Wednesday, 18 September 2013

ফতোয়া অর্থ কি আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ কি?পূর্বযুগে মনীষীদের ফতোয়াতে কি কি সতর্কতা অবলম্বণ করতে অহবে? ফতোয়ার ইতিহাসস কি?্মুহাদ্মম (সাঃ),সাহাবীগন এবুং তাবিঈদের যুগে ফতোয়া কেমন ছিল? ফতোয়ার হুকুম কি?তা দেওয়া উচিৎ কি উচিৎ নয়?ফতোয়ার মর্যাদা কি?যথেষ্ঠ জ্ঞান ছাড়া ফতোয়া দেওয়া যাবে কিনা?ফতোয়ার ভিত্তি কি?ফতোয়া দানের যোগ্যতা কার কার থাকা উচিৎ?মুফতীর যোগ্যতা?ফতোয়া দানের পদ্বতি কি কি? ফতোয়াগ্রহণকারীর কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে? ফতোয়া,বিচারক ও বিচারপত কি? ফতোয়া লিখার ভাষা ও নিয়ম কি?ভুল ফতোয়ার সমাধান কি? বাংলাদেশ এবং ফতোয়া এর প্রেক্ষাপট কি?


ভূমিকা
ফতোয়া ইসলামের একটি অবিচ্ছেদ অংশ।ফতোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ
ফাতাবীরের বহুবচন হল ফতোয়া।এটি একবচন হিসেবে ফুতয়া রুপে ব্যবহৃত হয়।ফকীহ কর্তৃক প্রদত্ত অভিমত হল ফতোয়া।
কেউ কেউ বলেছেন এটি একটি বিশুদ্ব শব্দ।
আবার কেউ বলেছেন তা আরবী আল-ফুতওয়া থেকে এসেছে যার অর্থ হল অনুগ্রহ,বাদন্যতা,দানশীলতা,মনুষত্ব ঈ শক্তি প্রদর্শন।
আবার কারও মতে ফতোয়া আফতা ক্রিয়াপদ থেকে আগত বিশেষ্যপদ। আফতা অর্থ হল কোন বিষয় বিষদ্ভাবে প্রকাশ করা।এ থেকে গঠিত ক্রিয়ামূল ইফতা অর্থ হল ফতোয়া প্রদান করা।
আবার কেউ বলেছেন তা ফাতা থেকে এসেছে যার অর্থ হল তারুণ্য,নতুনত্ব,স্পষ্টকরণ,ব্যাখ্যা।
ইমাম আবূ রাগিব ইসফাহানী(রঃ) বলেন, জটিল বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান হল ফতোয়া।
মুফতী আমিমুল ইহসান বলেন, ফতোয়া হল শরীয়াতের বিধান।
আল্লামা শামী(রঃ) বলেন, আল-ফতোয়ার মূল উৎস হল আল ফাতাহ আর আল-ফাতাহ বলা হয় শক্তিশালী যুবককে।এর মাধ্যমে ফাতওয়ার নামকরণের কারণ হল মুফতী সাহেব প্রশ্নকারীকে উত্তর দানের মাধ্যমে দ্বীনের উপর চলার ব্যাপারে শক্তির যোগান দিয়ে থাকেন।
আধুনিক পণ্ডিতগণ বলেন, ফতোয়া হল ইসলামী আইনে বিশেষজ্ঞ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক আইনগত মতামত প্রদান।
তাফসীরকারকগণ বলেন, কোন ব্যক্তির জিজ্ঞাসার জবাবে দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে শরীয়াতের বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হল ফতোয়া।
কুরআন-হাদীসের আলোকে ফতোয়া
কুরআনে ফতোয়া শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন পরামর্শ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,
বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। [নমলঃ৩২]
ব্যাখ্যা প্রদানে বলা হয়েছে,
আপনি আমাদেরকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে পথনির্দেশ প্রদান করুনঃ যাতে আমি তাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদের অবগত করাতে পারি। [ইউসুফঃ৪৬]
শরীয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। [বাকারাঃ১৮৯]
