আল্লাহ পাক বলেন,
“যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে
পবিত্র জীবন দান করব” [নাহলঃ৯৭]
আল্লাহ পাক এই মানব জাতি
তথা নর-নারীকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাক মর্যাদার দিক থেকে তাদের ভিতর কোন ধরনের পার্থক্য
সৃষ্টি করেন নাই।আল্লাহর হুকুম মান্য করলে একজন পুরুষ যেমন তার প্রতিদান পাবেন তদ্রুপ
একজন নারীও সেরকম পুরষ্কার লাভ করতে পারবেন। আবার যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের শাস্তি
সমভাবে পূর্বনির্ধারিত।আল্লাহ পাক যেমন একজন পুরুষকে কোন সম্প্রদায়ে নেতৃত্ব দানের
সুযোগ প্রদান করেছেন তদ্রুপ আল্লাহ পাক একজন নারীকেও কোন সম্প্রদায়ে নেতৃত্ব প্রদানের
সুযোগ প্রদান করেছেন।এখন বর্তমান এই মুসলিম বিশ্বে নারী নেতৃত্ব কি জায়েয না নাজায়েয
তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা,গবেষণ এবং পর্যালোচনা। ইসলামে নারী নেতৃত্ব জায়েয কি নাজায়েয
এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামতসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলঃ
অন্যান্য ধর্মে নারীর অবস্থা
নারী নেতৃত্ব জায়েয কি
নাজায়েয তা আলোচনা করার পূর্বে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা দরকার যে ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য
ধর্মে নারীদেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে? এই পৃথিবীতে নারীগণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে
নারীগণ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে নারীদের ব্যাপারে যেসকল
কথা বলা হয়েছে তাতে নারীদের প্রতি তেমন কোন সম্মান দেখানো হয় নাই।যদিও সেসকল গ্রন্থসমূহ
ছিল বিকৃত।
ইয়াহূদী ধর্মে নারীঃ
ইয়াহূদীগণ মনে করে থাকে যে সর্বপ্রথম নারী জাতি
শয়তানের প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে পুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে আর সেই থেকে নারীদের উপর পুরুষেরা
সর্বদা কর্তৃত্বশীল হবে এবং নারীদের এর দ্বারা প্রসবের কষ্ট দেওয়া হয়েছে।তাই তারা নারী
জাতিকে এভাবে করে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
খ্রিষ্টান ধর্মে নারীঃ
খ্রিষ্টানগণ তাদের ধর্মগ্রন্থের মতামত দিয়ে বলে,আদম
এবং হাওয়া যখন নিষিদ্ব ফল ভক্ষণ করল তখন আল্লাহ পাক আদমকে ক্ষমা করলেও হাওয়াকে করেন
নাই।আরবী ভাষার বহুবচনে দুইজনকে ক্ষমা করা হয়েছে এমনটা বলা হয় নাই,বরং বলা হয়েছে যে,একজনকে
ক্ষমা করা হয়েছে।আর হাওয়াকে ক্ষমা করা হয় নাই আর সেখানে থেকে সকল পাপাচারী নারী এই
পৃথিবীতে এসেছে।তারা এই কথাও বলে যে,সঙ্গী হিসেবে শয়তানকে নিতে চাইলে নাও,কিন্তু কোন
নারীকে নিও না।তারা একথাও বলে যে, নারী হল দুঃখের প্রস্রবন।
বৌদ্ধ ধর্মে নারীঃ
আবার বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীগণ মনে করে নারীসংগ নির্বান
লাভে অন্তরায়।বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, “নারীদের সাথে কোনরুপ মেলামেশা কর না এবং তাদের প্রতি অনুরাগ রেখ না।তাদের
সাথে কথা-বার্তাও বলবে না।কারণ পুরুষের পক্ষে নারী ভয়ংকস্বরুপ।নারী থেকে বাঁচার চেষ্টা
কর।”
প্রাক ইসলামী যুগে নারীঃ
এভাবে অন্য সকল প্রাচীন সভ্যতায় নারীদের অধিকারকে
চরমভাবে ক্ষুন্ন করা হত। প্রাচীন আরব সমাজে নারীদের প্রতি চরম অবমাননা করা হত। কুরআনে
এ প্রসংগে বলা হয়েছে যে,যখনই কোন নারী জন্ম নিত তাদের মুখ কালো হয়ে যেত। তাদের কাউকে
কাউকে জীবিত কবরে পুঁতে ফেলা হত। নারীদের বাজারে পণ্য-দ্রব্যের ন্যায় কেনা-বেচা করা
হত। একই নারীর সাথে বহু পুরুষ সঙ্গম করতে পারত। তাদের উপর প্রায় সময় চলত অকথ্য নির্যাতন।
তাহলে যেসকল ধর্ম এবং সমাজে
এভাবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এক অকথ্য যুলুম,অত্যাচার,নির্যাতন আর পুরুষের একক আধিপত্য
সেই সমাজে কোনভাবে নারী নেতৃত্বের কথা কেউ কোনদিন চিন্তাও করে নাই।
ইসলাম ধর্মে নারীর অবস্থানঃ
পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে তার ভিতর ইসলাম ধর্ম নারী
জাতিকে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা প্রদান করেছে।ইসলাম আবির্ভাবে পূর্বে নারী জাতিকে অতি তুচ্ছ
বলে মনে করা হত। কিন্তু ইসলাম ধর্মে নারী জাতিকে যে পূর্ণ সম্মান এবং মর্যাদা দেওয়া
হয়েছে তা অন্য কোন ধর্মে দেওয়া হয় নাই।ইসলাম নারীকে বিশেষভাবে মর্যাদা প্রদান করেছে।আল্লাহ
