Wednesday, 18 September 2013

প্রশ্নঃ ইসলামী নৈতিকতার বিশ্বাস ও নীতিমালা কি আলোচনা কর।


ভূমিকাঃ

ইসলাম ধর্ম হল মানবতার জন্য বিশ্বজনীন এক ধর্ম।এ ধর্ম মানুষকে সর্বদা নীতি-নৈতকতা শিক্ষা দেয়।এই নীতি-নৈতিকতার দ্বারা একজন মানুষ নিজেকে সচ্চরিত্রের অধিকারী করতে পারে।সিদ্দীকগণের আমলসমূহের ভিতর এটা সর্বোত্তম।প্রকৃতপক্ষে একে অর্ধেক দ্বীন-দারী,পহেযগারী এবং আবেদগণের অধ্যাবসায়ের ফল বলা হয়। যারা নিজেদের নীতি-নৈতিকতাকে ঠিক রাখেব ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাদের মর্যাদা ও সম্মান দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জীবনে উন্নতি হবে।ইসলাম মানুষকে কীভাবে নীতি-নৈতিকতার দিকে পরিচালিত করবে সে ব্যাপারে রয়েছে কিছু বিশ্বাস ও নীতিমালা।এসকল বিশ্বাস ও নীতিমালা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

১.তাওহীদে বিশ্বাসীঃ
 আল্লাহ পাক এক অদ্বীতিয়।তিনি আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা।তিনি সকল কল্যাণের উৎস।তিনি আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করেন,এটি হল ইসলামী নৈতিকতার মূল বিশ্বাস ও ভিত্তি।এ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি ।এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। [ইখলাসঃ১-৪]আল্লাহ্ সর্বকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। [যুমারঃ৬২]হে মানুষ, তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ্? [ফাতিরঃ৩]তিনিই আল্লাহ্ তাআলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ্ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ন্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ্ তা আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ্ তাআলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। [হাশরঃ২২-২৫]যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। [আম্বিয়াঃ২২]আল্লাহ্ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ্ পবিত্র। [মূমিনূনঃ৯১]

২. আল্লাহ পাকের বিশেষ প্রতিনিধিঃ
 মানুষ হল আল্লাহ পাকের সৃষ্টির সেরা জীব।আল্লাহ পাক মানুষকে দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।তাই মানুষের উচিৎ আল্লাহ পাকের যথার্থ ইবাদত বন্দেগী করা এবং আল্লাহ পাকের দেওয়া বিধি-বিধান এবং নীতি-নোইতিকতার আলোকে জীবন-যাপন করা যারা দ্বারা সে তার প্রতিনিধিত্ব সহজে করতে পারে।আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি [বাকারাঃ৩০]হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি [সোয়াদঃ২৬]অতঃপর আমি তোমাদেরকে যমীনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি তোমরা কি কর। [ইউনুসঃ১৪]তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে সর্দার করেছেন; তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। [আরাফঃ৭৪]আল্লাহ তোমাদেরকে দেশে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। [আরাফঃ১২৯]

৩. সমগ্র সৃষ্টি মানুষের সেবায় নিয়োজিতঃ
 আল্লাহ পাক মানুষ ও জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের ইবাদতের জন্য।কিন্তু আল্লাহ পাক আর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।তাই আল্লাহ বলেন,তারা কি দেখে না, তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুসপদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক। [ইয়াসীনঃ৭১]এবং যিনি সবকিছুর যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং নৌকা ও চতুসপদ জন্তুকে তোমাদের জন্যে যানবাহনে পরিণত করেছেন, যাতে তোমরা তাদের পিঠের উপর আরোহণ কর। অতঃপর তোমাদের পালনকর্তার নেয়ামত স্মরণ কর এবং বল পবিত্র তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন এবং আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। [যুখরুফঃ১২-১৩]তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? [লুকমানঃ২০]চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্যে শীত বস্ত্রের উপকরণ আছে। আর অনেক উপকার হয়েছে এবং কিছু সংখ্যককে তোমরা আহার্য্যে পরিণত করে থাক।এদের দ্বারা তোমাদের সম্মান হয়, যখন বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও। [নহলঃ৫-৬]আমাদের উচিৎ সর্বদা আল্লাহ পাকের সৃষ্টির সেবা করা।তাদের কোন অবস্থাতে কষ্ট না দেওয়া।তাই রাসূল(সাঃ) বলেছেন,সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন।আল্লাহর কাছে সে সবচেয়ে প্রিয় যে তার সৃষ্টির প্রতি দয়া করে।যারা সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে না আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না এবং তাদের পরকালে কঠোর আযাব প্রদান করেবন।যেমন এক মহিলা একটি বিড়ালকে আটকে রেখে কষ্ট দেয় বলে সে জাহান্নামী হয়।তাই নীতি-নৈতিকতা প্রদর্শনের জন্য আমাদেরকে সকল সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

৪. সহজজাত ধর্মঃ
 ইসলামী নৈতিকতার নীতিমালা এমন যে, যা সকলের জ্যন পালন করা সহজ।এখানকার নীতিমালা এতটা কঠিন নয় যে তা পালন করা সকলের জন্য কষ্টসাধ্য হবে।তাই আল্লাহ বলেন, আমি কাউকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেই না। [আনআমঃ১৫২] আমি কাউকে তার সামর্থ্যের চাইতে বেশী বোঝা দেই না। [আরাফঃ৪২]দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। [বাকারাঃ২৫৬]দীনের ব্যাপারে তিনিতোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি। (সূরা আল হজ : ৭৮)এ ব্যাপারে মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন, “‘দীন হলো সহজ। দীনকে কেউ কঠিন করলে দীন তাকে পরাহত না করে পারে না (বুখারী)তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বাঁচো। নিশ্চয় যারা তোমাদের পূর্বে ছিল তারা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে(আহমদ)একবার রাসূল(সাঃ) এর ঘরে এসে তিন ব্যক্তি বলাবলি করতে লাগল যে,তাদের কেউ সারারাতভর নামায আদায় করতে আরেকজন বললেন যে তিনি সারা বছর রোযা রাখবেন আর আরেকজন এই কথা বললেন যে,তিনি কোনদিনও বিবাহ করবেন না।এমতাবস্থায় রাসূল(সাঃ)তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,“‘তোমরা এরূপ এরূপ কথা বলেছ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ ভীরু, অধিক তাকওয়াধারী। তবে আমি রোযা রাখি ও রোযা ভঙ্গ করি। নামায পড়ি ও নিদ্রা গমন করি এবং নারীকে বিবাহ করি। তাই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (বুখারী)

৫. মধ্যমনীতি অবলম্বণ করাঃ
 দ্বীনের বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য মধ্যমনীতি অবলম্বণ করতে হবে।এর ব্যাপারে কোন ধরনের বাড়াবাড়ি করা চলবে না।আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের ওপর (সূরা আল বাকারা:১৪৩)।মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর(সূরা আল ইসরা:১১০)আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে (সূরা আল ইসরা:২৯)।ইসলামী নীতি-নৈতিকতার জীবন যে, মানুষকে মধ্যমপন্থা অবলম্বণ করতে হবে এর প্রতি আমাদের সকলকে বিশ্বাস রাখতে হবে।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...