তারপর কুরআনে বলা হয়েছে, তারা আপনাকে কালালা সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করেছে? আল্লাহ আরও বলেন, তারা আপনার কাছে নারীদের বিবাহের অনুমতি চায়। বলে দিনঃ আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অনুমতি দেন [নিসাঃ১২৭]
মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ্ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, [নিসাঃ১৭৬]
বহু হাদীসে ফতোয়ার ব্যবহার হয়েছে। সহীহ মুসলিমে ৪ বার,আহমদ ১২বার, নাসাই এ ২বার,আবূ দাউদ এ ৩বার,ইবনে মাজাহতে আছে দুইবার,দারিমীতে রয়েছে ৭বার।এভাবে করে বহুবার ফতোয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
সুনানে দারিমীর বলা হয়েছে, যে ফতোয়া প্রদানে দুঃসাহস দেখান সে যন জাহান্নামে প্রবেশের দুঃসাহস দেখাচ্ছেন।
রাসূল(সাঃ) আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোন বিষয় জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও সে বিষয়ের সমাধান দিল তাহলে তার গুনাগ তার উপর বর্তাবে।
ফতোয়া হল কোন প্রশ্নের জবাব।তা নামায,রোযা,হাজ্জ,যাকাত,ব্যবসা-বাণিজ্য,অর্থনৈতিকিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত বিষয় হতে পারে,রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে যেকোন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরের নাম হল ফতোয়া।মানব জীবনের যেকোন বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত ইসলামী জিজ্ঞাসার নাম হল ফতোয়া।কিন্তু যারা বিচারক তারা বুঝতে চায় যে ফতোয়া মানেই হল এই যে, বিবাহ-তালাক সংক্রান্ত কোনকিছু বলে দেওয়ার নাম হল ফাতওয়া।কিন্তু কেউ যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করে নামাযের ফরয কয়টি আর যদি সে বলে নামাযের ফরয চারটি তাহলে তাই ফতোয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।
শরীয়াতের দৃষ্টিতে ফতোয়ার মর্যাদা
শরীআতের দৃষ্টিতে ফতোয়া প্রদান করা ফরযে কিফায়া।অর্থাৎ,এর হক সবার পক্ষ থেকে কয়েকজন সম্পন্ন করলে তার হক আদায় হয়ে যাবে।আল্লাহ পাক কুরআনে বলছেন, তোমরা কোনকিছু না জানলে জানা ব্যক্তির কাছে থেকে জেনে নিও।[আম্বিয়াঃ২৩]
এখন কারও কোনকিছু একটা জানার আগ্রহ জাগ্রত হলে তাকে এমন লোক খুজে বের করতে হবে যার ইসলামী বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্য আছে।তাছাড়া তা সম্ভব নয়।সকলের জন্য আলেম হওয়া জরুরী না হলেও সমাজের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের তা হতে হবে।এবং তারা সকলকে প্রশ্নের উত্তর প্রদান করবে।আল্লাহ বলেন,
তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে। [তওবাঃ১২২]
তাই আমরা বলতে পারি যে, ফতোয়া দেওয়া নির্দিষ্ট সংখ্যককিছু লোকের জন্য ফরযে কিফায়া।পূর্ববর্তী যমানার আলেম-ওলামাগণ অতি নগণ্য সংখ্যক ফতোয়া প্রদান করতেন। সাহাবীদের মধ্যে প্রায় ১২০জন সাহাবী ফতোয়া প্রদান করতেন।সকল সাহাবী তা দিতেন না।
ফতোয়া প্রদানে পূর্ববর্তী আলেমদের সতর্কতা
