ভূমিকা
আল্লাহ সুবানাহাতায়ালা
বলেন,
“তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের
কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ
পরিপূর্ন করে দিয়েছেন”? [লুকমানঃ২০]
এ পৃথিবীতে আল্লাহ পাক
যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।আর আল্লাহ পাকের
গোটা সৃষ্টিজগৎ হল পরিবেশ।বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সকলে এই পরিবেশ রক্ষা করার নামে অত্যন্ত
তৎপর হয়ে উঠেছে।কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর পূর্বে বাস্তবভিত্তিক ধর্ম ইসলাম পরিবেশ
দূষণ রোধে এমন কিছু নিয়ম-নীতি প্রদান করেছে যার আলোকে পরিবেশ দূষণ রোধ করা অত্যন্ত
সহজসাধ্য একটি বিষয়।ইসলামের সাথে পরিবেশ বিজ্ঞানের কি সম্পর্ক এবং এই পরিবেশ দূষণরোধে
ইসলাম কি ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
পরিবেশ কি
পরিবেশ কথাটি আভিধানিক
অর্থে ঠিকানা,অবস্থা এবং প্রকৃতিকে বুঝানো হয়।আল্লাহ পাক কুরআনে পরিবেশের কতাহ বলেছেন
নিম্নোক্তভাবে,
যখন আমি ইবরাহীমকে বায়তুল্লাহর
স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। [হাজ্জঃ২৬]
সে সেখান যেখানে ইচ্ছা
স্থান করে নিতে পারত। [ইউসুফঃ৫৬]
তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতে বাস স্থান
নির্ধারণ কর। [ইউনুসঃ৮৭]
তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা
দিয়েছেন। [আরাফঃ৭৪]
আল কুরআনে পরিবেশকে তাওয়া
এবং তাবওয়া বলা হয়েছে যার দ্বারা ঘর,বসতিবাসস্থানকে,বায়ুমণ্ডল,বায়,পানি।আরবীতে বায়নাতু
এবং মসিরুন বলে। পরিবেশ বলা হয়েছে।ইংরেজী Ecology হল পরিবেশ যা গ্রীক শব্দ oikos এবং
logos এর সমন্বিত রুপ।oikos এর অর্থ হল ঘর,বসতি,বাসস্থান এবং logos এর অর্থ হল জ্ঞান
ও গবেষণা।কাজেই পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান হল পরিবেশ বিজ্ঞান।১৮৮৫সালে বিজ্ঞানী রিটার
সর্বপ্রথম এই পরিবেশ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
বিজ্ঞানী আর্নষ্ট হেজেল
বলেন, “জীবন্ত সৃষ্ট জগতের পারস্পারিক সম্পর্ক তথা তারা
যে আবেষ্টনীয় জগতের মধ্যে বসবাস করে সেই সম্পর্কিত জ্ঞান হল পরিবেশ বিজ্ঞান।”
অর্থাৎ, বসবাস সংক্রান্ত
জ্ঞান হল পরিবেশ।
ড. মাহমুদ সালেহ আদেলী
বলেন, “মানবমণ্ডলীকে বেষ্টন করে আল্লাহ তায়ালার যে সমগ্র
সৃষ্টিজগৎ তাকেই পরিবেশ বলা হয়।”
ড. সাঈদ মুহাম্মদ আল-হাফফার
বলেন, “পরিবেশ হল প্রকৃতির ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহের সমন্বিতরুপ
যেখানে মানুষ ও অন্যান্য জীব ধারন,বর্ধন ক্রিয়া সুন্দরভাবে পরিচালনা করে।”
[বিয়াতু মিন আজলি বাক্কা]
গোপালনাথ খান্না বলেন,
“Environment as the sum of total effects the
development and life of organism.”
