তুরস্কের উসমানীয় শাসনব্যবস্থা প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে থেকেই স্বল্প সময়ে একটি বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলতে তারা সক্ষম হন। কিন্তু কালক্রমে কতিপয় দূর্বল শাসকগণের ছোবলে পড়ে এই শক্তি হারাতে থাকে। এর মধ্যে ক্রিমিয়ার যুদ্ব রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যকার সঙ্ঘটিত হয়েছিল যে যুদ্ব এই উসমানীয়দের একেবারে বিপর্যয়ের ...দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। এই যুদ্ব মূলত রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে শুরু হয়। এরপরে তুরস্কের পক্ষে ফ্রান্স ও ব্রিটেন এবং সর্বশেষে অষ্ট্রিয়া এবং সুইডেন যোগদান করে। এই যুদ্বে রাশিয়ার বাহ্যত পরাজয় হলেও এর দ্বারা তুরস্কের অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছিল। এই যুদ্বের ইতিহাস সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
কারণ
এই যুদ্ব রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে সংঘটিত হওয়ার প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১. বিদ্রোহীদের আশ্রয় প্রদান
অষ্ট্রিয়ার অধীনে শাসিত হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের লোকেরা বিদ্রোহ শুরু করলে পরে তা ব্যর্থ হয়। এরপরে অনেক বিদ্রোহী তুরস্কের উসমানীয় রাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন অস্ট্রীয় ও রুশ সরকার ইতিপূর্বে উসমানীয়দের উপর নাখোশ ছিল তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। তাই তারা উসমানীয়দের বারবার চাপ প্রয়োগ দিতে লাগল যাতে করে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু তুরস্ক সরকার তা নাকচ করে দিল। আর এতে করে যুদ্বের দানা বাজতে শুরু করে।
২. ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা
ব্রিটিশ সরকার সর্বদা এই বিদ্রোহের ব্যাপারে বিদ্রোহীদের সমর্থন প্রদান করত। আবার যখন এই বিদ্রোহীদের তুরস্ক আশ্রয় দেওয়া শুরু করে তখন ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পরাস্টোন উসমানীয়দের সমর্থন দেয় আর এতে করে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তারা নাখোশ হল তাদের ব্যাপারে নতুন করে ক্ষতি সাধান করার চিন্তা ভাবনা শুরু করল।
৩. মসজিদুল আল আকসা নিয়ন্ত্রণ
জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আল আকসা খৃস্টানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। তুরস্কের উসমানীয়রা সর্বদা ব্রিটিশদেরকেই প্রাধান্য প্রদান করত সেই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। আর এতে করেও রাশিয়া উসমানীয়দের উপর ক্রুদ্ব হতে থাকে।
৪. গ্রীক অর্থডোক্স ও রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যকার মনোমালিন্য
১৬৯০ সালে মহামতি সুলায়মান এই নীতি অবলম্বণ করেন যে, জেরুজালেমের যাবতীয় গীর্জার দায়-দায়িত্ব রোমান ক্যাথলিকরাই করবে। ১৭৪০ সালে ফরাসি ও উসমানীয়দের মাঝে এই ধরনের চুক্তি সাধিত হয়েছিল। কিন্তু দিন দিন গ্রীক অর্থোডোক্সের সংখ্যায় বৃদ্বি পাওয়ার দরুন রোমান ক্যাথলিকদের গুরুত্ব ক্রমাগত কমতে থাকে। আর এদিকে রাশিয়ার অধিবাসী গ্রীক অর্থোডোক্সের অনুসরণ করত। যার ফলে সেখানে গ্রীক অর্থোডোক্সের সংখ্যা এত বেশী হওয়ার পরেও কেন ফরাসিদের রোমান ক্যাথলিকদের প্রতি এত বেশী গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে তা সহজেই রুশগণ মেনে নিতে পারে নাই। আর এতে করেই রুশ-উসমানীয় এবং রুশ-ফরাসীদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
৫. ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপ
উসমানীয় সম্রাজ্য যখন দূর্বল হয়ে পড়ছিল তখন, তাদের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সরকার বিশেষভাবে হস্তক্ষেপ করত। আর এই বিষয়টি প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া এত সহজে মেনে নিতে পারে নাই। তাই ১৮৫৩ সালের ১৪ জানুয়ারি রুশ প্রধানমন্ত্রী নেসেলরোড তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসেলের কাছে এই চিঠি প্রেরণ করেছিলেন যে, যাতে করে ইংরেজ ও ফরাসীগণ কোনভাবেই উসমানীয়দের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে এতে করে রাশিয়া নতুন করে সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছিল।
৬. কৃষ্ণ সাগরে রণতরী বৃদ্বি
রাশিয়া যখন কৃষ্ণ সাগরে রণতরী বৃদ্বি করতে থাকলেন তখন থেকেই তুরস্ক, ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন করে আতংক সৃষ্টি হতে থাকল যে, যুদ্ব হয়তো বেজেই যাচ্ছে আর কিছুদিনের মধ্যেই।
৭. ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের অপপ্রচার
ব্রিটিশ দূত কন্সট্যান্টিনোপলে এসে রুশ বিরোধী বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রচার করতে থাকে যার ফলে সকলের মাঝেই নতুন করে রুশ বিরোধী মনোভাবে গড়ে উঠেছিল আর রুশ সরকার এতে বিব্রত হতে থাকে।
৮. মন্টিনিগ্রো প্রশ্নে অবস্থান