ফতোয়াদানে পূর্ববর্তী আলেম-ওলামাগন অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বণ করতেন।আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিটি জিজ্ঞাসার জবাব দেয় সে পাগল। কারণ আল্লাহ একজনকে সব বিষয় জ্ঞান প্রদান করেন নাই।যারা এত বড় ফতোয়া দিতেন তারা এমন কথা বলে।কথাটা গুরুত্বপূর্ণ।কুতিব আল বাগদাদী বলেন, তারাই ফতোয়া প্রদানে সবচেয়ে বেশী আগ্রহী যাদের জ্ঞান কম। যারা প্রকৃতপক্ষে ফতোয়া প্রদান করতে চাবে তারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বণ করবে।যেমন ইমাম আবূ হানীফা(রঃ),ইমাম শাফিঈ(রঃ) এবং অন্যন্যরা ফতোয়া প্রদানে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন।ফতোয়া ঠিকমত দেওইয়া একটা কঠিন ব্যাপার যদি জ্ঞান না থাকে।ফতোয়া প্রদানে সাহাবাগণ অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন।তাদের সামনে যখন কোন প্রশ্ন করা হত তারা তখন বলত আমরা তা জানি না।কেউ যদি বলত যে কেন জানেন না উত্তরে তারা বলতেন, আমাদের সামনে আছে জান্নাত এবং জাহান্নাম।আমরা কঠিন বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে জাহান্নামে যেতে চাই না।
ফতোয়ার ইতিহাস
ফতোয়ার ইতিহাস অতি প্রাচীন।প্রকৃতপক্ষে আদম(আঃ) এর সময় হতে তার আবির্ভাব ঘটতে থাকে।সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল-কুরআনে ফতোয়া কথাটি উল্লেখ করা হয়।ইতিপূর্বে তা উল্লেখ করা হয়েছে কুরআন এবং হাদীসের অসংখ্য স্থানে সেই ফতোয়া কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) এর যুগে ফতোয়া
মুহাম্মদ(সাঃ) এর কাছে যেসকল প্রশ্ন করা হত তার উত্তরে তিনি যাই বলতেন তাই ছিল ফতোয়া।তিনি যা বলতেন তা কুরআন-হাদীসের আলোকে বলতেন।তিনি যাই বলতেন না কেন তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কথা বলতেন না।তাই আল্লাহ বলেন,
প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। [নাজমঃ৩-৪]
তাহলে ইসলামী ইতিহাসে সর্বপ্রথম আল্লাহ এবং তার রাসূল ফতোয়া দিয়েছিলেন।আল-কুরআনে মোট ১৩টি প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে।সাহাবাগণ যদিও বেশী প্রশ্ন করার সুযোগ পেতেন না।কারণ তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর জীবন দান করার ব্যাপারে ছিলেন বদ্বপরিকর।তাই তারা প্রশ্ন করার পরিবর্তে ইসলামের জন্য জীবন দান করার ব্যাপারে ছিলেন অত্যাধিক তৎপর।নবীজি যা করেছেন তাই তারা করত।তাদের ভিতর কোন প্রশ্ন জাগত না।তারা হল উজ্জীবীত এক জাতি।তারা সবকিছু অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে পালন করত।তাদের মাত্র ১৩টি প্রশ্ন কুরআনে এসেছে।একবার জীবরাঈল(আঃ), মুহাম্মদ(সাঃ) এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন ঈমান কি? ইসলাম কি? ইহসান কি? রাসূল(সাঃ) তার সকল প্রশ্নের উত্তর দিলেন এবং জীবরাঈল(আঃ) তাকে বললেন, আপনি যা বলেছেন তা ঠিক বলেছেন। অতঃপর যখন তিনি ঐ স্থান ছেড়ে চলে গেলেন তখন রাসূল(সাঃ)।তখন সকলে জানতে চাইল যে,লোকটা আসলে কে ছিল?