Sunday, 11 May 2014

সূরা নিসার ব্যাখ্যা (২১-৪০)

২১

এরপরের আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা স্ত্রীদের প্রদত্ত মুহর কীভাবে ফিরিয়ে নিবে? কিন্তু এর দ্বারা তোমরা তাদের উপকার করেছ,প্রয়োজন মিটিয়েছ,তারা তোমাদের সাথে আর তোমরা তাদের সাথে মিলিত হয়েছ। অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

বুখারী ও মুসলিম শরীফের বিশুদ্ব হাদীসে এসেছে যে, একবার একটি লোক তার স্ত্রীর বিরুদ্বে ব্যভিচারের অভিযোগ করেছিল।তখন উভয় তারা শপথ করলেন। এরপরে আল্লাহর রাসূল বললেন, আল্লাহই ভাল জানেন যে, কে এখন মিথ্যা বলছে। তোমাদের ভিতর কি কেউ তাওবা করেছে? তখন লোকটি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর তার মুহরের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি তাকে বলেন ঐ জিনিসের বিনিময় তুমি তাকে বৈধ করেছ। আর যদি তার উপর মিথ্যা অপবাদ আন তাতো বহু দুরের কথা।

একইভাবে অন্য এক হাদীসে এই বর্ণনা এসেছে যে, নাযরা(রাঃ) একটি কুমাড়ীকে বিবাহ করেন।এরপরে তার স্ত্রী ব্যভিচারের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়লে পরে  রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সে তাকে নিয়ে যায়।এরপরে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাকে আলাদা করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তাকে মুহরের টাকা প্রদান করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং এরপরে তাকে বেত্রাঘাত করার নির্দেশ জ্ঞাপন করেন আর বলেন, যে জন্মগ্রহণ করেছে সে তোমার গোলাম আর তার মুহর তো বৈধ করার কারণ ছিল। 

মোটকথা এই আয়াতের ভাবার্থ হল এই যে, স্বামী স্ত্রীর ভিতর মিলন হয়ে যাওয়ার পরে তা এখন আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তাই কুরআনে ইরশাদ হয়েছে যে, বিবাহ বন্ধন হল একটি দৃঢ় অঙ্গীকার যার ভিতর তোমরা আবদ্ব হয়েছ। সেই সাথে তাদের পরিত্যাগ করতে হলে উত্তম পন্থায় করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, তোমরা স্ত্রীদের আমানত হিসেবে গ্রহণ করে থাক আর তাদেরকে আল্লাহর কালিমা দ্বারা নিজেদের জন্যে বৈধ করে থাক। অর্থাৎ, বিবাহের খুৎবা দ্বারা হালাল কর। হাদীসে আরও বলা হয়েছে, তোমরা স্ত্রীদেরকে আল্লাহর আমানতরুপে গ্রহণ করেছ এবং তাদেরকে আল্লাহর কালিমা দ্বারা হালাল করেছ।

নুরুল কুরআন

অনেকে মুহর মাফ করানোর জন্যে বর্বরতার যুগে স্ত্রী বিরুদ্বে ব্যভিচারের অভিযোগ দিয়ে তার আদায় থেকে বেঁচে থাকত আর তখনই এই আয়াত নাযিল হয়।



২২

আল্লাহ বিমাতাকে বিবাহ করার ব্যাপারে তা বান্দাদেরকে নিষেধ করলেন। এখান তার সম্মান ও মর্যাদা কথা বলা হয়েছে। এমন কি বাবা শুধু বিয়ে করেছে আর মা পিত্রালয় থেকে আসেও নাই এমতাবস্থায় যদি তাদের ভিতর তালাক হয়ে যায় কিংবা পিতা মারা যায় তাহলেও তা সেই পুত্রের জন্যে হারাম হয়ে যাবে তাতে উম্মাতের ইজমা হয়েছে। আবূ কায়সের স্ত্রীর নাম ছিল উম্মে কাবীশাহ(রাঃ)। তিনি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে এই সংবাদ প্রদান করেন যে, এ লোকগুলো না আমাকে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে গণ্য করে আমার স্বামীর মীরসার প্রদান করছে, না আমাকে ছেড়ে অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব হতে দিতে পারে। এরপরে তাকে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে বলা হয় যে, তার জন্যে সে হারাম হয়েছে কারণ ইতিপূর্বে তার পিতা তাকে বিবাহ করেছে যেহেতু।

এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল যে, খালাফ(রাঃ) এর ঘরে আবূ তালহা(রাঃ) এর একজন কণ্যা ছিলেন। খালাফ (রাঃ) মারা গেলে তার ছেলে সাফওয়ান তাকে বিবাহ করলে সাহিলী(রাঃ) বলেন, এমন প্রথা জাহিলী যুগে ছিল। তাকে হালাল মনে করা হত। এজন্যেই বলা হয় যে, আগে যা হয়েছে তাতো হয়েই গেছে। কিনানা ইবন খুযায়মা একবার এমন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব হয়েছিলেন।তার ঘরে নাযানের জন্ম হয়।তখন এই কথা শুনে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ঘোষণা করলেন যে, আমার বংশের উৎপত্তি ঘটেছে বিবাহের মাধ্যমে ব্যভিচারের মাধ্যমে না। তাহলে বুঝা যায় যে, এ প্রথা তাদের মধ্যেই বরাবরই ছিল আর তা বৈধ বিবাহ বলে গণ্য হত।

ইবন আব্বাস(রাঃ), কাতাদাহ(রঃ) ও আতা(রঃ) বলেন, যে আত্মীয়কে আল্লাহ বিবাহ করা হারাম ঘোষণা করেছেন অজ্ঞতার যুগেও লোকেরা হারাম বলে জানত। কিন্তু কেবল বিমাতাকে বিবাহ করা আর দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করার নিয়মকে হালাল মনে করত। তাই কুরআন পাকের মধ্যে এদেরকেও হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।

পারতপক্ষে সাহিলী(রাঃ),কিনানা যে ঘটনাটি নকল করেছেন তা সঠিক নয়।এটি অশ্লীল ও নিৎকৃষ্ট কাজ। কারণ আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও অরুচিকর এবং নিকৃষ্টতর পন্থা। যেখানে আল্লাহ ব্যভিচারকে অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ বলে অভিহিত করেছেন সেখানে একে অরুচিকর হিসেবে বলা হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তী স্বামীকে একজন লোক স্বাভাবিকভাবে শত্রু মনে করতে পারে। এখানে পিতা-পুত্রের ভিতর মনোমালিন্য হতে পারে। আর এই কারণেই তাকে হারাম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। যেমনটি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) স্ত্রীদের উম্মুল মুমিনীনে ভূষিত করে তা হারাম করা হয়েছে। কারণ তার অধিকার সকলের বাপ-দাদার অধিক। তার প্রতি ভালবাসাকে নিজের জীবনের উপর ভালবাসা প্রদান করা হয়েছে। আর এটাও বলা হয়েছে তা একটি খারাপ কাজ আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। সে ধর্মত্যাগীর অন্তর্ভূক্ত হবে।তাকে হত্যা করে তার সম্পদ ফায়রুপে বায়তুল মালে জমা হবে।

 মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার হারিস বিন উমায়র(রাঃ)কে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্যে প্রেরণ করেছিলেন যে তার মৃত পিতার স্ত্রীকে বিবাহ করেছিল।

