Wednesday, 18 September 2013

প্রশ্নঃসভ্য এবং সংস্কৃতিবান আদর্শ মানুষ হিসেবে মুহাম্মদ (সাঃ) এর অবদান কি ছিল আলোচনা কর?

ভূমিকাঃ

আরব সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনে মুহাম্মদ(সাঃ) এর অবদান অপরিসীম।তিনি আরবের সামাজিক,ধর্মীয়,নৈতিক,আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে পরিবর্তনে এক যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করেছিলেন।তিনি আরব সংস্কৃতিকে এমনভাবে সজ্জিত করেন যা আগে কখনও লক্ষ্য করা যায় নাই।তিনি দূর করেছিলেন সকল ধরনের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য। এর অবদানের কথা খোদ অনেক পশ্চিমা দেশের পণ্ডিতগণ মানতে বাধ্য হয়েছেন।এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক রেমণ্ড লার্জ বলেন,
প্রকৃতপক্ষে সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক বিপ্লবের সূচনাকারী হিসেবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের নাম ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।

সভ্য সংস্কৃতি গঠনে মুহাম্মদ (সাঃ) এর অবদান

১. একত্ববাদ প্রতিষ্ঠাঃ  আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর আবির্ভাবে পূর্বে সকলে জড় পদার্থ এবং প্রকৃতির উপাসনা করত।বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা ছিল না।মুহাম্মদ(সাঃ) এই চরম দুর্দশার মধ্যে দিয়ে সত্যনিষ্ঠা এবং তৌহিদের আদর্শ তাদের মধ্যে কায়েম করেন।তিনি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন-যাপনের প্রতীক ইসলাম ধর্ম তাদের ভিতর প্রচার করে ব্যাপক ঐক্য এবং শৃংখলাবোধ জাগ্রত করেন।আল্লাহ বলেন,
বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি ।এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।  [ইখলাসঃ১-৪]
যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। [আম্বিয়াঃ২২]
এসকল বাণীসমূহের দ্বারা মুহাম্মদ(সাঃ) ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছিলেন।
২.  এক   আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দগীঃ   প্রাক-ইসলামী যুগে আরবগণ বহু-খোদাবাদে বিশ্বাসী ছিল।তাদের অনেকেই জানত না যে তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি ছিল?মুহাম্মদ(সাঃ) ইসলাম ধর্মের প্রচারের দ্বারা সকলের ভিতর এ বিষয়টি অবহিত করেলন যে, মানুষকে এই পৃথিবীতে সৃষ্টির উদ্দেশ্য একটি এবং তা হল কেবল আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করা।তিনি কাবা ঘরের ভিতর অবস্থিত ৩৬০টি মূর্তি ধংসব সাধন করেছিলেন এবং আরবে মূর্তির বিন্দুমাত্র কোন চিহ্ন রাখেন নাই। এ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,
আর উপাসনা কর আল্লাহ্র, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। [নিসাঃ৩৬]
 আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। [যারিয়াতঃ৫৬]
৩. মানুষের প্রতি সহনশীলতা্‌,ভাতৃত্ব এবং সাম্য প্রতিষ্ঠাঃ   তৎকালীন আরব সমাজ ছিল অসভ্য,বর্বোরচিত,নিষ্ঠুরময় পরিবেশ দ্বারা ভরপুর।মানুষের প্রতি মানুষের দয়া-মায়া,সহানুভূতি বলতে কিছুই ছিল না।মুহাম্মদ(সাঃ) কর্তৃক দ্বীন ইসলাম প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই এক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।ইসলামী আদর্শের অনুসরণে মানুষের ভিতর গড়ে উঠে এক ভাতৃত্বময় সম্পর্ক।প্রতিষ্ঠিত হয় সকলের ভিতর এক সম্প্রীতিযুক্ত,সৌহার্দ্যমণ্ডিত সম্পর্ক,পারস্পারিক প্রেম-সম্প্রীতি ইত্যাদি।তাই আল্লাহ বলেন,
পিতা-মাতার সাথে সৎও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। [নিসাঃ৩৬]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরসপরে পরিচিতি হও।  [হুজুরাতঃ১৩]
এসকল আয়াত এবং সংক্লিষ্ট হাদীসের দ্বারা ধনী-গরীব,উচু-নীচু এবং বড়-ছোটদের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর হতে থাকে।