উত্তরে রাসূল(সাঃ) বললেন, এই লোকটি হল জীবরাইল(আঃ)তিনি তোমাদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিলেন।এর দ্বারা তিনি এটাও বুঝিয়েছেন দ্বীনী বিষয় কোনকিছু জানতে হলে তা তোমাদের উচিৎ আমার কাছে প্রশ্ন করা তাই তিনি বুঝিয়ে গিয়েছেন।তারপরও সাহাবীরা এতটা প্রশ্ন করতেন না।কারণ তারা সাহাবীদের আদেশ পালনে সর্বদা তৎপর থাকতেন।প্রশ্ন আর কখন করবেন।আর তারা নবীর চেহারায় বিমুগ্ব হয়ে পড়তেন আর তাতেই তারা আনন্দিত হতেন তাতেই তাদের জন্য সবকিছু ছিল। সাহাবীদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ফতোয়া দিতেন।বিখ্যাত তাবিঈ আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা ফতোয়া প্রদানে বিখ্যাত ছিলেন।তিনি বলেন, আনসার সাহাবীদের ভিত্র কেবলমাত্র ১২০জন সাহাবী আনসারদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন অর্থাৎ সাহাবীগ্ণ ফতোয়া দিতেন।অন্যরা দিতেন আর বলতেন এ তারা অন্যজনের কাছে যাও।মুহাজিরদের ভিতর একটি নির্দিষ্টসংখ্যক সাহাবী ফতোয়া দিতেন যাতে করে ভুল না হয়ে যেত।মুহাজির সাহাবীদের ভিতর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) ফতোয়া দিতেন।এই দুইজন সম্পর্কে জানা যায় যে,তারা রাসূল(সাঃ)এর কাছ থেকে ফতোয়া দানের ব্যাপারে অনুমোদনপ্রাপ্ত ছিলেন।তাছাড়া আবূ মূসা আশআরী(রাঃ) ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে প্রসিদ্ব ছিলেন।আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) এই দুইজন রাসূল(সাঃ) এর জীবদ্দশায় তার সামনেই ফতোয়া দিতেন। তাদের গুরতুও রাসূল(সাঃ) এর কাছে এতটাই ছিল।আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস(রাঃ) এর ব্যাপারে রাসূল(সাঃ) এই দুআ করেছিলেন যে, আল্লাহ আপনি তাকে কুরআনে ব্যাখ্যা প্রদানে বুঝ দান করুন।আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ)কে রাইসুল মুফাসসিরিন বলা হয়। আর আবুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)এর ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) এই দুআ করেছিলেন যে,আল্লাহ আপনি তাকে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান দান করুন।তাকে এরজন্য বলা হয় ফকীউল উম্মাহ।
সাহাবাদের যুগে ফতোয়া
সাহাবাদের ভিতর অতি নগণ্য সংখ্যক সাহাবা ফতোয়া প্রদান করতেন।পারে।মোটামুটি সাহাবাদের ভিতর ১৩০জন সাহাবী ছিলেন এমন যারা সর্বদা ফতোয়া দিতেন।৭জন ছিলেন যারা বেশী ফতোয়া দিতেন।এসকল সাহাবাদের  তারা হলেন উমর বিন খাত্তাব(রাঃ),যায়দ বিন সাবিত(রাঃ),আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস(রাঃ),আব্দুল্লাহ বিন উমর(রাঃ),আয়শা(রাঃ),আলী(রাঃ),আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ)।এদেরকে বলা হত মুকাসরীন। ২য় পর্যায়ে যারা ছিলেন তাদের ছিলেন আবূ বকর(রাঃ), আবূ হুরায়রা(রাঃ),উম্মে সালমা(রাঃ),আনাস বিন মালিক(রাঃ),আব্দুল্লাহ বি যুবায়র(রাঃ), আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ),সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস(রাঃ),সালমান ফারসী (রাঃাবেজাবের (রাঃ), মুয়ায বিন জাবাল(রাঃ), তালহা(রাঃ),যুবায়র(রাঃ),আব্দুর রহমান বিন আউফ(রাঃ),ইমরান বিন হুসেইন(রাঃ), আবী বাকরা(রাঃ),উবাদা বিন সাবিত (রাঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাঃ)।