বলেন,
“আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও
অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী”।
ইসলাম একজন নারীকে একজন কণ্যা হিসেবে বিশেষভাবে মর্যাদা
দিয়েছে।রাসূল(সাঃ)বলেন,
“আমার উম্মাতের ভিতর যে তিন কণ্যা বা তিন বোনের লালন-পালন করবে তারা ঐ
ব্যক্তির জাহান্নামের প্রতিবন্ধক।”
শুধুমাত্র কণ্যা হিসেবে
নয় বরং মা হিসেবে ইসলাম ধর্ম একজন নারীকে যথেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে।রাসূল(সাঃ)বলেন,
“মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশ্ত।”
অন্যদিকে স্ত্রী হিসেবে
ইসলাম একজন নারীকে মর্যাদা প্রদান করেছে।রাসূল(সাঃ)বলেন,
“তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর সাথে ভাল ব্যবহার
করে।”
উমর(রাঃ)বলেন, “আল্লাহর কসম জাহিলিয়াতের যুগে নারীদের কিছুই মনে করতাম না।কিন্তু যখন
নারীদের অধিকার এবং মর্যাদার ব্যাপারে বিভিন্ন ওয়াহী নাযিল হতে থাকে এবং তাদের পরিত্যক্ত
সম্পত্তির ব্যাপারে ওয়াহী নাযিল হতে থাকে তখন হতে তাদের ব্যাপারে আমার মনোভাব পরিবর্তিত
হতে থাকে।”
ইসলামে নারী অধিকার ও মর্যাদাকে
ছোট করার কোন অবকাশ নেই
এখন এখানে প্রশ্ন হল এই
যে, ধর্মে নারীকে একটি নীচু অবস্থা থেকে এত উপরে নিয়ে যাওয়া হল সেই ধর্মে কি কোন নারীর
জন্য সকল জাতির জন্য নেতৃত্ব দেওয়া কি বৈধ না অবৈধ তা একটি বিবেচ্য বিষয়।
নারী নেতৃত্ব প্রদানে ইসলামী
চিন্তাবিদদের মনোভাব
নারী নেতৃত্ব কি ইসলামে
জায়ায নাকি নাজায়েয সেই ব্যাপারে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়।কেউ বলেছেন তা জায়েয আবার
কেউ বলেছেন তা একেবারেই নাজায়েয।যারা বলে থাকেন ইসলামে নারী নেতৃত্ব নাজায়েয তাদের
মতামতসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
নারী নেতৃত্ব বৈধ বলার
বিপক্ষ দলের মতামত
যারা বলে থাকে যে ইসলামে
নারী নেতৃত্ব সম্পূর্ণরুপে হারাম তারা যুক্তি হিসেবে নিম্নোক্ত কিছু কুরআনের আয়াত,হাদীস,ইজাম
এবং যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।তারা যেসকল দলীলের দ্বারা নারী নেতৃত্বকে
হারাম ঘোষণা করেছে তা নিম্নরুপঃ
কুরআনিক দলীল
যারা নারী নেতৃত্বকে অবৈধ বলে তারা যুক্তি দেন কুরআনের
নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা,
“পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল।এ জন্য যে, আল্লাহ একের
উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।”
[নিসাঃ৩৪]
এ আয়াতের দ্বারা এটি প্রমাণ
করে যে, পুরুষেরা সর্বদা নারীর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।তাই তারা কোন অবস্থাতে
নারী-পুরুষ সকলের উপর নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এই আয়াতের পরিপ্রক্ষিতে মুফাসসিরীনগণ ব্যখ্যা
দিয়েছেন,
১. নারীরা শাসক হতে পারে
না।
২. নারীরা নবী বা রাসূল
হতে পারে না।
৩. নারীগণ ইমামতি করতে
পারবে না।
৪. নারীদের উপর জিহাদ ফরয
নয়
৫. নারীদের ব্যাপারে কিসাসের
রায় দেওয়া জায়েয নয়
৬. নারীদের জন্য জিহাদ
ফরয নয়।
৭. তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ
শুধুমাত্র নারীদের উপর নির্ভর করে না। [তাফসীরে ইবনে কাসীর,রুহুল মাআনী,বায়যাবী]
হাদীসভিত্তিক দলীল
বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে নারী নেতৃত্ব হারাম।যেমন
বুখারী শরীফের কিতাবুল ফিকানে বলা হয়েছে যে,
“যে জাতির নেতৃত্ব কোন নারী দিবে সে জাতি কখনও কল্যাণ
বয়ে আনবে না।”
অন্যত্র বলা হয়েছে, “যখন নারীরা নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করবে তখন মাটির উপরের চেয়ে নীচের অংশ
ভাল হবে।” [তিরমযীঃকিতাবুল ফিকান]
তিরমিযী শরীফে আরেকটি হাদীস রয়েছে, “পুরুষেরা তখন ধ্বংস হয়ে যাবে যখন তারা নারী নেতৃত্ব মেনে নিবে।”
[তিরমিযি]
কেউ যদি এসকল হাদীস সরাসরি
এর অর্থ নিয়ে আলোচনা করে তাহলে তা স্পষ্ট হয় যে নারী নেতৃত্ব ইসলামে হারাম।
প্রথম হাদীসেটিতে নারী
জাতির জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার যেই অভিশাপ আসবে তা তুলে ধরা হয়েছে আর পরের দুইটি হাদীসে
নারী নেতৃত্বের ফলে পুরুষ জাতির জন্য যেই অবমাননাকর অবস্থার সৃষ্টি হবে তা তুলে ধরা
হয়েছে।
এছাড়া হাদীসে বলা হয়েছে
যে নারীদের কম জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাই সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,ইসলামে নারী নেতৃত্ব
