Wednesday, 18 September 2013

প্রশ্নঃ আখলাকে হাসানা কাকে বলে? এর উপাদানসমূহ কি কি আলোচনা কর।


ভূমিকাঃ
আল্লাহ সুবাহানাতায়ালা বলেন,
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। [শামসঃ৯-১০] ইসলাম ধর্ম হল মানবতার জন্য বিশ্বজনীন এক ধর্ম।এ ধর্ম মানুষকে সর্বদা সুন্দর চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয়।  সিদ্দীকগণের আমলসমূহের ভিতর এটা সর্বোত্তম।প্রকৃতপক্ষে একে অর্ধেক দ্বীন-দারী,পহেযগারী এবং আবেদগণের অধ্যাবসায়ের ফল বলা হয়। যারা নিজেদের চরিতেকে সুন্দর ও ঠিক রাখেব ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাদের মর্যাদা ও সম্মান দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জীবনে উন্নতি হবে।ইসলাম মানুষকে কীভাবে নীতি-নৈতিকতার দিকে পরিচালিত করবে সে ব্যাপারে রয়েছে কিছু বিশ্বাস ও নীতিমালা।এসকল বিশ্বাস ও নীতিমালা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
আভিধানিক অর্থ
সাধারণতঃ চরিত্রকে আরবী আখলাক শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আখলাক শব্দটি খুলকুন শব্দের বহুবচন। আখলাক শব্দটি আরবী খুল্‌ক শব্দ থেকে উৎসারিত। খুল্‌ক শব্দের অর্থ হল মানুষের জন্মগত স্বভাব ও প্রকৃতি। এই শব্দটি জন্মগত স্বভাবের সমার্থবোধক। খাল্‌ক, খুল্‌ক ও খুলুক শব্দ মূলতঃ এক এবং অভিন্ন। তবে ব্যবহারিক দিক থেকে খাল্‌ক শব্দটি কখনও কখনও দৃশ্য বা আকৃতি বুঝাতে ব্যবহ্নত হয়। অপরদিকে খুলুক শব্দটি মূলতঃ বোধ ও অনুভব সংশিস্নষ্ট কিছু বুঝাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
আখলাক-এর মূল শব্দ হিসেবে ব্যবহ্নত খুলুক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যবহৃত হয়েছে। পর্যালোচনা কালে দেখা যায় যে, খুলুক শব্দের অর্থ কখনও স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কখনও কখনও একে স্বভাব এবং প্রকৃতি এবং পূর্ববর্তীদের স্বভাব বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রখ্যাত একজন তাফসীরকারক বলেন, খুলুক হচ্ছে মানুষের মনের অন্তর্নিহিত এমন এক প্রবৃত্তি, যা তাকে তার উপযুক্ত ভাল-মন্দ কাজে উদ্ধুদ্ধ করে।
আর হাসান শব্দের অর্থ হল সুন্দর,ভাল,উত্তম, কল্যাণকর ইত্যাদি।
পারিভাষিক সংজ্ঞা
ইসলামী চিন্তাবিদগণ খুলুককে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ইব্‌ন জাহিয (মৃ·২৫৫ হি) বলেছেন, কোন কোন মানুষের মধ্যে খুলুক থাকে স্বভাবজাত এবং প্রকৃতিগত, আবার কোন কোন মানুষের মধ্যে চেষ্টা সাধনা ছাড়া তা অর্জিত হয় না।
মাওয়ার্দ্দী (মৃঃ ৪৫০ হি·) বলেন, আখলাক হচ্ছে স্বভাবজাত প্রচ্ছন্ন জিনিস।
মুহাদ্দিসগণ আখলাককে আরো চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতে আখলাক হলো এমন মূল্যবোধ যে অনুযায়ী মানুষের আচরণ হওয়া প্রয়োজন
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল ওয়াদুদ মাকরূম বলেছেন, আখলাক হচ্ছে আচরণের রীতি-নীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও সংহত করে এবং যাকে চিন্তা ও আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের অনুসরণ করা উচিত।
অপর একজন মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান মাযদানীর মতে আখলাক হচ্ছে মানব মনে প্রোথিত একটি স্থায়ী গুণ, তা স্বভাবসিদ্ধ হোক বা অর্জিত, আচার-আচরণে যার প্রভাব পড়ে।
ইব্‌ন কাইযিম আখলাককে দুভাগে ভাগ করেছেন যথা:
এক· উন্নত আখলাক, যেমনঃ বিনয়, উদারতা, দয়া ইত্যাদি। ইব্‌ন তাইমিয়া ঈমানের সাথে আখলাকের সম্পর্কের কথা বলেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালাকে এমনভাবে ভালবাসতে হবে যা মানুষের মননে প্রভাব বিস্তার করে।    দুই. নিন্দনীয় আখলাক, যেমনঃ হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, অহংকার, নীচতা, হীনতা ইত্যাদি।
আখলাকে হাসানার উপাদান
১. তাকওয়াঃ
