ভূমিকা
কারবালার ইতিহাস একটি মুসলিমগণের জন্য মর্মান্তিক ইতিহাস। যে যুদ্বে মুসলিমগণ তাদের একজন শ্রেষ্ঠ তথা হুসায়ন(রাঃ)কে হারান।এই যদ্বু তৎকালীন নিষ্ঠুর শাসক ইয়াজীদ ও মুহাম্মদ(সাঃ) এর দৌহিত্র হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ব বিভিন্ন কারণে সঙ্ঘটিত হয় যে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা... করা হলঃ
কারণ
ইয়াজিদের মনোনয়ন
মুআবিয়া(রাঃ) ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামের ইতিহাসে এক নব অশুভ অধ্যায়ের শুরু হয়। হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর পুত্র ইয়াজিদ ছিল নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক, অধার্মিক ও মদ্যপায়ী।তাঁর ব্যাপারে অনেকেই মদ পান করা, বানর নিয়ে খেলা করা, ফাহেশা কাজ করা এবং আরও বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজের অভিযোগ আনায়ন করে থাকে। হযরত মুয়াবিয়ার সম্মানার্থে অনেকেই বলেন তিনি যখন তার পুত্রকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেন, তখন ইয়াজিদ নাকি এমন দুরাচারী ছিল না। মুয়াবিয়া মৃত্যুর পরই নাকি সে এমন হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) এর প্ররোচনা
এই পাপাচারী ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন মেনে নিলেন না। হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর(রাঃ), আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর(রাঃ), আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর(রাঃ) সমর্থন করেন। অবশ্য কিছুদিন পর শেষোক্ত দুজন ইয়াজিদের প্রলোভনে পড়ে তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন। ইয়াজিদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসাইন এবং আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর মক্কায় চলে যান। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়।এদিকে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) মক্কায় থেকে গেলেন এখানে যাতে করে কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। আর তিনি হুসাইন(রাঃ)কে ইয়াজীদের বিরুদ্বে প্রতিবাদ করার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুললেন।
কূফাবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন
৬০ হিজরিতে ইরাক বাসীদের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, হুসাইন (রা:) ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হাতে বায়আত করেন নি। তারা তাঁর নিকট চিঠি-পত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিল যে ইরাক বাসীরা তাঁর হাতে খিলাফতের বায়আত করতে আগ্রহী। ইয়াজিদকে তারা সমর্থন করেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিল। চিঠির পর চিঠি আসতে লাগল।তখন নুমান ইবন বশীর ছিল কূফার গভর্নর।কেউ তার পিছনে জুমা ও ঈদের সালাত আদায় করতে চাইলো না। এভাবে পাঁচ শতাধিক চিঠি হুসাইন (রা:)এর কাছে এসে জমা হল।ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইনের মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হুসাইনের (রা.) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে। উপরন্তু কুফাবাসীগন ইয়াজিদের অপশাসনের হাত থেকে বাচার জন্যে বারংবার ইমাম হুসাইন-এর সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকলে তিনি তাতে সাড়া দেন। তিনি কূফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
এর আগে হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। মুসলিম কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। গিয়ে দেখলেন,আসলেই লোকেরা হুসাইনকে চাচ্ছে। লোকেরা মুসলিমের হাতেই হুসাইনের পক্ষে বয়াত নেওয়া শুরু করল। হানী বিন উরওয়ার ঘরে বায়আত সম্পন্ন হল।এই সময়ে জানা যায় যে, প্রায় ১৮ হাজার লোক হানী ইবন উরওয়ার ঘরে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।
এই সময়ে নুমান ইবন বশীর এই ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তিনি এদেরকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই অবস্থা হতে মুক্তি হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন। কিন্তু এতে করে কতিপয় ব্যক্তি ক্ষুব্দ্ব হয়ে তার বিরুদ্বে ইয়াজিদের কাছে প্রেরণ করল আর ইয়াজিদ তখন নুমানকে এই পদ হতে অপসারিত করল আর সিরিয়াতে ইয়াজিদের নিকট এই খবর পৌঁছা মাত্র বসরার গভর্ণর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পাঠালো। ইয়াজিদ উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে আদেশ দিলো যে, তিনি যেন কুফা বাসীকে তার বিরুদ্ধে হুসাইনের সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন। সে হুসাইনকে হত্যা করার আদেশ দেন নি।