সম্পূর্ণরুপে অবৈধ।
ইজমাভিত্তিক দলীল
কুরআন-হাদীস ছাড়াও ইজমাতে
ইবনে হাযম মারাফিতুল ইজমা(পৃঃ১২৬) গ্রন্থে বলেছেন,
“তারা একথায়
একমত হয়েছে নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
ইমাম তাইমিয়া বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” [নাকালু মারাফিয়া ইজমা]
অতঃপর আল্লামা মাওয়ার্দী
যাকে ইসলামী রাজনীতির প্রবক্তা বলা হয়ে তিনি বলেন,
“নারী নেতৃত্ব
বৈধ নয়।এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত হয়েছেন।” [আহকামুস সুলতানিয়া]
আল্লামা আবুল ইয়ালা হাম্বলী
তার এ আহকামুস সুলতানিয়া গ্রন্থে বলছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
ইমামুল হারামায় আল্লামা জুরাইন বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
ইবনুল আরাবী বলছেন, “নারী খলীফা কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারে না।”
ইমাম কুরতুবী এই ইজমা উল্লেখ করেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
ইমাম গাযযালী(রঃ) খলীফা হওয়ার জন্য পুরুষ শর্ত উল্লেখ করেছেন।
আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ
দেহলভী(রঃ) তার হুজ্জাতুল বালিগা তে বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব
বৈধ নয়।নেতৃত্ব হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।”
আল্লামা ইবনুল কাসীর বলেন, “নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া ফরয।”
ইমাম কুরতুবী আহকামুল কুরআনে নারী নেতৃত্বকে নাজায়েয বলেছেন।
ইমাম যামাখখাশারী তার
কাশশাফ এ লিখেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব হারাম।”
ইমাম বায়যভী তার তাফসীরে বায়যাভীতে বলেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব
বৈধ নয়।”
ইমাম শাওকানী একই কথা বলেছেন।
ইমাম বদরুদ্দিন আইনী লিখেছেন যে, তা বৈধ
নয়।
মোল্লা আলী কারী(রঃ) ফাতহুল বারীতে লিখেছেন যে, নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।
আল্লামা মওদূদী
ইসলামী শাসনতন্ত্রের ৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “রাজনীতি
এবং দেশ শাসনে নারীদের কর্মসীমার বহির্ভূত।”
আশরাফ আলী থানবী (রঃ) বলেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
সৌদি আরবের মুফতি আযম,আব্দুল্লাহ বিন বার,আযমীর
নারী নেতৃত্ব নাজায়েয বলেছেন।
বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ ফাতওয়া শামীতে বলে হয়েছে, “নারী নেতৃত্ব কোনভাবেই জায়েয নয়। কারণ আল্লাহ পাকের নির্দেশ হল নারীরা
ঘরে পর্দার সাথে জীবন যাপন করবে।তাদের জন্য পর্দা করা ফরয।তাই কোনভাবেই তাদের জন্য
নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।”
অর্থাৎ, এখানে গোটা উম্মাতের
ভিতর এই ইজমা সঙ্ঘটিত হয়েছে যে,নারী নেতৃত্ব ইসলামে মোটেও জায়েয নয়।
যুক্তির আলোকে নারী নেতৃত্ব
যারা নারী নেতৃত্বকে অবৈধ
বলে থাকেন তারা এ ব্যাপারে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করে তা হল নিম্নরুপঃ
১. সফর করাঃ হাজ্জের সফরের
জন্য কোন নারীর উপর যদি হাজ্জ ফরয হয় তাহলে সেই নারীর উপর ততক্ষণ পর্যন্ত হাজ্জ ফরয
হবে না যতক্ষণ না তার সাথে কোন মাহরাম না থাকে।একাকী ভ্রমণ করা তার জন্য নিষিদ্ব।যদি
সে একাকী সফর না করতে পারে তাহলে কি করে তার উপর নেতৃত্ব জায়েয হয়।কারণ তাকে নেতৃত্ব
দেওয়ার জন্য অনেক সময় দূরে যেতে হবে।
২. জিহাদে অংশগ্রহণ তারপর
জিহাদ নারীর জন্য ফরয নয়।এখন যদি সে বলে জিহাদ তো আমার উপর ফরয নয় তোমরা জিহাদের ময়দানে
যাও আর আমি বসে থাকি এ কথা বললে কিন্তু হবে না।
৩. ইমামতি করা জুম্মার
নামায নারীর উপর ফরয নয়।আদায় করলে তা করতে পারে।তাদের জন্য তো ইমামতি করা একেবারে নাজায়েয
একটি কাজ।আর ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের এটি একটি প্রধান দায়িত্ব যে, তারা জুম্মার নামায
পড়াবে।
৪. নবূয়াত প্রদানঃ আল্লাহ পাক এ পর্যন্ত কোন নারীকে যেখানে নবী করেন নাই সেখানে কি করে একজন নারী নেতৃত্ব দিতে পারে?এই আলোকে ওলামাগণ নারী নেতৃত্বকে হারাম ঘোষণা করেছেন।
৫. নবীদের স্ত্রীদের নেতৃত্ব না নেওয়াঃ অনেকে এই যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, রাসূল(সাঃ) এর ইন্তকালের পর তার স্ত্রীগণ নেতৃত্ব নেন নাই।খুলাফায়ে রাশেদীনের ভিতর কোন নারী ছিলেন না।তাহলে কি করে একজন নারী এখন নেতৃত্ব দিতে পারে?