৪. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনঃ  জাহেলিয়াতের যুগে আরবদেশে কোন সুনির্দিষ্ট অর্থব্যবস্থা ছিল না।বেশিরভাগ লোকেরা পশুপালন,কৃষিকাজ কিংবা লুটরাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।আরবেরা চড়া হারে সুদ গ্রহণ করত।ধনীর উপর গরীবের অগাধ এবং অযোথচিত অত্যাচার চালানো হত।ইসলাম প্রথমে যেই অর্থনৈতিক পরিবর্তন সাধন করেছিল তা হল মানুষকে মিতব্যয়ী হওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়।পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতউভয়ের মধ্যবর্তী। [ফুরকানঃ৬৭]
অন্যদিকে সুদভিত্তিক অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ব ঘোষণা করে ইসলাম অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছিল।তাই আল্লাহ বলেন,
আল্লাহ্ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।  [বাকারাঃ২৭৫]
অন্যদিকে ধনী ব্যক্তি যেন কেবলমাত্র ধন-সম্পদ পূঞ্জীভূত না করে গরীব-দুখীদের সাহায্য করে সে ব্যাপারে ইসলাম দৃঢ় মনোভাব পোষণ করেছে।আল্লাহ বলেন,
হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহ্র পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহ্র পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। [তওবাঃ৩৪-৩৫]
৫. মাদক দ্রব্য নিষিদ্বীকরনঃ   ইসলাম শুরুতেই মদ হারাম ঘোষণা করেনি; বরং এটি নিষিদ্ধকরণে শরীআত এমন পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল যে, আজীবনের অভ্যাস ত্যাগ করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত সহজ বলে মনে হয়েছিল। এজন্য ইসলাম একান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথমে শরাবের মন্দ দিকগুলো মানব মনে বদ্ধমূল করেছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন আসমানী বিধান নাযিল হচ্ছিল তখন মদ সমগ্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেজন্য এ পথ অবলম্বন করতে হয়েছে। কেননা তখন যদি হঠাৎ মাদক করে হারাম ও নিষিদ্ধ করা হত, তাহলে তা পালন করা তখনকার লোকদের পক্ষে বড়ই কঠিন হয়ে পড়ত। অনেকে হয়ত তা গ্রাহ্যই করত না।   কুরআন মাজীদে প্রথমতঃ মদের অপকারিতা ও পাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,  
এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মধ্য ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  [নাহলঃ৬৭]            অতঃপর তিনি বললেন,
 يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِِّلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন! এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড় (বাক্বারাহ ২১৯)। এরপর ছালাতের সময় মদ পান হারাম করে আল্লাহ ঘোষণা করেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّىَ تَعْلَمُواْ مَا تَقُوْلُوْنَ. হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন ছালাতের ধারে-কাছেও যেও না। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ (নিসা ৪৩)। এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট হচ্ছে- একজন ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় ছালাত আদায় করার সময় পড়ে قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ- أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَহে কাফেররা! তোমরা যার ইবাদত কর, আমি তার ইবাদত করি। এভাবে গোটা সূরা সে না সূচক অব্যয় لا বাদ দিয়ে পড়ে।৫ অতঃপর মদ চিরতরে হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,  يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنْصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِيْ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَহে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে? (মায়েদাহ ৯০-৯১)।
৬. ব্যভিচার নিষিদ্বঃ রাসূল(সাঃ) অত্যন্ত কঠোর কঠোর যিনার ব্যাপারে আয়াত তিলওয়াত করে এবং হাদীস উদ্বৃত করে যিনার ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন যা ছিল আরবদের জন্য নিতান্ত স্বাভাবিক এক বিষয়।যিনার ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,
ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [বনী ঈসরাইলঃ৩২]
তিনি অন্য স্থানে বলেন: কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক। (সূরা আল-আনয়াম: ১৫১)  রাসূল(সাঃ) বলেন, যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে। [বুখারী]
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: কুকুর বিক্রিত পয়সা নিকৃষ্ট এবং যিনাকারিণীর উপার্জনও নিকৃষ্ট। (মুসলিম)
তাছাড়া যারা যিনা করবে তাদের শাস্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে যে,
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহ্র বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। [নূরঃ২]
এ বিধান কেবলমাত্র অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিতা নারীদের জন্য।অন্যদিকে বিবাহিত পুরুষ এবং নারীদের জন্য শাস্তি হল রজম করা অর্থাৎ, পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা।
সমাজে ব্যভিচার বন্ধ করার জন্য রাসূল(সাঃ) যুবকদের বিবাহ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।
এভাবে করে সেসময় আরবদেশে ইসলামের প্রভাবে যিনা-ব্যভিচারের পরিমাণ একেবারে কমে যায়।
৭. পারিবারিক ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণঃ জাহিলিয়াতের যুগে আরবদেশের পারিবারিক বৈবাহিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল।স্বাভাবিকভাবে বিবাহ সম্পাদন করে স্বামী-স্ত্রীর ভিতর জীবন-যাপন করার সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য।বিবাহ ছাড়াই একজন নারী কিংবা পুরুষ অসংখ্য সন্তানের জনক-জননী হত।কখন দেখা যেত যে,একজন নারী প্রায় দশ পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করত এবং সবার সাথে মিলনের পর একজন সন্তান জন্ম নিলে কখনও স্ত্রী কিংবা কখনও কোন বিশেষজ্ঞ তাদের সন্তানের প্রকৃত পিতাকে চিহ্নিত করত।আবার পুরুষেরাও একসাথে প্রায় দশ কিংবা তা অধিক স্ত্রী শর্তহীনভাবে গ্রহণ করতে পারত।সেখানকার পুরুষেরা যেকাউকে বিবাহ করতে পারত।কারও পিতা মারা গেলে তার স্ত্রীকে অর্থাৎ, সৎ মাকে তার ছেলে বিবাহ করতে পারত।তারা তাদের খালা,ফুফুদের বিবাহ করতে কার্পণ্য বোধ করতে পারত না।্কিন্তু ইসলাম ধর্ম তা চিরতরে বন্ধ করে দেয়।মুহাম্মদ(সাঃ) যুবকদের বিবাহ করে করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন।  রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বিবাহ করলে সে যেন দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে ফেলল।এবং দ্বীনের অবশিষ্টের ব্যাপারে সে যন আল্লাহর ভয় করে চলে।
ইসলাম দেনমোহর নির্ধারণ করে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথোচিত পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈবাহিক জীবনে প্রবেশের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন নারী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে উপনীত হন। দাম্পত্য সম্পর্কের আবর্তে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার বন্ধন শুরু হয়। চাওয়া-পাওয়া ও ন্যায্য অধিকারের বিষয়টিও সমানতালে চলতে থাকে। ইসলামি বিধানে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যেমন অধিকার ও দায়দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি স্বামীর প্রতি স্ত্রীরও অধিকার ও দায়দায়িত্ব রয়েছে। একজন নারীর অধিকার প্রাপ্তিতে প্রথমেই দেনমোহর প্রাপ্তির বিষয়টি চলে আসে। বিয়ের পর স্ত্রী তাঁর স্বামীর পক্ষ থেকে তাঁর দাবি অনুযায়ী আর্থিক নিশ্চয়তা হিসেবে মোহরানা পাওয়ার অধিকারী। পবিত্র কোরআনে বিবাহ উপলক্ষে নারীকে সন্তুষ্টচিত্তে মোহর প্রদান করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে, সন্তুষ্টচিত্তে তারা মোহরের কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে। (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৪)