মোটকথা পৃথিবীর সবকিছু
যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বায়ুবণ্ডলের ওজোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত যাওথা আল,বাতাস,পানি,মেঘ,কুয়াশা,মাটি,বন,শব্দ,পাহাড়-পর্বত,নদী-নালা,সাগর-মহাসাগর,মানবনির্মিত
সর্বপ্রকারের অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সমন্বয়ে যা সৃষ্ট তা হল পরিবেশ।
পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম
১. আল্লাহ বলেন,
“তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের
কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ
পরিপূর্ন করে দিয়েছেন?” [লুকমানঃ২০]
এ আয়াতের দ্বারা এ কথা
বুঝানো হয় যে,সবকিছু আমাদের প্রয়োজনে ভরপুর।তাই এদের সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন আমাদের জন্য
অপরিহার্য্য একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
২. রাসূল(সাঃ) একবার হযরত
সাদ(রাঃ) উযুর সময়ে অতিরিক্ত পানি খরচ করতে দেখে বলেন, “তুমি এত পানির অপচয় করছ কেন?তুমি যদি নদী অথনা সমুদ্রে উযু কর তাহলে
তার অপচয় করবে না।”
আল্লাহ পাক যেকোন বস্তুর
অপচয় সম্পর্ণরুপে নিষেধ করে দিয়েছেন।কারণ সবকিছু তার সৃষ্টির জন্য পরিমিতভাবে তৈরী
করা হয়েছে।আর তার অপব্যয় করা হল শয়তানের ভাইয়ের ন্যয় কাজ।আল্লাহ বলেন, “তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে শোধিত করেছেন পরিমিতভাবে।”
[ফুরকানঃ২]
আল্লাহ পাক বলেন, “নিশ্চয় অপব্যাকারী শয়তানের ভাই।” [বনী-ঈসরাইলঃ২৬]
৩. ১৪ বছর যাবৎ মক্কা ও
মদীনায় প্রাণী হত্যা,গাছ কাটা নিষিদ্ব হিল যা পরিবেশ সংরক্ষণে খলীফাবৃব্দ এক চমৎকার
ভূমিকা পালন করে।
অর্থাৎ এসকল আলচনার দ্বারা
এটা প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক।
পরিবেশে যেন সকল প্রাণী
থাকে তা সকলে চায়।কারন তাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।বাঘ,সাপের মত জন্তুকে রক্ষা
করার জন্য আন্দোলন চলছে।কারণ তা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।বর্তমানে শকুন
না থাকার জন্য আনথ্রাক্স রোগ ছড়চ্ছে।তাই তা থাকা দরকার।আল্লাহ পাক বলেন “তুমি আমার সৃষ্টির ভিতর তাকাও।সেখানে কোন অপূর্ণতা পাও?তুমি তা ভাল করে
তাকাও।” মনে হয় যে কুরআনে পরিবেশ সম্পর্কে কিছুই বলে নাই।কিন্তু তা বলা হয়েছে।যখন
পরিবেশের ভিতর সবকিছু থাকে আর যদি তার কিছু অভাব হয় তাহলে তা হবে পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ বিপর্যয়
আল্লাহ পাক অত্যন্ত সুন্দরভাবে
সৃষ্টি করেছেন।যেখানে পাহাড় আছে তা আছে,তারপর যেখানে নদী আছে তা আছে তারপর বরফ আছে
যার নিচে মিথেন আছে।তা যখন গলে যাবে তখন মিথেন বের হয়ে যাবে এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্বি
হয়ে মহাপ্লাবনের সৃষ্টি।পরিবেশে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হলে এমন অবস্থা হয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের
সৃষ্টি হয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে South wick, 1976 এ বলা হয়েছে,
“পরিবেশ প্রতিকূল পরিবর্তন যা প্রধানত মানুষের সক্রিয়তার উদ্ভূত উপাদানে
সৃষ্ট তাই পরিবেশ দূষণ”
এম. আমিনুল ইসলাম বলেন,
“মানুষের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা পারিপার্শ্বিক অবস্থার
দূষণের সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।”
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদির
কাফী বলেন, “প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায় প্রাণীজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও বায়ুমন্ডলের
অনিষ্ট সৃষ্টিকারী বস্তুর উপস্থিতি যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে ধ্বংস করে তাই পরিবেশ বিপর্যয়।”
পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণসমূহ
এখন যেসকল কারণে পরিবেশ
বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তা হোল
১. জনসংখ্যা বৃদ্বিঃ জনসংখ্যা
বৃদ্বি হলে এক সাথে অনেক লোকের সমাগম হলে তাতে পরিবেশ দুষিত হয়।
২. ভোক্তার চাহিদা বৃদ্বিঃ
ইহা বৃদ্বি পেলে পরিবেশের বিপর্যয় হয়।যা কিনে তা পরিত্যক্ত করা হলে পরিবেশ দুষিত হয়।
৩. কৃত্রিম প্রযুক্তিগত
উন্নয়নঃ এর জন্য এমনটা হয়।
৪. প্রাকৃতিক স্বাভাবিক
কারণে অযথা মানব হস্তক্ষেপঃ বিল ভরাট,বন কেটে ফেলা, পাহাড় কাটা এর অন্তর্ভূক্ত হয়।
পরিবেশ দূষণের কারণসমূহ
চারটি কারণে পরিবেশ দুষিত
হয়।তা হল বায়ু দুষন,পানি দুষন,শব্দ দুষন এবং কঠিন বর্জ্য দুষন।
বায়ু দুষন
বায়ু যখন প্রাণী এবং উদ্ভীদের
জন্য ক্ষতিকর তাই হল বায়ু দুষন।আমাদের জন্য অক্সিজেন দরকার আবার গাছের জন্য দরকার কার্বন-ডাই-অক্সাইড।বায়ুতে
যদি ওজোন,সালফার,কার্বন মনোক্সাইড,মিথেন,ক্লোরোফিল,সীসা,ক্যাডিয়াম থাকে তাহলে তা ক্ষতিকর
বায়ুর জন্য।কিছু কিছু গাছ আছে যেখানে বায়ু দুষনের জন্য সেগুলোতে ফল হয় না।তেহরানের
পর ঢাকা বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী শহর।এর কারণ হল বায়ু দুষন।বায় দুষনের প্রধান
কারণ হল সীসা এবং কার্বন মনোক্সাইড।এর এই সীসা এবং কার্বন-মনোক্সাইড সবচেয়ে বেশী ছড়ায়
ডিজেল,পেট্রোল, গাড়ি এবং কল-কারখানার বর্জ্যের দ্বারা হয়ে থাকে,যার ফলে মানুষেরা দিন
দিন রোগ্রান্ত হচ্ছে।চলাফেরা করা দুরুহ হয়ে গিয়েছে।বাতাসকে দুষন ঘটায় যেসকল বিষয় তার
ভিতর সবার আগেয় হয়
১. তেজস্কৃয়তার দ্বারা।এই তেজস্কৃয়তা পারমাণবিক বিস্ফোরণের
দ্বারা হয়।অথবা পার্শ্ববর্তী কোন দুর্ঘটনার দ্বারা হয়, অর্থাৎ কোন বস্তুর মধ্য দিয়ে
পারমাণবিকতার নির্গমন,
২. কল-কারখানার বিষাক্ত
ধোঁয়ার দ্বারা,
৩. যান-বাহনের থেকে নর্গত
ধোঁয়া,
৪.অসাস্থ্যকর আবর্জনা জমা
করার জন্য,অসাস্থ্যকর উপায়ে অপসারণ করা হয় যারা দ্বারা বাতাস দুষিত হয়,
৫. তৈল উত্তোলনের ফলে আগুন
ধরা, এভাবে করে বাতাস দুষিত হয় আর এর দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ৬.কয়লা বা কাঠ পোড়ানো এরোসল বা স্প্রের ব্যবহার,
৭.কৃষিজমিতে কীটনাশকের ব্যবহার,
৮. এসিড রেইনের দ্বারা,
৯।বিভিন্ন ধরনের বারুদ ও বোমা বিস্ফোরণ্,
১০।. তৈল উত্তোলনের ফলে
আগুন ধরা,
বায়ু দূষনের প্রভাবঃ
এভাবে করে বাতাস দুষিত
হয় আর এর দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যা হল শ্বাস কষ্ট,ফুসফুসে কষ্ট,
এধরনের আরও বিভিন্ন ধরনের রোগের বিস্তার ঘটায়। মানুষের শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর
হল সীসা।এই সীসা মানুষের কিডনিকে নষ্ট করে দেয় আর এই কিডনি মানুষের শরীরের বিভিন্ন
অংগ-প্রত্যঙ্গের ব্যাঘাত ঘটায়।সীসাসহ বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বাতাসকে এমনভাবে
বিষাক্ত করে যার অস্তিত্ব ৫০০ বছর পর্যন্ত থাকে।তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকে।এর
দ্বারা পৃথিবীর সকল জীব আক্রান্ত হয়।
পানি দুষন
পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা
কমে গেলে পানি দুষিত হয়।তাহলে সমুদ্রের উদ্ভিদ এবং মাছের জন্য ক্ষতিকর হয়।সমুদ্রে কিছু
উদ্ভিদ মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।কিন্তু পানি দুষিত হলে তা ব্যাহত হয়।তা আর
হয় না।তারপর মাছ আর পাওয়া যায় না।পানিতে বিষাক্ত দ্রব্য অথবা দূষিত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রণের
ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে পানি দূষণ বলে।শহরে পানির সর্বরাহ
হয় মূলত পার্শ্ববর্তী নদীগুলো থেকে। নদীর পানি বিশুদ্ধ করে খাওয়া ও ব্যবহার উপযোগী
করা হয়। শহরে যেসকল কারণে পানি দূষিত হয় সেগুলি
হচ্ছে-কলকারখানার বর্জ্য নদীতে মিশে পানি দূষিত হয়।অনেক সময় পানির লাইন ফেটে যেয়ে এর
ভিতর ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করে। এর ফলে পানি দূষিত হয়।নলকূপের পানিতে আর্সেনিক গ্রামে