এদের বলা হয় মুতাওয়াসসীতীন। এরপর ৩য় পর্যায়ে যারা ফতোয়া দিতেন তাদের ভিতর প্রসিদ্ব ছিলেন আবূ দারদা(রাঃ),আবূ ইয়াসার(রাঃ),আবু উবায়দা বিন যাররাহ(রাঃ),সাঈদ বিন যায়দ (রাঃ), ইমাম হাসান,ইমাম হুসেইন,নুমান বিন মুশেইর,আবূ মাসউদ,উবাই বিন কাব (রাঃ),আইয়ুব আনসারী(রাঃ),আবু যর গিফারী(রাঃ), উম্মে আতিয়া(রাঃ), হাফসা(রাঃ),উম্মে হাবীবা(রাঃ),উসামা বিন যায়দ,জাফর বিন আবী তালিব(রাঃ)। এদের বলা হত মুকিল্লীন। তাহলে সাহাবাগণের ইতিহাস হতে জানা যায় যে,তাদের ভিতর থেকে প্রায় ১৩০জনের মত ফতোয়া দিয়েছেন।সাহাবাদের যুগে ফতোয়ার ব্যপক প্রচলন ছিল।
তাবিঈদের যুগে ফতোয়া
তাবিঈদের যুগে ফতোয়ার ব্যাপারে তারা দুই ভাগ ছিলে।একটি ভাগ ছিল যারা রাসূল(সাঃ) এর হাদীসসমূহ এক করতে বদ্ব তৎপর হয়ে উঠতে লাগল।তারা সারাক্ষণ এই চিন্তা করতে লাগল যে,কীভাবে সমগ্র হাদীসসমূহ সংরক্ষণ করা যায়?তাদের কি করে একত্রিত করা যায়?কারণ ঐ সময় হাদীসসমূহ জাল হতে শুরু হয়েছিল।আবার কিছু তাবিঈ ছিলেন যারা কিনা হাদীস সংরক্ষণের পাশাপাশি তারা ফতোয়া দিতেন।তারা বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।তারা আরও বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন।তারা এভাবে করে ফতোয়া দিতেন।যাচাই-বাছাই থেকে আসছে কোনটা ফরয,কোনটা ওয়াজিব,কোনটি সুন্নাত এবং কোনটি মুস্তাহাব।এর দ্বারা বিচার কার্যক্রম সহজ হয়ে পড়েছিল।এর দ্বারা বিদেশে শাসনব্যবস্থা আরও সহজ হয়ে পড়ল।শরীয়াতে বিভিন্ন আহকাম পালন করা অত্যন্ত সহজতর হয়ে পড়েছিল।কেউ যখন হাজ্জের সফরে গমন করে তার কোনটি ছুটে গেলে হাজ্জ ছুটে যাবে এরপর কোন কাজের দ্বারা তার সালাত ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে। আবার কোন কাজের দ্বারা তাকে সহু সিজদাহ দিতে হবে তাও জানা দরকার।এভাবে করে তার পার্থক্য হওয়া শুরু হল।আর তাবিঈগণ যেভাবে প্রচার করেছেন তার জন্য তারা কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত বিখ্যাত শহরসমূহ বাছাই করেছেন।।তাই তারা কেউ বসরা কেন্দ্রিক,কেউ কূফা কেন্দ্রিক,কেউ মদীনা কেন্দ্রিক,কেউ মক্কা কেন্দ্রিক, কেউ সিরিয়াকেন্দ্রিক প্রচারণা শুরু করে।এভাবে করে নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ফতোয়া দিতেন।মদীনায় দিতেন সাইদ ইবনে মুসাইয়েব,আব্দুর রহমান শানাবানী,ওরওয়া বিন যুবায়র,সুলমায় বিন ইসহাক। মক্কায় ছিলেন আতা বিন রাবাআ,আলী ইবনে তালহা, আব্দুল মালিক ইবনে যুরাইন, প্রমুখ বিখ্যাত তাবিঈগণ।কূফাতে ছিলেন ইব্রাহীম নাসের,  আহমেদ শারাফী,আল শামী আল কামা, ইমাম নাফিঈ, অন্যদিকে বসরাতে ছিলেন হাসান বসরী,আবুল আলীয়া,জাবির বিন ইয়াজীদ,মুহাম্মদ ইবনে সীরীন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।এরা ছিলেন ইসলামী জ্ঞানের মূল।এদের সম্পর্কে না জানা মূরকখতার সমতুল্য।সিরিয়াতে আবুল শাহলাওনী,আবুল মুজাহিদ।মিসরে ছিলেন আব্দুল্লাহ,আবুল ইয়াজীদ.এভাবে করে কেন্দ্রে বিভাজন সৃষ্টি হয়ে তাবিঈ যুগে ব্যাপক ফতোয়াচর্চ্চা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ফতোয়ার সংকলন

