Thursday, 29 May 2014

প্রশ্নঃ শ্রেণী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর।



পরিবর্তিত সমাজ-পরিসরে নতুন নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে নিজেেক পরিচিত করতে এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকুরি বাজারে টিকিয়ে রাখতে আধুনিক শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা-কৌশলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এছাড়া প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণেও বদলে গেছে এবং যাচ্ছে অধ্যয়ন ও পাঠদানের কৌশলাদি। কানাডা, আমেরিকা ও ইউরোপের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর বর্তমানে বেশ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। সেসব দেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই কার্যক্রমে অর্জন করেছে পৃথিবীজোড়া খ্যাতি।


সাধারণভাবে আমরা মনে করে থাকি ক্লাসরুমে পাঠদানের মধ্যেই শ্রেণী কার্যক্রমের ব্যাপারাদি সীমাবদ্ধ। প্রকৃতঅর্থে একজন শিক্ষক ক্লাসের বাইরেও পাঠদানে নিজেকে তৈরি করার কাজে চেতনে-অবচেতনে নিয়োজিত থাকেন। কাজেই শিক্ষক যখন পথে বা পার্কে হাঁটছেন, গাড়িতে চেপে ভ্রমণ করছেন, কোনো পরিজনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পারিবারিক আলাপ করছেন কিংবা সমুদ্র বা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, তখনও তিনি নানান ফাঁকে নিজেকে ক্লাসরুমে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করে চলেছেন নীরবে। অতএব, শিক্ষাদানের উপাদান ও উপাত্ত সংগ্রহ করা, লেকচার প্ল্যান সাজিয়ে তোলা, শিক্ষার্থীর মনোযোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির জন্য কলা-কৌশল আয়ত্ত করা, শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কুশলাদি সম্বন্ধে অবগত হওয়া, তাদেরকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা, প্রশ্ন সম্বন্ধে কোনো সংশয়ের মধ্যে না রেখে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে নিষ্ঠার পরিচয় প্রদান, শিক্ষার মান-উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা এমনকি সামাজিকভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আদর্শ নাগরিক হিশেবে নির্মাণ (প্রয়োজনে বিনির্মাণও বটে) করার জন্য দরকারি তদারকি করাও একজন শিক্ষকের স্বাভাবিক দায়িত্ব।

 ক্লাসরুমে শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা, শিক্ষার্থীদের পাঠের সকল বিষয়াদি ম্যানেজ করা এবং আনুষঙ্গিক কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি, ভালো ফলাফলের (কেবল কেতাবি অর্থে পরীক্ষার ফলাফল নয়; সামাজিক অর্জন অর্থে শব্দটি প্রয়োগ করার রীতি চালু রয়েছে) জন্য শিক্ষার্থীর সাইকোলজি স্টাডি করে তার আগ্রহের-অনাগ্রহের বিষয়ের দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদান করতে হবে।

শ্রেণী ব্যবস্থাপনা


১- শিক্ষক নিজের জন্য একটি স্পষ্ট টার্গেট নির্ধারণ করবেন যা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কাজ করে যাবেন।

২- তিনি যা করতে যাচ্ছেন তার স্পষ্টাকারে বর্ণনা দেবেন। কোন ধরনের অস্পষ্টতা যেন তার লেকচারের ভিতর না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ ও খেয়াল রাখা।  সেই সাথে নিজের গলার স্বরকে ভরাট এবং উচ্চ করতে হবে যাতে করে বড় শ্রেণীকক্ষের ভিতর উপস্থিত কোন শিক্ষার্থী পিছনে বসেও  সবকিছু শুনতে পায়।

৩- তিনি মনোযোগসহ ছাত্রদের প্রশ্ন শুনবেন এবং সে অনুযায়ী উত্তর প্রদান করতে চেষ্টা করবেন।

৪- তিনি সজাগ দৃষ্টির অধিকারি হবেন।

৫- ছাত্রদের মাঝে সামাজিক ও বৈষয়িক পার্থক্যসমূহ দূরীভূত করার জন্য উৎসাহী হবেন।

৬- শিক্ষক তার অভিমত ও রায় বস্তুনিষ্ঠ দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে দাঁড় করাবেন।দলিল-প্রমাণ বিবর্জিত পূর্বনির্ধারিত যে-কোনো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবেন। যে বিষয়টি অপরিচিত তা  অভিজ্ঞতার আলোকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে হবে।

৭- শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে এমনসব প্রশ্ন করবেন যার দ্বারা ছাত্রদের চিন্তাশক্তি শানিত হয়, তাদের উদ্ভাবন ক্ষমতা বাড়ে।

৮- যে বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া এবং ছাত্রদেরকে বোঝার জন্য সার্বিক সহায়তা দান।প্রয়োজন হলে তা পুনরাবৃত্তি করতে হবে এক্ষেত্রে তাকে ধৈর্য্যশীলতা ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে।

৯- আলোচনা-পর্যালোচনা, পাঠদান সুনির্দিষ্ট একটি বিষয়ে সীমিত রাখবেন। বিক্ষিপ্ত হবেন না।

১০- শেখা ও জ্ঞান লাভের প্রতি ছাত্রদেরকে আগ্রহী করে তুলবেন।

১১- যেসব তথ্য ছাত্রদের জানা প্রয়োজন বা ছাত্ররা যেসব তথ্য জানতে আগ্রহী সেগুলো তিনি সরবরাহ করবেন।প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার,ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ইত্যাদি সরঞ্জামাদির সাহায্যে পাঠদানকে হৃদ্বয়গ্রাহী করে তোলা।

১২- ছাত্রদেরকে বিচারের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতার আশ্রয় নেবেন। ব্যক্তিগত রায় অথবা স্বেচ্ছাচারিতা বর্জন করবেন।

১৩. ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যাপারে চাপ না দেওয়া।কারণ পড়াশোনা করা একজন ছাত্রের নিজস্ব বিষয়। যদি সেখানে অহেতুক চাপ প্রয়োগ করা হয় তাহলে সে পড়াশোনা করার মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারি।তাই তাকে হিকমতের সাথে পড়াশোনার ব্যাপারে হৃদ্বয়গ্রাহী করে তুলতে হবে।

১৩. পাঠপ্রস্তুতি করতে হবে। অর্থাৎ একজন শিক্ষক যে বিষয়টি পড়াতে যাচ্ছেন তা ক্লাসে ঢোকার পূর্বে অধ্যায়ন করে ভালো করে বুঝে নেয়া, কঠিন এবারতগুলোর অর্থ উদ্ধার করে নেয়া। এবং নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ব্যাখ্যায় কি কি পয়েন্ট উপস্থাপন করা যায় তা আয়ত্ত করে নেয়া। সে হিসেবে পাঠপ্রস্তুতি পর্বে  নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ  করতে হবে-

১৪. পাঠপরিকল্পনা: পাঠপরিকল্পনা লিপিবদ্ধ আকারে হতে হবে। সে হিসেবে শিক্ষকের জন্য নোটবুক মেইনটেইন করা জরুরি। প্রতিটি দরসের জন্য আলাদা আলাদা পাঠপরিকল্পনা রচনা করা বাঞ্ছনীয়। পাঠপরিকল্পনায় যেসব পয়েন্ট থাকতে হবে তা হল:

১৫. প্রতিটি দরসের পরিসর নির্ণয়: অর্থাৎ শিক্ষাবর্ষের প্লান অনুযায়ী আজকে কতটুকু সবক পড়াতে হবে তা

সুনিদিষ্টভাবে নির্ণয় করে নেয়া। পরীক্ষা আসার পূর্বেই যাতে পরিকল্পিত পুরো সিলেবাস ভাল করে পড়িয়ে শেষ করা

যায় তা নিশ্চিত করার জন্য এ বিষয়টি খুবই জরুরি। বছরের শুরুতে ছাত্রও বোঝে শিক্ষকও বোঝেন, মাঝখানে

শিক্ষক বোঝেন ছাত্র বোঝে না, আর শেষে ছাত্র শিক্ষক কেউ বোঝে না, এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য

বিষয়টি খুবই জরুরি।

১৬. প্রতিটি দরসের উদ্দেশ্য নির্ণয় : অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট অধ্যায় বা সবক পড়ানোর পড় ছাত্ররা কি কি শিখতে সক্ষম হবে। তা স্পষ্টাকারে নির্ণয় করে নিতে হবে। যেমন অজু বিষয়ক দরসের উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা যেতে পাড়ে - এ দরসের পর ছাত্ররা অজুর গুরুত্ব, কুরআন-সুন্নায়  অজুর দলিল, অজুর ফরজ-সুন্নাত-মুস্তাহাব ইত্যাদি বিষয় শিখতে সক্ষম হবে। উদ্দেশ্য নির্ণয় করে নিলে পাঠদানের পর প্রশ্ন করে ছাত্রদের অর্জন মেপে দেখা সম্ভব হয়। কারও কারও কাছে বিষয়টি তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বসহ দেখে।

১৭. পাঠদান পদ্ধতি নির্ণয় করে নেয়া: যেমন শিক্ষক ক্লাসে ঢোকে প্রথমে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে নেবেন আজকের দরসে

ছাত্ররা কি কি শিখবে। এরপর হয়ত কোনো ছাত্রকে এবারত পড়তে বলবেন। এবারতের মূল বক্তব্য সহজ ভাষায়

বুঝিয়ে দেবেন। কঠিন শব্দ বা বাক্যগুলো বিশ্লেষণ করে বোঝাবেন। এরপর হয়ত কোনো ছাত্রকে দরসের মূল

পয়েন্টগুলো উল্লেখ করতে বলবেন। অথবা কোনো ছাত্রকে পুরো দরস সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে বলবেন। আধুনিক

শিক্ষাসরঞ্জাম ব্যবহৃত হলে- যেমন কম্পিউটার, প্রজেক্টার ইত্যাদি - তা দরসের কোন পর্যায়ে ব্যবহৃত হবে তা নির্ণয়

করে নেয়া। পাঠদান শেষে সুনির্দিষ্ট কোনো পয়েন্টের উপর প্রশ্ন করে ছাত্রদেরকে লিখতে বলা হবে কি-না তা নির্ণয়

করে নেয়া।

১৮. সঠিক শুরু - ক্লাস শুরুর প্রথম ৫ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে ছাত্রদের সচেতনতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। তাই এ সময়টুকু যেন  সঠিকভাবে ব্যবহৃত  হয় সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশের পূর্বেই যেন ছাত্ররা প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকে, ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে যেন কলম চোখানো, কেতাব বা খাতার পাতা উল্টানো, ব্যাগ থেকে কিতাবপত্র বের করা ইত্যাদি কর্ম বন্ধ হয়ে যায় এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

ক্লাসে প্রবেশের পর লিখিত প্লান অনুযায়ী শিক্ষক অগ্রসর হবেন। প্লান থেকে বিচ্যুত হবেন না। ক্লাসে প্রবেশ করে ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। মুহূর্তকাল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও এ কাজটি সম্পন্ন হতে পারে।

১৯. পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে পুরো ক্লাসের প্রতি তাকাতে।

২০. ক্লাসের সকল ছাত্রের প্রতি নজর বুলানো। পুরো ক্লাস আপনার নখদর্পনে ছাত্রদেরকে এই অনুভূতি দি্তে হবে।

২১. বাড়ির কাজ দিতে হবে নিয়মিত এবং তা দেয়া থাকলে তা সংগ্রহ করুন।

২২. খুবই উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পাঠদান শুরু করুন।

২৩. ধীরে ধীরে এগিয়ে চলুন। ছাত্ররা যা জানে তা দিয়ে শুরু করুন।

২৪. বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলুন। আঞ্চলিকতার টানকে পরিহার করে চলা। বর্ণনাভঙ্গিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা। এখানে

অস্পষ্টতা বলতে কিছুই থাকবে না। পাঠদানের বিষয়বস্তুকে হৃদ্বয়গ্রাহী করে তুলতে হবে।

২৫. ক্লাসে কখনোই দেরি করে প্রবেশ করবেন না। হঠাৎ করে ক্লাসে ঢুকবেন না। আপনি ক্লাসে আসতে যাচ্ছেন এ

বিষয়ে ছাত্রদেরকে জানান দিন, যাতে তারা প্রস্তুত হয়ে নীরবতা বজায় রেখে বসে থাকে।

২৬. নির্দিষ্ট কোনো ছাত্র বা পুরো ক্লাসকে বকা-ঝকা দিয়ে ক্লাস শুরু করবেন না।

২৭. পরিপাটি ও গোছানো আকারে নিজেকে উপস্থাপন করুন।

২৮. প্রতিটি ছাত্রই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের অধিকারি। যোগ্যতায়, বোঝার ক্ষমতায় একজন অন্যজন থেকে আলাদা। সে হিসেবে আলাদাভাবে প্রতিটি ছাত্রদের যোগ্যতা, গতি-প্রকৃতি ইত্যাদি আয়ত্তে আনা জরুরি। কেননা শিক্ষকের উচিত প্রতিটি ছাত্রকেই সাহায্য করা। প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে আবিষ্কার না করলে এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে যা জানতে হবে তা হল ছাত্রের পড়া-লেখার বেকগ্রাউন্ড, মেধাকেন্দ্রিক পর্যায়, ছাত্রের গুরুত্বের বিষয় কি কি।যারা অত্যাধিক মেধাবী তাদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগেতে হবে। অপরদিকে  যারা দূর্বল তাদেরকে আলাদাভাবে বিন্যস্ত করে তাদের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করতে হবে যা হলঃ

১. অধিক মেধাবী

২. মধ্যম মেধাবী

৩. তীক্ষ্মমেধাসম্পন্ন পশ্চাৎপদ

৪. দুরন্ত

২৯. শিক্ষার্থীদের নিজের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা 

বই পড়া যদি ছাত্রের নেশা হয়ে থাকে তবে সর্বশেষ কোন বইটি সে পড়েছে তা জিজ্ঞাস করা। ডাকটিকিট সংগ্রহ করার অভ্যাস থেকে থাকলে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে সর্বশেষ ডাক টিকিট কোনটি। অসুস্থ হলে ছাত্রের স্বাস্থ্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। এরূপ করতে পারলে ছাত্ররা শিক্ষক মহোদয়কে আপন বলে ভাববে। সে নিজেকে ক্লাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে জ্ঞান করবে। এ সব তথ্য ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের মাঝে সেতুবন্ধের কাজ করে

৩০. ছাত্রদেরকে চিনে নেয়া:ছাত্রদেরকে আলাদা আলাদাভাবে চিনে নেয়া সফল শিক্ষকতার ক্ষেত্রে একটি জরুরি বিষয়। এই কারণে শিক্ষক তার সকল ছাত্রের নাম মনে রাখার চেষ্টা করবে। প্রত্যেককে নাম ধরে ডাকবে। প্রত্যেক ছাত্রকে প্রতিদিন একই জায়গায় বসতে বললে, যে ছাত্রের নাম মনে থাকে না, হাজিরা নেয়ার সময় তার সাথে কথা বললে ছাত্রদের নাম মনে রাখাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ক্লাস ছোট হলে প্রত্যেক ছাত্রকে তার নাম লিখে টেবিলের  উপর রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া যেতে পারে, বিশেষ করে ক্লাস চলাকালীন সময়ে। ছাত্রের নাম মনে রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি সহজ পদ্ধতি।

৩১. ক্লাস নিয়ন্ত্রণ - ক্লাস নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হেকমত ও দূরদর্শিতা দাবি করে। ক্লাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শিক্ষককে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। বিনম্র স্বভাব ছাত্রের কাছে শিক্ষককে প্রিয় করে তুলবে অতঃপর শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়তা দেবে, এ ধারণা ভুল। গবেষণা থেকে দেখা গেছে কঠিন প্রকৃতির শিক্ষককেই ছাত্ররা অধিক সম্মান করে থাকে । বিনম্র-আচরণ-প্রকাশক শিক্ষক ক্লাসে তার সম্মান-শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলতে পারেন; কেননা বিনম্র স্বভাবকে ছাত্ররা দুর্বলতা বলে ভাবে। সে জন্য শুরুটা  হতে হবে কঠোরতা প্রয়োগ করে। তবে ছাত্রদের প্রতি যেন কোনো জূলুম-অন্যায় অথবা সীমালঙ্ঘন না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।পরবর্তীতে সময় সুযোগ বুঝে ছাত্রদের প্রতি এহসান ও বিনম্র আচরণ করে ভারসাম্য রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

৩২. ক্লাসের ছাত্রদের সাথে গভীর সম্পর্ক --যার আওতায় শিক্ষকের সম্মান মর্যাদা যথার্থরূপে বজায় থাকে -- কায়েম করা হঠাৎ করে ঘটে-যাওয়া কোনো বিষয় নয়। তা বরং দাবি করে দীর্ঘ মেহনত-প্রচেষ্টার। পড়ানোর ক্ষেত্রে, উত্তম আদর্শ হওয়ার ক্ষেত্রে  আপনি ঐকান্তিক-মুখলেস এ বিষয়টি ছাত্রদের কাছে প্রমাণিত হওয়ার পর ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আপনাকে সম্মান করবে, ফলে আপনার জন্য  ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

ক্লাস নিয়ন্ত্রণের আরেকটি সহায়ক পদ্ধতি হল, ক্লাসে সম্পন্ন করতে হবে, এমন কাজ দিয়ে ছাত্রদেরকে ব্যস্ত রাখা।  ব্যস্ত রাখতে পারলে ছাত্ররা  হৈ-চৈ করার সুযোগ পায় না। সে হিসেবে শিক্ষকের উচিত হবে পাঠপরিকল্পনায় এমন কিছু বিষয় রাখা যার দ্বারা ছাত্রদেরকে ব্যস্ত রাখা সম্ভব হবে।

৩৩. উপযুক্ত পরিবেশ গঠন

যেভাবে পাঠদান করলে ছাত্রদের উৎসাহ আগ্রহ বেড়ে যাবে সে ভাবে পাঠদান করা।এভাবে করে তার শ্রেণীকে পাঠদানের জন্যে উপযুক্ত করে গড়তে তুলতে হবে। শিক্ষকের একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে যা বাস্তবায়নের জন্য তিনি সচেষ্ট হবেন, একটি সুনির্দিষ্ট কর্ম সামনে হাজির রাখতে হবে যা বাস্তবায়নের জন্য তিনি উৎসাহী হবেন।মাঝেমধ্যে তার শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগকে কাজে লাগিয়ে সকলের কাছে তার পাঠদানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করবে। ক্লাসরুমে শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা, শিক্ষার্থীদের পাঠের সকল বিষয়াদি ম্যানেজ করা এবং আনুষঙ্গিক কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি, ভালো ফলাফলের (কেবল কেতাবি অর্থে পরীক্ষার ফলাফল নয়; সামাজিক অর্জন অর্থে শব্দটি প্রয়োগ করার রীতি চালু রয়েছে) জন্য শিক্ষার্থীর সাইকোলজি স্টাডি করে তার আগ্রহের-অনাগ্রহের বিষয়ের দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদান করতে হবে।

৩৪. নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রক্ষা

নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রক্ষা করতে বুঝানো হয় শিক্ষক যেন তার নিজের পোশাক-পরিচ্ছেদ,চলা-ফেরা,কথা-বার্তা বলার ধরনের ক্ষেত্রে মার্জিত এক ভাব যেন ধরে রাখতে পারে। এরজন্যে তার পোশাককে হতে হবে পরিচ্ছন্ন। তাকে সকল ধরনের অশালীন কথা-বার্তাকে এড়িয়ে চলতে হবে।বিড়ি,সিগারেট,পান খাওয়ার মতে বদভ্যাসকে পরিহার করতে হবে। কোন শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক যেন তাদের ভুল-ত্রুটি ধরতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা।

৩৫. অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা

ছাত্র-ছাত্রীর অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত তার অভিভাবকের জানানো উচিৎ। যদি তার কোন দূর্বলতার দিক লুক্কায়িত থাকে তাহলে তা তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। কারণ একজন শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক থাকে তার ক্লাস পর্যন্ত কিংবা যতক্ষণ পর্যন্ত তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে, কিন্তু সে তার অভিভাবকের সাথে সর্বদা থাকে। তাই শিক্ষক যদি তাদের দূবল দিকসমূহ অভিভাকদের জানাতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে অভিভাবকগণ এ ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

৩৬. সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত- শিক্ষক যে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করবেন সেখানকার পরিবেশকে সুন্দর ও সাবলীল করতে হবে। শ্রেণীকক্ষে যেন সকল ছাত্র ঠিক মত বসতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে এরপর শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখতে হবে যাতে করে স্বাচ্ছন্দের সাথে তারা ক্লাস করতে পারে। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণমুখী করা একান্ত বাঞ্ছণীয়।

লিখিতভাবে ভাষাপ্রয়োগে সঠিক বানান এবং মৌখিক ভাষাপ্রয়োগে শুদ্ধ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। আদর্শ শিক্ষককে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা, তাই তাকে অবশ্যই ভাষার যথাযথ প্রয়োগের দিকে আন্তরিক দৃষ্টি প্রসারিত রাখতে হবে। আধুনিক বানান ও উচ্চারণরীতি (বাংলা, ইংরেজি, আরবি প্রভৃতি) সম্বন্ধে জানতে হলে হালনাগাদ অভিধানের সাহায্য নিতে হবে। নিজে যেমন অভিধান ও পরিবর্তিত ধারণা সম্বন্ধে অবগত হবেন, তেমনই শিক্ষার্থীদেরকেও এই কাজে অভ্যস্ত করে তুলবেন।

শুধু লেখাপড়া করলেই গাড়িঘোড়ায় চড়া যায় এমন ধারণা এখন আর বিশ্বাস করা চলে না। কারণ আর্থিক ও সামাজিক সাফল্যের পথ বর্তমানে বহুধা বিভক্ত। ছবিআঁকা, বিতর্ক, বক্তব্য, সঙ্গীত, নৃত্য, খেলাধূলা প্রভৃতি এখন আর শিক্ষাসম্পূরক কার্যক্রম নয়; মূল শিক্ষার পরিসরে প্রবেশ করেছে ললিতকলা ও ক্রীড়ার এইসব চর্চা। দেয়ালিকা সম্পাদনা, বিদ্যাপীঠের বার্ষিকী প্রকাশ, অ্যালবাম প্রকাশ, বিশেষ বিশেষ প্রকাশনা, সমাজকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত হওয়া ইত্যাদি কাজে শিক্ষার্থীদেরকে মূল উৎসাহ দিয়ে থাকেন শিক্ষক। শ্রেণীকক্ষে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আনন্দের দিক ও প্রবণতা আবিষ্কার করবেন এবং তাকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করবেন শিক্ষক। আবার, শিক্ষাসফর কিংবা পিকনিক আয়োজনের মধ্য দিয়েও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মনন তৈরিতে সহায়তা করা সম্ভব।

তথ্য ও সংবাদ জানা এখন আর ফ্যাশন নয়; প্রাত্যহিক প্রয়োজন। যিনি শেখাবেন, যারা শিখবে সকলকেই প্রতিদিনের আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবর ও আনুষঙ্গিক তথ্য জানতে হবে। নিজেকে স্মার্ট, অভিজ্ঞ ও যোগ্য মানুষ হিশেবে গড়তে গেলে প্রতিমুহূর্তের খবরাখবরের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ভূগোল ও পরিবেশ, বিজ্ঞানের অভিযাত্রা এবং চিন্তার বিবর্তন বিষয়ে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।

Wednesday, 21 May 2014

নমুনায়ন


শিক্ষা ও সয়ামাজ গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়ন একটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত বিষয়। এটি এমন এক পদ্বতি যার মাধ্যমে গবেষণা করার জন্যে উপাত্ত সংগ্রহের জন্যে সমগ্র ক্ষেত্র থেকে কিছু একক বেছে নেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যানমূলক কাজে নমুনায়ন একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।কোন উপাত্ত বা তথ্য সংগ্রহের জন্যে যে সামগ্রিক ক্ষেত্র থেকে নির্বাচন করা হয় তা হল... শুমারী বা সমগ্রক। কোন কোন সময় দেখা যায় যে, এটি করা একটি জটিল ও দুরুহ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তখন সেখান থেকে কিছু বিষয়কে নির্বাচন করে তার উপর ভিত্তি করে কাজ করার নাম হল নমুনায়ন। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫০০০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করে। এখানে এক সাথে তাদের সকলের পৈত্রিক নিবাস, মাসিক আয়-ব্যয়, পারিবারিক অবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে তারা কি সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট এ ব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য নেওয়ার জন্যে সকলের মতামতের উপর ভিত্তি করে তা নেওয়া সম্ভবপর নয়। এজন্যে এখান থেকে তাকে নির্দিষ্ট কিছু ছাত্র-ছাত্রী নির্বাচন করে তার উপর ভিত্তি করে তখন যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে এবং তাই সার্বিকীকরণ হবে এবং তাই নমুনায়ন নামে পরিচিত।
এই নমুনায়নের জন্যে সমরূপতা, নির্ভুলতা, নমুনার আকার ও সম্ভাব্যতা নির্ণয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

নমুনায়নের প্রকারভেদ

গবেষকগণ যেন সঠিক সময়ে সঠিক ফলাফল লাভ করতে পারে এরজন্যে বিভিন্ন ধরনের অবস্থা, বৈশিষ্ট্য,আকারের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পদ্বতিকে অবলম্বণ করা হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্য, তথ্যের প্রকৃতি, সময় এবং বাজেটের উপর ভিত্তি করে নমুনায়নকে কয়েকটি পদ্বতিতে ভাগ করা যেতে পারে। যা হলঃ
সম্ভানা তত্ত্বের উপর নমুনায়ন দুই প্রকার যা হলঃ
ক. সম্ভাবনা নমুনায়ন
খ. নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন
এই দুই প্রকারের নমুনায়ন সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

ক. সম্ভাবনা নমুনায়ন

এ নমুনায়নে সকল অন্তর্ভূক্ত প্রত্যেক এককের নমুনাদলের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে। সমগ্র একক থেকে সম্ভাবনাময় নির্দিষ্ট করে পরিসংখ্যান করা সম্ভাবপর হয় এখানে এবং গঠিত নমুনাদলে প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে থাকে। এক কথায় তা সম্ভাবনা তত্ত্ব ও দৈবচয়নের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।নমুনায়নের বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি নির্ধারণ করা শুধু সম্ভাবনা নমুনায়ন কৌশল প্রয়োগ করলেই নিশ্চিত হওয়া যায়।সম্ভাবনা নমুনায়নের কয়েকটি পূর্বশর্ত আছে যা হলঃ
১. সংশ্লিষ্ট একক সমগ্রকের আকার নির্ধারণ ও নমুনায়ন কাঠামোর তালিকা প্রস্তুত।
২. প্রত্যাশিত নমুনার আকার নির্ধারণ করতে হবে।যেমনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫০০০ হাজার ছাত্রী-ছাত্রী পড়াশোনা করছে আর তার ভিতর থেকে পাঁচ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ করতে হলে ৩০০০ হাজার শিক্ষার্থীর নমুনা যোগার করতে হবে।
৩. মধ্যস্থ এককের নমুনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা নিশ্চিত করা।
সম্ভাবনার ভিত্তিতে তা কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত হতে পারে যা হলঃ
১. দৈবচয়িত নমুনায়ন
২. স্তরিত নমুনায়ন
৩. নিয়মক্রমিক নমুনায়ন
৪. গুচ্ছ নমুনায়ন
৫. বহুপর্যায়ী নমুনায়ন
এসকল নমুনায়নের ব্যাপারে সম্যক ধারনা নিম্নে পেশ করা হলঃ

১. দৈবচয়িত নমুনায়ন
যে নমুনায়ন পদ্বতিতে সমগ্রকের প্রতিটি এককের নির্বাচিত হওয়ার সমান সম্ভাবনা ও দলভূক্ত হবার সমান সুযোগ থাকে এবং অর প্রত্যেক পছন্দই একটি অপরটি থেকে আলাদা তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন। দৈব চয়ন করার বিবিধ উপায় আছে। ধরা যাক, একটি শ্রেণীতে ৬০০ ছাত্র-ছাত্রী আছে সেখান থেকে প্রায় ২৫ জনের একটি নমুনা দল গঠন করতে হবে সম্ভাব্য উপায়। এখন এখানে তা লটারির মাধ্যমে করা যায়  তাতে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাববনা কম থাকে।এখানে প্রথমে ছাত্রদের নাম লিখে আলাদাভাবে প্রতিটি কাগজের উপর লিখা হয় তারপর তা বক্সে রাখা হয় আর সেখান থেকে তা পরে উঠানো হয়।
 কিন্তু নমুনাসংখ্যা বেশী হলে তা জটিল হতে পারে। তাই তা আবার এখানে দৈবচয়িত পদ্বতি অবলম্বণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে দৈব তালিকা করতে হবে। দৈবসংখ্যা এর ভিতর অন্যতম। দৈব সারণী থেকে ২৫ জনের একটি তালিকা নিয়ে দল করলেই দৈবচয়িত নমুনায়ন হতে পারে। তা সীমিত ও অবাধ উভয় পর্যায়ে হতে পারে। স্বল্প সময় ও স্বল্প ব্যয়ে করার জন্যে সীমিত পরিসরে তা করা যেতে পারে আর সময় ও অর্থসংকট না থাকলে অবাধ পদ্বতিতে তা করা যায়।

সুবিধা
১. এটি অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত উপায়
২. এখানে পক্ষপাতমূলক আচরণের কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৩. এখানে নমুনা সমগ্রকের প্রতিটি একক নমুনার অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান ও স্বাধীন সম্ভাবনা থাকে।
৪. সহজ সরল পদ্বতি যার ফলে নমুনা নির্বাচনে কোন সমস্যা হয় না।
৫. এখানে সমগ্রক শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজন হয় না, তাই তা বিন্যাসজনিত ভ্রান্তি ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে।

অসুবিধা
১. এটি করার জন্যে পূর্ণ তালিকা করতে হয়,কিন্তু বাস্তবিকভাবে পূর্ণ তালিকা পাওয়া দুষ্কর একটি বিষয়।
২. নমুনায়নের জন্যে স্লিপ তৈরী করা একটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ পদ্বতি।
৩. সংখ্যাতাত্ত্বিক হওয়ায় তাতে নমুনার সংখ্যা বেশী করে সংগ্রহ করতে হবে।


২. স্তরিত নমুনায়ন

যে নমুনায়ন পদ্বতিতে প্রাথমিকাভাবে সমগ্রকে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কতগুলো স্তর বিভক্ত হয়,তারপর দৈবনির্বাচন পদ্বিতে প্রতিটি স্তর থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয় তাকে স্তরিত নমুনায়ন বলা হয়। সামাজিক গবেষণায় যেসকল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে স্তর বিন্যাস করা হয় তা হল অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানসমূহ।যেমন- বাংলাদেরশের অর্থনৈতিক গবেষণার জন্যে মানুষকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করা যেতে পারে যা হল উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। রাজনৈতিক গবেষণার জন্যে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের পদের উপর ভিত্তি করে স্তর করা যেতে পারে। সামজের উপর গবেষণার জন্যে রক্ষণশীল,প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রগতিশীল ইত্যাদি নীতির উপর ভিত্তি করে তা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এই পদ্বতিতে তথ্যবিশ্বকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এই ভাগগুলোকে উপসমগ্রক বলা হয় এবং প্রতিটি ভাগকে স্তর বলা হয়।যেমন একটি এলাকার বাসিন্দাদের আয়ের হিসাব করা হবে। এই লোকগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তা কয়েকটি উপবিভাগে বিভক্ত করতে হবে। যা হলঃ
দক্ষ শ্রমিক-২৫%
অদক্ষ শ্রমিক- ৫০%
পেশাজীবি শ্রমিক- ১৫%
দোকানদার=১০%
এইভাবে প্রত্যেকটি উপবিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে দল গঠন করাকে স্তরিত নমুনায়ন বলা হয়। এই ধরনের নমুনায়ন আবার তিন ধরনের হতে পারে যা হলঃ সমানুপাতি,অসমানুপাতিক এবং বঞ্ছিত বণ্টন।

