Wednesday 18 September 2013

প্রশ্নঃমুহাম্মদ আলী পাশা কে ছিলেন?তাকে কেন আধুনিক মিসরের জনক বলা হয়?


ভূমিকাঃ
উনবিংশ শতাব্দীতে যেসকল মুসলিম অগ্রদূত ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের একজন হলেন মুহাম্মদ আলী পাশা।তিনি সমগ্র উসমানীয় খিলাফতকে সুসংবদ্ব এবং শক্তিশালী করেন।তিনি মিসরের এক অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটান।
মুহাম্মদ আলী পাশার পরিচয়
মুহাম্মদ আলী পাশা একজন দক্ষ সেনা অধিনায়ক এবং শাসক ছিলেন।তার পিতার নাম ছিল ইব্রাহীম আগা এবং মায়ের নাম ছিল যয়নাব আগা।১৭৬৯ সালে তিনি কাভাল্লা নামক বন্দরে জন্মগ্রহণ করেন।পিতৃ বংশীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তিনি ছিলেন তুর্ক কিংবা ইরানী।আল্প বয়সে তার পিতা মারা যান।অতঃপর তিনি বন্দরের মেয়রের নিকট লালিত-পালিত হন এবং মেয়রের এক আত্মীয়াকে তিনি বিবাহ করেন।তিনি সেই সময় তামাক ব্যবসার সাথে জড়িত হন।তিনি প্রথমে কর আদায় করার দায়িত্ব পান।তার এই কাজের দক্ষতার জন্য তিনি স্বল্প বয়সে কাজের দক্ষতার জন্য তিনি আলবেলিয়ার সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদে ভূষিত হন। তারই নেতৃত্বে মিসর পুনরায় ফরাসীদের থেকে উসমানীয়দের নিকট মিসর পুর্নদখল হয়।তিনি মিসরে মামলূকদের সমূলে ধংস্ব সাধন করেন।তিনি ওহাবীদের পরাজিত করে হিজাজ প্রদেশকে উসমানীয়দের অধীনভূক্ত করেন।তিনি আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ব্রিটিস সেনাদের দমন করেন।তিনি মিসরে একাধিপত্য বিস্তার করে খোদিবে বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি
তার সংস্কার কার্যক্রমসমূহ
১. ভূমি সংস্কার ও কৃষিনীতিঃ মুহাম্মদ আলী পাশা ইলতিজাম ব্যবস্থার প্রচলনের বিলুপ্তি ঘটান।কারন ইলতিজাম এর জন্য খাজাঞ্চী আদায়কৃত রাজস্বের সিংহভাগ বঞ্চিত হত। অন্যদিকে ভূমির কৃষকগণকে বেগান খাটানো এবং মুলতাজিমদের প্রভাব তাদের উপর প্রভাব অত্যন্ত ব্যপক ছিল।তাই তিনি মিসর জয় করার পর মুলতাজিমদের উপর নিয়ন্ত্রন করা শুরু করেন।যেসকল মুলতাজিমগণ যথাসময়ে খাজনা আদায়ে ব্যর্থ হতেন তাদের কাছ থেকে জমি রাষ্টায়ত্ত্বভাবে জমি বাজেয়াপ্ত করা হত।অন্যদিকে তিনি মামলুকদের অধিকারভূক্ত সকল জমি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করেন।১৮০৯-১৮১৪ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ ফিদান জমি আবাদী হয়। কৃষকগণ উত্তরাধিকারসূত্রে তাদের জমি এবং সম্পত্তি লাভ নিশ্চিত করতে সক্ষম হল এবং তারা জমইতে উৎপ্নন ফসলের পূর্ণ অধিকার লাভ করল যার ফলে পূর্বের ধংস্বাত্মক নীতি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
১৮৪২ সালে তিনি সর্বপ্রথম ইবাদিয়া জমির ব্যক্তিগত মালিকানাধীনের স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং সেই নিয়মানুসারে তিনি ইবাদ্দিয়া মালিকদের জন্য ভূমি হস্তান্তর,বন্ধক এবং বিক্রয় অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তিনি ভূমিরাজস্বের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন যা উহদাভূমি নামে পরিচিত ছিল।এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে রাষ্ট্র ব্যপকভাবে উপকৃত হতে থাকে।১৮৪৪ সালে প্রায় ১২ লক্ষ ফিদান জমির উপর উহদা ধার্য্য করা হয়েছিল। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তির উপর করারোপ করেন।
তিনি উসমানীয়দের সেফতিলেক পদ্বতি অবতারণা করেন যার দ্বারা আলী পাশা এবং তার পরিবারের লোকজন প্রায় ১/৬ জমির মালিকানা লাভ করে।
তিনি আবাদী জমিতে কৃষকদের কৃষিকাজের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি,বীজ এবং পশু সরবারাহ করতেন।উৎপন্ন ফসলের একটি নির্ধারিত অংশ কৃষকদের জন্য নির্ধারিত ছিল এবং অপর অংশটি গুদামজাত করা হত।