ফতোয়ার ভিত্তি
ফতোয়ার ভিত্তি হল চারটি আর তা হল কুরআন,সুন্নাহ,ইজমা এবং কিয়াস।মুহাম্মদ(সাঃ) যখন মুয়াজ ইবনে জাবাল(রাঃ)কে ইয়ামেনের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন মুহাম্মদ(সাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে,কি দিয়ে তুমি বিচার করবে?তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহের কিতাবেরর দ্বারা করব। তখন মুহাম্মদ(সাঃ) বললেন, যদি কুরআনেও যদি তার সমাধান না পাও তাহলে তার সমাধান কীভাবে করবে? তখন মুয়াজ(রাঃ) বললেন, হাদীসের দ্বারা। তখন মুহাম্মদ(সাঃ)বললেন যদি তার সমাধান হাদীসে না পাও তখন কি করবে?তখন সে উত্ততে বললেন, আমি তা আমার বিবেকের সাহায্যে সমাধান করব। তার এই জবাব শুনে মুহাম্মদ(সাঃ) সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন আর আল্লাহের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।উমার(রাঃ) এর সময় প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লিখেছিলেন, তুমি যদি কোন বিষয়ের সমাধান দিতে চাও তাহলে তা কুরআনে পাও তাহলে আর হাদীসে তা ঘাটবে না।তারপর যদি কুরআনে না পাও তাহলে হাদীস ঘাটবে আর যদি সেখানে সমাধান পাও আর কিছু খোজার দরকার নেই।আর যদি কুরআন-হাদীসে যদি কোন কিছুই না পাও তাহলে কুরআন-হাদীস ঘাটবে এবং ইজতিহাদ করে যা পাও তার আলোকেই তুমি সমাধান দিয়ে দিবে।তা আমি উমার মেনে নিব।
ফতোয়া যে দিতে পারবে
কেবল মাত্র মুফতীগণ ফতোয়া দিতে পারবে।যারা ফতোয়া দিতে পারবে তাদের যোগ্যতা ও গুণাগুণ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
মুফতীর যোগ্য্যতা
১. মুসলিম হওয়া
২. ফিকহ,উসূলে ফিকহ,নাসিখ এবং মানসূখ সম্পর্কে অবহিত হওয়া
৩. হালাল,হারাম,ফরয,সুন্নাত,ওয়াজিব,নফল,মুবাহ,মাকরুহ তাহরীমী এবং মাকরুহ তানযীহী সম্পর্কে জানা
৪. কুরআন,হাদীস,ফিকহ সম্পর্কে সম্য অবহিত হওয়া
৫. সকলকে তার দৃষ্টিতে সমান হতে হবে।
৬. সমকালীন বিষয়য়াদী সম্পর্কে জ্ঞান রাখা
৭. উপযুক্ত মুফতীর কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা
৮. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
ফতোয়াদানের ক্ষেত্রে শর্তাবলী
১. মৌখিকভাবে ফতোয়া দিয়ে পারিশ্রমিক নেওয়া নাজায়েয।তবে লিখিতভাবে হলে তা নেওয়া যায় তবে না নেওয়াই উত্তম
২. পরামর্শের মাধ্যমে ফতোয়া প্রদান
৩. প্রশ্ন করার পর সমতার ভিত্তিতে মুফতীর রায় প্রদান যাতে ফিৎনা সৃষ্টি না হয়।
৪. প্রশ্নকারীর অস্পষ্টতা স্পষ্ট করতে হবে
৫. সহজ,সরল এবং প্রাঞ্জল ভাষায় ফতোয়া প্রদান করতে হবে।
৬. আকীদা এবং ইবাদত সংক্রান্ত বিষয় ফতোয়া সরাসরি কুরআন-হাদীস থেকে দিতে হবে।সমকালীন বিষয়ে ফিকাহের কিতাব থেকে ফতোয়া দিবে
