৭
খাতাম শব্দের অর্থ হল মোহর দিয়ে দেওয়া,সীলমোহর মেরে দেয়া,শেষ করে দেওয়া,এমনভাবে সীলগালা বাহিরের আবরণ হতে লাগিয়ে দেওয়া যার দ্বারা
ভিতর থেকে বাহিরে কোন কিছু বের হতে না পারা।কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের খাতামুন কথাটি
উল্লেখ করা হয়েছে।যেমন আল্লাহ পাক বলেন,“আজকের দিনে তাদের উপর ছিল
মেরে দিব”।[ইয়াসীনঃ৬৫]
সুদ্দী(রঃ) বলেন, খাতাম শব্দের অর্থ হল মোহর করে দেওয়া।
ইমাম কুরতুবী(রঃ) বলেন, মোহর লাগিয়ে দেওয়া হল আল্লাহর একটি বিশেষ গুণ।
যা কাফিরদের কুফরীর দরুন তা তাদের উপর লাগানো হয়। তাদের কুফরীর কারণে তাদের উপর তা
লাগানো হয়।
এ ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয় যে,
তাদের কুফরীর দরুন তাদের উপর আল্লাহ মোহর অংকন
করে দিয়েছে। [নিসাঃ১৫৫]
কাতাদাহ(রঃ) বলেন, শয়তান তাদের উপর বিপুলভাবে জয়লাভ করে তাদের
অন্তঃকরণ দখল করে নিয়েছে এবং তারা তারই অজ্ঞাবাহে দাসে পরিণত হয়ে গেছে। শেষ
পর্যন্ত তাদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে এবং চোখের উপর পর্দা পড়ে
গেছে। তাই তারা হিদায়াত দেখতেও পায় না আর তা তারা শুনতেও পায় না।
মুজাহিদ(রঃ) বলেন, পাপ মানুষের অন্তরে চেপে বসে এবং তাকে চারদিক
থেকে ঘিরে নেয় আর এটাই হল মোহর। অন্তর ও কানের জন্যে প্রচলিত অর্থ মোহর।
তিনি আরও বলেন, কালব হল হাতের মত। যখন মুষ্টিবদ্ব করে তকন বাহির হতে কিছুই
প্রবেশ করতে পারে না।
কারও মতে, খাতাম অর্থ হল গোপন করা। যখন কোন মোহর দেওয়া হয় যখন তার
অন্তরে মোহর করা হয় ভিতর থেকে কোন বস্তু না বাহিরে যায় না বাহির থেকে ভিতরে কিছু
যাবে।
ইবন জারীর(রঃ) বলেন, অহংকার ও অবাধ্যতার জন্যে তাদের অন্তরে সত্য
কথা ঢুকবে না যা হল মোহর।
তিনি এখানে এই হদীস উল্লেখ করেছেন, অন্তরের ভিতর ফিৎনা এমনভাবে উপস্থিত হয় যেমন
ছেঁড়া মাদুরের একটা খড়কুটা। যে অন্তর তা গ্রহণ করে তাতে একটি কালো দাগ পড়ে যায় এবং
যে অন্তরে ফিৎনা ক্রিয়াশীল হয় না তাতে একটা সাদা দাগ পড়ে, আর সেই শুভ্রতা বৃদ্বি পেতে পেতে সম্পূর্ণ
সাদা হয়ে গিয়ে সমস্ত অন্তরকে আলোকে উদ্ভাসিত করে দেয়। এরপর ফিৎনা এই অন্তরের কোন
ক্ষতি করতে পারে না। অন্যদিকে কৃষ্ণতা ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষে সমস্ত অন্তরকে
কালিমাময় করে দেয়। তখন তা উল্টানো কলসের মত হয়ে যায় এবং ভাল কথা আর ভাল লাগে না আর মন্দ কথাও খারাপ লাগে না।
অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “শরীরের দেহে একটি
মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়।আর যদি তা খারাপ হয়,তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কালব বা দিল”।[বুখারী ও মুসলিম]
এরপরেই তিনি তিলওয়াত করেন যে, নিশ্চয় তাদের পাপের কারণে তাদের অন্তরে মরীচা
পড়ে গেছে।
আবার কারও মতে, যখন কেউ পাপ করে তখন তার কানে কোন কথা আর ঢুকে না।
ইবন যুরাইজ(রঃ) বলেন, কালবের ভিতর গুনাহের কাজ হতে থাকার কারণে এর
চারপাশে এমনভাবে প্রস্তর লাভ করেছে যে যার ভিতর আর কিছুই প্রবেশ করতে পারে না।
আল্লামা ইমামুদ্দীন ইবনুল কাসীর(রঃ) বলেন, খাতম ও তুবা হল পারস্পারিক প্রতিশব্দ। অর্থাৎ
এরুপ অন্তরে না বাহিরে দিয়ে কিছু আসবে না ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করবে। এটি আমাদের
চোখে স্পষ্ট দেখা যায় যে, যদি কোন কিছুর
মুখের উপর মোহর দেওয়া হয় তখন তার বাহির দিয়ে কিছু আসবে না আবার ভিতর দিয়েও কিছুই
বের হবে।তদ্রুপ যাদের অন্তরে ও কানে মোহরে অংকিত করা হয় তাদের ভিতরে না বাহির থেকে
ঈমান প্রবেশ করবে না ভিতর থেকে কুফরী বাহিরে চলে যাবে। যেমন কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনার অন্তরে মোহর এঁটে
দিতেন। [শুয়ারাঃ২৪]
তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার
চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। [জাসিয়াঃ২৩]
খাতামের ব্যাপারে মুতাযিলাদের অভিমত
খাতাম শব্দটির ব্যাখ্যা মুতাযিলা মুফাসসিরীনরা
বিভিন্নভাবে দিয়েছে। যা হলঃ
১. কাফির সম্প্রদায়ের বিমুখতা তাদের অন্তরে
এমনভাবে বসে গেছে যার ফলে তাদের উপর মোহর দেওয়া হয়েছে।
২. কাফিরের অন্তঃকরণ হল পশুর অন্তঃকরণের মত।
কিন্তু আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের লোকেরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ কাফিররা
অস্বীকারকারী ও অবাধ্যকারী হলেও তাদেরকেও আল্লাহ যে কারও মত জ্ঞান-বিবেক দান
করেছেন। কিন্তু তারা বিভিন্ন কারণে আল্লাহ ও তার নিআমতসমূহ অস্বীকার করছে। তাই
তাদের অন্তর যে পশুর অন্তঃকরণ তা ঠিক নয়। তাছাড়া মানুষ ছাড়া আর সকল পশু পাখি
আল্লাহর যিকির করে থাকে যা মানুষেরা উপলব্দ্বি করতে পারে না।কিন্তু কাফিররা তা করে
না।
৩. আল্লাহ কাফিরদের উপর মোহর এটে দেয়া নাই, বরং তারা শয়তানের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে পাপকর্মে
লিপ্ত হয়। আর যার ফলে আল্লাহ নয় বরং শয়তান তাদের উপর মোহর এটে দিয়েছে বলে
মুতাযিলারা এই অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। কিন্তু এই ধরনের বক্তব্যকে আহলে সুন্নাহ
ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ এটিই ইতিপূর্বে উল্লেখ করা
হয়েছে যে, মোহর এটে দেওয়া আল্লাহর
গুণাবলীর ভিতর অন্যতম একটি গুণাবলী। তাই এর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও
নেই।
৪. কাফিরদের রক্ত কুফরীর সাথে মিশে গিয়েছে বলে
তাদের উপর মোহর এটে দিয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ
অনেক সাহাবী তাদের জীবনের শুরতে কাফির ছিল।তাদের অনেকে ছিলেন ইসলামের ঘোরতর শত্রু
ও ইসলামের জন্যে ক্ষতিসাধনকারী কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করলে
তারা মুসলিমে পরিণত হয়ে ইসলামের খাদিমে পরিণত হন। যদি তাদের রক্ত কুফরীর সাথে মিশে
যেত তাহলে তারা কখনও মুসলিম হতেন না।
৫. মানুষের অন্তরে এমন চিহ্ন প্রদান করা যার
দ্বারা তারা ঈমান গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবে না।
৬. কাফিরদের উপর এমন কোন ধরনের আবরণ দিয়ে
দেওয়া যাতে করে তারা কোন বিষয়ে উপলব্দ্বি করতে পারবে না। তাই আল্লাহ বলেন,
আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দেই, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে। [ইসরাঃ
৪৬]
৭. এখানে মাহরের মূল উদ্দেশ্য পার্থিব কোন
বিষয়ের সাথে সংক্লিষ্ট নয়; বরং তা কাফিরের
হাশরের ময়দানের সাথে সংক্লিষ্ট। সেইদিন তারা আল্লাহর সামনে একেবারে অন্ধ ও বধিরের
ন্যায় উপস্থিত হবে। এ মর্মে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
আমি কেয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে
ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মুক অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। [ইসরাঃ৯৭]
গিসায়াতুনের ব্যাখ্যা
গিসায়াতেন হল পর্দা দিয়ে কোন কিছু ঢেকে দেয়া।
গুনাহের কারণে তাদের অন্তর বেষ্টিত হয়ে যাওয়া হল গিশায়াতুন। যখন কাফিরদের অন্তরে ও
কানে আল্লাহর মোহর লেগে যায়। সেই মোহর সরে না যাওয়া পর্যন্ত তার ভিতরে হিদায়াত
প্রবেশ করতে পারবে না এবং তা থেকে কুফর বের হতে পারবে না। কারণ তাদের অন্তরের সীল
লাগানো হয়েছে।পর্যায়ক্রমে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে আর এবস্থার নাম
হল গিসায়াতুন।
ইবন আব্বাস(রাঃ), ইবন মাসউদ(রাঃ) হতে সুদ্দী(রঃ) বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হল তারা না বুঝতে পারে, না শুনতে পারে।
এই গিশায়াতুন কুরআনের অন্যত্র উল্লেখ করা
হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে।
তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার
চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। [জাসিয়াঃ২৩]
৯
খিদাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল গোপন করা, ধুম্রজাল সৃষ্টি করা।
পারিবভাষিকভাবে বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি তার সঙ্গীকে সে যা ইচ্ছা করছে তার
বিপরীত ধারনা দেওয়াকে খিদাহ বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায় যে, মনে এমন ধারনা পোষণ করা যার বিপরীত ধারানা
দেওয়ার নাম হল খিদাহ।
আল্লাহর সাথে খিদাহ করার অর্থ
আল্লাহ মানুষের ভিতরের ও বাহিরের সকল খবর
জানেন। তাই এখানে আল্লাহর সাথে কোনভাবে খিদাহ করা সম্ভব নয়। এর উদ্দেশ্য হল খিদাহ
দানকারী যেভাবে কাজ করে তাআর আল্লাহর সাথে সেভাবে কাজ করে আতি বলা হয়েছে তারা
আল্লাহর সাথে খিদাহ করছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাথে কেউ খিদাহ করাতে পারে না। মূলত
তারা কাদের সাথে খিদাহ করে সে ব্যাপারে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায় যা হলঃ
১. তারা আল্লাহর রাসূলের সাথে খিদাহ করে থাকে।
এখানে রাসূল কথাটি উহ্য রাখা হয়েছে।
২.
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ও মুমিনদের সাথে খিদাহ করে থাকে।
৩. তাদের কর্ম এমন এর দ্বারা খিদাহ হয়ে থাকে।
৪. ইবন আব্বাস(রাঃ) ও কুতাইবা(রঃ) এর মতে, এটি হল সাধারণ মুমিনদের ধোঁকা প্রদান করা।
৫. খিদাউয়ের অর্থ হয় ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা। তারা
আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে।
নিজেদের ধোঁকা দেওয়ার অর্থ কি?
