১
আল্লাহ
স্বীয় বান্দাদের মুত্তাকী হয়ে একমাত্র তার ইবাদত এবং তাকে ভয় করার নির্দেশ জ্ঞাপন
করছেন। অতঃপর আল্লাহ স্বীয় ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সকলকে একই ব্যক্তি তথা আদম(আঃ) থেকে সৃষ্টি
করা হয়েছে। আদম(আঃ) যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন তার বাম পাঁজরের পিছন থেকে হাও্যা(আঃ)কে
সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি জাগ্রত হয়ে তাকে দেখতে পান এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তার
প্রতি হাওয়া(আঃ) এর আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, স্ত্রীকে যেহেতু পুরুষ হতে সৃষ্টি করা হয়েছে
তাই তার প্রয়োজন এবং কামভাব সব কিছু পুরুষের ভিতর রাখা হয়েছে আর পুরুষকে মাটি দিয়ে
সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই তার প্রয়োজনকে
মাটির ভিতর রাখা হয়েছে। তাই তোমরা স্ত্রীদেরকে রুদ্ব রাখ। বিশুদ্ব হাদীসে বর্ণিত
আছে যে, স্ত্রীদের পাঁজর হতে
সৃষ্টি করা হয়েছে, আর সবচেয়ে উঁচু
পাজর হল বেশী বক্র। তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তার
ভিতর বক্রতা রেখে উপকার করতে চাও তাহলে তার উপকার করতে পারবে। এরপর আল্লাহ এই
দুইজন থেকে অসংখ্য নর-নারী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে দুনিয়ার চতুর্দিকে ছড়িয়ে
দিয়েছেন,যাদের কথা-বার্তা,রং,আকার,প্রকারে ভিন্নতা আছে। এরা যেমন এক সময় আল্লাহর অধীনে ছিলেন,অতঃপর এদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,তেমনিভাবে এক সময় এদের একত্রিত করা হবে এবং নিজের দখলে নিয়ে
আসবেন এবং একটি মাঠে জমা করবেন। তাই আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং ইবাদত করতে হবে।
তোমরা সেই আল্লাহর নামে একে অপরের নামে দোহাই করতে থাক। যেমন কেউ বলে, আমি আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আত্মীয়তাকে মনে
করে দিয়ে তোমাকে এ কথা বলছি। মুজাহিদ(রঃ) বলেন, তার নামে শপথ করে থাক ও দৃঢ় অঙ্গীকার করে থাক। তোমরা
আল্লাহকে ভয় করতঃআত্মীয়তার রক্ষণাবেক্ষণ করে ওর বন্ধন ছিন্ন কর না বরং যুক্ত রাখ।
একে অপরে সদ্ব্যব্যবহার কর। আল্লাহর নামে ও আত্মীয়তার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা
প্রত্যেকটি কাজে তত্ত্বাবধানে আছেন। যেমন অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের উপর সাক্ষী রয়েছেন।
বিশুদ্ব হাদীসে রয়েছে, তোমরা এমনভাবে
ইবাদত কর যে, তুমি আল্লাহকে
দেখছো আর তানা হলে মনে করবে যে, তুমি আল্লাহকে
দেখছ। এর মূল কথা হল তার প্রতি তোমরা মনোযোগী হও যিনি তোমার চলা-ফেরা,উঠা-বসা প্রত্যেকটি অবস্থায় তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ
করছেন।এখানে আল্লাহ বলেন, হে লোকসকল!
তোমাদের একই মা-বাবার মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই তোমরা একে অপরের প্রতি
প্রেম-প্রীতি বজায় রেখ, দুর্বলদের প্রতি
সহায়তা কর এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। সহীহ মুসলিম শরীগের হাদীসে এসেছে যে, মুযার গোত্রের লোকেরা যখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর
কাছে আসেন তখন তারা একটি চাদর দিয়ে তাদের গা আবৃত করে রেখেছিল; কারণ তাদের গায়ে কাপড় পর্যন্ত ছিল না; তখন সেইদিন যুহরের সালাত আদায় করা শেষে
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) উপরোক্ত আয়াত তিলওয়াত করলেন এবং বললেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং
প্রত্যেকে জেনে রাখে যে, আগামীকাল তার জন্য
কি পাঠানো হয়েছে? [হাশরঃ১৯]
তিনি
এভাবে করে লোকদের দানের ব্যাপারে উৎসা দান করলেন। তাদেরকে(দরিদ্যদেরকে) লোকেরা দান
করলেন এবং তাদেরকে স্বর্ণ,রৌপ্য,খেজুর দান করলেন।
নুরুল
কুরআন
এ
আয়াতে আল্লাহ পাককে ভয় করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন।কারণ তাকে ভয়
না করলে মানুষ আদর্শ থেকে দূরে সরে যেতে পারে। এ আয়াতের মূল কথা হল এই যে, মানুষকে তিনি আল্লাহ যিনি এক ব্যক্তি অর্থাৎ
আদম(আঃ) হতে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ একে অপরের প্রতি সম্মান দেখাবে
আর কোন ধরনের বর্ণ-বৈষম্য করবেন না। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলাম
বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন,
যে
রিযিকের প্রাচুর্য কামনা করে আর চায় যে দীর্ঘজীবি হোক তাহলে তার উচিৎ যে, তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে উত্তম আচরণ করুক।
আল্লাহর
কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হল তাকে ভয় করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা।
আল্লাহ
দুই শ্রেণীর ব্যক্তির প্রতি কিয়ামতের দিন দৃষ্টিপাত করবেন না। যা হল আত্মীয়তার
সম্পর্কছিন্নকারী এবং মন্দ প্রতিবেশী।
প্রথম
আয়াতে আরেকটি বিষয় বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানুষের প্রত্যেকটি কাজের জন্য পর্যবেক্ষণ
করছেন। এ ব্যাপারে আয়াত রয়েছে,
তোমরা
যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন, আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ পর্যবেক্ষণ করেন।
তাফসীরে
ইবন আব্বাস(রাঃ)
এই
আয়াতের দ্বারা আত্মীয়-স্বজনুদের হক আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে তা বলা
হয়েছে।
মারিফুল
কুরআন
কেউ
নিকট্মায়দের দান করলে দুটি লাভ হয়।প্রথমত
দান আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ব্বৃদ্বি পায়।
আহকামুল
কুরআন
মুহাম্মদঃ২২,তাওবাঃ১০,নিসাঃ৩৬
কাতাদাহ,সুদ্দী ও দাহাক বলেন তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কর না।
২
আল্লাহ
ইয়াতীম এর অভিভাবকদের এই নির্দেশ জ্ঞাপন করছেন যে, ইয়াতীমরা যখন বিবেকবান এবং প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখন তাদের মাল
পুরোপুরিভাবে প্রদান করতে হবে।এখানে কিছু কম করা যাবে না এবং আত্মসাৎ করা যাবে
না।তাদের মালের সাথে নিজের মাল মিশানোর ইচ্ছা করা যাবে না।যেখানে আল্লাহ তাদের
প্রচুর মাল দিয়েছেন আবার সেখানে কেনই বা তার সাথে হারাম মাল মিশ্রিত হবে। যার
ভাগ্যে যা আছে তাই সে পাবে।এখানে অন্যের মাল হারাম করে গ্রহণ করা যাবে না। নিজেদের
দূর্বল পশুর বিনিময় অন্যের মোটা-তাজা পশু হস্তগত করা ঠিক নয়। মন্দ দিয়ে ভাল নেয়া
ঠিক নয়। ইমাম যুহরী(রঃ) বলেন, তোমরা ছোট কিছু
দিয়ে বড় কিছু নিও না। অর্থাৎ মন্দ দিয়ে ভাল নেওয়া যাবে না। সুদ্দী(রঃ) বলেন যে, পূর্ব যুগে রোগা ছাগলগুলো অপরকে দিয়ে নিজেরা
মোতা-তাজা ছাগলের বিনিময় করত।মন্দ দিরহাম তাদের দিয়ে নিজেদের জন্য ভাল দিরহাম
রাখত। আর তারা যা বলত তা বলত যে তা ঠিক আছে,কারণ তারা
দিরহামের পরিবর্তে দিরহাম আর ছাগলের পরিবর্তে ছাগল প্রদান করত। তারা ইয়াতীমদের
সম্পদকে নিজেদের সাথে মিশাতে চেষ্টা করছে যার সাথে এই দ্রব্য বিনিময়ের কোন
পার্থক্য থাকল না। তাই আল্লাহ তা করতে নিষেধ করেন এবং তাকে মহাপাপ বলা হল।
নুরুল
কুরআন
শানে
নুযুল
গাতফান
গোত্রের এক ইয়াতীম বালকের প্রচুর সম্পত্তি ছিল। তার চাচা সকল সম্পদ নিজের কাছে
পুঞ্জীভূত করে রাখে। এরপর সে তার চাচার কাছে তা দাবী করলে সে তা দিতে অস্বীকৃতি
জ্ঞাপন করে। তখন একথা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর অবহিত করলে পরে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
হাদীস--- যে লোভ-লালসা থেকে নিজেকে হিফাযত করে
সে যেন জান্নাতে বসবাস করে।
মুজাহিদ(রঃ)
বলেন, এ আয়াতের তাৎপর্য হল তড়িৎ
গতিতে কারও হারাম রিযিক গ্রহণ করানো। আল্লাহ যে রিজিকের অঙ্গীকার করেছেন তা পাও্যার
পূর্বে হারাম রুজী অর্জনের ব্যাপারে তোমরা অধৈর্য্য হয়ো না।
এ
আয়াতে নিজের সম্পদের সাথে ইয়াতীমের সম্পদ মিলিত হওয়ার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি
প্রদান করেছে।
আহকামুল কুরআন
নাজদা
ইবন আব্বাসের(রাঃ) কাছে চিঠি লিখে পাঠান
যে, একজন ইয়াতীমের সময় কখনও
শেষ হয়? তখন তিনি উত্তরে লিখেছেন
যে, যখন তার বুদ্বি পরিপক্কতার
বিকাশ ঘটবে তখন তার ইয়াতীমী শেষ হয়ে আসবে।
মুজাহিদ
ও সুদ্দী (র:) বলেন, তোমরা তাদের মাল
তাদের মালের সাথে মিশিয়ে বৃদ্বি করে খেয় না।ফলে তখন তাদের নামে ঋণ আসবে।তা তাদের
জন্যে খাওয়া ও উপভোগ করা জায়য হবে।
মারিফুল
কুরআন
ইয়াতীম
অর্থ হল নিঃসংগতা। ঝিনুকের ভিতর যেমন একটি মুক্তা থাকে তেমনি একে দররে ইয়াতীম বা
নিঃসংগ মুক্তা বলা হয়।
৩
এরপর
বলা হয়েছে যে, যেসকল ইয়াতীম
বালিকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তোমাদের উপর দেওয়া হয়েছে আর যদি তাদের বিয়ে করার
ইচ্ছা করে থাক তাহলে এই মনে করে বিয়ে কর না যে, তাদের স্বল্প মোহরের বিনিময় বিয়ে করবে। বরং, অন্যান্য মেয়ে বিয়ে কর তা দুটি,তিনটি অথবা চারটিও হতে পারে।
হযরত
আয়শা(রঃ) বলেন, একজন ইয়াতীম
বালিকার সম্পদ ও বাগান ছিল।তার যে অভিভাবক তার এই মালের আকর্ষণে পড়ে কোন রকমের
মোহর ছাড়াই তাকে বিবাহ করলে পড় আয়াত নাযিল হয়। আল্লামা ইবন কাসীর ধারনা করেন যে, এই বাগানে উক্ত ইয়াতীম বালিকার অংশ ছিল।
বুখারীতে
একটি রিওয়য়াত আছে যে, ইবন শিহাব(রঃ)
একবার আয়শা৯রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করেন এ আয়াতের ভাবার্থ সম্পর্কে তিনি বলেন হে ভাগ্নে!
এটা হল ইয়াতীম বালিকার বর্ণনা যে তার অভিভাবকের অধিকারে রয়েছে এবং মালের অংশ
রয়েছে। সে তার মালে এবং সৌন্দর্যে আকর্ষিত হয়েছে, এখন তাকে বিয়ে করতে চায় স্বল্প মোহরের বিনিময়ে।তখন তাকে
উদ্দেশ্য করে উক্ত আয়ার নাযিল হয় এবং তার বাসনা ত্যাগ করে অন্যান্যদের বিবাহ করতে
নির্দেশ প্রদান করেন।
অতঃপর
জনগণের প্রশ্নের কারণে ৪ঃ১৬৭ আয়াতটি নাযিল হয়। সেখানে বলা হয় যে, যখন ইয়াতীম মেয়ের মাল ও সৌর্দর্য কম থাকে তখন
তো অভিভাবক তার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে না,তাই এর কারণ নেই
যে, তার মাল ও সৌন্দর্যের
প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার পূর্ণ হক আদায় না করে বিয়ে করে নিবে। যদি পূর্ণভাবে মোহর
আদায় করতে পারে তাহলে তার কোন দোষ নেই। তানা হলে স্ত্রী লোকের কোন অভাব নেই। তাদের
মধ্যে থেকে পছন্দমত ২,৩,৪টি পর্যন্ত বিবাহ করতে পারবে। এই শব্দসমূহ অন্যান্য আয়াতে
ব্যবহহৃত হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে,সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহর, যিনি আসমান ও যমীনের
স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তাবাহক-তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। [৩৫ঃ১]
ফেরেশ্তাদের
চারটির অধিক পাখা আছে, তা দলীল দ্বারা
প্রমাণিত কিন্তু স্ত্রী চারের অধিক রাখা নিষিদ্ব তা স্বয়ং এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।
তা জমহুড় ও ইবন আব্বাস(রাঃ) এর বক্তব্য। এখানে আল্লাহ তার স্বীয়া অনুগ্রহের কথা
জানিয়ে দিয়েছেন এবং চারটির বেশীর উপর সমর্থন থাকলে তা বলতেন।
এই
আয়াতের আলোকে ইমাম শাফিঈ(রঃ) বলেন,
কুরআনের
ব্যাখ্যাদানকারী হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ছাড়া আর কারো জন্য চারের অধিক স্ত্রী রাখা
বৈধ নয়। এই ব্যাপারে উলামাকিরামের ইজমা সঙ্ঘটিত হয়েছে। কিন্তু শিআদের মতে নয়জন
স্ত্রী রাখা যায়। কারণ উক্ত আয়াতে ২,৩,৪ এর যোগফল হল ৯ আর রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ৯ জন স্ত্রী একসাথে
জীবিত ছিলেন।তাই সেই আলোকে তারা সেই যুক্তি প্রদর্শন করে থাকে। বুখারী শরীফের এক
মুআল্লাক হাদীসে রাসূল(সাঃ) এর ১১ জন স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে।খারিজীগণ দ্বিত্যতার
জন্য তার সংখ্যা ১৮ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আনাস(রাঃ)
বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
এর সাথে ১৫ জনের বিবাহ হয় আর ১৩ জনের সাথে
সহবাস হয় এবং একসাথে ১১ জন ছিলেন এবং ইন্তিকালের সময় ৯ জন ছিলেন। ইবন কাসীর বলেন, এ থেকে বলতে পারি যে, একসাথে চারের অধিক স্ত্রী কেবল
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর জন্য বিদ্যমান ছিল এখন এই উম্মাতের জন্য আর চারের অধিক বৈধ
নাই।
গায়লান
ইবন সাকাফী(রাঃ) এর দশজন স্ত্রী ছিলেন।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) যখন তা জানতে পারেন তখন
তিনি একসাথে চারজনকে রেখে বাকিদের তালাক দিতে প্রদান করেন। অতঃপর তিনি তাই করেন
এবং মৃত্যুর শেষের দিকে তিনি উমার(রাঃ) এর খিলাফতকালে এই কাজ করে সকলের ভিতর
সম্পত্তি ভাগ করে দেন। উমর(রাঃ) এই খবর পেলে তার প্রতি ভীষণ রাগ্বানিত হন এবং বলেন
কেবলমাত্র সম্পত্তির জন্য এটা করেছ?
তুমি
তাড়াতাড়ি সঠিকভাবে সম্পত্তি বণ্টন করে দাও তানা হলে তোমার কবরের উপর পাথর নিক্ষেপ
করা হবে যেমনিভাবে আবূ রাগালের করা হয়। [বুখারী।আহমদ,ইবন মাজাহ[
উমাইয়া
আসাদী(রাঃ) বলেন, আমি যখন ইসলাম
গ্রহণ করি আমার ৮জন স্ত্রী ছিল এরপর মহানবী(সাঃ) এর নির্দেশে চারজন রাখি। [দাউদ,মাজাহ]
নাওফিল
বিন মুয়াবিয়া(রাঃ) বলেন, আমি যখন ইসলাম
গ্রহণ করি আমার ৫জন স্ত্রী ছিল এবং তিনি বললেন পছন্দমত চারজন রাখ আর একজন তালাল্ক
দিয়ে দাও।তখন তাদের ভিতর যে সবচেয়ে বয়স্কা এবগ নিঃসন্তান ছিলেন তাকে তালাক দেই।
এই
হাদীসসমূহ গায়লানযুক্ত হাদীস স্মর্থন করে। [বায়হাকী]
এরপর
আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা একাধিক
স্ত্রীর মধ্যে সমতা বজায় রাখতে না পারার ভয় কর তাহলে একজনকে নিয়ে কিংবা দাস নিয়ে
সন্তুষ্ট থাক’। যেমন অন্য
জায়গাতে বলা হয়েছে, তোমরা ইচ্ছা করলেও
স্ত্রীদের মাঝে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না[৪ঃ১২৯] এখানে এটাও স্মরণ
রাখা দরকার যে, দাসীদের ভিতর পালা
করা ওয়াজিব নয় মুস্তাহাব বটে। যে করে সে ভাল করে আর যে করে না তার দোষ নেই। এর
পরবর্তী বাক্যের ভাবার্থ কেউ কেউ বলেন,
এটা
তোমাদের দারিদ্র্য বেশী না হওয়ার নিকটবর্তী। যেমন অন্য স্থানে বলা হয়েছে, যদি তোমরা দারিদ্যতাকে ভ্য় কর।‘ কোন কোন কবি বলেন, দরিদ্য জানে না সে
কখন ধনী হবে আবার ধনী জানে না সে কখন দরিদ্র্য হবে। যখন কেউ গরীব হয়ে যায় বলা হয়
যে, সে গরীব হয়ে গেছে। এই অর্থ
শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তাফসীর খুব একটা ভাল হয় না। কারণ স্ত্রীদের আধিক্য গরীব
হওয়ার কারণ আবার দাসীদের আধিক্য গরীব হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই জুমহূরের মতে, এর দ্বারা বলা হয় যে, তোমরা অত্যাচার থেকে বেঁচে থাক।এটা তার অতি
নিকটবর্তী। আরবে বলা হয় যে, সে হুকুমের
ব্যাপারে অত্যাচার করেছে। আবার একবার কূফাবাসীগণ উসমান(রাঃ) এর কাছে তার বিরুদ্ব
অভিযোগ করলে তিনি উত্তরে বলেন যে, আমি অত্যচারের
দাড়ি-পাল্লা নই। তাই এর ভাবার্থ হল অত্যাচার কর না। আবূ তালিবের কাসিদায় রয়েছে, এমন দাড়ি-পাল্লায় ওজন কর যা এক যব পরিমান কম
না করে,তার কাছে স্বয়ং সাক্ষী আছে
যে অত্যাচারী নয়’।
এভাবে
করে তার এই কাসিদার অনেক তাবিঈ এবং সাহাবাগণ মতামত ব্যক্ত করেছেন।
নুরুল
কুরআন
“সুবিচার করতে না
পারা” এর অর্থ হল যে,
আয়শা(রাঃ)
বলেন, মুহাম্মদ(সাঃ) এর
ব্যাখ্যায় বলেন, একাধিক স্ত্রী
বিদ্যমান থাকার পর একজনের হক নষ্ট করে অন্যজনের প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া এ পন্থায়
সম্ভাবনা থাকে না।
মুজাহিদ
(রঃ) বলেন,এ পন্থার কাছে যে, তোমরা পথভ্রষ্ট না হও।
ফাররা(রঃ)
বলেন, এক বিয়েতে তৃপ্ত থাকলে
সীমালঙ্ঘন করবে না।
৪
এরপর
আল্লাহ বলেন, তোমরা স্ত্রীদের
সন্তুষ্টরুপে মোহর দাও।অর্থাৎ, তাদেরকে খুশীমনে
মোহর প্রদান করতে হবে তা স্বকৃতি দিয়েছে।যদি তার স্ত্রী তার কিছু মাফ করে দেয়
তাহলে সেই স্বামী তা নিজের জন্য ভোগ করার ব্যাপারে অধিকার রাখে। নবী করিম(সাঃ)
এরপরে কারও জন্য মোহর ওয়াজিব ছাড়া বিয়ে করা জায়েয নয় এবং ফাকি দিয়ে শুধু নামমাত্র
মোহর ধার্য্য করা বৈধ নয়।
মুসনাদে
আবী হাতিমে বর্ণিত আছে যে, আলী(রাঃ) বর্ণনা
করেন যে, রাসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের ভিতর কেউ রোগ্রান্ত হলে তার উচিৎ হবে
যে, সে যেন তার স্ত্রীর মালের
তিন দিরহাম বা কিছু কম বেশী গ্রহণ করে ,তার সাথে মধু
মিশায় এবং আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি মিশায়। তাহলে সে মঙ্গল লাভ করবে।
একটি
শিক্ষা হল স্ত্রীর মাল ভোগ করা,মধুর বরকত এবং
আকাশের পানির বরকত। মানুষ আগে মেয়েদের মোহর নিজেরা ভোগ করত।এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর
তা রহিত হয়ে যায়।[ইবন জারীর] এ নির্দেশ শুনে জনৈক রাসূল্লাহ(সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা
করেন যে, পরস্পর মোহর কি? উত্তরে তিনি বলেন, যার উপর
তাদের পরিবার সম্মত হয়।[ মুসনাদে আবী হাতিম]
একবার
তিনি বিধবাদের বিবাহ দিতে বলেওন।তখন এক লোক দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে, পরস্পর মোহর কি? তিনি বলেন যার উপর
তাদের পরিবার সম্মত হয়।
তাফসীরে
আব্বাস(রাঃ)
স্ত্রীকে
মোহর প্রদান করা ফরয। স্ত্রীগণ যদি মনের খুশিতে কিছু অংশ প্রদান করে তাতে অপরাধ
নেই তা গ্রহণ করা যাবে। কেননা উভয়ের সন্তুষ্টি উভয়ের প্রাপ্য।
নুরুল
কুরআন
স্ত্রী
লোকের অভিভাবক বিবাহ দিলে তা নিজেই বহন করত।দুরে বিবাহ দিলে খালি উটে পাঠানোর
ব্যবস্থা করত। এই অত্যাচার বন্ধ করে দেয় ইসলাম।
মাযহারী
এক
বিবাহের মোহর ধার্য্য করার সময়ে অন্য বিবাহ সম্পন্ন করার নাম হল মহর। একে শিগার
বিবাহ বলা হয়। মোহরের আয়াত নাযিল হওয়ার পরে তা হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়।
মারিফুল
কুরআন
ঋণ
পরিশোধ করার মত করে সন্তুষ্টচিত্তে এবং উদারভাবে তা আদায় করতে হবে। স্ত্রীকে
জোড়পূর্বক জুলুমের মাধ্যমে মাফ করানোর দ্বারা তা থেকে বিরত রাখানো যাবে না।
৫
মহান
আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ জ্ঞাপন করছেন যে,
তারা
যেন অবুঝ,নির্বোধদের মাল না দেয়।
মাল কাজে লাগিয়ে ব্যবসাতে কাজে লাগিয়ে তা মানুষের জীবন-যাপনের উপায় হিসেবে প্রদান
করেছেন, এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, তা অবুঝদের উপর তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। যেমন
অপ্রাপ্ত বয়সক ছেলে,পাগল,নির্বোধ এবং বেদ্বীন অন্যায়ভাবে মাল নিঃশেষ করে দিবে,তাই এদের মাল খরচ করা থেকে বাঁধা দিতে হবে। একইভাবে যে
ব্যক্তির ঘাড়ে প্রচুর ঋণের বোঝা আছে আর তা সকল সম্পত্তি দিয়েও যদি পরিশোধ না করা
যায় তখন সেই মহাজন যদি শাসকের কাছে অভিযোগ করে তাহলে সেই শাসক তার সমস্ত সম্পত্তি
ক্রোক করার অধিকার রাখে।ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, সুফাহা হল সন্তানগণ এবং স্ত্রীগণ। ইবন মাসউদ(রাঃ), হাসান বসরী(রাঃ), যুহহাক(রাঃ) সকলে এই অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, এর দ্বারা স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বলা হয়েছে।
মুজাহিদ(রঃ),ইকরামা(রঃ),কাতাদাহ(রঃ) এর
মতে এর অর্থ হল স্ত্রীগণ। সাইদ বিন যুবায়র বলেন, এর অর্থ হল পিতৃহীনেরা। সুনানে ইবন হাতীমে রয়েছে, স্বীয় স্বামীর আনুগত্য স্বীকার করে এরা ছাড়া
নিশ্চ্য় স্ত্রীলোকেরা বুদ্বিহীনা। তাফসীরে ই-ইবন মিরদুওয়াই এর ভিতর এর সাথে বর্ণনা
রয়েছে। আবূ হুরায়রা(রাঃ) এর মতে এটি হল দুষ্টু দাস।
এরপর
আল্লাহ বলেন, তাদের খাওয়াও,পরাও এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ কর’।ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, এর ভাবার্থ হল আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তা
থেকে তোমাদের স্ত্রী এবং সন্তনদের জন্য খরচ কর এবং তাদের হাতের দিকে চেয়ে থেক না।
বরং তোমার মাল তুমি তোমার দখলেই রেখে ঠিক রাখ এবং স্বহস্তে তাদের খাওয়া-পড়ার
ব্যবস্থা কর। আবূ মূসা আশয়ারী(রাঃ) বলেন,
তি
প্রকারের লোক আছে যারা দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন না।প্রথম ব্যক্তি হল
সে যার স্ত্রী দুশ্চরিত্রা হওয়া সত্ত্বেও তালাক দেয় না। দ্বিতীয় হল, যে নির্বোধদের হাতে সম্পদ তুলে দেয়। তয় হল সে
যার কারও উপরে ঋণ আছে কিন্তু সে কোন সাক্ষী রাখে নাই।
এরপর
বলা হয়েছে যে, তাদের সাথে ভাল
কথা’। অর্থাৎ, তাদের সাথে উত্তম ও নম্র আচরণ কর।এ আয়াত
দ্বারা অভাবগ্রস্থের সাথে উত্তম আচরণ করার নির্দেশ জ্ঞাপন করা হয়েছে। যার নিজের
হাতে খরচ করার অধিকার নেই তার খাওয়া এবং পরার ব্যবস্থা করা এবং খাওয়া খবর নেওয়া
এবং নম্র ব্যবহার করা উচিৎ।
৬
এরপর
আল্লাহ বলেন, “তোমরা পিতৃহীনদের
দেখা-শোনা করবে যে পর্যন্ত না তারা যৌবনে পদার্পন করে”।এখানে নিকাহ দ্বারা
প্রাপ্ত বয়স্কদের বুঝানো হয়েছে। এখানে প্রাপ্ত বয়স দ্বারা এমন স্বপ্নের কথা বলা
হয়েছে যা স্বপ্নের মাধ্যমে এক বিশেষ ধরনের পানি তীব্র বেগে নির্গত হয়।
আলী(রাঃ)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
বলেন, স্বপ্নদোষের পর কোন
ইয়াতীমের চিহ্ন থাকে না এবং নীরব থাকে না। অন্য হাদীসে এসেছে, তিন প্রকারের লোকদের কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া না পর্যন্ত,
শিশু
প্রাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত,পাগল জ্ঞান ফিরে
না আসা পর্যন্ত। তাই প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার নির্দশন হল এই।
২য়
নিদর্শন হল ১৫ বছর বয়স। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) বলেন, উহুদের যুদ্বের সময় আমার বয়স ছিল ১৪।আমি
যুদ্বে অংশগ্রহণ করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আমাকে তখন যুদ্বে অংশগ্রহণ করতে
নিষেধ করেন।কিন্তু এরপরের বছর আমার বয়স ১৫ হলে খন্দকের যুদ্বে অংশগ্রহণ করার
অনুমতি প্রদান করেন। এই খবর উমার বিন আব্দুল আযীযের কাছে পৌছলে তিনি তা নির্ধারণ
করে দেন।
প্রাপ্ত
বয়স্কদের তৃতীয় নিদর্শন হল নাভির নীচে চুল গজানো। এ ব্যাপারে আলেমদের তিনটি অভিমত
রয়েছে। একটি হল প্রাপ্ত বয়স্কদের চিহ্ন,আরেকটি হল এটি
মুসলিমদের প্রাপ্তবয়স্কদের চিহ্ন নয় এবং অপরটি হল এটি মুসলিমদের প্রাপ্তবয়স্কদের
চিহ্ন নয় বরং যিম্মীদের চিহ্ন। এটি ঔষধের কারণে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসে এবং যুবকদের
জন্য জিজিয়া কর ধার্য্য করা হয়। প্রথমত
এটি প্রকৃতগত ব্যাপার। প্রকৃত সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। প্রকৃত কথা হল এটি সময় মত বের
হয়ে আসবে।
মুসনাদে
আহমদে বর্ণিত হয়েছে, যেখানে আতিয়া
যারাযির(রাঃ) বলেন, বনু কুরাইযার
যুদ্বের দিন আমাদের রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে হাযির করা হয়।তিনি নির্দেশ প্রদান
করেন যে, অমুক ব্যক্তি দেঝুক যে
তাদের চুল গজিয়েছে কিনা,তার হয়েছে তাকে
যেন হত্যা করা হয় আর যার গজায় নাই তাকে মুক্ত করা হোক। সে সময় আমার চুল বের হয় নাই
তাই আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাদ(রাঃ)
এর সিদ্বান্তের উপর বনু কুরাইজা যুদ্ব হতে বিরত ছিল।অতঃপর সাদ (রাঃ) তাদের
প্রাপ্তবয়স্কদের হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং শিশুদের বন্দী করা হোক।
গারায়বী
আবী উবায়দার ভিতর রয়েছে যে, একটি ছেলে বলে যে, আমি একটি মেয়ের সাথে ব্যভিচার
করেছি।প্রকৃতপক্ষে এটি একটি অপবাদ ছিল। তখন উমার(রাঃ) তার উপর হাদ্দ কার্যকর করতে
চান। কিন্তু সে তখন বলল যে, আমার নাভির নীচে
তো লোম এখনও হয় নাই। তাই তা কীভাবে কার্যকর হবে। তখন তার উপর হাদ্দ রহিত করা হয়।
(অসমাপ্ত)
৭।
আরবদের
মুশরিকদের অবস্থা ছিল এমন যে, কেউ মারা গেলে
কেবল বড় সন্তানেরা সম্পত্তি পেত।ছোট সন্তান এবং স্ত্রীগণ সেখান থেকে বঞ্চিত হত।
ইসলাম এ বিধান জারী করে সমতার বিধান জারী করে। বলা হয় যে, উত্তরাধিকার সকলেই হবে প্রকৃত আত্মীয় হোক বা