বলকানের রাজ্য মন্টিনিগ্রোকে পরবর্তীতে বসনিয়ার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর এতে করে মন্টিনিগ্রোর অধিবাসীরা বসনিয়ার দক্ষ প্রাদেশিক শাসক উমর পাশাকে সরানোর ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। এতে করে উমর পাশা ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে পরে অস্ট্রিয়া সরকার এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আর সরাসরি এই চিঠি কন্সট্যান্টিনোপলে এই চিঠি প্রেরণ করলেন যে, অতি শীঘ্রই যদি উমর পাশাকে সরানো না হ তাহলে তারা তার ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তখন অস্ট্রিয়া সরকারকে রুশ সরকার একেবারেই প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন প্রদান করল আর এতে করে যদ্বের দানা বাঁধা করতে থাকে।
৯. উসমানীয়দের দূর্বলতা
উসমানীয় শাসনব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিল। যার ফলে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের প্রভাব এই সম্রাজ্যে ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। আবার মন্টিনিগ্রো বিদ্রোহ দমনের ব্যাপারেও উসমানীয়রা দূর্বল হতে লাগল।তাদের এই নমনীয় আচরণের দ্বারা রাশিয়া বুঝতে পারল যে, উসমানীয়দের শক্তি আর আগের মত নাই তাই তারা তাদের উপর নতুন করে হামলা করার পরিকল্পণা করতে থাকে।
১০.সীমান্ত সমস্যা
অনেক দিন যাবৎ অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সীমান্ত নিয়ে সমস্যা বিরাজমান চলে আসছিল। আর এই কারণে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা কাজ করতে থাকে আর যুদ্বের ব্যাপারে প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করতে থাকে।
১১. রাশিয়ার দাপট বৃদ্বি
ইতিপূর্বে ব্রিটিশ, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনসহ প্রায় সকল ইউরোপীয় দেশসমূহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ও প্রান্তরে তারা উপনিবেশ শাসন ব্যবস্থা স্থাপন করতে সমর্থ হয়। আর অন্যদিকে রাশিয়া এত বিশাল ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আশে পাশের কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও বিশেষ ধরনের অবস্থান ধরে রাখতে পারে নাই। আর ফলে রাশিয়া নতুনভাবে উপনেবেশিক চিন্তা ধারার কথা শুরু করে আর এতে করেই তুরস্কের দিকে তারা তীর নিক্ষেপ করে তাদের শক্তি বৃদ্বি করার ব্যাপারে নকশা প্রণয়ন করল।
১২. প্রত্যক্ষ কারণ
এরপরে রাশিয়ার সেনানায়ক মেনশিকভ ১৮৫৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের সুলতানের কাছে এই দাবী পেশ করে যে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ পাশার পদত্যাগ করতে হবে, গ্রীক খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রুশ-তুরসকের মধ্যকার সামরিক চুক্তি সম্পাদন এবং গ্রীক খৃষ্টানদের উপর রুশদের কর্তৃত্ব। এখানে সুলতান সকল প্রস্তাবসমূহ মেনে নিলেও শেষের বিষয়টি অর্থাৎ, রুশদের কর্তৃত্ব এই বিষয়টি মেনে নিতে পারে নাই। আর এতে করেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে এবং রুশ কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম তুরস্ক-রুশ সীমানার নিকটে অবস্থিত মোলদাভিয়া ও ওয়ালাখিয়ার অংশ দখল করার ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
যুদ্বের সার্বিক অবস্থা
ক্রিমিয়ার যুদ্ব এক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঘটনাবলী সঙ্ঘটিত হতে থাকে। এই সকল বিষয়াবলী সম্পর্কে নিম্নে ধারনা প্রদান করা হলঃ
ব্রিটিশ ও ফরাসি জাহাজ প্রেরণ
যখন রুশ বাহিনী মোল্ডাভিয়া এবং ওয়ালখিয়া আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত গ্রহণ করে তখন ১৮৫৩ সালের ৩০ মে ব্রিটিশ নৌবহর তুর্কী রাজধানীতে অবতরণ করে। জুন মাসের ১৩ তারিখ ব্রিটিশ নৌবহর বেসিকা উপসাগরে উপনীত হয়।
রুশ বাহিনীর দখলে কতিপয় অঞ্চল
রুশ বাহিনী প্রথমে কাউকে ভ্রক্ষেপ না করে মোল্ডাভিয়া এবং ওয়ালখিয়ার বিশেষ কিছু অংশ দখল করে ফেলে।
অস্ট্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ
তখন অস্ট্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্ট বিয়েলের মধ্যস্থতায় ভিয়েনাতে ব্রিটিস,ফরাসী এবং রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয় এবং এই সিদ্বান্ত হয় যে, ১৭৭৪ এবং ১৮৯৩ সালের রুশ-তুর্কী চুক্তি অনুসারে খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। ফ্রান্স আর রাশিয়া ছাড়া কোন রাষ্ট্র সেখানজার খৃষ্টানদের ব্যাপারে সহায়তা করতে পারবে না।
তুরস্কের প্রত্যাখ্যান
কিন্তু তুরস্ক এই চুক্তি মেনে নেয় নাই।কারণ প্রথমটা তাদেরকে এই চুক্তির জন্য আহবান জানানো হয় নাই আর এর আগে এদের মধ্যকার এমন কোন চুক্তি হয় নাই যার দ্বারা রাশিয়ানরা তাদের গ্রীক খৃষ্টানদের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না।
তুরস্কের প্রস্তুতি
এর মধ্যে তুরস্কে রুশ বিরোধী মনোভাব ব্যপক আকার ধারন করতে থাকে সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ(১৮৫৩) তুরস্ক মন্ত্রিসভা রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করে আর ২৯ তারিখ সুলতান তা অনুমোদন করেন। অন্যদিকে রাশিয়ার জার নিকোলাস এবং প্রধানমন্ত্রী নেসেলরোড সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ অস্ট্রীয় সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফে সাথে মিলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে তোলবার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু অস্ট্রিয়া এই যুদ্বে জড়াতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। কারণ অস্ট্রিয়া শুরু হতেই নিরপেক্ষ ছিল। তারা যুদ্ববিরতির ব্যাপারে পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু রাশিয়া ইতিপূর্বে মোল্ডভা এবং ওয়ালখিয়া দখল করে রাখার ফলে এমন এক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, যুদ্ব কোনভাবেই তারা এড়াতে পারে নাই। অক্টোবরের ২৭ তারিখ উমর পাশা একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে দানিয়ুব নদীর তীরে যান এবং রুশ সেনাদলের সম্মুখীন হন। ককেশাস অঞ্চলে এদের মধ্যকার তুমুল লড়াই শুরু হয়।