পানি দূষণের প্রধান কারণ।ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার এবং বৃষ্টির পানিতে তা পুকুর,
জলাশয়ের পানিতে মিশে পানি দূষিত হয়। একই পুকুরে কাপড় পরিষ্কার, মানুষ ও গবাদী পশুর
গোছল করালে পানি দূষিত হয়।
এভাবে শহর ও গ্রামে পানি
দূষিত হয় এবং খাওয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে ওঠে।
পানি দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
পানি দূষণের কারণে বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যেমন-
পানিবাহিত রোগ:
ডায়েরিয়া
ব্যাকটেরিয়াজনিত:
টাইফয়েড
সংক্রমন
কলেরা, প্যারাটাইফয়েডজ্বর
ও বেসিলারী আমাশয়
ভাইরাল সংক্রমণ(জন্ডিস)
পোলিওমাইলিটিস হেপাটাইটিস
সংক্রমণ
প্রোটোজল সংক্রমণ:
অ্যামোবিক আমাশয়
শব্দ দুষন
আরেকটি হল শব্দ দুষন।৮০
ডেসিবেলের বেশী শব্দ অতিক্রম হলে তার ক্ষতি হয়।শব্দের উৎস থেকে আধা মিটার দূরে ৮০ ডেসিবেলের
বেশী গ্রহণযোগ্য নয়। কল-কারখানার শব্দ,গাড়ীর হর্ন, ঘণ্টার শব্দ ইত্যাদি কারণে শব্দ
দুষিত হয়ে থাকে।
কঠিন বর্জ্য দুষন
কল-কারখানা,শিল্পজাত বর্জ্য,কৃষিজাত
কারখানা,পারমাণবিক বর্জ্য,কঠিন খনিজ বর্জ্য ইত্যাদির দ্বারা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।শিল্পের
ব্যবহার দ্বারা পরিবেশ ক্ষতি হয়।কাগজ,ইট তৈরী করার দ্বারা এই ক্ষতি হয়ে থাকে।নগরায়ন
এবং শিল্পয়ানের ফলে তা হচ্ছে।একটি সমীক্ষায়
দেখা গিয়েছে যে, ১৭০০ সালে কার্বন-ডাইওক্সাইডের পরিমান ছিল ২৭৫ মিলিয়ন পি পি এম।১৯৯০
সালে তা হয়৩৫০ মিলিয়ন পি পি এম।তাপমাত্রা বাড়ছে।২০২৫ সালে তাপমাত্রা হবে ১।৫৮ ফারেনহাইট
হবে।শেষ শতাব্দীতে দশ ফারেনহাইট বাড়বে।ফলে চল্লিশ বছরের মধ্যে ৮ ইঞ্চি পানি বাড়বে আর
সবকিছু ডুবে যাবে।কার্বন-ডাইঅক্সাইড যেই সময় উদগিরণ করা হবে তার স্থায়ীত্ব থাকবে ৫০০
বছর।সি.এফ.সি এর হায়াত হলে ১৬৫ বছর।অর্থাৎ এসকল প্রভাব থাকবে ১০০-৫০০ বছর।এর ফলে সৃষ্ট
হচ্ছে নানা রোগ।জাপানে বনভূমি ৬৭ ভাগ,রাশিয়াতে ৫১ ভাগ, ভারতে ২৭ ভাগ এবং মিয়ানমারে
৬৭ ভাগ।আর বাংলাদেশে ৭ ভাগ।এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।আমাদের শিল্প বেশী ক্ষতিকর।ট্যানারির
দ্বারা দৈনিক ১৬ হাজার বর্গমিটার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।আর সেগুলো হাস-মুরগী ও মাছ খাচ্ছে
আর তা খাচ্ছি আমরা।
পানি দূষণ রোধে ইসলাম
পানি দুষণ রোধে ইসলামের
ভূমিকা অত্যন্ত ব্যপক।এই পৃথিবির ৭০ ভাগ হল জল আর বাকী ৩০ ভাগ হল স্তল।এই পানির কথা
কুরআনে মোট ৬৩টি জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।এই পানি হতে সমগ্র সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করা হয়েছে।আল্লাহ
বলেন,
“প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।”
[আম্বিয়াঃ৩০]
রাসূল(সাঃ) বলেন, “প্রত্যেকটি জিনিস পানি হতে সৃষ্ট।”
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয় হল পানি।একটি শরীরের ওজনের ৫০-৬০ ভাগ পানি থাকে।মেয়েদের শরীরের থেকে পুরুষের
শরীরে পানি বেশী থাকে।একজন বয়স্ক লোকের শরীরে ৪০ ভাগ পানি থাকে।শিশুদের শরীরের আরও
বেশী থাকে।তাদের শরীরে প্রায় ৮০ ভাগ থাকে।এই তথ্য কুরআনে প্রায় ১৪০০ বছর আগে দেওয়া
হয়েছে।জীবকোষের মূলউপাদান প্রোটপ্লাজম যাকে জীবের প্রাণ বলা হয়, যার ৯৫ ভাগ পানি।আল্লাহ
পাক বলেন, “আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন
অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জিবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের
জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” [জাসিয়াঃ৫]
১. আর্সেনিক রোধঃ বর্তমানে
ভূগর্ভস্থ পানি আমরা খাই না যেহেতু সেখানে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।যদিও আল্লাহ পাক তা