৬. প্রকৃতিগত কারণঃ মেয়েরা প্রায় সময় হায়েয,নিফাস,ঋতুবতী হওয়ার দরুন তারা তাদের তাদের কার্যক্রমসমুহ যথাযথভাবে পালন করতে পারবে না বলে ইসলামে নারী নেতৃত্ব কোন অবস্থাতে জায়েয হতে পারে না।
৭. বেপর্দা হওয়াঃ যদি কোন নারী রাজ্যের অধিপতি হয় তাহলে তাকে প্রচার মাধ্যমসমূহতে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে তাকে নানা লোকের সাথে করমর্দন করতে হবে যা ইসলামী পর্দা জীবনের সম্পূর্ণরুপে পরিপন্থি।আল্লাহ বলেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।”[আহযাবঃ৩৩]
ঐতিহাসিক চিন্তা-ধারাঃ
আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, মুহাম্মদ(সাঃ) এর ওফাতের
পর খুলাফায়ে রাশেদীন যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন কোন নারী খলীফা হন নাই,তারপর উমাইয়্যাদের
দীর্ঘ ৯০ বছর,আব্বসীয়দের ৫৫০ বছরের শাসনের
ইতিহাসে কখনও কোন নারী নেতৃত্ব দেয় নাই, স্পেনে উমায়্যাগণ প্রায় ৭০০ বছর শাসন করেছে
সেসময় কোন নারী নেতৃত্ব দেয় নাই,উসমানীয়গণ প্রায় ৭০০ বছর শাসন করেছে তাদের ভিতর থেকে
কখনও নারী নেতৃত্ব দেওয়া হয় নাই।
তাহলে কুরআন,হাদীস,ইজমা,কিয়াস এবং ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে
এ কথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে,ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম।
নারী নেতৃত্ব বৈধ হওয়ার
পক্ষে যুক্তি
এখন কোন কোন দল ও মত এই
মতামত ব্যক্ত করেছে যে নারী নেতৃত্ব বৈধ। নারী নেতৃত্বকে যারা হারাম ঘোষণা করেছে তারা
যেমন দলীল পেশ করেছেন কুরআন,হাদীস,ইজাম,কিয়াস,যুক্তি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দ্বারা
তেমনিভাবে নারী নেতৃত্বকে বৈধ বলার ব্যাপারে কুরআন,হাদীস,ইজমা,কিয়াস,যুক্তি এবং ঐতিহাসিকভিত্তিক
দলীল রয়েছে। তাছাড়া ইতিপূর্বে যেসকল দলীলের দ্বারা নারী নেতৃত্বকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে
তারও জবাব তারা দিয়েছেন। নারী নেতৃত্বকে বৈধ ঘোষণা করার দলীলসমূহ নিম্নরুপঃ
কুরআনিক দলীল
প্রথমে যদি কুরআনের কথায় আসি সেখানে বলতে হয় যে,
আল্লাহর কাছে নর-নারীর ভিতর কোন পার্থক্য নেই। কারণ আল্লাহ পাক বলেছেন -
“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে
সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরসপরে
পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহ্র কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার”।
[হুজুরাতঃ১৩]
তাহলে নেতৃত্ব দিবে সে যে তাকওয়া গুণে গুণান্বিত। এখানে নারী-পুরুষের ভিতর
কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা হয় নাই।কোন নারীর তাকওয়া বেশী হলে সে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
দুই নম্বর যুক্তি হিসেবে
আমরা বলতে পারি মারিয়াম (আঃ) এর জন্ম ইতিহাস
বলা হয়েছে। মা হান্না যখন গর্ভবতী হন তখন সে এই দুআ করেছিলেন যে আমার গর্ভে যে সন্তান
জন্ম নিবে আমি তাকে মসজিদ এ দান করব।এখানে তিনি পরোক্ষভাবে একজন ছেলে সন্তান চেয়েছিলেন। কারণ
তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তার পক্ষে আর মসজিদের সেবা করা সহজ ছিল না। তাই তিনি
ছেলে চেয়েছিলেন। মেয়ে হলে তিনি তা পারতেন না। কারণ, মেয়েরা প্রকৃতির কিছু কারণে কিছুদিন
মসজিদে যেতে পারে না। কিন্তু যখন মারিয়ামের জন্ম হয় তখন সে আল্লাহকে বলল আল্লাহ আমি
কি বলছিলাম আর একি জন্ম হল? তার মনের কথা প্রকাশ হয়ে গেল। তখন আল্লাহ তাকে বললেন মেয়ে
হয়েছে তো কি হয়েছে? মেয়ে তো ছেলে হতে উত্তম। এরপর আল্লাহ পাক তার কিছু প্রশংসা করে বললেন
সে সতী থাকবে সে পবিত্র থাকবে। এই যে, এখানে কি বলা হল যে মেয়ে সন্তান ছেলে হতে উত্তম।
তিন নম্বর হল কুরআনে বলা
হয়েছে, “যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক
কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের
কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত”। [নাহলঃ৯৭]
অর্থাৎ সম্মানের মাপকাঠি হল জ্ঞান-তাকওয়ার দ্বারা। অর্থাৎ যেই নারীর ভিতর তাকওয়া এবং
জ্ঞান থাকে সেই নারীর নেতৃত্ব দিতে কোন বাধা থাকতে পারে না।
চার নম্বরে আমরা বলতে পারি