তাছাড়া জাহিলিয়াতের যুগে যেকোন পুরুষ একজন নারীকে বিবাহ করতে পারত।কিন্তু ইসলাম তা রহিত করে দিয়ে কুরআনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্র্যাতৃকণ্যা; ভগি……………………………………[নিসাঃ২৩-২৪]
৮. কু-প্রথা ও কুসংস্কার রহিতকরণঃ  মুহাম্মদ(সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবদেশে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার-কুপ্রথা দ্বারা নিমজ্জিত ছিল।তারই আবির্ভাবের পর সকল ধরনের কু-সংস্কার এবং কু-প্রথা আস্তে আস্তে দূর হতে থাকে।তাদের মধ্যকার কেউ কেউ পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করত।তাদের কেউ কেউ গণক,জ্যোতিষিবিদ এবং যাদুকরদের কথা বিশ্বাস করত।মুহাম্মদ(সাঃ) এসকল ধরনের জাহিলিয়াতের রুসম বন্ধ করে দিয়ে এক কুসংস্কারমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেন।
৯. চারিত্রিক সংশোধনঃআল্লাহ পাক এই পৃথিবীতে মুহাম্মদ(সাঃ)কে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রেরণ করেছেন,যার ভিতর একবারে কলংমুক্ত এক চরিত্র ছিল এবং তারই চারিত্রিক গুণাবলীর দ্বারা তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষদের ভাল মানুষে পরিণত করেন।তাই মুসলিম হিসেবে সকলের উচিৎ মুহাম্মদ(সাঃ) এর আদর্শকে অনুসরণ করা।তাই আল্লাহ পাক বলেন,
এবং নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। [কালামঃ৩]
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে আপনি তাদের জন্য উত্তম চরিত্রের নমুনাস্বরুপ।[আহযাবঃ২১]
তাছাড়া মুহাম্মদ(সাঃ)কে কুরআনুল কারীমে রহমাতুললীল আলামীন বলা হয়েছে। অর্থাৎ তারই অনুসরণের দ্বারা বিশ্বশান্তি তথা নৈতিকতা স্থাপন করা সম্ভবপর।তার আদর্শের অনুসরণের দ্বারা বিশ্বে তাকওয়া,সত্যবাদিতা,আমানতদারিতা,ওয়াদা পালন,আদল,ক্ষমা,সহিষ্ণুতা,ধৈর্য্য,শোকর প্রভৃতি গুণাবলী অর্জন হয়েছিল তৎকালীন সেই নিষ্ঠুর আরবসমাজব্যবস্থায়।
আমি আপনাকে সারা বিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। [আম্বিয়াঃ১০৭]
রাসূল(সাঃ) বলেন, আমি উত্তম চরিত্রকে পরিপূর্ণতা করার জন্য প্রেরিত হয়েছি। [মুয়াত্তা]
বর্বর এক জাতির সামনে রাসূল(সাঃ) এক অনুপম চরিত্রে উপহার প্রদান করেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে আরব সমাজে এক ব্যপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।
১০. সৌন্দর্যের ও পরিষ্কারের বিকাশঃ  মুহাম্মদ(সাঃ) আরবের বিলাসী জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আনলেও তিনি মানুষের পোশাক-পচিচ্ছেদক,দেহ,বাসস্থান সবকিছুকে সুন্দর করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।একবার তিনি অহংকারের ব্যাপারে একটি কঠোর হাদীস ব্যক্ত করলে এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেউ যদি সুন্দর পোশাক ও জুতো পরিধান করে তবে কি তা অহংকার হবে?উত্তরে তিনি বললেন, অহংকার হবে না।কারণ,আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং সুন্দরকে ভালবাসেন। হাদীস থেকে জানা যায় যে,রাসূল(সাঃ) সর্বদা চিরুনী ব্যবহার করতেন,মিসওয়াক করতেন,চোখে সুরমা লাগাতেন,গোফকে ছোট রাখতেন এবং সুগন্ধি ব্যবহার করতেন সৌন্দর্যকে রক্ষা করার জন্য।
১১. লজ্জাশীলতাঃ জাহেলিয়াতের যুগে মানুষের ভিতর হায়া বলতে কিছুই ছিল না।মানুষেরা উলংগ হয়ে কাবা শরীফ তওয়াফ করত।একে অপরের সামনে উলংগ হতে মোটেও কার্পণ্য বোধ করত না।কিন্তু রাসূল(সাঃ)মানুষের ভিতর এ ধরনের বেহায়াপনা দূরীকরণে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।তিনি সকলকে পায়খানা-প্রস্রাব অত্যন্ত গোপনীয়াতার সাথে আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন।তিনি গুপ্তাঙ্গের গোপনীয়াতা রক্ষা তার স্ত্রীদের সামনে করতেন।এছাড়া কুরআনে বলা হয়েছে,
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। [নূরঃ৩১]
রাসূল(সাঃ) বলেন,
লজ্জশীলতা ঈমানের একটি অঙ্গ।
লজ্জাশীলতা মানুষের জীবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।