মুহাম্মদ আলী পাশা অর্থকারী ফসল উৎপাদনের ব্যাপারে বিশেষভাবে জোড় প্রদান করতেন।তার সময়ে সমগ্র মিসরে ব্যপকভাবে ধান, ইক্ষু,নীল,রেশম এবং তুলা উৎপন্ন হতে থাকে।১৮১৬-১৮৪৪ সাল পর্যন্ত মিসর থেকে প্রচুর পরিমানে গম,বার্লি,শীম,ডাল,ভুট্টা রপ্তানী হয়।
কৃষিকাজের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি বহু ফরাসী কৃষিবিশেজ্ঞদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগ দান করেন।
তিনি কৃষিকাকাজের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অসংখ্য খাল-বাধ নির্মান করেন।তার সময়ে বাহর শিবিন খাল,আক-খাতাতবাহ খাল,মসজিদ আল খিদর খাল,আল-আতফ খালসহ বিভিন্ন খাল খনন করা হয়। তিনি জলসেচের নিশ্চিতের জন্য প্রায় ৩৮০০ সাকিয়া নির্মান করেছিলেন।
২. লোক প্রশাসনে ও শাসনব্যবস্থায় সংস্কারঃ   মিসরের লোকপ্রশাসনেরব্যবস্থা সুলতান সুলায়মানের কানূননামা অনুসারে গঠিত হয়েছিল।মুহাম্মদ আলী পাশা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রশাসনিক কার্যক্রমের সুবিধার জন্য কয়েকটি দফতরে বিভক্ত করেছিলেন।তার ভিতর দুটি পরিষদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যা হল আল-মজলিশ আল-আলা আল মালাকী এবং মজলিশ আজ-জাহদিয়া।তার ভিতর প্রথমটি বেসামরিক বিষয়ে সকল সিদ্বান্ত গ্রহণ করত।অন্যদিকে যুদ্ব সংক্রান্ত সকল বিষয় সিদ্বান্ত গ্রহণ করত ২য় পরিষদটি।মুহাম্মদ আলী পাশা অসংখ্য বিভাগ সৃষ্টি করেছেন যা হলঃ
(ক)আভ্যন্তরীন বিভাগঃ এই বিভাগের অধীনস্ত কর্মচারীগণ দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলার পরিস্থিতি এবং সাধারণ অবস্থা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন পেশ করত এবং তা একত্রিত করে ওয়ালীর কাছে পেশ করত।
(খ)অর্থ ও কোষাগার বিভাগঃ এটি ছিল মিসরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ যার মাধ্যমে ভূমিকর আদায় করা হত।এই দফতের প্রধানকে দফতরদার বলা হত।
(গ)যুদ্ব বিভাগঃ সেনাবাহিনীর জন্য পোশাক-পরিচ্ছেদ নির্ধারণ করে দেওয়া,তাদের খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, তাদের জন্য অস্ত্র সরবারাহ করা ইত্যাদি বিষয় ছিল এই বিভাগের প্রধান দায়িত্ব।
(ঘ)নৌ বিভাগঃ নৌবাহিনীতে লোক নেওয়া, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া,ডকসমূহ এবং জাহাজসমূহ মেরামত করা ছিল এই বিভাগের প্রধান দায়িত্ব।
(ঙ)জনশিক্ষা গণপূর্ত বিভাগঃ মিসরের শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ধারন করা,পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা ইত্যাদি ছিল প্রথম অংশের দায়িত্ব আর পরের অংশের দায়িত্ব ছিল বাধ নির্মাণ করা আর তার সংস্কার কার্যক্রমসমূহ পরিচালনা করা।
(চ)বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক বিভাগঃ বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষা করা,আমদানী ও রপ্তানীকৃত পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ এবং তা নিজেদের মাধ্যমে অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা হল এর আওতাভূক্ত।
চূড়ান্ত ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে মুহাম্মদ আলী পাশা মিসরে একচেটিয়া স্বৈরাচারী রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা করলেও তিনি দেশের অভ্যন্তরে শিক্তি কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে স্ফলতার সাথে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হন।তিনি পূর্ববর্তী সকল ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের কোণঠাসা করে তার স্বীয় পুত্র এবং ভাতৃষ্পুত্রদের উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেন।তিনি প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে শাসনকর্তা,উপশাসনকর্তা,পরিদর্শক,মেয়র ইত্যাদি নিয়োগ দেন।তিনি নেপোলিয়ান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সকল কাউন্সিল,প্রাদেশিক কাউন্সিল এবং সাধারণ কাউন্সিলসমূহ বাতিল করে দেন।তিনি অতীতের সকল দফাদার,খাজনাদার,সিপাহীদার প্রভৃতি পদসমূহ বিলোপ করেন। যারা  আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন তাদেরকে তিনি তাদেরকে এসকল সরকারী কাজে নিয়োগ প্রদান করেন।তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে আরবী ভাষার পরিবর্তে তুর্কী ভাষার প্রচলন ঘটান।