যে, সুলায়মান(আঃ) এর সময় রাণী বিলকিসের যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে তাতেও দেখা যায় যে,
নারী নেতৃত্বকে সুলায়মান(আঃ) বৈধতা দিয়েছিলেন।
পাঁচ নম্বরে আমরা বলতে
পারি যে, আল্লাহ নারী-পুরুষ উভয়কে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে কোথাও
চুপচাপ থাকতে বলা হয় নাই। আল্লাহ বলেন,
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা
দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের
নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে।” [তওবাঃ৭১]
হাদীসের আলোকে নারী নেতৃত্ব
হাদীসের দ্বারা নারী
নেতৃত্বকে বৈধ ঘোষণা করতে পারি। কোন কোন হাদীসে রাসূল(সাঃ) জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে,সাক্ষী
দানের কথা একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, নারী-পুরুষের ভিতর কোন ভেদাভেদ নেই। যেই
সমাজে নারীদের জীবিত কবর দেওয়া হত, তখন সেই সমাজের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি
এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। কোন কোন কঠিন বিষয়ে সমাধান রাসূল(সাঃ) কোন নারীর মাধ্যমে
সমাধান দিয়েছেন।
১. হুদায়বিয়ার সন্ধি যখন
মুহাম্মদ(সাঃ)এর সাথে কাফিরদের ভিতর সম্পাদিত হয়েছিল তখন তা অনেকে মেনে নিতে পারে নাই।তারা
সেই বছরেরে জন্য সে স্থানে ত্যাগ করতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিল।তারা কেউ কুরবানী করে নাই।এ
অবস্থায় রাসূল(সাঃ) কি করবেন তা কিছুই বুঝতে পারলেন না। তখন তারই স্ত্রী উম্মে সালমা(রাঃ)
তাকে যে পরামর্শ দিলেন সেই মোতাবেক তিনি সবার আগে মাথা মূন্ডন করলেন এবং কুরবানী দিলেন। তারই
দেখাদেখি সকলে তার এই কাজকে করলেন। অর্থাৎ,বিশৃংখলা দূর করার ক্ষেত্রে উম্মে সালমা(রাঃ)
এর এক বিশেষ অবদান ছিল। এখানে মৌলিক নেতৃত্ব দিলেন উম্মে সালমা(রাঃ)।
২. মুহাম্মদ(সাঃ) এর স্ত্রী
হাফসা (রাঃ) সর্বদা রাসূল (সাঃ) এর সাথে যুক্তির মাধ্যমে কথা বলতেন। একবার তারই পিতা উমার(রাঃ)
তাকে প্রহার করার জন্য উদ্ধত হলেন সে কেন নবীর সাথে তর্ক করে? তখন রাসূল(সাঃ)তাকে শান্ত
হতে বললেন এবং বললেন, সে যদি তর্কের দ্বারা ভাল কিছু পায় তাহলে তা করুক আর ভুল করলে
ভুল বুঝতে পারবে।তাহলে যে সমাজে নারীদের সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করা হত আর সেই সমাজে
রাসূল (সাঃ) নারীদের বাক-স্বাধীনতা দিলেন যার দ্বারা এখানে নারী নেতৃত্বের প্রতি পরোক্ষ
সমর্থন জ্ঞাপন করা হল।
৩. রাসূল(সাঃ) এর যুগে
নারীগণ তার কাছে এসে বাইয়াত গ্রহণ করতেন এবং তারা এর দ্বারা রাসূল(সাঃ) এর নেতৃত্বকে
স্বীকৃতি দিতেন পুরুষদের পাশাপাশি।
৪. নবী করিম (সাঃ) বিভিন্ন
কাজের সময় মহিলা সাহাবাদের পরামর্শ গ্রহণ কতেন। এ ব্যাপারে হাসান বসরী(রঃ) বলেন, “মুহাম্মদ (সাঃ) মেয়েদের সাথেও পরামর্শ করতেন এবং কখনও কখনও তাদের মতামত
গ্রহণ করতেন।”
ইজমার আলোকে নারী নেতৃত্ব
ইজমার ব্যাপারে যদি বলা
হয় যে, নারী নেতৃত্ব ইসলামে জায়েয। তা কীভাবে বলব। এখন প্রায় সারা মুসলিম বিশ্বসহ সকলে
একমত যে নারীদের নেতৃত্ব বৈধ। বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের আলেম সমাজ
নারী নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। তারপর পাকিস্তানে নারীর আলেমসমাজ বেনজীর ভুট্টোর নেতৃত্ব
মেনে নিয়েছে। ইরানের মত কঠোর ইসলামী রাষ্ট্রে একজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অর্থাৎ
এসকল বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রে আলেমসমাজ একমত পোষণ করেছেন যে নারী নেতৃত্ব জায়েয।
ইতিহাসের আলোকে নারী নেতৃত্ব
আমরা ইতিহাসের আলোকে দেখতে
পাই যে, ১৪’শ বছরে সেরকমভাবে দেওয়া হয় নাই কিন্তু ২৮০০বছর পর অন্যরকম তথ্য থাকবে।তা
হয়তো থাকতে পারে। তাহলে ইতিহাসের আলোকে কোন সিদ্বান্ত দেওয়া যায় না। মুঘল সম্রাজ্যের
সুলতানা রাজিয়া যে কাজ করেছে তারই ধারাবাহিকতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই ইতিহাস দিয়ে কোনকিছু
অবৈধ ঘোষণা করা সমীচীন নয়।
বিরোধীপক্ষের জবাব
এখন এসকল কুরআনের আয়াত
এবং হাদীসের দ্বারা নারী নেতৃত্বকে বৈধ ঘোষণা করা হলেও কিন্তু এর আগে কুরআন-হাদীসের
আলোকে বলা হয়েছে যে,নারী নেতৃত্ব জায়েয নাই।তার জবাবে আমরা কি বলতে পারি?