ইং ফরাসী বাহিনীর প্রবেশ
নভেম্বরের ১৫ তারিখ সেখানে ইং-ফরাসী বাহিনী বসবরাস প্রণালীতে প্রবেশ করে।এদিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যামারস্টোনের প্রভাবে মন্ত্রীসভা রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া তুরস্কের একটি নৌযান সাইনোপ ধ্বংস করে দেওয়ার পরে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয় আর তখন ব্রিটিশরা রুশদের প্রতিহত করার ব্যাপারে বদ্ব পরিকর হয়ে উঠে। এরপরে ১৮৫৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ ইংরেজ-ফরাসী নৌবহর কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করে। ১৮৫৪ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক,ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সাধিত হয় যে, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সর্বদা তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য কাজ করে যাবে। এরপরে ঐ বছরের মার্চের ২৮ তারিখ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সম্মিলতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব ঘোষণা করে।
রাশিয়ার দূর্বলতা
এই য্বদ্বের মধ্যে রাশিয়া সুবিধাজন স্থান দখল করে নিতে পারে নাই একেবারে প্রথম থেকেই। কারণ প্রথমত, ইউরোপের দুটি পরাশক্তি সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্বে অংশগ্রহণ করার জন্য রাশিয়ানরা সঠিকভাবে তাদের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে নাই। আবার অন্যদিকে রাশিয়া এই যুদ্বে মিত্র হিসেবে অষ্ট্রিয়ার সাথে মিলে যুদ্ব করতে সক্ষম হ নাই।অষ্ট্রিয়া বরাবর নিরপেক্ষের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে অষ্ট্রিয়া তাদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্তে এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করে যে, মোল্ডভা ও ওয়ালখিয়া এখন থেকে রুশ সেনার পরিবর্তে অষ্ট্রিয়ার বাহিনী অবস্থান করবে।
মিত্র বাহিনীর হামলা
কিন্তু এরপরেও মিত্র শক্তি এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করল যে, ভবিষৎ যাতে করে রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্বে যুদ্ব না করে তাই তারা ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত নৌবাহিনী ধ্বংস করে নতুনভাবে আক্রমণ করার পরিকল্পণা গ্রহণ করে। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৫০০০০ ব্রিটিশ ও ফরাসী সেনা ক্রিমিয়ায় অবরতণ করে। কারণ এই যুদ্বে যাদের বিরুদ্বেই লড়াই করবে তারাই তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হত।
সঙ্ঘর্ষ
এখানে বড় ধরনের কয়েকটি যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়েছিল। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে আলমা নদীর তীরে মিত্রবাহিনী একটি অগ্রসরমান রুশবাহিনীকে পরাজিত করে। অক্টোবর মাসের মাঝ দিয়ে বিখ্যাত সিবাস্তপোল দুর্গের উপর গোলাবর্ষণ করলেও মিত্রবাহিনী সুবিধা করতে পারে নাই। এই মাসের শেষের দিকে ব্যালাক্লাভার যুদ্বে একটি ক্ষুদ্র ব্রিটিশ বাহিনী অপূর্ব শৌর্য ও সাহসের পরিচয় দিয়ে নভেম্বরের ৫ তারিখ ইংকারম্যানের যুদ্বে রুশ বাহিনী মিত্রবাহিনীর ব্যুহ ভেদ করার ব্যাপারে ব্যর্থ হয়। প্রবল শীত ও চরম অব্যবস্থাকর অবস্থার ফলে মিত্রবাহিনীর বহু সৈন্য মৃত্যু মুখে পতিত হয়। ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের প্রচেষ্টায় অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়।
সিবাস্তক দূর্গ দখল করার পরেও মিত্রবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করতে চাইলেও তা সম্ভবপর আর হয়ে উঠে নাই।
এরপরে অষ্ট্রিয়া এবং সুইডেন মিত্রপক্ষের পক্ষে যোগদান করে। আর এরমধ্যে দিয়ে রাশিয়ান বাহিনী তাদের সৈন্যবাহিনী বিভিন্ন জায়াগা হতে গুটিয়ে নিতে থাকে। এভাবে করে রাশিয়া এই যদ্বে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে থাকে।
প্যারিস সম্মেলন
পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ এ প্যারিসে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা কিনা শান্তি সম্মেলন নামে পরিচিত ছিল। এখানে ফরাসি, ব্রিটেন, তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয় আর রাশিয়া তার পরাজয় মেনে নেয়।
ফলাফল
১. নির্দিষ্ট অঞ্চলে ক্ষমতা খর্ব
প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে যখন ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল তখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই ব্যাপারে সম্মত হয় যে, কৃষ্ণসাগরীয় ও ককেশাসে রাশিয়ার ক্ষমতা খর্ব করা হবে।
২. ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা
আজভ সাগর বেসামরিকরণ করা হয় আর এর দ্বারা ককেশাস অঞ্চলের মধ্যে রাশিয়া ও উসমানীয় সোমরাজয়ের মদ্যে সারকাসিয়া এবং মিংরেলীয়া নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন প্রতিনিধিদের সমর্থন না পাওয়ায় তা পরিত্যক্ত হয় আর এই সমাধানের কোন মীমাংসা আর হয় নাই।
৩. অষ্ট্রিয়ার ক্ষমতা খর্ব
অষ্ট্রিয়া প্রথম হতেই এই যদ্বে নিরপেক্ষের ভূমিকা পালন করতে চায় তাদের স্বার্থের দরুন। পরবর্তিতে যখন দেখা গেল যে, মিত্রবাহিনী একটি সুবিধাজনক অবস্থান সৃষ্টি করেছে তখন তারা মিত্রবাহিনীর পক্ষ অবলম্বণ করে যাতে মোল্ডাভা আর ওয়ালাখিয়ারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা ইসমাইল দূর্গে নিজেদের সেনাদল ও দানিয়ুবে নৌবহর সত্যাপন করার পরিকল্পণা গ্রহণ করে। কিন্তু মিত্রশক্তি তাদেরকে বাঁধা প্রদান করে আর যার ফলে তারা এই সকল অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই।
৪. উসমানীয় সম্রাজ্যে খৃষ্টানদের সুবিদা বৃদ্বি
যেহেতু ব্রিটিশ সেনারা ও তার মিত্রপক্ষের শক্তি তুরস্কের উসমানীয়দের ব্যপকভাবে সাহায্য প্রদান করেছিল তাই তখন তুরস্কের উসমানীয়রা মিত্রশক্তির চাপের মুখে তাদের দেশে খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করার ব্যাপারে আরও বেশী আগ্রহী হয়ে উঠে। ১৮৫৬ সালে হাত ই হুমায়ন নামে একটি সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয় যার দ্বারা অমুসলিম প্রজাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয়।
৫. চাঙ্গা অর্থনৈতিক অবস্থা
কৃষ্ণ সাগরের উপর থেকে যেহেতু সকল ধরনের যুদ্বাজাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাই তাই এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সামুদ্রিক বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে আসে। এতে করে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে ব্যপকভাবে সাফল্য লাভ করতে থাকে।
৬. মোল্ডভা ও ওয়ালাখিয়ার সায়ত্বশাসন
ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরে মোল্ডভা ও ওয়ালখিয়ারের ব্যাপারে এই ধরনের সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় যে, এরা এখন নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে। আর তাদের শাসন কার্যক্রম স্বাধীনভাবে শাসন করতে পারবে। এই দুটি প্রদেশকে একটি অস্থায়ী পরিষদের মাধ্যমে শাসিত হবে বলে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৮৫৯ সালে আলেকজান্দার কুঁজা মোল্ডাভিয়ার শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তাঁকে ওয়াকখিয়ার দিওয়ান শাসক হিসেবে গ্রহণ করে।
৭. সার্বিয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্বি
১৮৫৬সালের প্যারিস চুক্তির ফলে সার্বিয়া এদিন যে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছিল, তার নিশ্চয়তা ইউরোপের উপর অর্পিত হয়। এই শক্তিসমূহের সম্মতি ছাড়া উসমানীয়রা সার্বিয়ার আভ্যন্তরীন ব্যাপারে যেকোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে এই ধরনের চুক্তি সম্পাদিত হয়।
৮. ফ্রান্স-রুশ সম্পর্কোন্নয়ন
এই চুক্তি সাধিত হওয়ার পরে ফ্রান্স আর রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কোন্নয় সাধিত হয়। কারণ রুশ এবং ফরাসি প্রতিনিধিগণ এই ব্যাপারে একমত পোষণ করে যে, মোল্ডভা ও ওয়ালখীয়ার প্রদেশ একত্রীকরণ হবে। আর এই কারণই ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্টাটাগার্ট এ জার ২য় আলেকজান্দার ও তৃতীয় নেপোলিয়ানের মাঝে সম্প্রীতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ব্রিটিশ, অষ্ট্রিয়া এবং উসমানীয়রা এর বিরোধী ছিল।
৯. রুমানিয়ার জন্ম
প্রথম হতেই অস্ট্রিয়া,ব্রিটেন আর তুরস্ক মোল্ডভা এবং ওয়ালখিতারের একত্রীকরণের ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু ফ্রান্স আর রুশ প্রচেষ্টার ফলে তাদেরকে একত্রিত করা হয় এবং এর আলোকে এরা একত্রিত হয়েই রুমানিয়া রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
১০. বুলগেরিয়ানদের চিন্তা ধারা
যখন আলাদাভাবে রুমানিয়া রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটল এই ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরে তখন বুলগেরীয় জাতির মধ্যে নতুন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মনোভাবে গড়ে উঠে এবং জাতীয়তাবাদ চিন্তাধারার বিকাশ তাদের মধ্যেও সাধিত হয়েছিল।
১১. উসমানীয় বিরোধী অবস্থা
ক্রিমিয়ার যুদ্বের সময় হতে সমগ্র অঞ্চলের লোকেরা এই বিষয়টি উপলব্দ্বি করতে থাকে যে, তুরস্ক সালানাত অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়েছে তাই ভিতরের ও বাহিরের শক্তির লোকেরা এই বিষয়টি সহজে অনুধাবন করতে থাকে যে, এই সময়ে এখন তাদেরকে সঙ্ঘবদ্বভাবে লড়াইয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সালানত হতে সব কিছু মুক্ত করতে হবে। আর তখন থেকেই সার্বিয়া মন্টিনিগ্রো একইভাবে গ্রীক সার্বিয়দের মাঝে চুক্তি হতে থাকল যে, কীভাবে করে তারা তাদের স্বকীয়তাবোধ সৃষ্টি করতে পারবে। এতে করে নতুনভাবে বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটতে থাকে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উসমানীয়দের এই যুদ্বের দ্বারা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেলেও তা ভবিষৎ এর জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করেছিল। তুরস্ক পর্যায়ক্রমে একের পর একেকটি অঞ্চল হারাতে থাকে। আর এমনিভাবে তুরস্ক একেবারে দূর্বল রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। অন্যদিকে এই যুদ্বের দ্বারা ব্রিটেন,ফ্রান্স,অস্ট্রিয়া বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছিল কারণ এর দ্বারা তাদের স্বার্থ খুব ভালমত হাসিল হয়েছিল।