৭. বিরক্ত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ফতোয়া দেওয়া
৮. নিজ মাযহাবের উপর ভিত্তি করে ফতোয়া প্রদান
ফতোয়া লিখার নিয়মাবলী
১. লিখা সুন্দর হওয়া
২. বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম উল্লেখ করা
৩. ফতোয়া লিখা শেষে আল্লাহ ভাল জানেন এই কথাটি লিখা
৪. ফতোয়া লিখা শেষ হলে তারিখ দেওয়া
বাংলাদেশে ফতোয়ার অপব্যবহার
আমাদের সমাজের অধিকাংশ ফতোয়া দিয়ে থাকেন সমাজপতি-মাতববর ও অল্পশিক্ষিত আলেমরা। ফতোয়ার অপব্যবহার করে সমাজের দরিদ্র-নিরীহ মানুষদের নির্যাতন করেন তারা। বিশেষ করে এর শিকার হয় গ্রামের দরিদ্র-অশিক্ষিত নারীরা। তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের মৃত হেনা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, প্রতিবেশী মাহবুবের সাথে দীর্ঘদিনের পরকীয়া ছিল হেনার। গত ২২ জানুয়ারি রাতে পরিত্যক্ত এক ঘরে মাহবুব-হেনাকে আপত্তিকর অবস্থায় আবিষ্কার করেন মাহবুবের স্ত্রী শিল্পী। পরে শিল্পীর চিৎকারে বাড়ির অন্যান্য লোকজন এসে ব্যাপক মারধরের মাধ্যমে হেনাকে চরমভাবে আহত করে। পরদিন গ্রাম্য সালিশে কথিত ফতোয়ার মাধ্যমে আরো ১০০টি দোররা মারা হয় তাকে। এতে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ভর্তি করা হয় নড়িয়া হাসপাতালে। কিন্তু সুস্থ হবার আগেই বাড়ি পাঠানো হয় তাকে। অবস্থার আরো অবনতি হলে আবারও হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেনি হেনা। মৃত্যু তাকে চিরবিদায় করে এ ধরণী থেকে।  ১৭ই জুন,২০০৯  নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মা মেয়েকে দোররা মেরে আহতের ঘটনার ৭ দিন পর অবশেষে পুলিশ বাদি হয়ে বুধবার ১৩ ফতোয়াবাজ সমাজপতির বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ২রা ডিসেম্বর,২০০০ সালে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় একটা প্রতিবেদন বের হয়েছিল যে, যেখানে বলা হয়েছিল নওগা জেলার সদর উপজেলার আতিফা গ্রামে শনিবার ১লা ডিসেম্বর কিছু ফতোয়াবাজদের চেষ্টায় এক গৃহবধুর সাথে অনমনীয় আচরণ করা হয়েছিল যেখানে তাদের সাথে হিল্লে বিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল।২০০৯ এর ৩০ জুন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামে ফতোয়াবাজদের দোররার ঘটে।২২ মে  ২০১০ এ বাঞ্ছারামপুরে তরুণীকে ১০১ দোররা মারা হয়।এভাবে করে ভুল ফতোয়া দানের মাধ্যমে অসংখ্য সংসার এবং জীবন ধংস্ব হয়ে গিয়েছে।
ফতোয়া প্রতিরোধে আমাদের করণীয়
 দেশের বিজ্ঞ আলেম, পীর মাখায়েখ ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে ফতোয়া বোর্ড গঠন করে ফতোয়ার অপব্যবহার রোধ করা যায়।ফতোয়ার অপব্যবহার যারা করবে তাদের বিরুদ্বে আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, ফতোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।একে ছাড়া ইসলামকে কল্পনা করা যায় না।


1 comment:

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...