এখন বিমাতাকে বিবাহ করা কিংবা পিতার সাথে যার সঙ্গম হয় তার জন্যে পুত্র একেবারেই হারাম। কিন্তু যার সাথে সহবাস হয় নাই, কিংবা যার লজ্জাস্থানের প্রতি পিতা দৃষ্টিপাত করেছে। ইমাম আহমদ(রঃ) এর মাযহাব হল পিতার এই দৃষ্টিপাতের দ্বারা সে হারাম হবে।ইবন আসাকেরও একই মত। এখানে ঘটনা ছিল এমন যে, খুদায়েজ হামশী(রাঃ) একবার মুয়াবিয়া(রাঃ) এর জন্যে গৌরবর্ণের একজন সুশ্রী দাসী ক্রয় করে আর তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় নিয়ে এসে উপস্থিত হয়। তখন মুয়াবিয়া(রাঃ) তার পুত্র ইয়াজীদের জন্যে তাকে প্রস্তাব দান করে।কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই তিন মত পাল্টালেন আর রাবীয়া(রাঃ)কে ডেকে আনলেন আর জিজ্ঞাসা করলেন আমি তার যে অঙ্গ দেখেছি আর তাকি ইয়াজীদের জন্যে হবে। তখন রাবীয়া তাকে তা করতে নিষেধ করেন আর মুয়াবিয়া(রাঃ) এরপরে আব্দুল্লাহ বিন সাদা ফাযাযীর কাছে তাকে হস্তান্তর করলেন।



২৪

সধবা স্ত্রীদের বিবাহ করা হারাম কিন্তু কাফিরদের যেসকল স্ত্রী যুদ্বে বন্দিনী হয়ে থাকবে তারা ঋতুকাল অতিক্রম হওয়ার পরে বৈধ হবে। আবূ সাঈদ খুদরী(রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, আউতাসের যুদ্বের পরে একবার কিছু বন্দী সধবা স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে উক্ত আয়াত নাযিল হয় আর তার বৈধতা প্রদান করা হয়। বেশ কয়েকটি হাদীস গ্রন্থে এই ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তাবরাণীতে বলা হয়েছে এটা হল খায়বারের ঘটনা।

সালফে সালেহীনদের একটি মতামত হল এই যে, এখানে দাসীকে বিক্রী করে দিলেই স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক হয়ে যায়। ইব্রাহীম(রঃ) ও আব্দুল্লাহ(রাঃ) এই মতামতের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে থাকেন। অন্য এক সনদে এমন বর্ণনা পাওয়া যায় যে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রাঃ) বলেন, যখন কোন সধবা নারী বিক্রেতা হয় তখন তার দেহের বেশী হজদার তার মনিব। উবাই বিন কাব(রাঃ), জাইর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) ও ইবন আব্বাস(রাঃ) এর ফাতওয়া এই যে তার বিক্রিতা হওয়াই হল তালাকপ্রাপ্তি।

তাফসীরে জারীরে বলা হয়েছে যে, দাসীর তালাক পাঁচ প্রকারের। তাকে বিক্রী করা, আযাদ করা, দান করা, অব্যহতি দেওয়া ও স্বামীর জন্যে তালাক দেওয়া তালাক। ইবন মুসায়ব(রঃ) বলেন, সধবা নারীদের বিবাহ করা হারাম কিন্তু দাসীদের বিক্রী হলে তা তালাক হয়ে যাবে। মুয়াম্মার(রঃ) ও হাসান বসরী(রঃ) একই কথা বললেও জুমহুর উলামাগণ এর বিরোধীতা করেছেন। তারা বলেন যে, দাসীদের বিক্রী করা তাদের জন্যে তালাক নয়। কারণ ক্রেতা হল বিক্রেতার প্রতিনিধি ও বিক্রেতা তার সুফল স্বীয় অধিকার থেকে বের করছে আর দাসীর কাছে ছিনিয়ে ক্রেতার কাছে বিক্রী করে। তাদের দলীল হল সহীহাইনে এখানে দলীল ব্যক্ত করেন যে, বুরায়রা(রাঃ)কে আয়শা(রাঃ) ক্রয় করে তাকে আযাদ করে দেন। কিন্তু তারপরেই কিন্তু তার সাথে মুগীস(রাঃ) এর বিব্বাহ হারাম হয়ে যায় নাই। এরপরে বারীরা(রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বিবাহ বাতিল করা কিংবা তা রাখার ইখতিয়ার প্রদান করেন। বারীরা(রাঃ) পরে তিনি নিজেই বাতিল করেন। আর সেভাবেই প্রমাণিত হয় যে, এখানে দাসী বিক্রী হওয়ার দ্বারা বিবাহ বাতিল হয় না।

এখানে শুধু ঐসকল স্ত্রীলোকদের বুঝানো হয়েছে, যারা যুদ্বে বন্দিনী অবস্থায় মুসলিমগণের অধিকারে এসেছে। এখানে মুহছোয়ানাত হল পূণ্যশীলা রমনীগণ। অর্থাৎ, পূণ্যবতী নারীগণ হারাম তোমাদের জন্যে হারাম যে পর্যন্ত তোমরা বিয়ে সাক্ষী, মুহর ও অভিভাবকদের মাধ্যমে তাদের সতীত্বের অধিকারী হও। একজন থেকে তা চারজন হোক। আবুল আলিয়া(রঃ) ও তাউস(রঃ) এর ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন। উমর(রঃ) ও উবায়দাহ(রঃ) বলেন, এর ভাবার্থ হল চারটির বেশী স্ত্রী তোমাদের জন্যে হারাম। তবে দাসীদের ব্যাপারে এর কোন সংখ্যা নেই।

এরপরেই এ নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন যে, তা তোমাদের উপর লিখে দিয়েছেন তিনি চারটি হুকুম। তাই তা তোমাদের জন্যে তা পালন করা অবশ্য পালনীয় আর তার সীমা অতিক্রম করবে না। সধবা নারী যে এভাবে করে হারাম করা হয়েছে তা স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরেই তা বলা হয়েছে যে, যেসব নারী হারাম করা হয়েছে তারা ছাড়া সকলেই বৈধ তবে তা চার সংখ্যা পর্যন্ত সীমিত করা হয়েছে। কাতাদা(রঃ) বলেন এর ভাবার্থ হল দাসীদেরকে বুঝানো। 

এরপরেই আল্লাহ বলেন, তোমরা এ হালাল নারীদের স্বীয় মালের দ্বারা গ্রহণ কর, আযাদ নারী চারজন আর দাসীদের সংখ্যা নির্ধারণ ছাড়াই উত্তম পন্থায় বিবাহ করা যাবে। এজন্যেই তা করা হয়েছে যে, ব্যভিচারের জন্যে উদ্দেশ্য ছাড়া বিবাহ করার জন্যে।

এরপরেই বলা হয়েছে, যেসকল স্ত্রীদের গ্রহণ করতে চাও তার বিনিময় মুহর প্রদান কর। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে,

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। [নিসাঃ৪]

তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের কাছে গমন এবং নারীরা তোমাদের কাছে থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে। [নিসাঃ২১]

তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীডের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু ফিরানো তোমাদের ঠিক না।

এ আয়াতের সমর্থনে সাধারণভাবে মুতা বিবাহকে জায়য মনে করা যেতে পারে কিন্তু তা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল কিন্তু পরে তার অরহিত হয়ে যায়। ইমাম শাফিঈ(রঃ) এর একটি তা প্রথমে জায়েয ছিল কিন্তু পরে তা রহিত হয়ে যায়। তা দুইবার বৈধ করা হয় আর তা দুইবার রহিত করা হয়। অপর একটি দলের কথা হল এটি একবার বৈধ করা হয় রা তা একবারই অবৈধ করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন তা কয়েকবার বৈধ করা হয়েছিলে আর তা কয়েকবার  করা হয়। ইবন আব্বাস(রাঃ), উবাই বিন কাব(রাঃ), সাঈদ বিন জুবায়র(রাঃ) ও সুদ্দী(রঃ) প্রমুখের উক্ত আয়াতের কিরাআতে এই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মুতা বৈধ।মুজাহিদ (রঃ) এর কথা হল এটি মুতা বিবাহের ব্যাওয়ারে হয়।

কিন্তু জুহহুর তার বিরোধিতা করে। আমীরুল মুমিনীন আলী(রাঃ) বর্ণনা করেন যে, খায়বারের যুদ্বের সময় আমাদের জন্যে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) মুতার বিবাহ জায়েয করেছিলেন এবং গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন।