কুরআনের আয়াতের জবাব
এখন আমরা যেই কুরআনের আয়াতের
কথা বলেছিলাম যে, “পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল।”
[নিসাঃ৩৪] কিন্তু এর পর পর কি বলা হয়েছে, “পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ
একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।”
[নিসাঃ৩৪] এই আয়াতে পুরুষকে নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল বলা হয়েছে এই জন্য যে, পুরুষদের
বেশী জ্ঞান এবং কর্মক্ষতা দেওয়া হয়েছে। তাই তারা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল।কিন্তু পুরুষের
জ্ঞান যে বেশী হবে সেরকম তো কোন কথা নেই। যদি নারীর কর্মক্ষমতাও যদি বেশী হয় তাহলে নারী
অবশ্যই নেতৃত্ব দিতে পারবে। একজন নারী যদি পুরুষের অধিক জ্ঞানী,কর্মদক্ষতাসম্পন্ন এবং
শক্তিশালী হয় তাহলে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর। অন্যদিকে কর্মক্ষমতা দেখানোর পদ্ধতি এখন ভিন্নতর। এখন যান্ত্রিকযুগ। যন্ত্রকে যে যত ভালকাজে ধাবিত করতে পারে তার দ্বারা কর্মদক্ষতা
তত বেশী প্রকাশ পায়। আমাদের দেশে প্রায় ১২ লাখ নারী গার্মেন্টসে কাজ করছেন। তারা যন্ত্রের
মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দর এবং সুনিপুণ কার্যক্রম দেখাচ্ছেন। এরপর যদি আমরা জ্ঞান ঐশ্বর্যের কথা বলি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের দেশের মাদ্রাসা। স্কুল,কলেজ বোর্ডে প্রতিবার
নারীরা ভাল ফলাফল করছে।তাহলে সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাদের জ্ঞান তুলনামূলকভাবে বেশী
হচ্ছে কখনও কখনও। এরপর বলা হয়েছে যে,তারা অর্থ খরচ করে। কিন্তু একথা সম্পূর্ণরুপে ভুল
যে, তারা কাজ করে না বলে তারা কোন অর্থ উপার্জন করে না? তারা তো গৃহিনী হিসেবে আমাদের
ঘরে প্রচুর কাজ করে। তারা তাদের সন্তান লালন-পালন,স্বামীর সেবা-শুশ্রুষা এবং দারোওয়ানের
কাজ করে।কিন্তু আমরা তার মূল্যায়ন করি না। সে যেই কাজ করে তার বিনিময় হিসেবে আমরা খুব
টাকা তাদের দেই না। কিন্তু সে আমাদের জন্য অনেক কাজ করে। যখন একটি মেয়ে কবূল বলে তখন
তার সব কিছু পাওয়ার যোগ্য আছে।আবার এমন কিছু পরিবার আছে যেখানে, একজন নারীর উপার্জনে
পুরুষের পরিবার চলে। তাহলে ঐ আয়াতে যেই তিনটি কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ, একজন পুরুষের নারীর
চেয়ে তিনটি বিষয় থাকে যা হল নারীর জন্য টাকা খরচ করা,জ্ঞানী বেশী হওয়া এবং কর্মদক্ষতা
বেশী হওয়া।কিন্তু এর দ্বারা এটা প্রমাণ করা যায় না যে,পুরুষ সর্বদা নারী জাতির উপর
কর্তৃত্ব দিবে। বরং, এর দ্বারা এটা প্রমাণ করে যে, যদি একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে
উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে অগ্রগণ্য হয় তাহলে নারী পুরুষের উপর নেতৃত্ব দিতে পারবে।
হাদীসসমূহের জবাব
হাদীসে যেসকল কথা
বলা হয়েছে,তা বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়। এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, “যে জাতির নেতৃত্ব কোন নারী দিবে সে জাতি কখনও কল্যাণ বয়ে আনবে না।”
কেউ কেউ এর অর্থ দেখে সরাসরি এই কথা বলে দিয়েছেন যে, নারী নেতৃত্ব একেবার হারাম। কিন্তু
এই হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে।যখন পারস্য সম্রাট কিসরা মারা যান তখন তার
মেয়ে ক্ষমতা লাভ করল আর তা শুনেই তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।কারণ তিনি জানতেন যে, ঐ
মহিলা শাসন কার্যক্রম পরিচালনায় মোটেও দক্ষ ছিলেন না। এর দ্বারা এটা বুঝানো হয় নাই যে
,অন্যান্য জাতির নেতৃত্ব কোন নারী দিতে পারবে না। এছাড়াও পারস্য ও রোম যে মুসলিমদের
অধীনে আসবে তা রাসূল(সাঃ) আগেই জানতেন।আর যখন তিনি এই খবর পেলেন যে,একজন নারী সেখানকার
শাসক হয়েছেন তখন তিনি এই মন্তব্য করেন।অন্যত্র বলা হয়েছে, “যখন নারীরা নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করবে তখন মাটির উপরের চেয়ে নীচের অংশ
ভাল হবে।” এই হাদীস কেন বলা হয়েছে তা
আমদের অবগত হওয়া দরকার।ঐ সময় কিছু যাদুকর মহিলার আবির্ভাব ঘটেছিল যারা কিনা ভবিষৎবাণী
করতে পারত।তাদের কথা যেন কেউ বিশ্বাস না করে সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই হাদীসের কথায় তা
বলা হয়।
ইজামার জবাব
ইজমার কথা বলা হয়েছে তাও
ভুল। কারণ,মুহাম্মদ(সাঃ)এর ইন্তেকালের পর কখনও কোন নারী এই দাবী করে নাই যে, আমি খলীফা
হব। যদি কেউ তা করত তাহলে সেই সময় একটা ইজমা হতে পারত। কিন্তু এর আগে যেই ইজমা হয়েছে
তার কোন ভিত্তি নেই।
যুক্তিসমূহের জবাবঃ
১.বলা হয়েছে একাকী সফর