২. সত্যবাদিতা : আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) আমাদের যে সকল ইসলামী চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতার চরিত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন,
 হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও। (সূরা আত-তাওবাহ :১১৯) 
রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমরা সততা অবলম্বন গ্রহণ কর, কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পূণ্য জান্নাতের পথ দেখায়, একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। (মুসলিম)
৩. আমানতদারিতা : মুসলমানদের সে সব ইসলামী চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার একটি হচ্ছে আমানতসমূহ তার অধিকারীদের নিকট আদায় করে দেয়া। আল্লাহ তা`আলা বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের নিকট আদায় করে দিতে। (সূরা আন নিসা : ৫৮)
রাসূল (সাঃ) তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট আল আমীন উপাধি লাভ করেছিলেন, তারা তাঁর নিকট তাদের সম্পদ আমানত রাখত। রাসূল (সাঃ) এবং তার অনুসারীদের মুশরিকরা কঠোর ভাবে নির্যাতন শুরু করার পর যখন আল্লাহ তাকে মক্কা হতে মদীনা হিজরত করার অনুমতি দিলেন তিনি আমানতের মালসমূহ তার অধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করে হিজরত করেননি। অথচ যারা আমানত রেখেছিল তারা সকলেই ছিল কাফের। কিন্তু ইসলাম তো আমানত তার অধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে যদিও তার অধিকারীরা কাফের হয়।
৪. অঙ্গীকার পূর্ণ করা : ইসলামী মহান চরিত্রের অন্যতম হচ্ছে অঙ্গীকার পূর্ণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
 আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, কেননা অঙ্গীকার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা ইসরা :৩৪)
আর রাসূল (সাঃ) প্রতিশ্রতি ভঙ্গকরা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে গণ্য করেছেন।
৫. বিনয় : ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে একজন মুসলমান তার অপর মুসলিম ভাইদের সাথে বিনয়ী আচরণ করবে। সে ধনী হোক বা গরীব। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
তুমি তোমার পার্শ্বদেশ মুমিনদের জন্য অবনত করে দাও। (সূরা আল হিজর :৮৮)
রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে [ফুরকানঃ ৬২]
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
 আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ওহী করেছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও যাতে একজন অপরজনের উপর অহংকার না করে। একজন অপর জনের উপর সীমালংঘন না করে। -মুসলিম।
অহংকার করা যাবে না।কারণ আল্লাহ বলেন,
অহংকার কেবল আমার ভূষণ
৬. মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার : মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার উত্তম চরিত্রের অন্যতম। আর এটা তাদের অধিকার মহান হওয়ার কারণে, যে অধিকার স্থান হল আল্লাহর হকের পরে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
 আর আল্লাহ ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না, এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। ([সূরা আন-নিসা : ৩৫ আয়াত)
আল্লাহ তাআলা তাদের আনুগত্য, তাদের প্রতি দয়া ও বিনয় এবং তাদের জন্য দুআ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ  তাআলা বলেন :
তাদের উভয়ের জন্য দয়ার সাথে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে আমাকে তারা লালন-পালন করেছেন। ( সূরা আল ইসরা : ২৪ )
এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী ব্যক্তি কে ? তিনি বললেন, তোমার মা। অত:পর জিজ্ঞেস করল তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার মা। অতঃপর জিজ্ঞেস করল তার পর কে? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার মা। অতঃপর জিজ্ঞেস করল তার পর কে? উত্তর দিলেন, তোমার পিতা। (বুখারী ও মুসলিম)