সাবুরা বিন মাবুদ জুহানী(রাঃ) বলেন, তিনি মক্কায় বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সকল জনতাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে লোকসকল! আমি তোমাদের মুতা বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করেছিলাম। এখন থেকে তা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম বলে ঘোষণা করা হল। আর যাদের কাছে এরুপ স্ত্রী আছে তাদের পরিত্যাগ কর। তবে এ ব্যাপারে যা দিছ তা থেকে কিছু গ্রহণ করবে না।

মুসলিম শরীফের অন্য এক রিওয়য়াতে একই কথা বর্ণিত হয়েছে যে, বিদায় হাজ্জ্বের দিন তা তিনি উম্মাতের জন্যে বাতিল করেছিলেন। ফিকহ ও শরীয়াতের আহকামের অনেক গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কোন পাপ হবে না যদি মাহর নির্ধারণের পরে তোমরা পরস্পরে সম্মত হও।

এই আয়াত দ্বারা যারা মুতআ বিবাহ করার অর্থ গ্রহণ করে থাকে তারা এই অভিমত পোষণ করে থাকে যে, যখন নির্ধারিত সময় অতিক্রম করবে আর তারপরে তার মেয়াদ বৃদ্বি করলে কোন পাপ নেই।  সুদ্দী(রঃ) বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি বৃদ্বি না করে তাহলে বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে আর তারা পরস্পরে পৃথক থাকবে। এরপরে এক ঋতু অতিক্রম হলে পরে পুনরায় একসাথে থাকতে পারবে।

আর যারা এর অর্থকে মুহর হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা এর স্বপক্ষে এই দলীল পেশ করে থাকে যে,[নিসাঃ৪]

তবে স্ত্রী যদি মাহরের অধিকার লাভ করার পরে যদি সম্পূর্ণরুপে মাফ করে দেয় তাহলে তা এখানে কারও পাপ নেই।

এখানে হাযয়ারামী(রঃ) বলেন, লোকজন নিজেরাই মাহর নির্ধারণ করে থাকে। এই অবস্থায় যদি স্ত্রী তার প্রাপ্য মাফ করে দেয় দারিদ্র্যতার কারণে তাহলে তাতে কোন গুনাহ নেই। ইবন জারীর(রঃ) এ মতামত গ্রহণ করেছেন।

ইবন আব্বাস(রঃ) বর্ণনা করেন  যে, এই আয়াতের মূল কথা হল তাদেরকে পুরোপুরি মাহর দিয়ে দেওয়া।এরপর তার সাথে থাকা বা পৃথক করে দেওয়া।

এরপরেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ শরীয়াতের যেসকল বিষয়াবলী প্রদান করেছেন তার ভিতর সূক্ষ্ণ তত্ত্ব ও নিপুণ কৌশল আছে যা আল্লাহই ভাল জানেন।

নুরুল কুরআন

মুহসানাত বলতে ঐসকল স্ত্রী যাদের স্বামী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ব করা হয়েছে। কিন্তু স্বামী তালাক প্রদান করলে কিংবা তালাকের পরে এক ইদ্দত পালন করলে তারা জায়েয হয়ে যায়।

যেসকল স্ত্রী হিজরত করে চলে আসে আর মক্কায় তাদের কাফির স্বামী থেকে যায় তাদের সাথে মুসলিমের বিবাহকে এখানে বৈধ করা হয়।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত রিওয়য়াআতে এসেছে যে, এটি মূলত হুনায়নের যুদ্বের সময় কিছু বন্দী মহিলাকে বিবাহের উদ্দেশ্য নাযিল হয়।

ইমাম মুহাম্মাদ(রাঃ) এর মতে, এক বছরের খিদমতের জন্যে মুহর নির্ধারিত হবে। যদি এর স্থাওলে এমন চুক্তি হয় যে, স্বামী স্ত্রীর সেবা করবে তাহলে তা খেলাফ হবে। বস্তুর বিনিময় হিসেবেও তা নির্ধারণ করা যায়।



২৬

কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে যে, হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের উপর হালাল-হারাম স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে চান। যেমইন এ সূরায় ও অন্যান্য সুরায়ে তা করা করা হয়েছে। তিনি তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের লোকদের প্রশংসনীয় পথে চালাতে চান, যেন তোমরা তার শরীয়াতের উপর আমল করতে থাক যে কাজ তার কাছে প্রিয় ও যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করতে চান। যে পাপ ও অন্যায়কাজ থেকে তোমরা তাওবা করবে তা তিনি অচিরেই গ্রহণ করবেন। তিনি মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময় আর তিনি স্বীয় শরীয়াত,স্বীয় অনুমানে, স্বীয় কার্যে ও স্বীয় ঘোষণায় তিনি সঠিক জ্ঞান ও পূর্ণ নিপুনতার অধিকারী।

নুরুল কুরআন

মুহাম্মদ(সাঃ) এর আগমনের পূর্বে যেসকল শরীয়াত চালু হয়েছে, তার কোন কিছু যদি বাতিল না হয় তাহলে তা আমাদের জন্যেও বাকী আছে তবে তা কুরান-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। ইয়াহূদীদের দ্বারা তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

আব্বাসী

পূর্ববর্তীদের জন্যে দাস হারাম থাকেলও তা মুসলিমগণের জন্যে হালাল করা হয়েছে। আর প্রয়োজন ছাড়া তাদের বিবাহ করা হারাম সে ব্যাপারে আল্লাহর প্রজ্ঞা রয়েছে এখানে।



২৭

প্রবৃত্তির পূজার অনুসারীগণ তথা শয়তানের দাস ইয়াহূদী ও নাসারারা এবং অসৎ লোকেরা তোমাদের নীচু করে তোমাদের সত্য ও সরল পথ থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্যায় ও অসত্যের পথে চালাতে চায়।

নুরুল কুরআন

এখানে ভোগবাদী বলতে ব্যভিচারীদের, কারও মতে অগ্নি উপাসকদের কারণ তারা মুহরামা নারীদের হালাল করেছেন, আবার কারও মতে ইয়াহূদীগণ কারণ তাদের কাছে ভাগ্নী-ভাতিজী সকলে হালাল ছিল।

আব্বাসী

ইয়াহূদীগণ বৈমাত্রীয় বোনদের বিবাহের মাধ্যমে এক চরম ফিৎনা শুরু করেছিল আর এভাবে করেই তারা স্বিয় প্রবৃত্তির তাড়ানায় অন্যায় কাজ করেছিল।



২৮

আল্লাহ শরীয়াতের আহাকাম নির্ধারণের ব্যাপারে তোমাদের পথ সহজ করতে চান এবং এর উপর ভিত্তি করেই কতগুলো শর্ত আরোপ করে যেখানে দাসীদের বিবাহ করা বৈধ করা হয়েছে। মানুষ জন্মগতভাবেই দূর্বল তাই মহান আল্লাহ স্বীয় আহকামের ভিতর কোন কাঠিন্য রাখেন নাই। মানুষ সৃষ্টিগতই দূর্বল বলে তার আকাঙ্ক্ষা ও প্রবৃত্তি দূর্বল। তারা স্ত্রীডের ব্যাপারে দূর্বল। তারা এখানে এসে একেবারেই বোকা হয়ে যায়।

আর এই কারণেই যখন মিরাজের রাত্রিতে প্রথম ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয় ।এরপরে ফিরস আসার সময়ে মূসা(আঃ) এর সাথে তার সাক্ষাৎ হলে পরে তিনি উম্মাতের দূর্বলতার কথা উল্লেখ করে তাকে তা আরও কমাতে বলেন।এরপরে তা কমাতে কমাতে দশ ওয়াক্ত করা হয়। এরপরে তাও মূসা(আঃ) কমাতে বলেন। এরপরে তিনি তা কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে নিয়ে আসেন।  

আব্বাসী

মানুষ নারীদের ব্যাপারে অত্যন্ত দূর্বল তাই দাস বিবাহের ব্যাপারটি হালকা করতে দিতে চান।

নুরুল কুরআন

এখানে শুধু বিবাহের জন্যেই নয় বরং এখানে সামগ্রিকভাবে শরীয়াতকে সহজ করা হয়েছে তাই বলা হয়েছে।