কিংবা জামায়াতের সাথে নামায পড়া সম্পূর্ণরুপে নাজায়েয।একাকী সফর একটি ভিন্ন প্রসংগ।ঐ
যমানার পরিবেশ ছিল একরম যার জন্য এমন বিধান দেওয়া হয়।কিন্তু বর্তমান সমাজের অবস্থা
সম্পূর্ণরুপে ভিন্ন।সে একাই বর্তমানে ভ্রমণ করতে পারে।আবার রাষ্ট্রপ্রধান কখনও একা
একা ভ্রমন করে।সে কোথাও যাওয়ার আগেই তার দেহরক্ষী আগে সেখানে চলে যায়।আর জামায়াতের
সাথে নামায আদায় করার কথা বলা হচ্ছে।
২. মুহাম্মদ(সাঃ) এর সময়
যখন তিনি অসুস্থ হতেন তখন তিনি জামাআতের সময় ইমামতি করতেন না।বরং তখন আবূ বকর সিদ্দিক
(রাঃ) সর্বদা ইমামতি করতেন।নবম হিজরীতে মুসলিমগণ যেই হাজ্জ সম্পাদন করেছিলেন তাতে নেতৃত্ব
দিয়েছিলেন আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ)।তার দ্বারা কিন্তু মুহাম্মদ(সাঃ) এর নেতৃত্বকে কিন্তু
কেড়ে নেওয়া হয় নাই।ঠিক তেমনিভাবে জাতীয় মসজিদের ইমাম যদি অন্য কোন যদি নামায পড়ায় তার
দ্বারা কিন্তু এটা বুঝানো হয় না যে, তার কাছ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে যাওয়া হয়েছে।আর যেই
ইজমার কথা বলা হয়েছে তাও ভুল।কারণ,
৩. মুহাম্মদ(সাঃ)এর ইন্তেকালের
পর কখনও কোন নারী এই দাবী করে নাই যে, আমি খলীফা হব।যদি কেউ তা করত তাহলে সেই সময় একটা
ইজমা হতে পারত।কিন্তু এর আগে যেই ইজমা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই।যেই সমাজে নারীদের
মানুষ মনে করা হত না,তাদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত সেই সমাজের মানুষেরা এত তাড়াতাড়ি
নেতৃত্ব দিবে তা সাধারণত কল্পনা করা যায় না।তাই একটু সময় লেগেছে সেই নেতৃত্ব দেওয়ার
জন্য।তারপর অন্যান্য যত ধর্ম আছে সকল ধর্মে নারীদেরকে অবমাননা করা হয়েছে।যেমন খ্রিষ্টান
ধর্মে বলা হয় যে, নারী জাতি সিদ্বিলাভের জন্য প্রধান বাধাস্বরুপ।তাহলে সকল ধর্ম-মত
নারীদের ছোট করেছে আর সেখানে ইসলাম নারীদের এভাবে মর্যাদা দিয়েছে আর এই ইসলামের মাধ্যমে
নারীর বিপ্লবের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন ঘটেছে।খৃষ্টান ধর্মে নারীদের অবমাননা করা
হয়।কিন্তু তারা এখন হচ্ছে কারণ ইসলাম তা দিয়েছে এই বলে। তারই অনুসরণে তারা এমন অবস্থার
ভিতর পৌছতে পেরেছে।আমাদের দেশেও অনেক অনেক বড় বড় আলেম-ওলামাগণ দেশের নারী নেতৃত্ব মেনে
নিয়েছে।
৪. আমরা ইতিহাসের আলোকে
দেখতে পাই যে, ১৪’শ বছরে সেরকমভাবে দেওয়া হয় নাই কিন্তু ২৮০০বছর পর
অন্যরকম তথ্য থাকবে।তা হয়তো থাকতে পারে।তাহলে ইতিহাসের আলোকে কোন সিদ্বান্ত দেওয়া যায়
না।মুঘল সম্রাজ্যের সুলতানা রাজিয়া যে কাজ করেছে তারই ধারাবাহিকতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।তাই
ইতিহাস দিয়ে কোনকিছু অবৈধ ঘোষণা করা সমীচীন নয়।
৫. নারীদের কেন নবী করা
হয় নাই তা আল্লাহ পাক ভাল জানেন।আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন বলে তিনি সর্বদা পুরুষদের নেতৃত্ব
দান করেছেন।কিন্তু এটা দ্বারা এই বুঝায় না যে,নারীরা এর দ্বারা নেতৃত্ব দিতে পারবে
না।আমাদের রাসূল বলে দিয়েছেন, “আমার পর আর কোন নবী আসবে না।”
তাহলে যারা নেতৃত্ব দিবে তারা তো আর নবী হবেন না।তারা কেবলমাত্র নেতৃত্ব প্রদান করবে।সুতরাং
এটার সাথে ঐটার যোগসাজেশ করার কোন বাস্তবতা নেই।
৬. নবীর মৃত্যুর পর কেন নবীপত্নীদের খলিফা করা হয় নাই
তার উত্তরে আমরা বলতে পারি যে, যেসময় নবীর আবির্ভাব হয় সেসময় নারী জাতিকে বিশেষভাবে
হীন দৃষ্টিতে দেখা হত।তাদেরকে কিছু মর্যাদা দেওয়া হল এবং তারই সাথে সাথে যদি তারা কোন
ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হত।তাই নারী নেতৃত্বকে প্রথমেই
বৈধতা দেওয়া হয় নাই।
৭. নারীদের মত পুরুষেরাও
বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়।তার জন্য তারা নেতৃত্বদান থেকে বঞ্চিত হয় না।তাই তাদের প্রকৃতিগত
কারণ দেখিয়ে নারী নেতৃত্বের প্রতি যে অবৈধতা দেওয়া হয়েছে তা নিতান্ত অযৌক্তিক।
৮. নারীদেরকে আয়শা(রাঃ),উম্মে
সালমা(রাঃ) কিংবা রুকাইয়া(রাঃ) এর ন্যায় চলা-ফেরা করতে নিষেধ করা হয় নাই।ইমাম মালিকের
মা যেকিনা অনেকদিন কুরআন ছাড়া কোন কথা বলেন নাই।তাকে একেবার এক ছেলে তাকে বাসায় পৌছে
দিয়েছে।সেকি কুরআন অমান্য করেছে?এখন পর্দার কথা যদি বলি তাহলে আমরা কি বলতে পারি?মুসলিম
নারীদের জন্য মুখ ঢাকা ফরয নয়।আল্লাহ তো কুরআনে মুখ খুলে রাখতে বলেছেন।হাদীসে বলাও
হয় নাই তা।তা কিছু ইমাম বলেছেন অতিরিক্ত সতর্ককতার জন্য।কিন্তু এখানে নারীদের কেন বস্তার
ভিতর ঢুকানো হবে?নিজে কি সংশোধিত হতে পারে না? আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তোমরা তোমাদের দৃষ্টিকে নত কর।” এটা মানলে পড়ে তাহলে মেয়েদের আর সেই বস্তার ভিতর