এই যুদ্ব রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে সংঘটিত হওয়ার প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১. বিদ্রোহীদের আশ্রয় প্রদান
অষ্ট্রিয়ার অধীনে শাসিত হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের লোকেরা বিদ্রোহ শুরু করলে পরে তা ব্যর্থ হয়। এরপরে অনেক বিদ্রোহী তুরস্কের উসমানীয় রাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন অস্ট্রীয় ও রুশ সরকার ইতিপূর্বে উসমানীয়দের উপর নাখোশ ছিল তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। তাই তারা উসমানীয়দের বারবার চাপ প্রয়োগ দিতে লাগল যাতে করে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু তুরস্ক সরকার তা নাকচ করে দিল। আর এতে করে যুদ্বের দানা বাজতে শুরু করে।
২. ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা
ব্রিটিশ সরকার সর্বদা এই বিদ্রোহের ব্যাপারে বিদ্রোহীদের সমর্থন প্রদান করত। আবার যখন এই বিদ্রোহীদের তুরস্ক আশ্রয় দেওয়া শুরু করে তখন ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পরাস্টোন উসমানীয়দের সমর্থন দেয় আর এতে করে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তারা নাখোশ হল তাদের ব্যাপারে নতুন করে ক্ষতি সাধান করার চিন্তা ভাবনা শুরু করল।
৩. মসজিদুল আল আকসা নিয়ন্ত্রণ
জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আল আকসা খৃস্টানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। তুরস্কের উসমানীয়রা সর্বদা ব্রিটিশদেরকেই প্রাধান্য প্রদান করত সেই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। আর এতে করেও রাশিয়া উসমানীয়দের উপর ক্রুদ্ব হতে থাকে।
৪. গ্রীক অর্থডোক্স ও রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যকার মনোমালিন্য
১৬৯০ সালে মহামতি সুলায়মান এই নীতি অবলম্বণ করেন যে, জেরুজালেমের যাবতীয় গীর্জার দায়-দায়িত্ব রোমান ক্যাথলিকরাই করবে। ১৭৪০ সালে ফরাসি ও উসমানীয়দের মাঝে এই ধরনের চুক্তি সাধিত হয়েছিল। কিন্তু দিন দিন গ্রীক অর্থোডোক্সের সংখ্যায় বৃদ্বি পাওয়ার দরুন রোমান ক্যাথলিকদের গুরুত্ব ক্রমাগত কমতে থাকে। আর এদিকে রাশিয়ার অধিবাসী গ্রীক অর্থোডোক্সের অনুসরণ করত। যার ফলে সেখানে গ্রীক অর্থোডোক্সের সংখ্যা এত বেশী হওয়ার পরেও কেন ফরাসিদের রোমান ক্যাথলিকদের প্রতি এত বেশী গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে তা সহজেই রুশগণ মেনে নিতে পারে নাই। আর এতে করেই রুশ-উসমানীয় এবং রুশ-ফরাসীদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
৫. ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপ
উসমানীয় সম্রাজ্য যখন দূর্বল হয়ে পড়ছিল তখন, তাদের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সরকার বিশেষভাবে হস্তক্ষেপ করত। আর এই বিষয়টি প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া এত সহজে মেনে নিতে পারে নাই। তাই ১৮৫৩ সালের ১৪ জানুয়ারি রুশ প্রধানমন্ত্রী নেসেলরোড তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসেলের কাছে এই চিঠি প্রেরণ করেছিলেন যে, যাতে করে ইংরেজ ও ফরাসীগণ কোনভাবেই উসমানীয়দের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে এতে করে রাশিয়া নতুন করে সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছিল।
৬. কৃষ্ণ সাগরে রণতরী বৃদ্বি
রাশিয়া যখন কৃষ্ণ সাগরে রণতরী বৃদ্বি করতে থাকলেন তখন থেকেই তুরস্ক, ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন করে আতংক সৃষ্টি হতে থাকল যে, যুদ্ব হয়তো বেজেই যাচ্ছে আর কিছুদিনের মধ্যেই।
৭. ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের অপপ্রচার
ব্রিটিশ দূত কন্সট্যান্টিনোপলে এসে রুশ বিরোধী বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রচার করতে থাকে যার ফলে সকলের মাঝেই নতুন করে রুশ বিরোধী মনোভাবে গড়ে উঠেছিল আর রুশ সরকার এতে বিব্রত হতে থাকে।
৮. মন্টিনিগ্রো প্রশ্নে অবস্থান
বলকানের রাজ্য মন্টিনিগ্রোকে পরবর্তীতে বসনিয়ার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর এতে করে মন্টিনিগ্রোর অধিবাসীরা বসনিয়ার দক্ষ প্রাদেশিক শাসক উমর পাশাকে সরানোর ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। এতে করে উমর পাশা ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে পরে অস্ট্রিয়া সরকার এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আর সরাসরি এই চিঠি কন্সট্যান্টিনোপলে এই চিঠি প্রেরণ করলেন যে, অতি শীঘ্রই যদি উমর পাশাকে সরানো না হ তাহলে তারা তার ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তখন অস্ট্রিয়া সরকারকে রুশ সরকার একেবারেই প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন প্রদান করল আর এতে করে যদ্বের দানা বাঁধা করতে থাকে।