খেতে আমাদের বলেন নাই।আমরাই তা খাই।আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,আসমান থেকে যে পানি বর্ষণ
করা হয় তা খেতে।তিনি কিন্তু বলেন নাই যে ভিতর থেকে পানি খেতে।মাটি থেকে যেই পানি উঠে
তা হল বিপদ সংকেত।
২.বদ্ব পানিতে পেশাব না
করাঃ পানি দুষন রোধের জন্য হাদীসসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তিনি উদ্বৃত করেছেন,যেমন
তিনি বলেছেন, “তোমরা বদ্ব পানিতে পেশাব করবে না।”[মুসলিম]
অন্য এক হাদীসে আছে,তোমরা পানিতেই পেশাব করবে না।আমরা বদ্ব পানিতে পেশাব না করলেও সকল
ড্রেনের পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে।তাহলে আমরা তো বদ্ব পানিতে পেশাব করছি।পুরো মুসলিম জাতি
যদি হাদীস মানে তাহলে তো এই অবস্থা হত না।তাহলে পানিগুলো কোথায় যাবে?তার জন্য আল্লাহ
পাক তো শোধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।কিন্তু তা বর্তমানে শোধন না করে তা প্রবাহিত করা
হচ্ছে সরাসরি।আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যে, “তোমরা স্থির পানিতে পেশাব করবে না।” কারণ এখানে গোসল করা হয়।তাই এখানে কোনভাবে পেশাব
করা যাবে না।আর পেশাবের ভিতর এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাই
সেখানে কোনভাবে পেশাব করা যাবে না।তাই কোন কোন স্থানে দুষিত পানি ব্যবহারের ফলে হাতের
তলায় ঘাও হচ্ছে।যদি বলা হয় তা বিজ্ঞানে আছে তাহলে তা মানি আর যদি বলি তা ধর্মে আছে
তাহলে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
৩.উযু করার পূর্বে হাত
ধোঁইয়াঃ উযু করার পূর্বে পানির পাত্রের পানি
যেন দুষিত না হয় এজন্য তার উচিৎ হাত ধুঁয়ে নেওয়া। বুখারী এবং মুসলিম শরীফের হাদীস তোমাদের
ভিতর থেকে যদি কেউ ঘুম থেকে উঠে আর সে যেন হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত না দেয়।কারণ
সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল? পানির অপচয় করি বিভিন্নভাবে।অথচ রাসূল(সাঃ) বলেন,
“তুমি যদি সমুদ্রে থাক তাহলেও পানির অপচয় করবে না।”
৪.পানিতে নিঃশ্বাস না ফেলাঃ পানির বিশুদ্বতা রক্ষার জন্য ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ
হাদীসে উদ্বৃত করেছেন যা হল, “তোমরা পানিতে কেউ নিঃশ্বাস ফেলবে না।”
এটা করা একদম নিষেধ।কারন,মানুষ যখন শ্বাস ত্যাগ করে তখন তার ভিতর থেকে নানা জীবানু
বের হয়।আর তা পানিতে নিক্ষেপিত হলে সেই পানি দুষিত হয়।তাছাড়া নাকের চুলে যেই ময়লা জমা
হয় তা পানিতে পড়লে তা তার সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।এই বিষয়টি রাসূল(সাঃ)প্রায় ১৪শ
বছর পূর্বে অতুন্ত চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।কিন্তু রাসূলের হাদীস হিসেবে আমরা এর
গুরুত্ব খুব একটা দেই না।
৫. পানির পাত্র ঢেকে রাখাঃ
রাসূল(সাঃ)বলেছেন, “শয়নের আগে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।”পানিকে
পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এ হাদীস বলা হয়েছে।
৬. নবীজি(সাঃ) বলেছেন,
“সাতটি কাজের দ্বারা একজন মানুষ মৃত্যুর পর সওয়াব
পেতে থাকে।তা হোল আলেম তৈরী করা,খাল খনন করা, পুকুর খনন করা, গাছ ফলন,মসজিদ নির্মাণ,
নেককার সন্তান এবং উপকারী ইলম।” এর ভিতর তিনটি কাজ পানির সাথে সম্পর্কযুক্ত।পানি
দুষনের এই হাদীসগুলো মানলে পানি দুষন রোধ করা যাবে।
৭. পবিত্রতা অর্জনঃ কুরআনে
বলা হয়েছে, ““যে নিজেকে (আত্মাকে) শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।”[শামসঃ৯]
কেউ কেউ এখানে আধ্যাত্মিক পবিত্রতার কথা বলেন।কিন্তু এটি আধ্যাত্মিক পবিত্রতার পাশাপাশি
শারীরিক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে।এই আয়াতটির গুরুত্ব অত্যাধিক বেশী।এ সুরার শুরুতে
আল্লাহ বলেন, “শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের
পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে
আচ্ছাদিত করে, ।শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।শপথ পৃথিবীর এবং যিনি
তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর, শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর, অতঃপর
তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।এবং
যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।” [শামসঃ১-১০] তাহলে এখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ের শপথের মাধ্যমে এই দৈহিক এবং আত্মিক পবিত্রতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।আল্লাহ
পাক বলছেন, “হে চাদরাবৃত।উঠুন, সতর্ক করুন। আপন পালনকর্তার মাহাত্ন্য
ঘোষনা করুন,।আপন পোশাক পবিত্র করুন। এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।”
[মুদাচ্ছিরঃ১-৫] এগুলো এজন্য পরিচ্ছনে থাকে।হাদীসে পবিত্রতার গুরুত্বের কতাহ তুলে ধরা
হয়েছে।রাসূল(সাঃ) বলেন, “আল্লাহ নিজেও পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতাকে ভালবাসেন।”
আবার রাসূল(সাঃ) এ কথাও বলেছেন যে, “পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধাংশ।”
আবার তিনি একথাও বলেছেন যে, “যখন কুকুর তোমাদের লালা দেয় তখন ঐ জায়গাটি সাতবার
ধুবে।সর্বশেষ মাটি দিয়ে ধুবে”। তাহলে এখানে ছয়বার পানি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করার পর
একবার যদি মাটি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হয় তাহলে তার ভিতর যেই জীবানু থাকার কথা তা আর থাকবে
না।আর এই মাটিকে যদি আমরা দুষিত করি তাহলে কি করে আমরা কি করে মাটি ব্যবহার করব।রাসূল(সাঃ)
এই দুআ করতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকাল হুদা অত্তুকা ওয়াল আফাফা
ওয়াল গিনা।” এই আফাফার দ্বারা চারিত্রিক পবিত্রতা এবং এবং দৈহিক পবিত্রতা উভয়ের
কতাহ বলা হয়েছে।আরও অসংখ্য হাদীসের দ্বারা তিনি পবিত্রতার কথা বলেছেন।এখন যদি একথা
বলা হয় যে, পানি পবিত্র রাখা আমাদের একটা দায়িত্ব।তাহলে মানুষ তা গুরুত্বের সাথে করবে।তানাহলে
করবে না।
বায়ু দুষণ রোধ ইসলাম
মানুষ প্রায় ৪০ কেজি বাতাস
বহন করে।বায়ু পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রত্যেক জীব-জন্তু গ্রহণ করে থাকে।একজন
মানুষ দিনে প্রায় ১৬।৫ কেজি বাতাস গ্রহণ করে।প্রতি ৪ সেকেন্ডে একবার, এক মিনিটে ১৬
বার, ঘণ্টায় ১৬০ বার, দিনে ২৩০৪০ বার এবং বছরের ৮৪০৯৬০০ বার।ইহা ছাড়া কোন জীবের অস্তিত্ব
এই পৃথিবীতে থাকতে পারত না।বায়ুর ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়,
“আল্লাহ্ই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে।”
[ফাতিরঃ৯]
“তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি
পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে” [আরাফঃ৫৭]
রাসূল(সাঃ) বলেন, “তোমরা বায়ুকে অভিশাপ দিও না।কারণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা।আর যে অভিশাপ
পাওয়ার যোগ্য নয় তার উপর অভিশাপ দেওয়া হলে তা নিজের উপর বর্তাবে। [তিরমিযী]
হয়েছে।উবাই ইবনে কাব (রাঃ)
থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন্, “তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।যদি তার ভিতর কোন খারাপ
কিছু থাকে তবে তা থেকে পানাহ চাও আর ভাল কিছু থকলে তার জন্য কল্যাণ কামনা কর।”
বায়ু দূষন রোধে ইসলাম বিভিন্নভাবে
তাগিদ দিয়েছে।
১. বায়ুত অনিষ্টতা থেকে
পানাহা চাওয়াঃ বায়ুতে যত ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ আছে তা থেকে পানাহা চাওয়ার মাধ্যমে
পরিবেশ দূষণের হাত থেক রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।মুসলিম শরীফে হাদীস এসেছে “যখন বায়ু প্রবাহিত হত তখন মহানবী (সাঃ) এই দুআ করতেন যে, বায়ুর ভিতর
যা উত্তম তা আমি চাই আর যা ক্ষতিকর দিক তা থেকে পানাহা চাই”।
যখন মানুষ এরকম বায়ু নিয়ে গবেষণা শুরু করে নাই ঐ সময় এমন দুআ সত্যি খুব উৎসাহব্যঞ্জক।বায়ুর