১. ধোঁকা তাদের নিজেদের বিশ্বাসানুযায়ী হয়ে
থাকে। তারা মনে করে থাকে যে, তারা আল্লাহ ও
মুমিনদের ধোঁকা দিচ্ছে। কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদেরকে ধোঁকা দেয়। আল্লাহ এই মর্মে
বলেন,
মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে এবং
নিশ্চয় আল্লাহ তাদের প্রতারণার দিকে ধাবিত করেন। [নিসাঃ১৪২]
২. তারা নিজেদের মুমিন হিসেবে মনে করে তার
ন্যায় কাজ করে থাকে। কিন্তু তারা এর কোন ধরনের প্রতিদান লাভ করতে পারবে না।
৩. ফখরুদ্দিন রাজী(রঃ) বলেন, এরা ভাল কাজ করে কিন্তু এর দ্বারা আখিরাতে কোন
প্রতিদান লাভ করবে না। এর দ্বারা তারা মুসলিমগণ নয়, বরং তারা নিজেদের প্রতারণা করে থাকে এবং তাদের এই প্রতারণা
কোনভাবেই ফলপ্রসূ নয়।
৪. ইমামুদ্দীন ইবন কাসীর(রঃ) বলেন, মুনাফিকরা হতা, বন্দী হওয়া ও ইহলৌকিক নিরাপত্তা লাভের জন্যে এ ধরনের চালাকী
করেছে। তাই তারা মনে করে যে, তারা মুসলিমগণকে
ধোঁকা দিচ্ছে।পারতপক্ষে তারা নিজেরা নিজেদের ধোঁকা দিচ্ছে। কারণ এতে মঙ্গল ও সফলতা
রয়েছে বলে তারা মনে করলেও এটি শাস্তি ও আল্লাহর ক্রোধের কারণ হবে এবং তাদেরকে এমন
শাস্তি দেওয়া হবে যা তাদের সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে না।
৫. কাতাদাহ(রঃ) বলেন, মুনাফিকদের মুখ পৃথক, হাত পৃথক, মন পৃথক, কাজ পৃথক, বিশ্বাস পৃথক, সকাল পৃথক, সন্ধ্যা পৃথক, তারা নৌকার মত যা বাতাসে কখনও এদিকে ঘুরে কখনও
ওদিকে ঘুরে। [প্রতারণার শিকারকারীরাও এভাবে উদ্ভ্রান্তের মত চলাচল করে থাকে]
১৫
মুনাফিকরা মনে করে যে, তারা মুসলিমগণের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে।
কিন্তু পারতপক্ষে আল্লাহই তাদের সাথে ঠাট্টা করছে। তাদের সাথে এমনিভাবে ঠাট্টা করে
তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়ার সাময়িক নিরাপত্তা দান করবেন। এর দ্বারা তারা এই দুনিয়াতে
তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা পেয়ে যাবে। কিন্তু আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। বরং
তিনি তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করবেন।তখন তারা একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়বে। আল্লাহ
বিনা কারণে কারও সাথে ঠাট্টা করেন না।তা থেকে তিনি পবিত্র। তবে প্রতিশোধ হিসেবে
যদি তা গ্রহণ করা হয় তাতে কোন সমস্যা নেই। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস(রাঃ) একথাই বলেন
যে, এখানে তাদের উপর প্রতিশোধ
গ্রহণ ও শাস্তি আরোপ করা হয়।
এখানে যে ইয়ামুদ্দু কথাটা বলা হয়েছে তার অর্থ
হল বাড়ানো,বৃদ্বিকরণ। এখানে একে এর
প্রতিশব্দ হিসেবে তাকবীয়াকে গ্রহণ করা যেতে পারে যার অর্থ দাঁড়ায় শক্তিশালীকরণ।
এখানে কূফাবাসীগণ এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ইয়ামুদ্দ বলতে প্রত্যেক বস্তুর ভিতর