ঢুকানোর প্রয়োজন নাই।
উপসংহার
আমাদের সমাজে এমন অনেক
লোক আছে যারা কিনা এই কথা শুনলে তাদের মাথায় বাজ পড়ে যে, একজন নারী কি করে নেতা হতে
পারে? তারা কীভাবে নিজদের উন্নতি এত করতে পারে? আসলে তাদের অবস্থা আগের সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের
লোকদের মত রয়েছে।তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিসমূহ পরিবর্তন করতে পারে নাই।কুরআনে বলা হয়েছে,
যখন তাদের কাছে কোন কণ্যা সন্তানের খবর দেওয়া হত তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যেত।আমাদের
অবস্থা অনেকটা তাই হয়েছে।তাহলে যেই সমাজে একজন নারীর প্রতি এমন অসম্মান জ্ঞাপন করা
হচ্ছে তাদের নেতৃত্ব এত সহজে কি করে মেনে নেওয়া যায়।এরজন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিসমূহ
পরিবর্তন করতে হবে।আমাদেরকে এই বিষয়টি নিয়ে ভালমত পর্যালোচনা করে তার বৈধতা দিতে হবে
এবং ইসলামে নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ভাই নারীর বৈধতা এর ব্যাখা দিতে গিয়ে আপনি এই পয়েন্ট এ
ReplyDelete"""((((২. মুহাম্মদ(সাঃ) এর স্ত্রী হাফাস(রাঃ) সর্বদা রাসূল(সাঃ)এর সাথে যুক্তির মাধ্যমে কথা বলতেন।একবার তারই পিতা উমার(রাঃ) তাকে প্রহার করার জন্য উদ্বত হলেন সে কেন নবীর সাথে তর্ক করে?তখন রাসূল(সাঃ)তাকে শান্ত হতে বললেন এবং বললেন,সে যদি তর্কের দ্বারা ভাল কিছু পায় তাহলে তা করুক আর ভুল করলে ভুল বুঝতে পারবে।তাহলে যে সমাজে নারীদের সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করা হত আর সেই সমাজে রাসূল(সাঃ)নারীদের বাক-স্বাধীনতা দিলেন যার দ্বারা এখানে নারী নেতৃত্বের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন জ্ঞাপন করা হল।)))))
যে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পরক্ষ ভাবে নারীর ক্ষমতায়ন এর বৈধতার বর্ণনা করেছেন ।মানলাম আপনার কথা জুক্তির খাতিরে ।
আমি যা বলতে চাইছি আপনার যুক্তি অনুশারে সেটা হল ""নাবী করিম (সাঃ) কি পরোক্ষ ভাবে তর্ক করার অনুমুতি দিয়েছেন(ওয়স্তাগফিরুল্লাহ)
আশা করি উত্তর দিবেন ...
এখানে দিলে হয়ত আমি দেখতে পাব না।
royalairtravels88@gmail.com ete email kore diyen
সামাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “আমি আমার পর, পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক অন্য কোন ফিতনা ছাড়লাম না ।”
ReplyDelete(বুখারী ও মুসলিম)
Islam ar suru teke Mohanobi(sm) ar por teke kolifa der amol a ki kono nari nettritto diase???
ReplyDeletetara ki nari der upor julum korese????
Nettritter Bapare jodi nari porus er soman morjada take tahole Mohanobi(sm) abong tar Sahabi ra Narider ta teke bonchito korese???????
Ans??????
Apni apnar dristi noto raklen amara amader dristi noto raklam but bad person ra tara ki korbe????
ReplyDeletebolun tarao amader moto valo hoa jabe .........hahaha
sobay jodi valoy hoa jay to pordar dorkar ki
sobay jodi momin hoa jay to jahannam ar dorkar ki?????????
প্রায় পুরোটাই পড়েছি। আমার ছোট মাথায় বিবেচনা করে মনে হল- নারী নেতৃত্বের পক্ষে যেসব দলীল , যুক্তি এবং যুক্তিখন্ডন উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো কোরআন হাদিসের এক ধরনের ছ্যাঁচড়া ব্যাখ্যা বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। কাজেই আমি নারী নেতৃত্বের বিপক্ষেই ১০০ তে ১০০ নম্বর দিব।
ReplyDeleteদেখুন শান্তি দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ মানুষ কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা মানুষ শুধু তার দায়িত্ব পালন করতে পারে যেখানে ইসলাম নারীকে পর্দায় থাকার কথা বলছে আর আমাদের মুসলিম দেশে গত প্রায় ৩০ বছর যাবত বিধবা নারী দিয়ে দেশ পরিচালিত হচ্ছে যার সুফল এখন সাধারণ মানুষ ভালো মতই পাচ্ছে একের পর এক বিপদ লেগেই আছে সামনে আরও অন্ধকার ধেয়ে আসতেছে আল্লাহ ভালো জানে কি হবে বাংলাদেশের মানুষের আজকে মানুষের হায়া লজ্জা শরম সব উঠে গেছে যাইহোক ইনশাল্লাহ আসা করি আল্লাহ আমাদের দিকে কোন একসময় তাকাবেন সেই অপেক্ষায় আছি
Delete১৪০০ শত বছর আগে এক অবস্থার প্রেক্ষিতে নবীজী একটা কথা বলেছেন। কিন্তু আপনি ১৪০০ বছর পর অবস্থা পরিবর্তন হবার দোহাই দিয়ে নবীজীর হাদিসকে অসার বলতে পারেন না।।।
ReplyDeletehttp://shodalap.org/mohi/41308/
Deleteমুসলিম নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি বিশ্ব ব্যাপী অপ্রতিরুদ্ধ