৯. উসমানীয়দের দূর্বলতা
উসমানীয় শাসনব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিল। যার ফলে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের প্রভাব এই সম্রাজ্যে ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। আবার মন্টিনিগ্রো বিদ্রোহ দমনের ব্যাপারেও উসমানীয়রা দূর্বল হতে লাগল।তাদের এই নমনীয় আচরণের দ্বারা রাশিয়া বুঝতে পারল যে, উসমানীয়দের শক্তি আর আগের মত নাই তাই তারা তাদের উপর নতুন করে হামলা করার পরিকল্পণা করতে থাকে।
১০.সীমান্ত সমস্যা
অনেক দিন যাবৎ অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সীমান্ত নিয়ে সমস্যা বিরাজমান চলে আসছিল। আর এই কারণে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা কাজ করতে থাকে আর যুদ্বের ব্যাপারে প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করতে থাকে।
১১. রাশিয়ার দাপট বৃদ্বি
ইতিপূর্বে ব্রিটিশ, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনসহ প্রায় সকল ইউরোপীয় দেশসমূহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ও প্রান্তরে তারা উপনিবেশ শাসন ব্যবস্থা স্থাপন করতে সমর্থ হয়। আর অন্যদিকে রাশিয়া এত বিশাল ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আশে পাশের কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও বিশেষ ধরনের অবস্থান ধরে রাখতে পারে নাই। আর ফলে রাশিয়া নতুনভাবে উপনেবেশিক চিন্তা ধারার কথা শুরু করে আর এতে করেই তুরস্কের দিকে তারা তীর নিক্ষেপ করে তাদের শক্তি বৃদ্বি করার ব্যাপারে নকশা প্রণয়ন করল।
১২. প্রত্যক্ষ কারণ
এরপরে রাশিয়ার সেনানায়ক মেনশিকভ ১৮৫৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের সুলতানের কাছে এই দাবী পেশ করে যে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ পাশার পদত্যাগ করতে হবে, গ্রীক খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রুশ-তুরসকের মধ্যকার সামরিক চুক্তি সম্পাদন এবং গ্রীক খৃষ্টানদের উপর রুশদের কর্তৃত্ব। এখানে সুলতান সকল প্রস্তাবসমূহ মেনে নিলেও শেষের বিষয়টি অর্থাৎ, রুশদের কর্তৃত্ব এই বিষয়টি মেনে নিতে পারে নাই। আর এতে করেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে এবং রুশ কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম তুরস্ক-রুশ সীমানার নিকটে অবস্থিত মোলদাভিয়া ও ওয়ালাখিয়ার অংশ দখল করার ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
যুদ্বের সার্বিক অবস্থা
ক্রিমিয়ার যুদ্ব এক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঘটনাবলী সঙ্ঘটিত হতে থাকে। এই সকল বিষয়াবলী সম্পর্কে নিম্নে ধারনা প্রদান করা হলঃ
ব্রিটিশ ও ফরাসি জাহাজ প্রেরণ
যখন রুশ বাহিনী মোল্ডাভিয়া এবং ওয়ালখিয়া আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত গ্রহণ করে তখন ১৮৫৩ সালের ৩০ মে ব্রিটিশ নৌবহর তুর্কী রাজধানীতে অবতরণ করে। জুন মাসের ১৩ তারিখ ব্রিটিশ নৌবহর বেসিকা উপসাগরে উপনীত হয়।
রুশ বাহিনীর দখলে কতিপয় অঞ্চল
রুশ বাহিনী প্রথমে কাউকে ভ্রক্ষেপ না করে মোল্ডাভিয়া এবং ওয়ালখিয়ার বিশেষ কিছু অংশ দখল করে ফেলে।
অস্ট্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ
তখন অস্ট্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্ট বিয়েলের মধ্যস্থতায় ভিয়েনাতে ব্রিটিস,ফরাসী এবং রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয় এবং এই সিদ্বান্ত হয় যে, ১৭৭৪ এবং ১৮৯৩ সালের রুশ-তুর্কী চুক্তি অনুসারে খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। ফ্রান্স আর রাশিয়া ছাড়া কোন রাষ্ট্র সেখানজার খৃষ্টানদের ব্যাপারে সহায়তা করতে পারবে না।
তুরস্কের প্রত্যাখ্যান
কিন্তু তুরস্ক এই চুক্তি মেনে নেয় নাই।কারণ প্রথমটা তাদেরকে এই চুক্তির জন্য আহবান জানানো হয় নাই আর এর আগে এদের মধ্যকার এমন কোন চুক্তি হয় নাই যার দ্বারা রাশিয়ানরা তাদের গ্রীক খৃষ্টানদের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না।
তুরস্কের প্রস্তুতি
এর মধ্যে তুরস্কে রুশ বিরোধী মনোভাব ব্যপক আকার ধারন করতে থাকে সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ(১৮৫৩) তুরস্ক মন্ত্রিসভা রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করে আর ২৯ তারিখ সুলতান তা অনুমোদন করেন। অন্যদিকে রাশিয়ার জার নিকোলাস এবং প্রধানমন্ত্রী নেসেলরোড সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ অস্ট্রীয় সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফে সাথে মিলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে তোলবার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু অস্ট্রিয়া এই যুদ্বে জড়াতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। কারণ অস্ট্রিয়া শুরু হতেই নিরপেক্ষ ছিল। তারা যুদ্ববিরতির ব্যাপারে পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু রাশিয়া ইতিপূর্বে মোল্ডভা এবং ওয়ালখিয়া দখল করে রাখার ফলে এমন এক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, যুদ্ব কোনভাবেই তারা এড়াতে পারে নাই। অক্টোবরের ২৭ তারিখ উমর পাশা একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে দানিয়ুব নদীর তীরে যান এবং রুশ সেনাদলের সম্মুখীন হন। ককেশাস অঞ্চলে এদের মধ্যকার তুমুল লড়াই শুরু হয়।
