ইসলামী শরীয়াতে প্রত্যেকটি বিধানের পিছনে কোন
না কোন রহস্য বিরাজমান থাকে। তেমনিভাবে
সূরা ফাতিহাকে নামকরণ এর অন্যান্য নামের ব্যাপারে বেশকিছু হিকমত রয়েছে। তাফসীরে
বায়যাভীর আলোকে তার ব্যাখ্যা নিম্নে প্রদান করা হলঃ
১। সূরা ফাতিহা
ফাতিহা শব্দের অর্থ হল ভূমিকা বা প্রারম্ভ।
একে কেন সূরা ফাতিহা বলা হয় এর পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে যা হলঃ
১। মাসহাফে উসমানীতে ধারাবাহিক বর্ণনায় এ
সূরাটিকে সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।
২। এই সূরাটি সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছে।
৩। লাওহে মাহফুযে এ সূরাটি সর্বপ্রথম লিখা হয়
বলে এর নামকরণ হয় সূরা ফাতিহা। আল্লামা বায়যাভী বলেছেন,
এই সূরাটিকে ফাতিহাতুল কিতাব করার কারণ হল এই
যে, এটি মাসহাফের শুরুতে
আলোচনা করা হয়েছে তাই এর নাম হল সূরা ফাতিহা।
২।উম্মুল কুরআন
কুরআনে মূলত প্রায় চারটি উদ্দেশ্যে বিভিন্ন
কারণে আয়াতসমূহ নাযিল হয়ে থাকে যা হলঃ আহকাম বিষয়ক, আকীদা বিষয়ক,
জাগতিক
বিষয় এবং পারলৌকিক বিষয়। আর এই চারটি বিষয় মোটামুটিভাবে সূরা ফাতিহার ভিতর
সারসংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে বলে একে উম্মুল কুরআন বা কুরআনের জননী বলা হয়েছে।
আরেকটি মতামত হল এই যে, এই কুরআনের সকল মূলনীতিসমূহ আর ঈমান ও নেক
আমলের সকল বিষয়কে এখানে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে বলে একে উম্মুল কুরআন বলা হয়েছে।
৩। সাবাইল মাসালী
মাসানী অর্থ হল পুনর্ল্লেখ। আর এর আয়াত সংখ্যা
হল সাত। যেহেতু এই সাতটি আয়াত বারংবার তিলওয়াত করতে হয় তার একে সাবাইল মাসালী বলা
হয়।
আল্লামা বাগভী(রঃ) উপরোক্ত তিনটি নামের কথা
উল্লেখ করেছেন।
৪। সূরা কানয
কানযের অর্থ হল খনি। যেহেত্য খনি থেকে তা
অবতীর্ণ তাই একে সূরা কানয বলা হয়।
৫। সূরাতুল কাফিয়া
এর
অর্থ হল যথেষ্ঠ। যেহেতু এই সুরাহটি হিদায়াতের জন্যে যথেষ্ঠ তাই একে সুরাতুল কাফিয়া
বলা হয়।
৬। সূরাতুল ওয়াফিয়া
ওয়াফিয়া অর্থ হল পরিপূর্ণতা। যেহেতু এই
সূরাহের দ্বারা কুরআনের পরিপূর্ণতা লাভ হয়েছে তাই একে সূরাতুল ওয়াফিয়া বলা হয়।
৭। সূরাতুল দুআ
এই সূরার দ্বারা দুআ প্রার্থনা করা হয় বলে একে
সুরাতুল দুআ বলা হয়।
৮। আসাসুল কুরআন
আসাব অর্থ ভিত্তি। এটি কুরআনের ভিত্তি মূল
হওয়ার কারণে একে উৎসমূল বলা হয়েছে। অর্থাৎ,
এই
সুরাটিতে সকল বিষয়বস্তু এবং সর্বশ্রেণীর কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়কে সংক্ষিপ্তাকারে
তুলে ধরা হয়েছে বলে তাই একে আসাবুল কুরআন বলা হয়েছে।
৯। সূরাতুল হামদ এবং ১০। সুরাতুল শুকর
এই সূরাতে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি করা হয়েছে
বলে একে সূরাতুল হামদ বা সূরাতুল শুকুর বলা হয়েছে।
১১। সূরাতুশ শিফা ও ১২। সূরাতুশ শাফিয়া
শিফা অর্থ হল রোগমুক্তি। যেহেতু এই সূরাহ
তিলওয়াতের মাধ্যমে রোগমুক্তি রয়েছে তাই একে সূরাতুশ শিফা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
বলেন, সূরাহ ফাতিহা সকল রোগের
মুক্তি।
১৩। সূরাতুস সালাত
যেহেতু প্রত্যেক সালাতের প্রত্যেক ওয়াক্তে এটি
পড়তে হয় তাই একে সূরাতুস সালাত বলা হয়।
১৪। সূরাতু তালিমীল মাসআলা
এই সূরাতে যেহেতু সালাত,দুআ ও আবেদনের মাসালার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তাই একে সুরাতু
তালিমীল মাসআলা বলা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment