Wednesday 18 September 2013

প্রশ্নঃ চরিত্র কাকে বলে? ইসলামে এর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।


চরিত্র কি?

চরিত্র কি এবং তাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য আমাদেরকে তার জন্য দুটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করতে হবে। একটি হল তার আভিধানিক ব্যাখ্যা এবং অপরটি হল তার পারিভাষিক ব্যাখ্যা। এই দুটি বিষয়কে যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি তাহলে আমরা যেকোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত হতে পারব। তদ্রুপ এখানে চরিত্র সম্পর্কে আলোকপাত করার পূর্বে আমাদেরকে চরিত্রের আভিধানিক ও পারিভাষিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে অবগত হতে হবে।

আভিধানিক অর্থ

সাধারণতঃ চরিত্রকে আরবী আখলাক শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আখলাক শব্দটি খুলকুন শব্দের বহুবচন। আখলাক শব্দটি আরবী খুল্‌ক শব্দ থেকে উৎসারিত। খুল্‌ক শব্দের অর্থ হল মানুষের জন্মগত স্বভাব ও প্রকৃতি। এই শব্দটি জন্মগত স্বভাবের সমার্থবোধক। খাল্‌ক, খুল্‌ক ও খুলুক শব্দ মূলতঃ এক এবং অভিন্ন। তবে ব্যবহারিক দিক থেকে খাল্‌ক শব্দটি কখনও কখনও দৃশ্য বা আকৃতি বুঝাতে ব্যবহ্নত হয়। অপরদিকে খুলুক শব্দটি মূলতঃ বোধ ও অনুভব সংশিস্নষ্ট কিছু বুঝাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
আখলাক-এর মূল শব্দ হিসেবে ব্যবহ্নত খুলুক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যবহৃত হয়েছে। পর্যালোচনা কালে দেখা যায় যে, খুলুক শব্দের অর্থ কখনও স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কখনও কখনও একে স্বভাব এবং প্রকৃতি এবং পূর্ববর্তীদের স্বভাব বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রখ্যাত একজন তাফসীরকারক বলেন, খুলুক হচ্ছে মানুষের মনের অন্তর্নিহিত এমন এক প্রবৃত্তি, যা তাকে তার উপযুক্ত ভাল-মন্দ কাজে উদ্ধুদ্ধ করে।
আর হাসান শব্দের অর্থ হল সুন্দর,ভাল,উত্তম, কল্যাণকর ইত্যাদি।

পারিভাষিক সংজ্ঞা

ইসলামী চিন্তাবিদগণ খুলুককে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ইব্‌ন জাহিয (মৃ·২৫৫ হি) বলেছেন, কোন কোন মানুষের মধ্যে খুলুক থাকে স্বভাবজাত এবং প্রকৃতিগত, আবার কোন কোন মানুষের মধ্যে চেষ্টা সাধনা ছাড়া তা অর্জিত হয় না।
মাওয়ার্দ্দী (মৃঃ ৪৫০ হি·) বলেন, আখলাক হচ্ছে স্বভাবজাত প্রচ্ছন্ন জিনিস।
মুহাদ্দিসগণ আখলাককে আরো চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতে আখলাক হলো এমন মূল্যবোধ যে অনুযায়ী মানুষের আচরণ হওয়া প্রয়োজন।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল ওয়াদুদ মাকরূম বলেছেন, আখলাক হচ্ছে আচরণের রীতি-নীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও সংহত করে এবং যাকে চিন্তা ও আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের অনুসরণ করা উচিত।
অপর একজন মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান মাযদানীর মতে আখলাক হচ্ছে মানব মনে প্রোথিত একটি স্থায়ী গুণ, তা স্বভাবসিদ্ধ হোক বা অর্জিত, আচার-আচরণে যার প্রভাব পড়ে।
ইব্‌ন কাইযিম আখলাককে দুভাগে ভাগ করেছেন যথা:
এক· উন্নত আখলাক, যেমনঃ বিনয়, উদারতা, দয়া,তাকওয়া,সত্যবাদিতা,আহদ,আমানতদারিতা,ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি। ইব্‌ন তাইমিয়া ঈমানের সাথে আখলাকের সম্পর্কের কথা বলেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালাকে এমনভাবে ভালবাসতে হবে যা মানুষের মননে প্রভাব বিস্তার করে।    দুই. নিন্দনীয় আখলাক, যেমনঃ হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, অহংকার, নীচতা, হীনতা ইত্যাদি।
এখন মানুষের এই চরিত্রকে সুন্দর করার জন্য তাকে প্রথম প্রকারের গুণাবলী একদিকে যেমন অর্জন করতে হবে অন্যদিকে তাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানবীয় দোষাবলীকে পরিহার করতে হবে। যদি কেউ কেবলমাত্র একটি শ্রেণী অর্জন করতে সমর্থ হয় এবং অন্য শ্রেণীর গুণাবলী অর্জন করতে সক্ষম না হয় তাহলে সে নিশ্চিতরুপে সচ্চরিত্র গঠনে ব্যর্থ হবে। এরজন্য সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই দুই ধরনের গুণাবলীর নজর দিতে হবে। এখন ইসলাম মানুষের সুন্দর চরিত্র গঠনের ব্যাপারে কি ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সেই সম্পর্কে পূর্বে আমাদের জানা উচিৎ। কোন মুসলিম জন্য আল্লাহর জন্য তার স্বীয় আখলাককে উন্নত করে তাহলে