প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থাঃ শাসনকার্যের সুবিধার্থে তিনি মিসরকে আটটি প্রদেশে বিভক্ত করেন।প্রদেশগুলোকে মুদীরীয়া বলা হত যারা এর দায়িত্বে থাকতেন তাদের মুদীর বলা হত আর এসকল প্রদেশসমূহ উপপ্রদেশে(মামূরীয়াগণ) বিভক্ত করেন যার দায়িত্বে ছিলেন মামূরগণ।এসকল মামূররীয়া আবার কিসমে বিভক্ত ছিল যেখানকার দায়িত্বে ছিলেন কাশিফগণ।আবার কিসমকে খাতে বিভক্ত করা হয় খাত এ যেখানকার দায়িত্ব নিয়োজিত ছিল হাকীম-উল-খাতগণ।খাতসমূহ আবার নাহিয়াতে বিভক্ত হয় যেখানকার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ছিল কায়িম মাকামগণ।এসকল নাহিয়া আবার বালাদে(গ্রাম) বিভক্ত হয় যেখানকার দায়িত্ব নিয়োজিত ছিলেন শেখ-উল-বালাদগণ।আবার এসকল বালাদসমূ হিস্যায় বিভক্ত করা হয়।
৩. অর্থনৈতিক সংস্কারঃ মুহাম্মদ আলী পাশা যেসকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তা ছিল মধ্য-যুগীয় নীতি-রীতির অনুসারী।তিনি কৃষকদের উপর অতিরিক্ত করারোপ করেছিলেন।এর কারণ ছিল মুদ্রাস্ফীতির দরুন দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং মিসরীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়া।তাই তিনি কৃষকদের উপর এমন করারোপ করেন আর তা শস্য এবং বিদেশী মুদ্রার বিনিময় আদায় করা হত।কেউ তার বিরুদ্বে আন্দোলন করলে তিনি তা দমন করতেন।তিনি কৃষকদের কাছে থেকে কর সঠিকভাবে আদায় করার লক্ষ্যে ভূমিজরিপ পরিচালনা করেন।তিনি ভূমি ছাড়াও আরও নতুন নতুন বিষয়ে করারোপ করেন।যেমন তিনি ১৮১৯ সালে খেজুর গাছের উপর করারোপ করেন এমন কি গাছের শাখা,কাণ্ড,পাতার উপর তা আরোপ করেন।তিনি গরু,ছাগল এমন কি তাদের চামড়ার উপর অতিরিক্ত করারোপ করেন।যদিও তার এসকল কার্যক্রমের দ্বারা সেই সময় মিসরীয় সার্বিক অর্থব্যবস্থার কোন উন্নতি হয় নাই।
৪. শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারঃ কৃষিক্ষেত্রে মুহাম্মদ আলী পাশা যেমন একচেটিয়া প্রভাবকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তেমনিভাবে তিনি শিল্পক্ষেত্রে তিনি একই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।তিনি সকল ব্যক্তিগত বস্ত্র কারখানাসমূহের বিলোপ সাধন করে তা তিনি রাষ্টায়ত্ব করেছিলেন।কোন কাপড় সরকারী ছাপ না দেওয়া পর্যন্ত তা বাজারে বিক্রি করা হত না।প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মহিলাগণ যে সূতা এবং কাপড় প্রস্তুত করতেন এবং তা সরকারী কর্মচারীগণ ক্রয় করে নিয়ে আসত।সূতা ব্লীচ করার জন্য অসংখ্য কেন্দ্র ছিল।মুহাম্মদ আলী পাশা কল-কারখানাসমূহ আধুনিকায়ন করার লক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন।১৮৩২ সালের ব্রিটিস প্রতিনিধি বার্কার এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সেই বছর প্রায় ৭০০০০০০ ডলার ব্যয় করেছিলেন।তিনি কারখানাগুলোতে বহু বৈদেশিক যন্ত্র আমদানী করে তা স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি অসংখ্য বৈদেশিক শ্রমিক আমদানী করে তাদেরকে দিয়ে কারখানাসমূহ পরিচালনা করতেন। তার সময় প্রায় ২৯টি বস্ত্র মিল প্রতিষ্ঠিত হয়।১৮৪০ সালে তার সময় প্রায় শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২৬০০০ হাজার যা পরবর্তীতে ১৮৫৯ সালে ৫০ লাখে উন্নীত হয়। বস্ত্র কারখানা ছাড়াও আরও অসংখ্য কারখানাসমূহ তার সময় প্রতিষ্ঠিত হয়।১৮১৮ সালে তিনি শিল্পনীতি প্রণয়ন করেছিলেন।তিনি দেশে তুলা চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছিলেন।১৮৩৭ সালে তিনি ১১টি জাহাজ, ৮০০ অফিসার এবং ১০০০০ নাবিক নিয়ে একটি বাণিজ্যবহর গড়ে তোলেন।