মাতা-পিতার প্রতি এ সদ্ব্যবহার ও দয়া অনুগ্রহ অতিরিক্ত বা পূর্ণতা দানকারী বিষয় নয় বরং তা হচ্ছে সকল মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ফরযে আইন।
৭. আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখা : আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামী চরিত্রের অন্যতম। আর তারা হচ্ছে নিকটাত্মীয়গণ যেমন, চাচা, মামা, ফুফা, খালা, ভাই, বোন প্রমূখ। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব, আর তা ছিন্ন করা জান্নাত হতে বঞ্চিত ও অভিশাপের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা তো ঐ সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। এতে তিনি তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন। সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩
রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না। বুখারী ও মুসলিম
৮. ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা : ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা হচ্ছে ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয়। অনুরূপভাবে মানুষদের ক্ষমা করা, দুর্ব্যবহারকারীকে ছেড়ে দেয়া ওজর পেশকারীর ওজর গ্রহণ করা বা মেনে নেয়াও অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বলেন : আর যে ধৈর্য্য ধারণ করল এবং ক্ষমা করল, নিশ্চয়ই এটা কাজের দৃঢ়তার অন্তর্ভূক্ত। (সূরা আশ শুরা :৪৩)
রাসূল (সাঃ) বলেন,
 তারা যেন ক্ষমা করে দেয় এবং উদারতা দেখায়, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া কি তোমরা পছন্দ কর না? রাসূল (সাঃ) বলেন, দান খয়রাতে সম্পদ কমে যায় না। আল্লাহ পাক ক্ষমার দ্বারা বান্দার মার্যাদাই বৃদ্ধি করে দেন। যে আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ তার সম্মানই বৃদ্ধি করে দেন। (মুসলিম)
তিনি আরো বলেন,
দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। ক্ষমা করে দাও তোমাদেরও ক্ষমা করে দেয়া হবে। আহমাদ
৯. লজ্জা : ইসলামী চরিত্রের অন্যতম আরেকটি চরিত্র হচ্ছে লজ্জা। এটা এমন একটি চরিত্র যা পরিপূর্ণতা ও মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের দিকে আহবান করে। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা হতে বারণ করে। লজ্জা আল্লাহর পক্ষ হতে হয়ে থাকে। ফলে মুসলমান লজ্জা করে যে, আল্লাহ তাকে পাপাচারে লিপ্ত দেখবে। অনুরূপভাবে মানুষের থেকে এবং নিজের থেকেও সে লজ্জা করে। লজ্জা অন্তরে ঈমান থাকার প্রমাণ বহন করে। নবী  (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
লজ্জা ঈমানের বিশেষ অংশ। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল (সাঃ)  আরও বলেন,
লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না। (বুখারী ও মুসলিম)
১০. ইনসাফ বা ন্যায়পরায়ণতা : ন্যায় পরায়ণতা ইসলামী চরিত্রের আরেকটি অংশ। এ চরিত্র আত্মার প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং বিভিনড়ব প্রকার অপরাধ বিমোচনের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ইহসান ও নিকটাত্মীয়দের দান করতে নির্দেশ দেন। সূরা আল নাহাল : ৯০
আল্লাহ তাআলা বলেন : ইনসাফ কর, এটা তাক্বওয়ার অতীব নিকটবর্তী। সূরা আল মায়িদা : ৮
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, ন্যায়পরায় ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বরের উপর বসবে। তারা হল সে সব লোক, যারা বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে, পরিবার-পরিজনের ক্ষেত্রে এবং যে দায়িত্বই পেয়েছে তাতে ইনসাফ করে।
১১. চারিত্রিক পবিত্রতা : ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয় হচ্ছে চারিত্রিক পবিত্রতা। এ চরিত্র মানুষের সম্মান সংরক্ষণ এবং বংশে সংমিশ্রন না হওয়ার দিকে পৌঁছে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