ইং ফরাসী বাহিনীর প্রবেশ
নভেম্বরের ১৫ তারিখ সেখানে ইং-ফরাসী বাহিনী বসবরাস প্রণালীতে প্রবেশ করে।এদিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যামারস্টোনের প্রভাবে মন্ত্রীসভা রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া তুরস্কের একটি নৌযান সাইনোপ ধ্বংস করে দেওয়ার পরে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয় আর তখন ব্রিটিশরা রুশদের প্রতিহত করার ব্যাপারে বদ্ব পরিকর হয়ে উঠে। এরপরে ১৮৫৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ ইংরেজ-ফরাসী নৌবহর কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করে। ১৮৫৪ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক,ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সাধিত হয় যে, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সর্বদা তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য কাজ করে যাবে। এরপরে ঐ বছরের মার্চের ২৮ তারিখ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সম্মিলতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব ঘোষণা করে।
রাশিয়ার দূর্বলতা
এই য্বদ্বের মধ্যে রাশিয়া সুবিধাজন স্থান দখল করে নিতে পারে নাই একেবারে প্রথম থেকেই। কারণ প্রথমত, ইউরোপের দুটি পরাশক্তি সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্বে অংশগ্রহণ করার জন্য রাশিয়ানরা সঠিকভাবে তাদের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে নাই। আবার অন্যদিকে রাশিয়া এই যুদ্বে মিত্র হিসেবে অষ্ট্রিয়ার সাথে মিলে যুদ্ব করতে সক্ষম হ নাই।অষ্ট্রিয়া বরাবর নিরপেক্ষের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে অষ্ট্রিয়া তাদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্তে এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করে যে, মোল্ডভা ও ওয়ালখিয়া এখন থেকে রুশ সেনার পরিবর্তে অষ্ট্রিয়ার বাহিনী অবস্থান করবে।
মিত্র বাহিনীর হামলা
কিন্তু এরপরেও মিত্র শক্তি এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করল যে, ভবিষৎ যাতে করে রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্বে যুদ্ব না করে তাই তারা ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত নৌবাহিনী ধ্বংস করে নতুনভাবে আক্রমণ করার পরিকল্পণা গ্রহণ করে। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৫০০০০ ব্রিটিশ ও ফরাসী সেনা ক্রিমিয়ায় অবরতণ করে। কারণ এই যুদ্বে যাদের বিরুদ্বেই লড়াই করবে তারাই তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হত।
সঙ্ঘর্ষ
এখানে বড় ধরনের কয়েকটি যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়েছিল। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে আলমা নদীর তীরে মিত্রবাহিনী একটি অগ্রসরমান রুশবাহিনীকে পরাজিত করে। অক্টোবর মাসের মাঝ দিয়ে বিখ্যাত সিবাস্তপোল দুর্গের উপর গোলাবর্ষণ করলেও মিত্রবাহিনী সুবিধা করতে পারে নাই। এই মাসের শেষের দিকে ব্যালাক্লাভার যুদ্বে একটি ক্ষুদ্র ব্রিটিশ বাহিনী অপূর্ব শৌর্য ও সাহসের পরিচয় দিয়ে নভেম্বরের ৫ তারিখ ইংকারম্যানের যুদ্বে রুশ বাহিনী মিত্রবাহিনীর ব্যুহ ভেদ করার ব্যাপারে ব্যর্থ হয়। প্রবল শীত ও চরম অব্যবস্থাকর অবস্থার ফলে মিত্রবাহিনীর বহু সৈন্য মৃত্যু মুখে পতিত হয়। ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের প্রচেষ্টায় অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়।
সিবাস্তক দূর্গ দখল করার পরেও মিত্রবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করতে চাইলেও তা সম্ভবপর আর হয়ে উঠে নাই।
এরপরে অষ্ট্রিয়া এবং সুইডেন মিত্রপক্ষের পক্ষে যোগদান করে। আর এরমধ্যে দিয়ে রাশিয়ান বাহিনী তাদের সৈন্যবাহিনী বিভিন্ন জায়াগা হতে গুটিয়ে নিতে থাকে। এভাবে করে রাশিয়া এই যদ্বে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে থাকে।
প্যারিস সম্মেলন
পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ এ প্যারিসে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা কিনা শান্তি সম্মেলন নামে পরিচিত ছিল। এখানে ফরাসি, ব্রিটেন, তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয় আর রাশিয়া তার পরাজয় মেনে নেয়।
ফলাফল
১. নির্দিষ্ট অঞ্চলে ক্ষমতা খর্ব
প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে যখন ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল তখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই ব্যাপারে সম্মত হয় যে, কৃষ্ণসাগরীয় ও ককেশাসে রাশিয়ার ক্ষমতা খর্ব করা হবে।
২. ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা
আজভ সাগর বেসামরিকরণ করা হয় আর এর দ্বারা ককেশাস অঞ্চলের মধ্যে রাশিয়া ও উসমানীয় সোমরাজয়ের মদ্যে সারকাসিয়া এবং মিংরেলীয়া নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন প্রতিনিধিদের সমর্থন না পাওয়ায় তা পরিত্যক্ত হয় আর এই সমাধানের কোন মীমাংসা আর হয় নাই।
৩. অষ্ট্রিয়ার ক্ষমতা খর্ব