ইসলামী ধ্যান-ধারনা চরিত্র গঠনের গুরুত্ব এবং আখলাকে হাসানা অর্জনে ইসলামের ভূমিকা
ইসলাম মানবচরিত্রকে সুন্দরভাবে গঠন করার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করে থাকে।আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সাঃ) ছিলেন উত্তম চরিত্রের আদর্শস্বরুপ।তিনি একটি অসভ্য সমাজকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুসভ্য সমাজে পরিণত করেছিলেন কেবলমাত্র সুনদ্র চরিত্রের ইসলাম সেই ব্যক্তিকে সবচেয়ে সম্মানিত করেছে যার ভিতর সচ্চরিত্রের মূল তাকওয়া বিরাজমান থাকবে।
তোমাদের ভিতর ঐ ব্যক্তি সবেচেয়ে সম্মানিত যার ভিতর তাকওয়া সবচেয়েবেশী।[হুজুরাতঃ১৩]
তাছাড়া আল্লাহ পাক এই পৃথিবীতে মুহাম্মদ(সাঃ)কে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রেরণ করেছেন,যার ভিতর একবারে কলংমুক্ত এক চরিত্র ছিল এবং তারই চারিত্রিক গুণাবলীর দ্বারা তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষদের ভাল মানুষে পরিণত করেন।তাই মুসলিম হিসেবে সকলের উচিৎ মুহাম্মদ(সাঃ) এর আদর্শকে অনুসরণ করা।তাই আল্লাহ পাক বলেন,
এবং নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। [কালামঃ৩]
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে আপনি তাদের জন্য উত্তম চরিত্রেরনমুনাস্বরুপ।[আহযাবঃ২১]
তাছাড়া মুহাম্মদ(সাঃ)কে কুরআনুল কারীমে রহমাতুললীল আলামীন বলা হয়েছে। অর্থাৎ তারই অনুসরণের দ্বারা বিশ্বশান্তি তথা নৈতিকতা স্থাপন করা সম্ভবপর।
আমি আপনাকে সারা বিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। [আম্বিয়াঃ১০৭]
ইসলাম যেভাবে সুন্দর চরিত্র গঠনের প্রতি তাগিদ দিয়েছে তা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

১. সফলতা অর্জনঃ ইসলাম নীতি-নৈতিকতা অনুসরণ করাকে মানুষের জীবনের সফলতার সাথে তুলনা করেছে।অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নৈতিকতাকে অনুসরণ করবে তার জন্য দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জীবনে রয়েছে সফলতা।আল্লাহ বলেন,
যে নিজেকে (আত্মাকে) শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সেব্যর্থ মনে রেথ হয়। [শামসঃ ৯-১০]
নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়  । [আলাঃ  ১৪]
যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোন উপকারে আসবে না;কিন্তু যে সুস্থ অন্তর নিয়েআল্লাহ্র কাছে আসবে। [শুয়ারাঃ ৮৮-৮৯]

২.মহত্ত্ব স্থাপন করাঃ ইসলাম মানুষের প্রতি দয়া,অনুকম্পা,সহানুভূতি ইত্যাদি প্রদর্শনের মাধ্যমে উত্তম চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে বলে।এ ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের উত্তম চরিত্র সম্পর্কে কি কিছু বলে দিব না।যে তোমার সাথে সম্পর্কছিন্ন করেছে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন কর,যে তোমার উপর যুলুম করেছে তাকে তুমি ক্ষমা করেদিবে এবং যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দান কর।[বায়হাকীঃ৭৮৫৬]

৩.সৎকাজের অংশঃ ইসলামে উত্তম চরিত্রকে সৎ কাজের একটি অংশের সাথে তুলনা করা হয়েছে।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, নাওয়ায ইবনুল সাময়ান আনসারী(রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসূল(সাঃ)কে সৎ কাজ এবং গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞসা করি।রাসূল (সাঃ) বললেন, সৎ কাজ হল উত্তম চরিত্র এবং গুনাহহল তোমার মনে খারাপ কোন চিন্তা আসল এবং মানুষ তা জেনে ফেলাটা অপছন্দকর। 