৫. জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমঃ মুহাম্মদ আলী পাশা তার রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন যার দ্বারা প্রাচীন মিসরের চেহারা অতি স্বল্প সময়ে পরিবর্তিত হতে থাকে।তিনি সমগ্র মিসরে বহু হাসপাতাল, ক্লিনিক, বাধ,রাস্তাঘাট,পুল,সেতু,খাল খননের মাধ্যমে মিসরে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করেন।
৬. শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারঃ মুহাম্মদ আলী পাশা মিসরে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রবর্তন করেন।১৮২১ সালে তিনি সামরিক এবং বেসামরিক স্কুলে পাঠ্য পুস্তক প্রকাশের জন্য ছাপাখানা আমদানী করেন। ইউরোপীয় ভাষায় রচিত গ্রন্থসমূহ আরবী ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে। তিনি দেশের শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।ফরাসী শিক্ষা এবং বিজ্ঞানের উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি বিদেশ থেকে উচ্চ বেতন দিয়ে অসংখ্য শিক্ষক নিয়ে আনেন।তিনি দেশের যুবকদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বিদেশে প্রেরণ করেছিলেন।তার এই কার্যক্রমের জন্য তাকে আধুনিক মিসরের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
৭. সামরিকক্ষেত্রে সংস্কারঃমুহাম্মদ আলী পাশা নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটী শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন করেছিলেন।তিনি মিসরের সেনাবাহিনীকে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক সেনাবাহিনীতে রুপান্তরিত করেন।১৮ বছর বয়স্ক সকল পুরুষ নাগরিকদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা ছিল বাধ্যতামূলক।তিনি ফ্রান্স এবং ব্রিটেন থেকে অস্ত্র ক্রয় করতেন।তিনি ফরাসী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন।সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য তিনি একটি সামরিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।তিনি মিসরের নৌ-বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলেন।তার সময় আলেকজান্দ্রিয়াতে একটি জাহাজ নির্মান কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।ফরাসী ইঞ্জিনিয়ার এম বেসিনের নেতৃত্বে নাবিকদের ফরাসী আদর্শের শিক্ষা দেওয়া হয়।
৮. ভাষা সংস্কারঃ মুহাম্মদ আলী পাশা তুর্কী বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও তিনি আরবী ভাষার উন্নবে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।ইউরোপীয় ভাষায় রচিত গ্রন্থসমূহ আরবী ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে।তিনি রাফিয়া আরাবিয়া নামন একটি পৃথক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে আরবী ভাষার প্রসার ঘটান।
৯. জাতীয়করণ উদ্বুদ্বঃ মিসরবাসীগণ ইতিপূর্বে ছিল অজ্ঞ,মূর্খ এবং পরনির্ভরশীল।কিন্তু মুহাম্মদ আলী পাশা সর্বপ্রথম মিসরের জনগণের ভিতর চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটান যা আধুনিক মিসর গঠনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।মুহাম্মদ আলী পাশা মিসরবাসীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদেরকে জাতীয়করণে উদ্বুদ্ব করেন।তাই তার ব্যাপারে জর্জিয়া বলেন, “Egypt made Md. Ali Pasha as much as modern Egypt.”
উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে,মুহাম্মদ আলী পাশা একজন সুদক্ষ শাসক ছিলেন।তিনি ছিলেন আধুনিক মিসরের জন্মদাতা এবং তার এই খ্যাতির জন্য তাকে ঐতিহাসিকগণ আধুনিল মিসরের জনক হিসেবে অভহিত করেছেন।মিসরবাসীগণ এই মহান নেতাকে চিরকাল স্মরণ করে রাখবে।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...