অষ্ট্রিয়া প্রথম হতেই এই যদ্বে নিরপেক্ষের ভূমিকা পালন করতে চায় তাদের স্বার্থের দরুন। পরবর্তিতে যখন দেখা গেল যে, মিত্রবাহিনী একটি সুবিধাজনক অবস্থান সৃষ্টি করেছে তখন তারা মিত্রবাহিনীর পক্ষ অবলম্বণ করে যাতে মোল্ডাভা আর ওয়ালাখিয়ারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা ইসমাইল দূর্গে নিজেদের সেনাদল ও দানিয়ুবে নৌবহর সত্যাপন করার পরিকল্পণা গ্রহণ করে। কিন্তু মিত্রশক্তি তাদেরকে বাঁধা প্রদান করে আর যার ফলে তারা এই সকল অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই।
৪. উসমানীয় সম্রাজ্যে খৃষ্টানদের সুবিদা বৃদ্বি
যেহেতু ব্রিটিশ সেনারা ও তার মিত্রপক্ষের শক্তি তুরস্কের উসমানীয়দের ব্যপকভাবে সাহায্য প্রদান করেছিল তাই তখন তুরস্কের উসমানীয়রা মিত্রশক্তির চাপের মুখে তাদের দেশে খৃষ্টানদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করার ব্যাপারে আরও বেশী আগ্রহী হয়ে উঠে। ১৮৫৬ সালে হাত ই হুমায়ন নামে একটি সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয় যার দ্বারা অমুসলিম প্রজাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয়।
৫. চাঙ্গা অর্থনৈতিক অবস্থা
কৃষ্ণ সাগরের উপর থেকে যেহেতু সকল ধরনের যুদ্বাজাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাই তাই এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সামুদ্রিক বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে আসে। এতে করে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে ব্যপকভাবে সাফল্য লাভ করতে থাকে।
৬. মোল্ডভা ও ওয়ালাখিয়ার সায়ত্বশাসন
ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরে মোল্ডভা ও ওয়ালখিয়ারের ব্যাপারে এই ধরনের সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় যে, এরা এখন নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে। আর তাদের শাসন কার্যক্রম স্বাধীনভাবে শাসন করতে পারবে। এই দুটি প্রদেশকে একটি অস্থায়ী পরিষদের মাধ্যমে শাসিত হবে বলে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৮৫৯ সালে আলেকজান্দার কুঁজা মোল্ডাভিয়ার শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তাঁকে ওয়াকখিয়ার দিওয়ান শাসক হিসেবে গ্রহণ করে।
৭. সার্বিয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্বি
১৮৫৬সালের প্যারিস চুক্তির ফলে সার্বিয়া এদিন যে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছিল, তার নিশ্চয়তা ইউরোপের উপর অর্পিত হয়। এই শক্তিসমূহের সম্মতি ছাড়া উসমানীয়রা সার্বিয়ার আভ্যন্তরীন ব্যাপারে যেকোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে এই ধরনের চুক্তি সম্পাদিত হয়।
৮. ফ্রান্স-রুশ সম্পর্কোন্নয়ন
এই চুক্তি সাধিত হওয়ার পরে ফ্রান্স আর রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কোন্নয় সাধিত হয়। কারণ রুশ এবং ফরাসি প্রতিনিধিগণ এই ব্যাপারে একমত পোষণ করে যে, মোল্ডভা ও ওয়ালখীয়ার প্রদেশ একত্রীকরণ হবে। আর এই কারণই ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্টাটাগার্ট এ জার ২য় আলেকজান্দার ও তৃতীয় নেপোলিয়ানের মাঝে সম্প্রীতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ব্রিটিশ, অষ্ট্রিয়া এবং উসমানীয়রা এর বিরোধী ছিল।
৯. রুমানিয়ার জন্ম
প্রথম হতেই অস্ট্রিয়া,ব্রিটেন আর তুরস্ক মোল্ডভা এবং ওয়ালখিতারের একত্রীকরণের ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু ফ্রান্স আর রুশ প্রচেষ্টার ফলে তাদেরকে একত্রিত করা হয় এবং এর আলোকে এরা একত্রিত হয়েই রুমানিয়া রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
১০. বুলগেরিয়ানদের চিন্তা ধারা
যখন আলাদাভাবে রুমানিয়া রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটল এই ক্রিমিয়ার যুদ্বের পরে তখন বুলগেরীয় জাতির মধ্যে নতুন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মনোভাবে গড়ে উঠে এবং জাতীয়তাবাদ চিন্তাধারার বিকাশ তাদের মধ্যেও সাধিত হয়েছিল।
১১. উসমানীয় বিরোধী অবস্থা
ক্রিমিয়ার যুদ্বের সময় হতে সমগ্র অঞ্চলের লোকেরা এই বিষয়টি উপলব্দ্বি করতে থাকে যে, তুরস্ক সালানাত অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়েছে তাই ভিতরের ও বাহিরের শক্তির লোকেরা এই বিষয়টি সহজে অনুধাবন করতে থাকে যে, এই সময়ে এখন তাদেরকে সঙ্ঘবদ্বভাবে লড়াইয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সালানত হতে সব কিছু মুক্ত করতে হবে। আর তখন থেকেই সার্বিয়া মন্টিনিগ্রো একইভাবে গ্রীক সার্বিয়দের মাঝে চুক্তি হতে থাকল যে, কীভাবে করে তারা তাদের স্বকীয়তাবোধ সৃষ্টি করতে পারবে। এতে করে নতুনভাবে বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটতে থাকে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উসমানীয়দের এই যুদ্বের দ্বারা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেলেও তা ভবিষৎ এর জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করেছিল। তুরস্ক পর্যায়ক্রমে একের পর একেকটি অঞ্চল হারাতে থাকে। আর এমনিভাবে তুরস্ক একেবারে দূর্বল রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। অন্যদিকে এই যুদ্বের দ্বারা ব্রিটেন,ফ্রান্স,অস্ট্রিয়া বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছিল কারণ এর দ্বারা তাদের স্বার্থ খুব ভালমত হাসিল হয়েছিল।
আলহামদুলিল্লাহ
ReplyDelete