৪.মীযানের পাল্লা ভারকারীঃ ইসলাম মানুষের চরিত্রকে এমনভাবে সুন্দর করতে বলা হয়েছে যে যার দ্বারা একজন মুমিন ব্যক্তি শুধুমাত্র নেক আমলের দ্বারা তার নিজের মীযানের পাল্লা ভারী করতে পারে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ দারদা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেন, উত্তম চরিত্র থেকে মীযানেঅধিক উত্তম কোন আমল নেই।[আবূ দাউদঃ৪১৬৬]

৫.জান্নাত লাভঃ ইসলামে জান্নাত লাভের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে অভিহিত করেছে। এ ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত একবার রাসূল(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন আমলের দ্বারা মানুষ অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, উত্তম চরিত্রেরদ্বারা মানুষ অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [আহমদঃ৭৫৬৬]

৬.ঈমানের পরিপূর্ণতাঃ একজন মুমিন বান্দা তার চারিত্রিক মাধুর্যের দ্বারা নিজের ঈমানকে পরিপূর্ণ করে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল(সাঃ) বলেন, নিশ্চয় মুমিনদের ভিতর ঐব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন যে ব্যক্তি চরিত্রে দিক থেকে অতি সুন্দর। [শুয়াবুল ঈমান,বায়হাকীঃ ৪৭]

৭.সর্বপ্রাপ্তিঃ উত্তম চরিত্র অর্জন করাকে ইসলাম এত বেশী গুরুত্ব দিয়েছে কেউ যদি এটা অর্জন করে তাহলে তার ব্যাপারে বলা হয়েছে সেযেন দুনিয়ার সবকিছু পেয়ে গেল কোনকিছুর অভাব হলে তার কোন ক্ষতি হবে না। আব্দুল্লাহ বিন উমর(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের ভিতর যখন চারটি আমল থাকবেতখন তখন দুনিয়ার অন্য কোন কিছু না পেলেও তোমাদের কোন আফসোস থাকবে না।সেইচারটি জিনিস হল- ১. আমানতদারীতা ২. সত্যবাদিতা ৩. উত্তম চরিত্র ৪. সম্মানজনকরিযিক। 

৮.ইসলামের প্রতিশব্দঃ সাধারণত ইসলাম বলতে উত্তম চরিত্রকে বুঝানো হয়।এ ব্যাপারে হাদীসে এসছে, কাব বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কছে এসে জানতে চেলেন যে ইসলামকি জিনিস?রাসূল(সাঃ) উত্তরে বলেন, উত্তম চরিত্র।রাসূল(সাঃ)কে ঐ ব্যক্তি পাঁচবার একই প্রশ্নকরলে তিনি পাঁচবার একই উত্তর প্রদান করেন।

৯.মানুষের গুনাহমোচনকারীঃ উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে একজন আল্লাহর প্রিট বান্দা তার পিছনের সকল গুনাহসমূহ মাফ করাতে পারে।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেন, উত্তম চরিত্র মানুষের গুনাহসমূহকে এমনভাবে মোচন করে দেয় যেমনিভাবে সূর্যআর্দ্রতাকে দূর করে দেয়। [শুয়াবুল ঈমানঃবায়হাকীঃ৭৮০৪]

১০.সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য অর্জনঃ মানুষ তার ভাগ্যকে নিজ নিজ চরিত্রের দ্বারা সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যে পরিণত করতে পারে। জাবির(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেন, বনী আদমের সৌভাগ্য হল উত্তমচরিত্র এবং দুর্ভাগ্য হল মন্দ চরিত্র । [বায়হকীঃ৭৮০৮]

১১.মুহাম্মদ (সা) এর লক্ষ্য পূরণঃ মুহাম্মদ(সাঃ) যখন এই পৃথিবিতে এসেছিলেন,তখন এই আরব সমাজ দুশ্চরিত্র এবং বর্বরতায় নিমজ্জিত ছিল।মুহাম্মদ(সাঃ) সকলের ভিতর এক চারিত্রিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন।মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করা ছিল একটি অন্যতম লক্ষ্য।তাই চরিত্রকে সুন্দর করার মধ্য দিয়ে এক চারিত্রিক পরিবর্তন সাধিত হয়। রাসূল(সাঃ) বলেন, আমি উত্তম চরিত্রকে পরিপূর্ণতাকরার জন্য প্রেরিত হয়েছি। [মুয়াত্তা]

১২. আল্লাহ পাকের দেওয়া সর্বোত্তম নিআমতঃ আল্লাহ পাক মানুষকে যত নিয়ামত দিয়েছে তন্মধ্যে সর্বোত্তম নিয়ায়মত হল সুন্দর চরিত্র। উসামা বিন শরীফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, একবার আমিরাসূল(সাঃ)এর খিদমতে হাজির হই এবং এক বেদুঈন এসে জিজ্ঞাসা করলেন,ইয়া রাসূলুল্লাহবান্দাকে যেসকল বিষয় দেওয়া হয়েছে তার ভিতর সর্বোকৃষ্ট কি? তিনি বললেন, উত্তমচরিত্র। [বায়হাকী]

