ত্রিকোণমিতিক ধারণাঃ
আমরা প্রতিনিয়ত ত্রিভূজ, বিশেষ করে সমকোণী ত্রিভূজের ব্যবহার করে থাকি। আমাদের চারিদিকে পরিবেশ নানা উদাহারণ দেখা যায় যেখানে সমকোণী ত্রিভূজ গঠন করা যায়। সেই প্রাচীন যুগে মানুষ জ্যামিতির সাহায্যে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নদীর প্রস্থ নির্ণয় করার কৌশল শিখেছিল। গাছে না উঠেও গাছের ছায়ায় সঙ্গে লাঠির তুলনা করে নিখুঁতভাবে গাছের উচ্চতা মাপতে শিখেছিল। এই গাণিতিক কৌশল শেখানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে ত্রিকোণমিতির নামে গণিতের এক বিশেষ শাখা।
Trigonometry শব্দটি গ্রিক শব্দ tri (অর্থ তিন) gon (অর্থ ধার) metron (অর্থ পরিমাপ)দ্বারা গঠিত। ত্রিকোণমিতিতে ত্রিভুজের বাহু ও কোণের মধ্যের সম্পর্কের বিষয়ে পাঠদান করা হয়।
চিত্র থেকে,
sin θ = OP / PM [ θ কোণের সাইন (sine)]
cos θ = OP / OM [ θ কোণের কোসাইন (cosine)]
tan θ = OM / PM [ θ কোণের ট্যানজেন্ট (tangent) ]
এবং এদের বিপরীত অনুপাত
cosec θ = 1 / sin θ [ θ কোণের কোসেক্যান্ট cosecant ]
sec θ = 1 / sin θ [ θ কোণের সেক্যান্ট cosecant ]
cotθ = 1 / tan θ [ θ কোণের কোট্যানজেন্ট cotangent ]
সমকোণী ত্রিভূজে তিনটি বাহুর আলাদা আলাদা নাম থাকে। দুটি বাহু যার মধ্যবর্তী কোণ একসমকোণ বা ৯০৹ তাদেরক একটিকে ভূমি এবং অপরটিকে লম্ব বলে। সমকোণী ত্রিভূজের অপর বাহুকে অতিভূজ বলে।
সুতরাং সাইনের অনুপাত = লম্ব / অতিভূজ
কোসাইনের অনুপাত সাইনের বিপরীত অর্থাৎ কোসেক্যান্ট = অতিভূজ / লম্ব
** মনে রাখার উপায় সাগরে লবণ আছে
কোসাইনের অনুপাত = ভূমি / অতিভূজ এর বিপরীত সেক্যান্ট = অতিভূজ / ভূমি
** মনে রাখায় উপায় কবরে ভূত আছে
ট্যানজেন্ট = লম্ব / ভূমি এবং কোট্যানজেন্ট = ভূমি / লম্ব
** মনে রাখার উপায় ট্যারা লম্বা ভূত
প্রাপ্ত সূত্র সমূহঃ
উপরের সূত্রগুলোর মাধ্যমে ত্রিভূজের বিভিন্ন বাহুর দৈর্ঘ্য, অন্তর্ভূক্ত কোণ, ত্রিভূজের ক্ষেত্রফল ইত্যাদি নির্ণয় করা যাবে এ সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যাগুলোর সমাধাণ করা যাবে।
ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর বিভিন্ন ডিগ্রীতে মানসমূহঃ
ত্রিকোণমিতিক সংক্রান্ত (দূরত্ব ও উচ্চতা)
অতি প্রাচীন কাল থেকেই দূরবর্তী কোনও বস্তুর উচ্চতা ও দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের প্রয়োগ করা হয়। বর্তমান যুগে ত্রিকোণমিতিক ব্যবহারের অনুপাতে বেড়ে যাওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। যে সব পাহাড়, পর্বত, টাওয়ার, গাছের উচ্চতা, নদ-নদীর প্রস্থ সহজে মাপা যায়না সে সব ক্ষেত্রে ত্রিকোণমিতির সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।
সমকোণী ত্রিভূজের বিশেষ ক্ষেত্রঃ
১) 30° কোণে অংকনের ক্ষেত্রে ভূমি > লম্ব হবে।
২) 45° কোণে অংকনের ক্ষেত্রে ভূমি = লম্ব হবে।
৩) 60° কোণে অংকনের ক্ষেত্রে ভূমি < লম্ব হবে।
উদাহারণঃ ১
একটি টাওয়ারের পাদদেশ থেকে 75 মিটার দূরে ভূতলস্থ কোনো বিন্দুতে টাওয়ারের শীর্ষে কোণ 30° হলে,টাওয়ারের উচ্চতা নির্ণয় কর।
সমাধানঃ
মনেকরি, টাওয়ারের উচ্চতা AB = h মিটার।
টাওয়ারের পাদদেশ থেকে BC = 75 মিটার দূরে ভূতলস্থ C
বিন্দুতে টাওয়ারের শীর্ষ A বিন্দুতে কোণ ACB = 30°
সমকোণী ত্রিভুজ ABC থেকে পাই,
tan ACB = লম্ব / ভূমি = AB /BC = h/75
বা, tan 30°= h/75
বা, 1/3½ = h/75 [3½ মানে 3 এর বর্গমূল]
h = 43.301 মিটার (প্রায়)
উদাহারণঃ ২
18 মিটার লম্বা একটি মই একটি দেওয়ালের ছাদ বরাবর ঠেস দিয়ে ভূমির সাথে 45° কোণ উতপন্ন করে। দেয়ালটির উচ্চতা নির্ণয় কর।
সমাধানঃ
মনেকরি, দেওয়ালটির উচ্চতা AB = h মিটার,
মইটির দৈর্ঘ্য AC = 18 মিটার এবং ভূমির সাথে
কোণ ACB = 45°
ত্রিভুজ ABC থেকে পাই,
Sin ACB = লম্ব / অতিভূজ = AB / AC = h/18
বা, 1/ 2½ = h/18
বা, h = 12.728 মিটার (প্রায়)
উদাহারণঃ ৩
একটি খুঁটি এমনভাবে ভেঙ্গে গেল যে, তার ভাঙ্গা অংশ দন্ডায়মান
অংশের সাথে 30°কোণ উৎপন্ন করে খুঁটির গোড়া থেকে 10 মিটার
দূরে মাটিতে স্পর্শ করে। খুঁটির দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর।
সমাধানঃ
মনেকরি খুঁটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য AB = h মিটার।
খুঁটিটি BC = x মিটার উচ্চতায় ভেঙ্গে গিয়ে সম্পূর্ণ
বিচ্ছিন্ন না হয়ে ভাঙ্গা অংশ দন্ডায়মান অংশের সাথে
BCD = 30° কোণ উৎপন্ন করে BD = 10 মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে স্পর্শ করে।
এখানে CD = AC = AB –AC = (h – x)মিটার
ত্রিভুজ BCD হতে পাই,
tan BCD = BD /BC = 10/x
tan 30° = 10/x
x = (10)(3½ )
x = 17.320 মিটার (প্রায়)
ত্রিভুজ BCD হতে পাই,
Sin BCD = BD /CD = 10 /(h – x)
বা, Sin 30° = 10 /(h – x)
বা, ½ = 10 /(h – x)
বা, h – x = 20
বা, h = 20 + x = 20 + 17.320 = 37.320 মিটার (প্রায়)
No comments:
Post a Comment