১২. দাসপ্রথা বিলুপ্তকরণঃ  মুহাম্মদ(সাঃ) দাস-প্রথার চরম বিরোধী ছিলেন।ইতিহাসে তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি এই প্রথার বিরুদ্বে আন্দোলন করেছিলেন। তার আবির্ভাবের পূর্বে দাস-প্রথা সকল সমাজে ব্যপকভাবে সমাদৃত ছিল।দাসদেরকে বাজারে পণ্যের ন্যায় বেচা-কেনা করা হত।মনিব তার দাসের উপর ইচ্ছামত অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে পারত। কিন্তু তিনি এই প্রথা উচ্ছেদে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।তিনি দাসদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দান করেন এবং তাদের মুক্তির জন্যে পথনির্দেশ দেন।বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি দ্যর্থহীন ভাষা দাস-দাসীদের সাথে উত্তম আচারণ করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেন।তিনি ঘোষণা করেন, গোলামকে আযাদী দানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছুই নেই। এছাড়া পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে,
যাকাত হল কেবল দাস-মুক্তির জন্যে   [তওবাঃ৬০]
তিনি হযরত বিলাল(রাঃ)কে ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে ঘোষণা করে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।অন্যদিকে তিনি সালমান ফারসী,সুহায়েল,রুমী এবং অনেক ক্রীতদাসদের সমাজের বিশেষ আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন।
১৩. সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাঃ  মুহাম্মদ(সাঃ) সমাজের সকল শ্রেণীর লোকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।সমাজে পিতা-মাতা,ভাই-বোন,আত্মীয়-স্বজন,প্রতিবেশী,সহকর্মী,অধীনস্থ সকল মানুষের অধিকার ও মর্যাদার কথা মুহাম্মদ(সাঃ) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ব্যক্ত করেছেন।যেমন পিতার অধিকারের ব্যাপারে বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
মাতার অধিকারের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত।
আত্মীয়-স্বজনদের অধিকারের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, আত্মীয়তার সাথে সম্পর্কছিন্নকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
প্রতিবেশীদের অধিকারের ব্যাপারে তিনি বলেছেন,ঐ ব্যক্তি মুমিন্নয় যে নিজে পেট ভরে খায় কিন্তু তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।
এভাবে করে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ভিতর আচার-আচরণ কিরুপ হবে তা নির্ধারণে মুহাম্মদ(সাঃ) এর অবদান অতুলনীয়।
১৪. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাঃ মুহাম্মদ(সাঃ) ছিলেন অবহেলিত নারীদের জন্য বন্ধুস্বরুপ।নারীদের অধিকারের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারীমে একটি পৃথক সূরা অর্থাৎ সূরা নিসা করা নাযিল হয়েছে।কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় নারীদের অধিকারের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে।আল্লাহ পাক কুরআনের এক জায়গায় ইরশাদ করেন,
আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক।[ইমরানঃ১৯৫]
ইসলাম একজন নারীকে একজন কণ্যা হিসেবে বিশেষভাবে মর্যাদা দিয়েছে।মুহাম্মদ(সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে কণ্যা সন্তানদের জীবিত কবর দেওয়া হত।রাসূল(সাঃ)এ ধরনের নিয়মকে রহিত করে দেন। রাসূল(সাঃ)বলেন,
আমার উম্মাতের ভিতর যে তিন কণ্যা বা তিন বোনের লালন-পালন করবে তারা ঐ ব্যক্তির জাহান্নামের প্রতিবন্ধক।
শুধুমাত্র কণ্যা হিসেবে নয় বরং মা হিসেবে ইসলাম ধর্ম একজন নারীকে যথেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে।রাসূল(সাঃ)বলেন,
মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশ্ত।
অন্যদিকে স্ত্রী হিসেবে ইসলাম একজন নারীকে মর্যাদা প্রদান করেছে।রাসূল(সাঃ)বলেন,
তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর সাথে ভাল ব্যবহার করে।