১৩. মুমিন হওয়ার জন্য শর্তঃ কেউ মুমিন বান্দা হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই মুমিন হতে হবে।কারণ রাসূল(সাঃ) বলেন,মুমিনদের মাঝে কখনও দুটি বিষয় একত্রিত হতে পারে না।তা হল কৃপনতাএবং দুশ্চরিত্রা।

১৪.নবূয়াতের দায়িত্ব পালনঃ চরিত্রকে সুন্দর করার নবূয়াতের একটি অংশ। রাসূল (সাঃ) বলেন, সৎস্বভাব,ধীর-স্থিরতা এবং মধ্যমনীতি অবলম্বন করা হল নবুয়াতের চব্বিশ ভাগেরএর ভাগ। [তিরমিযীঃ২০১৫]

১৫. নেক কাজ হওয়াঃযাদের চরিত্র সুন্দর হবে তাদের কথা-বার্তা,চাল-চলনের দ্বারা প্রচুর সওয়াব অর্জন করবে। রাসূল(সাঃ) বলেন, উত্তম চরিত্র হল নেক কাজ। [মুসলিম]

১৬. সর্বোত্তম ব্যক্তিঃ আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম হবে যে তার নিজ চরিত্রকে সুন্দর করে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন, 
তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিসর্বোত্তম,যে চরিত্রে দিক দিয়ে সুন্দর হয়। [বুখারী,মুসলিম]

১৭. বিশেষ মর্যাদা লাভঃ যারা নিজেদের চরিত্রকে সুন্দর করবে কাল হাশরের দিন আল্লাহ পাক তাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন,ঈমানদারব্যক্তি নিজের সুন্দর চরিত্রের দ্বারা ঐসব মানুষের মর্যাদা লাভ করে নেয়,যারা রাতভর নফলনামায আদায় করে এবং দিনে সর্বদা রোযা রাখে।[আবূ দাউদ]

১৮. রাসূল (সাঃ) এর সন্নিকটবর্তীঃ যারা নিজেদের চরিত্রকে সুন্দর করবে তারা রাসূল(সাঃ) এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত হবে এবং কিয়ামতের দিন তারা রাসূল(সাঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।হাদীসে এসেছে, জাবির বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের ভিতর আমারনিকট অধিক প্রিয় তারা যাদের চরিত্র বেশি সুন্দর এবং কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়েনিকটবর্তী হবে যার চরিত্র সুন্দর।[তিরমিযীঃ২০২৪]

১৯. জান্নাত বিশেষ মর্যাদাঃ সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিবর্গ শুধুমাত্র জান্নাত লাভ করবেন না বরং জান্নাতে তাদেরকে বিশেষভাবে মর্যাদা দেওয়া হবে।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ উমামা(রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল(সাঃ) বলেন, আমি ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে একটি ঘরের যিম্মাদার নিচ্ছি যে,তার আপনচরিত্রকে ভাল বানায়। [তিরমিযী]

২০.ঈমানী অংগঃ আল্লাহ এর প্রতি বিশ্বাস করা যেমন ঈমানের একটি অংগ তদ্রুপ নীতি-নৈতিকতার দ্বারা নিজের আখলাককে সুন্দর করা ঈমানের একটি অংগ।এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আমর বিন আমবাসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন ঈমান কি? রাসূল(সাঃ) উত্তরে বললেন, ধৈর্য্য,উত্তম চরিত্র এবং ক্ষমা। [শোয়াবিল ঈমান বায়হাকীঃ৭৭৮৬]

২১.অন্তরের পরিশুদ্বকরণঃ  চরিত্রকে পূত-পবিত্র করলে তার সকল দেহই ঠিক থাকে বলা হয়। তাই রাসূল(সাঃ) বলেছেন,
শরীরের দেহে একটি মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়।আরযদি তা খারাপ হয়,তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কাল্ব বা দিল।[বুখারী ও মুসলিম]

 ২২.সৌভাগ্যঅর্জনঃ যারা সবর করে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন্তভাগ্যবান। [হামীম-সিজদাহঃ৩৪]


উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম মানব চরিত্রকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য সবার কাছে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ব করে থাকে। তাই মুসলিম হিসেবে যদি আমরা আমাদের চরিত্রকে যদি সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জীবনে সুখ-শান্তি অর্জন করতে পারব।অন্যদিকে এর দ্বারা আল্লাহর তাআলা এবং সকল মানুষ আমাদেরকে ভালবাসবেন।

1 comment:

  1. ধন্যবাদ, সুন্দর লিখার জন্য।

    ReplyDelete

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...