ক্ষতিকর দিকে থেকে পানাহা চাওয়া হল এবং উত্তম দিকগুলোর জন্য দুআ করা হল।পরিবেশের জন্য
ক্ষতিকর দিকগুলো অর্থাৎ সীসা,ক্যাডিয়াম,কার্বন মনোক্সাইডের ক্ষতিকর দিকেগুলো থেকে পানাহা
চাওয়া হল।তাহলে বাতাসের ভিতর এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান আছে যা মানুষের সাস্থ্যের জন্য
অত্যন্ত ক্ষতিকর।যার দ্বারা সে সহজে জীবন-ধারন করতে পারবে না।আর সেই ক্ষতিকর প্রভাব
থেকে রাসূল(সাঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে।এ বক্তব্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।বাতাসে
যে ক্ষতিকর দিক আছে তা এই হাদীসের দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে।আমরা এই হাদীস থেকে জানতে
পারলাম যে বাতাসের ভিতর ক্ষতিকর প্রভাব বিরাজমান।এই সময় কেউ সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা
করে নাই।বাতাসের ভিতর কল্যাণকর দিক আছে এবং অকল্যাণকর দিক আছে তা বুঝানো হয়েছে।উবাই
ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন্, “তোমরা
বাতাসকে গালি দিও না।যদি তার ভিতর কোন খারাপ কিছু থাকে তবে তা থেকে পানাহ চাও আর ভাল
কিছু থকলে তার জন্য কল্যাণ কামনা কর।” এখন আমাদের এই বিষয়টি গবেষণা করা উচিৎ যে বাতাসের
ভিতর কত অকল্যাণকর জিনিস আছে।তা আমাদের এই গবেষণায় প্রমাণিত।তাহলে বাতাসের ভিতর যেসকল
খারাপ দিক আছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে আবার সেই সাথে
নিজেকেও তা থেকে মুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ, ইসলাম বায়ু দুষন রোধ করার জন্য বিশেষ কিছু
দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে।এখন আমাদেরকে পরীক্ষা গবেষণা করে বের করতে হবে যে বাতাসের
ভিতর কি কি ক্ষতিকর দিক আছে আর তা থেকে কীভাবে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়।তারপর আমরা দেখি
যে, মুহাম্মদ(সাঃ) যখন হিজরত করেন তখন মুহাম্মদ(সাঃ) এর বাসা চারদিকে ঘিরে রেখেছিল
কাফিরগণ।তিনি যখন বালি নিক্ষেপ করেছিলেন তখন তাদের চোখ একেবারে স্তিমিত হয়ে যায় যার
দরুন তারা চোখে কিছুই দেখতে পায় নাই।তাহলে ঐ বাতাসের ভিতর নিশ্চয় এমন কোন খারাপ উপাদান
ছিল যা তাদের জন্য ক্ষতিকর ছিল।
২. ধূমপান না করার দ্বারাঃ
ইসলাম মানুষকে ধূমপান না করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছে।একটি মানুষ ধূমপান করছে,আবার
কেউ গাড়ী থেকে কালো ধোঁয়া নির্গমন করছে। কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে মুসলিম হয়ে থাকে তাহলে
তার দ্বারা এসকল খারাপ কাজ হতে পারে না।কেউ যদি মুমিন মুসলিম হয় তাহলে সে চিন্তা করবে
যে, আমি যদি সিগারেট খাই তাহলে আমার দ্বারা অনেক মুসলিম ভাই কষ্ট পাবে সেই ই মনে করে
সিগারেট খাবে না।আর যদি সে মুমিন না হয় তাহলে তা সে করবে।এই সিগারেটকে মাকরুহ বলা হলেও
তা দ্বারা তিনটি হারাম হয় যা হল ১. অন্যকে কষ্ট দেওয়া, ২. অপব্যয়, ৩. নিজের ক্ষতি হয়। তাহলে যে সিগারেট খায় সে যে
একজন মহাপাপী তাতে কোন সন্দেহ নাই।সে জাহান্নামী হবে।কারণ সে নিশ্চিত মানুষের ক্ষতি
করছে।ইসলাম কিন্তু এভাবে করে বাতাস দুষিত মুক্ত করতে বলে। ইসলাম এ আরও বলা হয়েছে,ঐ
ব্যক্তি মুসলিম নয় যার হাত ও মুখ থেকে অন্য কোন মুসলিম নিরাপদ নয়।
৩. কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর
মধ্য দিয়েঃ রাস্তাঘাটে যদি কোন কষ্টদায়ক বস্তু থাকে তাহলে তা সরানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণ
রোধ করা যায় যা থেকে বায়ু দূষিত হতে পারে। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, “ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর হল রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।”
৪. মাটিতে দাফন করাঃ কেউ
যখন মারা যায় তখন তাকে ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে কবর দিতে বলে যাতে করে পরিবেশের কোন ধরনের