নারীদের সম্পত্তিতে প্রথিম অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। উমর(রাঃ)বলেন, আল্লাহর কসম জাহিলিয়াতের যুগে নারীদের কিছুই মনে করতাম না।কিন্তু যখন নারীদের অধিকার এবং মর্যাদার ব্যাপারে বিভিন্ন ওয়াহী নাযিল হতে থাকে এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির ব্যাপারে ওয়াহী নাযিল হতে থাকে তখন হতে তাদের ব্যাপারে আমার মনোভাব পরিবর্তিত হতে থাকে।
১৫. খাদ্যাভাসে পরিবর্তনঃ ইসলাম ধর্ম মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যপক পরিবর্তন আনয়ন করেন।জাহিলিয়াতের যুগে মদ্যপান করা ছিল  একটি অন্যতম প্রধান ভোগ্যবস্তু।তাছাড়া তারা তারা আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যান্য দেব-দেবীর নামে বিভিন্ন পশুর যবাই করে তা তারা ভক্ষণ করত।মুহাম্মদ(সাঃ) তাদের ভিতর খাদ্যাভ্যাসের এক ব্যপক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন।ইসলাম ঘোষণা দিল যে,কেবলমাত্র আল্লাহর নামে যবাই করা পশু ছাড়া আর অন্য কোন পশু ভক্ষণ করবে না।শুকুরের মত নাপাক,মদের মত নেশাজাতীয় বস্তু ইত্যাদি হারাম ঘোষণা করা হয়।পরিপূর্ণভাবে পেটভরে খেতে নিষেধ করা হয়। পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাওয়ার কথা ইসলামে বলা হয়।তাছাড়া ইসলাম খাদ্য ভক্ষণ করার নিয়ম-কানূন আরব দেশের সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল।
১৬. শৃংখলাবোধ জীবন-যাপনঃ  মুহাম্মদ(সাঃ)এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবেরা এক চরম বিশৃংখলপূর্ণ জীবন-যাপন করত।মুহাম্মদ(সাঃ) তাদের সামনে এক সুশৃংখলপূর্ণ জীবনের শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করেন যার দ্বারা আরব জাতি পরিণত হয় এক সুশৃংখল জাতিতে।
১৭. ইয়াতীম,দরিদ্র ও বিধবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠাঃ   জাহিলিয়াতের যুগে ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা হত,দরিদ্র্যদের প্রতি চরম অবমাননা করা হত এবং বিধবারা বিশেষভাবে অবহেলিত হত।এসকল অসহায় লোকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ(সাঃ) এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।এসকল শ্রেণীর লোকদের অধিকারের ব্যাপারে বলা হাদীসে বলা হয়েছে,
যে ব্যক্তি কোন ক্ষুদার্ধ মুসলিমকে খাদ্য খাওয়ালো আল্লাহ তাকে জান্নাতে সুস্বাদু ফল ভক্ষণ করাবেন,কোন মুসলমানকে পানি পান করাবেন তাকে জান্নাতের সীল লাগান পাত্রে হাজরে কাওসার থেকে পানি পান করানো হবে এবং কাউকে বস্ত্র দিবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন।
বিধবা ও দীন-দুঃখীর জন্য পরিশ্রমীগণ আল্লাহর পথে যুদ্ব করা এবং শহীদ হওয়া এবং ঐ সমস্ত লোক যারা দিনে রোযা রাখে এবং রাতে নফল নামায আদায় করে তাদের ন্যায় সওয়াব অর্জন করবে।
১৮. বৈরাগ্যবাদ দূরীকরণঃ ইসলামী সংস্কৃতির এটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে,এই ধর্মে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই।ইসলাম আবির্ভাবের পুর্বে খ্রিষ্টান ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মে সন্ন্যাসবাদকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হত।কিন্তু ইসলাম তা সমূলে উৎখাত করে দেয়।মুহাম্মদ(সাঃ) ঘোষণা দিলেন, ইসলামে কোন বৈরাগ্যবাদ নেই।
ইসলাম কেবলমাত্র নির্জনে ইবাদত বন্দেগীর নাম নয়।ইসলাম এমন এক ধর্ম যেখানে ইবদত বন্দেগীর পাশাপাশি হালাল রুজির অণ্বেষণের কথা বলা হয়।আল্লাহ বলেন,
অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ তালাশ কর [জুমুয়াঃ১০]
১৯. গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাঃ একটি গণতান্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ(সাঃ) এর অবদান ছিল অতুলনীয়।পূজীবাদ সমাজব্যবস্থা রহিত এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দূর করতে মুহাম্মদ(সাঃ) এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।তার এই সংস্কারের সমর্থনে এইচ.জি ওয়েলস বলেছেন, Islam succeeded in the world because it must, representing as it did,the urge of the human mind for social justice and democracy.