 যাদের বিবাহের সামর্থ নেই, তারা যেন চারিত্রিক পবিত্রতা গ্রহণ করে। যতক্ষণ না আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাকে সম্পদশালী করেন। [ সুরা আন নূর-৩৩ ]
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
তোমরা আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও। তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। যখন তোমাদের কেউ কথা বলে সে যেন মিথ্যা না বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন যেন খেয়ানত না করে। যখন প্রতিশ্রতি দেয় তা যেন ভঙ্গ না করে। তোমরা তোমাদের দৃষ্টি অবনত কর। তোমাদের হস্তদ্বয় সংযত কর। তোমাদের লজ্জাস্থান হেজাফত কর। [ হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসটিকে হাসান বলেছেন ]
১২. মেহমানের আতিথেয়তা : ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে মেহমানের আতিথেয়তা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী,
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। বুখারী ও মুসলিম।
ইসলামের এ সব চরিত্রে এমন কিছু নেই যা ঘৃণা করা যায়। বরং এসব এমন সম্মান যোগ্য মহৎ চারিত্রাবলী যা প্রত্যেক নিষ্কলুষ স্বভাবের অধিকারীর সমর্থন লাভ করে। মুসলমানগণ যদি এ মহৎ চরিত্র ধারণ করত তাহলে সর্বস্থান থেকে তাদের নিকট মানুষ আগমন করত এবং দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে তারা প্রবেশ করত যেভাবে প্রথম যুগের মুসলমানদের লেন-দেন ও চরিত্রের কারণে সে সময়ের মানুষ ইসলামে প্রবেশ করেছিল।
১৩. বিশ্বাস যোগ্যতাঃ বিশ্বাসযোগ্যতা আখলাকে হাসানার একটি অন্যতম প্রধান গুণ।এটি মানুষের ভিতর যত বেশী থাকবে মানুষ তাকে তত বেশী সম্মান করবে এবং তার কথা বিশ্বাস করবে।
১৪. প্রজ্ঞাঃ প্রজ্ঞা মানুষের নৈতিক গুণাবলীর ভিতর একটি অন্যতম প্রধান গুণ যা না থাকলে মানুষ কখনও ভাল-মন্দ নিরুপুণ করতে পারে না।
১৫. সাহসঃ এটি ইসলামী মানুষের সৎ গুণাবলীর ভিতর একটি অন্যতম প্রধান গুণাবলী।এর দ্বারা মানুষ সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১৬. ভদ্রতাঃ ভদ্রতা সচ্চরিত্রে অন্যতম একটি গুণ। এর মাধ্যমে সুন্দর অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
১৭. উদারতাঃ উদারতা সচ্চরিত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির মধ্য থেকে সকল ধরনের সংকীর্ণতা দূর হবে।একবার মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি অমুক ব্যক্তির চেয়ে অধিক ধনী হয়ে গিয়েছি বলে সে আমাকে এড়িয়ে চলে আর আমার সাথে কথা বলে না।আমি কি তার সাথে একই আচারণ প্রদর্শন করব। রাসূল(সাঃ) তাকে বললেন, না তুমিও তার সাথে নমনীয় আচারণ করবে এবং মেহেমানদারী করবে।
১৮. সততাঃ সততার মাধ্যমে একজন মানুষের ভিতর সৎ গুণাবলীর অভিব্যক্ত ঘটে। ইসলাম মানুষকে সততার সাথে জীবন অতিবাহিত করার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করেছে।আল্লাহ বলেন,
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ। [বনী-ইসরাইলঃ৩৫]
১৯. ক্ষমাঃ ক্ষমাশীলতা ইসলামের একটি অন্যতম মহৎগুণ যা আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছিল।ক্ষমাশীলয়ার ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে, আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল [আরাফঃ১৯৯]
উপসংহার
বস্তুত একমাত্র আখলাকে হাসানার মাধ্যমে মানুষের মনুষত্ব্য ও শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা পায়। এরই মাধ্যমে পশু-পাখি, কীট-পতংগ।গাছপালাসহ

পৃথিবীর সকল প্রাণীর উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই আখলাকে হাসানার উপাদানগুলো অর্জনের মাধ্যমে একজন মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে রাখতে পারে।

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...