Wednesday, 21 May 2014

প্রশ্নঃ ইসলামী গবেষণা কি? গবেষকদের গুণাবলী ও ইসলামে গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে লিখ।



গবেষণা হল সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যার সাধারণ অর্থ হল সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান।এর সমার্থবোধক শব্দ হল জিজ্ঞাসা, তদন্ত, অণ্বেষা, অনুসন্ধান,বিকিরণ এবং নিরুপুণ। গবেষণা হল জিজ্ঞাসার উত্তর অন্বেষণের লক্ষ্যে তদন্ত করা,তদন্তের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা, সংগৃহীত তথ্যেরচিতর অনুসন্ধান করে জিজ্ঞাসার উত্তর বের করা।   আমরা অন্যভাবে বলতে পারি যে, গবেষণা হল পুনঃসন্ধান অর্থাৎ, তুলনামূলক উন্নত পর্যবেক্ষণ করা, ভিন্ন প্রেক্ষিতে খোঁজা এবং বাড়তি জ্ঞানের সংযোজন করার সুশৃংখল ব্যবস্থা। কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও সুসসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা। আরবীতে একে বাহস বলা হয় যার অর্থ হল মাটির ভিতর কোন কিছু তালাশ করা,খুজে বের করা ইত্যাদি।


ইমাম রাগিব ইস্ফাহানি বলেন-

বাহাস অর্থ হল উন্মুক্তকরণ এবং কোন কিছুর অনুসন্ধান করা।

ড. ইয়াহইয়া ওহায়ব বলেন-

কঠিন যমিন বা পাথরে গর্ত খনন করা।সুসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা।

 পারতপক্ষে গবেষণা বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধানের একটি আর্ট। ইংরেজীতে একে research বলা হয় যার বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। research শব্দটি দুটি শব্দ তথা re এবং search এর সমন্বয়ে গঠিত। re এর অর্থ হল পুনঃ পুনঃ আর search এর অর্থ হল অনুসন্ধান করা এবং কোনকিছু খুঁজে বের করা।  research এর পূর্ণাংগরুপ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

R-Rational of thinking

E-Expert and Exhaustive treatment

S-Search for solution

E- Exactness

A-Analytical analysis of adequate data

R-Relationship of facts

C- Careful recording, critical observation, Constructive attitude

H- Honesty, Hard work.

তাহলে আমরা উপরোক্ত বিষয়াদীসমূহ বিশ্লেষণ করলে গবেষণার একটি সম্যক ধারনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।

The Advance learner Dictionary of Current English এ বলা হয়েছে যে-
 জ্ঞানের যে শাখায় নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্যে ব্যাপক ও সযত্ন তথ্যানুসন্ধান তা হল গবেষণা।

রেডম্যান ও মরী বলেন-
 নতুন জ্ঞান আহরণের সুসংবদ্ব চেষ্টা-প্রচেষ্টা হল গবেষণা।

রাস্ক বলেন-
গবেষণা একটি বিশেষ অভিমত যা মানস কাঠামোর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি,গবেষণা সেসব প্রশ্নের অবতারণা করা যাএর উদ্ঘাটন আগে কোনদিন হয় নাই,এবং সেই গবেষণার মাধ্যমে সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।

গ্রীন বলেন-
জ্ঞানানুসন্ধানের আদর্শিত বা মানসম্মত পদ্বতির প্রয়োগই গবেষণা। 

সাইয়েদ শরীফ বলেন-
 দুটি বস্তুর ভিতর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের দলীলের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের নাম হল গবেষণা।

ফানদালীন বলেন-
 উপস্থিত জ্ঞানের প্রবৃদ্বির লক্ষ্যে সুশৃংখল অনুসন্ধান বা পর্যালোচনা,যা উদ্বৃতি,প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যেম সম্পন্ন হয় তা হল গবেষণা।

ইসলামে গবেষণার অবস্থান

ইসলাম একটি বাস্তবভিত্তিক ধর্ম যা গবেষণার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ব করেছে। ইসলামে গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে,

নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টিতে এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে; যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে,হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সব পবিত্রতা একমাত্র তোমারই। আমাদেরকে তুমি দোজখের শাস্তি হতে বাঁচাও। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০-১৯১)

ইসলামী গবেষণার সংজ্ঞায় লামহাত ফিল মাকতাবাহ গ্রন্থাগার  বলেন,

ধর্মীয় গবেষণা হল এমন সকল এমন সকল বিষয় যাতে জীবনের যে কোন দিক সংক্লিষ্ট বিধি-বিধান স্পষ্টরুপে বর্ণনা করার প্রয়াস চালানো হয়, কিন্তু নিখুঁত পদ্বতি, সঠিক উপলব্দি, নির্ভুল বুঝের ভিত্তিতে গভীর গঠন অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে দ্বীনের আলোকে কোন সমস্যার সমাধান করে প্রেচেষ্টা হল ধর্মীয় গবেষণা।

ড. উজ্জাজ আল খতীব বলেন,

ইসলামী গবেষণা এমন সকল বিষয় ভিত্তিক অধ্যয়ন যা জীবনের যে কোন একটি বিশেষ দিক সংক্লিষ্ট বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে। অথবা নির্ভুল পদ্বতি, সঠিক উপলব্দ্বি, গভীর নিরীক্ষণ, যথাযথ অনুধাবনের ভিত্তিতে ইসলামী মূল্যবোধ ও এর বিধানের মধ্য দিয়ে সামাজিক,অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে প্রয়াস চালাবে।

যাকিউদ্দিন শাবান বলেন,

শরীয়াতের কর্ম সম্পর্কিত বিধ্মালা তাফসীলী দলীল থেকে ইস্তিখাত করার জন্যে ফিকহ শাস্ত্রবিদের সামর্থ নিয়োজিত করা।

আধুনিক উসূলবিদ আব্দুল ওয়াহহাব বলেন,

শরীয়াতের বিস্তারিত দলীল প্রমাণের মাধ্যমে শরীয়াতের কোন হুকুম বের করার চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করা হল গবেষণা

ইসলামে গবেষণা করার গুরুত্ব

ইসলাম ধর্মে গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য

আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এই ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হল সকলে যেন তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা ও জ্ঞান-অনুধ্যান করে। আল্লাহ বলেন,

আমি একে করেছি কোরআন, আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝ [৪৩:৩]

এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে নিদর্শনসমূহ বর্ননা করেন-যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর। [২:২৬৬]

প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নিêেদশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে [১৬:৪৪]

জ্ঞানী ও অজ্ঞদের ভিতর পার্থক্য

যারা আল্লাহর সৃষ্টিসুহ অন্যান্য বিষয়াবলী নিয়ে গবেষণা করবে আল্লাহত আদের আলিমের ন্যায় বিশেষ সাহায্য প্রদান করবেন। তাদের মর্যাদা কখনও একজন জাহিলের সমান হতে পারে না। তাই তিনি বলেন

আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? [৬:৫০]

যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। [৩৯:৯]

তাই আল্লাহর কাছে প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্যে আমাদেরকে জ্ঞান-গবেষণার মাধ্যমে উচ্চস্তরে পৌছতে হবে।

আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা

একজন গবেষক কেবলমাত্র তখন সফল হয় যখন সে সঠিকভাবে তার জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারবে। ইসলামের শরীয়াতে এই জ্ঞানী-গবেষকদের মর্যাদা অনেক বেশী। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন।  [৫৮:১১]

গবেষণা না করার পরিণতি

যারা আল্লাহ কিংবা তার সৃষ্টি রহস্য কিংবা তার ইবাদত নিয়ে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করে আল্লাহ তাদেরকে হাশরের ময়দানে কঠিন শাস্তি প্রদান করবন। এ সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না। [৬৭:১০]

অবাধ্য সম্প্রদায়ের পরিণতি

যেসকল সম্প্রদায়ের লোকেরা অবাধ্যতার জন্যে আল্লাহর আযাবে পতিত হয় তাদের পরিণতির ব্যাপারে জানার জন্যে গবেষণা করতে বলা হয়েছে যাতে করে মুমিনদের ভিতরে আল্লাহর ভয় যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। তিনি বলেন,

তারা কি দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে না, যাতে দেখত তাদের পূর্বসুরিদের কি পরিণাম হয়েছে? [৪০:২১]

আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে অবগত

আল্লাহ সকলকিছু সৃষ্টি করেছেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে যা বলে শেষ করা যাবে। তিনি কোন কিছুই নির্থক সৃষ্টি করেন নাই। সেই ব্যাপারে সম্যক অবগত হওয়ার জন্যে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আল্লাহ বলেন,

তারা কি প্রত্যক্ষ করেনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজ্য সম্পর্কে এবং যা কিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাআলা বস্তু সামগ্রী থেকে  [৭:১৮৫]

যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই ।[৩:১৯১]

আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে অবগত

আল্লাহ পাকের সৃষ্টির সত্যি বিস্ময়কর। এরই প্রতিটি বিষয়ের ভিতর বিভিন্ন ধরনের রহস্য রয়েছে। আর যদি কেউ গবেষণা করে তাহলে সে এ ব্যাপারে সম্যক ধারনা লাভ করবে। তাই কুরআনে বলা হয়েছে,

নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানগুলোতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি নাজিল করেছেন, তৎদ্বারা মৃত ভূমিকে সজীব করে তুলেছেন এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব রকম জীবজন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালায় যা তাঁরই নির্দেশের অধীনে মহাকাশ ও পৃথিবীর মাঝে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (২:১৬৪)

আল্লাহ পাক সামান্য পানি থেকে এক মানুষকে সৃষ্টি করলেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নির্দশন।তাই তিনি ইরশাদ করেন,

কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।  [২১:৩০]
মানব সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে অবগত

আল্লাহ পাক মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি ও জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তা সম্ভব হয়েছে কেবল আল্লাহর দয়া ও কুদরতের কারণে। মানুষকেই যেই আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন সেই ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। [৯৫:৪]

এই মানুষকে সৃষ্টি করার পরে তিনি তাদের প্রতি বিভিন্ন ধরন্র ভাষা ও বর্ণ প্রদান করেছেন যা সত্যি অনেক বিস্ময়কর আর চিন্তাশীলরাও এখানে ভালমত করে জ্ঞান-গবেষণা করতে পারবে।

তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। [৩০:২২]

পৃথিবীর গতি নির্ধারণ

পৃথিবীতে আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি নামে দুই ধরনের গতি আছে। এই গতি না থাকলে জীবের অস্তিত্ব থাকত না। এই আহ্নিক গতির কারণে দিন রাতের আবর্তন, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ূ প্রবাহ, সমুদ্রস্রোত, সময় গণনা, জোয়ার ভাঁটা হয়। অন্যদিকে বার্ষিক গতির জন্যে ঋতুর পরিবর্তন, দিন রাতের হ্রাস্ব-বৃদ্বি ও প্রাণী ও উদ্ভিদের জীববৈচিত্রের পরিবর্তন হয়। আর এসকল বিষয়াবলী সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে কুরআন এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীর উপর গবেষণা করতে হবে। এ ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। [৩৬:৩৯-৪০]

তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।  [৩৯:৫]

প্রকৃতি জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান

আল্লাহ পাক তার স্বীয় প্রকৃতিকে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর উপকরণ দ্বারা সজ্জিত করেছেন। আর তা গবেষণার মাধ্ম্যে বের করা সম্ভব। আল্লাহ বলেন,

মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক,আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি,এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি,অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য,আঙ্গুর, শাক-সব্জি,যয়তুন, খর্জূর, ঘন উদ্যান,ফল এবং ঘাস, তোমাদেরও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে। [৮০:২৪-৩২]

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে। [৩৬:৩৩]

আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূ-খন্ডের দিকে পরিচালিত করি, অতঃপর তদ্বারা সে ভূ-খন্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই।  [৩৫:৯]

জিহাদতুল্য ইবাদত ও সিয়াম সমতুল্য সাওয়াব

যারা জ্ঞান-গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকবেন আল্লাহ তাদের জিহাদ বা সিয়াম পালন করার মত সাওয়াব দান করবে। তাই রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন,

শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা জিহাদতুল্য। [আত-তারগীব ওয়াত তারহীব]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন,

জ্ঞান-গবেষণা সিয়ামের সমান।

সঠিক-ভুল নির্ধারণ

এই গবেষণার দ্বারা মানুষ কোন সঠিক সিদ্বান্তে উপনীত হোক বা না হোক প্রত্যেকের বিনিময় আল্লাহ সাওয়াব রেখেছেন। তাই হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

কোন বিচার ফয়সালা দেওয়ার ব্যাপারে ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্বান্তে উপনীত হলে তাকে দুটি সাওয়াব আর ইজতিহাদের ভুল করলে একটি সাওয়াব দেওয়া হয়।

শ্রেষ্ঠত্ব লাভ

এই মুসলিম জাতিকে অন্যান্য জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে কেবলমাত্র এই কারণে যে তারা চিন্তা-গবেষণা করে তা মানুষের সামনে তুলে ধরবে। তাই কুরআনে বলা হয়েছে,

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। [৩:১১০]

সত্য জ্ঞান লাভ

যারা গবেষণা করবে তারা সত্য জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে। এ মর্মে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত।  [৪:৮৩]

পরকালের জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত

আল্লাহ পাক মানুষকে কান,চোখ,অন্তর দান করেছেন সবকিছুকে কাজ লাগিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার জন্যে। কিন্তু যদি তা না করা হয় তাহলে এরজন্যে পরকালে জবাবদিহিতা করতে হবে।তাই আল্লাহ ইরশাদ করেন,

নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।[১৭:৩৬]