দূষণ না হয়। কুরআন পাঠ করলে আমরা আরেকটি বিষয় জানতে পারি যে, যে জিনিসটা পচে যায় তা
মরে যাওয়ার পর মাটিতে পুতে ফেলতে হয়।আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি যে, কাবিল যখন হাবিল্অকে
হত্যা করে তখন তখন দুটি কাক সেখানে আসে আর তাদের একজন আরেকজনকে হত্যা করে বালি দেওয়ার
মাধ্যমে হাবিলকে ঢেকে ফেলা হয়।তাহলে আমাদের কুরআন এই নির্দেশ দিচ্ছে যে্কেউ মারা গেলে
তাকে মাটি দিতে হয়।কিন্তু আমরা মুসলিম হয়েও তা বুঝি না।কিন্তা তা যখন বিজ্ঞান বলছে
এই কথা বলতে তখন আমরা মানছি।
৫. আগুন নিভানোর মাধ্যমেঃ
তারপর হাদীসে বলা হয়েছে যে, “তোমরা ঘুমানোর আগে তোমরা তোমাদের আগুন নিভিয়ে দাও।”
এই হাদীসের দ্বারা বায়ু দুষনের রোধের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।কারন আগুন জ্বালানো
থাকলে সেখানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে।আর অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে।এতে করে
বদ্ব ঘরে জীবন-যাপনকারী ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।তাই তিনি তা নিভাতে বলেছেন।হাদীসে
আরও বলা হয়েছে আগুন হল তোমাদের শত্রু।তাই তোমরা ঘুমানোর আগে তা নিভিয়ে ফেল। তাছাড়া
আগুন পরিবেশে কার্বনের পরিমান বাড়ায় আর অক্সিজেনের পরিমাণ কমায়।তাই ঘুমানোর আগে যে
আগুন নিভাতে হয় তার দ্বারা পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা হয়।
৬. হাঁচি দানকালে মুখে
হাতঃ রাসূল(সাঃ) হাচি কিংবা হাই তোলার সময় মুখে হাত দিতে বলেন যার দ্বারা ঐ হাচিদানকারী
ব্যক্তি কিংবা হাইতোলাকারীর ব্যক্তির জীবানু অন্যের ভিতর প্রবেশ না করে।
৭. দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু
আহার না করাঃ তারপর আমাদের রাসূল(সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি
দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য খায় সে যেন ঐ অবস্থায় মসজিদে না আসে।”
এর ভিতর কিন্তু পরিবেশকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।কারন এর দ্বারা অন্য মানুষের ক্ষতি
করতে নিষেধ করা হয়েছে।
শব্দ দূষণ রোধে ইসলাম
মানুষ বর্তমানে বিভিন্নভাবে
শব্দ দুষন করছে।তা দূর করার জন্য ইসলাম কিছু বিধান দিয়েছে যেমনঃ
(ক) নিম্নস্বরে কথা বলার
দ্বারাঃ যখন কী উঁচু গলায় কথা না বলে নিম্নস্বরে কথা বলবে তখন তার দ্বারা পরিবেশ দূষণ
অনেকাংশে রক্ষা পাবে।আল্লাহ বলেন,
আপনি নিজের নামায আদায়কালে
স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতউভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন
করুন। [বনী-ঈসরাইলঃ১১০]
মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের
উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল,
তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। [হুজুরাতঃ২]
(খ) নীরবে যিকিরঃ যখন কোন
একজন মুমিন বান্দা নিম্ন কণ্ঠে যিকির করতে থাকবে তাহলে এর দ্বারা পরিবেশ দুষন অনেকাংশে
হ্রাস্ব পাবে। আল্লাহ বলেন,
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে”।
[আরাফঃ৫৫]
রাসূল(সাঃ) বলেন, “নীরবে যিকির উত্তম”
(গ)নীরবে দুআঃ ইসলাম সর্বদা
মানুষকে নীরবে দুআ করতে বলে যার দ্বারা শব্দ দূষণ অনেকাংশ হ্রাস্ব পায়। এ ব্যাপারে
রাসূল(সাঃ) বলেন,
“নীরবে দুয়া জোড়ে দুয়া হতে উত্তম”
(ঘ) নীরবে কুরআন পাঠঃ চুপি
চুপি কুরআন তিলওয়াতের দ্বারা শব্দ দূষণ অনেকাংশে হ্রাস্ব পায়। হাদীসে বলা হয়েছে,
“তোমরা কুরআন পাঠের সময় একে অপরের চেয়ে কন্ঠস্বরকে উঁচু করবে না।”
উপরোক্ত নিয়ম-নীতি অনুসরণ
করলে একজন মুসলিম শব্দ দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।
উপসংহার
পরিবেশ দূষণ রোধে ইসলানের
ভূমিকা ব্যাপক,কেউ ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী জীবন-যাপন করলে পরিবেশ দূষণ রোধ করা অনেকটা
সম্ভবপর হবে।
No comments:
Post a Comment