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করতে লাগলেন এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন। পরিশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, হানী বিন উরওয়ার ঘরে হুসাইনের পক্ষে বায়আত নেওয়া হচ্ছে।
অতঃপর মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে অগ্রসর হয়ে দ্বিপ্রহরের সময় উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময় উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালেন। তিনি এমন ভীতি প্রদর্শন করলেন যে, লোকেরা ইয়াজিদের ধরপাকড় এবং শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে পলায়ন করতে শুরু করল। কুফা বাসীদের চার হাজার লোক পালাতে পালাতে এক পর্যায়ে মুসলিম বিন আকীলের সাথে মাত্র ত্রিশ জন লোক অবশিষ্ট রইল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, হুসাইন প্রেমিক আল্লাহর একজন বান্দাও তার সাথে অবশিষ্ট নেই।এরপরে তারাও পলায়ন করল।এক বৃদ্বার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর তখন একটি ঘোষণা সারা কুফা নগরীতে ঈশার সালাতের পরে ইবন যিয়াদ ঘোষণা করল যে, যে ইবন আঁকিলকে আশ্রয় দিবে তাকে হত্যা করা হোক আর যে তাকে ধরিয়ে দিবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।আর এতে করে সেই বৃদ্বা তার পুত্রেদের হত্যার কথা স্মরণ করল আর এই ভয়ে আকীলকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এবার তাকে গ্রেপ্তার করা হল।মুসলিম ইবন আশআস তাকে যেয়ে গ্রেফতার করল। উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। এরপরে হানীকেও হত্যার নির্দেশ প্রদান করলো। মুসলিম বিন আকীল উবাইদুল্লাহএর নিকট আবেদন করলেন, তাকে যেন হুসাইনের নিকট একটি চিঠি পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এতে উবাইদুল্লাহ রাজী হলেন। চিঠির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ছিল এ রকম:
“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না। কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেয়া এই তথ্য মিথ্যা নয়।”
কারবালার ঘটনা
হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। অতঃপর যুল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফা দিবসে উবাইদুল্লাহ মুসলিমকে হত্যার আদেশ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, মুসলিম ইতিপূর্বে কুফা বাসীদের ওয়াদার উপর ভিত্তি করে হুসাইনকে আগমনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। অনেক সাহাবী তাঁকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইবনে উমার (রাঃ) হুসাইনকে লক্ষ্য করে বলেন: হুসাইন! আমি তোমাকে একটি হাদীছ শুনাবো। জিবরীল (আঃ) আগমন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া এবং আখিরাত- এ দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম হবেন না। তোমাদের ভালর জন্যই আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। হুসাইন তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং যাত্রা বিরতি করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর ইবনে উমর (রাঃ) হুসাইনের সাথে আলিঙ্গন করে বিদায় দিলেন এবং ক্রন্দন করলেন।
সুফীয়ান ছাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম।
বের হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন: হুসাইন তাঁর জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার সময় আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ করে আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন। (ইয়াহ্-ইয়া ইবনে মাঈন সহীস সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছল।সালাবিয়া নামক স্থানে এই চিঠিটি তিনি গ্রহণ করলেন। এছাড়া তিনি যাবালা নামক স্থানে পৌছলেন তখন তার দুধভ্রাতা আব্দল্লাহ ইবন বাকতারের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন যাকে হুসায়ন(রাঃ) একটি চিঠি দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। আর তাকেও উবায়দুল্লাহ বিল্ডিং এর ছাদ হতে ফেলে দেন। এ স্থানে পৌঁছে গিয়ে এই ব্যাপারে অবগত হলেন যে, চিঠির বিষয় অবগত হয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন।
ইবন যিয়াদ বাহিনীর অবরোধ
পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের গতিরোধ করল।জানা যায় যে, আমর ইবন সাদ প্রায় চার হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় হুসাইন(রাঃ)কে মোকাবিলার জন্য। হুসাইন সেখানে অবতরণ করে আল্লাহর দোহাই দিয়ে এবং ইসলামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