বিবাহের মাধ্যমেই হোক না আযাদীয় বংশের মাধ্যমে হোক না কেন, অংশ সবাই পাবে কম হোক কি বেশী।
৮।
এরপর
বলা হয়েছে যে, সম্পতি বন্টনের
সময় যখন দুরবর্তী আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও মিসকীন উপস্থিত হয়, যাদের কিছুই নেই তাদের কিছু প্রদান করতে হবে।
কারও মতে এটি পরিশোধ করা ওয়াজিব আবার কারও মতে, এটি হল মুস্তাহাব।কারও মতে এই হুকুম এখনও আছে আবার কারও এই
হুকুম রহিত হয়ে গেছে। ইবন আব্বাস(রাঃ),
মুজাহিদ(রঃ), ইবন মাসউদ(রাঃ), মূসা আশয়ারী(রাঃ),
আব্দুর
রহমান বিন আবী বকর(রা: ), আলীয়া(রাঃ), শাবী(রাঃ), হাসান বসরী(রাঃ),
ইবন
সিরিন(রাঃ), সাঈদ বিন যুবায়র(রাঃ), ইব্রাহীম নাখই(রঃ), যুহরী(রঃ) একই মতামত অভিব্যক্তি করেছেন।
আবূ
উবাদা(রাঃ) মাল বণ্টনের অসিয়তের অভিভাকত্ব করেন।এই সময়ে তিন শ্রেণীর লোক ডেকে আনেন, এবং এদের খাওয়ান এবং তাদের বলেন এ আয়াত না
থাকে এই মাল আমারই ছিল। উরওয়া(রাঃ),মুসআব(রাঃ) মাল
বণ্টনের সময়ে এটা প্রদান করেন।
আব্দুর রহমান বিন আবী বকর(রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে
পরে তার ছেলে আব্দুল্লাহ এভাবে করে মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করার নির্দেশ প্রদান করে
এবং সেখানে আয়শা(রাঃ) উপস্থিত ছিলেন।ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, তা সঠিক হয় নাই। কারণ তা কেবল তখন হবে যখন সে
নিজে অসিয়ত করে যাবে।
কোন
কোন মনীষীর কথা হল এই যে আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে। যেমন ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন, এই আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে এবং একে রহিতকারী
আয়াত হল ইউসিকুমুল্লাহ। অংশ নির্ধারণের পূর্বে এই বিধান ছিল। এরপর হকদারকে যখন
আল্লাহ হক পৌছিয়ে দেয় তখন সাদকা শুধু তাই যা মৃত ব্যক্তি বলে যায়। সাঈদ ইবন
মুসাইব(রঃ) বলেন, যদি ঐ লোকদের জন্য
অসিয়ত থাকে তবে তা অন্য কথা নতুবা তা মানসুখ।
জমহূর
ও ইমাম চতুষ্টয়ের এতাই মাযহাব। ইমাম ইবন জারীর(রাঃ) এখানে বিস্ময়কর উক্তি দিয়েছে
অসিয়তের মাল বণ্টনের সময়ে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন এসে গেলে তাদেরকে দিয়ে দাও
এবং সেখানে আগত মিসকীনদের সাথে নম্রতার সাথে কথা বল ও উত্তর দান কর।কিন্তু এটা
বিবেচ্য বিষয়।
ইবন
আব্বাস(রাঃ) বলেন, এখানে সম্পদ
বণ্টনের অর্থ হল মীরাসের বণ্টন। তাই এই উক্তিটি ইবন জারীর(রঃ) উক্তির বিপরীত। এ
আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা হলঃ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের সময়ে যদি লোক উপস্থিত হয়ে
যায় এবং তোমরা নিজ নিজ অংশ পৃথক করে ফেল আর বেচারারা তোমাদের দিকে যদি ফেল ফেল করে
তাকিয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে শূণ্য হাতে ফিরিয়ে দিও না। তাদের এমন অবস্থায় ফিরিয়ে
দিলে স্বয়ং আল্লাহ নিজেই অসন্তুষ্ট হন। তাই সদকা হিসেবে আল্লাহর পথে তাদেরকে খরচ
করতে হবে যেন তারা খুশী হয়।
যেমন
অন্য জায়গায় আল্লাহর ঘোষণা রয়েছে, তোমরা তার ফল থেকে
খাও যখন তিনি ফল দান করেন এবং শস্য কর্তনের দিন তার হক আদায় কর’।ক্ষুধার্থ ব্যক্তি ও
দরিদ্র্য লোকদের ভয়ে যারা তাদেরকে না জানিয়ে গোপনে খেতের ফসল কেটে নেয় এবং গাছের
ফল কাটিয়ে নেয় আল্লাহ তাদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। সূরা নুনে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি মৃত্যবরণ করলে গরীবদেরকে বঞ্চিত
করার জন্যে তার দুই ছেলে গাছ থেকে সকল ফল নামাতে যায়। এমতাবস্থায় আল্লাহর গযব পতিত
হয় তাদের উপর। সেই বাগানকে ভষ্মীভূত করা হয়। অন্যের হকনষ্টকারীর পরিণাম এমনই হয়।
হাদীসে এসেছে যে, যে মালে সদকা আসে
না অর্থাৎ, যাকাত প্রদান করা হয় না সে
মাল ধ্বংস ডেকে আনে।
৯।
এরপরের
আয়াতে বলা হয়েছে যে, “যারা নিজেদের পশ্চাতে
নিজেদের অসমর্থ সন্তারদেরকে ছেড়ে যাবে তাদের উপর যে ভীতি আসবে তারজন্যে শঙ্কিত
হওয়া উচিৎ। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি স্বীয়
মৃত্যুর সময় অসীয়ত করে যায় এবং সেই অসিয়তে তার উত্তরাধিকারের ক্ষতি হচ্ছে
এমতাবস্থায় যে তা শ্রবণ করেছে, তার আল্লাহকে ভয়
করত ঐ অসীয়তকারীর সঠিক পথ প্রদর্শন করা উচিৎ। এবং তার উচিৎ হল অসিয়তকারীকে সঠিক পথ
প্রদর্শন করা যেমনিভাবে উত্তরাধিকারীদের প্রতি মঙ্গল কামনা করা হয় যাতে করে তারা
নিজেদের ধ্বংসের বা ক্ষতির আশংকা থাকে।
বুখারী
ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে, একবার
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস(রাঃ)কে অসুস্থ অবস্থায় দেখলেন।তিনি রাসূলের
কাছে আরজ করলেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)! আমার অনেক মাল আছে আর একটি কণ্যা সন্তান আছে। আমি কি আমার মালের
দুই-তৃতীয়াংশ অসিয়ত করব? তখন রাসূল(সাঃ)
বললেন, না তিনি আবার বললেন,অর্ধেক যদি করি।তিনি বললেন না। আবার অনুমতি চাইলেন
এক-তৃতীয়াংশের জন্য।তখন রাসূল(সাঃ) বললেন,
হ্যা
সেটা করতে পার। কিন্তু সেটাও বেশী।তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারদের সম্পদশালী করে
যাও তাহলে তা হতে উত্তম যে তুমি তাদের দরিদ্র্য করে যাও যাতে করে তারা একে অন্যের
কাছে হাত না পাতে। ইবন আব্বাস(রাঃ) বলেন,
যদিও
এক তৃতীয়াংশ কম কিন্তু রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ১/৩ বেশি বলেন তাই ১/৪ অসীয়ত করার উত্তম।
ফিকহীবিদ্গণ
বলেন যে, ধনী পরিবারের জন্যে ১/৪
অসিয়ত করা মুস্তাহাব আর ধনী না হলে তাহলে তা তার চেয়ে কম করা মুস্তাহাব।
১০
আল্লাহ
পাক ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করতে বিশেষভাবে নিষেধ করেছেন। যারা তাদের মাল অন্যায়ভাবে
ভক্ষণ করবে তাদের শাস্তির ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের পেটে আগুন ভক্ষণ করবে এবং তারা
জাহান্নামে প্রবেশ করবেন।
আবূ
হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে সহীহাইনে এসেছে, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখবে যা হল
আল্লাহর সাথে কারও শরীক করা, যাদু,অন্যায়ভাবে হত্যা করা,
সুদ,পিতৃহীনদের মাল খাওয়া,জিহাদের ময়দান
থেকে ফিরানো এবং সতী সাধবী মুসলিম নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়া।
মিরাজের
রাতের ঘটনা বর্ণণা করার সময়ে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন যে, কিছু লোকদের দেখলাম যে, তাদের জোড় করে মুখ খোলা হচ্ছে। তারপর তাদের
মুখের ভিতর জ্বলন্ত আঙ্গার দেওয়া হচ্ছে। আর তা পিছনের রাস্তা দিয়ে বের হচ্ছে। আর
তারা চিৎকার করছে।আমি জিবরাইল(আঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম এরা কারা? তখন তিনি বলেন এরা হল তারা যারা ইয়াতীমের মাল
ভক্ষণ করত যাদের ভিতর আগুন আছে এদের অচিরেরি জাহান্নামের প্রবেশ করানো হবে।
সুদ্দী(রঃ)
বলেন, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণকারীকে
কাল কিয়ামতের দিন এমনভাবে সকলের সামনে উপস্থিত করা হবে যে, তাদের নাক,কান,মুখ দিয়ে অগ্নিধোয়া বের
হতে থাকবে। সকলেই বুঝতে পারবে যে, তারা অন্যায়ভাবে
ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করেছিল। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, তোমরা দুই শ্রেণীর দূর্বল লোকের মালের
নিকটবর্তী হবে না।
সূরা
বাকারায় বর্ণিত আছে যে, যখন এ আয়াত নাযিল
হয় তখন ইয়াতীমদের খাবার ও পানি থেকে তাদের অভিভাবকগণ আলাদা করে পরে এমন অবস্থা হয়ে
দাঁড়ায় যে, তারা আলাদাভাবে খাওয়া-পিনা
শুরু করে। তাদের খাবার পচে যেতে থাকে।কেউ তাতে হাত লাগাতো না।এরপর [২ঃ২২০] নাযিল
হয় যার দ্বারা বুঝানো হয় যে,তোমরা পিতৃহীনদের ব্যাপারে যা মঙ্গল মনে কর তা কর। ফলে
তাদের খানা-পিনা একসাথে করতে পার।
১৩।
যে
আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয় ও তার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে,সেখানে সে সদা
থাকবে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। অর্থাৎ এটি একটি ফরয কাজ এবং তা আল্লাহ
নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং মৃত্ ওয়ারিশগণকে তাদের আত্মীয়তার নৈকট্য ও তাদের
প্রয়োজন অনুপাতে আর যে অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাই সীমারেখা,এগুলো অতিক্রম করা
যাবে না।যে আল্লাহর এই নির্দেশকে মেনে চল্বে,কোন ধরনের
ছল-চাতূরির আশ্রয় গ্রহণ করবে না, কাউকে কম-বেশী
দিবে না আল্লাহর নির্দেশকে পুরোপুরিভাবে পালন করবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ অঙ্গীকার
করছেন যে, তাদেরকে তিনি জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ হতে নদী প্রবাহিত হবে,সেখানে মদ,বিশুদ্ব পানি, মধু,দুধের নহর
প্রবাহিত হবে। তারাই হবে সফলকাম এবং তাদের উদ্দেশ্য হবে সফল। তারা কখন মরবে না এবং
তাদেরকে সেখান থেকে কখনও বের করা হবে না। তারা সেখানে সাফল্যের সাথে জান্নাতের
অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করতে থাকবে।
মারিফুল
কুরআন
মুসলিম
কাফিরের বা কাফির মুসলিমের ওয়ারিস হবে না,ধর্মত্যাগীগণ
মুসলিমগনের ওয়ারিস হবে না, কিন্তু মুসলিমগণ
ধর্মত্যাগীদের ওয়ারিস হবে।হত্যাকারীগণ,
ইদ্দত
পালনকারী স্ত্রীগণ ওয়ারিসের অধিকারী হবে। খুলা তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী হবে না। যুবিল
ফুরুযদের দেওয়ার পর আসাবা না থাকলে রদের মাধ্যমে যুবিল ফুরুযদের ভিতর সম্পত্তি
বণ্টিত হবে। স্বামী কিংবা স্ত্রীদের উপর তা হয় না। আর যুবিল ফুরুয বা সাসবা না
থাকলে যাবিল আরহামের ভিতর তা বণ্টিত হবে।
নুরুল
কুরআন
প্রথমে
ঋণ পরিশোধ করা এরপর অসিয়ত করা।তারপর ওয়ারিশদের ভিতর বণ্টিত হবে।এখানে কোনভাবেই
কম-বেশী করা যাবে না।
১৪।
অন্যদিকে যারা আল্লাহর নির্দেশ পরিবর্তন করে, ওয়ারিসদের ভিতর কম-বেশী করে, তার সন্তুষ্টি কামনা করে না,বরং তার নির্দেশের বিপরীত কাজ করে থাকে,কিংবা আদেশকে ন্যায় মনে করে না তারা চিরস্থায়ী এবং অপমানজনক
শাস্তি ভোগ করবে।আল্লাহ সেই অপরাধী ব্যক্তি জাহান্নামের ভিতর প্রবেশ করাবেন এবং
সেখানে যতদিন ইচ্ছা আল্লাহ তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
ইরশাদ করেন, একটি লোক ৭০ বছর পূণ্য
কাজের উপর থাকে,অসিয়তের সময় যদি
সে অন্যায় ও অবিচার করে,ফলে তার পরিণতি
খারাপ কাজের উপর হয়ে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
অপর
একটি হাদীস এমন রয়েছে যে, যে ৭০ বছর পর্যন্ত
পাপ কাজ করতে থাকে, এরপর স্বীয় অসিয়তে
ন্যায় পন্থা অবলম্বণ করে,ফলে তার পরিণতি
ভাল কাজের উপর হয় এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরপর এই হাদীস বর্ণনাকারী আবূ
হুরায়রা(রাঃ) বলেন, নিসার ১৩ ও ১৪ নং
আয়াত তিলওয়াত করেন।
এখানে
এক হাদীসে এসেছে, একজন পুরুষ বা
স্ত্রীলোক ৬০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর আনুগত্য করতে থাকল আর মৃত্যুর অসিয়তের সময় অসিয়তের
ব্যাপারে কষ্ট ও ক্ষতিকর কাজ করে থাকে,তখন তার জন্য
জাহান্নামে ওয়াজিব হয়ে যায়।
১৫।
ইসলামের
প্রাথমিক যুগে এমন বিধান ছিল যে, যখন কোন নারী কোন
অশ্লীলকাজে লিপ্ত হত আর যদি সেই ব্যাপারে যদি চারজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী পাওয়া যেত
তাহলে তাহলে তার ব্যাপারে নির্দেশ থাকত যে,
তাকে
যেন ঘর হতে বের না করা হয় এবং জন্মের মত বাড়িতে আটকে রাখা হবে। অর্থাৎ মৃত্যু
পর্যান্ত তাকে এমনিভাবে আটকে রাখতে হবে। এরপর আল্লাহ এটাও বলেছেন যে, যদি এই বিধান ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে
যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ অন্য কোন নির্দেশ প্রদান না করে। এরপর যখন অন্য শাস্তি
নির্ধারণ করা হয় তখন এই শাস্তি রহিত হয়ে যায়। ইবন আব্বাস(রাঃ) বর্ণনা করেন, সূরা নূর নাযিল হওয়ার পূর্বে ব্যভীচারিরণী
স্ত্রীর ব্যাপারে এ নির্দেশ ছিল। এরপর সূরা নূর নাযিল হলে পরে বিবাহিতা নারীকে রজম
এবং অবিবাহিতা নারীকে চাবুক মারার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এভাবে
করে ইকরামা(রাঃ),সাঈদ বিন
যুবায়র(রাঃ), হাসান বসরী(রাঃ), আতা খুরসানী(রাঃ), আবূ সালিহ(রাঃ),কাতাদাহ(রাঃ), আতা খুরসানী(রাঃ), যাহহাক(রাঃ) এই উক্তি এবং তারাও একমত যে, এ আয়াত রহিত হয়ে গেছে। উবাদাহ ইবন সামিত(রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর উপর
যখন ওয়াহী নাযিল হত তখন তা তার উপর বড় ক্রিয়াশীল হত এবং এরজন্যে তার কষ্ট হত এবং
তার চেহারা পরিবর্তিত হত। একদা স্বীয় রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর উপর ওয়াহী নাযিল হয় এবং
সমকালীন অবস্থা দূর করলেন এবং আমার বলেন,
তোমরা
আমার কথা গ্রহণ কর। আল্লাহ তাদের জন্য পথ নির্দেশ করে দেন।
যদি
বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচার করে তাহলে তাদেরকে প্রস্তারঘাত করতে হবে এরপর তাদের
রজম করতে হবে। এবং অবিবাহিত করলে পরে তাদের চাবুক মারার পর এক বছরের জন্য
নির্বাসনে পাঠানো হবে। মুসলিম,তিরমিযী,আবূ দাউদ শরীফে এমন হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ইবন
মিরদুওয়াইতে অবিবাহিত পুরুষ এবং বিবাহিত নারীদের ব্যাপারে হুকুম দেওয়ার পরে বৃদ্ব
নারী ও পুরুষের ব্যাপারে বলা হয়েছে তাদের রজম করতে হবে যদি তারা ব্যভিচার করে।
কিন্তু হাদীসটি গরীব। তাবরানীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সূরা নিসা নাযিল হওয়ার পর আবদ্ব থাকার আর
হুকুম নেই। আহমদ(রঃ) এর মাযহাব অনুযায়ী বিবাহিতাদের চাবুক মারার পর তাদের রজম করতে
হবে। আর জুমহুরের মতে, কেবল রজম করলেই
হবে,চাবুক মারার কোন
প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) মায়জ(রাঃ),গামেদিয়াহ গোত্রের নারী এবং দুইজন ইয়াহূদীকে রজম করার নির্দেশ প্রদান
করেছিলেন।কিন্তু চাবুক তাদের মারতে বলেন নাই। তাই জুমহুর ওলামাদের মতে চাবুক মারার
রহিত হয়ে গেছে এবং তার দরকার এখন আর নেই।
মারিফুল
কুরআন
ব্যভিচারের
ব্যাপারে চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। কারণ তা বংশের সাথে সম্পর্কিত। এর সাথে যহেতু
বংশের ইজ্জত সম্পর্কিত তাই এখানে চারজন পুরুষ সাক্ষ্য হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে
আর স্ত্রীদের এখানে আনা হয় নাই।কারণ তাতে অপবাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যদি
তারা তাওবা করে নেয়া তাহলে আর তিরষ্কার করা যাবে না কিন্তু শাস্তির পর তাওবা না
করলে তার জন্য তিরষ্কার আছে।
এখানে
তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তাদের মৌখিকভাবে লজ্জা দেওয়া,শরমিন্দা করা এবং হাত বা জুতা দিয়ে আঘাত করা।
মাযহারী
এখানে
বন্দী রাখার অর্থ হল এই যে, যারা অবিবাহিতা
তাদের প্রতি কঠোর নজরদারী রাখতে হবে।
১৬।
এরপর
বলা হচ্ছে যে, দুইজন পুরুষ
পরস্প্র এমনকাজে লিপ্ত হলে পরে তাদের শাস্তি প্রদান কর। অর্থাৎ, তাদের তিরষ্কার কর, অপদস্থ ও জুতা মার। চাবুক মারাআ ও রজম করার
নির্দেশ রহিত হয়ে যায়। ইকরামা(রাঃ),আতা(রাঃ), হাসান বসরী(রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ বিন
কাসীর(রাঃ) বলেন এর ভাবার্থ হল পুরুষ ও স্ত্রীগণ। সুদ্দী(রঃ) বলেন, এর ভাবার্থ হল যুবকগণ যারা বিবাহিত নয়।
মুজাহিদ(রঃ)
বলেন, এই আয়াতখানি লাওয়াতাতের
ব্যাপারে নাযিল হয়। ইবন আব্বাস(রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, কাউকে তোমরা লূত (আঃ) এর কাওমের কাজ করতে
দেখলে তাকে এবং যার উপরে তা করা হচ্ছে তাকেও হত্যা করে ফেল। এরপর আল্লাহ বলেন,
অতঃপর
যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে,
তবে
তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও।কেননা পাপ থেকে প্রবর্তিত নিষ্পাপ ব্যক্তির মত।
নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু। সহীহাইনে রয়েছে যে, যখন তোমাদের দাসী ব্যভিচার করে তখন যেন সে
চাবুক মারে এবং এরপর যেন তার উপর আর শাসন-গর্জন না করে”। অর্থাৎ, শাস্তি প্রদানের পর যেন মনিব তার দাসীকে আর
দোষ না দেয়।কারণ শাস্তি হল পাপ মোচনের উপায়।
মারিফুল
কুরআন
সমকামীতার
ও পায়ুকর্মের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সারা
জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর?এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি
করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।
‘‘ইবনে আববাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
তোমরা
লূত আ. এর সম্পদায়ের কাজ (তথা সমকামিতা) কাউকে করতে দেখলে এ কাজে লিপ্ত উভয়কে
হত্যা কর’’।
সমকামীদের
ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
চার
শ্রেণীর লোক আছে যারা আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে সকাল বেলা উঠে সন্ধ্যায় পৌছায়। তারা হল
নারীবেশী পুরুষ, পুরুষবেশী নারী,
পশুর
সাথে সংগমকারী এবং সমকামী।
সমকামীদের
ব্যাপারে আরেকটি দলীল আছে যা হচ্ছে
নিম্নবর্ণিত হাদীসটিঃ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ فِي عَمَلِ قَوْمِ لُوطٍ»
আমার
উম্মাতের সম্পর্কে যে বিষয়ে আশংকা বোধ করছি এবং ভয় করছি, তার ভিতর সবচেয়ে বেশী আশংকা করছি পুরুষে
পুরুষে যৌন মিলন। ৯০
সমকামীদের
ব্যাপারে ইসলামে অনেক কঠোর বিধান আরোপ করা হয়েছে। উমর(রাঃ) এর খিলাফতকালে একবার
সিরিয়ার কিছু কিছু অঞ্চলে এই অপরাথের বিস্তার ঘটলে আলী(রাঃ) তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে
হত্যা করার নির্দেশ জ্ঞাপন করেছিলেন।
যে
ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সংগম করল,
স্ত্রীর
পিছন দিক দিয়ে সংগম করল ........সে যেন মুহাম্মদ(সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ কিতাবকে
অস্বীকার করল।
অপর
এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি তার
স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সংগম করে সে অভিশপ্ত।
মাযহারী
লাওয়াতাত
তথা সমকামিতার কোন নির্দিষ্ট শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয় নাই। তা ইমামের রায়ের উপর
নির্ভরশীল। তার মতে, মৃত্যু পর্যন্ত
শাস্তি দিতে হবে আর এ ধরনে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের কতল করতে হবে।
ইমাম
মালিক,শাফি,আহমাদ,আবূ ইউসুফ এবং
মুহাম্মদ(রঃ) এর মতে, সমকামিতা
শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইমাম শাফিঈ এর একমতে তাদের শাস্তি হল তলোয়ার দিয়ে কতল করা।
মুহাম্মদ,ইউসুফ,আহমাদ ও শাফিই এর এক অংশের মতে তাদের শাস্তি হল ব্যভিচারের
মত শাস্তি। কিন্তু হানিফা বলেন যে,
যিনা
আর লাওয়াতাত এক বিষয় নয়। দুটি দুই জিনিস।তাই তাদের শাস্তির বিধান এক নয়।তাদের
শাস্তি অন্যরকম হবে। কিন্তু শাস্তি পেতেই হবে তা আল্লাহ কিংবা রাসূলের যমানায় কোন
কিছুর দ্বারা প্রমাণিত নয়।
১৭।
এই
আয়াতের ভাবার্থ হল এই যে, আল্লাহ ঐ বান্দার
তওবা কবুল করেন যারা অজ্ঞানতাবশত কোন খারাপ কাজ করে বসে,যদিও এ তাওবা ফেরেশ্তা দেখার পরেও মৃত্যুর পূর্বে গড়গড়া
পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মুজাহিদ(রঃ) এ আয়াতের অজ্ঞতার ব্যাখ্যা প্রদান করতে যেয়ে
বলেন যে, ইচ্ছা করে হোক আর অনিচ্ছায় হোক যে আল্লাহর অবাধ্য সেই অজ্ঞ, যে পর্যন্ত সে না সে বিরত হয়।
আবুল
আলীয়া(রঃ) বলেন, সাহাবাকিরাম বলতেন
বান্দা যে পাপ করে তা অজ্ঞতাবশত করে।
কাতাদা(রঃ)
সাহাবীদের একটি দলের একই বর্ণনা দেন। আতা(রঃ) ও ইবন আব্বাস(রাঃ) এরকম মতামত ব্যক্ত
করেছেন। কোন কোন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে যে,
এখানে
অবিলম্বে তাওবা করার অর্থ হল ফেরেশ্তা দেখার পূর্বে তাওবা করা।
প্রকৃতপক্ষে
সুস্থাবস্থায় তাওবা করা উচিৎ। গড়গড়া সময়ের পূর্বে তাওবা করলে সে তাওবা গৃহীত হয়। এ
মর্মে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা হলঃ
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
ইরশাদ করেন, আল্লাহ স্বীয় বান্দার
তাওবা কবুল করে থাকে যে পর্যন্ত না মৃত্যুর গড়গড়া উপস্থিত না হয়। [তিরমিযী]
ইবন
উমার(রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, যে বান্দা তার মৃত্যুর এক মাস আগে তাওবা করবে আল্লাহ তা
গ্রহণ করবেন, এমনকি তা মৃত্যুর
একদিন আগে হলেও, এমন কি এক প্রহর
আগে হলেও।যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে ও সত্যত্যার সাথে আল্লাহর দিকে ঝুকে পড়বে তিনি
তার তাওবা কবুল করবেন।
ইবন
উমার(রাঃ) ইরশাদ করেন,যে বান্দা তার
মৃত্যুর এক বছর আগে তাওবা করবে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন, যে বান্দা তার
মৃত্যুর এক মাস আগে তাওবা করবে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন, যে বান্দা তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তাওবা
করবে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন, এমনকি তা মৃত্যুর
একদিন আগে হলেও। এরপর আয়ুব(রাঃ) উক্ত আয়াতটি তিলওয়াত করলে ইবন উমার(রাঃ) বলেন যে
কথা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে শুনেছি তাই বলেছি।
মুসনাদে
আহমদে রয়েছে, চারজন সাহাবী
একত্রিত হয়েছি। তাদের ভিতর একজন বলেন,
আমি
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে শুনেছি, যে বান্দা তার
মৃত্যুর এক দিন আগে তাওবা করবে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন। এরপর ২য় ব্যক্তি বললেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে এই শুনেছি যে,যে বান্দা তার মৃত্যুর অর্ধ দিন আগে তাওবা করবে আল্লাহ তা
