Monday 23 September 2013

কারবালার ঘটনা


_____________________৬০ হিজরির ঘটনাইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়াকে খলিফা নিযুক্ত করেন তার বাবা মুআবিয়া (রা: ) কিন্তু এটা ইসলামের মর্মের চেয়ে রাজতান্ত্রিক ধারায় বেশী প্রভাবিত ছিলতাই তার হাতে বায়াত করেননি হুসাইন (রা: ) ইরাকের লোকেরা এ খবর পেয়ে তার কাছে চিঠি/দূত পাঠিয়ে জানাল তারা তাকে খলিফা হিসেবে চায়, ইয়াজিদকে নয়সমর্থকদের চিঠি পেয়ে হুসাইন (রা: ) তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে কুফায় পাঠালেন অবস্থা দেখার জন্যমুসলিম দেখলেন যে আসলেই অনেক মানুষ হুসাইনকে (রা: ) কে খলিফা হিসেবে চাচ্ছেতিনি হুসাইন (রা: ) কে সেটা জানিয়েও দিলেনইতমধ্যে কিছু অত্যুৎসাহী লোকেরা হানী বিন উরওয়ার ঘরে মুসলিমের হাতে হুসাইনের পক্ষে বায়াত নেওয়া শুরু করলসিরিয়াতে ইয়াজিদের কাছে এ খবর পৌছালে সে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পাঠাল কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করতে
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে দেখে ঘটনা সত্যিমুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেনএ সময় উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিয়ে মানুষকে ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালকুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগলসূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, তথাকথিত হুসাইন সমর্থকদের কেউই অবশিষ্ট নেইতাকে গ্রেপ্তার করে হত্যার আদেশ দিল উবাইদুল্লাহমুসলিম মৃত্যুর আগে হুসাইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান
হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাওকুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো নাকেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছেআমার সাথেও তারা সত্য বলেনি
এদিকে মুসলিম বিন আকীলের মৃত্যু হলেও তার প্রথম চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেনঅনেক সাহাবী তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেনতাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর,আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছিলেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতামআব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেন: হুসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে,যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছলচিঠি পড়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেনপথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের (রা:) গতিরোধ করলতিনি আগত সৈন্যদলকে আল্লাহর দোহাই এবং নিজের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনটি প্রস্তাব দেন
১. তাকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোকতিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করবেনকেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না
২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক
৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোকসেখানে তিনি জিহাদ করবেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা পাহারা দেবেন
ইয়াজিদের সৈন্যরা উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ফয়সালা ছাড়া কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল নাএ কথা শুনে উবাইদুল্লাহর এক সেনাপতি হুর বিন ইয়াজিদ বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত নাএরপরও তারা খুব যৌক্তিক এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়নিসেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন হুসাইন (রা:) ও তাঁর সাথীদের সালাম দিয়ে উবাইদুল্লাহ এর সৈনিকদের সাথে হুসাইনের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন

সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য ছিলহুসাইনের (রা:) এর সাথে ছিলেন
১. আলী ইবনে আবু তালিবের (রা:) এর ছেলেরা আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস
২. হুসাইনের (রা:) নিজের সন্তানেরা আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আকবার এবং আব্দুল্লাহ
৩. হাসানের (রা:) এর ছেলেদের মধ্যে থেকে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম
৪. আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল
৫. আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ
সাহাবা এবং তাবেঈদের এই ছোট্ট দলটির সবাই বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হনঅবশেষে হুসাইন (রা:) ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন নাসীমার বিন যুল জাওশান নামের এক নরপশু বর্শা দিয়ে হুসাইনের (রা:) শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেললশেষে ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নির্ভীক এই বীর আল্লাহর লিখে রাখা ভাগ্যানুযায়ী শহীদ হলেনহুসাইন (রা:) অন্যায় কিছু বলেন নি, অন্যায় কিছু করেন নিতার হত্যাকারী ও হত্যায় সাহায্যকারীদের আল্লাহর ক্রোধ ঘেরাও করুক, এরা ধ্বংস হোক! আল্লাহ্‌ তায়ালা শহীদ হুসাইন (রা:) এবং তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা আচ্ছাদিত করুন
এ ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসের একটি লজ্জাজনক অধ্যায় যা বিশ্বাসঘাতক কুফাবাসী আমাদের উপহার দিয়েছেআল্লাহ যদি চাইতেন তিনি এইসব আজগুবি ঘটনা না ঘটিয়েই হুসাইন (রা:) ও তার সঙ্গীদের রক্ষা করতে পারতেন
হুসাইন (রা:) এর হত্যাকারী কে?
শাইখ ইবনে তাইম্যিয়া বলেন: সকল মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকের ঐকমতে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হুসাইনকে (রা:) হত্যার আদেশ দেয়নিবরং উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে ইরাকে হুসাইনকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বাঁধা দিতে বলেছিলএতটুকুই ছিল তার ভূমিকাবিশুদ্ধ মতে তার কাছে যখন হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার খবর পৌঁছলে সে আফসোস করেছিলসে হুসাইন (রা:) পরিবারের কোন মহিলাকে বন্দী বা দাসীতে পরিণত করেনি; বরং পরিবারের জীবিত সকল সদস্যকে সসম্মানে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল
ইবনে আবী নুম হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: আমি একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের নিকট উপস্থিত ছিলামতখন একজন লোক তাঁকে মশা মারার বিধান জানতে চাইলতিনি তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কোন দেশের লোক? সে বলল: ইরাকেরইবনে উমর (রা:) তখন উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা এই লোকটির প্রতি লক্ষ্য করসে আমাকে মশা মারার হুকুম জিজ্ঞেস করছে, অথচ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতিকে হত্যা করেছেআর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দুজন (হাসান ও হুসাইন) আমার দুনিয়ার দুটি ফুল। (বুখারী, হাদীছ নং- ৫৯৯৪)
হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার পূর্বে ইরাকবাসীদের বলেন:
তোমরা কি চিঠির মাধ্যমে আমাকে এখানে আসতে আহবান করো নি? আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করো নি? অকল্যাণ হোক তোমাদের! যেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ও তোমরা মিলে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এখন সেই অস্ত্র তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে চালাতে যাচ্ছ? মাছি যেমন উড়ে যায় তেমনি তোমরা আমার পক্ষে কৃত বায়াত থেকে সড়ে যাচ্ছ, সকল ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছধ্বংস হোক এই উম্মতের তাগুতের দলেরা!
# আমাদের করণীয়:
মুসলিম হিসেবে আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন, মৃত বা শহীদ ব্যক্তির জন্য বিলাপ না করা, আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ না করাতিনি বলেছেন:
মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন লোহার কাঁটাযুক্ত জামা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে। (সহীহ মুসলিম)
যে কোন বিপদে আমাদের কর্তব্য কুরআনের সেই বাণী স্মরণ করা -
যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)

এই দিনে সিয়াম পালন করাআব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় কিছু ইহুদীদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন: এটি কোন রোজা? তারা উত্তর দিল, এটি একটি পবিত্র দিনএদিনে আল্লাহ বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রুদের কবল থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেনতাই মুসা (আঃ) এ দিন রোজা রেখেছেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: তাদের চেয়ে মুসা (আঃ) এর সাথে আমার সম্পর্ক অধিকসুতরাং তিনি সিয়াম থাকলেন এবং সাহাবীদেরকে সিয়াম রাখার আদেশ দিয়েছেন (সহীহ বুখারী) অপর বর্ণনায় তিনি আগামী বছর নয় তারিখেও সিয়াম থাকার নিয়ত করেছিলেন

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...