১. হুসাইন বিন আলী (রা:) এবং রাসূলের দৌহিত্রকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত গ্রহণ করবেন। কেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না।
২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করবেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
ইয়াজিদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না। তারা বলল: উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন আমরা তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব মানতে রাজী নই। এই কথা শুনে উবাইদুল্লাহএর এক সেনাপতি (হুর বিন ইয়াজিদ) বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা উবাইদুল্লাহএর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই দৃঢ়তা প্রদর্শন করল। সেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন এবং হুসাইন ও তাঁর সাথীদের দিকে গমন করলেন। হুসাইনের সাথীগণ ভাবলেন: তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন। তিনি কাছে গিয়ে সালাম দিলেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে উবাইদুল্লাহএর সৈনিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের দুইজনকে হত্যা করলেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
আশুরার দিন
সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান ছিল। যেখানে হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে মাত্র ৭২ জনের মত সৈন্য ছিল আর ঐদিকে তাদের সৈন্যসংখ্যা প্রায় চার হাজারের মত ছিল। হুসাইনের সামনেই তাঁর সকল সাথী বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হলেন। অবশেষে তিনি ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন না। তিনি ছিলেন সিংহের মত সাহসী বীর। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের মুকাবিলায় তাঁর পক্ষে ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব হল না। কুফা বাসী প্রতিটি সৈনিকের কামনা ছিল সে ছাড়া অন্য কেউ হুসাইনকে হত্যা করে ফেলুক। যাতে তার হাত রাসূলের দৌহিত্রের রক্তে রঙ্গিন না হয়। পরিশেষে নিকৃষ্ট এক ব্যক্তি হুসাইনকে হত্যার জন্য উদ্যত হয়। তার নাম ছিল সীমার বিন যুল জাওশান। সে বর্শা দিয়ে হুসাইনের শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। অতঃপর ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে ৬১ হিজরীর মুহাররাম মাসের ১০ তারিখে আশুরার পবিত্র দিনে ৫৭ বছর বয়সে তিনি শাহাদাত অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেন। আলী (রা:)এর সন্তানদের মধ্যে থেকে আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস।হোসাইনের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আঁকবার এবং আব্দুল্লাহ।হাসানের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম।আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল।আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ। ইতি পূর্বে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের নির্দেশে মুসলিম বিন আকীলকে হত্যা করা হয়। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন। বলা হয় এই সীমারই হুসাইনের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেউ কেই বলেন: সিনান বিন আনাস আন্ নাখঈ নামক এক ব্যক্তি তাঁর মাথা দেহ থেকে আলাদা করে।
হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।
ফলাফল
শীয়া সুন্নি ফেরকার সৃষ্টি:
হুসাইনের এই রক্তপাতকে কিছু লোক কোনমতেই মেনে নিতে পারলো না। তারা বিদ্রোহী হলো। তারা ইয়াজিদ এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলো। এরা ইতিহাসে শীয়া নামে পরিচিত হলো। ১০ই মহররমই এই শিয়াদের জন্ম। মুসলমানরা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। একপক্ষ অসন্তুষ্ট হলেও ইয়াজিদের শাসন মেনে নিলো। তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামে একটা নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। যারা এর কিছুই মানলো না তারা শীয়া-নামীয় আরেক নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। মাযহাবীয় এ বিভক্তি ধীরে ধীরে স্থায়ী রুপ নিলো, যা ইসলামী সমাজকে দুর্বল করে দিলো। কারবালার ঘটনা থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল প্রকটভাবে। কারবালার ঘটনা থেকেই শীয়া মতবাদের সুত্রপাত হয়েছিল।
মদীনার উপর ধ্বংজজ্ঞ
ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: ৬১ হিজরিতে কারবালার ময়দানে শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন(আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের দুই বছর পর মদিনার মুসলমানরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে, তাদেরকে দমন করার জন্য ইয়াজিদ মদিনার হাররা অঞ্চলে একটি সেনাবাহিনী পাঠায়। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ছিল মুসলিম বিন উকবা, সে মদিনার আবাল বৃদ্ধ নারী, পুরুষ শিশুসহ সবাইকে হত্যা করে। আর এই হামলায় শুধুমাত্র যারা মদিনা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল এবং যারা হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন(আ.)-এর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা ব্যতীত সকলেই শাহাদাত বরণ করেছিল।
কাবার উপর হামলা
ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।
ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে।
পারস্যদের উত্থান
কারবালার যুদ্বের ফলে দুই দলের অন্তর্গত লড়াই অর্থাৎ পারস্য ও আরবের লড়াই ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, কারবালার হত্যাকাণ্ড এবং পারস্যে এক জাতীয় উদ্দীপনার জন্মদান করল। এই উদ্দীপনা পরে উমাইয়াদের ধ্বংস সাধনে আব্বাসীয় বংশধরদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল।
পারস্যবাসীর মধ্যে এই সময়ে নতুন করে জাতীয়তাবোধ চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটা শুরু হয়। যার প্রেক্ষিতে তারা খুরাসানের আবূ মুসলিমের বিদ্রোহ, আব্বাসীয়দের উত্থান সর্বশেষে মধ্যযুগীয় শিয়ার বিপ্লবের পটহ আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
ইয়াজিদে পতন
এই যুদ্বের মাধ্যমে মনে করা হয় যে, ইয়াজিদের জয় হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্বের কারণে তার ঠিক ৬৬ বছর পরেই উমাইয়া বংশের উপর চূড়ান্তভাবে অভিশাপ নেমে আসে। তারা হয়ে যায় একেবারেই ছিন্নভিন্ন। সকল উমাইয়া খলীফার লাশ খুঁড়ে বের করা হয় আর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়। আর এমনিভাবে উমাইয়া বংশের লোকদের উপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার ও সীমাহীন নির্যাতন। অন্যদিকে হুসায়ন(রাঃ)কে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইতিহাসে তাঁকে এক বিশেষ ধরনের মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে। আর তাঁর জীবনাদর্শকে লালায়িত করে অনেক সময়ে মুসলিম উম্মাহকে শোষণের বিরুদ্বে সোচ্চার হওয়ার ব্যাপারে আহবান জানানো হয়। আর যখনই ইয়াজিদ কাবা ঘরে হামলা চালায় এমতাবস্থায় সে মারা যায়।
ইয়াজিদের মনোনয়ন
মুআবিয়া(রাঃ) ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামের ইতিহাসে এক নব অশুভ অধ্যায়ের শুরু হয়। হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর পুত্র ইয়াজিদ ছিল নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক, অধার্মিক ও মদ্যপায়ী।তাঁর ব্যাপারে অনেকেই মদ পান করা, বানর নিয়ে খেলা করা, ফাহেশা কাজ করা এবং আরও বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজের অভিযোগ আনায়ন করে থাকে। হযরত মুয়াবিয়ার সম্মানার্থে অনেকেই বলেন তিনি যখন তার পুত্রকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেন, তখন ইয়াজিদ নাকি এমন দুরাচারী ছিল না। মুয়াবিয়া মৃত্যুর পরই নাকি সে এমন হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) এর প্ররোচনা
এই পাপাচারী ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন মেনে নিলেন না। হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর(রাঃ), আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর(রাঃ), আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর(রাঃ) সমর্থন করেন। অবশ্য কিছুদিন পর শেষোক্ত দুজন ইয়াজিদের প্রলোভনে পড়ে তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন। ইয়াজিদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসাইন এবং আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর মক্কায় চলে যান। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়।এদিকে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) মক্কায় থেকে গেলেন এখানে যাতে করে কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। আর তিনি হুসাইন(রাঃ)কে ইয়াজীদের বিরুদ্বে প্রতিবাদ করার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুললেন।
কূফাবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন
৬০ হিজরিতে ইরাক বাসীদের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, হুসাইন (রা:) ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হাতে বায়আত করেন নি। তারা তাঁর নিকট চিঠি-পত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিল যে ইরাক বাসীরা তাঁর হাতে খিলাফতের বায়আত করতে আগ্রহী। ইয়াজিদকে তারা সমর্থন করেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিল। চিঠির পর চিঠি আসতে লাগল।তখন নুমান ইবন বশীর ছিল কূফার গভর্নর।কেউ তার পিছনে জুমা ও ঈদের সালাত আদায় করতে চাইলো না। এভাবে পাঁচ শতাধিক চিঠি হুসাইন (রা:)এর কাছে এসে জমা হল।ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইনের মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হুসাইনের (রা.) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে। উপরন্তু কুফাবাসীগন ইয়াজিদের অপশাসনের হাত থেকে বাচার জন্যে বারংবার ইমাম হুসাইন-এর সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকলে তিনি তাতে সাড়া দেন। তিনি কূফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
এর আগে হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। মুসলিম কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। গিয়ে দেখলেন,আসলেই লোকেরা হুসাইনকে চাচ্ছে। লোকেরা মুসলিমের হাতেই হুসাইনের পক্ষে বয়াত নেওয়া শুরু করল। হানী বিন উরওয়ার ঘরে বায়আত সম্পন্ন হল।এই সময়ে জানা যায় যে, প্রায় ১৮ হাজার লোক হানী ইবন উরওয়ার ঘরে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।
এই সময়ে নুমান ইবন বশীর এই ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তিনি এদেরকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই অবস্থা হতে মুক্তি হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন। কিন্তু এতে করে কতিপয় ব্যক্তি ক্ষুব্দ্ব হয়ে তার বিরুদ্বে ইয়াজিদের কাছে প্রেরণ করল আর ইয়াজিদ তখন নুমানকে এই পদ হতে অপসারিত করল আর সিরিয়াতে ইয়াজিদের নিকট এই খবর পৌঁছা মাত্র বসরার গভর্ণর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পাঠালো। ইয়াজিদ উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে আদেশ দিলো যে, তিনি যেন কুফা বাসীকে তার বিরুদ্ধে হুসাইনের সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন। সে হুসাইনকে হত্যা করার আদেশ দেন নি।
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করতে লাগলেন এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন। পরিশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, হানী বিন উরওয়ার ঘরে হুসাইনের পক্ষে বায়আত নেওয়া হচ্ছে।
অতঃপর মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে অগ্রসর হয়ে দ্বিপ্রহরের সময় উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময় উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালেন। তিনি এমন ভীতি প্রদর্শন করলেন যে, লোকেরা ইয়াজিদের ধরপাকড় এবং শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে পলায়ন করতে শুরু করল। কুফা বাসীদের চার হাজার লোক পালাতে পালাতে এক পর্যায়ে মুসলিম বিন আকীলের সাথে মাত্র ত্রিশ জন লোক অবশিষ্ট রইল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, হুসাইন প্রেমিক আল্লাহর একজন বান্দাও তার সাথে অবশিষ্ট নেই।এরপরে তারাও পলায়ন করল।এক বৃদ্বার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর তখন একটি ঘোষণা সারা কুফা নগরীতে ঈশার সালাতের পরে ইবন যিয়াদ ঘোষণা করল যে, যে ইবন আঁকিলকে আশ্রয় দিবে তাকে হত্যা করা হোক আর যে তাকে ধরিয়ে দিবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।আর এতে করে সেই বৃদ্বা তার পুত্রেদের হত্যার কথা স্মরণ করল আর এই ভয়ে আকীলকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এবার তাকে গ্রেপ্তার করা হল।মুসলিম ইবন আশআস তাকে যেয়ে গ্রেফতার করল। উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। এরপরে হানীকেও হত্যার নির্দেশ প্রদান করলো। মুসলিম বিন আকীল উবাইদুল্লাহএর নিকট আবেদন করলেন, তাকে যেন হুসাইনের নিকট একটি চিঠি পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এতে উবাইদুল্লাহ রাজী হলেন। চিঠির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ছিল এ রকম:
“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না। কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেয়া এই তথ্য মিথ্যা নয়।”
কারবালার ঘটনা
হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। অতঃপর যুল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফা দিবসে উবাইদুল্লাহ মুসলিমকে হত্যার আদেশ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, মুসলিম ইতিপূর্বে কুফা বাসীদের ওয়াদার উপর ভিত্তি করে হুসাইনকে আগমনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। অনেক সাহাবী তাঁকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইবনে উমার (রাঃ) হুসাইনকে লক্ষ্য করে বলেন: হুসাইন! আমি তোমাকে একটি হাদীছ শুনাবো। জিবরীল (আঃ) আগমন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া এবং আখিরাত- এ দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম হবেন না। তোমাদের ভালর জন্যই আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। হুসাইন তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং যাত্রা বিরতি করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর ইবনে উমর (রাঃ) হুসাইনের সাথে আলিঙ্গন করে বিদায় দিলেন এবং ক্রন্দন করলেন।
সুফীয়ান ছাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম।
বের হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন: হুসাইন তাঁর জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার সময় আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ করে আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন। (ইয়াহ্-ইয়া ইবনে মাঈন সহীস সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছল।সালাবিয়া নামক স্থানে এই চিঠিটি তিনি গ্রহণ করলেন। এছাড়া তিনি যাবালা নামক স্থানে পৌছলেন তখন তার দুধভ্রাতা আব্দল্লাহ ইবন বাকতারের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন যাকে হুসায়ন(রাঃ) একটি চিঠি দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। আর তাকেও উবায়দুল্লাহ বিল্ডিং এর ছাদ হতে ফেলে দেন। এ স্থানে পৌঁছে গিয়ে এই ব্যাপারে অবগত হলেন যে, চিঠির বিষয় অবগত হয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন।
ইবন যিয়াদ বাহিনীর অবরোধ
পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের গতিরোধ করল।জানা যায় যে, আমর ইবন সাদ প্রায় চার হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় হুসাইন(রাঃ)কে মোকাবিলার জন্য। হুসাইন সেখানে অবতরণ করে আল্লাহর দোহাই দিয়ে এবং ইসলামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
১. হুসাইন বিন আলী (রা:) এবং রাসূলের দৌহিত্রকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত গ্রহণ করবেন। কেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না।
২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করবেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
ইয়াজিদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না। তারা বলল: উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন আমরা তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব মানতে রাজী নই। এই কথা শুনে উবাইদুল্লাহএর এক সেনাপতি (হুর বিন ইয়াজিদ) বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা উবাইদুল্লাহএর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই দৃঢ়তা প্রদর্শন করল। সেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন এবং হুসাইন ও তাঁর সাথীদের দিকে গমন করলেন। হুসাইনের সাথীগণ ভাবলেন: তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন। তিনি কাছে গিয়ে সালাম দিলেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে উবাইদুল্লাহএর সৈনিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের দুইজনকে হত্যা করলেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
আশুরার দিন
সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান ছিল। যেখানে হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে মাত্র ৭২ জনের মত সৈন্য ছিল আর ঐদিকে তাদের সৈন্যসংখ্যা প্রায় চার হাজারের মত ছিল। হুসাইনের সামনেই তাঁর সকল সাথী বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হলেন। অবশেষে তিনি ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন না। তিনি ছিলেন সিংহের মত সাহসী বীর। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের মুকাবিলায় তাঁর পক্ষে ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব হল না। কুফা বাসী প্রতিটি সৈনিকের কামনা ছিল সে ছাড়া অন্য কেউ হুসাইনকে হত্যা করে ফেলুক। যাতে তার হাত রাসূলের দৌহিত্রের রক্তে রঙ্গিন না হয়। পরিশেষে নিকৃষ্ট এক ব্যক্তি হুসাইনকে হত্যার জন্য উদ্যত হয়। তার নাম ছিল সীমার বিন যুল জাওশান। সে বর্শা দিয়ে হুসাইনের শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। অতঃপর ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে ৬১ হিজরীর মুহাররাম মাসের ১০ তারিখে আশুরার পবিত্র দিনে ৫৭ বছর বয়সে তিনি শাহাদাত অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেন। আলী (রা:)এর সন্তানদের মধ্যে থেকে আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস।হোসাইনের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আঁকবার এবং আব্দুল্লাহ।হাসানের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম।আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল।আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ। ইতি পূর্বে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের নির্দেশে মুসলিম বিন আকীলকে হত্যা করা হয়। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন। বলা হয় এই সীমারই হুসাইনের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেউ কেই বলেন: সিনান বিন আনাস আন্ নাখঈ নামক এক ব্যক্তি তাঁর মাথা দেহ থেকে আলাদা করে।
হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।
ফলাফল
শীয়া সুন্নি ফেরকার সৃষ্টি:
হুসাইনের এই রক্তপাতকে কিছু লোক কোনমতেই মেনে নিতে পারলো না। তারা বিদ্রোহী হলো। তারা ইয়াজিদ এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলো। এরা ইতিহাসে শীয়া নামে পরিচিত হলো। ১০ই মহররমই এই শিয়াদের জন্ম। মুসলমানরা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। একপক্ষ অসন্তুষ্ট হলেও ইয়াজিদের শাসন মেনে নিলো। তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামে একটা নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। যারা এর কিছুই মানলো না তারা শীয়া-নামীয় আরেক নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। মাযহাবীয় এ বিভক্তি ধীরে ধীরে স্থায়ী রুপ নিলো, যা ইসলামী সমাজকে দুর্বল করে দিলো। কারবালার ঘটনা থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল প্রকটভাবে। কারবালার ঘটনা থেকেই শীয়া মতবাদের সুত্রপাত হয়েছিল।
মদীনার উপর ধ্বংজজ্ঞ
ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: ৬১ হিজরিতে কারবালার ময়দানে শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন(আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের দুই বছর পর মদিনার মুসলমানরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে, তাদেরকে দমন করার জন্য ইয়াজিদ মদিনার হাররা অঞ্চলে একটি সেনাবাহিনী পাঠায়। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ছিল মুসলিম বিন উকবা, সে মদিনার আবাল বৃদ্ধ নারী, পুরুষ শিশুসহ সবাইকে হত্যা করে। আর এই হামলায় শুধুমাত্র যারা মদিনা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল এবং যারা হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন(আ.)-এর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা ব্যতীত সকলেই শাহাদাত বরণ করেছিল।
কাবার উপর হামলা
ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।
ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে।
পারস্যদের উত্থান
কারবালার যুদ্বের ফলে দুই দলের অন্তর্গত লড়াই অর্থাৎ পারস্য ও আরবের লড়াই ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, কারবালার হত্যাকাণ্ড এবং পারস্যে এক জাতীয় উদ্দীপনার জন্মদান করল। এই উদ্দীপনা পরে উমাইয়াদের ধ্বংস সাধনে আব্বাসীয় বংশধরদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল।
পারস্যবাসীর মধ্যে এই সময়ে নতুন করে জাতীয়তাবোধ চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটা শুরু হয়। যার প্রেক্ষিতে তারা খুরাসানের আবূ মুসলিমের বিদ্রোহ, আব্বাসীয়দের উত্থান সর্বশেষে মধ্যযুগীয় শিয়ার বিপ্লবের পটহ আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
ইয়াজিদে পতন
এই যুদ্বের মাধ্যমে মনে করা হয় যে, ইয়াজিদের জয় হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্বের কারণে তার ঠিক ৬৬ বছর পরেই উমাইয়া বংশের উপর চূড়ান্তভাবে অভিশাপ নেমে আসে। তারা হয়ে যায় একেবারেই ছিন্নভিন্ন। সকল উমাইয়া খলীফার লাশ খুঁড়ে বের করা হয় আর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়। আর এমনিভাবে উমাইয়া বংশের লোকদের উপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার ও সীমাহীন নির্যাতন। অন্যদিকে হুসায়ন(রাঃ)কে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইতিহাসে তাঁকে এক বিশেষ ধরনের মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে। আর তাঁর জীবনাদর্শকে লালায়িত করে অনেক সময়ে মুসলিম উম্মাহকে শোষণের বিরুদ্বে সোচ্চার হওয়ার ব্যাপারে আহবান জানানো হয়। আর যখনই ইয়াজিদ কাবা ঘরে হামলা চালায় এমতাবস্থায় সে মারা যায়।
No comments:
Post a Comment