২০. বহুবিবাহ সীমাবদ্বকরণঃজাহিলিয়াতের যুগে আরবদেশের পারিবারিক বৈবাহিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল।স্বাভাবিকভাবে বিবাহ সম্পাদন করে স্বামী-স্ত্রীর ভিতর জীবন-যাপন করার সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য।বিবাহ ছাড়াই একজন নারী কিংবা পুরুষ অসংখ্য সন্তানের জনক-জননী হত।কখন দেখা যেত যে,একজন নারী প্রায় দশ পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করত এবং সবার সাথে মিলনের পর একজন সন্তান জন্ম নিলে কখনও স্ত্রী কিংবা কখনও কোন বিশেষজ্ঞ তাদের সন্তানের প্রকৃত পিতাকে চিহ্নিত করত।আবার পুরুষেরাও একসাথে প্রায় দশ কিংবা তা অধিক স্ত্রী শর্তহীনভাবে গ্রহণ করতে পারত।কিন্তু ইসলাম এসে তা এই নিয়ম-নীতিকে বর্জন করল এবং নারীর জন্য একাধিক পুরুষ গ্রহণ করাকে হারাম ঘোষণা করা হল। অন্যদিকে পুরুষের জন্য শর্তসাপেক্ষে কেবল চার জন স্ত্রী গ্রহণ করার কথা বলা হয়।এভাবে করে বহুপত্নী ও বহুপতি পরিবারের ব্যাপারে সীমাবদ্বতা নিয়ে আসে ইসলাম।
২১. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাঃ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে মুহাম্মদ(সাঃ) এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।তিনি বলেছেন, আমাম্র মেয়ে ফাতিমা চুরি করলেও সে এর হাত থেকে রেহাই পাবে না।
২২. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিঃ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ(সাঃ) এর অবদান ছিল অতুলনীয়।তিনি যখন ছিলেন রাষ্ট্র খলীফা তখন সেখানে সকল ধর্মের লোকেরা পারস্পারিক সম্প্রীতি বজায় রেখে জীবন-যাপন করত।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাপারে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা ওদের দেবীদের গালি দিও না।তাহলে ওরা ভুলক্রমে আল্লাহকে গালি দিতে পারে। [বাকারা]
২৩. জ্ঞানের বিস্তারঃ আরব সমাজে যে অশ্লীল কাব্যচর্চার যে বিকাস ঘটেছিল মুহাম্মদ(সাঃ) এর মাধ্যমে তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়।তিনি মানুষকে কুরআন-হাদীস ভিত্তিক জ্ঞানচর্চ্চার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।জ্ঞানচর্চ্চার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, কবর থেকে দোলনা পর্যন্ত জ্ঞানার্জন কর।
জ্ঞানীদের কালি শহীদদের রক্তের চেয়ে উত্তম।

 উপসংহার


পরিশেষে বলা যায় যে,উপরুক্ত সামাজিক,ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলো কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।তিনি শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের প্রতিনিধি হিসেবে তার বাস্তবায়ন করেছেন।ফলে এ থেকে উপলমদ্বি করা যায় যে,তিনি শুধুমাত্র ধর্মপ্রচারের মধ্যেই তার জীবনকে তিনি সীমাবদ্ব রাখেন নাই।বরং,তিনি ধর্মীয় চেতনার মাধ্যমে একটি আদর্শভিত্তিক সভ্য এবং সাংস্কৃতিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।তিনি ইতিহাসের সর্বকালের সর্বসেরা সমাজ সংস্কারক হিসেবে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...