মাযহারী

কিয়ামত যত সন্নিকটে আসবে মানুষ দূর্বল হতে থাকবে।তাই এদের জন্যে শরীয়াতকে বেশী করে সহজ করে দেওয়া হবে।



৩২

উম্মে সালমা(রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে আফসোস করে বলতে লাগলেন যে, পুরুষেরা যেখানে জিহাদে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় সেখানে নারীরা সেই সাওয়াব থেকে বঞ্চিত। আবার মীরাসেও তারা দ্বিগুণ হয়। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এরপরেই আবার এই আয়াতটি নাযিল হয়ঃ আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরসপর এক। [ইমরানঃ১৯৫]

অন্য এক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, একজন নারী এমন আশা করেছিল যে, আমরা যদি পুরুষ হতাম তাহলে আমরা জিহাদে অংশগ্রহণ করার সুযোগ লা ভকরতে পারতাম। আবার অন্য এক ঘটনা থেকে জানা যায় যে, দেখুন তো পুরুষ তো দুইজন নারীর সমান পায় আর দুইজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষ সাক্ষ্যের সমান তাই তা আমলেও এক কি এমন হয় না পুরুষের একটি পূণ্য আর মহিলার অর্ধ পূণ্য। তখন এ আয়াত খানি নাযিল হয়।

সুদ্দী (রঃ) বলেন, পুরুষেরা বলে আমরা দ্বিগুণ অংশ পাই তাই আমরা দ্বিগুণ সাওয়াবের অধিকারী হব না কেন? ঐদিকে নারীগণ বলতে থাকে, আমাদের উপর তো জিহাদ ফরয হয় নাই, আমরা কীভাবে শাহাদাতের সাওয়াব লাভ করতে পারি? তখন এতে আল্লাহ উভয়কে বাঁধা প্রদান করেন আর বলেন তোমরা আমার অনুগ্রহ করতে থাক।

ইবন আব্বাস(রাঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন কারও সন্তান কিংবা মাল দেখে এমন আকাঙ্ক্ষা কেউ না করে যে, আমার যদি এ পরিমাণ সন্তান কিংবা মাল থাকত। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন,দুই ব্যক্তি ছাড়া কাউকে হিংসা করা জায়েয নেই। তা হল যাকে আল্লাহ প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করেছেন আর সেই ধন-সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সুযোগ প্রদান করেছেন এবং যাকে আল্লাহ প্রচুর জ্ঞান দান করেছেন আর সেই জ্ঞানের উপর সে নিজে আমল করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়। কেননা এই দুই ব্যক্তি পূণ্য লাভের ব্যাপারে সমান।এ পূণ্যের ব্যাপারে ঈর্ষা করা দুষণীয় নয়।এটা প্রশংসনীয় আর এটা করার ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশ জ্ঞাপন করেছে। কিন্তু এমন নিয়ত করাও ঠিক না যে তার থেকে তা সরিয়ে তাকে দেওয়া হোক তাকে নিজেকে দেওয়া হোক।  তাই এমনভাবে ইহলৌকিক ও পারলৌকিকভাবে এমন ধরনের অনুগ্রহ কামনা করা নিষিদ্ব।

এরপর আল্লাহ তায়ালা বলতে চাচ্ছেন যে, সকলকে তাদের কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে। ভাল কাজের প্রতিদান ভাল আর মন্দ কাজের প্রতিদান মন্দ হবে। আবার তার ভাবার্থ এমন হতেও পারে যে, সকলকে তাদের হক অনুযায়ী উত্তরাধিকার প্রদান করা হবে।

এরপরেই ইরশাদ হচ্ছে যে, তোমরা আমার কাছে অনুগ্রহ চাও আমি তা দিব। কারণ আমি দাতা আমি দান করব আর দান করলে অনেক কিছুই করব।আমি দেওয়ার ব্যাপারে মোটেও কৃপণ নই।

তাই রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, হে জ্ঞানমণ্ডলী! আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ চাও। তার কাছে চাওয়া তিনি খুব পছন্দ করেন। জেনে রেখ যে, সবচেয়ে বড় ইবাদত হল প্রশস্ততা ও করুণার জন্যে অপেক্ষা করা এবং তার প্রতি আশা রাখা। 

অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, এরুপ আশা পোষণকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন। আল্লাহ হচ্ছেন মহাজ্ঞানী। কে ধনী হওয়ার যোগ্য আর কে দরিদ্র্য হওয়ার যোগ্য, কে পারলৌকিক নিআমতের দাবীদার, আর কে সেখানে লাঞ্ছিত হওয়ার যোগ্য তা তিনিই খুব ভাল জানেন। তাকে তিনি তার আসবাব ও মাধ্যমে জোগাড় করে দেন এবং তার জন্যে তা সহজ করে দেন।

মাযহারী

পুরুষদের এই প্রাপ্তি হল প্রাকৃতিক যোগ্যতা যা আল্লাহ হতে প্রাপ্ত, আর আল্লাহ তা তার হিকমত ও কর্মকৌশুল অনুযায়ী তারতাম্য করেছেন।

আব্বাসী

কোন ভাইয়ের রিযিকের প্রতি লোভ না করে এই দুয়া করা তাকেও উত্তম রিযিক দিন আমাকেও তা প্রদান করুন।



৩৩

বহু মুফাসসিরীন বলে থাকেন যে, এখানে মাউয়ালী অর্থ হল উত্তরাধিকারী।আবার কারও মতে তা হল আসাবা। পিতৃব্য পুত্রদের মাউলা বলা হয়। তাহলে এই আয়াতের ভাবার্থ হল এই যে, হে লোকসকল! তোমাদের ভিতর থেকে যাদের সাআবা করা হয়েছে তাদের জন্যে কিয়দংশ তোমাদের পিতামাত ও আত্মীয়স্বজনদের জন্যে ছেড়ে দাও।যার যারা তোমাদের মুখের ভাই তাদেরকেও প্রদান কর। যেমন শপথের সময় তোমাদের ভিতর অঙ্গীকার হয়।

এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগের নিয়ম ছিল।কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু একথাও বলা হয় যে, তাদের যে অঙ্গীকার দেওয়া হয়েছে তা ভুলে গেলে চলবে না।কিন্তু মীরাস তারা পাবে না। ইবন আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, এখানে মাউলী হল উত্তরাধিকারগণ। আর পরবর্তী বাক্যের ভাবার্থ হল যেসকল মুহাজিরগণ মদীনায় যেয়ে সেখানে আনসারদের ভাই করে উত্তরাধিকার করতেন আর আনসারদের আত্নীয়-স্বজন তাদের উত্তরাধিকার হত না। তাই এ আয়াত দ্বারা উক্ত প্রথ রহিত হয়ে যায় এবং তাদেরকে বলা হয় তোমরা তোমাদের ভাইদেরকে সাহায্য কর,তাদের উপকার কর এবং মঙ্গল কামনা কর। কিন্তু তারা তোমাদের মীরাসের অংশ পাবে মা। তবে তাদের অসীয়ত করে যাও।

ইসলামের পূর্বে প্রথা ছিল এমন যে, দুই ব্যক্তি অঙ্গীকারে আবদ্ব হয়ে বলতো আমি তোমার উত্তরাধিকারী। এভাবে করে আরব গোত্রগুলো অঙ্গীকার ও চুক্তিতে আবদ্ব হয়ে পড়তো।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, অজ্ঞতার যুগের শপথ ও অঙ্গীকার ও চুক্তিতে ইসলাম আরও দৃঢ় করেছে। কিন্তু ইসলামে শপথ ও এ প্রকারের আহাদ ও অঙ্গীকার নেই। ঐগুলোকে এ আয়াতটি রহিত করে দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে যে, চুক্তিতে আবদ্ব ব্যক্তিদের তুলনায় আত্মীয়স্বজনগণ আল্লাহর কিতাবের নির্দেশক্রমে বেশী উত্তম।