সুবিধা

১. নমুনার প্রতিনিধিত্বশীলতা ও নির্ভরশীলতা বৃদ্বি পায়।
২. নমুনা বিভ্রান্তির সম্ভাবনা কম থাকে।কারণ নমুনা সমগ্রকের বৈশিষ্ট্যের সত্যিকার প্রতিফলন ঘিটে এখানে।
৩. প্রতিটি স্তরে গুরুত্ব দিতে হয় না বলে সময় ও শ্রম কম লাগে।

অসুবিধা

১. এটি একটি জটিল পদ্বতি যার ফলে মাঝেমধ্যে তার জন্যে সময় বেশী লাগে।
২. নির্ভুল নমুনা সংগ্রহের জন্যে গবেষকের সমগ্রকের গঠন,প্রকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যবলী জানতে হয় যা সর্বদা জানা সমাব নয়।
৩. বিন্যাসজনিত বিভ্রান্ত হতে পারে। 


৩. নিয়মক্রমিক নমুনায়ন

সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ্বতি। পদ্বতিতে নমুনা নির্বাচনকালে প্রথমেই গবেষক কতজনের নমুনা নির্বাচন করবে তা এবং তার শ্রেণী ব্যপ্তি নির্ধারণ করবেন। প্রথমে দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়।এরপর নমুনা শ্রেণী ব্যপ্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। তবে এখানে প্রথমে তাকে একটি সমগ্রকের তালিকা তৈরী করতে হয় আর এরপরে সমগ্রভূক্ত প্রতিটি এককের সুনির্দিষ্ট ব্যাপ্তিতে দৈবচয়িত পদ্বতিতে নমুনা নির্বাচনের পদ্বতি হল দৈবচয়িত নমুনা।
ধরা যাক একটি শ্রেণীকক্ষে প্রায় ১০০ জন আছে আর সেখানে ২৫ জনের তালিকা করা হবে। এখানে শ্রেণীব্যপ্তি হবে (১০০/৪)=২৫। ধরা যাক, এখানে দৈবচয়িত পদ্বতিতে ৪২ হল।এরপর শ্রেণী ব্যপ্তি অনুযায়ী পরের জন হবে ৪৬,এরপর ৫০ এভাবে করে নিয়মক্রমিক নমুনায়ন হবে। উল্লেখ্য যে, সমগ্রের শেষের দিকে চলে গেলেও তা আবার শুরুর দিকে চলে আসবে।এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। যা হলঃ

সুবিধা

১. নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন স্তরীভূত বা দৈবচয়নের চেয়ে অনেক সহজ।
২. ছোট আকৃতি সমগ্রক থেকে নির্বাচন করা সহজ হয়।
৩. এ কৌশল থেকে প্রাপ্ত ফলাফল মোটামুটি সন্তোষজনক।

অসুবিধা

১. যদি কোন ঘটনা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে হ এবং ঠিক ঐ ব্যবধান বিবেচনা করে যদি নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন করা হয় তাহলে তা ভ্রান্ত সিদ্বান্তের দিকে যায়। যেমন- বাংলাদেশে দৈনিক কতজন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তা যদি কেবল জুমআর সালাত দিয়ে করা হয় তাহলে তা কার্যত প্রতিনিধিত্বমূলক হবে না।
২. প্রথমের নমুনাটি দৈব পদ্বতিতে করা হলেও এরপরে তা আর দৈব পদ্বতিতে করা হয় না যার ফলে এক ধরনের সাংঘর্ষিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

 
৪. গুচ্ছ নমুনায়ন

সমাজ গবেষণার জন্যে গুচ্ছ নমুনায়ন একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই প্রকারের নমুনায়নে দৈবচয়িত নমুনায়নের অন্য আরেকটি রুপ। প্রকৃতপক্ষে সমগ্রক যখন বৃহদায়ন হয় তখন এবং ভৌগোলিক দিক থেকে বিস্তৃত এলাকা হয় তখন এই পদ্বতি কাজে লাগানো যায়। এই পদ্বতিতে সমগ্রককে বিভিন্নভাগে বিভক্ত করতে হয়। প্রতিটি ভাগকে বলা হয় এক একটি ক্লাষ্টার। নির্বাচিত প্রত্যেকটি একক থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত ভৌগোলিক বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে তা নির্বাচন করতে হয়।যেমনঃ বাংলাদেশে প্রায় ৬৮০০০ গ্রাম রয়েছে। সেখানকার প্রত্যেকটি গ্রামের পরিবারের আয়ের হিসাব করতে হবে।এখানে প্রত্যেকটি গ্রামকে গুচ্ছ হিসেবে ধরা হল। এখন সরল দৈবচয়নের মাধ্যমে ৫০টি গুচ্ছ নির্বাচন করা হবে এবং নির্বাচিত ৫০টি গুচ্ছের সকল পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য যে, স্তরিত নমুনা আর গুচ্ছ নমুনার ভিতর মূল পার্থক্য হল এই যে, স্তরিত নমুনায়নে আন্তঃস্তরের উপাদানের ভিতর পার্থক্য থাকলেও স্তর মধ্যস্থ কোন পার্থক্য নেই। অন্যদিকে আন্তঃগুচ্ছ উপাদানের  ভিতর পার্থক্য না থাকলেও গুচ্ছ মধ্যস্থ উপাদানের ভিতর কোন পার্থক্য আছে।  এই নমুনায়নের সুবিধা-সীমাবদ্বতা নিম্নে পেশ করা হলঃ

সুবিধা

১. বিস্তীর্ণ পরিসরের ভিতর স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে গবেষণা করার জন্যে নমুনায়ন পদ্বতি উপযোগী।
২. একক এলাকার কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উত্তরদানের জন্যে পাওয়া না গেলেও ঐ এলাকার অন্য কাউকে দিয়ে উত্তর আদায় যায়।কারণ গুচ্ছ নমুনায়নে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি একক নয় বরং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা হল হল একক।
৩. কোন সমগ্রকের সকল এককের বা উপাদানের তালিকা না থাকলেও গুচ্ছ নমুনা নির্বাচন করতে কোন অসুবিধা হয় না ।  

সীমাবদ্বতা

১. নমুনা বিচ্যুতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
২. ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে করা হয় বলে নমুনার আয়তনের উপর গবেষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
৩. নির্বাচিত এলাকার সকল অধিবাসীদের কাছে থেকে একই সময়ে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না যার ফলে একাধিকবার একই ব্যক্তি নমুনা গুচ্ছের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় ঘটতে পারে।


৫. বহুপর্যায়ী নমুনায়ন

যে নমুনায়ন পদ্বতিতে নমুনা সংগ্রহ ধাপে ধাপে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় তাকে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন বলা হয়। এই পদ্বতিতে প্রথম ধাপে একটি একটি নমুনা নেওয়ার পরে আবার আরেকটি নমুনা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাকে উপপর্যায়ে বিভক্ত করতে হয়। এভাবে করে কয়েক ধাপে তা সম্পন্ন করতে হয়।
ধরা যাক, দেশের প্রধান ৬টি বিভাগ থেকে ৬টি জেলা নির্বাচন করা হল। এরপর সেখান থেকে ৬টি উপজেলা।এরপরে সেই উপজেলা থেকে ৩য় ধাপে ৩০টি করে গ্রাম নির্বাচন করতে হবে। এরপর সেই গ্রাম প্রতি ৫০টি দম্পতি নিয়ে (৫০*৩০=১৫০০) জনের একটি নমুনা নির্বাচিত করতে হবে তাদের আয় বের করার জন্যে। এভাবে করে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন হয়ে থাকে।

সুবিধা

১. এ পদ্বতির সুবিধা হল এই যে, এখানে স্বাধীনতা রয়েছে।
২. বিশাল এলাকা থেকে নমুনা চয়ন করা যায়।
৩. প্রতিনিধ্বশীলতা বজায় রাখা যায়।

অসুবিধা

প্রাপ্ত ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা কোন কোন ক্ষেত্রে কম হয়।


ক্রমপর্যায়ী এবং ভূমিগত নমুনায়ন
এছাড়া আরও দুই ধরনের নমুনায়ন রয়েছে যাহল ভূমিগত নমুনায়ন আর ক্রমপর্যায়ী নমুনায়ন। ভূমিগত নমুনায়নের মাধ্যমে কৃষিজ জমির আর ক্রমপর্যায়ী  নমুনায়নের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান নির্ণয় করা যায়।


খ. নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন

যে নমুনায়নে কৌশল সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে না,তাকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন পদ্বতি বলা হয়। সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অজ্ঞাত থাকে বলে গবেষকদের ভ্রান্তি নিরুপুণ করা সম্ভাব হয় না। যেসকল ক্ষেত্রে সম্ভাবনা নমুনায়ন সম্ভব না সেখানে এই নিঃসম্ভাবনার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অত্যন্ত দূর্বল এবং সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। তবে ছোট আকৃতির সমগ্রক হতে এ কৌশলে নমুনা নির্বাচন করা যেতে পারে। এটি কয়েকধরনের হতে পারে যা হলঃ

১. উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন

এই পদ্বতিতে নমুনায়ন করতে হলে সম্ভাবনা তত্ত্বকে কাজে লাগাতে হয় না।এখানে গবেষক কেবল মাত্র তার স্বীয় বিচার-বুদ্বি,বিবেককে কাজ লাগিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ, এখানে সংখ্যাতত্ত্বের চেয়ে স্বীয় বিচার-বুদ্বির উপর জোড় প্রাধান্য দেওয়া হয়।
ধরা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫০০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এখন এখান থেকে সকলের মাসিক ব্য জানা সম্ভব নয়। তারজন্যে একজন গবেষকের উচিৎ হবে এদের ভিতর থেকে ১০০ জনকে বাছাই করে তাদের ভিতর থেকে তাএর মাসিক ব্যয় এর তালিকা নিয়ে নমুনা করতে পারে।

সুবিধা

এ কৌশলের সুবিধা হল এর মাধ্যমে বৃহৎ আয়তনবিশিষ্ট সমগ্রক থেকে নমুনা সংগ্রহ বেশ সুবিধাজঙ্ক এবং এতে সময় ও খরচ কম লাগে।

অসুবিধা

সমগ্রক সম্পর্কে গবেষকের সম্যক ধারনা না থাকলে নমুনার প্রতিনিধিত্বশীলতা হয় না এবং অনুসন্ধানকারীর ব্যক্তিগত ঝোঁক বা পক্ষপাতিত্ব প্রতিফলিত হতে পারে।

২. আকস্মিক নমুনায়ন

গবেষক অনেক সময় নমুনায়নের বিশেষ কোন পদ্বতিকে অনুসরণ না করে তার নিজের সুবিধা অনুযায়ী ইচ্ছা মত এবং যা কাছে পাওয়া যায় সেগুলোকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এটি প্রতিনিধিত্বমূলক বা বিজ্ঞানম্মত না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ উপযোগী বলে প্রমাণিত।

৩. স্বনির্বাচিত নমুনায়ন

যে পদ্বতিতে সমগ্রকভূক্ত উপাদান যখন নিজেই নমুনাভূক্ত হওয়ার জন্যে এগিয়ে আসে তাই হল স্বনির্বাচিত নমুনা। যেমনঃ একটি ক্লাসে ২০ জন শিক্ষার্থীর নমুনা তৈরী করা হবে এখন কাদের নিয়ে তা করা হবে সেই বিষয়ে সকলের অভিমত নিয়ে যারা যার নমুনা দিতে রাজী হবে তাদেরকে নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে। এভাবে কর স্বনির্বাচিত নমুনায়ন করা যেতে পারে। এটি স্বল্প ব্য ও সময় বিশিষ্ট হলেও একক নমুনায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে না আর পদ্বতি নির্বাচিত নমুনা তেমন প্রতিনিধিত্বশীল নয়।

প্রশ্নঃ গবেষণা কাকে বলে? এর প্রকৃতি,বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি কি?


গবেষণা

গবেষণা হল সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যার সাধারণ অর্থ হল সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান।এর সমার্থবোধক শব্দ হল জিজ্ঞাসা, তদন্ত, অণ্বেষা, অনুসন্ধান,বিকিরণ এবং নিরুপুণ। গবেষণা হল জিজ্ঞাসার উত্তর অন্বেষণের লক্ষ্যে তদন্ত করা,তদন্তের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা, সংগৃহীত তথ্যে...রচিতর অনুসন্ধান করে জিজ্ঞাসার উত্তর বের করা।   আমরা অন্যভাবে বলতে পারি যে, গবেষণা হল পুনঃসন্ধান অর্থাৎ, তুলনামূলক উন্নত পর্যবেক্ষণ করা, ভিন্ন প্রেক্ষিতে খোঁজা এবং বাড়তি জ্ঞানের সংযোজন করার সুশৃংখল ব্যবস্থা। কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও সুসসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা। আরবীতে একে বাহস বলা হয় যার অর্থ হল মাটির ভিতর কোন কিছু তালাশ করা,খুজে বের করা ইত্যাদি।
ইমাম রাগিব ইস্ফাহানি বলেন,
বাহাস অর্থ হল উন্মুক্তকরণ এবং কোন কিছুর অনুসন্ধান করা।
ড. ইয়াহইয়া ওহায়ব বলেন,
কঠিন যমিন বা পাথরে গর্ত খনন করা।সুসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা।
 পারতপক্ষে গবেষণা বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধানের একটি আর্ট। ইংরেজীতে একে research বলা হয় যার বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। research শব্দটি দুটি শব্দ তথা re এবং search এর সমন্বয়ে গঠিত। re এর অর্থ হল পুনঃ পুনঃ আর search এর অর্থ হল অনুসন্ধান করা এবং কোনকিছু খুঁজে বের করা।  research এর পূর্ণাংগরুপ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
R-Rational of thinking
E-Expert and Exhautive treatment
S-Search for solution
E- Exactness
A-Analitical analysis of adequate data
R-Relationship of facts
C- Careful recording, critical observation, Constructive attittude
H- Honesty, Hard work.
তাহলে আমরা উপরোক্ত বিষয়াদীসমূহ বিশ্লেষণ করলে গবেষণার একটি সম্যক ধারনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।
The Advance learner Dictionary of Current English এ বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের যে শাখায় নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্যে ব্যাপক ও সযত্ন তথ্যানুসন্ধান তা হল গবেষণা।
রেডম্যান ও মরী বলেন, নতুন জ্ঞান আহরণের সুসংবদ্ব চেষ্টা-প্রচেষ্টা হল গবেষণা।
রাস্ক বলেন, গবেষণা একটি বিশেষ অভিমত যা মানস কাঠামোর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি, গবেষণা সেসব প্রশ্নের অবতারণা করা যাএর উদ্ঘাটন আগে কোনদিন হয় নাই, এবং সেই গবেষণার মাধ্যমে সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।
গ্রীন বলেন, জ্ঞানানুসন্ধানের আদর্শিত বা মানসম্মত পদ্বতির প্রয়োগই গবেষণা।
সাইয়েদ শরীফ বলেন, দুটি বস্তুর ভিতর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের দলীলের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের নাম হল গবেষণা।
ফানদালীন বলেন, উপস্থিত জ্ঞানের প্রবৃদ্বির লক্ষ্যে সুশৃংখল অনুসন্ধান বা পর্যালোচনা,যা উদ্বৃতি,প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যেম সম্পন্ন হয় তা হল গবেষণা।
জন ডব্লিউ বেষ্ট বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্বতির  প্রয়োগ দ্বারা বিশ্লেষণের আরও আনুষ্ঠানিক,সুসংবদ্ব ও ব্যাপক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলা হয়।
রিচার্ড গ্রিনেল বলেন, গবেষণা হল সাধারণভাবে প্রয়োগযোগ্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টি যা করতে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক পদ্বতি ব্যবহৃত হয়।  
কেউ কেউ মনে করেন যে, যা সকলের কাছে অজানা তা জানার নাম গবেষণা নয়।বরং যেবিষয়ে সকলের অল্প জ্ঞান রয়েছে সেই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভের পদ্বতি হল গবেষণা।
তাই রবীঠাকুর বলেছেন, জানার মাঝে অজানার সন্ধান করছি।
ম্যারি ম্যকডোনাল্ড বলেন, সুশৃংখলভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রচলিত জ্ঞানের সাথে বোধগম্য ও যাচাইযোগ্য জ্ঞানের সংযোজন হল গবেষণা।
পল ডি লিডি বলেন , গবেষণা একটি তীর্যক ও সামগ্রিক অনুসন্ধান বা পরীক্ষণ যার উদ্দেশ্য হিক নব উদ্ভাবিত তথ্যের আলোকে প্রচলিত সিদ্বন্তসমূহের সংশোধন করা হয়।
অর্থাৎ, গবেষণা হল নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের পদ্বতিগত ও নৈবর্ত্তিক বিশ্লেষণ ও রেকর্ডকরণ যা তত্ত্বের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই গবেষণার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পার।  [বাকারাঃ২১৯]
আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? [আনআমঃ৫০]
গবেষণার জন্যে নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ অপরিহার্য যা হলঃ
১। অনুসন্ধিৎসু ও কৌতূহলী মনোবৃত্তি
২। সুনির্দিষ্ট বিচরণক্ষেত্র
৩। সুবিন্যস্ত অনুমান
৪। পর্যবেক্ষণযোগ্য তথ্যের সহজলভ্যতা
৫। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ কৌশল
৬। ফলাফল উপস্থাপনের যৌক্তিক কৌশল

গবেষণার বৈশিষ্ট্য

১। গবেষণা কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিবেদিত হবে।
২। গবেষণা প্রাথমিক বা প্রধান উৎস থেকে জ্ঞান বা উপাত্ত সংগ্রহ করে অথবা উপাত্ত নতুন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।
৩। গবেষণা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষালব্দ্ব সাক্ষ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর জন্য প্রয়োজন নির্ভুল পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনা।এর জন্যে দরকার দক্ষতা।
৪। এটি একটি কুশলী, পদ্বতিগত ও সঠিক অনুসন্ধান।
৫। এটি সাধারণ নীতির আবিষ্কারের উপর গুরুত্বারোপ করে থাকে।
৬।গবেষণা হবে যুক্তিযুক্ত ও নৈর্ব্যত্তিক। সম্ভাব্য সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর ব্যবহৃত পদ্বিতি, সংগৃহীত উপাত্ত ও সিদ্বান্তের যাচাই করতে হবে। যেসকল তথ্যসমূহ ভুল হতে পারে
৭। অনুমিত সিদ্বান্ত যাচাইয়ের জন্যে নিরপেক্ষভাবে যথার্থ কৌশল অনুসরণ করে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।
৮। সংগৃহীত উপাত্তকে পরিমাণগত বা সংখ্যাগতভাবে সুসংগঠিত হতে হবে।
৯।  গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে।
১০। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।
১১। ফলাফলকে নিরপেক্ষভাবে সতর্কতার সাথে রেকর্ড করা।
১২। সিদ্বান্ত গ্রহণে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।
১৩। গবেষণাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তথ্যনির্ভর হতে হবে।
১৪। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।
১৫। গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্বতিকে অনুসরণ করে সকল কিছুর সমাধান প্রদান করবে।
১৬। গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হবে এবং এতে সহজ ধারনা থাকবে।
১৭। গবেষণার ডিজাইন হবে সুপরিকল্পিত যাতে প্রাপ্ত ফলাফল যতটুকু সম্ভব নৈবর্বত্তিক হয়।
১৮। গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তত্ত্বের মাধ্যমে নতুন কিছু জানার সুযোগ সৃষ্টি করা।
১৯। সংগৃহীত তত্ত্বের সঠিক যাচাই-বাছাই এবং এরপর তার যথাযথ প্রয়োগ।
২০। গবেষককে বিপুল কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হতে হবে।
২১। যদি কোন সমস্যা নিয়ে কেউ গবেষণা তাহলে সেই ক্ষেত্রে তার কেবল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেই হবে না।বরং তাকে এর জন্যে তার যথার্থ ও বাস্তবভিত্তিক সমাধানের পরামর্শের মাধ্যমে সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করতে হবে।
২২। সুপরিকলনার উপর ভিত্তি করে করতে হবে।
২৩।বিশেষ বিশেষ সমস্যাবলী এককভাবে নয় বরং দলবদ্বভাবে একত্রিতভাবে করতে হবে। কারণএতে সময়ে কম লাগেবে এবং স্বল্প সময়ে অনেক উন্নয়ন ঘটবে।
২৪। গবেষণার কাজ শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ কিংবা লিপিব্দ্ব করা না বরং তা হল অনুমিত সিদ্বান্ত গ্রহণ, সংগৃহীত তথ্যের বিন্যাস এবং বিশ্লেষণ করার মত কাজ করার যোগ্যতা থাকা।
২৫। নতুন জ্ঞানের সন্ধান দিতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে তা গবেষণা হবে না। ড. মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন,
গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে গবেষণাটি নতুন, ভইনব থেকে হবে যে বিষয়ে ইতিপূর্বে গবেষণা হয় নাই।
তবে গবেষণা যদি এমন হয় যে, তার দ্বারা আরও নতুন কিছু আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর তার দ্বারা পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে সেই গবেষণাটি ফলপ্রসূ হবে।
২৬। গবেষকদের চিন্তাকে সুসজ্জিত করতে হবে।
২৭। কারও বই বা প্রবন্ধ থেকে উদ্বৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ যার মাধ্যমে তথ্য যোগার করা হবে তার উদ্বৃতি পেশ  করতে হবে অথবা তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ তুনজী বলেন,
গবেষকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আমানত,সততা। আমানতের সাথে গবেষক সাহিত্যিক, পণ্ডিত, মনীষীগণের মতামত উদ্বৃতি গ্রহ্ণ করার সময় মূল বক্তার প্রতি সম্পর্কিত করবে। এমন অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেকে কোন আলিমের বক্তব্য দেওয়ার পরে তা নিজের  উদ্বৃতি বলে  চালিয়ে যায়। 
গবেষণার উদ্দেশ্য
গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য হল এই যে, এমন লুকায়িত সত্যের আবিষ্কার যা এখন পর্যন্ত যাকিছু আবিষ্কার হয় নাই। তাই  গবেষণার যেসকল বৈশিষ্ট্য  যা হবে তা নিম্নরুপঃ
(ক) কোন ঘটনা সম্পর্কে পরিচিতি হওয়া এবং সেই ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান।( এই ধরনের গবেষণা হল অনুসন্ধানমুখী গবেষণা)
(খ) কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, অবস্থা, দল ও গোষ্ঠীর চিত্রাংকন। (এই ধরনের গবেষণা হল বর্ণনামূলক গবেষণা)
(গ) কোন কিছু কতবার ঘটেছে এবং কোন কিছুর সাথে গবেষণাটি কতটুকু সম্পর্কযুক্ত। (এই ধরনের গবেষণা হল নিরুপক গবেষণা)
(ঘ) চল বা পরিবর্তিতগুলোর কার্যকরণ সম্পর্কে অনুমিত সিদ্বান্ত যাচাই। ( এই ধরনের গবেষণা হল অনুমিত সিদ্বান্তমূলক যাচাই) 
(ঙ) প্রাচীন পাঠের কোন বিষয় উপস্থাপন করে এর যাচাই বাচাই করা। সে সম্পর্কে লিখিত সকল মতামত চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং এ ব্যাপারে গবেষকদের মতামত প্রদান।
(চ) নতুন বিষয় চিন্তা-গবেষণা করা যা নিয়ে ইতিপূর্বে কিছুই হয় নাই। সেই চিন্তা ধারাকে উপযুক্ত প্রমাণের সাহায্যে সকলের সামনে তুলে ধরা।
(ছ) গবেষক দ্বারা আবিষ্কৃত গবেষণার নতুন পদ্বতি সম্পর্কে রচনা করা এর গুরুত্ব ও উপকারিতা বর্ণনা করা।
(জ) গবেষণা কর্মের উদ্দেশ্য সংগৃহীত উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে নিজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দ্বার তাদের সত্যতা যাচাই করা, সেই সত্যের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও মন্তব্যসহ বিষয়টি সকলের কাছে উপস্থাপন করা, এবং বিষয়টির উপর আলোচনা করা। এটি নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে হতে পারে অথবা পুরাতন তত্ত্বের নতুনত্বের উপর ভিত্তি করে হতে পারে।

গবেষণার লক্ষ্য

১. নতুন কোন গবেষণামূলক ডিগ্রী অর্জন।
২. বাস্তব সমস্যার সমাধান প্রদান করা।
৩. যে সমস্যার কোন সমাধান হয় না তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা।
৪. সৃজনশীলতার পরিচয় প্রদান করা।
৫. সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সমাজকে সেবা প্রদান করা।
৬.সমাজচিন্তা ও সমাজসচেতনা বৃদ্বি করা।
৭. মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কল্যাণ বৃদ্বিকরণ।
৮. বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বের করা।
৯. যা ইতিপূর্বে মানুষের কাছে অজানা ছিল তা সকলের কাছে অবহিত করা।

গবেষণার প্রকৃতি

উদ্দেশ্যগতভাবে যে কোন গবেষণাই নতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপস্থিত জ্ঞানকে সমৃদ্ব করতে আগ্রহী করে তোলে। এর পিছনে কাজ করে গবেষকদের অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহুলী মন এবং সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ উদ্ভাবনের প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গবেষণালব্দ্ব ফলকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গবেষণা দুই ধরনের যা হলঃ মৌলিক গবেষণা এবং ফলিত গবেষণা। বর্তমানে গবেষকগণ আরেক ধরনের গবেষণার কথা বলে থাকেন যা হল কার্যক্রম গবেষণা।
গবেষণার প্রকৃতি হয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।
২। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।
৩। গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে।
৪। অভিজ্ঞসম্পন্ন লোকদের দ্বারা গবেষণা করা দরকার।তা না হলে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।
৫। গবেষণার উপর গবেষণা করে এর দ্বারা নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য আবিষ্কার হয়।
এই ধরনের গবেষণা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

১।মৌলিক গবেষণা

এটি হল আদি বা মূল গবেষণা।এর ধারনা মূলত পদার্থবিজ্ঞান থেকে নেওয়া হয়েছে। একে কখনও কখনও বিশুদ্ব গবেষণা বা basic research বা Fundamental research বলা হয়। এই মৌলিক গবেষণার সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে কেনেথ ডি বেইলী বলেন, বিশুদ্ব গবেষণা হল তত্ত্ব ও অনুকল্পের বিকাশ ও পরীক্ষা ঘটিএ থাকে যা অনুসন্ধানকারীর কাছে বুদ্বিবৃত্তিক দিক দিয়ে আগ্রহোদ্দীপক এববগ যার ভবিষৎ সামাজিক কার্যকারিতা থাকলেও বর্তমানের সামাজিক সমস্যার ক্ষেত্রে কোন কার্যকারিতা থাকে না।
এর মূল লক্ষ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন মৌলিক নীতি ও সত্য আবিষ্কার করা।এটি একটি কঠোর,নিয়ন্ত্রিত,ধারাবাহিক ও বিশ্লেষণমুলক পদ্বতি। এ নীতি অনুযায়ী মৌলিক গবেষণা সুদৃঢ়ভাবে কেবল তত্ত্বের পরীক্ষা ও উন্নয়ন ঘটায় মাত্র আর তা প্রধানত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হয়ে থাকে।এই মৌলিক গবেষণার জন্য প্রয়োজন জটিলতার সমস্যা, নিখুঁত পদ্বতি,উত্তম উপকরণ,উচ্চতর নিয়ন্ত্রন ও বিশ্লেষণ। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হল তত্ত্বের বিকাশ ঘটানো আর জ্ঞান আহরণ হল এর প্রধান লক্ষ্য।বেশীরভাগ বিজ্ঞানীগণ এই পদ্বতির আলোকে গবেষণা করে থাকেন।উদাহরণস্বরুপ আমরা নিউটনের মধ্যাকার্ষণ শক্তির তত্ত্বের কথা বলতে পারি যার দ্বারা পরবর্তীতে সৌরচুল্লির আবিষ্কার হয়। মাদাম কুরী রেডিয়াম আবিষ্কার করেন যার তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে আলফ্রেড নোবেল হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার করেন।
এই ধরনের গবেষণা দুই ধাপে সম্পন্ন হতে পারে। যা হলঃ

ক। কোন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারঃ

মৌলিক গবেষণা থেকে এমন তত্ত্ব আবিষ্কৃত হবে যা ইতিপূর্বে কখনও ছিল না। এই ধরনের গবেষণা মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মিটানোর দরুন কল্পনার মাধ্যমে জাগ্রত হয়। যার দ্বারা বিশ্ব দেখতে পায় নতুন কোন আলোর পথ। গ্যালিলিও, নিউটন,আইনস্টাইন প্রমুখ এর অবদান মৌলিক বা স্ব স্ব ধারনাজাত বা কল্পনাপ্রসূত। তাই এ ধরনের গবেষণা হল তাত্ত্বিক গবেষণা।

খ। প্রচলিত তত্ত্বের উন্নয়ন

এটি হল কোন প্রচলিত তত্ত্বের কিছু কিছু অনুমানকে সংশোধন বা পরিমার্জন করে তত্ত্বের উন্নতি ঘটানো। কখনও তা পুরাতন তত্ত্বের উপকরণের উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন তত্ত্বের বিকাশ ঘটায়। উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপ, বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা, শিক্ষার মূল্যবোধ, শিক্ষার লক্ষ্য ইত্যাদি এই গবেষণার অন্তর্ভূক্ত।

২। ফলিত গবেষণা

কোন কোন সমাজ,ব্যবসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শিল্প তাৎক্ষণিকভাবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় আর তার সমাধানের জন্যে যে গবেষণা হয় তাকে ফলিত গবেষনা বলা হয়। একে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা বলা হয়। কারণ এই ধরনের গবেষণায় মাঠ পর্যায়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এই গবেষণার দ্বারা মৌলিক গবেষণার মত নতুন জ্ঞান অর্জন হয় না।বরং এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা হয়। বস্তুত বাস্তব সমস্যা সমাধান, চাহিদা, সম্পদ, প্রক্রিয়া ও লাভ-ক্ষতির মাধ্যমে তথ্যাবলী জোগাড় করে তার কার্যকরণ সম্পর্ক যাচাই করা হয় ফলিত গবেষণার মাধ্যমে। আর এখানে যেহেতু বাস্তবজীবনের উপর প্রয়োগ করা হয় তা এখানে নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ভুলতাকে ত্যাগ করা হয়। পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার, পরীক্ষা পদ্বতির উন্নয়ন, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয়াদী এর অন্তর্ভূক্ত। ফলিত গবেষণার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে। যা হলঃ
১। যেসকল বিষয়াবলী সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে সেই ব্যাপারে সকলকে সম্যকভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা।
২। মৌলিক গবেষণার উন্নয়নে সহায়তা করে।
৩। সাধারণীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরিত করার জন্য উপাত্ত ও প্রত্যয় সরবরাহ করা।
সাধারণত এই ধরনের গবেষণাকে উন্নয়শীল দেশে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়।  দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্বশালী করার জন্যে এই ধরনের গবেষণা সেখানে ব্যবহৃত হয়। এর পিছনের অর্থ বরাদ্দ হয়।  কিন্তু এ ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণাকে একেবারে বাদ দিলে হবে না।  কেনেথ ডি বেইলি এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
কোন সামাজিকন সমস্যার সমাধানে প্রায়োগিক হতে পারে এমন ফলাফল সমৃদ্ব করে যে গবেষণা হয় তা হল ফলিত গবেষণা।

কার্যক্রম গবেষণা

এটি মূলত ফলিত গবেষণার একটি অংশবিশেষ। ফলিত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে কার্যকারিতা ও গতিশীলতার জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে যে গবেষণা হয় তা হল কার্যক্রম গবেষণা। লেহম্যান এ ব্যাপারে বলেছেন,
কার্যক্রম গবেষক হল এক ধরনের ফলিত গবেষণা যেখানে সিদ্বান্তটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ব কাজে জড়িত গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ একই।

গবেষণার প্রকৃতির উদাহরণ

জনসংখ্যা বৃদ্ব বাংলাদেশে একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। মূলত এর জন্য অনেক সমস্যাবলী সৃষ্টি হয়। এটি কি কি কারণে হয়,এটির ফলে কি কি সমস্যা উদ্ভূত হয় এবং তা নিরুপুণের উপায় কি এই বিষয়াবলীসমূহ নিয়ে কি কি কর্মসূচী গ্রহণ করা যায় এর মাধ্যমেই চলতে পারে একটী গবেষণা। 

প্রশ্নঃ গবেষকদের গুণাবলী নিয়ে লিখ।



১।  গবেষণা একটি সময়-সাপেক্ষ,ব্যয়-বহুল এবং শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।এরজন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।তাই গবেষণার জন্য দরকার ধৈর্য্য ও ধীরস্থির মনোভাব।গবেষণার কাজ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে করতে হবে। এরজন্যে মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন, ধৈর্য্য হল সর্বপ্রথম গুণ যার সাথে গবেষকদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হওয়া উচিৎ। ধৈর্য্য ছাড়া কো জটিল শব্দের মর্মার্থ সম্পর্কে গবেষণা করতে সক্ষম নয় এমন কি তা কবিতার পংকিও নয়।


২। গবেষককে হতে হবে সাহসী ও নিরপেক্ষ। গবেষণার তথ্য যদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাহিরে যায় তাহলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা।তাক সকল ধরনের আগেকবর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হবে।

৩। সিদ্বান্ত গ্রহণে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।এক্ষেত্রে তাকে তার স্বীয় খেয়াল-খুশীকে পরিত্যাগ করে তাকে সত্যের উপর সকলকিছুর উপর মতামত ব্যক্ত করার মত দৃঢ়তা থাকতে হবে। এখানে কোন ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ গ্রহণ করা যাবে না।  এ ব্যাপারে মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন, গবেষকদের যেমন নিজদের খেয়াল খুশি থেকে পবিত্র রাখা তেমনিভাবে তাকে পর্যালোচনার জন্যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করা যাবে না।

৪। সংগৃহীত তত্ত্বের সঠিক যাচাই-বাছাই এবং এরপর তার যথাযথ প্রয়োগ।

৫। গবেষককে বিপুল কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হতে হবে।

৬। গবেষকদের চিন্তাকে সুসজ্জিত করতে হবে।

৭। কারও বই বা প্রবন্ধ থেকে উদ্বৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ যার মাধ্যমে তথ্য যোগার করা হবে তার উদ্বৃতি পেশ  করতে হবে অথবা তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ তুনজী বলেন,

গবেষকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আমানত,সততা। আমানতের সাথে গবেষক সাহিত্যিক, পণ্ডিত, মনীষীগণের মতামত উদ্বৃতি গ্রহ্ণ করার সময় মূল বক্তার প্রতি সম্পর্কিত করবে। এমন অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেকে কোন আলিমের বক্তব্য দেওয়ার পরে তা নিজের  উদ্বৃতি বলে  চালিয়ে যায়। 

৮। গবেষণা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষালব্দ্ব সাক্ষ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর জন্য প্রয়োজন নির্ভুল পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনা।এর জন্যে দরকার দক্ষতা।

৯। গবেষণা হবে ধারাবাহিক ও সুশৃংখল।তাই গবেষককে সুশৃংখল ও ধারাবাহিকভাবে কাজ করার মন-মানসিকতা থাকতে হবে। মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন, গবেষকদের একটি প্রিয়তম গুণ হল সুক্ষ্ণতার সাথা কাজ করা। এতে প্রমাণিত হয় যে, গবেষক নিজের গবেষণায় সূক্ষ্ণতার সাথে কাজ করছেন বা পর্যালোচনায় সুদৃঢ়তা অর্জন করেছেন।

১০। উৎসাহ ও উদ্দীপনা থাকতে হবে।

১১। নস বা মূল ইবারত গভীরভাবে অধ্যয়ন করে তা উপলব্দ্বি করতে হবে অপরের মতামত সম্পর্কে অবগতি লাভ করতে হবে। সঠিকভাবে তা উপলব্দ্বি না করে অন্যের গ্রন্থ থেকে তা তুলে দিলে তা হবে বিভ্রান্তিকর।

১২। নতুন জ্ঞানের সন্ধান দিতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে তা গবেষণা হবে না। ড. মুহাম্মদ আত-তুনজী বলেন,

গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে গবেষণাটি নতুন, ভইনব থেকে হবে যে বিষয়ে ইতিপূর্বে গবেষণা হয় নাই।

তবে গবেষণা যদি এমন হয় যে, তার দ্বারা আরও নতুন কিছু আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর তার দ্বারা পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে সেই গবেষণাটি ফলপ্রসূ হবে।

তাই সকলের মতামত হুবুহু তুলে ধরা একটি অন্যায়মূলক কাজ হবে। তা একেবারেই পরিহার করে চলতে হবে।

প্রশ্নঃ গবেষণার প্রস্তাবপত্র ব্যাপারে যা জান লিখ।



ভূমিকা

গবেষণার জন্যে প্রস্তাবপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়মূলত এটি ছাড়া কোন ধরনের গবেষণার কাজ সুশৃঙ্খল্ভাবে হবে না। এরজন্যে একজন গবেষককে সঠিকভাবে গবেষণার জন্যে প্রস্তাবপত্রকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এই গবেষণার প্রস্তাবপত্র সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

প্রস্তাবপত্র কি?


একজন ছাত্র তার পি এইচ ডি কিংবা এম ফিল ডিগ্রী অর্জন করার জন্যে তার গবেষণা কর্মকে কাগজে কলমের মাধ্যমে যেভাবে উপস্থাপন করবেন তাই হল গবেষণার প্রস্তাবপত্র। অনেকে গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহী হলেও গবেষণার প্রস্তাবনার ব্যাপারে বেশী ধারনা রাখে না। তাই এখানে গবেষণা করতে একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই এখানে একজন ছাত্রকে স্নাকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার সময়ে তাকে বিষয় নির্বাচন করে রাখতে হবে।এরপরে থেকেই তাকে এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। এরপরেই তাকে সবকিছু ধারাবাহিক ও সুশৃংখলভাবে কাজ করে যেতে হবে। কোন গবেষণা করার জন্যে তার উদ্দেশ্য, গুরুত্ব, অনুমিত সিদ্বান্ত, পদ্বতি,অর্থবাজেট ও সময়ের বণ্টন ইত্যাদি দেখিয়ে কোন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে যে প্রস্তাবপত্র উপস্থাপিত হয় তাহলে হল গবেষণার প্রস্তাবপত্র। অন্য কথায় প্রস্তাবিত গবেষণার বিভিন্ন ধাপে সুলিখিত প্রবন্ধকে গবেষণার প্রস্তাবপত্র বলা হয়।

ধাপসমূহ

একটি গবেষণার প্রস্তাবনার কয়েকটি ধাপ থাকতে পারে যা হলঃ

শিরোনাম

প্রস্তাবপত্র উপস্থাপনের সময় একটি প্রাসঙ্গিক ও সংক্ষিপ্ত শিরোনাম নির্ধারণ করতে হবে। শিরোনাম যেন একেবারেই সংক্ষিপ্ত না হয় আবার তা যেন একেবারে বড় না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।মূলত একটি শিরোনামের নামের উপর গবেষণার মান অনেকাংশে নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই এই শিরোনামকে অত্যন্ত প্রাসংগিক হতে হবে। যেমনঃ কেউ যদি এইডস প্রতিরোধে ইসলামের  ভূমিকা সংক্রান্ত কোন গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লিখতে চায় এখানে বিভিন্ন ধরনের শিরোনাম হতে পারে। যেমন তা হতে পারে এইডস প্রতিরোধে ইসলাম, এইডস প্রতিরোধে ইসলামী শিক্ষা, এইডসঃ তার ভয়াবহতা ও তা প্রতিকারে ইসলাম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের শিরোনাম হতে পারে। এখানে একটি সুন্দর শিরোনাম হওয়ার জন্যে   এইডস প্রতিরোধে ইসলামী শিক্ষা অধিক যুক্তিসঙ্গত।

ভূমিকা

শিরোনাম প্রদানের পরপরই একটি গবেষণা মূলত ভূমিকা দ্বারা শুরু হয়। ভূমিকা একটি গবেষণার প্রস্তাবপত্রের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে একটি সমস্যার প্রকৃত অবস্থা এবং তার পরিধি নিয়ে অত্যন্ত সংক্ষেপে আলোচনা করবে। এখানকার ভাষা হতে হবে অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল। এখানে গবেষণার মূল বক্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলেও এর পাশাপাশি উক্ত গবেষণার  লক্ষ্য,উদ্দেশ্য,প্রয়োজনীয়তা, অনুমিত সিদ্বন্তা ইত্যাদি বিষয়াদী নিয়ে অত্যন্ত সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে শুরুতে সকলের কাছে তা  কৌতীহুলী করে তুলতে। কিন্তু এর পাশাপাশি এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তা যেন এখানে বৃহৎ আকার ধারন না করে তাহলে পরে একধরনের এক ঘুয়েমী ভাব চলে আসবে।

উদ্দেশ্য

গবেষণা করার জন্যে উদ্দেশ্য নিরুপূণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এটির দ্বারা একটি গবেষণার ধারা সুশৃঙ্খলভাবে প্রবাহিত হবে। অন্যথায় সেখানে নানাবিধ সমস্যা তৈরী হতে পারে। এই উদ্দেশ্যকে পয়েন্ট আকারে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে। একটি উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়ে গেলে পরে সেই গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা,অনুমিত সিদ্বান্ত, গবেষণার পদ্বতি ইত্যাদি বিষয়ে ধারাবাহকভাবে আগাতে পারবে। এই বিষয়টি শুধুমাত্র একজন গবেষকের জন্যে গুরুত্বুপূর্ণ নয় বরং তা একজন পর্যবেক্ষকের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার মূলবিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্যে। গবেষণার উদ্দেশ্যকে যদি নির্দিষ্ট ও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা না যায় তাহলে তাহলে গবেষণার কার্যধারা ও পদ্বতি সঠিক ও নির্ভুল হয় না। তাই একে বিস্তারিতভাবে না লিখে বরং সংক্ষেপে আলোচনা করতে হবে।যেমন পরিবেশের বিপর্যয় রোধে ইসলামের ভূমিকার উপর যদি কেউ কোন গবেষণা করতে চায় তাহলে এরজন্যে তাকে প্রথমে পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে হবে,এরপর সেইসকল দিক নিরসনে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা এরপরে তা আমাদের জীবনের কীভাবে বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি সেই বিষয়গুলো গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর ভিতর আসতে পারে।

যৌক্তিকতা

এখানে প্রস্তাবিত গবেষণার প্রয়োজনীয়তা, তাৎপর্য ও যৌক্তিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিষয়ের সাথে সংক্লিষ্ট বইপত্র ও গবেষণা প্রবন্ধ ইত্যাদিত্র পর্যালোচনার উপর বিজ্ঞতাপূর্ণ যুক্তির দ্বারা নায্য প্রতিপাদন করতেহবে। গবেষক বিষয়বস্তু সম্পর্কে ব্যপক পাঠ করে তার স্বপক্ষে যৌক্তিকতা প্রদর্শন করবে। যেমন কেউ যদি বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকের উপর গবেষণা করে তাহলে এই ব্যাংকের সাথে অন্যান্য ব্যাংকের পার্থক্য নিরুপুণ করে এরপরে তা আমাদের দেশে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় আর তা অধিক হারে প্রতিষ্ঠিত হলে পরে কিভাবে সকলে সুবিধাপ্রাপ্ত হবে এই ব্যাপারে ব্যপকভাবে যুক্তি ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে।

অনুমিত সিদ্বান্ত

অনুমিত সিদ্বান্ত সকল বৈজ্ঞানিক গবেষণায় হয়ে থাকে। এটি কখনও স্পষ্টভাবে হয় আবার তা কখনও উদ্দেশ্যের ভিতর থাকে। অনুমিত সিদ্বান্ত হল কোন ঘটনার বর্তমান অবস্থার আলোকে অস্থায়ী বা আপাত সত্য বলে বিবৃত হয় যা নতুন অনুসন্ধানের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। পরীক্ষামূলক গবেষণায় নির্ভরশীল ও স্বাধীন চলের ভিতর সম্পর্কের মাধ্যমে অনুমিত সিদ্বান্ত বর্ণনা করা হয়। অনুমিত সিদ্বান্ত বর্ণনামূলক, ব্যাখ্যামূলক,পরিসংখ্যানগত অথবা নাস্তি হতে পারে।অনুমিত সিদ্বান্ত হতে হবে যুক্তিযুক্ত, জ্ঞাত সত্য ও তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে গবেষক যে বিষয়টির পক্ষে কথা বলবে সেই বিষয়টির দুই একটি সমস্যার কথাও উল্লেখ করতে পারেন যদিও পরবর্তীতে তার সমাধান দিতে হবে তাকে।

যেমন কেউ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিষ্টার সিস্টেম চালু হওয়ার ব্যাপারে গবেষণা করতে চান তাহলে সেখানে তিনি গবেষণা করে এই ধরনের অনুসিদ্বান্ত গ্রহণ করতে পারেন,

১। যারা আগে এই সেমিষ্টারের সাথে সংক্লিষ্ট ছিলেন না তারা সমস্যায় পতিত হচ্ছেন।

২। বিভিন্ন পদবীর শিক্ষকগণ এর সমস্যায় সম্মুখীন হচ্ছেন।

৩। নবীন শিক্ষকগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই পদ্বতিতে পাঠদান করতে পারছেন।

৪। স্বল্প সময়ে কোর্স সম্পন্ন হচ্ছে।

৫।অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই পদ্বতিতে সন্তুষ্ট।

গবেষণার ব্যবহৃত পদসমূহে সংজ্ঞা দান

প্রয়োজনীয় শব্দ,ধারনা ও পদসমূহের যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। যেসকল শব্দাবলী মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান শাখায় অন্তর্ভূক্ত নয় সেইসকল শব্দাবলীর সঠিক ব্যাখ্যা সকলের সামনে প্রদান করতে হবে। যেমন বাংলাদেশের বাল্যবিবাহের একটি সার্বিক অবস্থা নিয়ে যদি কেউ গবেষণা করতে চায় তাহলে এখানে প্রথমে বুঝাতে হবে বাল্যবিবাহ কাকে বলা হয়।তাছাড়া এখানে বিবাহের আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ যেমনঃ দেনমোহর, বিবাহে রেজিষ্ট্রেশন, কাজী সাহেব,কাজী অফিস,ঘটক ইত্যাদি বিষয়াদী সম্পর্কে একটি ধারনা প্রদান করতে হবে। 

গবেষণার পদ্বতি

এটি গবেষণা করার জন্যে একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এটি ছাড়া মূলত কোন গবেষণা হবে না।তাই এই গবেষণা নীতির উপর বিশেষভাবে জোড় প্রদান করতে হবে। নিম্নে নীতিমালার উপর ভিত্তি করে গবেষণার পদ্বতিসমূহ প্রদান করা যেতে পারে যা হলঃ

যদি বয়স্কদের ভাতার ব্যাপারে কেউ গবেষণা করতে চায় তাহলে তাকে নিম্নোক্তভাবে গবেষণা করতে হবে যা হলঃ

ক. তথ্যানুসন্ধান পদ্বতি

এটি পরীক্ষণমূলক,বর্ণনামূলক মিংবা ঐতিহাসিক হতে পারে।

খ. এলাকা নির্বাচন

যদি বাংলাদেশের বয়স্কদের ভাতার উপর কোন জরিপ চালাতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে আদিবাসী বহুল এলাকা ব্যতীত কোন নির্দিষ্ট গ্রাম বা শহর এলাকা নির্বাচন করতে হবে।

গ. নমুনা নির্বাচন

এটি দৈবচয়ন পদ্বতিতে কয়েকটি বিশেষ এলাকাকে যেমন প্রতিটি বিভাগীয় জেলার ২০টি করে গ্রাম(৭*২০=১৪০) বাছাই করে সেখানে ৬০ এর অধিক বয়স্কদের জন্যে ভাতা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

ঘ. উপাত্ত সংগ্রহ

এখানে উপাত্ত প্রশ্নমালা,সাক্ষাৎকার কিংবা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা গ্রহণ করতে পারে। তথ্য সংগ্রহের কাজ একা না করে কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তা করা যেতে পারে। প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে গবেষকের সশরীরের সেখানে উপস্থিত থাকা দরকার।

ঙ। উপাত্ত বিশ্লেষণ

প্রাপ্ত তথ্যাবলী যথাযথভাবে সম্পদান করতে হবে।এরপর তা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সারণীবদ্ব করতে হবে। পরবরতীতে তা বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত পদ্বতির উপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করতে হবে( শতকরা, গড়, ব্যবধান)। তা একক বা বহুমুখী চলকের উপর হবে। এইসকল তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করার জন্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

সময়

সময় নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।কারণ শিক্ষকগণ একটি নির্ধারিত সময় বেঁধে দেন এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্যে।গবেষণার ভিতর বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়ে থাকে।তার ভিতর কোন একটি কাজে যদি বেশী সময় দেওয়া হয় তাহলে অন্যান্য কাজে বেশী সময় দেওয়া যাবে না আর যারফলে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হতে পারে। তাই সময় বণ্টন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  এখন বই সংগ্রহ করা, তা থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা, মাঠ পর্যায়ে কাজ করে উপাত্ত সংগ্রহ করা, তা বিশ্লেষণ করা ইত্যাদির জন্যে মোট ৬০ ভাগ সময় নেওয়া যেতে পারে।এরপরে তা সাজাতে,পদটীকা,তথ্যপুঞ্জী, থিসিসকে সংগঠিত করে দেওয়ার জন্যে কমপক্ষে ২০ ভাগ সময় নেওয়া দরকার আর অন্যান্য কার্যবলী তথা বাঁধাই, টাইপ,প্রিন্ট, সন্নিবেশিত করার জন্যে বাকী ২০ ভাগ সময় দিতে হবে।

বাজেট

গবেষণা করার জন্যে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে বই-পত্র,জার্নাল ইত্যাদি সংগ্রহে, পরিবহনে, কর্মীদের খরচ, খসরা ঈ চূড়ান্ত নীতিমালা বের করা, বাঁধাই, টাইপিং, স্টেশনারী ও বিবিধ বিষয়ে যে ধরনের খরচ হয় তা বের করে রাখতে হবে।



থিসিস সংগঠন

সম্পূর্ণ থিসিসটি কীভাবে সংগঠন করতে হবে আর তা কয়ভাগে বিভক্ত করে, তা কীভাবে সাজানো হবে, তার ধারাবাহিকতা কেন সাজানো হবে, ইত্যাদি বিষয়াবলী থাকে। এছাড়া এখানে গবেষক প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ উল্লেখ করতে পারেন। তাই প্রথমে অধ্যায়গুলোকে সাজিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। উদাহরণস্বরুপ কেউ যদি বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালসমূহের করুণ অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করতে চায় এরজন্যে সে নিম্নোক্ত উপায়ে তা করতে পারেনঃ

শিরোনাম

ভূমিকা

হাসপাতালসমূহের অবস্থা নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্য

হাসপাতালের বাস্তব চিত্র

হাসপাতালসমূহের করুণ অবস্থার কারণ

হাসপাতালের করুণ অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের অভিব্যক্তি

সমাধানের পথ

তথ্যপুঞ্জী

প্রস্তাবপত্রে যখন গবেষণাবলী লিখা হ্য় তখন তা কোন বই,গ্রন্থ,ওয়েবসাইট, জার্নাল থেকে নেওয়া হয় তা উল্লেখ করতে হবে। তা না হলে গবেষণা কখনও সম্পূর্ণভাবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রেফারেন্সসমূহ নিম্নোক্ত উপায়ে করা যেতে পারে যা হলঃ

.আবূ হেনা মোস্তফা কামাল, , এইচ আই ভি/ এইডস প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৪২ বর্ষ,২০০২ খ্রি পৃ.১৬২ [কোন গবেষণামূলক পত্রিকা থেকে রেফারেন্স নেওয়ার জন্যে]

নূর আহমদ, পরিবেশ বিপর্যয় ও উন্নয়ন ভাবনা,বিচয়ন,তাবি, পৃ.৩৮ [বই থেকে রেফারেন্স নেওয়ার জন্যে]

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...