তুলনায় বর্ণ অধিক।
৩.
ইমাম মাওয়ার্দীর মতে এটা আরবী শব্দ নয়।বরং এটি ইবরানী শব্দ। এর সাথে আরবগণ
ইতিপুর্বে পরিচিত ছিল না।ইসলামে আবির্ভাবের পর পর তার সাথে সকলে এর সাথে পরিচিত
হয়। আল্লাহ বলেন,
তাদেরকে যখন বলা হয়, দয়াময়কে সেজদা কর, তখন তারা বলে, দয়াময় আবার কে?
তুমি
কাউকে সেজদা করার আদেশ করলেই কি আমরা সেজদা করব [ফুরকানঃ৬০]
অর্থগত পার্থক্য
১. রহমানের তুলনায় রাহীম এর মাঝে অর্থ আধিক্য
বিদ্যমান। আল্লামা বায়যাভী(রঃ) অর্থের দিক থেকে দুইভাবে প্রমাণ করেছেন,
১. পরিমাণ বা সংখ্যার দিক থেকে
২. গুণ ও অধিক মর্যাদা দিক থেকে।
১. পরিমাণগত বা সংখ্যার দিক থেকে
রহমান
হল দুনিয়ার অনুগ্রহ আর রাহীম হল আখিরাতের অনুগ্রাহী।কারণ দুনিয়ায় আল্লাহর
অনুগ্রাহী কাফির ও মুমিন নির্বিশেষে সকলের জন্যে ব্যাপক।তাই একে রাহমানুদ দুনিয়া
বলা হয়। আর আখিরাতে আল্লাহর নিআমত শুধুমাত্র মুমিনদের জন্যে আর তার পরিসর ছোট। তাই
একে রাহীমুল আখিরাত বলা হয়।
২. গুণ ও অধিক মর্যাদা দিক থেকে
গূন ও অধিক মর্যাদার দিক থেকে দেখা যায় যে, রাহমান দুনিয়া ও আখিরাতের এবং রাহীম কেবলমাত্র
দুনিয়ার জন্যে।কেননা তা আখিরাতের গুণাবলী স্বাভাবিকভাবে অনেক বড় হয়ে থাকে। আর
দুনিয়ার নিআমতসমূহ ছোট ছোট হয়ে থাকে। তাই রাহমান বৃহৎ নিয়ামতদানকারী আর রহীম
ক্ষুদ্র নিয়ামতদানকারী হওয়াতে রাহমান হল দুনিয়া ও আখিরাত দুই জাহানের জন্যে আর
রাহীম হল কেবল দুনিয়ার জন্যে।
অন্যান্য পার্থক্য
১. তাফসীরে ইবন কাসীরে বলা হয়েছে,
রহমান শব্দটি আল্লাওর জন্যে খাস আর রাহীম আম
তা আল্লাহ ও তার বান্দার জন্যে ব্যবহার হয়। আর রাহমান হল কেবল দুনিয়ার জন্যে আর
রাহীম হল আখিরাতের জন্যে।
২. কেউ কেউ বলেন, মুমিন ও কাফির সকলের প্রতি রাহমান ও মুমিনদের
প্রতি রাহীম।
৩. কারো মতে, প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুলকারীকে রাহমান আর তা কবুল না
করলে রাহীম।
৪. আল্লামা কুরতুবী(রঃ) বলেন, রাহীম ও রাহমান সমার্থবোধক। যেমন কাদীম ও
কাদামানুন একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন ঃঃ অধিক মর্যাদার দিক থেকে দেখা যায় যে, রাহমান দুনিয়া ও আখিরাতের এবং রাহীম কেবলমাত্র দুনিয়ার জন্যে।কেননা তা আখিরাতের গুণাবলী স্বাভাবিকভাবে অনেক বড় হয়ে থাকে। আর দুনিয়ার নিআমতসমূহ ছোট ছোট হয়ে থাকে। তাই রাহমান বৃহৎ নিয়ামতদানকারী আর রহীম ক্ষুদ্র নিয়ামতদানকারী হওয়াতে রাহমান হল দুনিয়া ও আখিরাত দুই জাহানের জন্যে আর রাহীম হল কেবল দুনিয়ার জন্যে।
ReplyDeleteএখানে রাহীম কি কেবল দুনিয়ার জন্য নাকি কেবল আখিরাতের জন্য?