ইমাম জারীর তাবারী(রঃ) হযরত আব্দুর রহমান ইবন আউফ(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, আমি বাল্যকালে মুতায়্যাবাইনের শপথের সময় আমার মাতুলদের সাথে ছিলাম। তাই আমি লাল উট পেলেও সে শপথকে ভেঙ্গে দেওয়া পছন্দ করতাম না। 

ইবন আব্বাস(রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ইসলামে শপথ নেই এবং অজ্ঞতা যুগের প্রত্যেক শপথকে ইসলাম আরও দৃঢ় করেছে। যদি আমাকে লাল উটও দেওয়া হয় আর ঐ শপথকে ভাঙতে বলা হয় যা দারুন নাদওয়ায় করা হয় তা করতেও আমি পছন্দ করব না।

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এখানে কুরায়শ ও আনসারদের ভিতর যে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তা ছিল কেবল ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্যে।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, অজ্ঞতার যুগে যে শপথ হয়েছিল তা আঁকড়ে ধরবে আর ইসলামে কোন কসম নেই।

উম্মে সালমা(রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন প্রকাশ্যে ঘোষণা প্রদান করেছেন যে, ইসলামে হলফ নেই কিন্তু অজ্ঞতার যুগের হলককে তা আরও সুসংহত করেছে।

একটি দূর্বল রিওয়ায়াত থেকে বর্ণিত হয় যে, আবূ বকর(রাঃ) এর পুত্র আব্দুর রহমান যখন ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় তখন তাকে উত্তরাধিকার কতে যেতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তখন তা নিষেধ করার জন্যে এ আয়াত নাযিল হয়।

মূলত এখনও এইসকল আয়াত ও হাদীসসমূহ খণ্ডন করে হানাফীগণ এই অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, শপথ ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে উত্তরাধিকার করা যাবে। আহমাদ বিন হাম্বল থেকেও অনুরুপ একটি মতামত পাওয়া যায়। শাফিঈ(রঃ), মালিক(রঃ) ও আহমাদ(রঃ) এর একটি প্রসিদ্ব মাযহাব এর বিরোধীতা করে ঐসকল হাদীসসমূহের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে থাকে।

কারণ কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সঠিক উত্তরাধিকার হল তার আত্মীয়-স্বজনগণ। কারণ সহীহাইনে বর্ণিত হয়েছে যে, ইবন আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, অংশীদার উত্তরাধিকারগণ তাদের অংশ মুতাবিক অংশ দিয়ে বাকী যা থাকবে তা আসাবাগণ পাবে। উত্তরাধিকার তারাই যাদের কথা কুরআনে বলা হয়েছে। আর যাদের সাথে তোমরা দৃঢ়চুক্তিতে আবদ্ব হয়েছ তাদেরকেও মীরসাস দাও।

অর্থাৎ এরপরে যে হলফ হয় তা আর ক্রিয়াশীল মনে  করা হবে না।আবার এও বলা হয়েছে যে, অঙ্গীকার ও শপথ এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই হোক বা পরেই হোক নির্দেশ একই যে, যাদের সাথে অঙ্গীকার হবে তারা মীরাস পাবে না। ইবন আব্বাস(রাঃ) এর ভাষ্যানুযায়ী এখানে তাদের অংশ হল তাদের প্রতি দয়া-সহানুভূতি, মঙ্গল কামনা ও অসীয়ত-মীরাস নয়। তিনি বলেন যে, জনগণ যে চুক্তি করত তাদের ভিতর যে প্রথমে মারা যাবে অপরজন তার ওয়ারিস হবে। তাই আল্লাহ ঘোষণা প্রদান করেন, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগণের মধ্যে যারা আত্নীয়, তারা পরস্পরে অধিক ঘনিষ্ঠ। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও, করতে পার। [৩৩:৬] অর্থাৎ তাদের ১/৩ অসীয়ত করা বৈধ করা হতে পারে।

এখানে সাঈদ বিন যুবায়র(রাঃ) বলেন তাদেরকে একটি অংশ ছেড়ে দাও,অর্থাৎ এর ভাবার্থ হল মীরাস। আবূ বকর(রাঃ) একটি লোককে স্বীয় মাউলা বানান এবং তাকে উত্তরাধিকার করেন। ইবন মুসায়াব বলেন, এই আয়াতটি তাদের জন্যে নাযিলহ হয়েছে যারা নিজেদের আত্মীয়দের উত্তরাধিকার না করে অন্যদের মীরাস দান করে দিত। তাই তাদেরকে মীরাস না দিয়ে অসিয়তের মাধ্যমে তা দিতে বলেছেন। আল্লাহ মুখের পালিত পুত্রদের এভাবে করে অসীয়ত প্রদান করতে বাঁধা প্রদান করেছেন।

তাই ইমাম জারীর(রঃ) বলেন, তাদেরকে তাদের অংশ দাও এবং এর দ্বারা তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। একে-অপরের প্রতি অঙ্গিকার প্রদানের ব্যাপারে যে সহানুভূতি ছিল তা প্রকাশ করা।

নুরুল কুরআন

হাকীমুল উম্মাতের কথা হল যারা প্রকৃত উত্তরাধিকার তাদেরকে সকল সম্পদ দিতে হবে আর যারা চুক্তিবদ্ব তাদের তা দিতে হবে কিন্তু ১/৬ অবশিষ্টাংশ হিসেবে দেওয়া যায়।

মাযহারী

যুবিল আরহামের কেউ থাকলে চুক্তি বাতিল হবে। কিন্তু যদি চুক্তিবদ্ব ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ না থাকে তখন তা বায়তুল মালে যাওয়ার চেয়ে চুক্তিবদ্ব ব্যক্তির হাতে যাওয়া অধিক যুক্তিসম্মত।



৩৪

এখানে বলা হচ্ছে যে, পুরুষ হল স্ত্রীদের নেতা। সে স্ত্রী সোজা ও ঠিক রাখবে। কেননা  পুরুষ হল স্ত্রীদের উপর মর্যাদাশীল। এ কারণেই নবুয়াত কেবল পুরুষদের মাঝে সীমাবদ্ব করা হয়েছে। সেখানে খলীফার দায়িত্ব কেবল পুরুষদের ভিতর রাখা হয়েছে। বিচারক হওয়ার যোগ্যতা কেবল পুরুষদের রয়েছে। নারীদের তা নেই। কারণ হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, সেজাতি কখনও মুক্তি পাবে না যেজাতির নেতৃত্ব কোন নারী প্রদান করবে।

আর নারীদের  উপর পুরুষদের মর্যাদার আরেকটি কারণ হল তারা স্ত্রীদের জন্যে খরচ করে থাকে। সে খরচের দায়িত্ব কুরআন-সুন্নাহের নির্দেশ। তাই জন্মগতভাবেই পুরুষ নারীর উপর মর্যাদা রাখে। তাই স্ত্রীকে পুরুষের উপর নেতা করা হয়েছে। আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন, আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। [২:২২৮]

ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, নারীদেরকে পুরুষের আনুগত্য করতে বে এবং তাদের কাজ হল সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং স্বামীর মালের হিফাযত করা।

হাসান বসরী(রঃ) বলেন, একবার এক মহিলা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে এসে এই অভিযোগ পেশ করে যে, তার স্বামী তাকে চড় মেরেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাকে পাল্টা চড় মারতে বললে পরে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। আর তাকে প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলেন।

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, একজন আনসারী সাহাবী(রাঃ) তার স্ত্রীকে নিয়ে উপস্থিত হন। তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল(সাঃ)! আমার স্বামী আমাকে চড় মেরেছে। ওর চিহ্ন আমার ভিতর বিদ্যমান আছে। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তখন বলেন এ অধিকার তার ছিল না। সেখানেই সেই আয়াত নাযিল হয়। তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, আমি চাই একরকম আর আল্লাহ চান অন্যরকম।

শাবী(রঃ) বলেন, এখানে মাল খরচ হল মাহর আদায় করা। যদি স্ত্রীর বিরুদ্বে স্বামী ব্যভিচারের অভিযোগ উত্থাপন করে তাহলে সেখানে লিআন হবে আর যদি স্ত্রী করে তা প্রমাণ না করতে পারলে তার উপর চাবুক মারা হবে। তাই স্ত্রীদের ভিতর তাদেরকেই সতী সাধবী বলা হয়েছে, যার নিজের স্বামীর রক্ষণাবেক্ষণ করবে, সন্তান লালন-পালন করবে ও স্বামীর মালের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। 

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, তোমাদের ভিতর ঐ নারী উত্তম যে তার স্বামীর দিকে সুনজরে তাকায়, সে যা নির্দেশ দেয় তা পালন করে,স্বামী যখন বিদেশে যায় তখন অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে আর স্বীয় মালের হিফাযত করে।

এরপরে তিনি উক্ত আয়াতটি পাঠ করেন। আব্দুর রহমান বিন আউফ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, রমযান মাসে সাওম পালন করবে, স্বামীর কথা মেনে চলবে এবং স্বীয় মালের হিফাযত করবে তাকে বলা হবে জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর।

এরপরেই আল্লাহ নির্দেশ প্রদান করছেন যে, যদি স্ত্রীরা তোমাদের অবাধ্যতা করে তাহলে তাদেরকে ভালমত বুঝাতে হবে।তারা অন্যায় আচরণ করলে তাদেরকে উত্তম উপদেশের মাধ্যমে বুঝাতে হবে যাতে করে তাদের ভিতর তাকওয়া সৃষ্টি হয়। তাদেরকে বলতে হবে স্বামীর প্রতি কি কি অধিকার রয়েছে। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, আমি যদি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদাহ করতে বলতাম তাহলে একজন স্ত্রীকে তার স্বামীকে করতে বলতাম।

আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, যখন কেউ তার স্ত্রীকে বিছানায় আসার প্রতি আহবান জানায় আর যদি সে তাতে অস্বীকৃতি জানায় সকাল পর্যন্ত ফেরেশ্তারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। [বুখারী]

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, যে স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে স্বামীর শয্যা ত্যাগ করে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের ফেরেশ্তা তার উপর অভিশাপ দিতে থাকে। [মুসলিম]

বিছানা হতে পৃথল করার অর্থ কি তার ব্যাখ্যায় ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, এখানে এর মানে হল এই যে স্ত্রীর সাথে শয়ন করবে কিন্তু পার্শ্ব পরিবর্তন করবে, তার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিবে। এটি হবে তারজন্যে এক বড় শাস্তি। কোন কোন তাফসীরকারক যদিও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, এর দ্বারা এ বুঝানো হয়েছে বিছানাকে পৃথক করে দেওয়া।

একবার রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, একজন স্বামীর উপর স্ত্রীর কি কি হক রয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, যখন তুমি যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে, তুমি যা পরবে তাও তুমি পরাবে, গালি দিবে না, ঘর থেকে বের করে দিবে না, ক্রোধের সময় শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে কথা বন্ধ কর তারপরেও তাকে পৃথক করবে না। 

সহিহ মুসলিমে এসেছে বিদায় হাজ্জ্বের দিন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তারা তোমাদের সেবিকা ও অধীনস্থা। তাদের উপর তোমাদের হক এই যে, যাদের যাতায়াতে তোমরা অসন্তুষ্ট তাদেরকে আসতে দিবে না,যদি এমন না করে তাহলে তাদেরকে যেন-তেনভাবে সতর্ক করতে পার। কিন্তু কঠিনভাবে প্রহার করবে না যাতে প্রহারের চিহ্ন প্রকাশ পায়। এমনভাবে প্রহার করবে না যাতে তার কোন অঙ্গ ভেঙ্গে যায় বা আহত হয়।

ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, এরপরেও যদি সে বিরত না হয় তাহলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তালাক দাও। একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, তোমরা আল্লাহর দাসীদের উপর অত্যাচার করবে না। তখন উমার(রাঃ) বলেন, আপনার একথা শুনার পরে আমাদের স্ত্রীগণ খুব বেশী বীরত্ব প্রকাশ করছে। তখন অনেকে মারপিট শুরু করলে পরে অনেক নারী অভিযোগ করলে তিনি তাকে জানান যে, তাদের উপর স্বামীগণ প্রহার করছে। এরপরে নবী করিম(সাঃ) ইরশাদ ফরমান, জেনে রেখ যারা স্ত্রীদের উপর শক্তি প্রয়োগ কর তারা ভাল মানুষ নয়। [আবূ দাউদ]

আল্লাহ মহীয়ান ও সমুন্নত অর্থাৎ, যদি নারীদের পক্ষ থেকে দোষত্রুটি প্রকাশ না পায় বা তা প্রকাশ না পেয়ে যদি প্রকাশ পাওয়ার পরে যদি সংশোধন হয় এরপরেও যদিও তাকে প্রহার করতে থাকে তাহলে তাকে সাহায্য করার জন্যে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে আল্লাহ আছেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমতাবান।

নুরুল কুরআন

সাদ স্ত্রী ছিলেন খাওলাহ। তাকে সাদ চড় মারলে খাওলাহ তার পিতার কাছে অভিযোগ করলে মুহাম্মদ(সাঃ) প্রতিশোধ গ্রহণ করার কথা বলেন,তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

পুরুষ স্ত্রীর  উপর কারণ ঈদের সালাত,জুময়া,পুরো রমযানে সাওম, সালাত সকল অবস্থায় ফরয,একাধিক বিবাহ করার সুযোগ।ইমাম রাজী বলেন, শক্তি ও ইলমের জন্যে পুরুষ শ্রেষ্ঠ।

দৈহিক অবয়বঃ

অঙ্গ               পুরুষ               নারী

হৃৎপিণ্ড            ৬০ গ্রাম বড় 

শ্বাস-প্রশ্বাস          ১১ গ্রাম                 ৬ গ্রাম

ঘ্রাণশক্তি           ২               ১

ব্রেইন             ১/৪০(সমগ্র দেহের)       ১/৪৫

আল্লাহ সর্বশক্তিমান এর ব্যাখ্যা

তোমরা তাদের উপর অত্যাচার কর না, কারণ তিনি শক্তিমান

তিনি সর্বশক্তিমান হলেও তোমাদের ক্ষমা করেন তাই তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের অপরাধ ক্ষমা কর।

মাযহারী

স্বামীর সম্পদ হল স্ত্রীর সম্পদ।

এখানে অপরাধ লঘু হলে পরে লঘু প্রহার আর যদি তা বেশী হয় তাহলে বেশী শাস্তি দিতে হবে তার অবাধ্যতার পরিমাণ অনুযায়ী। সেযদি ফরয গোশল না করে, সালাত আদায় না করে তাহলে তাকে বেশী প্রহার করতে হবে।