বর্ধিতাংশ। অর্থাৎ নতুন করে কোন কিছু যুক্ত করা। অন্য স্থান থেকে যুক্ত করা হল
যিয়াদা।
আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে, কোনকিছু অবকাশের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া। যেমন
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিব
এবং তাদেরকে তাদের বিভ্রান্তের ভিতর ছড়িয়ে দিব। [আনআমঃ১১০]
ইমাম আলূসী(রঃ) এর মতে,
ইয়ামুদ্দু হল গুনাহ করার সুযোগ করে দেওয়া।
ইমাম জারীর তাবারী(রঃ) বলেন, ইয়ামুদ্দু হল ঢিল দেওয়া ও বাড়ানো। যেমন কুরআনে
আল্লাহ ইরশাদ করেন,
অতএব, যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে
নিয়ে যাব যে, তারা জানতে পারবে
না। [কলমঃ ৬৮]
তাহলে ভাবার্থ দাড়াচ্ছে যে, এদিকে তারা পাপ করছে আর ঐদিকে তাদের দুনিয়ার
সুখ- সম্পদ ও ধনৈশ্বর্য উত্তরোত্তর বৃদ্বি পাচ্ছে, তাই এরা সুখী হচ্ছে,
কিন্তু
তা একটা শাস্তিই বটে। যেমনঃ তিনি এক জায়গায় ইরশাদ করেন,
অতঃপর তারা যখন ঐ উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তখন আমি তাদের সামনে সব কিছুর দ্বার উম্মুক্ত
করে দিলাম। এমনকি, যখন তাদেরকে
প্রদত্ত বিষয়াদির জন্যে তারা খুব গর্বিত হয়ে পড়ল, তখন আমি অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। তখন তারা নিরাশ
হয়ে গেল।অতঃপর জালেমদের মূল শিকড় কর্তিত হল। [আনআমঃ৪৪-৪৫]
তাই ইবন জারীর বলেন, তাদেরকে ঢিল দেওয়ার জন্যে এবং তাদের অবাধ্যতা
ও বিদ্রোহ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে তাদেরকে অধিক পরিমাণে ঢিল দেওয়া হয়।
এখানে তুগীয়ান অর্থ হল সীমালঙ্ঘন করা। কুফরের
ভিতর গভীরভাবে নিমজ্জিত হয়ে সীমালঙ্ঘন করার নাম হল তুগীয়ান।
ইমামুদ্দীন ইবন কাসীর বলেন, কোন বস্তুকে বা বস্তুর সীমাকে অতিক্রম করা হল
তুগীয়ান।এ ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তখন আমি তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহণ
করিয়েছিলাম। [হাক্কাহঃ১১]
এ আয়াতে যে আমহুন কথাটি বলা হয়েছে তাহল
উদ্বাস্তু অবস্থায় থাকা,সিদ্বান্তাহীনতা
এবং কুফরীর ভিতর সিদ্বান্তহীনতা।
কাতাদাহ(রঃ) বলেন, তারা গোমরাহীর ভিতর উদ্বাস্তুর ভিতর ঘুরে
বেড়ায়।
ইবন কুতাইবা(রঃ) বলেন, মাথা নীচু করে এমন মনে করা যে কেউ তাকে দেখে
না।
ইমামুদ্দীন ইবনে কাসীর বলেন, এখানে আমহুন হল পথভ্রষ্টতা। তাই এর ভাবার্থ হল
পথভ্রষ্টতা ও কুফরীর ভিতর এমনিভাবে ডুবে থাকে যে সেই নাপাকী তাকে ঘিরে ফেলেছে। এ
থেকে বের হওয়ার সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমউন হল বাহ্যিক অন্ধত্ব আর
আমহুন হল আভ্যন্তরীন আন্ধত্ব। তবে আমইয়ুন কখনও আভ্যন্তরীন অর্থাৎ অন্তরের অন্ধত্ব
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ ইরশাদ করেন,
বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়। [হাজ্জঃ৪৬
No comments:
Post a Comment