গ্রহণ করবেন। তখন ৩য় ব্যক্তি বলেন,
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
এর কাছে এই শুনেছি যে,যে বান্দা তার
মৃত্যুর এক প্রহর আগে তাওবা করবে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন। তখন ৪র্থ ব্যক্তি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে এই শুনেছি যে, আল্লাহ স্বীয়
বান্দার তাওবা কবুল করে থাকে যে পর্যন্ত না মৃত্যুর গড়গড়া উপস্থিত না হয়।
এছাড়াও
তাফসীরে মিরদুয়াই এও রয়েছে এমন এক রিওয়য়াত যেখানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ স্বীয় বান্দার তাওবা কবুল করে থাকে যে
পর্যন্ত না মৃত্যুর গড়গড়া উপস্থিত না হয়।
আবূ
কালাবা(রঃ) বলেন, আল্লাহ যখন
ইবলীশকে অভিশাপ দিয়ে বিতাড়িত করে তখন ইবলিস আল্লাহর কাছে এই আরজু করে যে, আমি আপনার বান্দার অন্তরের ততক্ষণ পর্যন্ত
থাকন যতক্ষণ না তার আত্মা দেহ থেকে পৃথক না হয়। তখন আল্লাহ শয়তানকে বলেন, আমি তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করব যতক্ষণ না
আত্মা দেহে থাকবে।
তাই
যখন কোন বান্দা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
নুরুল
কুরআন
কালবী(রঃ)
এর মতে, জাহিলিয়াত হল পাপের
শাস্তির ব্যাপারে না জেনে পাপ করা।
ইমাম
রাজী(রঃ) এর মতে তা হল মূর্খতাবশত কোন পাপ করা। কারণ কুরআনে মূসা(আঃ) ও নূহ(আঃ)
আল্লাহর কাছে যে জাহিলিয়াত ব্যাপারে আশ্রয় গ্রহণ করেন তা এর অন্তর্ভূক্ত।
কখন
তাওবা করতে হবে এ ব্যাপারে বেশকিছু মতামত রয়েছে। কালবী(রঃ) এর মতে, তা হল সুস্থ অবস্থায় তাওবা করা।
সানাউল্লাহ
পানিপথী,জাহাক ও আকরামা(রঃ) এর মতে
তা মৃত্যুর আগে করলেই হবে।
এক
ব্যক্তি ৯৯টি খুন করার পরে আল্লাহ তাকে এক বিশেষ উপায়ে ক্ষমা করেছিলেন।
এ
ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত প্রজ্ঞা কাকে কীভাবে কখন শাস্তি দিতে হবে।
কুরআনে
প্রায় ৭০ বার তাওবার কথা বলা হয়েছে।
হাসান
বসরী(রঃ) বলেন, তাওবার মূল কথা হল
গুনাহের জন্যে লজ্জিত হওয়া, মুখে ক্ষমা চাওয়া
আর সেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে খারাপ কাজে নিয়ে না যাওয়া।যারা এমনিভাবে তাওবা করবে যাতে
করে তাদের আর কোন গুনাহ থাকে না আর আল্লাহর দরবারে তাদের তাওবা কবুল হয়।
মাযহারী
হিংস্র
ও পাশব হওয়ার সময়ে আল্লাহর আযাব সম্পর্কে গাফিল থাকা। হল জাহিলিয়াত।
১৮
তবে
একথাও সত্য যে, যে মৃত্যুর আগে
ফেরেশ্তা দেখবে আর মৃত্যুর আগে গড়গড়া শুরু করবে তখন তার তাওবা কবুল হবে না। আর এই
কারণে আল্লাহ বলেন, জীবন ভর যে পাপ
করে আর মৃত্যু অবলোকন করে আর বলে আমি এখন তাওবা করেছি। এরুপ লোকের তাওবা গৃহীত হয়
না।তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, তারা যখন
আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল,
তখন
বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতি
বিশ্বাস করলাম এবং যাদেরকে শরীক করতাম,
তাদেরকে
পরিহার করলাম। [মুমিনঃ৮৪]
এছাড়া
সূরা আনআমের ১৫৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
সূর্যকে
পশ্চিম দিকে উদিত হতে দেখে কেউ ঈমান আনবে কিংবা সৎকর্ম করবে তাহলে তার সেই সৎকর্ম
ও ঈমান কিছুই কাজে আসবে না।
এরপর
তিনি বলেন, যারা কুফর ও শিরকের উপর
মৃত্যুবরণ করবে তাদের তাওবায় কোন উপকার আসবে না,তাদের এর বিনিময় কোন ক্ষতিপূরণ কাজে আসবে না। তারা যদি পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ
দান করে তাও কাজে আসবে না।
ইবন
আব্বাস(রাঃ) বলেন, উক্ত আয়াতটি
মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
মুসনাদে
আহমদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
বলেন, আল্লাহ স্বীয় বান্দার
তাওবা কবুল করে থাকেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন যে পর্যন্ত না পর্দা না পড়ে
যায়। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় এই পর্দা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? তখন তিনি বলেন, শিরক অবস্থায় প্রাণ নির্গত হওয়া।এরুপ লোকদের জন্যেই আল্লাহ
তাআলা চিরস্থায়ী বেদনাদায়ক শাস্তি রেখেছেন।
নুরুল
কুরআন
যারা
অনবরত পাপাচারে লিপ্ত হয়, ফিরাউনের মত
মৃত্যুর প্রক্কালে তাওবা করবে, কিংবা কুফর
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এরপরে হাশরের ময়দানে তার কাছে তাওবা করবে আল্লাহ তাদের
তাওবা কোনভাবেই কবুল করবেন না।
১৯
সহীহ
বুখারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন কেউ মারা যেত
তখন তার উত্তরাধিকারকে তার স্ত্রীর উপর পূর্ণ অধিকার রাখার দাবীদার হিসেবে মনে করা
হত। সে ইচ্ছা করলে নিজেও বিয়ে করতে পারত কিংবা অন্য কারও কাছে বিবাহ দিতে পারত
কিংবা বিবাহ না দিয়েও রাখতে পারত।স্ত্রী লোকোটির আত্মীয়-স্বজন থেকে ঐ ব্যক্তিকে
প্রভাবশালী মনে করা হত। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত নাযিল হয়।অন্যত্র এরুপ
বর্ণনা রয়েছে যে, স্ত্রীলোকটি বাধ্য
করত যে, সে যেন মুহরের দাবী ত্যাগ
করে আর যেন সে বিয়ে না করে। এটাও বর্ণিত আছে যে, কোন স্ত্রী বিধবা হলে পরে তার গায়ের উপর ঐ দাবীদার ব্যক্তি
চাদর নিক্ষেপ করত। যদি সে সুন্দরী হত তাহলে তাকে বিবাহ করত আর যদি বিশ্রী হলে তাকে
মৃত্যু পর্যন্ত আটকে রাখত। আবার এমন
বর্ণনা রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির কোন
বন্ধু এসে সেই মহিলার গায়ে কাপড় নিক্ষেপ করত আর যদি সেই স্ত্রীলোকটি মুক্তিপণ
হিসেবে কিছু দিত তাহলে তাকে বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করতেন কিংবা তাকে বিধবা
থাকতে বলতেন। যায়দ বিন আসলাম(রঃ) বলেন,
মদীনাবাসীর
প্রথা ছিল এমন যে, যখন কোন লোক মারা
যেত তখন যে তার সম্পদের মালিক হত তখন তাকে স্ত্রীলোকের উত্তরাধিকার করা হত। আর সে
তার সাথে অত্যন্ত জঘন্য আচরণ করত। তালাক দেওয়ার সময়ে এই শর্ত থাকত যে, ইচ্ছে করলে বিবাহ করতেও পারবে আবার নাও পারবে।
আর এইসকল বন্দীত্ব থেকে মুক্ত রাখার জন্যে আয়াত নাযিল হয়।
তাফসীরে
মিরদুওয়াই এ বর্ণিত আছে যে, আবূ কায়স ইবন আসলাত
মারা গেলে তার পুত্র অজ্ঞতা যুগের প্রথা অনুযায়ী তার স্ত্রীকে বিবাহ করার ইচ্ছা
প্রকাশ করেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
আতা(রঃ)
বলেন, অজ্ঞতার যুগে মানুষ মৃত
ব্যক্তির স্ত্রীকে কোন একটি শিশুর কাজে লাগিয়ে দিত। মুজাহিদ(রঃ) বলেন, যখন কেউ
মারা যেত তখন তার স্ত্রীর ব্যাপারে পুত্রকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হত। সে
ইচ্ছে করলে তার বিমাতাকে বিবাহ করতে পারত কিংবা তার ভ্রাতৃষ্পুত্র,ভ্রাতা কিংবা অন্য কারও সাথে বিবাহ দিতে পারত।
ইকরামা(রঃ)
বর্ণনা করেন, আবূ কায়সের
স্ত্রীর নাম ছিল উম্মে কাবীশাহ(রাঃ)। তিনি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)কে এই সংবাদ প্রদান
করেন যে, এ লোকগুলো(হামওয়ান) না
আমাকে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে গণ্য করে আমার স্বামীড় মীরসার প্রদান করছে, না আমাকে ছেড়ে অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব
হতে দিতে পারে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। অন্য একটি বর্ণনা রয়েছে, নিক্ষেপের আগেই যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী
পালিয়ে গিয়ে তার পিত্রালয় চলে যেত তাহলে সে মুক্তি পেয়ে যেত।
মুজাহিদ(রঃ)
বলেন, যার কাছে ইয়াতীম বালিকা
থাকত তাকে আটকে রাখা হত এই মনে করে যে,
তার
স্ত্রী মারা গেলে সে তাকে বিবাহ করবে কিংবা তার পুত্রের সাথে তাকে বিবাহ প্রদান
করবেন। এইসব কুপ্রথাকে নিষিদ্ব করার জন্যেই আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।
এরপরেই
আল্লাহ স্ত্রীদের বাসস্থান সংকীর্ণ করতঃ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে বাধ্য কর না যে তারাযেন
সকল মোহর বা মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে চায়। কেননা তাদেরকে শাসন গর্জন করে এই কাজে
বাধ্য করা হচ্ছে।
ইবন
যায়দ(রঃ) বলেন, মক্কার কুরায়শদের
ভিতর এমন নিয়ম ছিল যে, যখন স্বামী
স্ত্রীকে তালাক দিত তখন স্বামী স্ত্রীকে অন্য জায়গায় বিবাহ দিত না। বিভিন্ন ধরনের
শর্তারোপ করত। তারা বলত যে, টাকা দিতে হবে তানাহলে
বিবাহ হবে না। এই প্রথাকে রহিত করার জন্যেই তা নাযিল হয়। মুজাহিদ(রঃ) বলেন, এর নির্দেশ সূরা বাকারার নির্দেশ।
ইবন
আব্বাস(রাঃ) বলেন, এর ভাবার্থ হল এই
যে, স্ত্রী পছন্দ হচ্ছে না তাই
তাকে ছেড়ে দিতে চায়।এখন তালাক না দিয়ে তাকে ছাড়ানোর কথা বলছে এই কারণে যে তাকে
মুহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর তা থেকে বাঁচার জন্যে তার স্ত্রীকে কষ্ট দিয়ে
জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে যাতে করে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। আর
মুহরের কোন অধিকার থাকে না এখানে।
আর
এই কারণেই আল্লাহ পাক মুসলিমগণকে এধরনের জঘন্য কাজ থেকে বিরত রাখার জন্যে উক্ত
আয়াত নাযিল করেন। ইবন সালমানী(রঃ) বলেন,
এ
আয়াতদ্বয়ের ভিতর প্রথমটি অজ্ঞতা যুগের প্রথাকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্যে আর দ্বিতীয়
আয়াতটি ইসলামী রীতি সংশোধনের জন্যে অবতীর্ণ হয়।
এ
আয়াতে একথাও বলা হচ্ছে যে, তাদের দ্বারা যদি
অশ্লীলতা প্রকাশ পায় এর ব্যাখ্যায় অধিকাংশ সাহাবী ও তাবিঈদের মতে এর অর্থ হল
ব্যভিচার। সেইসময়ে তাদের কাছে থেকে মুহর ফিরিয়ে নেওয়া বৈধ। সেই সময় তাদের জীবনকে
আরও সংকটময় করে তুলতে হবে যার দ্বারা তারা খুলা নিতে বাধ্য হবে। সূরা বাকারায়
আল্লাহ ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্যে বৈধ
নয় তাদেরকে মুহরের কিছু অংশ গ্রহণ কর,
কিন্তু
শুধু সেই সময়ে পার যখন তাদের উভয়ের
আল্লাহর সীমা ঠিক রাখতে না পারার ভয় হবে। এখানে আবার কারও মতে, প্রকাশ্য অশ্লীলতা হল এখানে অবাধ্য স্ত্রীদের
বলা হয়েছে যারা স্বামীদের কথা শুনে না,তাদের সাথে সর্বদা
রুঢ় আচরণ করে। ইমাম ইবন জারীর(রঃ) এর মতে,
এখানে
প্রকাশ্য অশ্লীলতা হল ব্যভিচার ও স্বামীর প্রতি অবাধ্যতা দুই আচরণকে বুঝিয়েছে। আর
এমতাবস্থায় তার জীবনকে স্বামীর জন্যে উচিৎ যে স্ত্রীর সাথে এমন আচরণ করা যেন
স্ত্রী সমগ্র কিংবা আংশিক ছেড়ে দেয় এবং এরপরে পৃথক হয় তারা।
এরপর
আল্লাহ বান্দাদের নির্দেশ প্রদান করছেন যে,
তারা
যেন তাদের স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করে আর তাদের সাথে যেন নম্র আচরণ করে।
সাধ্যমত নিজেকেও সুন্দর রাখতে হবে। যদি কেউ চায় তার স্ত্রী সজ্জিত থাকুক তাহলে তার
জন্যে নিজেরাও সজ্জিত থাকে। যেমন কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, সদ্ভাব যেমন তোমাদের তাদের উপর অধিকার রাখে
তেমনি তাদের অধিকার তোমাদের উপর আছে। [বাকারাঃ২২৮]
তিনি
ইরশাদ করেন, তোমাদের ভিতর ঐ ব্যক্তি
সর্বোত্তম যে তার আপন স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
নিজেও তার স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি তাদের সাথে নম্র আচরণ
করতেন,তাদের সাথে হাসি-মুখে কথা
বলতেন, তাদেরকে খুশী রাখতেন, মনোমুগদ্বকর কথা বলতেন, তাদের প্রয়োজন পূরণ করতেন, তাদেরকে কখনও হাসাতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়শা
সিদ্দীকা(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতাম। আগে আমি জিততাম।এরপরে আমার সে আমার আগে পৌছে যেত।
আর তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলতেন যাক শোধ হয়ে গেল। এভাবে করে তিনি তাদের স্ত্রীদের
সন্তুষ্ট রাখতেন। বিভিন্ন পত্নীঘরে তিনি তার স্ত্রীদের একত্রিত করতেন। এরপরে তাদের
সাথে গল্প করতেন। অনেক সময় অতিবাহিত করতেন। তারা একসাথে খাওয়া দাওয়া করতেন। এভাবে
করে তিনি সকল স্ত্রীদের মাঝে নিজের ভালবাসাকে আত্মপ্রকাশ করতেন। তাই আমাদের মুসলিম
স্বামীদের উচিৎ স্বীয় মুসলিম স্ত্রীদের সন্তুষ্ট রাখা। কারণ আল্লাহ বলেন, আমার নবীর অনুসরণে তোমাদের জন্যে মঙ্গল
রয়েছে।
এরপরে
আল্লাহ বলেন, মন যদি না চায়
স্ত্রীর সাথে সংসার করতে এরপরেও যেন তার সাথে ভালমত জীবন-যাপন করে। এর মাধ্যমে
আল্লাহ তাদেরকে বড় ধরনের কোন মঙ্গল প্রদান করবেন।হয়তো তাদের পেটে সুসন্তান আসবে আর
তার দ্বারা তারা বড়ই সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, মুমিন পুরুষ যেন মুমিন স্ত্রীকে পৃথক করে না
দেয়। যদি সে তার একটি আধটির কথায় অসন্তুষ্ট হয় তাহলে সে স্ত্রী তার কোন ব্যবহার
দ্বার সন্তুষ্টও করবে।
২০
এখানে
আল্লাহ বলেন, তালাক দিয়ে এক
স্ত্রীর পরিবর্তে অন্যকে গ্রহণ করতে চায় তাহলে যেন তার স্ত্রীকে প্রদত্ত মুহর থেকে
কিছুই ফিরিয়ে না নেওয়া যদিও তাকে প্রচুর মাল প্রদান করতে হয়। সূরা ইমরানেও একই
বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা প্রামণিত হয় যে, স্ত্রীকে মুহর হিসেবে দান করা একটি বৈধ কাজ। হযরত উমর (রা:) এর শাসনামলে তিনি সাহাবীদের
সঙ্গে অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ
নির্ধারণের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন,
যাতে
বিয়েতে যুবকেরা উৎসাহিত হতে পারে।তিনি মুহরকে পার্থিব বিষয়ের সাথে তুলনা করলেন।আর
বললেন যেখানে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) নিজেই তার কণ্যা বা স্ত্রীদের মুহর ১২ উকিয়ার বেশী
নির্ধারণ করেন নাই।এরপরে সেই স্ত্রী তার উপর বীঝা হয়ে দাঁড়াবে আর তাদের ভিতর
পারস্পারিক শত্রুতা সৃষ্টি হবে। তখন একজন মহিলা প্রতিবাদ করে বললেন-যখন কুরআন বলে-
‘‘ তুমি মহর হিসাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদও দিতে পার।” (সুরা নিসা, ২০)
অর্থাৎ
কুরআন মহরের ব্যাপারে কোনো সীমা নির্ধারণ করেনি, সেখানে সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উমর কে? তৎক্ষণাৎ খলিফা উমর (রা) বললেন, উমর ভুল করেছেন, মহিলাই সঠিক। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রাঃ) এভাবে বর্ণনা করেন
যে, মহিলাটি এখানে উমারের উপর
বিজয় লাভ করল। অন্য এক বর্ণনা হতে জানা যায় যে, উমার(রাঃ) বলছিলেন যে,
যদিও
বিল কিসসা অর্থাৎ ইয়াযীদ দিন হুসায়নের মেয়েও হয় এরপরেও মুহর বেশী নির্ধারণ করবে
না। তখন উক্ত মহিলা তার সাথে এভাবে করে তর্ক করে জয় লাভ করেছিলেন। আর উমর(রাঃ)
বলেন, লোকটি ভুল করেছে আর
মহিলাটি ঠিক বলেছে।
No comments:
Post a Comment