নিজেদেরকে জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত রাখার জন্যে ভিন্যস-গবেষণা করা অপরিহার্য্য একটি বিষয়।

প্রজ্ঞার পরিচয়

গবেষণার দ্বারা প্রজ্ঞার পরিচয় লাভ করা যায়। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

আবিষ্কার(গবেষণা) ছাড়া বুদ্বি বা প্রজ্ঞার কোন পরিচয় নাই। 

বিশ্বাসীর বৈশিষ্ট্য

গবেষণা করা একজন প্রকৃত মুমিন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য।কারণ হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

মানুষের ভিতর সর্বাধিক চিন্তাশীল মুমিনগণ।

গবেষক হলো কল্যাণমূলক কাজের পথনির্দেশক। ইসলামের দৃষ্টিতে যিনি পথনির্দেশনা দেন তিনি যে ব্যক্তি ভাল কাজ করেন তার সমমর্যাদা ভোগ করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

 ভাল কাজের পথপ্রদর্শকের মর্যাদা ভালকর্ম সম্পাদনকারীর সমান।

এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন,

  যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের সূচনা করে আর সে ভাল কাজের দেখাদেখি অন্য কেউ ভাল কাজ করে তবে সে তার ভাল কাজের যেমন সাওয়াব পাবে তেমনি যারা তার দেখাদেখি ভাল কাজ করল তাদের সাওয়াবের সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে দেয়া হবে এজন্যে তাদের সাওয়াব মোটেই কমানো হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের সূচনা করে আর তার দেখাদেখি যদি কেউ মন্দ কাজে লিপ্ত হয় তবে তার গুনাহ সে পাবে এবং যারা তার দেখাদেখি গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের গুনাহর সমপরিমাণ গুনাহ তাকে দেয়া হবে। এ জন্যে তাদের গুনাহ থেকে মোটেই কমানো হবে না। 

গবেষণা কাজ একটি উত্তম কাজ। ইতঃপূর্বের আলোচনায় তা প্রমাণিত হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক ভাল কাজে সহায়তা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে নির্দেশ করে বলেন,

 তোমরা তাকওয়া ও কল্যাণের কাজে পরস্পর সহায়তা কর আর গুণাহ ও সীমালংঘনের কাজে একে অন্যকে সহায়তা কর না। [মায়িদাঃ]

গবেষণা কাজে সহায়তা করা একটি ভাল কাজ। আর একটি ভাল কাজ কেউ যদি সম্পাদন করে আল্লাহ তাকে ১০গুণ প্রতিদান প্রদান করবেন। আল্লাহ বলেন,

 যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করবে তার জন্য তার ১০গুণ মর্যাদা রয়েছে আর যে ব্যক্তি একটি অন্যায় কাজ করে তাকে সমপরিমাণ শাস্তি দেয়া হবে।

যখন উমার (রা.) শুরাইহকে কুফার বিচারক হিসেবে প্রেরণ করলেন তখন তাকে বললেন, বিচারিক কাজ করার সময় তুমি আল্লাহর কুরআনের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। কুরআনে যখন পেয়ে যাবে তখন আর কারো থেকে কোন কিছু জানতে চাইবে না। যদি কুরআনের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে না পাও তবে সুন্নাতে রাসূলের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। যদি সুন্নাতে রাসূলে তা স্পষ্ট না হয় তবে তুমি নিজের চিন্তা-গবেষণা থেকে বিচক্ষণতা দ্বারা বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে।

এ হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন এবং সুন্নাহতে মানুষের জন্য কল্যাণকর বিষয়ে কোন সমাধান পাওয়া না গেলে গবেষণা করে, চিন্তা করে সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। আর তা  কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।

উপসংহার


ইসলাম চিরন্তন স্বাশত জীবন ব্যবস্থা। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাজের দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। এটি কিয়ামত পর্যন্ত চলমান একটি দর্শন। তাই এই দর্শনের আলোকে মানুষের জীবন চলার সমস্যা সমাধানে ইসলামের দিকনির্দেশনা প্রদানে গবেষণা অপরিহার্য একটি বিষয়। ইসলাম তাই গবেষণার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কথা হলো আমরা মুসলিমগণ বিশেষ করে বাংলাদেশের ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসীগণ গবেষণাকর্ম থেকে দুরে, অনেক দুরে। আর নাস্তিকতাবাদের গবেষণা সহায়তার যত লোক পৃথিবীতে রয়েছে ইসলামের গবেষণাক্ষেত্রে সহায়তাকারী কিন্তু ততটা নেই। কিভাবে অগ্রসর হব আমরাএকটু ভেবেছেন কি? আমাদের এগিয়ে আসতেই হবে।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...