৩৫

যখন স্বামী-স্ত্রীর ভিতর পারস্পারিক মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে তার সমাধান যদি নিজেদের ভিতর করতে না পারে তাহলে তাএর ভিতর হতে একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক নিযুক্ত করতে হবে তাদের মধ্যকার সমস্যার সমাধানের জ্যনে। তিনি অত্যাচারীকে অত্যাচার না করার ব্যাপারে চেষ্টা করবেন। যদি তিনি সন্তোষজনক কোন কাজ না করতে পারেন তাহলে তিনি দুই পক্ষ থেকে দুই জন সালিশ নিযুক্ত করবেন। তারা যদি তাদের ভিতর মিলন ঘটাতে পারে তাহলে তার সমাধান দিয়ে দিবে।আর যদি তারা মিলন ঘটাতে না পারে তাহলে তারা বিচ্ছেদ ঘটাবেন। আমাদের প্রিয়নবী(সাঃ) যেহেতু সর্বদা এমনভাবে কাজ করেছেন তারা জন্যে প্রথমে তারা মিলনের জন্যেই প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। আর যদি দেখেন যে, স্বামীর ভিতর দোষ বেশী তাহলে তাকে বলা হবে তাকে স্ত্রী থেকে পৃথক রাখা হবে আর বলা হবে যে চরিত্র ঠিনা না করা পর্যন্ত আলাদা থাকবে যতদিন পর্যন্ত পৃথক থাকবে ততদিন পর্যন্ত তাকে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ বহন করতে হবে। আর যদি স্ত্রী দুষ্টু চরিত্রের অধিকারী হয় তাকে বলা হবে সে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাকে যেন আলাদা করা হয় আর তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা স্বামী না করে। বিচারকদ্বয় যদি তালাক দিতে সম্মত জ্ঞাপন করে তাহলে স্বামী তালাক দিতে বাধ্য থাকবে আর যদি তারা তালাক প্রদান না করে একত্রে থাকার ব্যাপার অনুমতি প্রদান করে তাহলে তারা পরস্পর একত্রে থাকবে। এমন একটি ঘটনা উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালে সঙ্ঘটিত হয়েছিল। আকীল(রাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন ফাতিমা বিন উৎবা(রাঃ)। তাকে একবার তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তার পিতা এখন কোথায় আছে? তখন তিনি তাকে জানান যে, জাহান্নামের বাম প্বার্শে। একথা শুনেই ফাতিমা(রাঃ) তার অনাবৃত কাপড়কে পরিধান করে ফেলে। তখন এ কথা উসমান (রাঃ) এর কাছে এসে বললে পরে তিনি সালিস করার জন্যে ইবন আব্বাস(রাঃ) ও মুয়াবিয়া(রাঃ) নিযুক্ত করেন। আব্বাস(রাঃ) তাদের ভিতর বিচ্ছেদ ঘটাতে চান কিন্তু মুয়াবিয়া(রাঃ) এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, আমি বনী আবদে মান্নাফের সাথে বিচ্ছেদ ঘটাতে না। তখন তারা দুইজন আকীল(রাঃ) এর বাড়িতে যান। তারা দেখলেন তাদের ঘর দরজা দিয়ে আটকানো আর তারা দুইজনে সেখানে আছেন।পরে তারা ফিরে আসেন। এরপরে আরেকটি ঘটনা এমন রয়েছে যে, আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে এমন একটি ঘটনা সঙ্ঘটিত হয়।তখন তিনি দুইজন সালিশ নিযুক্ত করে দেন। এরপরে তিনি সালিশদ্বয়কে বলে দেন যদি তোমদের কাজ হল তাদের একত্র করা অথবা তাদের ভিতর বিচ্ছেদ ঘটনো। একথা শুনে  



৩৭

বলা হচ্ছে যে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে মাল খরচ করতে কার্পণ্য করে, অর্থাৎ, স্বীয় পিতামাতা,আত্মীয়-স্বজন,পিতৃহীন, দরিদ্র্য, সম্পর্কযুক্ত ও সম্পর্কবিহীন প্রতিবেশী,মুসাফির ও দাস-দাসীকে অভাবের সময় আল্লাহর জন্যে দান করতে কার্পণ্য করে, শুধু তাই নয় বরং লোকদের কার্পণ্য শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ না করতে পরামর্শ দেয় তাদের জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, কার্পণ্য হতে বড় রোগ আর কি হতে পারে? হে মানবমণ্ডলী! তোমরা কার্পণ্য হতে বেঁচে থাক। এটাই তোমাদের পূর্বপবর্তীদের ধ্বংস করে দিয়েছে। এর কারণেই তাদের ভিতর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নতা, অন্যায় ও দুষ্কার্য প্রকাশ পেয়েছিল।

এরপরেই বলা হয় যে, তারা দুটি দুষ্কার্যের সাথে আরও একটি দুষ্কার্যে লিপ্ত হয়।  আল্লাহ তায়ালা তাদের নিয়ামতসমূহ দেন তা প্রকাশ করেন। ঐগুলো না তাদের খাওয়া পরায় প্রকাশ পায়, না আদান-প্রদানে প্রকাশ পায়। যেমন অন্য জায়গায় বলা হয়-নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ।এবং সে অবশ্য এ বিষয়ে অবহিত।এবং সে নিশ্চিতই ধন-সম্পদের ভালবাসায় মত্ত। [আদিয়াতঃ৬-৮]

এখানেও বলা হয়েছে যে, সে আল্লাহর অনুগ্রহ গোপন করে। এরপরে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে যে, আল্লাহ তাদের জন্যে অপমানজনক শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। কুফর অর্থ হল গোপন করা ও ঢেকে দেওয়া। কৃপনও আল্লাহর নিয়ামতকে গোপন করে, এর উপর পর্দা নিক্ষেপ করে, অর্থাৎ ঐ নিয়ামতসমূহ অস্বীকার করে। তাই তারা নিয়ামত অস্বীকারকারী।

হাদীস শরীফে এসেছে, আল্লাহ যখন তার বান্দার উপর স্বীয় নিয়ামত দান করেন তখন চান যে, তার চিহ্ন যে উপরে প্রকাশ পায়।

সালফে সালিহীনদের কেউ কেউ এই অভিমত পোষণ করেছেন যে, এর দ্বারা ইয়াহূদীদের গোপন করার কথা বলা হয়েছে। তারা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর গুণাবলী সর্বদা গোপন করে রাখত। এই কারণেই পরে বলা হয়েছে, আমি কাফিরদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি অপমানজনক শাস্তি।

এই আয়াত যে ইয়াহূদীদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা গেলেও এখানে স্পষ্ট মালের কৃপনতার কথাই বলা হয়েছে। যদিও এর সাথে ইলমের কৃপণতা অন্তর্ভূক্ত হওয়ার ব্যাপারে অধিক যৌক্তিক। কারণ এই আয়াতে এ কথা স্পষ্টত বলা হয়েছে যে, এখানে আত্মীয়-স্বজন ও দূর্বলদের মাল প্রদানের কথাই বলা হচ্ছে। অন্যদিকে পরবর্তী আয়াতে লোকদেরকে দেখাবার জন্যে মাল প্রদানকারীদের নিন্দা করা হচ্ছে। এখানে বলা হয়েছে যে, তারা অসৎ উদ্দেশ্যে ও দুনিয়ার ফায়দা নেওয়ার জন্যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে।

নুরুল কুরআন

এই আয়াত নাযিল হয় হাই বিন আখতাব, রোফা বিন আমর বিন তাবূত, উসামা বিন হাবীব, রুফা বিন আমর সম্পর্কে। তারা নিজেরাও কৃপন ছিল আর মুসলিমগণে কৃপণ থাকতে বলত আর তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, দানবীর আবূ জাহল আল্লাহর দরবারে কৃপণ ইবাদতকারী হতে উত্তম।

জান্নাতে প্রবেশ করবে না তিন শ্রেণীর লোক যারা হল প্রতারক, অশান্তি সৃষ্টিকারী কৃপণ ও কারও প্রতি উপকার করে উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

মাযহারী

মুমিন ব্যক্তির ভিতর দুইটি জিনিস এক সাথে থাকতে পারে না যা হল কৃপণতা ও দুশ্চরিত্রা।



৩৮

এই রিয়াকারের ব্যাপারে হাদীসে ইরশাদ হয় যে,

কিয়ামতের দিনসর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হলো এমন ব্যক্তি, যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাজির করা হবেএবং আল্লাহ তার নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন। আর সে তাকে দেয়া সকল নিয়ামতের কথাস্বীকার করবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি আপনারপথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন: তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তো যুদ্ধকরেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে, এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলা হয়েছে। অতঃপর নির্দেশ দেয়াহবে, এবং তাকে টেনে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।  তারপর এমন ব্যক্তির বিচারকরা হবে, যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তিলাওয়াতকরেছে। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সেতা স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমিজ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহবলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এ জন্য যে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে।কুরআন তিলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে কারী বলবে। আর তা বলা হয়েছে।অতপর আল্লাহর নির্দেশে তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।তারপর বিচার করা হবেএমন ব্যক্তির, যাকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে সকল ধরনের সম্পদ দান করেছিলেন। তাকেহাজির করে আল্লাহ তার নিআমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে সকল  নেয়ামত স্বীকারকরবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, কী করে এসেছ? সে বলবে, আপনি যে সকল খাতে খরচ করাপছন্দ করেন আমি তার সকল খাতে সম্পদ ব্যয় করেছি, কেবল আপনারই জন্য। আল্লাহ তাআলাবলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীলবলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপকরা হবে।

অন্য এক হাদীসে এসেছে, আদী বিন হাতীমকে একবার রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, তোমার পিতা স্বীয় দান দ্বারা যা চেয়েছিল তা পেয়ে গেছে। 

অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আয়শা(রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আব্দুল্লাহ বিন জাদআন তো একজন ভাল লোক ছিলেন। তিনি দরিদ্র্য ও অভাবীদের সাথে উত্তম আচরণ করতেন, অনেক দাসকে আল্লাহর নামে মুক্ত করতেন। সে কি মুক্তি লাভ করতে পারবে না? তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন, না তা পারবে না।কারণ তাকে কোনদিন এ কথা বলতে শুনি নাই যে হে আল্লাহ! আমাকে কিয়ামতের দিন মাফ করে দিন।

এজন্যেই এখানেও আল্লাহ বলেন, তাদের আল্লাহ ও কিয়ামতের উপ বিশ্বাস নেই, তানাহলে শয়তানের ফাঁদে পড়তো না এবং খারাপকে ভাল মনে করত না। তারা শয়তানের সঙ্গী। তাই এক আরব কবি পাঠ করে থাকেনতোমরা মানুষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে না।জিজ্ঞাসা কর তার সাথী সম্পর্কে।প্রত্যক সাথী তার সাথীরই অনুসারী হয়।



৩৯

তাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নে,সঠিক পথে চলতে, রিয়াকারী পরিত্যাগ করতে ও ইখলাসের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে কিসে বাঁধা দিচ্ছে? তাতে তার কোন ক্ষতি নেই।বরং উপকার আছেই। কারণ এর ফলে পরিণাম ভাল হবে। তার আল্লাহের পথে খরচ করতে সংকীর্ণ মনোভাব প্রকাশ করছে কেন? তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার চেষ্টা করে না কেন? আল্লাহ তাদের খুব ভাল করেই জানেন। তাদের ভাল-মন্দ কাজের নিয়্যত আল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। যারা ভাল মানুষ আল্লাহ তাদের ভাল কাজ করার তাওফীক দান করেন আর যারা মন্দ তাদেরকে আল্লাহ তাদেরকে ভাল কাজের থকে ফিরিয়ে নেন। আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতকে বরবাদ করে দিবেন। আল্লাহ তা থেকে আমাদের আশ্রয় দান করুন।



৪০

এখানে আল্লাহ বলেন, তিনি কারও উপর অত্যাচার করেন না, কারও পূণ্য নষ্ট করেন না, আরও বৃদ্বি করে তার পূণ্য ও প্রতিদান কিয়ামতের দিন দান করবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট। [২১ঃ৪৭]

হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন। [৩১:১৬]

সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়।অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। [৯৯:৬-৮]

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শাফাতযুক্ত সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছেঃ অতঃপর আল্লাহ বলবেন ফিরে এসো এবং যার অন্তরে সরিষার দানার সমানও ঈমান দেখ জাহান্নাম থেকে বের করে আন। তাই বহু মাখলূক জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আবূ সাঈদ খুদরী(রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলতেন, তোমরা ইচ্ছে করলে কুরআনের নিশ্চয় আল্লাহ বিন্দুমাত্র অত্যাচার করেন না এ আয়াতটি পাঠ করে নাও।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা কোন দাস-দাসীকে আনয়ন করা হবে এবং একজন আহবানকারী হাশরের ময়দানের সকল লোককে শুনিয়ে উচ্চস্বরে বলবেন এ হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুক। যে কারও প্রাপ্য তার জিম্মায় আছে সে যেন তা নিয়ে যায়। সেদিন অবস্থা হবে এমন যে, স্ত্রীলোক চাইবে তার কোন প্রাপ্য পিতার উপর, মতার উপ্র, ভাইয়ের উপর, স্বামীর উপর থাকলে সে দৌড়িয়ে এসে নিয়ে যাবে। এরপরে তিনি অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্নীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। [২৩:১১০] উক্ত আয়াতটি তিলওয়াত করলেন। আল্লাহ তার স্বীয় হক ইচ্ছামত ক্ষমা করবেন।কিন্তু  মানুষের প্রাপ্য হক তিনি ক্ষমা করবেন না। তখন দাবীদারদেরকে বলা হবে তোমাদের যার যে প্রাপ্য তা আদায় করে নাও। এরপরে প্রত্যেক প্রাপ্য তার কাছে থেকে সকলকিছু আদায় করবে। সেদিন যেহেতু টাকা-পয়সার কোন লেনদেন থাকবে না। একে অপরে সৎকর্মের মাধ্যমে বিনিময় আদান-প্রদান করবেন। এরপরে যখন তার পূন্যসমূহ শেষ হয়ে আসবে তখন তার ব্যাপারে বলা হবে যে, দাবীদারের পাপসমূহ তার উপর চাপিয়ে দাও। অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশ কর। এখানে আবূ তালিবের জন্যে শাস্তি কমানো হবে।যেহেতু তিনি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন তাই তা কমে যাবে; আর অন্যান্য কাফিররাও শাস্তি পাবে।দুনিয়ার জীবনের শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবকিছুই তাদের শেষ। তারা আখিরাতের জীবনে অনন্তকাল শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতে তার কোন পূণ্য থাকবে না।

এখানে আজরুন আজীম বলতে জান্নাত বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাত দান করুক সেই কামনা সকলেই করি। আবূ হুরায়রা(রাঃ) বলেন, যে একটি পূণ্য করবে তাকে এক লাখ গুন সাওয়াব প্রদান করা হবে। এক ব্যক্তি শুনে বিস্ময়বোধ করে তা জানার জন্যে তাকে যেয়ে জিজ্ঞাসা করলে আবূ হুরায়রা(রাঃ) বলেন, তুমি কি এ আয়াত পাঠ কর নাই যে, যে উত্তম ঋণ দেয় আল্লাহ তাকে বহুগুণে বৃদ্বি করে দেন।অন্য এক আয়াতে রয়েছে, পরকালের তুলনায় ইহকালের আসবাব অতি নগণ্য। [৯:৩৮]

আল্লাহর শপথ আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে, একটি পূণ্যকে বৃদ্বি করে আল্লাহ দুই লাখ পূণ্য দান করেন।

নুরুল কুরআন

আল্লাহর রহমত তার গজবের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। [কুরআন]

মাযহারী

শাস্তি আল্লাহ সকলের জন্যে নির্ধারণ করে রেখেছেন।কাফিরদের যে শাস্তি হবে তা জুলুম হবে না বরং তা হবে সুবিচার।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ কোন মুমিন বান্দার সৎকর্ম নষ্ট করবেন না। তাকে দুনিয়াতে উত্তম রিযিক দেওয়া হবে আর আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দেওয়া হবে। আর কাফিরের সৎকর্মের প্রতিফল রিযিক আকারে দুনিয়াতে দান করবেন আখিরাত পৌঁছে পূণ্য পাওয়ার মত কোন ঙ্কে মাওল থাকবে না।

যারা মুমিন হবে তাদের আগুনে বেশী প্রজ্জ্বলিত করবে না। তাদের কারো অর্ধ হাটু আবার কারও পা পর্যন্ত শাস্তি হবে। অন্য মুমিনেরা তাদের চিনে ফেলবে আর উদ্বার করবে।


নবী(সাঃ) বলেন, কিছু লোককে জাহান্নামকে এমনভাবে উঠানো হবে যে তাদের কোন নেক আমইল ছিল না। তাদের গা কয়লার মত থাকবে। এরপরে আল্লাহ নামে সীলমোহর থাকবে। তাদের দেহ হবে চকচকে।  

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...